> বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব ৩৫, ৩৬ - Bangla Love Story - রোমান্টিক গল্প - Bangla New Story - Love Story Bangla
-->

বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব ৩৫, ৩৬ - Bangla Love Story - রোমান্টিক গল্প - Bangla New Story - Love Story Bangla

বাস স্ট্যান্ডে সারি সারি তিনটা এসি বাসের সামনে আমি, নিয়াজ ভাইয়া আর ভাবি দাঁড়িয়ে আছি।ভাইয়ার কিছু কিছু কলিগও ইতোমধ্যে এসে পরেছে।ভাইয়ার সাথে কুশল বিনিময়ের পর্ব শেষ করে তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাসে উঠেও পরেছে।আমাদের দাঁড়িয়ে থাকার কারণ হলো আলআবি ভাইয়া। আমি যতটুকু জানি আলআবি ভাইয়ার সঙ্গে সজল ভাইয়া ও আসবে। 

আমাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আলআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়া আমাদের সামনে উপস্থিত হলেন।এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আলআবি ভাইয়া পুরো দুনিয়া উল্টে গেলেও তার শুভ্র বর্ণ কে কোনদিন ছাড়বেন না। অবশ্য দুনিয়া কখনো উল্টাবে না। এটা তো কথার কথা বললাম। তবে একটা কথা না বললেই নয় তা হলো আলআবি ভাইয়াকে পাঞ্জাবিতে সবচেয়ে বেশি মানানসই লাগে।আলআবি ভাইয়ার উপর চোখ পড়তেই উপলব্ধি করতে পারলাম তার ক্লিন শেভ করা ক্ষুদ্রতম দাড়ি, ঘনত্বের ছোঁয়া পেয়েছে। আজ অনেকদিন বাদে সেই চশমা পরিহিত আলআবি মাশরুখ কে দেখতে পাচ্ছি।যেই শাল নিয়ে এতো কাহিনী হয়ে গিয়েছিল সেই রকমই একটা কালো বর্ণের শাল তার গলায় বিদ্যমান।তাকে দেখে মোটেও কেউ বলবে না সে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছেন। তাকে দেখে বলবে সে কোনো সভায় নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন। 

 আলআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়া একা আসেন নি। তাদের সঙ্গে রয়েছে আরও তিনটে অচেনা মুখ দেখা যাচ্ছে ।একজন ৩২-৩৩ বছর এর পুরুষ রয়েছে, তাসফি ভাবির সমবয়সি একটা আপু রয়েছে আর সেই সাথে রয়েছে কিশোরী বয়সের একটা মেয়ে।মনে হচ্ছে ১৫ কি ১৬ তে পদার্পণ করেছে।

সজল ভাইয়া আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,,, 

--সরি গাইস লেট করানোর জন্য। আসলে এই দুই লেডিস এর জন্য লেট হয়ে গিয়েছে আমাদের। 

পরিচয় পর্বে জানতে পারলাম কিশোরী বয়সের মেয়েটা (রেনুমা), আলআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়ার ফুফাতো বোন। বলে রাখা ভাল সজল ভাইয়া আর আলআবি ভাইয়া দুজন কিন্তু চাচাতো ভাই। আর যে দুজন রয়েছে ওরা আলআবি ভাইয়ার বড় ভাই (ফারাবী) আর ভাবি (মিথিলা)।

সব কিছু চেক করে আমরা বাসে উঠে পড়লাম। ঠিক ৯:৪৫ মিনিটে আমাদের বাস বান্দরবানের জেলা শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। কিছু কিছু মানুষ আগেই বাসে উঠে যাওয়া তে আমরা সবাই একসাথে বসতে পারলাম না। অর্থাৎ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসতে হয়েছে। একেবারে সামনের দিকের সিটে বসেছে ফারাবী ভাইয়া আর মিথিলা আপু। রেনুমা মেয়েটা আর আমি একেবারে শেষের দিকে বসেছি।আমাদের ঠিক পিছনের সিটে আলআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়া বসেছেন।  নিয়াজ ভাইয়া আর তাসফি ভাবি বসেছেন আমাদের দুটো সিট আগে।

আমাদের বাস ছেড়েছে প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেছে। এই এক ঘন্টায় রেনুমার সাথে কথা বলে যা বুঝতে পারলাম তাতে মনে হলো রেনুমা অনেকটাই চঞ্চল স্বভাবের।মিশুক ও বলা যেতে পারে। তবে মেয়েটা কথা একটু বেশি বলে।ওর এই বেশি কথা বলাটা আমার কাছে মোটেও বিরক্ত মনে হচ্ছে না। কারণ আমিও কোন কথা বলার সঙ্গী পেলে পুরো রাজ্যের কথা বলে ফেলতে পারি। সে দিক দিয়ে চিন্তা করলে কথা আমিও বেশিই বলি। আমাদের দুজনেরই  কথা বেশি বলার অভ্যাস আছে বলেই এই ষাট মিনিটের মধ্যে ই  জানতে পারলাম রেনুমা সজল রোগে আক্রান্ত।মানে ফুপাতো বোন যখন মামাতো ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খায়।মেয়েটা সবে নবম শ্রেণীতে পা দিয়েছে। কিন্তু সপ্তম শ্রেণীতে থাকতেই নাকি সে সজল ভাইয়ের প্রেমে পড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ যখন সজল ভাইয়া ফ্রান্সে ছিলেন। রেনুমার এই প্রেমে পড়ার কথা ওদের কাজিন গোষ্ঠী সকলেরই জানা আছে।স্বয়ং সজল ভাইয়া নিজেও জানেন। শুধু বড়রা এ বিষয়ে অবগত নন। এ বিষয়ে সজল ভাইয়ার কথা হলো, সে বাবা মার পছন্দ মতে বিয়ে করবে।তাই রেনুমার থেকে দূরে দূরে থাকে সজল ভাইয়া।রেনুমার কথায় প্রথমে মনে হচ্ছিল এটা ওর কিশোরী মনের আবেগ। তবে এখন মনে হচ্ছে ও সজল ভাইয়া কে ভাল না বাসলেও অতিরিক্ত মাত্রায় পছন্দ করে। কে বলতে পারে হয়তোবা এই অতিরিক্ত মাত্রায় পছন্দ টাই ভালবাসায় পরিণত হবে।

বাস টায় জানালা খোলার কোনো ওয়ে নেই। মোটা কাচঁকে ভেদ করে ই বাইরের দৃশ্য দেখতে হচ্ছে। জানালার পাশে বসে যদি বাইরের দৃশ্য উপভোগ না করি তাহলে তো জানালার পাশে বসাই বৃথা। তবে এই মুহূর্তে বাইরের দৃশ্য দেখার চেয়ে চোখ বন্ধ করে রাখাটাই সমীচীন মনে করছি। কারণ ওই মোটা কাচঁ ভেদ করে বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে চোখ সহ মাথায় চিনচিন ব্যথা অনুভব করছি।একরাশ বিরক্তি নিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে সিটে মাথা এলিয়ে দিলাম।

একটু পরেই নাকে একটা পরিচিত সুবাস এসে ভিড় জমাতেই ফট করে চোখ খুলে ফেললাম।আমার মস্তিষ্ক আমাকে যা জানান দিচ্ছে ঠিক তাই হয়েছে। আমার পাশে আলআবি ভাইয়া এসে বসেছেন।দ্রুত পিছনের সিটে তাকাতেই দেখি রেনুমা সজল ভাইয়ার সাথে বসে বসে বকবক করে যাচ্ছে। কিন্তু বেচারি হয়তো খেয়ালই করেনি যে সজল ভাইয়ার কানে ইয়ারপড লাগানো।

ইতোমধ্যে বাসের ভিতরে থাকা লাইট নিভিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকে ঘুমিয়ে ও পড়েছে। মাথার চিনচিনে ব্যাথাটা ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে। কথা বলতে মোটেই ইচ্ছে করছে না।তাই আলআবি ভাইয়াকেও জিজ্ঞেস করা হলো না সে এখানে কেন বসেছে।পুনরায় সিটে মাথাটা এলিয়ে দিলাম। হঠাৎ করেই কপালে একজোড়া শক্তপোক্ত হাতের ছোঁয়াতে চোখ মেলে তাকালাম। দেখি আলআবি ভাইয়া আমার দিকে কিছুটা বাঁকা হয়ে বসে আমার মাথায় হাত দিয়ে টিপে দিচ্ছেন। আমি সোজা হয়ে বসে তার হাত সড়িয়ে দিয়ে হড়বড়িয়ে বলে উঠলাম,,, 

--কি করছেন আপনি?

তিনি তর্জনী আঙুল টা তার দুই ঠোঁট যুগলের মধ্য বরাবর চেপে ধরে মুখ দিয়ে শব্দ করলেন,,, 

--হুঁশশ!!! 

তারপর আমার দুই বাহু ধরে আমাকে আগের মতো করে সিটে এলিয়ে দিলেন। কিন্তু আমি তড়িৎগতিতে আবার সোজা হয়ে বসে পরলাম। বসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,,, 

--এমন করছেন কেন?এখানে কি আপনার? আর আমার এই ছোট্ট মাথা টা আপনার ওমন দানবের মতো হাত দিয়ে চেপে ভেঙে ফেলবেন নাকি?

আমার কথাটা শেষ হতে ই আলআবি ভাইয়া হুট করে আমার হাত ধরে উপর পিঠে একটা চুমু খেয়ে বসলেন। ঘটনা টা এতো তাড়াতাড়ি হয়েছে যে আমি বুঝে ওঠার আগেই আমার হাতটা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। আমার হাতটা ছেড়ে দিতেই অনুভব করলাম হাতের উপর পিঠে কেমন যেন ভিজে ভিজে  মনে হচ্ছে।যখন বুঝতে পারলাম আসলে ভিজে জিনিস টা কি তৎক্ষণাৎ হাতটা আলআবি ভাইয়ার  বাহুতে পাঞ্জাবির সাথে ঘষতে ঘষতে বলে উঠলাম,,,

--ই ছিঃ! খচ্চর লোক!আপনি আমার হাতে থুথু লাগালেন কেন?

-- তোমার ভাগ্য ভালো যে তোমার গালে লাগাই নি। এখন আমাকে আমার কাজ করতে না দিলে গালে যেটা লাগাইনি তাও লাগিয়ে দেবো।(আলআবি ভাইয়া)

কথাটা বলেই আর এক মুহূর্ত দেরি করলেন না। আমার দুই কানের উপর তার দুই হাত দিয়ে মাথাটা সিটের সাথে লাগিয়ে দিলেন। আমি তার দিকে আড়চোখে তাকাতেই এক হাত আমার চোখের উপর চেপে ধরে বললেন,,,

-নো মোর টক।

আমি আর কথা বাড়াতে গেলাম না।এমনিও মাথা ব্যাথা করছে। তাই চুপচাপ বসে রইলাম। আলআবি ভাইয়া মাথাটা টিপে দেওয়াতে আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করলো।একপর্যায়ে আমার চোখজোড়ায় গভীর ঘুম নেমে এলো।ঠিক কয় ঘন্টা ঘুমিয়েছি তা বলতে পারবো না।কারণ তখনকার সময় টা মনে নেই।কিন্তু এখন সময় ৪ টা বেজে ৭ মিনিট।এসি এখনও চালু আছে। আমি চোখ মেলতেই নিজের মাথা আলআবি ভাইয়ার কাধের উপর আবিষ্কার করলাম। আমার হিজাব পরিহিত মাথার তালু বরাবর আলআবি ভাইয়ার গাল এসে ঠেকেছে। তিনি এখনো ঘুমে বিভোর। খেয়াল করলাম তার কালো রঙা শালটা আমার উপরে কিছুটা কাঁথার মতো করে দেয়া। ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি তাই কিছু সময় এইভাবে চুপচাপ বসে রইলাম। আমাদের পাশের সিঙ্গেল সিটে যে ব্যক্তি বসেছে খেয়াল করলাম ঘুমাতে ঘুমাতে তার মুখ হাঁ হয়ে আছে। আমার দৃষ্টির সীমানা যতদূর যায় ততদূর চোখ বুলিয়ে পরখ করে দেখি সকলেই ঘুমানো। বাইরে এখনো আলো ফোটেনি।আমি আলআবি ভাইয়ার মুখমন্ডল দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু  এই মুহূর্তটাকে আমার ভালো লাগার তালিকায় লিপিবদ্ধ করে নিচ্ছি। হাত ঘড়িটায় আরও একবার চোখ বুলাতেই দেখি ৪ টা বেজে ১৫ মিনিট। আমার মস্তিষ্ক হঠাৎ করে জানান দিল আমাদের দুজনের এই অবস্থায় থাকাটা অন্য কারো চোখে পড়লে অনেক দৃষ্টিকটু দেখাবে।তাই আমি খুব ধীরে ধীরে সতর্কতার সহিত আলআবি ভাইয়ার মাথাটা সিটের সঙ্গে এলিয়ে দিলাম।তার চোখের চশমা টা খুলে আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলাম।শালটাকেও তার গায়ে কাঁথার মতো জড়িয়ে দিলাম।যেই না শালটা জড়িয়ে দিয়ে তার কাছ থেকে সরে আসতে নিলাম ওমনি আলআবি ভাইয়া হুট করে আমার হাত ধরে বসলেন। এমনটা হওয়ায় আমি হকচকিয়ে উঠলাম।আলআবি ভাইয়া আমার দিকে তার ঘুম মাখা ফোলা ফোলা চোখজোড়া দিয়ে তাকালেন।কোথাও একটা শুনেছিলাম দিনের অন্য সময়ের চাইতে নাকি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার পরের মুহূর্তে মানুষের সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়।কথাটা মোটেও আমার কাছে যুক্তিসংগত মনে হতো না। কারণ আমি ঘুম থেকে উঠে মুখে তৈলাক্ত ভাব ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাইনি কোনদিন। কিন্তু আজ এমুহূর্তে মনে হচ্ছে সেই কথাটা আলআবি ভাইয়া সত্যি বলে প্রমাণ করে দিয়েছেন। সত্যি সত্যি আজ এমুহূর্তে আলআবি ভাইয়া কে আমার কাছে সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ বলে মনে হচ্ছে। আলআবি ভাইয়ার কন্ঠ শুনে আমার সম্বিৎ ফিরে এলো।

-- আমার ঘুমন্ত অবস্থায় সুযোগ নিতে যাচ্ছিলে?আমাকে বললেই তো পারো ইউ নিড অ্যা হাগ।কামঅন, আসো একটাই তো হাগ ব্যাপার না।

তার কথায় আমি রেগে গিয়ে বললাম,,,

--কি আমি সুযোগ নিতে যাচ্ছিলাম?বরং আপনিই তো সুযোগ নিয়েছেন। আপনিই তো এসে তখন আমার পাশে বসে মাথা টিপতে....

এটুকু বলেই থেমে গিয়ে আবারও বললাম,,, 

--দাড়ান! দাড়ান!আপনি তখন আমার মাথা টিপছিলেন কেন?আর আপনি জানলেন কি করে আমার মাথা ব্যাথা করছে।

--এমনি এমনি বাতাসেই তো আর বড় হইনি। তুমি না বললেও তোমার চোখ আমাকে বলে দেয় তোমার কি প্রয়োজন।(আলআবি ভাইয়া)

কথা টা বলে আর এক মুহূর্ত দেরি করলেন না। আমার হাত থেকে তার চশমাটা নিয়ে পিছনের সিটে গিয়ে রেনুমাকে সামনে পাঠিয়ে দিলেন।আলআবি ভাইয়াকে যত দেখছি ততই মনে হচ্ছে তার প্রতি দুর্বল হয়ে পরছি।আমার মস্তিষ্ক বলে তাকে কিছু সময়ের জন্য দূরে দূরে রেখে শাস্তি দেয়া দরকার। কিন্তু মন বলে জুইঁ তাকে আগলে আপন করে নে।তোকে ভালোবাসার মানুষ এর অভাব না হলেও তার মতো করে কেউ তোকে ভালোবাসবে না।

রেনুমা আমার পাশে আসার পর জানতে পারি ওর ভাষ্যমতে,আলআবি ভাইয়া ওকে সজল ভাইয়ার সাথে বসার সুযোগ করে দেয়ার জন্যই সামনে এসে আমার সাথে বসেছেন।

[বান্দরবানের সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। এ সম্পর্কে জ্ঞান নিতান্তই কম রয়েছে। তাই কিছু কিছু জায়গায় আমি আমার মতো করে কল্পনা থেকে লিখব। আর কিছু কিছু জায়গায় সঠিক ইনফরমেশন দেওয়ার চেষ্টা করবো।যদি কোন ইনফরমেশনে ভুল হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]

ঘড়িতে যখন ঠিক পাঁচটা বেজে আঠারো মিনিট তখন আমরা বান্দরবানের জেলা শহরে এসে পৌঁছাই।এখান থেকে যে গাড়িগুলো যায় ও গুলোকে মূলত চান্দের গাড়ি বা চাঁদের গাড়ি বলা হয়। চাঁদের গাড়ীতে করে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে আমরা থাকার জন্য যে রিসোর্ট বুক করেছি সেখানে এসে পৌঁছালাম। এর মাঝে একবার চেকপোস্টে গাড়ি থেমে ছিল।রিসোর্ট থেকে একজন লোক এসে আমাদের রিসিভ করে রিসোর্টের ভিতর নিয়ে গেল। এই রিসোর্টায় মোট বিশটা সিঙ্গেল রুম রয়েছে। প্রত্যেকটা কে বলা হয় ভিলা। আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ মিটার দূরত্বে একেকটা ভিলা স্থাপিত হয়েছে। প্রত্যেকটা ভিলায় দুইজন থেকে চারজনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এক নম্বর ভিলায় উঠেছে  ফারাবী ভাইয়া আর মিথিলা আপু। দুই নম্বর ভিলায় আলআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়া।তিন নম্বর ভিলায় আমি আর রেনুমা উঠেছি। আর চার নম্বর ভিলায় নিয়াজ ভাইয়া আর ভাবি কে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বাকিগুলোতে অন্যান্য কলিগদের দেওয়া হয়েছে।আমার কালকে আলআবি ভাইয়ার রিসোর্ট ওপেনিং এ যাবো।

 আমরা যে যে যার যার ভিলায় এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করার জন্য বের হলাম। এখানে রিসোর্ট এর ভিতরে খাবারের জন্য ছোটখাটো একটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যদি সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে চাই তাহলে ওরা সেই ব্যবস্থা করে দেবে অর্থাৎ বড় ডাইনিং টেবিলের মতো ব্যবস্থা করে দিবে আবার যদি চাই ছোট টেবিল এর ব্যবস্থা ও করে দিবে। তাই আমরা ৮জন একসঙ্গে খেতে বসলাম।অন্য টেবিলে নিয়াজ ভাইয়ার অফিসের কলিগ চারজন চারজন করে বসেছে। খাবার টেবিলে মিথিলা আপু আর ফারাবি ভাইয়ার সঙ্গে টুকটাক কথা হলো। ফারাবী ভাইয়া আর মিথিলা আপু নিয়াজ ভাইয়ার বোন হিসেবে নাকি আগে থেকেই আমাকে চেনেন। খাওয়ার আগে নিয়াজ ভাইয়া বাবাকে কল করে জানিয়ে দেয় আমরা এখানে পৌঁছে গিয়েছি।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে আমরা নিজ নিজ ভিলায় ফেরত আসলাম। আমরা যেই রিসোর্টে  উঠেছি তা নীলগিরির খুব কাছেই। আমাদের ভিলার ছোট্ট বারান্দায় দাঁড়ালে নীলগিরির হেলিপ্যাড এর কিছু অংশ এখান থেকেই দেখা যায়। প্রত্যেকটা ভিলাতে ছোটখাটো একটা কিচেন রয়েছে, রাতে রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও যেন এখানে চা কফি বানিয়ে খেতে পারি। এখন বাজে ঠিক সকাল সাড়ে সাতটা। আমরা সবাই রেস্ট নিয়ে ঠিক বারোটার মধ্যে আমাদের দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নামাজের পরে নীলগিরি ঘোরার উদ্দেশ্যে রওনা দিব। যেহেতু আমরা এখানে পিকনিকের উদ্দেশ্য করে আসে নি সেহেতু অন্যান্য কলিগরা তাদের মতো করে ঘোরাফেরা করবে আর আমরা আমাদের মতো ঘোরাফেরা করব।

দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে সাদুকে কল দিয়ে জানিয়ে দেই আমরা খুব ভোরে এখানে এসে পড়েছি। ওর সাথে কথাবার্তা শেষ করে যোহরের নামাজ পরে আমরা সবাই নীলগিরির সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়ি।

নীলগিরি থেকে ঘোরাফেরা করে আসতে আসতে আমাদের সন্ধ্যা হয়ে যায়।নীলগিরিতে একটা হোটেলে আমরা বিকেলে হালকা পাতলা নাস্তা করে নিয়েছিলাম। নীলগিরি থেকে ফিরে বিশ্রামের পর রাত ৯ টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে সবাই ফারাবী ভাইয়া আর মিথিলা আপু ভিলায় জড়ো হলাম। কারন তাদের বারান্দাটা সবচাইতে বড় আর এখান থেকে ভিউ টাও খুব সুন্দর।সবাই মিলে বারান্দাতেই আড্ডার আসর বসিয়ে দিলাম। সবাই বলতে আমি আর রেনুমা বাদে। ভাইয়া,ভাবি আপু ওরা সবাই ওদের ভার্সিটি লাইফের কথা বলছে। মাঝেসাঝে অন্যান্য কথাও বলছে। আমি আর রেনুমা দু'একটা কথা বলছি মাঝখান দিয়ে। ওদের আড্ডায় বসে থাকতে খুব একটা ভালো লাগছে না আবার খারাপও লাগছে না। হঠাৎ করেই সজল ভাইয়া বলে উঠলো,,,

-- আলআবি কিন্তু আমাদের ফ্যামিলি সিঙ্গার। আগে কলেজ লাইফে থাকতে মাঝে মাঝে যখন সব কাজিনরা এক হতাম তখন ও থাকতো আমাদের আড্ডার মধ্যমণি। তার কারণ ছিল ওর গান।

--আলআবি শুরু করে ফেল।(ফারাবী ভাইয়া)

--দোস্ত আজকে এই জায়গার মধ্যমনি হয়ে যা।নে শুরু কর।(নিয়াজ ভাইয়া)

ওদের জোরাজোরি তে আর টিকতে না পেরে আলআবি ভাইয়া কোন প্রকার বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই খালি কন্ঠে গাইতে লাগলেন,,,

তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি,
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রং মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রং দিয়ে তোমাকেই আঁকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি।

প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে, ও.. তোমাকে।

স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
আর দুটি নিয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে, ও.. তোমাকে।


রেনুমার ডাকে সকালে ঘুম থেকে উঠলাম।রেনুমা বলেছিল ও সকাল ১০ টার আগে ঘুম থেকে ওঠে না।আমার এলার্মের আগেই ও আমায় ডেকে দিয়েছে।আমি বিছানায় বসে চোখ বন্ধ করেই বললাম,,, 

--রাতের চাঁদ মনে হচ্ছে দিনেই দেখতে পাচ্ছি। তা ব্যাপারটা কি?ভোর বেলাই উঠে পরলে যে।

--আরে এখন বাজে ৪:৩৫।তুমি তো একটু পরেই নামাজের জন্য উঠতে।তাই আরকি। (রেনুমা)

আমি চোখটা খুলে ওর দিকে সন্দেহ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে গলায় অবিশ্বাসের রেশ টেনে বললাম,,, 

--আমাকে ওঠানোর জন্য?সত্যি তো?

--সস..সত্যি নাতো কি মিথ্যা নাকি?(রেনুমা)

আমি একটু অনুকরণ করার ভঙ্গিমায় বললাম,,,

--কেউ একজন বলেছিল "ইশ ওনাকে যদি রাত-দিন চব্বিশ ঘন্টাই বসে বসে দেখতে পারতাম।আপু কালকে কিন্তু আমাকে ভোরবেলাই ডেকে দিবে"।

আমি কথাটা শেষ করতেই দেখি রেনুমা দৃষ্টি লুকানোর জন্য এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।আসলে কাল রাতেই একফাঁকে রেনুমা কথার তালে তালে এই কথাটা বলে ফেলেছিল।রেনুমার একটা স্বভাব হলো পেটে কথা হজম করতে পারে না।আর তার থেকে আরেক টা মজার স্বভাব হলো সজল ভাইয়াকে উনি ওনার বলে সম্মোধন করে। সামনাসামনি আপনি বলে কথা বলে। এপর্যন্ত ভাইয়া ডাক ওর মুখ থেকে শুনিনি। আমাকে বলেছিল ভোরবেলা যেন ওকে আমি ডেকে দেই।কিন্তু আমার আগে দেখি ওই উঠে গেছে। এখন তো আমারই ডাউট হচ্ছে  ও সারারাত ঘুমিয়েছে কিনা?
আমি বসে বসে যখন কালকের কথা ভেবে যাচ্ছিলাম তখন রেনুমা বলে উঠলো,,, 

--তুমি যা ভাবছো ঠিক তাই ই।এখন উঠেই যখন গিয়েছি তাহলে  ফজর এর নামাজ টা পড়ে চলো তাড়াতাড়ি বাইরে যাই।

--ওহোওওও এতো তাড়া।ঠিক আছে চলো তাহলে।

দুজনে মিলে নামাজ পড়ে কিছু সময় পরে সাড়ে পাঁচ টার দিকে ভিলা থেকে বের হলাম।আমি আমার পড়নের থ্রি-পিছ টার ওড়না টা ভালো করে মাথায় দিয়ে নিলাম।আমরা বের হতেই দেখি নিয়াজ ভাইয়া আর ভাবি ও বের হয়েছে। নিয়াজ ভাইয়া আমাদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,

--শোন রিসোর্টের শেষ মাথায় একটু ফাঁকা স্পেস আছে।বসার জায়গাও আছে।আমরা নাস্তা করে আপাতত ওখান টা ঘুরে দেখে আসবো। তোরা দুজন চাইলে সামনে এগোতে পারিস।আমি আলআবিদের কল করে ডেকে নিচ্ছি।

রেনুমা ফট করে বলে উঠলো,,, 

--না না।আমরা আগে আগে যাবো কেন?চলেন একসাথে ই যাই।

আমি ওর কান্ডে মিটমিটিয়ে হাসলাম।নিয়াজ ভাইয়া আলআবি ভাইয়াদের কল করতেই দেখতে পেলাম তারা দুজন অলরেডি ভিলা থেকে বের হচ্ছে। আলআবি ভাইয়াকে দেখলাম সাদা টি-শার্ট এর সঙ্গে সাদা টাউজার পড়েছেন।তার চুল গুলো একহাত দিয়ে পিছনে চেপে দিয়ে আমাদের সামনে এসে হাজির হলেন।হঠাৎ করেই এক উদ্ভট ভাবনা মস্তিষ্কে হানা দিল। মনে মনে চিন্তা করছি যদি আলআবি ভাইয়ার চশমার কালো ফ্রেমটায় শুভ্র রঙ স্থান পেতো,  কালো চুলগুলোয় যদি শুভ্র রঙ স্থান পেতো, চোখের ভ্রু থেকে শুরু করে চোখের পাপড়ি,গালের দাঁড়ি পর্যন্ত যদি শুভ্র রঙ ছেয়ে যেত তাহলে কেমন হতো?নিশ্চয়ই তাকে শুভ্র ভূত বলে ডাকতো সবাই।অথবা বলতো শুভ্র আলআবি। তাকে ভূত ভেবে বেজায় হাসি পেলো।মনে মনে যখন তাকে ভূত সাজাচ্ছিলাম তখন খেয়াল করলাম ফারাবী ভাইয়া আর মিথিলা আপুও এসে পরেছে।রিসোর্ট টা আমাদের ঘুরে দেখা হয়নি তেমন ভাবে।তাই কিছু  সময় এখানে ঘুরে ফিরে আমরা রিসোর্টের ওপেনিং এ ৯ টার দিকে বের হবো।

সবাই মিলে ধীর পায়ে এগোতে এগোতে রিসোর্টে এর শেষ প্রান্তে এসে পরলাম।এখানে এসে দেখি  অবাক কান্ড।খোলা আকাশে রঙবেরঙে এর ঘুড়ির মেলা বসেছে।লাল, নীল,হলুদ, সবুজ রঙের ঘুড়ি স্বচ্ছ নীল আকাশটাকে নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে।খোলা জায়গাটায় ঘুড়তে আশা নানান বয়সের পর্যটকরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাটাই সামলাচ্ছে। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় গুলো মনে হচ্ছে উকিঝুঁকি দিয়ে ঘুড়িবিলাস করে যাচ্ছে। পাহাড়ের গায়ে লেপ্টে থাকা সবুজ গাছ গুলো কাল শেষরাতে হওয়া বর্ষণে স্নান করে গায়ে স্নিগ্ধতা জড়িয়ে মুগ্ধ করেছে আগত পর্যটকদের।আকাশ একেবারে ঝকঝকে পরিষ্কার। মাঝে মাঝে তুলোর ন্যায় শুভ্র মেঘ এসে আমাদের দেখা দিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের সামনে হাজির হলেন রিসোর্টের ম্যানেজার।তার হাতে থাকা ফাইলটা একটু নেড়ে আলআবি ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে বললেন,,, 

--গুড মর্নিং স্যার!আমাদের এখানে আমরা "ঘুড়ি উৎসব" নামে একটা ছোটখাটো উৎসবের আয়োজন করেছি।আমাদের পক্ষ থেকে এখানে আসা পর্যটকদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে এই উৎসব।স্যার আপনারা চাইলে ইনজয় করতে পারেন।

--সকালবেলা  ঘুড়ি উৎসব! ব্যাপারটা কেমন হয়ে যায় না?(আলআবি ভাইয়া)

-- স্যার আসলে বিকেলে দেখা যায় পর্যটকদের অনেকে ঘোরাফেরা করে ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসে।সব দিক চিন্তা করে সেজন্য আমরা সকালের দিকে আয়োজন করেছি।(ম্যানেজার)

--ইন্টারেস্টিং তো!(ফারাবী ভাইয়া)

-- ভাইসব চল তাহলে একবার প্রতিযোগিতা হয়ে যাক। (সজল ভাইয়া) 

আলআবি ভাইয়া ম্যানেজারের উদ্দেশ্যে বললেন,,,

--ঠিক আছে আমরাও তাহলে পার্টিসিপেট করবো 

শুরু হয়ে গেল তাদের চারজনের ঘুড়ি কাটাকাটির প্রতিযোগিতা। কিছু কিছু মানুষ নিজেদের ঘুড়ি ওড়ানো বাদ দিয়ে নিয়াজ ভাইয়া দের ঘুড়ি প্রতিযোগিতা উপভোগ করেছেন।আমি, রেনুমা,তাসফি ভাবি আর মিথিলা আপু বসার জন্য যে বেঞ্চ রয়েছে সেখানে বসে  বসে তাদের দেখেছি।

 সজল ভাইয়া আর নিয়াজ ভাইয়ার ঘুড়ি অনেক আগেই আকাশ থেকে বিদায় নিয়েছে।এখন আলআবি ভাইয়া আর ফারাবী ভাইয়া মানে দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। টানটান উত্তেজনার ইতি ঘটিয়ে ফারাবী ভাইয়া প্রথম হলো।

আমরা যেখানে বসে আছি তার পাশেই আর একটা বেঞ্চ আছে। সজল ভাইয়া আর আলআবি ভাইয়া সেখানে বসে পড়লেন। আলআবি ভাইয়া কে লেগপুল করতে করতে ফারাবী ভাইয়াও এসে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে পরলেন। ফারাবী ভাইয়া মিথিলা আপু কে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,

-- মিথু চলো আজকে তোমাকে ঘুড়ি ওড়ানো শিখিয়েই ছাড়বো।

--এখন?এখানে?(মিথিলা আপু)

ফারাবী ভাইয়া মিথিলা আপুর এক হাত ধরে বসা থেকে টেনে তুলে বললেন,,,

-- হ্যাঁ এখন। এই মুহূর্তে ই চলো।

তারা যেতেই ভাবি নিয়াজ ভাইয়া কে বলল,,, 

--প্লিজ চলনা আমরাও ঘুড়ি উড়াই? 

--এই সময়ে একদমই না (নিয়াজ ভাইয়া)

--প্লিজ চলো না বেশি সময় না। প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ!(ভাবি)

--বেশি নড়াচড়া করবে না।(নিয়াজ ভাইয়া)

--তুমি বললে সারা জীবনেও নড়াচড়া করবো না। এখন প্লিজ চলো।(ভাবি)

নিয়াজ ভাইয়া স্মিত হেসে বলল,,, 

--ওকে চলো।

ওরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পর সামনে তাকিয়ে দেখি নিয়াজ ভাইয়ার দুই বাহুর মধ্যে তাসফি ভাবি। দুজনই এক নাটাই দিয়ে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে।ফারাবী ভাইয়া আর মিথিলা আপুরও একই অবস্থা। পাশ থেকে রেনুমা বলে উঠলো,,, 

--হাউ রোমান্টিক! 

আমাদের দুই বেঞ্চের দুরত্ব বেশি নয়।রেনুমার বলা কথাটা শুনে সজল ভাইয়া বলল,,,

-- তুই এইটুকুন বয়সে রোমান্টিকের কি বুঝিস?

--আপনি তো বুড়ো বয়সেও রোমান্স কি বুঝলেন না।(রেনুমা)

--এক চড়ে দাঁত ফেলে দিব।বেয়াদব মেয়ে!তোর মাকে এখনই কল দিয়ে জানাচ্ছি। (সজল ভাইয়া)

--কি বলবেন?আপনি বুড়ো বয়সে ও রোমান্স শিখতে পারেননি বলবেন।(রেনুমা)

রেনুমার বলা কথায় আমি আর হাসি চেপে রাখতে পারলাম না। কিছু টা শব্দ করে ই হেঁসে ফেললাম। রেনুমা যে সজল ভাইয়া কে জব্দ করায় ওস্তাদ তা বুঝতে বাকি নেই।আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,, 

--ভাই মানসম্মান আর ও প্লাস্টিক বানানোর ইচ্ছা থাকলে আরও কিছুক্ষণ বসতে পারিস।

তৎক্ষনাৎ সজল ভাইয়া হনহন করে চলে গেলেন।সজল ভাইয়ার প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গে খিলখিল করে আমি আর রেনুমা হাসতে শুরু করলাম। আমাদের হাসির মাঝেই আলআবি ভাইয়া রেনুমাকে বললেন,,, 

--যা তো।গিয়ে দেখ তোদের ভিলায় গিফট পৌঁছেছে নাকি?

রেনুমা উত্তেজিত হয়ে বলল,,, 

--কিসের গিফ্ট?

--গেলেই তো জানতে পারবি।যা গিয়ে দেখ।(আলআবি ভাইয়া)

রেনুমা আমার একহাত ধরে বলল,,,

--জুইঁ আপু চলো।

আমি রেনুমার সাথে যাওয়ার জন্য উঠতেই আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,, 

--ওর যাওয়ার দরকার নেই।তুই গিয়ে দেখ।

কথাটা শুনে আমি বলে উঠলাম,,, 

--আমি যাব না কেন?

--কারণ গিফ্ট ওর।ও যাবে।(আলআবি ভাইয়া)

আলআবি ভাইয়া আবার রেনুমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,, 

--কিরে তুই এখানে দাঁড়িয়ে যে?

তার কথায় রেনুমা একাই চলে গেলেন।রেনুমা চলে যেতেই আলআবি ভাইয়া হুট করে আমার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে পরলেন। তার এভাবে দাঁড়ানোতে আমি দু পা পিছিয়ে গেলাম।আলআবি ভাইয়া আমাকে বললেন,,, 

--তখন ম্যানেজার কি বলেছিল মনে আছে? 

আমি একটু ভ্রুকুচকে বলে উঠলাম,,, 

--কি বলেছিল? 

--ইনজয় করতে বলেছিল। (আলআবি ভাইয়া) 

--করেন ইনজয়।আমাকে বলছেন কেন?(আমি)

--ওকে লেট'স গো।(আলআবি ভাইয়া)

বলেই আমার হাত ধরে হাটা ধরলেন।২০ নাম্বার ভিলার পিছনে এসে আমার হাত ছেড়ে দিলেন। আমার মনে প্রশ্ন জাগলো উনি এখানে আনলেন কেন?তাও আবার একা।হায়!হায়!আমাকে এখান থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিবেন না তো?এখান থেকে ভূপৃষ্ঠ ভালোই নিচে। মানুষ পরলে ওঠার কোনো চান্স নেই।আমি ভয়ে ভয়ে তার দিকে তাকালাম।দেখি পাশে উনি নেই। পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখি ওনার হাতে একটা খাঁচা। সেখানে তিনটা টিয়ে পাখি দেখা যাচ্ছে। আমি উৎফুল্লতার সহিত বললাম,,, 

--টিয়াপাখি! কি করবেন এগুলো? 

--পাখি খাঁচায় পুরে রাখার জিনিস নয়। আল্লাহ তো এদের ডানা এমনি এমনি দেয়নি।আসো এদিকে আসো।(আলআবি ভাইয়া)

আমি তার কাছে যেতেই একটা পাখি আমার হাতে তুলে দিলেন।পাখিটা হাতে নিতেই খুশি লাগছে অনেক।হাতের মধ্যে নিয়েই পাখি টাকে দেখতে লাগলাম। হুট করে আলআবি ভাইয়া আমার পিছনে দাঁড়িয়ে পরলেন। আমি দুই হাতে পাখি টাকে ধরে রেখেছি।আলআবি ভাইয়া পিছন থেকে আমার হাত ধরে পাখিটাকে আলগা করে নীল আকাশে মুক্ত করে দিলেন। পাখিটা উড়তে উড়তে চলে যাচ্ছে ।কানের কাছে ফিসফিসে আওয়াজে ভেসে আসলো,,,

--ইট ওয়াস ইউর গিফ্ট।



চলবে...



Writer:- হুমাশা এহতেশাম


NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner