> বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব ৭, ৮ - Bangla Love Story - রোমান্টিক গল্প - Bangla New Story
-->

বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব ৭, ৮ - Bangla Love Story - রোমান্টিক গল্প - Bangla New Story

মুষলধারের বৃষ্টির পরে ঠান্ডা আবহাওয়ায়   ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে কিছুটা ভেজা শরীরে   যে ব্যাক্তি বাইকে চড়েছে সেই বুঝতে পারবে বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসেও শীত লাগে। আর এইমুহূর্তে আমারও লাগছে।হাড় কাঁপানো শীত অনুভব করছি না। তবে বাতাসের সাথে টিপটিপ বৃষ্টি আমার হাত পা ঠান্ডা করে দিয়ে শরীরের লোম কূপকেও দাঁড় করিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই বাড়ির সামনে এসে বাইক থেমে যায়।বাইক থামতেই আমি একপ্রকার দৌড়ে চলে আসলাম বাসার ভিতরে।মনে মনে ভাবছিলাম লোকটাকে একটা ধন্যবাদ দেই।কিন্তু পরক্ষনেই মনে হলো, সে তো ঠিকি আমাকে দিয়ে তার জামা পরিষ্কার করিয়ে ছেড়েছে।এখন আমি কেন ধন্যবাদ জানাবো?আমিও তো জামা ধুয়ে দিয়েছিলাম। আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছিল নাকি?ইতিহাস ভাবতে ভাবতে দরজার সামনে এসে দেখি নিয়াজ ভাইয়া আগেই দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। কি ব্যাপার আমি কি বিশেষ কেউ হয়ে গেলাম নাকি?আলআবি ভাইয়া দিয়ে গেলো বাসায়। আবার নিয়াজ ভাইয়া দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। বাহ কেয়া বাত!!! 

একগাল হেঁসে যেই না ভাইয়াকে বলতে যাবো কিছু তখন ভাইয়া নিজ থেকে বলে উঠলো,,, 

--আলআবি তুই তো একেবারে ভিজে পটকা হয়ে গিয়েছিস।তোর না বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বর আসে?

আমি আকাশে উড়তে গিয়েও ভাইয়ার কথা শুনে ধপ করে মাটিতে নেমে আসি।পিছনেই আলআবি ভাইয়াকে দেখতে পাই।আলআবি ভাইয়া নিয়াজ ভাইয়ার দিকে একটা ল্যাপটপ দিয়ে বললো,,,

--তাড়াতাড়ি ল্যাপটপ টা দে।আম্মু বাসায় একা।

ভাইয়া ল্যাপটপটা নিয়ে কিছু না বলেই দরজা ছেড়ে ভিতরে চলে গেলো।আমিও ভিতরে যাওয়ার জন্য ডান পায়ের জুতোটা কেবল খুলেছি তখন আলআবি ভাইয়া গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,,,

--সাহায্যকারী থেকে সাহায্য নিয়ে তাকে ধন্যবাদ দিতে জানতে হয়।এটা ম্যানার্স এর মধ্যে পরে।

আমি কিছুটা ঝুঁকে জুতো খুলছিলাম। তার কথা শুনে সোজা হয়ে তার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরলাম।আমাকে বলার সুযোগ না দিয়েই উনি আবার বললেন,,, 

--ছোট বলে হয়তো বুঝতে পারো নি।নো প্রবলেম,এখন ধন্যবাদ বলো। 

আমি ভ্রুকুচকে তার দিকে তাকালাম।আলআবি ভাইয়া আমার থেকে উত্তর পাওয়ার আসায় তাকিয়ে আছে।আমি তাকে সুর টেনে বললাম,,, 

--ধ ন্য বা দ, একদমই বলবো না আপনাকে। 

বলেই আমি তাড়াতাড়ি করে আমার জুতো খুলে দরজা দিয়ে ঢুকতে যাবো তখন দেখি নিয়াজ ভাইয়া হাতে করে একটা ল্যাপটপ নিয়ে দরজার দিকেই আসছে।আমি ভাইয়াকে ক্রস করে চলে আসার আগে একটু পিছনে তাকালাম দেখি আলআবি ভাইয়া থমথমে একটা ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি আমার মতো করে সামনে তাকিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম। 

বৃষ্টি জিনিসটা আমার ছোট থেকেই খুব পছন্দের।বৃষ্টিতে ভিজতে আরও বেশি ভালো লাগে।বৃষ্টিতে ভিজলে নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবতী বলে মনে হয়।কারণ হলো আমার উপর যতই সিডর,আইলা,ফনা বা নার্গিস আসুক না কেন কখনোই আমার জ্বর আসবে না।খুব বেশি হলে গলাটা ভারী ভারী হয়ে যাবে।সচারাচর যেমনটা ঠান্ডা লাগলে হয় তেমন। 

গোসল করে এসে কেবল বিছানায় বসলাম।তখন ভাইয়া রুমে এসে জিজ্ঞেস করে গেলো রাতে খাবো কি না?আমি না বলে দিয়ে ভাইয়ার পিছু পিছু খাবার টেবিলের দিকে গেলাম।আমি খাই আর না খাই টেবিলে সব সময় রাতের খাবার সার্ভ করে দেই আমিই।ভাইয়া অবশ্য আমাকে না খেয়ে ঘুমাতে দেয় না কখনো।আর আমাকেও খাওয়ার জন্য জোর জবরদস্তি করার প্রয়োজন হয় না।কারণ ক্ষুধা আবার আমার সহ্য হয় না।আমার যখন যেটা খেতে মন চায় ভাইয়াকে অফিস থেকে আসার সময় বলে দেই ভাইয়া নিয়ে আসে।সবজি হলো আমার চোখের বিষ।এই সবজি নামক বস্তু টা বাদ দিয়ে সকল খাবার আমি খেতে পারি।

আমার পড়ালেখা শেষ করে রাতে নিয়াজ ভাইয়া আর আমি আমার বারান্দায় বসে প্রতিদিন রুটিন করে আড্ডা দেই।ভাইয়ার বারান্দাটা ছোট।আর ওই বারান্দা থেকে কিছু দেখাও যায় না। পাশের বিল্ডিংয়ের দেওয়ালে বারান্দাটা ঢেকে গেছে।এই বাসায় একমাত্র আমার বারান্দাই বড়। আমি আর ভাইয়া আড্ডা দিতে বসলে পৃথিবীর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তের মেয়ে-ছেলে বিয়ে দিয়ে দিতে পারব। এত কথার ফুলঝুরি আসে কোথা থেকে তা আমরা নিজেরাও জানিনা। 

আমার একটা হবু ভাবিও আছে,তাসিফা আপু। আপু এবার অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমাদের গ্রামের বাড়ির এক গ্রাম পরে তাসিফা আপুদের বাড়ি। তাসিফা আপুর সাথে আমার মাত্র দুইবার কথা হয়েছিল। আপু পড়ালেখার সুবাদে ঢাকায় হোস্টেলে থাকে আর মা-বাবা গ্রামের বাড়ি থাকে।

আড্ডা দিতে গিয়ে ভাইয়ার কাছ থেকে জানতে পারলাম, আলআবি ভাইয়া আর নিয়াজ ভাইয়ার ল্যাপটপ অদল বদল হয়ে গিয়েছে। আসলে তাদের দুজনের ল্যাপটপ এর ব্যাগ নাকি একই রকমের। তাই ভুলবশত একজনেরটা আরেকজনের কাছে চলে এসেছে। সেজন্যেই আলাবি ভাইয়া আবার ব্যাক করে আমাদের বাসায় এসে তার ল্যাপটপ নিয়ে গিয়েছে আর মাঝপথে আমাকে দেখে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গিয়েছে।

সময় কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে না। মাঝে মাঝে মনে হয় এই পৃথিবীতে কেবলমাত্র সময়েরই কোনো পিছুটান নেই। সময় কে কেউ কখনো ধরে বেঁধে রাখতে পারেনা। সময়ের স্রোতে আমাদেরও প্রায় ছয়টা মাস কেটে গেল। আমি আর সাদু এখানে গাজীপুরেই একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। আমাদের ভার্সিটি বাসা থেকে খুব একটা বেশি দূরেও না আবার কাছেও না। হাতে সময় থাকলে মাঝে মাঝে আমি আর সাদু কথা বলতে বলতে হেঁটেই ভার্সিটিতে যাই আবার মাঝে মাঝে রিক্সা করেও যাই।

আজকে সকাল থেকেই ব্যস্ততার মধ্যে কাটছে। তার কারণ হলো কাল আমরা তাসিফা আপুকে আংটি পড়িয়ে বিয়ের কথা পাকা করতে যাব। আপু আর ভাইয়ার সম্পর্কে দুই পরিবার আগে থেকেই অবগত ছিল কিছুটা। তাই বলতে গেলে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে যাচ্ছি আমরা। ভোরবেলায় বাসা থেকে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হব বলে রাতের বেলায় ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিলাম। গ্রামে বেশি দিন থাকবো না। কেবল চার দিনের জন্য যাচ্ছি আমরা। ভাইয়া অফিস থেকে চার দিনেরই ছুটি নিতে পেরেছে। 

একটা কালো জর্জেটের থ্রি-পিছ পড়ে নিলাম। থ্রি-পিছ এর সাথে গোলাপি সুতোর কাজ করা আছে।  ম্যাচিং করে একটা কালো হিজাব পড়লাম। ভাইয়া দুইদিন আগেই বাসের টিকেট কেটে রেখেছিল। দুই দিন আগেই টিকিট কেটেছে বলে ভাই কে নিয়ে আমি আর সাদু অনেক হাসাহাসি করেছিলাম। বাসা থেকে বের হয়ে সিএনজি নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের সামনে এসে নামলাম। কিছু সময় অপেক্ষা করার পর আমাদের বাস এসে পরল। দীর্ঘসময়ের একটা যাত্রা পথ পাড়ি দিয়ে আমরা গ্রামের বাড়িতে এসে পৌছালাম। ভাইয়া অবশ্য বিদেশ থেকে এসে এই প্রথম গ্রামের বাড়ি এসেছে। তাই তাকে নিয়ে মামা-মামীর বাড়াবাড়ি একটু বেশিই। খালা খালুও আজকে বাড়িতে এসে পড়েছে আমরা আসবো বলে। এখানে আসতে আমাদের প্রায় দুপুর ১ টার মত বেজে গিয়েছে। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলাম। বিকেলে উঠে দেখি সুমনা আপু এসেছে সাথে সুমাইয়া আছে। ওদের সঙ্গে গল্পগুজব করে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ওরাও ওদের বাড়ি চলে গেল। ওরা অবশ্য আমাকে ওদের সাথে দাদুর বাড়ি যেতে বলেছিল। কিন্তু আমার ইচ্ছে করছিল না বলে আর যাইনি। রাতের বেলা আমি, সুবহা আর আমার খালাতো ভাই জুনায়েদ, আমরা তিনজন একসাথে ঘুমিয়েছি।

সকাল বেলা ফজরের নামাজ পড়তে পারিনি। ঘুম ভেঙেছে সুবহার ডাকাডাকিতে। এখনো ঘুমের রেশ পুরোপুরি কাটেনি। ঘুম ঘুম চোখে  উঠে কল পাড়ের দিকে যাচ্ছিলাম হাত মুখ ধুতে। নানু বাড়িতে অবশ্য ভিতরে ওয়াশ রুম রয়েছে। কিন্তু তাও সকালবেলা উঠে গ্রামে চাপ কলের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত ব্রাশ করতে করতে মুখ ধোয়ার আনন্দই আলাদা। আমার রুম থেকে বের হয়েই যখন বাড়ির কেচি গেট দিয়ে বের হতে যাবো, তখন হঠাৎ কিছুর সাথে ধাক্কা লেগে একেবারে ফ্লোরে বসে পড়ি। চোখ টেনে মেলে উপরের দিকে তাঁকাতেই ভড়কে গেলাম। ভাল করে চোখের পাপড়ি কয়েকবার ঝাপটা দিয়ে সামনে আবারও তাকালাম। নাহ, ভুল দেখছি না। ঠিকই তো দেখছি। আমার সামনে স্বয়ং আলআবি ভাইয়া দাঁড়ানো। পেছনেই সজল ভাইয়া দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। আর তাদের দুজনের পিছনে নিয়াজ ভাইয়া দাঁড়ানো। এর মধ্যে  আরো একটা জিনিস দেখলাম। তা হল আলআবি ভাইয়ার কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকা। পিছন থেকে নিয়াজ ভাইয়া বলে উঠলো,,,

--হাটার সাথে সাথে কি দাঁড়ানোটাও ভুলে গেলি?

ভাইয়ার কথায় পা ছড়িয়ে বসে থাকা থেকে উঠে দাঁড়ালাম।এদিক ওদিক না তাকিয়ে এক দৌড়ে আবার রুমে চলে আসলাম। মনে মনে ভাবছি মান-সম্মান আর কিছুই থাকল না। প্রথম দেখায় ধরলাম জড়িয়ে। আজকে আবার ধাক্কা খেয়ে গেলাম পড়ে। আমার সাথেই মনে হয় পৃথিবীর সব আজগুবি কাহিনী ঘটে। ধুর আর ভালো লাগেনা। আমার সাথেই কেন এমন হয় সাদুর সাথে হয়না কেন?জীবনেও তো শুনলাম না ওর সাথে এমন কিছু ঘটেছে।ও আমার বেস্টু। তাই ওর সাথে যতদিন না এমন কোনো ঘটনা ঘটছে আমি কি আর শান্তি পাবো?

সজল আর আলআবি ভাইয়া নাকি রাতের বেলা বাইকে করে এসেছে। আলআবি ভাইয়া নাকি চারদিনের বদলে তিন দিনের ছুটি পেয়েছে। তাই একদিন অফিস করে তারপর এসেছে। আমি এখনো চিন্তা করে কুল পাচ্ছিনা সামান্য আংটি পরানোর জন্য তাকে আবার কেন ডাকা হয়েছে। বিয়ে তো এখনই হয়ে যাচ্ছে না। যাইহোক আমার আর কি? ভাইয়ার এনগেজমেন্ট, ভাইয়ার ফ্রেন্ড, ভাইয়াই ভালো বুঝবে।

তাসিফা আপুদের বাড়িতে আমরা বিকেলের দিকে রওনা হলাম।দাদু আর নানু বাড়ির কিছু আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আমরা রওনা হলাম। নিয়াজ ভাইয়া, সজল ভাইয়া আর আলআবি ভাইয়া এই তিনজন আলআবি ভাইয়ার বাইকে করে আসছে। আর আমরা বাকিরা মাইক্রোতে করে যাচ্ছি। ভাইয়াদের নিয়ে আমরা মোট ১৫ জন যাচ্ছি। 

এই প্রথম তাসিফা আপু কে সরাসরি দেখলাম। আপু আসলেই অনেক সুন্দর। তবে সব কথার এক কথা হলো আপুকে ফু দিলেই উড়ে যাবে। তাকে দেখলে মনে হয় আমার অর্ধেক সে।

আমি বসে বসে তাসিফা আপুর সাথে কথাবার্তা বলছিলাম। তখনই হঠাৎ ভাইয়া আমার ফোনে ফোন দিল। ফোন দিয়ে বলল,,,

-- জুইঁ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ির বাইরে আয় তো।

-- এখন আসবো? কেন কি হয়েছে?(আমি)

--তোকে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছি আয়(ভাইয়া)

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ভাইয়া ফোনটা রেখে দিল। ভাইয়ার কথামতো আমি বাড়ির বাইরে এসে দেখি ভাইয়া আর আলআবি ভাইয়া একসাথে দাঁড়ানো। আমাকে দেখে ভাইয়া দ্রুত গতিতে বলে উঠলো,,,

-- শোন তুই ওর সাথে গিয়ে তাসিফার জন্য যেই রিং টা কিনেছিলাম সেটা নিয়ে আসবি।

--মানে?(আমি) 

--আমি তাড়াহুড়ো করে না দেখে খালি বক্সটা নিয়ে এসেছি। এই নে ড্রয়ারের চাবি। গিয়ে দেখবি আম্মুর চুরির বক্সের মধ্যে তাসিফার জন্য কেনা রিংটা রাখা আছে।(ভাইয়া)

নিয়াজ ভাইয়ার কথা শেষ হতেই আমি আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকালাম দেখি সে মুখে বিরক্তিকর একটা চাহনি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সাতপাঁচ না ভেবেই আমি বাইকে উঠে বসলাম। সেদিনের মতোই আমি বাইকের পিছনে ধরে বসে রইলাম।তবে আজকে বাইকের স্প্রিডটা সেদিনের থেকে একটু বেশি। তাও নিজেকে সামলে নিলাম।

বাড়িতে এসে ঘটলো আরেক বিপদ। আমি যে ভাইয়ার বোন সেই নাম রক্ষার্থে মেইন গেটের চাবি টাই আনতে ভুলে গিয়েছে। গেটের সামনে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আলআবি ভাইয়া বলল,,, 

--কি সমস্যা কি তোমার? এখন কি তালাচাবি ও খুলতে পারো না?

আমি আমতা আমতা করে বললাম,,, 

--বাড়িতে ঢুকবো কিভাবে? 

আলআবি ভাইয়া কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে উঠলেন,,,

--উড়ে উড়ে ঢুকবে। গর্ধব একটা!!!

আমাকে গর্ধব বলল? আমি কি গর্ধব নাকি? আমি রেগে গিয়ে বললাম,,, 

--আমি গর্ধব?

-- নিজেরটা নিজে জানোনা? এত কথা না বলে তাড়াতাড়ি তালা খুলো।

আমি একটু নিচু স্বরে বললাম,,, 

--খুলবো কিভাবে চাবি আছে নাকি?

তিনি ভ্রুকুটি করে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট  করে বললেন,,, 

--হোয়াট?

আমি মাথা নিচু করে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তিনি আবার বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে বললেন,,,

--যেমন ভাই তেমন বোন। একটা গেছে এনগেজমেন্টে আংটিই নেই নি।আরেকটা আংটি নিতে এসে চাবিই আনেনি।

আমাকে এভাবে দাঁড় করিয়ে রেখে উনি কোথায় যেন চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এসে বললেন,,,

-- তোমাদের কি ছাদের দরজা খোলা আছে?

আমি শুধু মাথা নড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম। আমার জবাবের সাথে সাথে তিনি আবার বলে উঠলেন,,,

--মই কোথায় রাখে?

আমি কাচারি ঘরের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দিলাম। উনি সাথে সাথে সেদিকে ছুটে গেল। তারপর হাতে একটা মই নিয়ে বের হয়ে আসলেন। মই টাকে বাড়ির পিছন দিকে নিয়ে দেয়ালের সাথে আড়াআড়িভাবে রেখে দিলেন। আসলে আমাদের নানু বাড়িটা একতলা বিশিষ্ট। তাই খুব সহজেই মই দিয়ে ছাদে নাগাল পাওয়া যায়। মইটা রেখে তিনি আমার আগে মই বেয়ে ছাদে উঠে গেলেন। আমি নিচে দাঁড়িয়ে মাথা উপরের দিকে দিয়ে তাকিয়ে আছি। উনি ইশারায় আমাকে দুই তিনবার মই টা বেয়ে উঠতে বলেছেন। কিন্তু আমি উঠার জন্য সাহস পাচ্ছিলাম না। নিচে দাঁড়িয়ে ইতস্তত বোধ করছিলাম। মুখ ফুটে বলতেও পারছিলাম না যে আমি উঠতে ভয় পাচ্ছি। আমার এমন অবস্থা দেখে উনি নিজেই মই বেয়ে আবার অর্ধেক নেমে আসেন। আমাকে উদ্দেশ্য করে হাত বাড়িয়ে বললেন,,,

--হাত দাও।

কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে আমি আমার পায়ের জুতো খুলে আমার হাতটা বাড়িয়ে তার হাত ধরলাম। দুই ধাপ উপরে উঠতেই ভয়ের চোটে আমার দুই হাত দিয়ে তার এক হাত খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।


--এই মেয়ে! বুদ্ধিশুদ্ধির ছিটেফোঁটাও নেই? মাথায় কি নিয়ে চলো? 

কিছুক্ষন আগে,,, 

অনেক সময় নিয়ে ধীরে ধীরে মই বেয়ে উঠে ছাদে উঠলাম।আমাদের ছাদের সিঁড়ি হলো করিডরের শেষ মাথায়। আমরা দুজন গিয়ে নানুর ড্রয়ার থেকে তাসিফা আপুর রিংটা নিয়ে আবারও ছাদে আসি।আগের মতো করেই আলআবি ভাইয়া আগে অর্ধেক মই পর্যন্ত নামেন তারপর তার হাত ধরে আমি নামতে থাকি।যখন আমার নামতে আর তিন ধাপ বাকি তখন আলআবি ভাইয়া খালি পায়ে মাটিতে দাঁড়িয়ে ছিল। তাড়াতাড়ি নামতে পারবো ভেবে মইয়ের তিন ধাপ থেকেই দেই জোড়ে এক লাফ।আমার অতিরিক্ত পাকনামির কারণে আমার পা গিয়ে পরে আলআবি ভাইয়ার পায়ের বৃদ্ধা আঙুলের উপর।

আমার এমন বুদ্ধিমানের মতো কাজের জন্যই বর্তমানে আমাকে পুরষ্কার দেওয়া হচ্ছে।ইশ! বেচারা আসলেই ব্যাথা পেয়েছে।নিজের কাছেই এখন গিল্টি ফিল হচ্ছে। আমি মাথা নিচু করেই বললাম,,, 

--সরি ভাই! আমি বুঝতে পারিনি! আই এম রিয়েলি সরি!

তার মুখের ভাব ভঙ্গি দেখেই যে কেউ বলবে  সে ব্যথা পেয়েছে একটু আগে।আমিও ঠিকই নিজের করা বোকামি তে উপলব্ধি করতে পারছি লোকটা আসলেই ব্যথা পেয়েছে। তিনি আমাকে আর কিছু বললেন না। 

বাড়ির মূল দরজার সামনে তিন ধাপের সিঁড়ি দেওয়া রয়েছে। সেখানে আলআবি ভাইয়া বসে তার জুতোর ফিতা বাঁধতে লাগলেন। ফিতা বাধা শেষ হলে আমার দিকে একবার তার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হন হন করে বাইকের দিকে ছুটে চললেন। আমিও তাকে অনুসরণ করে পিছু পিছু গিয়ে বাইকে উঠে বসলাম। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হল আলআবি ভাইয়া বাইকের স্পিড কমিয়ে চালায়। এতটা স্পিড কমে চালাতে আমি কাউকে দেখিনি। কেবলমাত্র আংটি নিতে আসার সময় একটু দ্রুত চালিয়েছিল

তাসিফা আপুদের বাড়িতে গিয়েও আরেক দফা কথা শুনতে হয়েছে ভাইয়ার কাছে। তাসিফা আপুদের বাড়ি থেকে আমাদের ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ৮ টার মত বেজে গেল। ভাইয়ার বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে আরো একমাস পরে। ভাইয়া নিজ ইচ্ছাতে একমাস পরে তারিখ দিতে বলেছে। তাসিফা আপুর বর্তমানে ভার্সিটিতে পরীক্ষা চলছে।পরীক্ষার মাঝখানে তো আর বিয়ে দেয়া যায় না। তাই অনেক দিনের একটা গ্যাপ নিয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে।
অতিরিক্ত ক্লান্ত না হলেও সবাই কিছুটা তো ক্লান্ত ছিল। ক্লান্তি বোধ থেকেই অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চলে গেলাম।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে সুবহা আর জুনায়েদের সাথে বাড়ির পিছনে এসেছি।আমার নানাভাই নিজ হাতে অনেক রকমের গাছ লাগিয়েছেন বাড়ির পিছনে। এখানে অনেক বড় বড় আম গাছও আছে। গাছের নিচে দাঁড়িয়েই দেখা যাচ্ছে গাছে ছোট বড়, মাঝারি ধরনের আম ঝুলে আছে। আমরা তিনজন যখন এখানে হাটাহাটি করছিলাম তখন সুবহা বলে উঠলো,,,

-- আপু জানো আমি কিন্তু গাছে উঠতে পারি।

তখন জুনায়েদ বলে উঠলো,,, 

--এখানে সবচেয়ে বড় আম গাছে আমি উঠতে পারি।

আমি একটু ভাব নিয়ে ওদের সামনে বলে উঠলাম,,, 

--ঘোড়ার ডিম পাড়ছ।তোদের দুজনের থেকে আমি লম্বা বেশি। তার মানে কি হলো? আমি সবচেয়ে উঁচু ডালে উঠতে পারি।

আন্ডা বাচ্চার সামনে ভাব না নিলে হয় নাকি?
জুনায়েদ তখন বাহানা ধরল আমাকে সব চেয়ে উঁচু ডালে উঠতেই হবে। আমাদের তিনজনের কথার মাঝেই কারো অট্টহাসির আওয়াজে পিছে ঘুরে দাঁড়ালাম।দেখি আলাআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়া দুজনের দাঁড়িয়ে হু হা করে হাসছে। তাদের হাসির ধরন দেখে মনে হচ্ছে গিনেস বুকে রেকর্ড করে ছাড়বে আজকে। সজল ভাইয়া হাসতে হাসতে বলে উঠলেন,,, 

--তুই ওদের থেকে লম্বা বলে যদি সবচেয়ে উঁচু ডালে উঠতে পারিস তাহলে আমরা দুজন কোথায় উঠবো?

বলেই আবার তিনি আবার অট্টহাসিতে মেতে উঠলেন। তখন আলআবি ভাইয়া কিছুটা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে উঠলেন,,,

--সিরিয়াসলি!!! চাপা মারারও একটা বয়স লাগে। তোমার তো সেই বয়সও হয়নি এখনো। কালকেই আমার দেখা হয়ে গিয়েছে তুমি কত উপরে উঠতে পারো।

তার এমন কথায় রাগ করবো নাকি অপমানিত বোধ করব বুঝতে পারছি না। তবে মনে হচ্ছে এখন রাগটাই বেশি করা উচিত। উনি তো আমাকে ডিরেক্টলিই অপমান করছেন। রাগে কটমট করে আমি বলে উঠলাম,,, 

--আপনি এতই যখন উপরে উঠতে পারেন, তাহলে যান আকাশে উঠে বসে থাকুন। যত্তসব!!!

কথাগুলো বলে আমি দ্রুত পায় তাদের দুজনকে পাশ কাটিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লাম।

গ্রামের বাড়ি ভালই আনন্দ করে কাটিয়ে আসলাম আমরা।তবে আলআবি ভাইয়ার একটা জিনিস খুব ভালোভাবে খেয়াল করতে পেরেছে। তা হল এই দুইদিনে উনি নিজে থেকে আমার সাথে শুধু ঝগড়া বাধিয়ে দিত।আমাকে পিন্চ করতো। দুই দিনে আমরা অনেকটা ফ্রি ও হয়ে গিয়েছে।দুই দিনে যে কীভাবে কীভাবে আমরা একজন আরেকজনের সাথে খুব ফ্রী ভাবে কথাও বলেছি তা আমাদেরও জানা নেই।

গ্রাম থেকে আমরা এসেছি প্রায় দুই থেকে তিন সপ্তাহর মতো হয়ে গিয়েছে।আজ আমরা তাসফি আপুর জন্য বিয়ের শপিং করতে যাবো। বড়রাই আমাদের বলেছে নিজেদের ইচ্ছামত কেনাকাটা করতে। তাদের পছন্দ আর আমাদের পছন্দ নাকি এক হবে না। আমি, নিয়াজ ভাইয়া, তাসফি আপু, আলআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়া যাচ্ছি শপিংয়ে। মজার ব্যাপার হচ্ছে তাসফি আপু যে আমাদের সাথে যাবে তা আমরা ছাড়া আর কেউ যানে না। তাসিফা আপুদের বাড়ির কেউ জানেনা। আমাদের বাড়িতেও কেউ জানে না। সবাই জানে তাসিফা আপু এখন নিজের হোস্টেলে পরীক্ষার জন্য মনের সুখে প্রিপারেশন নিচ্ছে। আমি আর ভাইয়া বাসা থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে এসে মেইন রাস্তায় দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আলআবি ভাইয়া আসলো। আমরা সবাই একসাথে শপিং মলের সামনে এসে একত্রিত হলাম। সাদু কে আসতে বলেছিলাম। ওর নাকি আবার কোন আত্মীয়র বেবি হয়েছে তাই বলে দিয়েছে আসবেনা।

প্রথমেই হলুদের অনুষ্ঠানের জন্যে একটা শাড়ির দোকানে ঢুকলাম। এখান থেকে হলুদের শাড়ি কিনে অন্য দোকানে গিয়ে বিয়ের শাড়ি দেখা শুরু করলাম শপিংমলে এসে মনে মনে খুব খুশি লাগছে। তার একটাই কারণ, ফ্রিতে আলআবি নামের একজন বডিগার্ড পেয়ে গিয়েছি। তার কানে সবসময় সালমান খানের বডিগার্ড মুভির মত ব্লুটুথ থাকে।এতক্ষণে বোঝা হয়েগিয়েছে আলআবি ভাইয়া গম্ভীর হলেও মিশুক টাইপের। ভাইয়া বলেছিলো সে নাকি কথা কম বলে। কিন্তু কথা কম বলেও সে সবার সাথে মিশতে পারে।

হঠাৎ করে আলআবি ভাইয়া বলে উঠলো তার নাকি ক্ষুধা পেয়েছে। আমার আবার ভালো গুণ হচ্ছে মানুষের ক্ষুধা পেয়েছে শুনলে নিজের পেটের ক্ষুধা লেগে যায়। কখনো আমি খাবার দেখলে আর না করতে পারি না। লজ্জা লাগে না করতে।

আমি আর আলআবি ভাইয়া একেবারে নিচে চলে আসি এখানে নিচে এক সাইডে ফুডকোর্টের ব্যবস্থা আছে। এই শপিং মলের নিচ তলায় অনেক মানুষের আনাগোনা। আলআবি ভাইয়া একেবারে একটা কর্নার সাইটের টেবিলে আমাকে বসিয়ে রেখে খাবার অর্ডার করতে গেলেন। বসেছিলাম তখন সাদু হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেয়ে বাবুর ছবি পাঠাল। দেখেই মনে হচ্ছে এক থেকে দুই দিনের নবজাতক শিশুর ছবি।বুঝতে পারলাম এটা ওর আত্মীয়র সেই বেবি। বসে বসে বাবুটার ছবি দেখছিলাম। মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে! হঠাৎ করেই এক পরিচিত কন্ঠ কানে ভেসে আসতে আমার আত্মা কেঁপে উঠল

--জুইঁফুল!মানুষের টা আর কতো দেখবে?কয়দিন পর আমাদের বেবির টাই দেখ।



চলবে...



Writer:- হুমাশা এহতেশাম





NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner