আলআবি ভাইয়া রূপি জিনের দৃষ্টি যখন আমার ওপর পরল তখন জোরে জোরে কি কি যেন দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম। কি পরছি আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।ধীর গতিতে জিনটা গিটার টা পাশে রেখে আমার দিকে আগাতে নিলেই জোড়ে "আ" মূলক একটা চিৎকার দিয়ে বসলাম। সাথে সাথে এক জোড়া শক্তপোক্ত হাত এসে আমার মুখ চেপে ধরল।এক হাত দিয়ে আমার ঘাড়ের পিছনের দিকে চেপে ধরা আরেক হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরা।
দাতেঁ দাঁত চেপে একটা ফিসফিসে আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসলো।
--চুপ!চুপ!একদম চুম!
পরিচিত কন্ঠ টা শুনে মনের মধ্যে একটা স্বস্তির বাতাস বয়ে গেল।নিশ্চিত হলাম আমার সামনে থাকা লোকটা আলআবি ভাইয়া ।আমার সাথে এখনো কোন অস্বাভাবিক কিছু হয়নি।তার মানে এটা আসল মানুষ ই।জিন পরী হলে এতক্ষণে আমার বারোটা তেরোটা বাজিয়ে দিত। মুখের উপর থেকে তার হাত টা সরানোর চেষ্টা করতেই তিনি হাতটা সরিয়ে নিলেন।আমি ছাড়া পেতে ই হড়বড়িয়ে বললাম,,,
--আপনি এখানে কেন?আর এতো রাতে আমাদের বাসায় কি করছেন? তার থেকে বড় কথা হল আপনি আমার বারান্দাতেই বা কি করছেন?
--গিটার বাজাতে এসেছি।(আলআবি ভাইয়া)
কথাটা বলেই তিনি ইবলিশ রূপি একটা হাসি হাসলেন।পূর্নিমার আলো এসে তার মুখমন্ডলে লুকোচুরি খেলা খেলছে।তার পুরু ঠোটের হাসি বাম গালে থাকা ঈষৎ গর্তের অর্থ্যাৎ টোলের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। হাসির দরুন তার চোখ জোড়া ঈষৎ সংকুচিত হয়েছে। তার গাল ভর্তি থাকা চাপ দাঁড়ি যে বিলীন হয়ে গিয়েছে তা এই পূর্নিমার আলো আমার চোখ জোড়ায় স্পষ্ট তুলে ধরেছে।আজও পড়নে তার সাদা পাঞ্জাবির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। শুনেছি কোনকিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। তবে আলআবি ভাইয়ার ক্ষেত্রে এই কথাটা এখন একেবারে অপ্রযোজ্য। মনে হচ্ছে সে যদি সাদা পাঞ্জাবি না পড়ে অন্য বর্ণের পাঞ্জাবি পড়তো তাহলে তা মানানসই হতো না। কেন যেন তাকে এই রূপে দেখতে অদ্ভুত রকমের ভালো লাগছে। তাকে পর্যবেক্ষণ করার এক পর্যায়ে ব্যাঘাত ঘটিয়ে আমার সম্বিত ফিরে এলো তখন, যখন দেখলাম সে তার গিটারটার কাছে পুনরায় ফিরে যাচ্ছে। যেখানে গিটার রাখা সেখানে উবু হয়ে তাকে কিছু একটা নিতে দেখলাম। তারপর সে আবার আমার কাছে ফিরে আসলো। আলআবি ভাইয়ার হাতের দিকে দৃষ্টি দিতেই একটা শপিং ব্যাগের মতো দেখতে পেলাম। আমার হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,,
--তুমি ছেলেদের সামনে বিনা বোরখায় ঘুরঘুর করলে তা তোমার বর্ষণ সঙ্গীর মোটেও ভালো লাগে না।
"বর্ষণ সঙ্গী" নামটা শুনলেই মনের মধ্যে হাজার ও ভালোলাগার অনুভূতিরা কড়া নেড়ে যায়। একজন ব্যক্তির আসল নাম বাদ দিয়ে ছদ্মনাম নাম শুনলেই যখন এতটা ভাল লাগে তখন ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে কেমন লাগবে? নিশ্চয়ই তার সংস্পর্শে এলে আমি কখনোই খারাপ অবস্থায় থাকবো না। আমি আলআবি ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম,,,
-- এই বোরখা তো আপনি কিনেছেন। আমি আপনারটা কেন নিব? নিতে হলে আমার বর্ষণ সঙ্গীর টাই নিব।
--তোমাকে এক কথা বারবার কেন বলা লাগে বলতো?তোমার বর্ষণ সঙ্গীই তো আমাকে বলল "আমার বর্ষণ সঙ্গিনীকে গিয়ে বোরখা কিনে দিয়ে আয়"।সেদিন তুমি এটা আমার কাছেই রেখে এসেছিলে। তাই তোমার বর্ষণ সঙ্গী তোমার বাসায় আসতে আমাকে বাধ্য করলো।(আলআবি ভাইয়া)
আলআবি ভাইয়ার কথা শেষ হতে না হতেই আমি তার হাত থেকে খপ করে ব্যাগ টা নিয়ে নিলাম।তারপর বললাম,,,
--আমার জানা মতে আমার বর্ষণ সঙ্গী না কানা,না কালা আর না ই বা পঙ্গু। আর তার থেকে বড় কথা হলো আপনার মতো লোক কোন কালেই কারো চামচামি করবে না।তাই এবার আমাকে তারাতাড়ি বর্ষণ সঙ্গীর আসল পরিচয় দিন।সে কে, কোথায় থাকে সব কিছু বলতে হবে।বলুন।
আলআবি ভাইয়া হামি তুলতে তুলতে বললেন,,,
-- আজ অনেক কথা বলে ফেলেছি। এখন ঘুম পাচ্ছে খুব। যাও তুমিও ঘুমাও গুড নাইট।
বলেই তিনি বারান্দার রেলিং টপকে নিচে নামাতে শুরু করলেন। কেবল এক পা রেলিং এর বাইরে দিয়েছেন তখন আমি তাড়াতাড়ি করে তার সামনে গিয়ে বললাম,,,
--আপনার না ঘুম পেয়েছে।তাহলে সুইসাইড করতে যাচ্ছেন কেন? আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তারপর আপনি সুইসাইড করতে যান। আগে আমার উত্তর দিন।
--এই বাড়িটা যেই আর্কিটেক্ট বানিয়েছে তার মাথায় কোন ঘিলু নেই। যদি একটু মাথা খাটিয়ে তোমার বারান্দার পাশেই পাইপ লাগানোর স্পেস রাখতো তাহলে আমাকে এত কষ্ট করতে হতো না। পাইপ বেয়ে ই উপরে উঠে যেতাম আর নেমে যেতাম।আমাকে আর কষ্ট করে দুই টা মই একসঙ্গে বেধে এই তিন তলায় উঠতে হতো না।(আলআবি ভাইয়া)
তার এমন বেহুদা কথাবার্তায় আমি চটে গেলাম। একটু শব্দ করেই বলে উঠলাম,,,
--হ্যাঁ আপনার মাথা তো ঘিলুতে ভরা। মাথায় এতই যখন বুদ্ধি তে ভরা তাহলে চাকরিটা ছেড়ে ছিলেন কেন? নিশ্চয়ই দেড় বছর আগে কোন না কোন গণ্ডগোল পাকিয়েছিলেন। তাই আপনাকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছিল।
আমার কথায় আলআবি ভাইয়ার মুখের রং পাল্টে গেল। আধো আধো আলোয় ঠিকই তার অগ্নিমূর্তি রূপ দেখতে পেলাম। আমার অন্তর আত্মা কাপিয়ে বলে উঠলেন,,,
--যে বিষয়ে অবগত নও সেই বিষয়ে কোনো কথা ভুলেও মুখে আনবে না।
সে যে খুব রেগে আছেন তা কথার সুরেই বলে দিচ্ছে। আর এক মুহূর্ত দেরি না করে স্থান ত্যাগ করলেন। তাকে নিচে নামতে দেখে মনে পড়ল সে এখান থেকে যাবে কিভাবে? আমার জানা মতে তো কোন রাস্তাই নেই এখানে। আমি দ্রুত নিচে তাকালাম কিন্তু কোনো মানুষেরই অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না।আলআবি ভাইয়া নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেলেন। তার টিকিটারও দেখা পেলাম না।
রুমে এসে আলআবি ভাইয়ার ব্যাপারে কিছু সময় ভাবাভাবি করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম হাতে মোবাইলটা নিয়ে। প্রায় সময়ই বর্ষণ সঙ্গী আর আমার পুরনো মেসেজ পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাই। আজকেও তার ব্যতিক্রম হলো না।
সকালে এলার্ম এর শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো। উঠে ফজরের নামাজ পড়ে নিলাম। নামাজটা শেষ করতেই বাইরে ঝুম বৃষ্টি পড়তে লাগলো। কিছু সময় বারান্দায় গিয়ে মনোযোগ সহকারে বৃষ্টিবিলাস করে পুনরায় রুমে ফেরত আসলাম। হঠাৎ করে মনে হলো এখন বাসায় ইলিশ মাছ ভাজা দিয়ে ভুনা খিচুড়ি রান্না না হলে বৃষ্টিরাজিরা অভিযোগ জানাতে দলে দলে ছুটে আসবে। মনের এই অদম্য ইচ্ছা টাকে আর পুষে রাখতে পারলাম না। চলে আসলাম খিচুড়ি রান্নার অভিযানে। রান্না ঘরে এসে দেখি ভাবি ও এইমাত্র রান্নাঘরে এসেছে। যেদিন থেকে জানতে পেরেছিলাম আমাদের বাসায় নতুন অতিথির আগমন ঘটবে সেদিন থেকেই ভাবিকে বেশি কাজ করতেন দেইনা। রান্নার কাজ তো একেবারেই করতে দেই না। ভাবী এখন শুধু বাসায় ঘুরে ঘুরে এই ঘর ওই ঘর গুছিয়ে রাখে। কমলা আন্টি এখন আর সকাল সকাল আসে না। যখন আমি ভার্সিটিতে চলে যাই সেই সময়টা এসে ভাবিকে সঙ্গ দেয়।ভার্সিটিতে আমার তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছিল আমাদের সুবর্ন জয়ন্তীর পরের দিনই। সেদিন থেকে কমলা আন্টি আমার অনুপস্থিতিতে ভাবির সঙ্গে থাকে। আমি আসলে কিছু সময় পরে ডিউটিতে চলে যায়। আমার মত ভাবির ও ইলিশ মাছ পছন্দ। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইলিশ মাছ ভেজে চলেছি আর পাশেই ভাবি আমার সঙ্গে গল্প করে চলেছে। ইদানিং ভাবির আচরণে অনেক কিছুরই পরিবর্তন লক্ষ করতে পারছি।হুটহাট করেই একেকটা ইচ্ছে পোষণ করে বসে। তবে তা খুবই ছোট ছোট ইচ্ছে।একেই বুঝি বলে প্রেগনেন্সি সময় এর মুড সুইং।
সকালবেলা আমি, ভাবি আর বাবা হালকা-পাতলা নাস্তা করলেও নিয়াজ ভাইয়ার ভাষ্য মতে, সকালে খেতে হবে রাজার হালে দুপুরে খেতে হবে সেনাপতির হালে আর রাতে খেতে হবে প্রজার হালে। আমার রান্না খিচুড়ি বরাবরই ভাইয়া আর বাবার পছন্দের।এই খিচুড়ি টাও একসময় ভালো রাঁধতে পারতাম না।আর দশ-পাচঁ টা মায়ের মতো আমাকে আমার মা রান্না শেখায় নি।আমার কমলা আন্টি আমাকে রান্না শিখিয়েছে।সে আমাকে কম আদর স্নেহ করে না।কিন্তু ওই যে একটা কথা আছে না মা তো মা ই।মায়ের সমতুল্য আর কেউ হয় না। আমার রান্নার হাতে খড়ি মাকে দিয়ে শুরু হয়নি সেই জায়গায় একটা আফসোস রয়েই গিয়েছে।
খাওয়া-দাওয়া করে রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। বাইরে থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এই পরিবেশে বাইরে বের হতে একটুও ইচ্ছে করছে না।ভার্সিটি যাওয়া তো বাদই দিলাম। এমনিতে আমি আর সাদু ভার্সিটিতে অনিয়মিত নই।খুব কমই ক্লাস মিস করি। কিন্তু বর্ষাকাল এসে আমার সকল নিয়ম ভেঙে দেয়। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কাঁথা মুড়ি দিয়ে কোন একটা নাটক বা মুভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ি। মোবাইল চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়ার ব্যাপারটা আমার খুব ভাল লাগে। যদিও এটা একটা বদভ্যাস কিন্তু তাও আমার ভালো লাগে। সাদু কে একটা মেসেজ করে জানিয়ে দিলাম আজকে আর ভার্সিটি যাব না। এরপর কাঁথা মুড়ি দিয়ে মনপুরা ছবিটা মোবাইলে চালু করে দিয়ে দেখতে লাগলাম।কিন্তু একটু পরেই বুঝতে পারলাম আমার পক্ষে আর চোখের পাতা খুলে রাখা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে ঘুমের রাজ্যের সঙ্গে সখ্যতা গড়তে পারি জমালাম ঘুম রাজ্যে।
ঘুম ভাঙতেই সর্বপ্রথম চোখে পড়ল আমার ডান পাশে পড়ে থাকা মোবাইল টার দিকে। শোয়া থেকে উঠে বসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি ১১টা বেজে ৩৭ মিনিট। মোবাইলে চলতে থাকো মুভিটা ও শেষ হয়ে গিয়েছে এতক্ষনে। আমার রুম থেকেই কয়েকজন মানুষের অট্টহাসির আওয়াজ পাচ্ছি। আন্দাজ করে বুঝতে পারলাম হয়তোবা ড্রয়িংরুমে চার-পাঁচজন মানুষ বসে কথা বলছে। সেই সাথে আবার হাসির আওয়াজও ভেসে আসছে। কে এসেছে তা পরখ করার জন্য বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। এর পর মাথায় ভালোভাবে ওড়না দিয়ে রুমের বাইরে পা বাড়ালাম। ড্রইংরুমের দৃশ্য চোখে ভেসে উঠতেই মনে হলো আমার চোখের সামনে কোন দৃশ্য ই স্বাভাবিক নয়।
এক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছে আমি বুঝি দেড় বছর আগে চলে এসেছি। আমাদের ড্রয়িংরুমে নিয়াজ,আলআবি আর সজল নামের তিন যুবক ঠিক সেই দেড় বছর আগের মতো বসে বসে তাদের জমানো কথার ঝুড়ি খালি করছে।আমার এতো অবাক হওয়ার কারণ আলআবি ভাইয়া তার বাবা ইন্তেকালের পর একবারের জন্যেও আমাদের বাসায় আসেন নি।কালকে রাতে ১ম এসেছিলেন।আর সজল ভাইয়া ও আসেন নি।নিয়াজ ভাইয়ার সাথে সজল ভাইয়ার শুধু ফোনেই কথা হতো।তাকে বাসায় আসতে বলা হয়েছে অনেকবার কিন্তু সে নাকচ করে দিয়েছিলেন।আজ অনেক গুলো দিন বাদে সেই পুরনো বন্ধু গুলো এক হয়েছে। কাল রাতের তুলনায় আজ আলআবি ভাইয়ার মুখশ্রী বেশ স্পষ্ট আমার কাছে।দেড় বছর আগের সেই আলআবি ফিরে এসেছে মনে হচ্ছে। আমি পা বাড়িয়ে তাদের নিকটে গিয়ে দাড়ালাম। আমাকে দেখা মাত্রই সজল ভাইয়া বলল,,,
--আরে জুইঁ কই ছিলি এতো সময়?আর আছিস কেমন?
আমি একগাল হাসি এনে বললাম,,,
--আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।ভালো আছি অনেক।তুমি কেমন আছো? আর এতো দিন কি আমাদের বাসার রাস্তা ভুলে গিয়েছিলে নাকি?
--তেমন না।আসলে আলআবি ছিল না তাই আমারও আসা হয়নি।(সজল ভাইয়া)
আমি একটু টের চোখে আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকালাম। তার চোখে চোখ পরতেই তিনি আমাকে চমকে দিয়ে আমার উদ্দেশ্যে চোখ টিপ মারলেন।এরূপ কাজে আমি আহাম্মক বনে গেলাম। তার থেকে চোখ সড়িয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি রাখলাম।যতটুকু সময় ড্রয়িংরুমে ছিলাম তার দিকে তাকানোর সাহস করলাম না।
আলআবি ভাইয়ারা দুপুরের খাবার খেয়ে চলে গেলেন। তারা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।যতটুকু সময় তারা ছিলেন তাতে আলআবি ভাইয়ার কর্মকান্ডে বেশ অবাক হয়েছি।তার এরূপ কর্মকান্ড আমি আমার জন্মে এই প্রথম দেখলাম। যেমন, দুপুরে খাওয়ার টেবিলে-----
আমি চেয়ার টেনে বসতেই হুট করে আলআবি ভাইয়া এসে আমার পাশের চেয়ারে বসে পরলেন।প্রত্যেকের জন্য ই আলাদা করে গ্লাস রেখেছি টেবিলে।সেই সুবাদে আমারও একটা গ্লাস আর আলআবি ভাইয়ার ও একটা গ্লাস ।কিন্তু আলআবি ভাইয়া আমার গ্লাস থেকে ইচ্ছে করে তিন বার পানি খেলেন।১ম বার যখন খেলেন আমি মনে করলাম ভুলবশত হয়ে গেছে তাই তাকে আমি তার গ্লাস দেখিয়ে দিলাম কিন্তু তাতে কোনো লাভই হলো না।
আবার আমি যখন এটা ওটা নেয়ার জন্য হাত বারাচ্ছি তিনি তখন সবার সামনে আমার নাম ধরে বলছেন জুইঁ এটা দেও তো, জুইঁ ওটা দেও তো, জুইঁ কাটা ফালাবো কোথায়? জুইঁ জুইঁ করে আমার মাথা টা খেয়ে ফেলছেন। এমনিতে তো উনি সবার সামনে কথা কম বলেন।আর বাবার সামনে তো আরও কম।কিন্তু আজকে এমন ভাবে পটর পটর শুরু করেছেন যে থামার নামই নিচ্ছেন না।
আবার খাওয়া শেষ করে যখন বেসিনে হাত ধুতে আসলাম তখন হ্যান্ডওয়াশে প্রেস করে হাতে হ্যান্ডওয়াশ নিয়ে যখনই হাতটা সরিয়ে নিতে যাব তখনই আলআবি ভাইয়া এসে আমার বৃদ্ধাঙ্গুলির উপরই তার বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে আরেকবার প্রেস করলেন যার ফলে পরিমাণের চেয়ে বেশি হ্যান্ডওয়াশ আমার হাতে পরে যায়।তখন আলআবি ভাইয়া বলেন,,,
--ও সরি!বেশি হয়ে গিয়েছে তাই না?
বলেই উনি ওনার এঁটো হাত টা দিয়ে আমার এঁটো হাতে থাকা কিছু পরিমান হ্যান্ডওয়াশ নিয়ে নিলেন।তার কাজে আমি তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম ।তার কাজে মনে হচ্ছিল এটা সত্যি ই আলআবি ভাইয়া তো?চোখের পলকে সে পাল্টে গেলেন কীভাবে?মাথার মধ্যে শুধু আলআবি ভাইয়া আর তার কৃতকর্ম গুলো ভনভন ভনভন করছে।
বিকেলবেলা আমি, ভাবি আর নিয়াজ ভাইয়া ছাঁদে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।আজ নিয়াজ ভাইয়ার অফ ডে।তাই আমাদের ছাঁদে বসে আড্ডা দেয়ার প্ল্যান করা। আড্ডা দেয়ার এক পর্যায়ে আলআবি ভাইয়ার একটা কথা মনে পড়ে গেল। তার চাকরি নিয়ে যখন কথা বলেছিলাম তাকে খুব রেগে যেতে দেখেছিলাম।নিয়াজ ভাইয়া কে ফুরফুরে মেজাজে দেখে জিজ্ঞেস করে বসলাম,,,
--আচ্ছা ভাইয়া আলআবি ভাইয়াকে হঠাৎ করেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল কেন?
আমি জানি আলআবি ভাইয়া নিজে থেকে রিজাইন দিয়েছিলেন। ভাইয়াও এখন এই উত্তরটাই দিবে। কিন্তু কেন রিজাইন দিয়েছিলেন সেটা আমাকে জানতে হবে। তাই ভাইয়াকে প্রশ্নটা একটু ঘুরিয়েই করলাম।
--তোর বাসা থেকে তোকে কেউ তারিয়ে দেবে?(নিয়াজ ভাইয়া)
--মানে?(আমি)
-- মানে হল দীর্ঘদিন ধরে যে অফিসে কাজ করে আসছি সেটা আলআবির বাবার অফিস। ওর বাবা আমাদের অফিসের ৭০%শেয়ার হোল্ডার।আর ও চাকরিটা ছাড়েনি।শুধু সশরীরে অনুউপস্থিত থেকে কাজ করছে।
ভাইয়া কথাটা শেষ করে একটু থেমে পুনরায় বলতে লাগলো,,,
--শোন মজার ব্যাপার হলো ও যখন ওর সার্টিফিকেট পেয়েছে মানে পড়ালেখা শেষ করে কোম্পানিতে জয়েন করে তখন জানতে পারে কোম্পানির ৭০% শেয়ার হোল্ডার ওর বাবা।আলআবির বাবা নিজেও কখনো বিলাসিতা কে ভোগ করেন নি আর আলআবিকেও বিলাস পূর্ণ অবস্থায় রাখেননি। সবসময় মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো জীবন যাপন করিয়েছে ওকে। ওর বাবার ধারণা ছিল ছেলেকে দুহাতে ইচ্ছামত টাকা উড়াতে দিলে ছেলে বখে যাবে। সব সময় আদর্শ বাবার আদর্শ ছেলে হিসেবে থেকেছে আলআবি। বাবা ছেলে দুই বন্ধুর মত ছিল।সজল একবার আমাকে বলেছিল আলআবি কলেজে থাকতে মারামারির ওস্তাদ ছিল। ওর জন্য বাসায় নালিশ আসত। কিন্তু এমন নয় যে রাস্তাঘাটে মারামারি করে বেড়াতো। সব সময় ওর বিরুদ্ধে খারাপ লোক গুলোই নালিশ নিয়ে আসতো। ওর বাবা কি করতো জানিস, লোকগুলোকে বলতো ছেলেকে বুঝিয়ে বলবে এটা বলে বিদায় করে বাপ ছেলেকে এসে বলতো যা যা করেছিস একদম ঠিক কাজ করেছিস অন্যায় কে কখনোই প্রশ্রয় দিবি না। খুব বড় ধরনের মারামারি বাধতো না বলে ঝামেলা বাড়িতে নালিশ অব্দিই চুকে যেত।
--তার মানে আলআবি ভাইয়া আঙ্কেলের চলে যাওয়াতে খুব কষ্ট পেয়েছে তাই না
--হ্যাঁ। পৃথিবীতে কোন বাপ ছেলে একসাথে সিগারেট খায় বলতো? আলআবি আর ওর বাবা আমার চোখে প্রথম দেখা বাপ ছেলে ছিল যারা দুজনকে একসঙ্গে সিগারেট ফুঁকত। ও ওর বাবাকে হারিয়ে জীবনে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছে। তার কারণ কি জানিস? ওর বাবাকে.........
নিয়াজ ভাইয়া কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারল না সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়ার ফোন বেজে উঠলো ফোনে কথা বলতে বলতে সোজা নিচে চলে গেল সম্পূর্ণ কথাটা শোনা হলো না। কিন্তু আলআবি ভাইয়ার জন্য এখন খুব খারাপ লাগছে। আমার সাথে আমার মায়ের খুব বেশি স্মৃতি ছিল না। কম সময়ের স্মৃতি গুলো কে আঁকড়ে ধরে আমি আজো মায়ের জন্য কান্না করি। তাহলে আমার থেকেও তো করুন অবস্থা আলআবি ভাইয়ার। কারণ তার পুরো আঠাশ টা বছরের স্মৃতি জড়িয়ে আছে তার বাবার সাথে । আঠাশ বছরের স্মৃতি হয়তোবা এখনো তাকে কুড়েকুড়ে খায়।
এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমরা কখনোই নিজেকে সুখী বলে মানতে পারব না যতক্ষণ না অন্য কোন মানুষের কষ্টের কথা শুনতে পাবো। একটা মানুষকে নিজের থেকে দ্বিগুন কষ্টে দেখলে তখনই আমরা উপলব্ধি করতে পারব এই মানুষটার থেকে আমরা ঢের সুখে শান্তিতে আছি।
সময়ের কাটা ঘুরতে ঘুরতে এক সপ্তাহ শেষ করে ফেলেছে। এই এক সপ্তাহের মধ্যে আমার চোখ জোড়া আর আলআবি নামক মানুষটার দেখা পায়নি। ভার্সিটি থেকে বাসায়, বাসায় থেকে ভার্সিটি। এমন করেই এক সপ্তাহ চলে গিয়েছে। না পেয়েছি বর্ষণ সঙ্গীর কোন খবর।
রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় মনে হচ্ছে কেউ আমার পায়ের পাতায় সুড়সুড়ি দিচ্ছে। ঘুমের থেকে লাফিয়ে উঠে পরলাম। আমার সুড়সুড়ি একটু বেশিই।তাই ঘুম যতই গভীর থাক না কেন সুরসুরি অনুভব হলেই ঘুম তার চৌদ্দগুষ্টি নিয়ে আমার চোখের উপর থেকে পলায়ন করে।
আমার ঘুম ছুটতেই দেখি আলআবিব ভাইয়া আমার পড়ার টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারটা উপর আয়েশি ভঙ্গিতে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন। তাকিয়ে দেখে হড়বরিয়ে বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। পাশ থেকে দ্রুত ওড়না টা নিয়ে ভালোভাবে গায়ে জরিয়ে নিলাম।তারপর আলআবি ভাইয়ার দিকে ক্ষুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,,,
--এতো রাতে একটা মেয়ের ঘরে কি আপনার?হুটহাট এভাবে চলে আসেন কেন?
তিনি হুট করে আমার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন। তারপর বললেন,,,
-- যাবে আমার সাথে?
রাগের সহিত আমি তাকে বললাম,,,
-- রাত-বিরাতে আমি আপনার সাথে কোথায় যাব?আর রাত এখন কয়টা বাজে জানেন আপনি?
--সরি! আজকে ঘড়ি পড়তে মনে নেই। তাই বলতে পারছি না।(আলআবি ভাইয়া)
তার এই কথাটা আমার রাগে ঘি ঢালতে যথেষ্ট ছিল। আমি রাগে গজগজকরতে করতে তাকে আমার দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বললাম,,,
--এখন রাত তিনটা বেজে দশ মিনিট। এত রাতে আপনার এখানে আসার মতলবটা কি?
--মতলব কিছুইনা।আজ বর্ষণ সঙ্গীর সাথে দেখা হলেও হতে পারতো। যাই হোক ভালো ভাবে নাক ডেকে ঘুমাও আমি চললাম।
আমি আলআবি ভাইয়ার কথা শুনে তড়িৎ গতিতে বলে উঠলাম,,,
--কোথায় নিয়ে যাবেন নিয়ে চলুন। আমি দুই পায়ে দাঁড়া
আমার কথা শেষ হতে না হতেই আলাবি ভাইয়া আমার হাত ধরে আমাকে বারান্দায় নিয়ে আসলেন। আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম,,
-- দাঁড়ান আমি একটু পরিপাটি হয়ে নেই। মুখটা অন্তত ধুয়ে নেই।
--কোন দরকার নেই। তোমার বর্ষণ সঙ্গী তোমাকে এই ভাবেই পছন্দ করে। তার কথায় আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। কারণ ঘুমিয়ে থাকার ফলে আমার মুখটা একটু ভার ভার হয়ে আছে। সেইসাথে চুলে অগোছালো একটা হাত খোঁপা বাঁধা পরনে আমার কুঁচকে যাওয়া একটা নীল রঙের সুতি থ্রি পিস। এই মুহূর্তে যে আমাকে ভিকারিবেশ থেকে কম লাগছে না তা আমি ভালই বুঝতে পারছি। এই রূপে আবার কেউ কাউকে কিভাবে পছন্দ করতে পারে? আম আলআবি ভাইয়াকে বলে উঠলাম,,,
--তাহলে বোরখাটা পড়ে নেই? বেশি সময় লাগবে না।
আলআবি ভাইয়া আমাকে একটা ধমক দিয়ে বললেন,,
-- এই মেয়ে! বললাম না কিছু দরকার নেই। বিয়ে করতে তো আর যাচ্ছো না।
বলেই উনি আমার পিছনে দাঁড়িয়ে পরলেন।তারপর ওড়না টা দুই হাত দিয়ে আমার মাথায় ঘুমটা তুলে দিলেন।তার এই দু দিনের ব্যবহার আমার ঠিক হজম হচ্ছে না।আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে উনি সেইদিন যে মইটা বেয়ে উঠেছিলেন সেই মইটা দেখিয়ে বলে উঠলেন,,,
--এখান দিয়ে সাবধানে নামো।
--এখান দিয়ে নামবো মানে? আমাকে কি আপনি পাগল পেয়েছেন নাকি? এখান দিয়ে নেমে যাব টা কোথায়?(আমি)
--পাতালে যাবো।ইডিয়েট একটা।নামতে বলেছি নামো।
তার ফিসফিসে হুংকার শুনে তাড়াতাড়ি করে আমি রেলিং টপকে মইয়ের উপর দাঁড়ালাম। সাহস করে এসে তো পড়েছি কিন্তু এখন নিচের দিকে তাকালেই ভয় লাগছে। তাই কোন প্রকার দ্বিধা না রেখেই আমার সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা আলআবি ভাইয়ার হাত দুটো খপ করে ধরে ফেললাম। আমি ভয় পাচ্ছি তা হয়তো উনি টের পেয়েছেন।তাই আমার সঙ্গে সঙ্গে আলআবি ভাইয়া ও আমার হাত ধরে ধরে নেমে আসলন।
নিচে নেমে ঐদিন আলআবি ভাইয়ার উধাও হওয়ার ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। আসলে যে বরাবর মইটা রাখা সেখানেই একটা ছোট্ট কালো রংয়ের দরজার রয়েছে।এই দরজা দিয়ে ঢুকলে এই বাড়িটার গ্রাউন্ড ফ্লোরের দেখা মিলবে। অর্থাৎ বলতে গেলে এটা এই বাড়ির পেছনের দরজা। এখানে দিয়ে ঢুকে বাড়ির মেইন গেট দিয়ে বের হওয়ার ব্যবস্থা আছে। আমি মনে মনে ভাবছি হয়তোবা আমরা এখান দিয়েই ঢুকবো। কিন্তু আমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে আলআবি ভাইয়া আমাকে বললেন,,,
--উঠে পড়ো।
পিছনে ঘুরে দেখি আলআবি ভাইয়া বিলের কিনারে একটা ছোট খেয়া নৌকার উপরে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় সময়ই আমি এমন একটা নৌকা দেখে থাকি এখানে। তবে এই নৌকা টাই দেখি কিনা তা আমার অজানা।নৌকা আমার কোনদিনই বিরক্তির কারন হয়ে ওঠেনি। নৌকায় চড়ে ঘুরতে আমার বেশ ভালো লাগে। তাই এই মুহূর্তে মনে একরাশ উৎফুল্লতা নিয়ে উৎকণ্ঠা হয়ে বলে উঠলাম,,,
--দাড়ান! দাড়ান! আমি আসছি।
যখনই আমি পা বাড়াতে যাব ঠিক তখনই আলআবি ভাইয়া তার হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। তার হাত বাড়িয়ে দাওয়াতে মনে হলো তিনি আমার দিকে হাত না বাড়িয়ে একরাশ মুগ্ধতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তার আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দাওয়াতে আমার মনে আনন্দেরা উকিঝুকি মারছে। মনের মধ্যে মুগ্ধতা নিয়ে আমিও আমার হাত বাড়িয়ে দিলাম তার হাতের উপর। তার হাতে ভর দিয়ে নৌকায় উঠে পড়লাম। নৌকায় উঠে দেখি আলআবি ভাইয়া আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। তাই তাড়াতাড়ি করে হাতটা সরিয়ে নিলাম। সে যদি এই মুহূর্তে আমার দিকে না তাকাতেন তাহলে হয়তোবা লজ্জা পেতাম না। কিন্তু তার দৃষ্টি আমাকে এখন লজ্জা দিচ্ছে। তাই যেখানে আছি সেখানেই চুপ্টি করে বসে পড়লাম। আলআবি ভাইয়া আমি যেখানে বসে আছি তার থেকে একটু দূরে গিয়ে নৌকার এক মাথায় বসে হাতে বৈঠা নিয়ে নৌকা চালানো শুরু করলেন। তাকে নৌকা চালাতে দেখে বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলাম,,,
--আপনি নৌকা চালাতে পারেন?
আলআবি ভাইয়া একটু ভাব নিয়ে বললেন,,,,
--নৌকা থেকে শুরু করে প্লেন পর্যন্ত চালাতে পারি।
তার গুজবে কান না দিয়ে পরিবেশটাকে উপভোগ করতে লাগলাম। পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ এসে বারবার কানে বাজনা বাজিয়ে যাচ্ছে। সেইসাথে আকাশে মেঘেরা ও একটু পরপর উকিঝুকি মারছে। এই বিলের পানি থেকে অদ্ভুত একটা পানির গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা দিচ্ছে।গন্ধটা অসহ্য কর নয় বরং সহ্য কর। হয়তো বা পানির এই গন্ধটা না থাকলে এই মুহূর্তের পরিবেশটা খাপছাড়া হয়ে যেত। ভাবতেও অবাক লাগে যে বিলের পানিতে আজ নৌকায় চড়ে অজানা গন্তব্যে যাচ্ছি, সেই বিলের পানি ই বর্ষা শেষে নেই হয়ে যাবে। হঠাৎ করে একফোঁটা পানি আমার হাতের উপর পড়তেই চারপাশে তাকিয়ে দেখি টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এই বৃষ্টি আমাদের শরীর ভেজানোর কোনো ক্ষমতা রাখেনা। খুব স্বল্প মাত্রায় ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে। এর মাঝে কয়েকবার আমার আর আলআবি ভাইয়ার মধ্যে চোখাচোখি হয়েছে। তবে যতবারই আমি তার দিকে টের চোখে তাকিয়েছি ততোবারই দেখেছি সে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
কিছু সময় অতিবাহিত করে আমরা বিলটা পাড়ি দিয়ে একটা মেইন রোডে এসে উঠলাম। পূর্বের ন্যায়ই আমার হাত ধরে আলআবি ভাইয়া নৌকা থেকে আমাকে নামতে সাহায্য করলেন। এতক্ষণে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে আবার যে দেখা দিবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। রাস্তার ধারে দেখতে পেলাম আলআবি ভাইয়ার সেই পুরনো রয়েল এনফিল্ড বাইক টা কারো অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।
বাইকের কাছে এগিয়ে গিয়ে ভাইয়া বলে উঠলো,,,
-- এখন অনেকটা পথ পাড়ি দিব। অনেক দূর পর্যন্ত যেতে হবে। তোমার কিছু লাগলে অথবা কোন সমস্যা থাকলে বলতে পারো।
আমি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,,,
-- আমার বর্ষণ সঙ্গীর জন্য যত দূর যেতে হয় যাব।
আমার বলা কথাটা শেষ হতেই আলআবি ভাইয়া বাইকে ঝুলে থাকা হেলমেটটা পড়ে নিলেন। আমাকে তার পিছনে উঠতে বললে আমিও উঠে পড়লাম। আমি বাইকে উঠে বসতেই আলআবি ভাইয়া বাইক স্টার্ট দিলেন। চলতে লাগলাম আমার অজানা আর আলআবি ভাইয়ার জানা গন্তব্যে। আশেপাশের দোকানপাট সব বন্ধ। মাঝে মাঝে ছোট ছোট চায়ের টং গুলোর দু একটা খোলা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। রাস্তাঘাটে মানুষ নেই বললেই চলে। রয়েছে দূরপাল্লার কিছু ট্রাক। হলুদ ল্যাম্পপোস্টের আলোতে আমার আর আলআবি ভাইয়ার জামার আসল বর্ণ পাল্টে অন্য বর্ণ ধারণ করেছে। একটা জিনিস খুব সূক্ষ্মভাবে আমার কাছে পরিলক্ষিত হলো।তা হলো আলআবি ভাইয়া আজকে বাইকটা অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু জোরে ড্রাইভ করেছেন। যার দরুন আমি নিজের ভারসাম্য সামলাতে না পেরে আমার একহাত আলআবি ভাইয়ার কাধে রেখে বসে আছি। বাতাসের বেগ এসে আমার মাথার ঘোমটা ফেলে দিয়েছে বহু আগে।
চলবে...
Writer:- হুমাশা এহতেশাম