> রাগি মেয়ের প্রেমে পর্ব ১০ - রাগি মেয়ের গল্প - রাগি মেয়ে - রাগি মেয়ের সাথে প্রেম - Bangla New Story - Love Story
-->

রাগি মেয়ের প্রেমে পর্ব ১০ - রাগি মেয়ের গল্প - রাগি মেয়ে - রাগি মেয়ের সাথে প্রেম - Bangla New Story - Love Story

সকালে ঘুম থেকে উঠে ওর দেওয়া ঠিকানায় চলে গেলাম, গিয়ে দেখি তন্নি আগে থেকেই বসে আছে। 

তন্নিঃ কিরে এতো দেরি হলো যে? 

আমিঃ হেটে আসছি তো তাই। বল কেন ডেকেছিস?

তন্নিঃ না এমনিই, বস এখানে। বাসায় ভালো লাগছে না, তাই ভাবলাম তোর সাথে একটু আড্ডা দিই। 

আমিঃ ও আচ্ছা। 

তন্নিঃ আচ্ছা তোর কি আসলেই কেউ নেই? 

আমিঃ আছে আবার নেইও। 

তন্নিঃ বুঝলাম না। 

আমিঃ আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি,,,,, (পুরো কাহিনী তন্নিকে বললাম) 

তন্নিঃ তো এতো দিন যে সবাইকে বলেছিস তোর কেউ নেই, তুই এতিম! 

আমিঃ এমনিই। 

তন্নিঃ তো তোর আব্বু আম্মুর কাছে আর ফিরে যাবি না? 

আমিঃ হুম, যদি কখনো মানুষের মতো মানুষ হতে পারি, ভালো একটা চাকরি পাই তাহলে আবার ওদের সামনে যাবো। 

তন্নিঃ সরি রে! 

আমিঃ সরি কেন? 

তন্নিঃ আমি না জেনে তোর সাথে এতো কিছু করেছি। 

মনে মনে বললাম সময় হলে দেখতে পারবি, আমি কি করি তোর সাথে। 

আমিঃ আরে ধুর, আমি এগুলো নিয়ে ভাবিনা। যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এখন এগুলো বলে লাভ কি? 

তন্নিঃ তবুও, আমি একটু বেশিই করে ফেলছি। 

ফারিয়া কল দিলো..... 

ফারিয়াঃ কিরে কই তুই? 

আমিঃ এইতো বাসায়। 

ফারিয়াঃ বাসায় কি করিস? তাড়াতাড়ি মার্কেটে আয়, আমরা সবাই আছি। 

আমিঃ মার্কেটে কেন? 

ফারিয়াঃ আরে বিয়ের কেনাকাটা করতে হবে। তাড়াতাড়ি আয়,,,  

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। 

এরপর তন্নিকে নিয়ে মার্কেটে চলে গেলাম, দেখি সানি আয়মান, সাদিয়া ফারিয়া সবাই আছে। আমাকে আর তন্নিকে একসাথে দেখে একটু অবাক হইছে মনে হয়.... 

সানিঃ কিরে ব্যাটা, সারা দিন তন্নির সাথে কি? 

আমিঃ আরে আজব! সারাদিন কোথায় দেখলি? আসার সময় রাস্তায় দেখা হয় তাই ওরেও নিয়ে আসলাম।

সানিঃ দেখিস আবার। 

আমিঃ শালা সবাইরে নিজের মতো মনে করিস কেন? 

ফারিয়াঃ এই তোরা থাম, ভিতরে চল। নাহয় আব্বু বকা দিবে। 

আমিঃ ওকে চল। 

ভিতরে গেলাম, সাদিয়া আর তন্নি ফারিয়ার জন্য শাড়ি দেখতেছে, আমি সানি আর আয়মান বাইরে ঘুরঘুর করতেছি, সানি এদিকওদিক উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে মেয়ে আছে কিনা। 

ফারিয়া আমাকে ইশারা দিয়ে বললো তোরাও যা যা লাগে নিয়ে নে, আজকে খরচ সব আমার। 

আমি বললাম আমার কিছু লাগবে না। সানি আর আয়মানকে বললাম নিতে। ওরাও নিচ্ছে না। 

ফারিয়া বাইরে এসে..... 

ফারিয়াঃ কিরে তোরা কিছু নিবিনা? 

আমিঃ নারে, আমার লাগবে না। ওদের জিজ্ঞেস কর, কিছু লাগবে কিনা? 

ফারিয়াঃ আমি এতো কিছু বুঝিনা, তোদেরও কিনতে হবে। 

সাদিয়াঃ আচ্ছা একটা কাজ কর, গায়ে হলুদের জন্য ৩ জনে ৩ টা পাঞ্জাবি নিয়ে নে। এটাতে না করিস না প্লিজ,,, 

সানিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, চল পাঞ্জাবি দেখি। 

তন্নিঃ এই দাঁড়া! 

আয়মানঃ আবার কি? 

তন্নিঃ তোদের জন্য পাঞ্জাবি আমি চয়েস করবো। 

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে সবাই চল। 

তারপর আমরা একটা পাঞ্জাবি দোকানে গেলাম, যাওয়ার সাথে সাথে একটা শকট খেলাম, কারণ ওখানে আব্বু আম্মু আর ছোট মামা ছিলো, হঠাৎ করে তাদের দেখেই ভিতরটা কেঁদে উঠলো। আমি তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলাম, গিয়ে অন্য একটা গলিতে ঢুকে গেলাম। 

এদিকে সানি আর আয়মান আমাকে পাগলের মতো খুঁজতেছে। 

আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছি কখন ওরা যাবে, হঠাৎ করে কেউ একজন আমার কাঁধে হাত দেয়, মুহূর্তেই চমকে উঠে পিছনে তাকিয়ে দেখি আয়মান আর সানি,,,, 

আয়মানঃ কিরে তুই এখানে কি করিস? আর আমরা অন্যদিকে তোকে খুঁজতেছি। 

আমিঃ......... 

সানিঃ কিরে কিছু বলস না কেন? কি হইছে.?? 

আমিঃ আম্মু আব্বু আরর ছোট মামা ওই দোকানে ছিলো। 

সানিঃ মানে আমরা যেখানে পাঞ্জাবি কিনতে গিয়েছিলাম সেখানে? 

আমিঃ হুম। 

আয়মানঃ তো দেখা কর। 

আমিঃ তুই পাগল নাকি? যেখানে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিছে সেখানে আমি বুঝি ওদের সাথে দেখা করবো? 

আয়মানঃ এতো দিনে সব ভুলে গেছে। 

আমিঃ তবুও, আমি প্রতিষ্ঠিত হওয়া ছাড়া ওদের সামনে যাবো না। 

সানিঃ আচ্ছা সেজন্যই আমরা যখন তোর নাম ধরে ডাকাডাকি করতেছি বার বার তোর আব্বু আম্মু আমাদের দিকে তাকাচ্ছিলো। তোর আম্মুতো একটুর জন্য জিজ্ঞেস করে নাই। 

আয়মানঃ আচ্ছা বাদ দে, এখন চল। উনারা চলে গেছে। 

আমিঃ হুম, আর শোন। ওদেরকে কিছু বলার দরকার নেই। 

সানিঃ আচ্ছা চল। 

তারপর ওদের সাথে আরো কিছুক্ষণ থেকে কেনাকাটা শেষ করে বাসায় চলে গেলাম। 

আর দুই দিন পরেই বিয়ে এখন থেকে সব কিছু ভালোভাবে প্রিপারেশন নিচ্ছে, আমরাও ব্যস্ত, মোটামোটা সব কিছু ঠিকঠাক। 

মহা ধুমধামে বিয়েটা হয়ে গেলো, ফারিয়া বিয়ের পরেও পড়ালেখা করবে এটা আগে থেকে ঠিক ছিলো। বিয়েতে অনেক মঝা করলাম, ভালোই ভালোই বিয়েটা শেষ হলো। 

বিয়ের কয়েকদিন পর আবার সবাই কলেজে গেলাম, ক্লাস করলাম। আমাদের ফ্রেন্ডশিপ আরো মজবুত হলো, সারাদিন সবাই একসাথে থাকি। ভালো ভাবেই দিন গুলো যাচ্ছিলো। 

দেখতে দেখতে আমাদের কলেজের শেষ প্রান্তে চলে আসছি মানে আমাদের সব গুলো সেমিস্টার কমপ্লিট।  আর কিছু ২ দিন পরেই ফাইনাল এক্সাম, আজকে আমাদের বিদায় অনুষ্ঠান হবে। 

স্যারেরা সবাই আমাদের উদ্দেশ্যে অনেক কথা বললো, ছোটরাও অনেক কথা বললো, অনুষ্ঠান শেষে সবাই মিলে সেই গাছ তলায় গিয়ে বসলাম, যেখানে আমরা সবাই আড্ডা দিতাম। সবারই মন খারাপ। যতোই হোক অনেক স্মৃতি জুড়ে আছে এই ক্যাম্পাসে আর সবচেয়ে বড় কথা পরীক্ষার পরে আমরা সবাই যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে যাবো, হবেনা আগের মতো আড্ডা দেওয়া, খাওয়াদাওয়া করা, ঘুরতে যাওয়া। 

সবারই মন খারাপ, তারপর অল্প কিছু কথা বলে যে যার মতো বিদায় নিতে লাগলাম, এমন সময় তন্নি বললো.... 

তন্নিঃ সবাই দাঁড়া! তোদের সাথে কথা আছে। 

সানিঃ হুম বল। 

আমরা সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছি, চোখমুখ লাল হয়ে আছে। 

তন্নিঃ কলেজ জীবনের শুরু থেকে তোদের সাথে আমার খুব ভালো একটা সম্পর্ক ছিলো না। যখন ৩য় সেমিস্টারে আসি তখন জুয়েলও আমাদের সাথে ভর্তি হয়। প্রথম দিন থেকেই ওর সাথে আমার ভেজাল শুরু হয় সেটা তোরা খুব ভালো করে জানিস। 

আমি ওরে অনেক অত্যাচার করেছি, কখনো ছেলে লাগিয়ে কখনো পুলিশ দিয়ে। শেষ যখন দেখলাম সে এখনো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেছে, তখন সিদ্ধান্ত নিলাম যে করেই হোক ওরে এখান থেকে তাড়াতে হবে। সেদিনও ওরে অনেক ঠ্রেড দিয়ে যখন আমি বাইক নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম তখনই আমার এক্সিডেন্ট হয়, আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান আসে তখন শুনিও ওই আমাকে বাঁচিয়েছে, তোরাও নাকি রক্ত দিয়েছিলি, তোদের প্রতি আমার সম্মানটা বেড়ে যাই, সেদিন হাসপাতালের বেড়ে শুয়ে ওয়াদা করেছিলাম আর কোনো দিন কোনো ছেলের সাথে বেয়াদবি করবো না। পারলে উপকার করবো। সেদিন থেকেই তোদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ টা হয়ে যায়। কিভাবে যে এতো গুলো দিন চলে গেলো আমি বুঝতেই পারিনি। 

সানিঃ এবার আসল কাহিনী বল, এটা আমরা সবাই জানি। 

তন্নিঃ জুয়েল! তোকে আমি ভালোবাসি, সেই দিন থেকে যেদিন তুই আমাকে বাঁচিয়েছিলি। আবার এটা ভাবিস না যে, বাঁচানোর জন্য ভালোবেসেছি। আমি সত্যিই মন থেকে ভালোবেসেছি। 

আয়মানঃ তো এতোদিন বলিস নি কেন? 

তন্নিঃ যদি ফ্রেন্ডশিপ টা নষ্ট হয়ে যায় তার ভয়ে। আমি আজকের দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। 

সবাই আমার দিকে তাকালো,,,, 

সাদিয়াঃ কিরে তুই কিছু বলিস না কেন?(আমাকে)

আমিঃ আমি কি বলবো? 

ফারিয়াঃ কি বলবি মানে? তন্নি যেটা বললো সেটার উত্তর দে। 

আমিঃ সরি,,, 

ফারিয়াঃ মানে? ক্লিয়ার করে বল। 

আমিঃ মানে আমি এসবে জড়াতে পারবো না। 

তন্নিঃ কেন সমস্যা কোথায়? 

আমিঃ আছে অনেক সমস্যা। আমাকে আগে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, তারপর অন্যকিছু। আর তন্নি জাস্ট আমার ফ্রেন্ড, অন্যকিছু আমি কখনো কল্পনা করিনি। 

সাদিয়াঃ তো সমস্যা কোথায়? দেখতেছিস না আমি আর আয়মান একসাথে আছি। 

আমিঃ তোদের লাইফ আর আমার লাইফ একনা। সো আমার দ্বারা এগুলো হবে না। 

সানিঃ হবে, তুই চিন্তা করে দেখ। 

আমিঃ হবে না, কারণ আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। (মিথ্যা বললাম)

তন্নিঃ মানে তুই তো আমাদেরকে কিছু বলিস নি।

আমিঃ বলার প্রয়োজন মনে করিনি তাই বলিনি। আমার গার্লফ্রেন্ড আগের কলেজেই পড়ে।

আয়মানঃ কিন্তু..... 

আমিঃ কোনো কিন্তু না, যা বলার আমি বলে দিয়েছি। তোরা থাক, আমি গেলাম। 

তারপর আমি হাটা দিলাম, তন্নি বার বার আমাকে ডেকেছে, কিন্তু আমি পিছনেও তাকায়নি। সোজা হাটা দিলাম। 

আসলে আমি ইচ্ছা করেই করিনি কারণ ও আমার সাথে যা যা করেছে সেগুলো একটাও আমি ভুলিনি। এবার বুঝুক কেমন লাগে। 

আমি ওরে শারীরিক নির্যাতন করবো না, মানসিক ভাবেই করবো। রাতের বেলা সাদিয়া আয়মান আমাকে কয়েকবার কল দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলো আমি কল কেটে দিয়ে মোবাইল অফ করে রেখে দিলাম। 

২ দিন পর এক্সাম, আমি এগুলো নিয়ে না ভেবে ভালোভাবে পড়তে লাগলাম, দেখতে দেখতে পরীক্ষার দিন চলে আসলো। আমাদের অন্য একটা কলেজে সিট পড়ে। 

সকালবেলা রেড়ি হয়ে বেরিয়ে গেলাম, ওই কলেজের ওখানে গিয়ে দেখলাম সানি আয়মান ফারিয়া আর সাদিয়া দাঁড়িয়ে আছে। আমি গিয়ে ওদের সাথে কথা বললাম, তন্নিকে দেখতেছিনা। আসবে কি আসবেনা সেটাও জিজ্ঞেস করতে পারছিনা। 

ওদের সাথে বসে বসে কথা বলছি, একটু পর দেখলাম তন্নি আসতেছে, এসেই..... 

চলবে...


Writer:- এম এইচ জুয়েল 


NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner