এমন সময় পিছন থেকে কেউ একজন কাঁধের উপর একটা থাপ্পড় দেয়, পিছনে তাকাতেই দেখি সানি....
সানিঃ কিরে দুজনে আড্ডা দিতেছিস অথচ একটু বললিও না।
আমিঃ আরে না, মাত্র আসলাম। ফারিয়াকে তোর কথা জিজ্ঞেস করায় সে বললো তুই নাকি ওয়াশরুমে গেছিস।
সানিঃ হুম।
আমিঃ আয়মান আর সাদিয়া কই?
সানিঃ আসছে, একটু সময় লাগবে।
আমিঃ তোদের সাথে কিছু ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।
সানিঃ বল, কি কথা।
আমিঃ না ওরাও আসুক তারপর নাহয় বলবো।
সানিঃ আচ্ছা এখন কিছু অর্ডার দে, খুদা লাগছে।
আমিঃ ওকে কি খাবি?
সানিঃ........
তারপর আমরা ৩ জন বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম একটু পর আয়মান আর সাদিয়া আসলো।
আমিঃ কিরে কোথায় গেছিলি তোরা?
আয়মানঃ সরি দোস্ত একটু বাইরে গেছিলাম।
আমিঃ আচ্ছা বস এখানে,,,
সানিঃ এবার বল, কি বলবি?
আমিঃ........ (ফারিয়ার রিলেশন এর কথা বলে দিলাম)
সানিঃ কিহ! তোর রিলেশন আছে অথচ আমাদের বলিস নি।
আমিঃ.....(আমি এবার পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে বলি)
আয়মানঃ তো এখন কি করবি?
ফারিয়াঃ জানি না, তোরা কিছু একটা কর।
সাদিয়াঃ আচ্ছা টেনশন নিস না, আমরা আছি।
আমিঃ তুই কি ফয়সালকে এখন বিয়ে করতে পারবি?
ফারিয়াঃ আমার তো সমস্যা নাই, কিন্তু বাসায় কি বলবো?
আমিঃ আরে ধুর বাসায় কেন বলবি? জাস্ট কোর্ট ম্যারেজ করবি যাতে ফয়সাল অন্য কোথাও বিয়ে করতে না পারে।
ফারিয়াঃ কিন্তু ওর তো বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।
সানিঃ ও তোকে বিয়ে করলে তো আর ওর বিয়ে অন্য কারো সাথে হবে না।
আয়মানঃ কোর্ট ম্যারেজ তো যেকোনো সময় করা যাবে বাট আগে ফয়সালের বিয়েটা ভাঙ্গতে হবে।
সানিঃ তাহলে একটা কাজ করলে কেমন হয়?
ফারিয়াঃ কি?
সানিঃ বিয়ের দিন রাতে ফয়সালকে নিয়ে তুই পালিয়ে যাবি। আমরা ফয়সালকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসবো।
আয়মানঃ সালা মাথা মোটা ফয়সাল কি মেয়ে? যে আমরা ওরে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসবো। অন্য কোনো উপায় বের করতে হবে।
সাদিয়াঃ আচ্ছা দোস্ত আর কোনো উপায় নেই?
আয়মানঃ জুয়েল কিছু বলিস না কেন? অন্য কোনো উপায় তোর জানা আছে?
ফারিয়াঃ দোস্ত প্লিজ থাকলে বলনা!
আমিঃ একটা উপায় আছে।
সানিঃ কি? তাড়াতাড়ি বল,,,
আমিঃ তন্নি।
আয়মানঃ মানে? তন্নি কি করবে?
আমিঃ হুম তন্নিই পারবে।
সাদিয়াঃ কিভাবে?
আমিঃ ফয়সাল তন্নির মামাতো ভাই, সো তন্নি যদি ওর মামাকে বলে তাহলে হয়তো বিয়েটা অফ হয়ে যাবে। এন্ড আরো একটা উপায় আছে।
সাদিয়াঃ কি সেটা?
আমিঃ যে মেয়েটার সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে, তাকে ফয়সাল আর ফারিয়ার রিলেশনের কথা গুলো বললে হয়তো সে নিজেই বিয়ে বন্ধ করে দিবে।
সানিঃ কারেক্ট, এখন কি করবি?
আয়মানঃ এই বিয়ে কবেরে?
ফারিয়াঃ আগামী সপ্তাহে,,,,
আমিঃ ফয়সালকে কল দে, আর মেয়েটার পুরো ডিটেলস জেনে নে। আর মেয়েটার নাম্বারও নিয়ে নে।
ফারিয়াঃ এখন কল দিবো?
সানিঃ না, বিয়ের পরে দিস। ফকিন্নি তাড়াতাড়ি কল দে।
ফারিয়া কল দিলো, তারপর অনেকক্ষণ কথা বলে মেয়েটার পুরো ডিটেলস নিলো,আর নাম্বার ও বাসার এডড্রেস নিলো।
আমিঃ সব নিয়েছিস?
ফারিয়াঃ হুম।
আমিঃ ওরে কল দিয়ে জিজ্ঞেস কর কোথায় আছে? তারপর আমরা সেখানে গিয়ে ওর সাথে কথা বলবো।
ফারিয়াঃ ওকে, যদি জিজ্ঞেস করে আমি কে তখন কি বলবো?
আমিঃ বলবি তুই ফয়সালের কাজিন। এখন ওর সাথে দেখা করতে চাচ্ছিস।
ফারিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
এরপর ফারিয়া মেয়েটাকে কল দিলো, কয়েকবার কল দিলো কিন্তু কল রিসিভ করতেছে না।
ফারিয়াঃ কল তো ধরতেছে না।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, তুই রাতে কল দিয়ে দেখা করতে বলবি সকালে আমরা সবাই যাবো, তারপর মেয়েটাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলবো।
সানিঃ যদি এটাতে কাজ না হয়?
আমিঃ তাহলে তন্নিকে দিয়েই করতে হবে। আর কোনো অপশন নেই,,,
সানিঃ আচ্ছা বাদ দে, দোয়া কর যাতে মেয়েটাই বিয়ে বন্ধ করে দেয়।
আয়মানঃ ওকে চল তাহলে, এই ফারিয়া তুই কথা বলে সব কিছু ঠিকঠাক কর।
ফারিয়াঃ ওকে।
তারপর ওদের সাথে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। রাতে পড়তেছি, দেখি ফারিয়া কল দিছে।
আমিঃ হুম বল,,,
ফারিয়াঃ দোস্ত মেয়েটার সাথে কথা বলেছি।
আমিঃ গুড, কি বললো?
ফারিয়াঃ ও দেখা করতে রাজি হয়েছে।
আমিঃ তো কোথায় দেখা করবি সেটা বলেছিস?
ফারিয়াঃ হুম, BEST INN রেস্টুরেন্ট এ দেখা করতে বলেছে।
আমিঃ ওকে ৯.০০ টায় রেড়ি থাকিস।
ফারিয়াঃ ওকে, তুই একটু তাড়াতাড়ি আসিস।
আমিঃ ওকে, তুই বাকিদের বলে দে।
ফারিয়াঃ ওকে।
তারপর খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে গেলাম, ঘুম থেকে উঠে রেড়ি হয়ে বেষ্ট ইনন রেস্টুরেন্ট এ চলে গেলাম, গিয়ে দেখি আমি ছাড়া সবাই আছে।
সানিঃ কিরে তোর এতো দেরি কেন?
আমিঃ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।
ফারিয়াঃ তো কল ধরিস না কেন?
মোবাইল চ্যাক করে দেখি ১০ বার কল দিছে।
আমিঃ সরি রে, মোবাইল সাইলেন্ট ছিলো। আচ্ছা বাদ দে মেয়েটা এসেছে?
ফারিয়াঃ হুম,
আমিঃ তো তুই বাইরে কেন?
সানিঃ তোর জন্য। আয়মান আর সাদিয়া ভিতরে কথা বলতেছে।
আমিঃ আচ্ছা চল।
তারপর ভিতরে গেলাম, মেয়েটার সাথে অনেক কথা বললাম, তারপর ফারিয়াকে ইশারা দিয়ে বললাম ওর কথা গুলো বলতে।
তারপর ফারিয়া ওর সব গুলো কথা বুঝিয়ে বললো, আমরাও সবাই একসাথে মেয়েটাকে বুঝালাম, কিন্তু মেয়েটা উলটো রিয়েক্ট দেখিয়ে বলে....
মেয়েঃ এটা কোনো ব্যাপার না, বিয়ের আগে সবারই ২-১ টা প্রেম থাকে। আমারও ছিলো, বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
ফারিয়াঃ মানে?
মেয়েঃ মানে বিয়েটা হচ্ছে, আপনি ফয়সালকে ভুলে যান, পারলে আপনিও অন্য কাওকে বিয়ে করে নেন।
আয়মানঃ তারমানে আপনি বিয়েটা করবেন।
মেয়েঃ হুম,,,,
সাদিয়াঃ সব কিছু জানার পরও? আপনি ওর মাঝে কি পেয়েছেন?
মেয়েঃ দেখেন ফয়সাল দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম এবং ধনিও। ভালো চাকরিও করে, সো আমি কেন আপনিও এমন ছেলে হাত ছাড়া করবেন না।
সানিঃ কিন্তু...
মেয়েঃ কোনো কিন্তু নয়, আপনাদের আর কোনো কথা থাকলে বলতে পারেন।
আমিঃ না কোনো কথা নাই, আপনি যেতে পারেন।
তারপর মেয়েটা চলে গেলো।
ফারিয়াঃ এবার কি হবে? (কান্না করতে করতে)
সানিঃ এই ন্যাকামি থামা। তন্নিকে দিয়ে করবো।
আয়মানঃ কিন্তু তন্নি আমাদের কথা শুনবে না, সেদিন আমরা ফ্রেন্ডশিপ করনি। সবাই উঠে চলে আসছি।
সাদিয়াঃ এই জুয়েল, তুই বললে ও শুনবে।
আমিঃ সরি, শুনলেও আমি বলবো না।
সাদিয়াঃ কেন?
আমিঃ ভুলে গেছিস ও কি কি করেছিলো?
আয়মানঃ এখন এগুলো বলে কোনো লাভ আছে।
আমিঃ তোর বল, আমি ওর সাথে কথাই বলবো না।
ফারিয়াঃ আচ্ছা বাদ দে, তোদের কাওকে বলতে হবে না।
এ কথা বলে উঠে চলে গেলো, এক এক করে সবাই চলে গেলো আমি একাই বসে রইলাম। তারপর আমিও চলে গেলাম, আমি জানি ওরা সবাই আমার উপর রাগ করে আছে। কিন্তু তন্নি মেয়েটাকে একটুও তো সহ্য হয় না, আর ফ্রেন্ডশিপ তো প্রশ্নই আসেনা।
রাতের বেলা বাসায় বসে বসে চিন্তা করতেছি কি করা যায়, মোবাইল নিয়ে fb লগিং করলাম ফারিয়া অনেক দুঃখের স্ট্যাটাস দিয়েছে, সব গুলোতে বন্ধুদের বিরুদ্ধে লেখা। স্পর্শ দেখতে পারছি সব কথা আমাকেই মিন করে বলেছে।
তারপর ভাবলাম তন্নির সাথে কথা বলেই ফেলি, যেটাই হোক ফারিয়া আমার খুব ভালো বন্ধু, আর বন্ধুতো বন্ধুর জন্যই।
পরের দিন কলেজে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম তন্নি কখন আসে, এই তো আসতেছে।
তারপর তার কাছে গেলাম, ওরে পিছন থেকে ডাক দিলাম। তারপরেই....
চলবে...
Writer:- এম এইচ জুয়েল