> রাগি মেয়ের প্রেমে পর্ব ৬ - রাগি মেয়ের গল্প - রাগি মেয়ে - রাগি মেয়ের সাথে প্রেম - Bangla New Story - Love Story
-->

রাগি মেয়ের প্রেমে পর্ব ৬ - রাগি মেয়ের গল্প - রাগি মেয়ে - রাগি মেয়ের সাথে প্রেম - Bangla New Story - Love Story

পুলিশঃ ওই তোরা চুপ থাক, তোদেরও ব্যবস্থা নিচ্ছি তার আগে এই হালারে একটু দেখে নিই। 

এ কথা বলেই আমার কলার চেপে ধরে গাড়িতে তুললো। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই থানায় নিয়ে গেলো। 

থানার ভিতরে নিয়ে গিয়ে আমার হাত দুটো বেঁধে ইচ্ছা মতো পিটাতে লাগলো। একটু পর থানার বড় স্যার আসলো... 

আমিঃ স্যার দেখেন না ওরা আমাকে বিনা অপরাধে নিয়ে এসে মারধর করতেছে।

স্যারঃ কেন ইভটিজিং করার সময় এ কথা মনে ছিলো না? 

আমিঃ মানে? 

স্যারঃ আসছে আমার তুলসী পাতা, এখন সব কিছু জেনেও না জানার ভান ধরতেছে। 

আমিঃ স্যার আমি সত্যিই বলছি, আমি কিছু করিনি। 

স্যারঃ চুপ কর, তুই জাহেদ সাহেবের (তন্নির বাবা) মেয়ের সাথে ইভটিজিং করিস নি? আজকে সকালে তো ওর গায়েও হাত দিয়েছিস। ও তোর নামে মামলা করে গেছে, তার উপর জাহেদ সাহেবও রেগে আগুন।

আমিঃ স্যার বিশ্বাস করেন, আমি কিছুই করিনি। ও মিথ্যা বলেছে। 

স্যারঃ আমরা তো কচি খোকা, কিছু বুঝিনা। এতো ছেলে থাকতে তোর নামে কেন বিচার দিলো? নিশ্চই তোর ভিতর কোনো ঘাবলা আছে। 

আমিঃ স্যার আমি সত্যি বলছি।

স্যারঃ চুপ কর শালা, এই কনস্টেবল ওর হাত পা বেঁধে ইচ্ছা মতো পিটাও, ওর মুখ দিয়ে সত্য কথা বের করেই ছাড়বে। 

কনস্টেবলঃ ওকে স্যার। 

তারপর দুইটা পুলিশ এসে আমাকে বেঁধে পিটাইতে শুরু করলো, এতো বার বলছি আমি কিছু করিনি তবুও কেও আমার কথা শুনলো না। 

মার খেয়ে মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করলো, আমার এমন অবস্থা হয়েছে যে, ঠিক করে দাঁড়াতেও পারছি না। 

এভাবে ৩ দিন চলে গেলো, এই ৩ দিন অনেকবার আমাকে বলাতে ছেয়েছিল যে আমি ইভটিজিং করেছি বাট আমি স্বীকার করিনি। 

পরের দিন সকালবেলা সানি আর আয়মান একটা উকিল সাথে করে নিয়ে আসলো। তারপর জামিন নিয়ে আমাকে বের করলো। 

সানিঃ কিরে তোর এই অবস্থা কেন? 

আয়মানঃ এই ব্যাটা মূর্খ, এখন এগুলো বলার সময় আছে, ওরে ডাক্তার দেখাতে হবে চল। 

সানিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।  

তারপর ডাক্তার দেখিয়ে বের হলাম, সানি আর আয়মান আমার সাথে আমার বাসায় আসলো। 

আয়মানঃ কি হইছে এবার বল। 

আমিঃ তন্নি আমার নামে মামলা দিছে। 

সানিঃ কেন, কিসের মামলা? 

আমিঃ আমি নাকি ওরে ইভটিজিং করছি। আর সেদিন সকালে ও কান্না করতে করতে থানায় নালিশ করে আসছে। তার উপর ওর বাবার কানেও গেছে যে আমি ওরে ডিস্টার্ব করি। 

সানিঃ তো তুই কিছু বলিস নি? 

আমিঃ বলেছি অনেক বার বাট কেউ বিশ্বাস করতে চায়নি। 

আয়মানঃ তো এখন কি করবি কিছু চিন্তা করেছিস? 

আমিঃ অন্য কোথাও ট্রান্সফার নিয়ে চলে যাবো। 

আয়মানঃ মানে কি! অন্য কোথাও যাবি কেন? 

আমিঃ এখানে থাকলে তোদেরও প্রবলেম হবে। সো না থাকাটাই বেটার হবে। 

সানিঃ আমরাও তাহলে ট্রান্সফার নিয়ে নিবো। 

আমিঃ আরে ধুর তোরা কেন নিবি? আচ্ছা বাদ দে, ফারিয়া সাদিয়া কেমন আছে? 

সানিঃ আছে ভালোই। 

আমিঃ আমার ব্যাপারে কিছু বলেছিস? 

আয়মানঃ হুম সব জানে। আমি বলেছি  

সানিঃ তুই তো শালা বলবি, এখন গফ হয়ে গেছে। সব কথা শেয়ার না করলে তো তোর ভাত হজম হবে না। 

আয়মানঃ এই ফালতু কথা কম বল, ওরা আমাদের ফ্রেন্ড, ওদেরকে না বললে কাকে বলবো? 

আমিঃ আচ্ছা বাদ দে তো। 

সানিঃ তুই এক কাজ কর,আমাদের বাসায় চল। কিছুদিন থেকে রেষ্ট নিবি, তারপর এখানে আসিস। 

আমিঃ না, আমি এখানে ঠিক আছি। 

আয়মানঃ আচ্ছা এখন যাই, বিকালে আসবো। 

আমিঃ ওকে যা। 

এরপর ওরা চলে গেলো, আমি মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। পুরো শরীর ব্যথা করতেছে। 

বিকালবেলা ওরা সবাই আসলো, ফারিয়া সাদিয়াও আসলো। সবাই মিলে আড্ডা দিলাম। এরপর যে যার মতো চলে গেলো। আম্মুর কথা মনে পড়লো, আজকে যদি নিজের বাসায় থাকতাম হয়তো এতোটা একা লাগতো না। 

এভাবেই কিছুদিন চলে গেলো, আমিও মোটামুটি সুস্থ, সব কিছুই করি বাট কলেজে যাই না। ট্রান্সফার নিবো নিবো করে নেওয়াই হচ্ছে না। 

পরেরদিন কলেজে যাচ্ছি ট্রান্সফারের ব্যপারে কথা বলতে, রাস্তায় বের হয়ে হাটতেছি, এমন সময় তন্নি একটা বাইক নিয়ে আমার সামনে এসে ব্রেক করলো.... 

তন্নিঃ কিরে তুই এখনো বেঁচে আছিস? 

আমিঃ........ 

তন্নিঃ শালা এই দুনিয়াতে কারো বিশ্বাস নাই, পুলিশকে এতো সুন্দর করে সব কিছু বুঝিয়ে বললাম তারপরও তোকে ছেড়ে দিলো। যাইহোক এখন কোথায় যাচ্ছিস? 

আমিঃ কলেজে। (মাথা নিচু করে) 

তন্নিঃ কিহ! তোকে না বলেছি ক্যাম্পাসের কাছেও না আসতে! তারপরও তুই কলেজে যাইতেছিস? 

আমিঃ কলেজ কি আপনার একার নাকি? 

তন্নিঃ তুই মুখে মুখে তর্ক করিস আবার, দাঁড়া দেখ আজকে তোর কি হাল করি। শালা ছোটলোকের বাচ্ছা। 

মুহূর্তেই মাথায় রক্ত উঠে গেলো,,,

আমিঃ এই তুই কোন জমিদারের মেয়ে? যতসব ফালতু বখাটে, লজ্জা করেনা তোর ছেলেদের পিছনে লাগতে? 

তন্নিঃ তোর সাহস তো কম না, তুমি আমাকে ফালতু বলিস। আবার বখাটেও বলিস, দেখ এখন বখাটে কি করে। 

এ কথা বলেই ঠাসস করে একটা বসিয়ে দেয়, তারপর আবার বলে,,,, 

তন্নিঃ তুই শুধু একবার কলেজে আয়, তারপর দেখ আমি তোর কি হাল করি। 

এ কথা বলেই বাইকে স্টার্ট দিয়ে টান দিলো, আমি আবুলের মতো গালে হাত দিয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। 

ও এতো জোরে বাইক চালাচ্ছে দেখে আমার নিজেরই শরীর কাঁপতেছে। একটু পর যা দেখলাম তাতেই আমার পুরো শরীর স্তব্ধ হয়ে যায়। 

তন্নি একটা বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে অন্য একটা বাসের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়, রাস্তায় অনেক গড়াগড়ি খায়। আমি কিছুক্ষণ স্বপ্ন দেখার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম, তারপর দৌড় দিয়ে সেখানে গেলাম। তন্নির মাথা পেটে রক্ত বের হচ্ছে, বাম হাত ও বাম পায়ে অনেক আঘাত খেয়েছে মনে হয়, বাম পায়ের দুইটা আঙ্গুল ভেঙ্গে উলটে গেছে। 

সাথে সাথে অনেক মানুষ সেখানে জড়ো হয়ে যায়, তারপর ওরে কোলে নিয়ে একটা CNG ডেকে নিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। মাথা থেকে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে, রক্ত বন্ধ হচ্ছে না দেখে আমি আমার শার্টটা খুলে ওর মাথায় বেঁধে দিলাম। 

তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, ইমার্জেন্সিতে পাঠিয়ে দিলাম। আমার নিজেরও কেন জানি খারাপ লাগতেছে, হয়তো আমার জন্য এসব হয়েছে। 

আমার সাথে রাগারাগি করে হয়তো ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে, সেজন্য স্পিডে বাইক চালাইচে, তাই এই এক্সিডেন্ট টা করছে। 

বসে বসে ভাবতেছি, একটু পর একটা ডাক্তার রুম থেকে বের হলো.... 

ডাক্তারঃ রুগি আপনার কি হয়? 

আমিঃ জ্বি ও আমার ফ্রেন্ড।

ডাক্তারঃ ওর ফ্যামিলির কাওকে কল দিয়ে আসতে বলেন। দরকার আছে,,,, 

আমিঃ তেমন কাওকে তো আমি ছিনি না। কি দরকার আপনি আমাকে বলেন। 

ডাক্তারঃ উনার অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে, ইমার্জেন্সি রক্ত লাগবে। 

আমিঃ ওকে আমি দিবো। 

ডাক্তারঃ আপনার এক ব্যাগে কিছু হবে না, কমপক্ষে ৩ ব্যাগ লাগবে। 

আমিঃ আচ্ছা দাঁড়ান আমি দেখি কি করা যায়। 

ডাক্তারঃ তাড়াতাড়ি করেন। 

এরপর আমি আয়মানকে কল দিলাম.... 

আমিঃ হ্যালো দোস্ত কই তুই? 

আয়মানঃ এইতো বাসায়, রেড়ি হচ্ছি কলেজে যাবো। 

আমিঃ দোস্ত তাড়াতাড়ি করে সানিকে নিয়ে আলকেমি হাসপাতালে আয়। 

আয়মানঃ কেন কি হইছে? তোর কিছু হয়নি তো? 

আমিঃ আরে না, আমি ঠিক আছি। তোরা ১০ মিনিটের মধ্যে আয়।

আয়মানঃ ওকে আসতেছি, তুই বাইরে দাঁড়া,,,,, 

আমিঃ ওকে তাড়াতাড়ি আয়। 

অনেকক্ষণ পর সানি আর আয়মান আসলো...

আমিঃ কিরে এতো দেরি কেন? 

সানিঃ আরে রাস্তায় জ্যাম ছিলো। এখন বল কি হইছে? 

আমিঃ বলার সময় নাই, তাড়াতাড়ি ভিতরে চল। রক্ত দিতে হবে। 

আয়মানঃ কাকে রক্ত দিতে হবে? 

আমিঃ পরে বলছি, আগে চল। 

এরপর ভিতরে গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে ৩ জনেই রক্ত দিলাম। তন্নির রক্ত গ্রুপ AB+ যার কারনে সহজেই আমাদের সবার রক্ত গ্রহন করতে পেরেছে। 

রক্ত দিয়ে বাইরে এসে বসলাম... 

সানিঃ এবার বল রক্ত কার জন্য? 

আমিঃ তন্নির জন্য? 

আয়মানঃ মানে? 

আমিঃ হুম। .........., (পুরো ঘটনাটা ওদের সাথে শেয়ার করলাম) 

সানিঃ তুই ওরে বাঁচালি কেন? তোর মনে নাই ও তোর সাথে কি কি করছে? 

আমিঃ তুই আমার জায়গায় থাকলে কি করতি? দেখ ও আমার সাথে অন্যায় করেছে আমিও জানি, আমারও অনেক ইচ্ছা ছিলো ওরে একটা শিক্ষা দিতে। কিন্তু উপরওয়ালা যে এতো বড় শাস্তি দিবে আমি কল্পনাও করিনি। 

আয়মানঃ আচ্ছা বাদ দে, তুই যে ওরে হাসপাতালে নিয়ে আসছিস সেকি জানে? 

আমিঃ না, আর জানার দরকারও নেই। তোরাও কিছু বলিস না। 

সানিঃ না বললে সে ভাববে সে নিজে থেকেই বেঁচে গেছে। 

আমিঃ ভাবুক, আমরা যে রক্ত দিয়েছি সেটাও বলার দরকার নেই। ওর জ্ঞান ফিরে আসার আগেই আমরা এখান থেকে চলে যাবো। 

সানিঃ কিন্তু ওরে একটা শিক্ষা দেওয়া উচিত। আচ্ছা এক মিনিট তোর শার্ট কই? 

আমিঃ তন্নির মাথা বেঁধে দিয়েছিলাম, এখন মনে হয় কেবিনে। 

আয়মানঃ তো এখন কি করবি? 

আমিঃ ওর জ্ঞান আসা পর্যন্ত থাক, দেখি না কি হয়। যদি কিছু লাগে,,,, 

সানিঃ এই কেটে পর এখান থেকে। 

আয়মানঃ কেন? 

সানিঃ পিছে দেখ। 

পিছনে তাকিয়ে দেখি তন্নির গুণ্ডি ফ্রেন্ডস গুলো সবাই আসতেছে। আমরা যেই উঠে চলে যাবো, তখনই লিজা মেয়েটা ডাক দেয়। তন্নির অনুপস্থিতিতে লিজাই লিডারের দায়িত্ব পালন করে। 

লিজাঃ ওই দাঁড়া! 

সবাই দাঁড়ালাম....

লিজাঃ তোদের লজ্জা করে না, মেয়েটা এক্সিডেন্ট করেছে শুনে হাসপাতালে এসে ওরে মারার চেষ্টা করতেছিস? 

সানি রেগে কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় আমি ইশারায় না করে দিলাম। তারপর লিজা মেয়েটা আবার বলে...

লিজাঃ তোকে (আমাকে) না সেদিন পুলিশ এতো মারা মারলো তারপরও তোর লজ্জা সরম নাই? 

আমিঃ........ 

লিজাঃ একবার শুধু তন্নি ভালো হোক তারপর দেখি তোদের পুরো টিমের কি হাল করি। 

চিল্লাচিল্লি শুনে একটা ডাক্তার ভিতর থেকে আসলো....

ডাক্তারঃ কি ব্যাপার এতো চিল্লাচিল্লি করছেন কেন? 

লিজাঃ দেখেন না ওরা মেয়েটা অসুস্থ শুনে, মেয়েটাকে মেরে ফেলার জন্য এখানে এসেছে। আপনি প্লিজ পুলিশকে কল দিয়ে ওদের নিয়ে যেতে বলেন। 

ডাক্তারঃ চুপ থাকেন, ওরাই আপনার ফ্রেন্ডকে এখানে নিয়ে আসছে আর রক্ত দিয়েছে। কোনো কিছু না জেনে বেডভিহ্যাব করবেন না। 

লিজা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর আমরা আর কোনো কথা না বলে হাসপাতাল থেকে চলে আসলাম, ভাবছিলাম তন্নির বাবাকে গিয়ে বলবো এখন যেহেতু ওর বান্ধবীরা আসছে ওরাই বলবে, আমাদের আর না বলাই ভালো হবে। তারপর যে যার মতো বাসায় চলে গেলাম। 

১৫-২০ দিন চলে গেলো, আমি বিকালবেলা একটা পার্কের পাশে গিয়ে বসলাম, আগে তো এই সময় টিউশনি করিয়ে সময় কাটাতাম, কিন্তু তন্নিতো সেই টিউশনিটাও বন্ধ করে দিলো। 

বসে বসে ভাবতেছি, ট্রান্সফার কিভাবে নিবো? হঠ্যাৎ করে কেউ একজন আমার কাঁধে হাত দেয়, পিছনে তাকাতেই..... 

চলবে...


Writer:- এম এইচ জুয়েল 

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner