> তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব ৩৩, ৩৪ - Bangla Love Story - প্রেমের গল্প - ভালোবাসার গল্প - Bangla New Story - রোমান্টিক গল্প - দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প
-->

তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব ৩৩, ৩৪ - Bangla Love Story - প্রেমের গল্প - ভালোবাসার গল্প - Bangla New Story - রোমান্টিক গল্প - দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প

বন্ধ কর তোমার এসব নাটক। তুমি বললে আর আমরা বিশ্বাস করে ফেলব যে কণা অহিকে ধাক্কা দিয়ে পাহাড় ফেলে দিতে চেয়েছিল। কণা নিজের থেকে বেশি অহিকে ভালোবাসে। কণা হাসতে হাসতে অহির জন্য প্রাণ দিয়ে দিতে পারে। সেখানে কণা অহির ক্ষতি করবে এটা হয়তো কণা স্বপ্নেও ভাবতে পারে নাহ। ( সাফাত রেগে চিৎকার করে বলে  )

শুরু হয়ে যায় কথা কাটা কাটি চিৎকার চেঁচামেচি। এসবের মাঝে আভিয়ান একদম চুপ। কোনো কথা বলছে না। চোখ বন্ধ করে নিরব দর্শকের মত সবকিছু শুনে যাচ্ছে। আভিয়ান এমন একটা ভাব করছে যেনো, এখন সে কথা বললে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। 
এর মাঝে একজন নার্স এসে সবাইকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। 

এটা কী ঝগড়া করার জায়গা? আপনাদের ঝামেলা আপনারা বাসায় গিয়ে মিটান। এখানে একদম চিৎকার চেঁচামেচি করবেন নাহ। আপনাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে পেসেন্টের প্রবলেম হচ্ছে। অন্য পেসেন্টের কথা না ভাবলেও নিজেদের পেসেন্টের কথা তো একবার ভাববেন। 

কথাগুলো বলো নার্স চলে যায়। সাফাত গিয়ে আনোয়ার চৌধুরীর হাত ধরে বলে, 

পাপা তোমার কাছে কোনোদিন আমার কিছু চাইতে হয়নি। না চাওয়ার আগে বুঝে ফেলতে আমার কী প্রয়োজন? মাম্মা মারা যাওয়ার পর থেকে তুমি আমাকে বাবা-মা দুজনের ভালোবাসা দিয়েই বড় করেছ। কখন আমাকে মায়ের অভাব বুঝতে দাওনি। মায়ের অভাব পুরণ করতে পারলেও তুমি বোনের অভাবটা পুরণ করতে পারনি। মাম্মা যখন এক্সিডেন্ট করে মারা যায় তখন মাম্মা ৮  মাসের প্যাগনেন্ট ছিল। আর ডক্টর বলেছিল আমার বোন হবে। তখন আমি কতটা খুশি হয়েছিলাম সেটা তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না। আমি  আমার বোনকে নিয়ে একটা স্বপ্নের পৃথিবী সাজিয়ে ফেলেছিলাম। মাম্মা এক্সিডেন্টে আমার স্বপ্নের পৃথিবী ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
সবাই যখন তার বোনকে হাত ধরে নিয়ে স্কুলে যেত, ঘুরতে যেত। তখন শুধু আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম। আর মনে মনে ভাবতাম আমার যদি একটা বোন থাকত। কিন্তু সেটা কখন সম্ভব ছিল না। তুমি মাম্মাকে এতটাই ভালোবাসতে যে আর দ্বিতীয় বার বিয়ের কথা কল্পনাও করনি। তখন আমার পৃথিবী জুড়ে ছিল শুধু তুমি।

সাফাত কথাগুলো বলে একটু দম নেয়। সাফাতের চোখ দুটো টলমল করছে। যেকোনো সময় গড়িয়ে পড়তে পারে অশ্রু বিন্দু। সাফাত আবার বলতে শুরু করে। 

 কিন্তু এখন সেই পৃথিবীতে আরো দুইজন মানুষ যুগ হয়েছে। আমি ছোটবেলা থেকে কখন নিজের অনুভূতিগুলো ঠিক মত প্রকাশ করতে পারি না। তাই হয়তো কণা আর অহিকে আমি কতটা ভালোবাসি ওদের কখনো বুঝাতে পারিনি। তোমাদের কাউকে বুঝাতে পারব না ওরা দুজন আমার জীবনের কী? ওরা দুজন আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছে। অহি আমার ভালোবাসা কণা আমার বোন। তুমি, অহি আর কণা ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা করতে পারি না। তাদের মাঝে একজন নিখোঁজ। কোথায় আছে? কীভাবে আছে? কেউ জানে না। আরেকজন হসপিটালের বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। 
পাপা আমি কী করব? নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। কণার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও আত্নার সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে। আমি যতই রেগে থাকি না কেনো ও যখন সাফাত ভাইয়া বলে ডাকে তখন আমার রাগ গলে পানি হয়ে যায়। ওর মুখে ভাইয়া ডাক শুনলে ইচ্ছে করে সারাদিন ওকে সামনে বসিয়ে রেখে ওর মুখে ভাইয়া ডাক শুনি। ওর কথা শুনলে ম্যাজিকের মত আমার মন ভালো হয়ে যায়। ও পাপা আমি তো তোমার কাছে কোনোদিন কিছু চায়নি। আজকে চায়ছি আমার বোনকে খোঁজে এনে দাও, আমার ভালোবাসাকে সুস্থ করে দাও না বাবা। আমার বোন, আমার ভালোবাসা সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছে। 

কথাগুলো বলতে বলতে সাফাত বাচ্চাদের মত কেঁদে দেয়। আনোয়ার চৌধুরী চোখের কোণে পানি চিক চিক করছে। সাফাত উনার কাছে দ্বিতীয় বারের মত কিছু চাইল। প্রথম বার চেয়েছিল তার মাকে এনে দিতে। কিন্তু তখন তিনি অপারগ ছিলেন। তিনি মনে মনে প্রতিঙ্গা করলেন যেভাবে হোক সেভাবে কণাকে খোঁজে বের করবেন। পৃথিবী তোলপাড় করে হলেও তিনি কণাকে খোঁজে বের করবেন। পৃথিবীর বেস্ট ডক্টরকে দিয়ে দেখাবেন অহিকে।

________________

আনোয়ার চৌধুরী সাফাত আর অহিকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। সাফাত প্রথমে যেতে না চাইলে তিনি বলেন তিনি কণাকে খোঁজে বের করবেন। 

৭৩

আদিয়াত সোফায় বসে ল্যাপটপ কোলে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করছে। তখন কণা এসে আদিয়াতের পাশে বসে। কণা যে তার পাশে বসে আছে সেদিকে আদিয়াতের খেয়াল নাই। কণা রেগে রণচণ্ডী রূপ ধারণ করছে। আদিয়াত হয়তো কণাকে রাগানোর জন্যই কণাকে দেখেও না দেখার ভান করছে। কণা আদিয়াতের বাহুর কাছের শার্ট ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়। তবু আদিয়াতের হেলদুল নেই। সে নিজের মতই কাজ করে যাচ্ছে। কণা এবার আদিয়াতের কানের কাছে মুখ নিয়ে চিৎকার করে বলে, 

তুর্ণ ভাইয়য়য়য়য়য়া!!!

কণার চিৎকার আদিয়াত লাফিয়ে ওঠে। কোলের ল্যাপটপ নিচে পড়ে যায়। কণার এমন চিৎকারের জন্য আদিয়াত মোটেও প্রস্তুত ছিল না। কণা যে এত জুড়ে চিৎকার করতে পারে তার সম্পর্কে আদিয়াতের কোনো ধারণা ছিল না। সে জানে কণা বরাবর
 চুপচাপ, শান্তশিষ্ট ভদ্র মেয়ে। আদিয়াত কণার ডাকটা খেয়াল করতেই রেগে যায়। কণা তাকে ভাইয়া ডাকছে। আদিয়াত কণাকে সোফার সাথে চেপে ধরে। 

এই আমি তোমার কোন জন্মের ভাইয়া লাগি?
হ্যাঁ? যেভাবে ভাইয়া ডাকছ যেনো আমি তোমার মায়ের পেটের ভাই লাগি। ( দাঁতে দাঁত চেপে  )

কণা আদিয়াতের রাগ দেখে ভয় পেয়ে যায়। তবু কেনো যেনো তার আদিয়াতকে রাগাতে ভীষণ ভালো লাগছে। আদিয়াতকে আরেকটু রাগানোর জন্য কণা মুচকি হেসে বলে, 

ভাইয়া আপনি আমার সব জন্মের ভাইয়া লাগেন। মায়ের পেটের ভাইয়া না হোন আন্টির পেটের ভাইয়া লাগেন। বুঝছেন ভাইয়া? 

কণার প্রতি লাইনে দুইবার করে ভাইয়া ডাক যেনো আদিয়াতের রাগটা দ্বিগুণ করে দিল। আদিয়াত রাগে ফুসছে। আদিয়াতকে আরো রাগানোর জন্য কণা জুড়ে চিৎকার দিয়ে বলে, 

ভাইয়য়য়য়য়য়া!!! 

কণা ভাইয়া ডাকার সাথে সাথে আদিয়াত কণার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়। কণা চোখ বড় বড় করে আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। মিনিট পাঁচেক পড়ে আদিয়াত কণার ঠোঁট ছেড়ে দেয়। কণা ছাড়া পাবার সাথে সাথে ছিটকে আদিয়াতের থেকে দুরে সরে যায়। হাত দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে কণা কিছু বিড় বিড় করে বলে। যেটা আদিয়াতের কাছে অস্পষ্ট। তাই আদিয়াত কণার আরেকটু কাছে গিয়ে বলে, 

বিড় বিড় করে কী বলো ধূলিকণা?

এটাই বলছি যে আপনার মতো লুচ্চা ছেলে আমি আর একটাও দেখি নাই। কথায় কথায় ঠোঁটের ওপর হামলে পড়েন। যেনো আমার ঠোঁট সরকারী সম্পত্তি। 

আদিয়াত কণার দিকে একটু ঝুকে বাঁকা হেসে বলে, 

আমার মত আরেকজন দেখবে কী করে? আদিয়াত আয়মান তুর্ণ পৃথিবীতে একটাই। আদিয়াত আয়মান তুর্ণের জিনিসের দিকে তাকানোর সাহস কারো নেই সেখানে তার কলিজার সাথে কেউ অসভ্যতামু করবে প্রশ্ন ওঠে না। তাই তুমি আমার মতো লুচ্চু ছেলে আর দেখ নাই। তোমার ঠোঁট সরকারি সম্পত্তি কেনো হবে এটা তো আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। 

আদিয়াত কণার থেকে সরে গিয়ে বলে, আরেকবার যদি ভাইয়া ডাক তাহলে তোমার খবর আছে। 

একবার কেনো একশবার ডাকবো ভাইয়া। ভাইয়া,,,, ভাইয়া,,,, ভাইয়া,,, ভাইয় 

আমার কথার মাঝে তুর্ণ আমার হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে আসে। আমার হাত ধরে টানতে টানতে সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে নামছে। আর আসিফ বলে কাউকে ডাকছে। আমরাও ড্রয়িংরুমে পৌছায় আসিফও ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয়। 

এখন তুমি ভাইয়া ডাকার শাস্তি পাবে ধূলিকণা। গেট রেডি জান। এখন তুমি ননস্টপ আসিফকে ভাইয়া ডাকবে। কোনো থামাথামি নাই। থামলেই আসিফের সামনে তোমার ঠোঁটে ঠুস ঠাস কিস করব। 


এখন তুমি ভাইয়া ডাকার শাস্তি পাবে ধূলিকণা। গেট রেডি জান। এখন তুমি ননস্টপ আসিফকে ভাইয়া ডাকবে। কোনো থামাথামি নাই। থামলেই আসিফের সামনে তোমার ঠোঁটে ঠুস ঠাস কিস করব। 

কথাগুলো বলেই আদিয়াত সোফার ওপর পায়ের ওপর পা তুলে বসে পড়ে। কণার হাত ধরে টান দিয়ে কণাকেও তার পাশে বসিয়ে দেয়। চোখের ইশারায় আসিফকেও সামনে সোফায় বসতে বলে। 

নাউ স্টার্ট ধূলিকণা। একেবারে চিৎকার করে আসিফকে ভাইয়া বলে ডাকবে। 

কণা আদিয়াতের দিকে অসহায় ভাবে তাকাই।  আদিয়াত কণার তাকানোকে পাত্তা না দিয়ে কণাকে তাড়া দিয়ে বলে, 

তাড়াতাড়ি ডাক। 

আসিফ লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে সোফায় বসে আছে। 

( আসিফ আদিয়াতের গাড়ির ড্রাইভার। লাজুক প্রকৃতির একটা ছেলে। তার এখন ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। তার মেম তাকে ভাইয়া বলে ডাকবে। এটা ভেবে আসিফের লজ্জায় মরি মরি অবস্থা।  )

আদিয়াত কণার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলে, তোমার মনে হয় ফাস্ট অপশনটা চয়েজ হয়নি ধূলিকণা। তাহলে আমি সেকেন্ড অপশন অনুযায়ী কাজ শুরু করি। কী বলো? আসিফের সামনে ঠুস ঠাস ঠোঁটে কিস। করব নাকি? আমার কিন্তু ভালোই লাগে। সুইট টেস্ট। 

 

আদিয়াতের কথা শেষ হতে না হতেই কণা অনেকটা চেঁচিয়ে বলে, আসিফ ভাইয়য়য়য়য়া। 

বেচারা আসিফ কণার চেঁচানোর শব্দে ভয়ে সোফা থেকে ধপাস করে নিচে পড়ে গেছে। এর আগে তার নাম ধরে এমন ভাবে চিৎকার করে কেউ কখন ডাকেনি। তাই বেচারা একটু বেশিই ভয় পেয়ে গেছে। আসিফ একটু ভীতু প্রকৃতির ছেলে। অল্পতেই ভয় পেয়ে যায়। 

কী হলো? একবার ভাইয়া বলে থেমে গেলে কেনো? তখন তো আমাকে ভাইয়া বলে বলে মাথা খেয়ে ফেলছিলে। 

শুনুন নাহ। 

না বললে শুনব কী করে? 

আমার না গলা ব্যথা করছে। আপনাকে আর জীবনেও ভাইয়া বলে ডাকব না। প্লিজ এবারের মত মাপ করে দিন। 

এরপরে ভাইয়া বলে ডাকলে তোমার ঠোঁট শিলি করে দিব। মনে থাকে যেনো।

কণা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায় যে তার মনে থাকবে। আদিয়াত আসিফকে ইশারায় চলে যেতে বলে। যাওয়ার অনুমতি পাবার সাথে সাথে আসিফ এক দৌড়ে বাসার বাইরে চলে যায়। যেনো এতক্ষণ ধরে এটার জন্যই অপেক্ষা করছিল। 

আপনাকে একটা কথা বলার ছিল। 

হুম বল। 

আমি বাড়ি ফিরে যেতে চায়। আপনি আমাকে বাসায় ফিরিয়ে দিয়ে আসেন।  ( কণা আমতা আমতা করে বলে  )

আগামী এক বছরের আগে তুমি বাড়ি ফিরে যেতে পারবে নাহ। 

কীহহহ? আপনি পাগল হয়ে গেছেন? সবাই নিশ্চয়ই আমার জন্য টেনশন করছে। 

ওহ রিয়েলি। আমি ছাড়াও তোমাকে নিয়ে টেনশন করার মত কেউ আছে? তুমি বাঁচো বা মরো তোমার বাসার একটা লোকেরও এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। সেখানে তো তুমি নিখোঁজ এতে কারো মাথা ব্যথা নেই। তোমার কথা সবাই ভুলে গেছে। কণা বলতে যে কেউ আছে এটাই হয়তো সবাই ভুলে গেছে। 

আপনি ছাড়াও আমাকে নিয়ে টেনশন করার মত অনেকে আছে। অহি তো আমাকে পাহাড় থেকে পড়ে যেতে দেখেছে। অহি নিশ্চয়ই আমার জন্য কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে গেছে। অন্যেরাও তো আমার জন্য টেনশন করছে। সাফাত ভাইয়া, বন্যা, নোমান ভাইয়া, বড় আম্মু, আ......

আম্মু বলতে গিয়েও থেমে যায় কণা। সত্যিই কী তার মা তার জন্য টেনশন করছে? কণা থেমে যেতেই আদিয়াত হো হো করে হেসে দেয়। 

সিরিয়াসলি কণা তোমার মা তোমার জন্য টেনশন করবে। জেগে জেগে স্বপ্ন দেখ। যে মহিলা দিনে হাজার বার তোমাকে মরার কথা বলে সেই মহিলা তোমার জন্য টেনশন করবে। ব্যাপারটা হাস্যকর না ধূলিকণা।

সত্যিই তো আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি। আমি মরে গেলেই তো আম্মু বেঁচে যায়। সেখানে আমি থাকা না থাকাতে আম্মু টেনশন করবে। ব্যাপারটা সত্যিই হাস্যকর। 

আদিয়াত খেয়াল করে দেখে কণার মন খারাপ হয়ে গেছে। এখন তার নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে। সে এভাবে না বললে হয়ত কণার মন খারাপ হতো না। আদিয়াক কণার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। 

কে তোমাকে গুরুত্ব দিল বা না দিল তা নিয়ে কখন মন খারাপ কর না। জীবনে তুমি কি পাওনি সেটা নিয়ে চিন্তা কর না। চিন্তে করবে জীবনে কী পেয়েছ? জীবনে না পাওয়ার থেকে পাওয়ার খাতাটা অনেক বড়। যা পেয়েছ তা নিয়েই খুশি থেকো। তাহলে জীবনে সুখি হতে পারবে। 

কণা আদিয়াতের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। 

তুমি তোমার মায়ের ভালোবাসা পাওনি তো কী হয়ছে? আরো অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছ। আভিয়ান না মানে সাফাতের মত একটা ভাই পেয়েছ। তোমার রক্তের সম্পর্কের কেউ না হলেও তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। অহির মত একটা বোন, বন্যার মত একটা বান্ধবী পেয়েছ। জিয়ানের মত বন্ধু প্লাস ভাই পেয়েছ। নোমানের মত একটা কেয়ারিং জিজু পেয়েছ। এগুলো কী তোমার জীবনের কম প্রাপ্তি? কজন মানুষ আছে নিজের লোক ছাড়াও এতগুলো মানুষের ভালোবাসা পায়। 

........................
.....

আমরা মানুষের অনেক লোভী। যত পায় ততই চায়। কোনো কিছুতেই আমরা তৃপ্ত হই নাহ। কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়ার পরেও দেখবে তার আরও বেশি সম্পদের লোভ। সে চায় তার যদি আর বেশি সম্পদ হত। তাহলে সে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী হয়ে যেত। কারো লাইফে পারফেক্ট নাহ। সবার লাইফে কিছু না কিছুর অভাব থেকেই যায়। কারো টাকার অভাব কারো ভালোবাসার অভাব। খুব কম মানুষই আছে যারা ভালোবাসা আর অর্থ সম্পদ দুটোই একসাথে পায়। 

তাহলে আপনি অনেক ভাগ্যবান। আপনি দুটোই একসাথে পেয়েছেন। আমি আপনার মত এতো ভাগ্যবতী নই। তাই তো আমি বাবা-মার ভালোবাসা পায়নি। 

নিজেকে আনলাকি কেনো ভাবো? তুমি এতগুলো মানুষের ভালোবাসা পেয়েও নিজেকে আনলাকি ভাবছ। তুমি একবার এতিমদের কথা ভাব? তারা তো জীবনে কারোও ভালোবাসায় পায় নাহ। না বাবা-মা না পরিবারের। ইনফেক্ট তারা তো এটাও জানে না তাদের বাবা-মা কে?  বুঝ হবার পর থেকে নিজেকে এতিম খানায় নাহলে ফুটপাতে আবিষ্কার করে। অন্যের লাথি খেয়ে বড় হয়। পেট চালানোর জন্য ভিক্ষা করে, রাস্তার ময়লা কুড়ায় নয়ত রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ফুল বিক্রি করে। 

আদিয়াত কণার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, তুমি তো আর তাদের মত নও। শুধু মাত্র তোমার মায়ের ভালোবাসা, আদর পাওনি। চিন্তা কর না আমি এক্সট্রা ভালোবাসা আর আদর দিয়ে সব পুষিয়ে দিব। ( লাস্টের কথাটা চোখ টিপ দিয়ে বলে।  )

কণা লজ্জায় লাল, নীল হয়ে যায়। গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। 

আপনি আমাকে বাসায় দিয়ে আসেন নাহ। সবার কথা খুব মনে পড়ছে। 

বলছি না আগামী এক বছরের আগে তুমি নিজের বাসায় যেতে পারবে নাহ। এখন তোমার লাইফ রিস্ক আছে। যে তোমাকে মারতে চেয়েছিল। সে যদি জানে তুমি বেঁচে আছ। তাহলে তোমাকে আবার মারার চেষ্টা করবে। তোমাকে ঐ বাসায় যেতে দেওয়া মানে তোমাকে মৃত্যু দিকে ঠেলে দেওয়া। যেটা আমি কিছুতেই পারব নাহ। 

তাহলে বাসার কারো সাথে এট লাস্ট যোগাযোগ তো করতে দিন। 

সেটাও সম্ভব নাহ। যারা তোমাকে মারতে চেয়েছিল তাদের জানতে দেওয়া যাবে না তুমি বেঁচে আছ। 

অহি তো আমার জন্য টেনশন করছে। 

অহি আর সাফাত দেশের বাইরে চলে গেছে। সবাই ধরে নিয়েছে তুমি মারা গেছ। অহিকে সামলানো যাচ্ছিল না। দিন রাত তোমার রুমে দরজা বন্ধ করে বসে থাকত অহি। তাই তোমার স্মৃতি ভোলাতে সাফাত অহিকে নিয়ে এ দেশ ছেড়ে চলে গেছে। 

কণা মন খারাপ করে বলে, ওহ। 

আমি তোমাকে এখন সত্যিটা বলতে পারব না। তুমি অহির অসুস্থতার কথা জানতে পারলে অহির সাথে দেখা করার জন্য মরিয়া হয়ে যাবে। অহির সাথে দেখা করতে গেলে তোমার লাইফ রিস্ক হয়ে যাবে। আর অহির এই অবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী করবে। আমি জানি তুমি অহিকে কতটা ভালোবাসো। তুমি অহির জন্য নিজের জীবনও দিয়ে দিতে পার। তুমি যদি জানতে পার তোমার জন্য অহির এত বড় এক্সিডেন্ট হয়েছে। তাহলে তুমি নিজের ক্ষতি করে দিব। যেটা আমি মেনে নিতে পারব না। তোমার ভালোর জন্য যদি সারাজীবন আমার এই ঘটনা আড়াল করে রাখতে হয়। তাহলে তাই রাখব।  ( মনে মনে  )

কিন্তু আমি আপনার সাথে থাকব না।

কেনো থাকবে না? 

আপনি যে সেই চিঠি প্রেরক তার প্রমাণ কিন্তু আপনি দেন নাই। 

আমার মুখের কথা তোমার বিশ্বাস হয় নাহ। 

ঐ চিঠি প্রেরক বলেছিলে কাউকে বিশ্বাস না করতে। প্রমাণ ছাড়া আমি আপনাকে বিশ্বাস করব নাহ। 

আদিয়াত তার পকেট থেকে ফোনটা বের করে কণার চোখের সামনে তার আর কণার মেসেজ চোখের সামনে ধরে। কণা আর তার কিছু ছোটবেলার ছবি কণাকে দেখায়। যেগুলো একমাত্র তুর্ণের কাছেই থাকার কথা অন্য কারো কাছে নাহ। সোফা থেকে ওঠে গিয়ে আদিয়াত তার কিছু সার্টিফিকেট এনে কণাকে দেখায়। 



চলবে...



Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া






NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner