--বেমানান এক্স ওয়াইফ কে এতো দেখতে ইচ্ছে করে কেন মিঃ জায়েফ এহমাদ?
দুই হাত বুকে গুজে তার সামনা সামনি দাঁড়িয়ে এক নাগাড়ে বললাম কথা গুলো।
জায়েফ কিছুটা কাছে এগিয়ে এসে বলল,,,
--আরে কিসের এক্স ওয়াইফ?আমি তো আমার জুঁইফুল কে একবার দেখার জন্য এসেছি।৮০ ঘন্টার বেশি হয়ে গিয়েছে জুইঁফুল কে দেখি না।আসলে মিনিট সেকেন্ড গুনে রাখিনি।তাই এক্সাক্ট টাইম টা বলতে পারছি না।সরি!(জায়েফ)
দাঁত খিঁচিয়ে আমি ধীর কন্ঠে বলে উঠলাম,,,
--সমস্যা টা কি আপনার?কি? কি চাই আর?এটাই দেখতে চলে এসেছেন তো যে গ্রামে আবার আমি ভুল করে হাসি খুশি আছি কিনা?
--রাইট।হুট করে গ্রামে আসলে তাই দেখতে আসলাম কোনো প্রবলেম হলো কিনা?কিন্তু তুমি তো দেখি পড়াশোনা বাদ দিয়ে সামার ভ্যাকেশনে চলে এসেছো।এখন যখন ভালোই আছো তাহলে আসো একটা বিগ হাগ দিয়ে যাও।কাম!!!(জায়েফ)
তার এমন আচরণে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।কিন্তু মুহূর্তেই তার করা কৃতকর্ম গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো।উনি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে আসতে আমাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব অনেকটা কমিয়ে ফেলেছেন।হাত বাড়ালেই তাকে আমি ছুঁয়ে দিতে পারবো।মনের সব রাগ ক্ষোভকে এক করে শরীরের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে তাকে দু'হাতে স্ব জোড়ে ধাক্কা দিলাম।আমার এমন ভাবে ধাক্কাটা নিতে না পেরে উনি পিছিয়ে গিয়ে তার গাড়ির সাথে জোড়েসোড়েই একটা ধাক্কা খেলেন।আমার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছেন উনি।এমন একটা ধাক্কা তার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল।নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে আবার এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন। আমি কিছুটা পিছিয়ে তার আর আমার দূরত্ব আরেকটু বাড়িয়ে নিলাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে স্মিতহেসে বললেন,,,
--আমি যদি তোমাকে সরি বলি তাহলে ব্যাপারটা জুতো মেরে গরু দানের মতো হয়ে যাবে।আমি তোমাকে সরি বলতে আসিনি। আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি।ক্ষমা করবে আমায় জুঁইফুল? (জায়েফ)
--ক্ষমা চাওয়া শেষ?এবার আসতে পারেন।(আমি)
--ওকে চলো।(জায়েফ)
কথা টা বলেই উনি বাড়ির দিকে হাটা ধরলেন।আমি হকচকিয়ে বলে উঠলাম,
--ওই দিকে কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
সে আমার কাছে ফিরে এসে বললেন,,,
--তুমি তো বললে এবার আসতে পারেন।(জায়েফ)
তার কথা এবার সহ্য হলো না।তাকে এক নাগাড়ে বলতে লাগলাম,
--দেখুন মিস্টার জায়েফ এহমাদ, আপনাকে আর আপনার অত্যাচারকে এতদিন সহ্য করলেও আমি আর আপনাকে সহ্য করব না। কি ভেবেছেন আপনি আমি কি খেলনা পুতুল নাকি? যেমনভাবে ইচ্ছা হবে ব্যবহার করবেন ইচ্ছে হলোনা ব্যবহার করবেন না। এতদিন আমাকে দেখতে ইচ্ছা করে নি তাই না! আর এখন রাতের বেলাও একেবারে দৌড়ে চলে আসেন আমাকে দেখার জন্য। আপনাকে এখন আর আমার দেখতে ইচ্ছা হয় না। আপনাকে দেখলেই কষ্ট হয়। আপনাকে এখন দেখলে আপনার করা অত্যাচার আর অপমান গুলো আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আপনি আমার সামনে অন্য মেয়েদের ঘরে তুলে এনে আমাকে অপমান করেছিলেন। আমি কিছুই ভুলিনি। আপনি ক্ষমা চেয়েছেন আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি কিন্তু এখন যদি আমি বলি আমার উপর করা অত্যাচার গুলো ফিরিয়ে নিন পারবেন ফিরিয়ে নিতে? অপমান গুলোকে আপনি ফিরিয়ে নিন পারবেন ফিরিয়ে নিতে? কখনো পারবেন না। আমার জীবনটাকে কি আগের জায়গায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিতে পারবেন? পারবেন না। আমি যখন এতই বেমানান ছিলাম আপনার জন্য তাহলে আমাকে বিয়ে কেন করে ছিলেন আপনার লজ্জা করেনি একটা ১৬ বছরের মেয়েকে বিয়ে করতে। শুধুমাত্র আপনার জন্য আজ আমি এই গ্রামে চলে এসেছি আপনার থেকে দূরে থাকার জন্য। আপনি দয়া করে প্লিজ আমার সামনে আসবেন না। আপনার থেকে আমি অনেক দূরে থাকতে চাই। অনেক দূরে। আপনার সংস্পর্শে আমি আসতে চাই না।
কথাগুলো বলেই আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে দিলাম তখন উনি গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,,,
--জুঁইফুল আমরা কখনই কোন বিচ্ছেদের বন্ধনে আবদ্ধ ছিলাম না।
তার বলা বাক্যটি শুনে নির্বোধের মতো তার দিকে কেবল তাকিয়ে আছি। আমার চোখ থেকে টুপ টুপ করে অজস্র অশ্রু গাল বেয়ে পড়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না আসলে সে কি বলতে চায়। আমার ভাবমূর্তি দেখে হয়তোবা উনি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছেন। একটু পরে নীরবতা ভেঙে সে বলে উঠলো,,,
--জুঁইফুল তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়েছো কিন্তু আমি তোমাকে ডিভোর্স দেইনি।
তাকে বলার মত কোন ভাষাই আমি এই মুহূর্তে খুঁজে পাচ্ছিনা। আমি নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত করে তাকে আমি বললাম,
-- দয়া করে কি আপনি আপনার এই ড্রামা টা বন্ধ করতে পারবেন? আমি আর নিতে পারছি না। আর ডিভোর্স আবার একজন দেয় কিভাবে?
-- সত্যি বলছি। আমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা ওয়েট আমি তোমাকে দেখাচ্ছি।
কথাগুলো বলেই সে তার গাড়ি এর ভিতরে গিয়ে একটা ফাইল এর মত কিছু নিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো। তারপর আমাকে ফাইলটা হাতে দিয়ে বলল,,,
--নাও এটা খুলে দেখলেই বুঝে যাবে। তোমার বিশ্বাস হয়ে যাবে তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়েছো কিন্তু আমি তোমাকে ডিভোর্স দেই নি। তার এমন আচরণ দেখে আমি আসলে কি রিয়েকশন দেবো বুঝতে পারছিলাম না। কাঁপা কাঁপা হাতে ফাইলটা নিয়ে খুললাম
এটা তো সেই ডিভোর্স পেপারের যেটা কয়েক মাস আগে আমার জীবনটাই পাল্টে দিয়েছে। জায়েফ আমাকে বলল,
-- যেখানটায় সাইন করেছ ওখানটা একটু দেখো। তোমার না তোমার না, আরে আমার সাইনটা দেখো।
ফাইলের ভিতরে থাকা পেপারটার সাইন করার জাগায় চোখ বোলাতেই চমকে উঠলাম।একবার জায়েফ এর দিকে তাকাচ্ছি আর একবার ফাইল টার ভিতরে থাকা পেপার টার দিকে তাকাচ্ছি। যেখানটায় উনার সাইন করার কথা ছিল সেখানে স্পষ্ট একেবারে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা -"ওয়ান্ট মোর ড্রিঙ্ক"
আমি বললাম,
--একটা নকল বানানো কাগজ নিয়ে এসে বললেন আমাদের ডিভোর্স হয়নি। আমিও তা মেনে আপনার সাথে ঢেং ঢেং করে চলে যাবো সংসার করতে এমনটা ভাববেন না।
উনি তড়িৎ গতিতে বললেন,,,
-- না না।জুঁইফুল কাগজ টা আসল।ট্রস্ট মি।
আমি বললাম,
--ভাঙ্গা হাঁড়িতে পানি ঢালা আর আপনাকে বিশ্বাস করা একই কথা।কাগজ টা আসল হলে সাইন করেন নি কেন?আপনি ই তো ডিভোর্স টা চেয়েছিলেন।
--যেদিন সকাল বেলা তোমার থেকে সাইন নিয়ে ছিলাম ওই দিন রাতে আমি ড্রাঙ্ক ছিলাম
প্রচুর।তখন টেবিলের উপর পেপার টা দেখে এতটুকুই মনে করতে পারছিলাম যে আমি ডিভোর্স পেপার টায় সাইন করিনি।তাই ভেবেছিলাম সাইনটা করে দেই।কিন্তু সাইন করতে গিয়ে যে লিখেছিলাম "ওয়ান্ট মোর ড্রিঙ্ক" তা আমি বুঝিনি।তুমি চলে গেছো বলে আর ওই সব পেপার টেপার নিয়ে আর মাথা ঘামাই নি।(জায়েফ)
--আজ আমার জবাব চাই।আমাকে কেন অত্যাচার করেছিলেন? আমার দোষ ছিল কোথায়? আমাকে কিসের শাস্তি দিয়েছেন আপনি?(আমি)
-- আমি নিশিকে খুব ভালবাসতাম। তাকে আমি আজও ভালোবাসি। আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে খারাপ আচরণ করলে তুমি চলে যাবে। বয়স তোমার কম ছিল। ছোট ছিলে তাই ভেবেছিলাম অত্যাচার সহ্য করতে পারবে না চলে যাবে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে মারধোর করতে চাই নি।প্রতিবারই নিশির রাগ তোমার উপর ঝারতাম।তোমাকে কেবল আব্বুর কথা রাখতে আর জেদের বসে বিয়ে করেছিলাম।নিশির সাথে তখন রাগারাগি করে ওকে দেখাতে চেয়েছিলাম আমি ওকে ছাড়াই থাকতে পারি।কিন্তু যখন দেখলাম তোমার সাথে খারাপ আচরণ করে কোন লাভ হচ্ছে না তুমি তোমার মতই আছো, তখন ঘরে মেয়েদের আনা শুরু করলাম। কিন্তু তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা ওদেরকে নিয়ে এসে অতিরিক্ত মাত্রায় ড্রিঙ্ক করাতাম কারণ ওরা তাতে অভ্যস্ত ছিল। তবে যতই অভ্যস্ত থাকুক মেয়ে মানুষ তো তাই অতিরিক্ত ড্রাংক হওয়ার পর ওরা নিজেরাই সেন্স হারিয়ে ফেলতো আর সারারাত পড়ে পড়ে ওরা ঘুমাতো। কেউ কেউ ওই অবস্থায় সেন্সলেস হয়ে পড়ে থাকত। সকালে ওদেরকে উঠিয়ে ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি করে পাঠিয়ে দিতাম। যেখানে আমি নিশিকে ভালোবাসি সেখানে অন্য মেয়েদের সঙ্গে আমি কিভাবে রাত কাটাই। আমি মানছি আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি।সত্যি আমি তার জন্য আজ অনুতপ্ত। শুধুমাত্র তুমি জেনো তোমার বাড়ি ফিরে আসো, তুমি জেনো নিজের ইচ্ছেয় আমাকে ডিভোর্স দাও সেজন্য ওগুলো করেছিলাম। তবে আমি আজ বুঝতে পারছি কতটা অন্যায় করেছি। আজ তোমার কাছে আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না? (জায়েফ)
তার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শরীরের প্রায় সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তার গালে চর মেরে দিলাম আমি। তার কথাগুলো আমি আর নিতে পারছিলাম না। তাকে বললাম,
-- জানেন আপনাকে দেখে এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে আমার সামনে মানুষরূপী কোন পশু দাড়িয়ে আছে। ক্ষমা তো আমি আপনাকে এ জীবনেও করব না।
-- জুঁইফুল তুমি কি ভাবছো? তোমাকে আমার জীবনে ফিরিয়ে নিতে এসেছি?না জুঁইফুল তা আমি চাইলেও পারবো না।আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো না। তাই তোমাকে আমি আমার মতো খারাপ মানুষ টার জীবনে দ্বিতীয় বার জড়িয়ে আর কষ্ট দিতে চাই না।তোমাকে আমার ভালোলাগে কিন্তু আমি তো আর তোমাকে ভালোবাসি না।জুইঁফুল একটা বার আমাকে মাফ করে দেও না?
উনি বলতে বলতে আমার পায়ের কাছে হাটু গেড়ে বসে পরলেন।আবারও বলতে শুরু করলেন,,,
--তুমি আমাকে তোমার ইচ্ছে মতো শাস্তি দিতে পারো। আমি সব শাস্তি মেনে নিতে রাজি আছি। গত কয়েক দিনের করা কাজের জন্যও আমি ক্ষমাপ্রার্থী তোমার কাছে। আমি শুধু দেখতে চাচ্ছিলাম আমার প্রতি তোমার প্রতিক্রিয়াটা এখন কি রূপ। সেজন্যই তোমাকে গত কয়েকদিন ধরে ডিস্টার্ব করছিলাম।তার জন্যেও আমি ক্ষমা চাই তোমার কাছে।
চোখের পানি মুছে গলা ঝেড়ে বললাম,,,
-- আমার জীবনে আপনার ছায়াও দেখতে চাই না। আমাকে মুক্তি দিন।
আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে চলে আসি। পিছন থেকে জায়েফ ডেকে যাচ্ছে।এই মুহূর্তে পিছন ফিরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ মনে করছি না। এসে দেখি বাবা আমার দরজার সামনে দাড়ানো। বাবাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা হকচকিয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবছি বাবা কি সব দেখে ফেলল বা শুনে ফেলল। আমি কিছু বলার আগেই বাবা বলে উঠলেন,,,
-- তোর জীবনটা এলোমেলো করে দেয়ার জন্য কেবলমাত্র আমিই দায়ী।
বাবার কথা শুনে তার দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম। বাবার সঙ্গে এই মুহূর্তে কথা বলতে মোটেই ইচ্ছে করছে না। বাবাকে বললাম,,,
-- আমার ভাগ্যে যা লেখা ছিল তাই হয়েছে আর ভবিষ্যতেও যা লেখা আছে তাই হবে। যাও তুমি ঘুমিয়ে পড়ো এখন।
রুমে এসে সটান হয়ে শুয়ে পড়লাম। মনের মধ্যে হাজার ও জল্পনা-কল্পনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি জানি না তাকে আমি ভালোবাসি কিনা তবে তার প্রতি কিছু একটা অনুভব হয়। জীবনটা আসলে বড়ই অদ্ভুত। ১৮ বছর বয়সে কত কিছুর মুখোমুখি হতে হলো। কিছু সময় পর অনুভব হতে লাগল আমার চোখ থেকে হালকা উষ্ণ তরল পদার্থ ঝরছে। বুঝতে পারলাম চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে আজ শব্দ করে কান্না করতেও মন চাইছে না।আমার সাথেই এমন হলো কেন? অন্য সব মেয়েদের মতো এখন আমিইও তো হেসে খেলে জীবন টাকে উপভোগ করতে পারতাম।
গ্রামে এসেছি আজ এক সপ্তাহ হতে চলল।জায়েফ এর মাঝে ২ বার কল দিয়েছিল আমি তাকে মাফ করে দেই যেনো।সাদুকে ওই দিনের কথা গুলো বলে দিয়েছি। এই মেয়েটাকে কিছু না বলে থাকতে পারিনা। আমার সকল খারাপ সময়েই ওকে আমার পাশে পেয়েছি। এরমধ্যে কমলা আন্টি ফোন করে প্রতিদিন আমার খোঁজখবর নিতেন। খেয়েছি কিনা ঘুমিয়েছে কিনা সব খেয়াল রাখতেন
এর মধ্যে আরো কয়েকদিন চলে গেলো। আমার এইচএসসি এর রেজাল্ট আউট হয়ে গেছে।জিপিএ এসেছে ৪:০০।আমার কাছে এটাই অনেক।কারণ যেখানে ভালো ভাবে ক্লাসই করিনি সেখানে এমন রেজাল্ট হবে আশা ছিল না।বাবা আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করে,
--জুইঁ মা গাজীপুরে যাওয়া দরকার এখন আমাদের। তুই যেতে না চাইলে থাক।তোর যেখানে খুশি সেখানে থাক তুই। জোর করতে চাই না। কিন্তু তোর পড়াশোনা টাও যে দরকার। এখানে তো লেখাপড়া হচ্ছে না।সামনে তো এডমিশন টেস্ট ও আছে।
--চলো কালকে তাহলে চলে যাই। আর বাসাও পাল্টানোর দরকার নেই। (আমি)
বাবার কথাটা ভুলতো বলে নি।এখানে লেখা পড়া তো হচ্ছে না।জীবনের কিছুটা সময়ের বিষাদ এর জন্যে ভবিষ্যতটাকে কেন নষ্ট করবো?জায়েফ আমাকে বলেছিল সে তার নিজের বাড়ি ফিরে গিয়েছে। তাহলে আমার তো সমস্যা ই নেই আর।এখন শুধু নিজেকে তৈরি করার পালা।বেঁচে থাকলে জীবন টাকে উপভোগ করতে পারবো নতুন ভাবে।
আজ ভাইয়া বাংলাদেশ ফিরবে। ভাইয়া দেশে ফিরবে বলে গ্রামের থেকে মামা মামী এসেছে। খালামণি আর খালু তারা আজকে আসতে পারবেনা। তাই তারা কাল বা পরশু দিন আসবে। মামি আমাদের দুই ভাই-বোনকে ছোট থেকেই খুব ভালোবাসেন। ভাইয়া আসবে বলে মামি নিজের হাতে ভাইয়ের সবরকম পছন্দের খাবার রান্না করছে। আমি ভাইয়ার থাকার ঘর ভাল করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখছি। ভাইয়ার ঘর গোছানো থাকে তবে সবকিছুই একটু নতুনভাবে আবার গুছিয়ে রাখছি। আজকে সাদুও আসবে আমাদের বাসায়।কলিং বেলের শব্দে আমি ভাইয়ার রুমের থেকে বেরিয়ে দরজা খুলে দেখি সাদু দাঁড়িয়ে আছে সাথে আন্টিও আছে।সাদু এসেই আমার রুমে ঢুকে গেলো।ওর পিছনে আমিও আসলাম।
--ওই চুন্নি এতো তাড়াতাড়ি আসলি কেন?তোরে কি এখন দাওয়াত দিছি?তোর তো বিকালে দাওয়াত ছিল। (আমি)
--হ আমি বুঝিনা না?নিয়াজ ভাইয়া যেই চকলেট আনবো সব জানি আগে তুই নিতে পারছ তাই তো কইছোস পরে আসতে।(সাদু)
--এহ তোর লালা পরতাছিলো চকলেট খাওয়ার জন্য তাই ফাল দিয়া আইসা পরলি (আমি)
--বাহ।আয় তোরে একটা চুমা দেই।এই না হইলো আমার বান্ধবী। কতো বুঝে আমাকে। (সাদু)
--তোর মতো খাদকরে আবার বুঝমু না।(আমি)
--আচ্ছা শোন তোর ভাই আসবো কখন?(সাদু)
--কে এয়ারপোর্টে যাইয়া খাড়াইয়া থাকবি নি চকলেট এর লাইগা।(আমি)
--আরে বা* জানতে চাইলাম। (সাদু)
--একটু পরে বাবা আর মামা এয়ারপোর্টে যাবে।সন্ধ্যা ৬ টায় ল্যান্ড করার কথা।(আমি)
--আগে কবি না?এহন বাজে মাত্র ৩ টা।আরেকটু ঘুমাইতে পারতাম। (সাদু)
সাদুর চুল ধরে টান দিয়ে বললাম,
--ওই তোরে কইছি আমি ১৪ ঘন্টা আগে আইসা বইসা থাক।(আমি)
--যা সর আমি আরেকটু ঘুমাইয়া নেই।(সাদু)
--ঘুমা তুই। যা মরার ঘুম দে।(আমি)
আমার রুম থেকে বের হতে নিব তখনি সাদু এসে আমার চুলে ধরে একটা টান দেয় আর বলে,,,
--একটু আগে দিছিলি। তখন দিতে মনে ছিলো না।(সাদু)
--তোরে চকলেট এর প্যাকেটও দিমু না।ঘুমা তুই।(আমি)
বলেই দরজা বাইরে থেকে লক করে দিলাম।সাদু তো বুঝতেই পারেনি দরজা যে বাইরে থেকে লক।
বাবার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাইয়ার অপেক্ষা করছিলাম।এই বারান্দা থেকে মেইন রাস্তা দেখা যায়।দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ দেখলাম একটা সাদা রঙ এর মাইক্রো গেট এর কাছে এসে দাঁড়িয়ে পরলো। দেখলাম মামা বের হয়েছে।দেরি না করে দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম।অপেক্ষা করছি কখন ওরা উপরে আসবে।আসলেই ভাইয়াকে টাইট করে একটা হাগ করবো।কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
--ভাইয়াআআআআআআআআআ
একি এতো দিন পরে আমাকে দেখেও ভাইয়া কিছু বলছে না কেন?এভাবে স্টেচু হয়ে আছে কেন?ভাইয়াকে ছেড়ে দিয়ে সামনে তাকালাম।সামনে তাকিয়ে মনে হলো এই মুহূর্তে আমি হার্টস্ট্রোক ব্রেনস্ট্রোক একসাথে করলাম।
--আগে গেলে বাঘে খায় পিছে গেলে সোনা পায়।(সাদু)
সাদু ব্যঙ্গ করে কথাগুলো বলল। আমি বিছানায় মুখ গোমড়া করে বসে আছি। সাদু আবারো বললো,,,
--দোস্ত এই উক্তিটা কে বানাইলো রে।(সাদু)
কিছুটা রাগী ভঙ্গিমায় কর্কশ কন্ঠে সাদু কে বলে উঠলাম,
--তোর জামাই বানাইছিল!
-- ওমা চেতছ কেন? আমি তো সত্যি কথাই কইলাম। তুই যদি দরজা টা না আটকাইতে তাইলে কি তোর আর ওই ব্যাডার গলায় ঝুইলা পরা লাগতো?(সাদু)
-- ঠিকি কইছোস আমার জায়গায় তুই ঝুইলা থাকতি।(সাদু)
কিছুক্ষন আগে,
দরজা খুলেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম ভাইয়া কোন কথা বলছিল না। তাই তাকে ছেড়ে দিয়ে সামনে তাকালাম। সামনে তাকাতেই মনে হলো আমার চোখের মনি কোটর থেকে বের হয়ে আসবে। সামনে একজন অপরিচিত ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ খুব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তার পরনের কালো প্যান্ট এর সাথে ইন করা সাদা শার্টটির কাধের দিকের অংশ ঘামে ভিজে গিয়েছে। তার লম্বাটে মুখমন্ডলে ঘামের ছাপ রয়েছে। গালে রয়েছে হালকা দাড়ির ছোঁয়া। মনে হচ্ছে ১ থেকে ২ দিন আগে শেভ করা। তার মাথার চুলগুলো ছোটো না আবার বলতে গেলে বড় না যাকে বলে মাঝারি ধরনের।কালো ফ্রেমের চশমাটাকে এক আঙুল দিয়ে ঈষৎ ঠেলে নিলেন।তখনি লক্ষ্য করলাম তার পিছনে বাবা আর মামা দাঁড়িয়ে আছে। ভাইয়াকে কেবল দেখলাম সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে।নিজের করা বোকামির জন্য প্রচুর লজ্জা লাগছে। ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে এক দৌড়ে চলে আসলাম আমি। রুমে এসে ধপ করে বিছানায় বসে পরলাম।ছিঃ!ছিঃ!ছিঃ! কি করলাম আমি?ওই লোকটা কি ভাববে এখন?আচ্ছা লোকটা কে?লজ্জায় যখন লাল নীল হলুদ হচ্ছিলাম তখন সাদুকে দেখলাম ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে হাত-মুখ ধুয়ে বের হয়েছে। বারান্দায় গিয়ে মুখ মুছে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,,
--কিরে তোরে দেইখা তো মনে হইতাছে বাসর ঘরে বইসা আছোস।আর নয়তো তোর জামাই তোরে ধইরা চুমা দিছে।(সাদু)
আমি ওর দিকে কটমট করে তাকালাম। আমার তাকানোতে ওর কোন ভাবান্তর হলো না । ও পুনরায় বলল,
--কিরে কোনটা বাসর না চুমা?
--তোর মাথা।(আমি)
তারপর আমি কি অঘটন ঘটিয়েছি সাদুকে সব বললাম।ও শুনে হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসেই গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমাকে একেকটা বলে যাচ্ছে আর মজা নিচ্ছে।সাদুকে বললাম,,,
--এখন কিছু একটা ক।আমি কি করমু?
--আগে দেখতে দে তুই কার গলায় ঝুইলা পরছিলি।(সাদু)
--আর একবার যদি মজা করছোস না,দেখিছ তোরে কি করি।(আমি)
--আরে বাপ চল আগে। দেখতে দে আমারে। (সাদু)
--যা তুই।আমার লজ্জা লাগতাছে।(আমি)
--গলায় ঝুইলা আছিলি কেমনে?তহন শরম লাগে নাই না?আয়!(সাদু)
একপ্রকার জড়তা নিয়ে সাদুর সাথে ড্রইংরুমে গেলাম। সাদু গিয়েই ভাইয়াকে জোরে ডাক দিয়ে বসে।
--নিয়াজ ভাইয়াআআআ
ড্রইংরুমের সকলের দৃষ্টি এমুহূর্তে আমাদের দুজনের উপর।সেই লোকটাও এখানে আছে আমাদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার অন্য দিকে ঘুরে গেলো।ভাইয়া বলল,
--কিরে দুই শয়তান! কোথায় ছিলি এতো সময়?
--শয়তান আমরা?আমাদের শয়তান বললেন?(সাদু)
--কোনোদিন দেখেছিস নাকি ছাগল কে গরু বলতে?তাই শয়তানকে তো শয়তানই বলব।(ভাইয়া)
ওদের কথা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু শুনে যাচ্ছি।
ভাইয়া বলে উঠলো,
--জুইঁ তুই চুপচাপ আছিস কেনো?
--কোথায় চুপচাপ? (আমি)
আমি মনে মনে বললাম যেই কান্ড করেছি। চুপচাপ থাকবো না তো কি ঢোল পিটাবো নাকি?
এতক্ষণে লোকটার পরিচয় পেয়ে গিয়েছে। তার নাম আলআবি।সে হলো সজল ভাইয়ার কাজিন।আর সজল ভাইয়া হলো নিয়াজ ভাইয়ার ফ্রেন্ড।সজল ভাইয়া আর নিয়াজ ভাইয়া একসাথ ফ্রান্সে গিয়েছিলো।তারা দুই বন্ধু একসাথে একই ফ্ল্যাটে থাকতো।সজল ভাইয়া বাংলাদেশে ফেরার কয়েক দিন আগে আলআবি ভাইয়া ফ্রান্সে যায়।তখন তিনজন মিলে একই সঙ্গে নাকি থাকতো।এর কয়েক দিন পরে সজল ভাইয়া চলে আসে বাংলাদেশে।তখন থেকে আলআবি ভাইয়া আর নিয়াজ ভাইয়া একসাথে থাকা শুরু করে।আর এভাবে তাদের মধ্যে ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়।নিয়াজ ভাইয়া আর আলআবি ভাইয়া একই অফিসে চাকরি করতো।তারা যে অফিসে চাকরি করতো ওটা একটা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।তাদের কোম্পানি বাংলাদেশে নতুন শাখা অফিস খুলেছে বলে কয়েকজন লোক এদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে নিয়াজ আর আলআবি ভাইয়ার নামও এসেছিল।তাই তারা এদেশে পার্মানেন্ট এসে পরেছে।নিয়াজ ভাইয়া কে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আর আলআবি ভাইয়াকে সিনিয়র আর্কিটেক্ট হিসেবে।
এয়ারপোর্টের থেকে আমাদের বাসা কাছে বলে নিয়াজ ভাইয়া আলআবি ভাইয়াকে আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছে। আলআবি ভাইয়ার বড় ভাই নাকি এয়ারপোর্টে আসতে চেয়েছিলেন। তাকে নিয়াজ ভাইয়া আসতে বারন করে দিয়েছে।
সাদু, আন্টি আর সাথে কমলা আন্টি চলে গেছে। এখন বাসায় বাব,আমি ভাইয়া,মামা-মামী, ছোট্ট সুবহা(মামাতো বোন) আর আলআবি ভাইয়া।রাতে খাবার টেবিলে সবাই একসাথে খাচ্ছিলাম।আমি সুবহাকে আমার কোলে নিয়ে খাওয়াচ্ছি। আমার একেবারে সামনেই বসেছে আলআবি ভাইয়া।তার পাশে ভাইয়া।সুবহা হঠাৎ জেদ ধরে ও নিয়াজ ভাইয়ার হাতে খাবে।ওকেও ভাইয়া খাওয়াতে শুরু করলো।টেবিলে বসে আমি একমনে নীচের দিকে তাকিয়ে নিজের খাবার খেয়ে যাচ্ছি। মামা ভাইয়ার সাথে নানা কথা জুড়ে দিয়েছে। আলআবি ভাইয়াকেও নানা প্রশ্ন করছে।কিন্তু সে হু হা করছে কেবল।নতুন কোনো পরিবেশে এটাই স্বাভাবিক। তবে ভাইয়া বাবার সাথে আসার পর থেকে কথা বলছে না।ভালো করে তাকাচ্ছেই না।
রাতে মামী, সুবহা আর আমি আমার রুমেই ঘুমালাম। বাবা আর মামা একসাথে বাবার ঘরে ঘুমিয়েছে। নিয়াজ ভাইয়া আর তার বন্ধু ঘুমিয়েছে নিয়াজ ভাইয়ার রুমে।
সকালে ফজর এর নামাজ পরে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে পরলাম।এই সময় টা খুব বেশি স্নিগ্ধ লাগে আমার কাছে।অল্প অল্প অন্ধকার থেকে চারপাশে ধীরে ধীরে আলো ফোটার মুহূর্তটাকে আরো বেশি ভালো লাগে।একটা ঠান্ডা শীতল হাওয়া বইছে চারপাশে।বুক ভরে কয়েকটা লম্বা দম নিলাম। আকাশে মাঝে মাঝে দু একটা কাক কাকা করে উড়ে চলে যাচ্ছে।দুই একটা চড়ুই পাখি এসে কারেন্ট এর তার এর উপর বসছে, কিছুক্ষন ডাকাডাকি করে আবার চলে যাচ্ছে। কফি বা চা হলে মন্দ হতো না এখন।রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।রান্না ঘরে এসে বেশি করে দুধ কফি দিয়ে একেবারে মনের মাধুরি মিশিয়ে কফি বানাচ্ছিলাম।হঠাৎ কেউ পিছন থেকে বলে উঠলো,
--এই মেয়ে!একটু কফি পাওয়া যাবে?
পিছনে ঘুরে দেখি আলআবি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।ট্রাউজার এর পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে যেভাবে বলল মনে হয় আমি নিজের বাসাতেই কাজের বেটি হয়ে এসেছি। এহ কথার কি ছিঁড়ি দেখো।আমি শুধু বললাম,
--জ্বী।
বলেই আমি পিছনে আবার চুলোর দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললাম। আমার এতো সময় নিয়ে বানানো কফিটা তাকে দিয়ে আমি আবার কফি বানিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম।
দুপুরে খাবার টেবিলে দিলাম আরেক অঘটন ঘটিয়ে।খেতে বসে মামী বলল,
--জুইঁ ডালের বাটি টা আনা হয়নি।একটু নিয়ে আয় তো মা।
আমি ডাল নিতে এসেছি বলে সুবহাও আমার পিছু চলে আসলো।মামী ডাইনিং থেকে আবার জোর গলায় বলে উঠলো,,,
--জুইঁ লেবু গুলোও নিয়ে আসিস।
সুবহা একবার ডাইনিং রুমে যাচ্ছে আরেকবার আমার কাছে আসছে।একহাতে ডাল আর লেবুর বাটি নিয়ে খাবার টেবিলের দিকে আসছিলাম।সুবহা অন্যদিক থেকে রকেট এর গতিতে আমার দিকে ছুটে আসছিল।তারপর আর কি?ডাল আর লেবু হাতে জুইঁ নামের মানুষের সাথে রকেটের গতিতে ধেয়ে আসা সুবহা নামের মানুষের সংঘর্ষে আহত হলো আলআবি নামের মানুষ।
আলআবি ভাইয়ার পিঠের দিকটা পুরো ডালে মাখামাখি। তার জলপাই রঙের টি-শার্টে হলুদ রঙ এর ডাল। মনে হচ্ছে কেউ এক গুচ্ছ সরষেফুল তার পিঠে ছড়িয়ে দিয়েছে।আমি তড়িঘড়ি করে হাত দিয়েই তার পিঠের ডাল মুছতে লাগলাম। আর শুধু বলতে লাগলাম,,,
--সরি!সরি!ভাইয়া আমি খেয়াল করি নি।সরি!
--আরে দেখে আসবি তো। সুবহা!!!তোমাকে বলিনি দুষ্টমি কম করবে।(মামী)
--আলআবি যা তুই চেঞ্জ হয়ে আয়।(ভাইয়া)
উনি চেয়ার থেকে উঠে আমার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলেন রুমে। একটু বললও না -থাক কোনো সমস্যা নেই।বলতে তো পারতো ইটস ওকে।আমি কি ইচ্ছে করে ফেলেছি নাকি।ভালোই হলো অজান্তেই একটা রিভেঞ্জ নেয়া হয়ে গেলো।হুহ।সকালে আমার সাথে ভালো করে ব্যবহার করলে এমন হতো না।হাহাহা, এখন মনে হচ্ছে যা হয় ভালোর জন্যই হয়।এমন ব্রেকিং নিউস অবশ্যই সাদুকে বলা উচিৎ। ওর হক আছে জানার।সাদুকে কল দিয়ে রাজ্যের সকল সংবাদ শোনাতে বসে পরলাম।খাটে বসে কথা বলছিলাম তখন দরজায় দুবার টোকা পরলো।দরজা হালকা করে চাপানো ছিল।খাটে বসেই দেখতে পেলাম আলআবি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন দরজার কাছে। দরজার সামনে যেতেই উনি আমার কাধের উপর তার সেই সরষে ফুলওয়ালা মানে ডালে নষ্ট হয়ে যাওয়া টিশার্ট টা কিছুটা ঢিল মেরে দিলেন। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।তিনি বলে উঠলেন,,,
--ক্লিন ইট।
আমি হাবলাকুমারীর মতো তার দিকে চেয়েই আছি।কি বললেন উনি?"ক্লিন ইট"!আমি পরিষ্কার করবো এটা?উনি আবারও বলে উঠলেন,
--সন্ধ্যায় আমি চলে যাওয়ার আগে চাই।
বলেই উনি চলে গেলেন।এখন সুবহার উপর রাগ লাগছে খুব।আমি একা একাই ঘরে পাইচারি করছি আর বলছি,
--আমাকে কি দেখে লন্ড্রি বয় মনে হয়?না গার্ল হবে তো।ধুর আমিই বা কোন দুঃখে লন্ড্রি গার্ল হবো।এহ,ভাব দেখো।মনে হয় কোন দেশের প্রেসিডেন্ট। একসময় এসে বলবে কফি চাই এক সময় এসে বলবে জামা ধোয়া চাই।ধুবো না। ধুবো না আমি কি করবে?
পিছনে ঘুরেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলাম।আলআবি ভাইয়া পকেটে একহাত ঢুকিয়ে আরেক হাতে ফোন নিয়ে হাতটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন।উনি বললেন,
--অবশ্যই তুমি পরিষ্কার করবে। আফটার অল ভুলটা তোমার।
বলেই উনি হনহন করে চলে গেলেন।মন চাচ্ছে সুবহাকে ধরে আচ্ছা মতো দেই কয়টা।বড় হলে এখন সত্যি সত্যি ওর সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে ফেলতাম।
সন্ধ্যাবেলা নিয়াজ ভাইয়ার কাছে আলআবি ভাইয়ার টিশার্ট টা দিয়ে আসার জন্য ভাইয়ার রুমে উকি ঝুঁকি দিচ্ছিলাম। দেখি নিয়াজ ভাইয়া একাই রুমে।কার সাথে যেনো দেখলাম কথা বলছে।সুরসুর করে আমি রুমে ঢুকে পরলাম।ভাইয়ার দিকে টি-শার্ট টা বাড়িয়ে দিতেই বললো,,,
--এটা কোথায় পেলি?
ভাইয়াকে সকাল থেকে সব ঘটনা গরগর করে বলে দিলাম।আসলে ভাইয়ার কাছে আর সাদুর কাছে কোনো কথা না বলে থাকতে পারি না। ভাইয়া আমার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিল। তারপর বললো,,,
--আসলে আলআবি কিছুটা অন্য রকমের। সব সময় মানুষের মুখের উপর কথা বলে দেয়।ও ওর বাপকেও ছাড়ে না। আর সব সময় সত্যি কথা বলে। এ পর্যন্ত ওকে মিথ্যে বলতে খুব কমই দেখেছি। বলতে গেলে খুব একটা কথাই ও বলে না। বাট হি ইস ভেরি ব্রিলিয়েন্ট।
আমার আর ভাইয়ার কথার মধ্যেই আলআবি ভাইয়া বারান্দা থেকে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলেন। তাকে দেখেই আমি দ্রুত পায়ে আমার রুমে চলে আসলাম।
হাসি খুশির সময়গুলো মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়। ভাইয়া এসেছে আজ প্রায় দেড় মাসের বেশি হয়ে গেল। আমাদের ভালই দিন কাটছিল। এর মাঝে ভাইয়াকে জায়েফের কথা একদিন বলেছিলাম। ডিভোর্স না হওয়ার বিষয় নিয়েও কথা বলেছিলাম। ভাইয়া আমাকে বলেছিল আমি সাইন করার তিন মাসের মধ্যে যেহেতু জায়েফ সাইন করেনি তার মানে আমাদের অটো ডিভোর্স হয়ে গেছে। ভাইয়া আমাকে এই বিষয় নিয়ে আর চিন্তা করতে বারণ করে। এখন আমিও কিছুটা স্বস্তি বোধ করি।ভাইয়া বাসায় থাকাতে খুব ভালোই লাগে এখন। আগে শুধু বাবা আর আমি থাকতাম। কেমন যেন চুপচাপ থাকতো বাসা। একা একা থাকত আগে ভালো লাগতো না। এখন আর একা নেই আমরা।
আজকে আবার আমার ওই চুন্নি টার জন্মদিন। ভাইয়াকে কালকে রাত্রে অফিস থেকে আসার সময় বলে দিয়েছিলাম কোন একটা গিফট নিয়ে আসতে। ভাইয়া আসার সময় দুইটা তাঁতের শাড়ি নিয়ে এসেছিল কালকে। আমার শাড়িটায় হাল্কা আকাশী রঙের সাথে সাদা রঙের ছোঁয়া আছে।সাদুর শাড়িটা গারো নীল রঙের সাথে সাদা রঙের ছোঁয়া আছে।
আসলে আমি শাড়ি খুব একটা ভালো ভাবে পড়তে পারি না বলে জর্জেটের একটা সবুজ রঙের থ্রি পিছের সাথে কালো হিজাব পড়ে রেডি হয়ে গেলাম।৪ টার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। একটা রিকশা নিয়ে ওদের বাসার সামনে এসে পৌছালাম। ওদের বাসায় রিকশায় করে আসলে ১৫ মিনিটের মত লাগে।ওদের বাসার কলিং বেল দিতেই সার্থক ভাইয়া দরজা খুলে দিলেন।আমাকে দেখে বললেন,
--রাফিদা!!!আমার ছোট বউ এসে গেছে।
সার্থক ভাইয়া খুব মজার মানুষ। আমাকে মজার ছলে ছোট বউ বলে ডাকে। ভাইয়ার ডাক শুনে রাফিদা আপু চলে আসলো এসে বলল,,,
--কিরে তুই এত দেরি করে আসলি কেন? তোকে না বলেছিলাম সকালবেলা আসতে।
পিছন থেকে সাদু এসে বলল,
--ওই তুই আজকে আমার বাসায় এত তাড়াতাড়ি আসছোস কেন? যা আরো দুই ঘন্টা লেট করে আয়। দুই ঘন্টা পরে পার্টি শুরু হবে।
আমি ওকে বললাম,
--যা সর তোর কাছে আসছে কে আমি তো রাফিদা আপুর কাছে আসছি। আমি চিনি নাকি তোরে। কেডা তুই বইন?
আমাদের কথার মাঝে আন্টিও চলে আসলো আন্টি এসে বলল,,,
-- জুঁইকে ভিতরে ঢুকতে দে।
সাদুর নাকি শাড়ীটা খুব পছন্দ হয়েছে। ও আবার শাড়ি পড়তে খুব পছন্দ করে। ওদের বাসায় অল্পস্বল্প আত্মীয়-স্বজন এসেছিল। সাদমান ভাইয়াও এসেছিলো। তবে সাদমান ভাইয়া সাদুকে খুব জ্বালিয়েছে। সাদু ও চুপ করে থাকে নি।দুজনে একেবারে টম এন্ড জেরির মতো জুটি। ওদের বাসা থেকে বের হতে হতে রাত ৯ টার কাছাকাছি বেজে গেল। ওদের বাসা থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে আসলে রিক্সা পাওয়া যায়। কিন্তু হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। এখানে অবশ্য একটা যাত্রী ছাউনি রয়েছে। যাত্রী ছাউনীর নিচে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টির বেগ আরো বেড়ে চলেছে, বৃষ্টি থামার কোন নামই নেই। এই ছাউনির নিচে আরো অনেকেই দাঁড়ানো ছিল তবে যে যার মতো ব্যবস্থা করে চলে যেতে লাগলো। হঠাৎ উপলব্ধি করতে পারলাম এখানে কেবলমাত্র আমি একাই আছি। অনেকেই এখানে যারা দাঁড়ানো ছিল তাদের মধ্যে মেয়ে ছিল তবে এখন আর নেই। কিছু যুবক আর কিছু মধ্য বয়স্ক পুরুষ লোকের দাঁড়ানো এখানে। এখন কিছুটা ভয় লাগা শুরু করলো। কারণ আমি একাই মেয়ে আছি এখানে। চুপচাপ জবুথবু হয়ে এক কোনায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। বৃষ্টির ফোঁটা কিছুটা আমার গায়ে আছড়ে পড়ার কারণে অল্প অল্প ভিজে যাচ্ছি। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ভাইয়াকে ফোন দিলাম। একবার রিং হওয়ার পরের বার ফোন বন্ধ পেলাম। এখন মনে হচ্ছে কেন পাকনামি করতে গেলাম। ভাইয়া তো বলেছিল আমাকে নিতে আসবে আমিই বারণ করে দিলাম। হঠাৎ করে একটা বাইক দূরে থেকে এসে আমার সামনে থামল। আমি আগে থেকেই বাইকটার আলো দেখতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু আশা করিনি যে বাইক টা আমার সামনে এসেই থামবে।বাইকটা কিছুটা রয়েল এনফিল্ড এর মতো। বাইক থেকে সাদা পাঞ্জাবি ও মাথায় কাল হেলমেট পরিহিত একজন এসে আমার সামনে দাড়ালো। লোকটা বৃষ্টিতে একেবারে কাকভেজা হয়ে গেছে। তার সাদা পাঞ্জাবীটা ও গায়ে লেপ্টে রয়েছে। হঠাৎ এমন হওয়ায় কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। লোকটা বলে উঠল,
--এই মেয়ে! কমনসেন্স টুকুও নেই? বাসায় ফোন তো দিতে পারতে।
কন্ঠ শুনে কিছুটা আঁচ করতে পারলাম এটা সেই খচ্চর ব্যাটা।না থুক্কু, আলআবি ভাইয়া। উনি আমার হাত ধরে বাইকের সামনে নিয়ে আসলো। সে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিয়ে আমাকেও উঠার জন্য ইশারা করলো। আমি কেবল অবাক এর উপর অবাক হচ্ছি। এই সময় সে কোথা থেকে আসলো? আর এদিকে কি?তার বাসা তো উল্টো দিকে। তার বাইকে উঠতে কেমন ইতস্তত বোধ করছি। আমি বাইকে উঠছি না বলে সে কিছুটা জোর গলায় বলল,
--বাসায় কি যাওয়ার ইচ্ছে নেই?
তার কথা শুনে আমি তড়িঘড়ি করে বাইকে উঠে পড়লাম। অনেকখানি জায়গা ফাঁকা রেখে পিছনে হাত দিয়ে বাইক ধরে বসলাম। এখন বলতে গেলে বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমেছে। কিছুটা নয় অনেকখানি কমেছে। মুষুলধারের সেই বৃষ্টি এখন নেই। এটাকে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি বলা যেতে পারে।
চলবে...
Writer:- হুমাশা এহতেশাম