-প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন আমার খুব কস্ট হচ্ছে...
-তোকে আগে ভাবা উচিত ছিল... (আমাকে ছেকা দিতে লাগল আর একটা উন্মাদের মত আচরন করছে)
-ও আম্মু গো বাচাও আমাকে এই লোক আমায় মেরে ফেলবে। কেউ বাচাও আমাকে(ব্যাথায় চিৎকার করে কাদতে লাগলাম)
-ওই চুপ একদম কথা বলবি না বুঝছিস...
আমার কান্নার আওয়াজ শুনে আমার শাশুড়ি আর ননদ আসলো...দরজার অকান থেকে বললল....
-বউমা তোমার কিছু হয়েছে...তুমি কাদছো কেন....
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই জানোয়ারটা আমার মুখ চেপে ধরে। এবং আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে সাবধান করে দেয় যেন আমি বেশি চিৎকার না করি। আমি ভয় পেয়ে চুপ হয়ে গেলাম....
-কই আম্মু কিছু হয় নাই তো। মনে হয় পাশের বাসায় আবার মারামারি লাগছে...
-অহ বউমা ঠিক আছে তো...
-হুম মা ও তো ঘুমুচ্ছে....
-ওহ...
শাশুড়ি মা চলে যাওয়ার পর উনি আমার মুখ ছেড়ে দিলেন। আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। আর একটু হলেই হয়ত আগামি দিন আমাকে কবরে থাকতে হত। উনি আমার কাছে আসতে চাইছে...
-খবরদার আমার কাছে আসবেন না বলে দিলাম...আমি কিন্তু নিজেকে শেষ করে দিব....
-বিশ্বাস কর আমি তোমাকে খুব ভালবাসি...ছয় বছর আগে থেকে....
এই লোক পুরাই সাইকো এখন বুঝলাম। আমাদের দেখা মাত্র তিন মাস আর এই লোক বলে ছয় বছর। এমন একটা সাইকো ছেলে আমাকে দুই দিনে মেরে ফেললবে....
-যদি সতিই ভালবাসতেন তাহলে এইভাবে কস্ট দিতেন না...সরুন..(কাদতে কাদতে বিছানার একপাশে গুটি শুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়লান)...
।
।
ঘুম আসছে না ব্যাথায়। দুই হাত জ্বলে যাচ ্ছে।চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছা হয়। কিন্রু জানোয়ারটা যদি আবার মারে। একটু পর সাইকো লোকটা আবার ঘরে আসলো, হাতে বরফ আর মলম।কিছু না বলেই আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে উঠিয়ে নিজের কোলে বসালো। আমি কিছুই বলতে পারলাম না এই ভয়ে যদি আবার মারে......
-তোমার অনেক কস্ট লাগছে তাই না সোনা....(কাদছে আর বরফ লাগিয়ে বলছে)
-আমাদের কি কস্ট হয় নাকি....(রাগি হয়ে বললাম আর উঠে যেতে লাগলামম)
উনি আমায় একটানে আবার নিজের কোলের মাঝে বসিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মলম লাগিয়ে দিতে থাকলো....
-জানো এই কয়েক বছর আমি তোমাকে ছাড়া একদম ভাল ছিলাম না...সবাই আমাকে সাইকো বলে কিন্তু আমি জানি তুমি আমায় এখনো ভালবাসো.....
লোকটা পাগল নাকি। বারবার বছরের কথা বলে কেন?আমি তো এই লোকটাকে চিনিই না।তার চোখের দিকে তাকালাম কিছুক্ষন আগে যার চোখে শুধুই হিংস্রতা ছিল এখন সেই চোখে শুধুই ভালবাসা।চোখ দিয়ে খালি পানি পড়ছে তার। মনে হয় আমার কস্ট হলে এই পশুটারো কস্ট হয়.....
-ম্যাজিক দেখবা তোমার কস্ট একেবারে শেষ হয়ে যাবে সোনা...
-কিভাবে..(কাদো কাদো হয়ে)
উনি কিছু না বলে আমার দুই হাতে চুমু দেয়া শুরু করলেন। সত্তি কথা বলতে একদম সব কস্ট চলে গেল। একে কি বলে আমি জানি না। এরপর কিছু না বলেই আমাকে বিছানায় ফেলে দিল। তারপর আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমি কিছুতেই ছাড়াতে পারলাম না....
।
।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি তার বুকে ঘুমিয়ে আছি। পশুটা যেভাবে ঘুমিয়ে আছে কেউ বলতেই পারবে না এ একটা সাইকো......
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে আসতে যাব ঠিক তখনি উনি আমাকে দেয়ালের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। এই লোকের শক্তিতে কিছুতেই পেরে উঠা যাবে না। উনি কিছু না বলে আমাকে কিস করা শুরু করলেন। যতই ছাড়ানোর চেস্টা করি তত শক্ত করে কিস করে। আল্লাহ গো এই লোক থেকে আমাকে বাচাও। এই লোকের মাথায় কোন সময় কি চলে কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। উনার কিসে আমার দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। প্রায় পনের মিনিট পর আমাকে ছাড়লো। আমি রুমের বাইরে চলে আসি এক দৌড়ে....
।
।
বাইরে এসে দেখি মা রান্না করছে। আমাকে দেখে খুব খুশি হলেন...
-আয় মা খেতে আয়...
আমার শশুড় শাশুড়ি খুব ভাল মানুষ। একজন সাধারন কর্মচারির মেয়েকে যারা হাসি মুখে একমাত্র ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেয় তারা কখনোই খারাপ হতে পারে না। এমন সময় আমার ছোট ননদ বলে উঠলো...
-সোনা ভাবি তুমি আমার পাশে বসবে....
আমার ননদ এইবার এস এস সি দিয়েছে। দেখেই মনে হয় খুব দুস্টুমি করে। আমি গিয়ে ওর পাশে বসলান। এমন সময় বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন....
-আমাদের ক্ষমা করে দে মা। আমরা কোন দিনি এইভাবে তোকে বউ করে আনতে চাই নাই। কি করব বল ছেলেটাকে কিছুই বলতে পারি না। কিছু বললে নিজের ক্ষতি করে বসে থাকে.....
এই বাসার লোক গুলা এত ভাল কেন। আমার বাবাও বলেছে আমার শশুড় নাকি খুব ভাল মনের মানুষ।অফিসের লোক দের নাকি নিজের পরিবারের মত আগলে রাখে.....
।
।
-কি হল মা খাচ্ছিস না কেন...
-না মানে...(খাবো কিভাবে হাত আমার পুড়ে গিয়েছে)
-ভাবি তোমার হাতে কি এগুলো...(ননদ বলে উঠলো)
-কই দেখি দেখি..(মা)
-না কিছু না...
মা জোড় করে আমার হাত দেখল। আমিও বাচ্চাদের মত ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিলাম....
-দেখছ তোমার ছেলের কান্ড কি করছে মেয়েটার অবস্থা....
-তন্ময় এই তন্ময় (বাবা হুংকার ছাড়ল)
-কি হয়েছে আব্বু(চোখ মুছতে মুছতে বলল)
-ঠাস ঠাস...
তুই দিন দিন জানোয়ার হয়ে যাইস কেন। কি অবস্থা করেছিস মেয়েটার....
মাইর খেয়ে উনি আমাদের সামনে আবার পাগলের মত করতে লাগলো। মা শান্ত করতে গেলে বাবা মায়ের হাত ধরে ফেলে কারন এখন কি থেকে কি করে ফেলবে বলা যায় না। ঘরের সব আসবাব ভেঙে চলে গেল। বাবা নতুন আসবাবের অর্ডার দিলেন......
।
।
এখন আমাকে মা খাইয়ে দিতেছে..
-মাফ করে দে মা আমার ছেলেটা যে কি থেকে কি করে ফেলে ও নিজেই কিছু আচ করতে পারে না...
-উনার কি কোন প্রবলেম আছে...
-ছয় বছর আগের ঘটনার পর ওর মাথায় সমস্যা হয়....ডাক্তার বলেছে আর যা খুশি করতে দিতে না হলে আমরা ওকে হারিয়ে ফেলতে পারি....
কি হয়েছিল উনার ছয় বছর আগে। আমাকে জানতেই হবে। বিকেলে দেখি ঘরে ফিরে আসছে উনি..এসেই মায়ের রুমে গেল..
-তুই মেয়েটাকে এইভাবে কস্ট দিলি কেন বাবা....
-ওহ কেন ছয় বছর আগে আমাকে কস্ট দিছে। ওহ তো জানতই আমি ওকে কত ভালবাসি....
ওহ আল্লাহ এই সাইকো আমারে ছয় বছর আগে কই পাইলো। রাতের বেলা খেয়াল করলাম লোহা গরম করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। চোখে আগের দিনের মত পশুত্ব.. আমি এক পা করে পিছু হচ ্ছি আর উনি এগিয়ে আসছে....
চলবে...
Writer:- Aronno Joy