> বউ কখনো মেয়ে হয়না - Bangla Sad Story - Bangla New Story - Boipoka365
-->

বউ কখনো মেয়ে হয়না - Bangla Sad Story - Bangla New Story - Boipoka365


Bangla Sad Story

বিয়ে টা হয়েছিলো শর্ত সাপেক্ষে।  শর্ত গুলো হচ্ছে,

১. শ্বশুর বাড়ির সব কথা মান্য করে চলা। 

২. শাশুড়ীর কাজে সাহায্য করা। 

৩. তাদের সাথে মেয়ের মতো আচরণ করা। 

প্রেমের বিয়ে তো, সব মেনে নিয়েছিলাম অন্ধ ভাবে। এগুলো তো প্রত্যেকটা বউ এর করা উচিৎ।  মন থেকে  সব মেনেই বিয়ে তে রাজি হয়েছিলাম । বিয়ের প্রথম দিন থেকেই টুকটাক কাজে হাত লাগিয়েছিলাম শাশুড়ীর সাথে।  মা বলে ডাকতে দুদিন সময় নিলেও মায়ের মতোই সংসারের কাজ শুরু করি। প্রথম কিছুদিন ভালোই কাটলো,  কিন্তু বুঝতে পারি মন থেকে কখনো আমাকে মেনে নেয়নি আমার শাশুড়ী। কিছুদিন পর, ঝাড়ু শেষে ঝাঁটা টা খাড়া করে রাখাতে শাশুড়ী বলল,

“ ঝাঁটা কখনো ঊর্ধ্বমুখি রাখে?” 

“ কেন আম্মা,  কি হবে?” 

“ কি হবে জানিনা,  এভাবে রাখতে হয় না। ” 

বুঝলাম উনি কুসংস্কার এ বিশ্বাসী,  তাই অযথা তর্ক না করে যেভাবে রাখতে বলে সেভাবেই রেখে দিই। সেদিন শুধু স্বামীর কাছে বললাম, 

“ এইসব কুসংস্কার আমি বিশ্বাস করি না। কারণ এসব করা শিরক।” 

সে ইসলাম সম্পর্কে কিছুই তেমন জানেনা বিধায় গুগল সার্চ করে দেখিয়ে দিলাম কিন্তু কোনো উপকার হয়নি। 

বিয়ের কিছুদিন পরে রোজা শুরু হয়। সবজি কাটা বাছা দুপুরের আগেই করে নেন আমার শাশুড়ী। আমিও সব কাজে সাহায্য করি। কেননা,  দুপুরের পরপর রান্না বসাতে হবে। সেদিন দুইটা বটির একটা নিয়ে আমি সবজি কাটছিলাম , আর আম্মা অন্য কাজ করছিলো। ছুটির দিন বলে স্বামীও পাসেই বসে ছিল আর গল্প করছিলো। সবজি কাটা শেষ করে বটি ডিঙিয়ে গিয়ে হাত ধুয়ে এসে আবার অন্য তরকারি কাটতে বসি। তখন সাইমুম বলে, 

“ বটি ডিঙিয়ে গেলে মানুষের ক্ষতি হয়।” 

“ শুধু শুধু কুসংস্কার আমার সামনে বলবা না।  আমি কুসংস্কার বিশ্বাস করে শিরক করতে চাইনা। কারোর ক্ষতি হলে সেটা আল্লাহর ইচ্ছেতে হয়। কারো ভালো হলেও সেটা আল্লাহর ইচ্ছেতে হয়। কেউ কিছু করেছে বলে আরেকজনের ক্ষতি হবে ভাবাও কিন্তু শিরক করা। ” 

তার কিছুক্ষণ পর-ই আম্মা এসে সবজি কাটতে বসে পড়ে।  এত তাড়াহুড়ো করছে যেনো ট্রেন ছুটে যাচ্ছে। বললাম, 

“ আম্মা আমি করে নিতে পারবো। ”

উত্তরে বললেন, 

“ তোমরা কাজ করলে রাত দিন হয়ে যাবে।” 

মনে মনে রাগ হয়ে বললাম, “ আপনি সারাজীবন কাজ করে হায় চালু হয়ে গেছে। আমার কাজ একটু ধীরেই হয়, কারণ নতুন কাজ করছি তো।” কিন্তু মনের কথা মুখে প্রকাশ করলাম না। ততক্ষণে দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, 

আম্মা তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে বটিতে হাত কেটে ফেলেছে। সাথে সাথে দোষ হয়ে গেল।

“ তুমি বটি ডিঙিয়েছ বলেই আমার হাত কেটে গেছে। ” সাথে সাইমুম ও বলতে থাকে।  “ তোমার জন্যই আমার মায়ের হাত কেটেছে ইত্যাদি, ইত্যাদি। ” 

যাকে ভালবেসে বিয়ে করেছি তার কাছে এমন ব্যবহার প্রচুর মন খারাপের হয়। কিছু না বলে নিরবে চোখের জল ফেলি। পরে ভালবাবে সাইমুম কে বুঝিয়ে দেই অনেক আর্টিকেল পড়তে দিই। সে বুঝলেও আম্মার সাথে কখনো তর্কে যায়নি। কারণ বুঝেই গেছিলাম ওনার শিক্ষাগত যোগ্যতা নাই। খুবই অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে। পড়াশোনার সুযোগ হয়নি উনার। পরবর্তীতে বুঝলাম কথায় কথায় উনি ছেলের বউদের দোষ ধরে। উনি একদিন রান্নার সময় বললেন, 

“ গ্যাসের চুলা আস্তে জ্বালাও। নইলে চুলা নষ্ট হয়ে যাবে। আমার আর বউ গুলো চুলা নষ্ট করে দিয়েছিল কিছুদিন আগে।” 

শুধু হাসিমুখে চলে আসলাম, আর ভাবলাম গ্যাসের চুলা বুঝি আমার বাপের বাড়িতে নাই। আমি বোধহয় কখনো চুলা জ্বালাইনি। মন খারাপ হলেও কিছুই করার নেই।  আমার রান্না করতে খুবই ভালো লাগে। কিন্তু কখনো রান্না করার সুযোগ পেতাম না। একদিন শখ করে বললাম, 

“ আম্মা বেগুন কে  টক মিষ্টি দিয়ে রান্না করে খেতে খুব ভালো লাগে। করবো কি? ” 

সাইমুম ও করতে বললো,  উনিও রাজি হলো ছেলের কথা শুনে। 

রাতে ঘর থেকে শুনছি আব্বার খুব পছন্দ হয়েছে বেগুনের টক। সকালে আম্মা কে জিজ্ঞেস করলাম, 

“ আম্মা খেতে কি ভালো লেগেছিলো? ” 

উত্তরে উনি বললেন, 

“ এত তেল দেওয়া জিনিস আমি খাই না।” 

মন খারাপ হলেও বুঝতে দেই নি। শুধু সাইমুম কে বললাম, 

“ বিয়ের দেড় মাসে ৫ লিটার তেল শেষ। রান্না তো আমি করিনা।  তাহলে একদিনেই বুঝি সব তেল আমি দিয়ে দিয়েছি! ” 

সাইমুম নিরব,  কারণ এখানে নিজের মা। বউ কখনো মায়ের ঊর্ধ্বে নয়। কখনো প্রতিবাদ করিনি নিত্যকার কাজকর্ম নিয়ে।  আম্মা যা-ই বলুক সব মেনে নিয়েছি। 

সকালে উঠে খড়ির চুলাতে রুটি করেছি।  ঘন্টার পর ঘন্টা সবজি কেটে দিয়েছি, ঘর ঝাঁড় দেওয়া,  মাঝে মাঝে মোছা, বাসন মাজা।  যতটা পার‍্তাম সব করার চেষ্টা করেছি।  শুধু আম্মা দুপুরে রান্না করেছে। রাতের রুটি টাও আমি করতাম। কখনো কাজ কে অবহেলা করিনি। দুপুরে খাবার পর কিছুক্ষণ আরাম করে আম্মার হাতে ব্যথার ট্রিটমেন্ট করতাম। প্রত্যেক দিন হয় হাত না হয় কোমর না হয় হাটুর চিকিৎসা করা হয়েছে। মুভমেন্ট এ ব্যথা বলে জয়েন্ট মুভমেন্ট বাড়াতে সাহায্য করতাম।  অনেক টা উপকার হয়েছিলো উনার। অনেক এক্সেরসাইজ শিখিয়ে দেই।  যাতে ব্যথা পুনরায় ফিরে না আসে। একদম মেয়ের মতই মিশেছি আম্মার সাথে।  উনি আমাকে মেয়ে মনে করে কিনা সত্যিই জানিনা। 

বিয়ের পাঁচ মাস পর চাকরি তে গেলাম।  চাকরি আমার স্বপ্ন ছিল।  অথচ যাওয়ার দেড় মাস পর জানতে পারি কনসিভ করেছি। প্রেগন্যান্সির চার মাসের মাথায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে আবার চলে আসি শ্বশুর বাড়ি।

মাত্র আঠারো দিনের দিন বাপের বাড়ি চলে আসি ডাক্তার দেখাবো বলে। কেননা,  খুব অসুস্থ অনুভব করছিলাম।  বাসায় এসে জানতে পারি ইউরিনে ইনফেকশন সাথে রক্ত একেবারে কম। রক্ত কম প্রেগন্যান্সির জন্য, কিন্তু ইউরিনে ইনফেকশন হয়েছে কাজের চাপে। এরপর শুরু হয় অতিরিক্ত চুলকানি।  অতিরিক্ত এলার্জি জাতীয় খাবার খাওয়া হয়েছে শ্বশুর বাড়ি তে। সারারাত গা চুলকায়,  আর চুলকানির জ্বালায় ঘুম হারাম হয়ে গেছিলো। ভোরের দিকে চুলকানি একটু কমে,  তখন একটু ঘুমাতে পারি। সারারাত জাগার ফলে রাতে খাবার চাহিদাও বেড়ে যায়। 

দেড় মাস পর যখন সাইমুম বাসায় আসে তখন আবার শ্বশুর বাড়ি যাই। কিন্তু আর আগের মতো নেই আমি। কাজ করা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে গেছে চুলকানির জন্য৷ অসহ্য যন্ত্রণা তে রাতে ঘুম নেই। অথচ লজ্জার খাতিরে সকালে উঠে রুটি বানাতে যেতাম। আম্মা কিছু বললে বলতাম, “ দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারবো, সমস্যা নেই। ” 

যা পারতাম তাই করতাম। তবে উনার কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।  কারণ অনেক কাজ আমি করতে পারিনা উনাকে দিয়ে করাতে নিজের খারাপ লাগলেও কিছুই করার ছিল না।  এত বেশী চুলকানি ছিল যে, সারা শরীর ঘাঁ হয়ে গেছিলো। খাবার মানা শুরু করাতে উনার রান্না করতে খুব ঝামেলা হচ্ছিলো।  তবুও আমি যা খেতে পারবো তাই করে দিয়েছেন। 

একদিন ভাবীর সামনে আম্মা বললো, 

“ আগে তো রাতের বেলা খেতে না,  এখন খাও কিসের জন্য। কই আমরাও তো মা হয়েছি, রাতে তো কখনো খাইনি।”

আমার উত্তর দেওয়া লাগেনি,  ভাবী নিজেই বললো, 

“ সোহা যে রাতে ঘুমাতে পারে না,  না ঘুমালে ক্ষুধা বেড়ে যায়। ” 

মন খারাপ লাগলেও সহ্য করে নিই। 

মায়ের কাছে থাকা অবস্থায় মা প্রতিদিন আমার জন্য খুব ভোরে রুটি করে দিত। কেননা রাতে ঘুমাতে পারিনা,  সকালে খেয়ে যেন ঘুমাতে পারি। 

অথচ শ্বশুর বাড়ি তে লজ্জার খাতিরে দিনেও ঘুমাতাম না। কখনো এক,  দুই ঘন্টা ঘুমেও আমার দিন কেটেছে। তখন সাত মাস চলছে।  একদিন ঘুম থেকে উঠতে পারিনি বলে বাসি রুটি খেতে হয়েছে।  সেদিন আব্বা আম্মা দুজনেই রোজা। সাইমুমের জন্য ভাত ভেজে দেয় আম্মা। শুধু মন খারাপ করে ভাবি, নিজের মা হলে কখনো বাসি রুটি খেতে হতো না। 

এবার আবারও অসুখ বেড়ে যায়। পা ফুলে ব্যথা বেড়ে যায়।  দাঁড়াতে কষ্ট হত খুব।  প্রেগন্যান্সির কম্পলিকেশন বেড়েই যাচ্ছে। দাঁড়ানো কষ্ট হচ্ছে বলে আর শ্বশুর বাড়ি থাকিনি। চলে আসলাম মায়ের কাছে। 

আড়াই মাস নরমালে বাবুর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি।  কিন্তু কম্পলিকেশন এর জন্য সিজারিয়ান সেকশন এ যেতে বাধ্য হলাম। কিন্তু কপাল এতই খারাপ যে,  মা অসুস্থ হয়ে গেলো সিজারের চার দিনের দিন।  গলব্লাডার স্টোন ধরা পড়লো। কয়েকদিন পর জানলাম,  করোনা পজিটিভ।  বাধ্য হয়ে সিজারের ১৬ দিনের দিন আবারও শ্বশুর বাড়ি যেতে বাধ্য হলাম। 

সেদিন থেকেই যতটা পারতাম কাজ করতাম,  কারণ কখনো বয়স্ক শাশুড়ীর বোঝা হতে চাইনি। কয়েকটা দিন পর শাশুড়ী বলল,

“ তোমাদের স্বামীরা তো সব করে দিচ্ছে। বাচ্চার কাঁথা কাপড় সব খেঁচে দিচ্ছে।  অথচ আমাদের স্বামী রা এসব কিছুই করেনি। ”

মন খারাপ করে পরের দিন থেকে বাচ্চার কাপড় ও নিজে খাঁচা শুরু করলাম। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হতো কাজ করতে কিন্তু সব করতাম। সিজারের দেড় মাস হয়ে যায় ব্যথা কমে না।  রাতে শরীরের যন্ত্রণা,  সাথে বাচ্চার জ্বালা।  পুষ্টিকর খাবারের অভাবে বাচ্চার খাবারে ও ঘাটতি পড়ে। বাবু সারারাত কাঁদে, খাবার না পেয়ে। 

পুষ্টিকর খাবারের কথা সাইমুম কে বলার পর ও সে ব্যবস্থা করে দেয়। তাতে আম্মা খোটা দিয়ে বললো, 

“ এসব খেলে কখনো কি বাবুর খাবার বাড়বে? ” 

নিজে খাওয়া শুরুর পর থেকে বাবু ধীরে ধীরে খাবার পাওয়া শুরু করে৷ রাতে জ্বালানো একটু কমে যায়। যেখানে সারারাত জ্বালাতো, সেখানে পাঁচ ছয়বার তার ঘুম ভাঙে। রাতে ঘুম না হলেও সকালে সাত টা থেকে ৮ টার মাঝে উঠে যেতাম। দুই একদিন দেরি হয়েছে। রাতে দুই এক ঘন্টা ঘুমানোর পর দুপুরে একেকদিন ঘুমালে কথা শুনতে হয়েছে। 

“ এত ঘুম কেউ ঘুমায়? আমরা তো না ঘুমিয়েই সব বাচ্চা মানুষ করে নিয়েছি।” শুধু শোনা ছাড়া কিছুই করার নেই। কখনো কোন কথার পালটা জবাব দেইনি। 

কিছুদিন যাবার পর উনার বিশ্ব বিখ্যাত গ্যাসের চুলা নষ্ট হয়ে যায়।  সাথে সাথে দোষ হয়,  আমরা মানে উনার চার ছেলের বউ মিলে চুলা নষ্ট করে দিয়েছি। 

অথচ দুই বউ এর একজন তিন বছর থেকে প্রবাসী,  আরেকজন ঢাকায় থাকে। বছরে একবার আসে কিনা ঠিক নেই। আর আরেকজন নিজের সংসার নিয়ে আলাদা খায়। তবে ভাবী নিজ মুখেই বলেছে, 

“ যতই কাজ করে দিই না কেন,  কখনো শাশুড়ীর নাম পাবা না। ” 

সাইমুম কে রাগ দেখালে সে বললো, 

“ যা বলেছে বলেছে। মা মনে করে ভুলে যেতে। ” 

আমি শুধু বললাম, 

“ আমি মা মনে করি,  কিন্তু উনি মেয়ে মনে করে তো!” 

কারণ,  প্রতিটি কাজে ভুল ধরে।  কেন ঝাঁড় দেওয়ার পর ঘরে কোন এক যায়গায় সামান্য ময়লা থাকবে।  কেন কাপড় খাঁচার পর ভালভাবে চাপতে পারিনা। কেন ভাজি কাটলে মোটা হয়? (যথেষ্ট চিকন করে ভাজি কাটা হয়।) কেন ঘর ভালভাবে মুছি না।  কেন বাথরুম ভালভাবে  সাফ করতে পারিনা।  অথচ সব যথেষ্ট সুন্দর ভাবেই করা হয়। এছাড়া বাসি পঁচা খাবার তো আছেই।  নিজে খাবে না , বউ কে খাওয়াবে। 

এই অসুস্থ শরীর নিয়ে সব কাজ করার পরও যখন শুনতে হয়, 

“ আমার বউ রা কোন কাজ করতে পারে না।  অথচ সিজারের পর ও অমুক বাড়ির বউয়েরা সব কাজ করে। ” তাহলে আক্ষেপ ছাড়া কিছুই থাকে না।  



( সমাপ্ত )




লেখা: জামিয়া পারভীন তানি

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner