> অ্যাম্বুলেন্স আসার আগে যেভাবে হৃদরোগী বাঁচাবেন - হৃদরোগী বাঁচানোর উপায় - হঠাৎ হৃদরোগী বাঁচানোর উপায় - Health - Boipoka365
-->

অ্যাম্বুলেন্স আসার আগে যেভাবে হৃদরোগী বাঁচাবেন - হৃদরোগী বাঁচানোর উপায় - হঠাৎ হৃদরোগী বাঁচানোর উপায় - Health - Boipoka365

আপনার চোখের সামনে কেউ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো, এর কারণ হতে পারে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা অন্য কোনো কোন অসুস্থতা. যদি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় সে আপনার চোখের সামনেই কয়েক মিনিট এর মধ্যে মারা যাবে. তবে যদি আপনি ফার্স্ট এই কিছু জানেন তাহলে হয়তো ওই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন হাসপাতালে নেয়া পর্যন্ত
প্রথমেই বুঝে নেই তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে নাকি অন্য কিছু. আমাদের হার্ট এ একটা ইলেকট্রিকাল সিস্টেম আছে. যার কারণে হার্ট সব সময় বীট করতে থাকে আর সারা শরীরে রক্ত পাম্প করতে থাকে
যখন ইলেকট্রিকাল সিস্টেমে কোনো গুরুতর সমস্যার ফলে হার্ট শরীরে রক্ত পাম্প করা বন্ধ করে দেয় সেটাকে বলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে. কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে হবার কমন কারণ হলো হার্ট এটাক, হার্টে বংশ গত সমস্যা ইত্যাদি. একটা উদাহরণ দিয়ে সামনে আগাই. ধরুন আপনার সামনে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পরে গেছে আপনার কলিগ সাদমান.সে বংশ গত ভাবে হার্ট এর একটা সমস্যা নিয়ে জন্মেছে কিন্তু সেটা সে জানতো না. কখনো কোনো সমস্যাও হয়নি. হটাৎ আজকেই সেই বংশ গত সমস্যার কারণে তার হার্ট এর ইলেকট্রিকাল সিস্টেমে গোলমাল তৈরী হলো. নানা জায়গায় ইলেকট্রিকাল সিস্টেম ফায়ার
করছে. ফলে তার হার্ট স্বাভাবিক ভাবে সংকোচন প্রসারণ না হয়ে হার্ট কাঁপতে শুরু করেছে. এমন কাঁপলে তো আর হার্ট শরীরে রক্ত পাম্প করতে পারে না. ফলে ব্রাইনেও রক্ত যাচ্ছে না. শ্বাস প্রশ্বাস
অস্বাভাবিক হয়ে এসেছে সাদমান অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেছে. এ সময় যে সাদমান পরে গেছে এটা তার মনে থাকবে না. কারণ ওর ব্রেইনে রক্ত যাচ্ছে না অক্সিজেন যাচ্ছে না ফলে ব্রেন এর কিছু কোষ মারা 
যেতে শুরু করেছে. এই অবস্থায় আপনার কাজ শুরু. সাদমান কে বাঁচানোর জন্য ওর হার্ট এর কাছটা আপনি নিজের হাতে তুলে নেবেন. সাদমানের বুকে জোরে করে চাপ দিয়ে দিয়ে তার ব্রেনে রক্ত চলাচল করবেন
যাতে ওর ব্রেন ভলো থাকে অনেক খানি মোর না যায়. আপনি এই কাজটা করলে সাদমানের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে দুই থেকে তিন গুন. এটাকে বলে কার্ডিওপালমোনারী রেসুস্কিটেশন
বা সিপিআর. কিভাবে করবেন পুরো বোঝাচ্ছি. যখনি দেখলেন সাদমান পরে গেলো তখন আপনার খুব দ্রুত ৩ তা কাজ করতে হবে

(১) সাদমানের কাঁধে হাল্কা করে ঝাঁকি দিয়ে জোরে আওয়াজ করে জিজ্ঞেস করবেন সাদমান তুমি কি ঠিক আছো. সাদমান কোনো সাড়া দিল না নড়া চড়া করলো না. অর্থাৎ সে অজ্ঞান হয়ে গেছে

(২) এখন আপনার সাথে আরো কয়েক জন মানুষ লাগবে. চিৎকার করে আসে পাশের মানুষ কে ডাকুন. তাদের বলবেন ৯৯৯ কল দিতে এবং ডিফিব্রিল্লাটোর নিয়ে আসতে. যাকেই বলবেন খুব দ্রুততার
 সাথে কাজ গুলো করতে বলবেন যদি কেউ আশেপাশে না থাকে তাহলে তাড়াতাড়ি ৯৯৯ বা আপনি যে অঞ্চলে আছেন সেই অঞ্চলের জরুরি সেবার নম্বরে কল দিয়ে স্পিকার অন করে ফোনটা পাশে রাখুন

(৩) ১ র ২ নম্বর কাজ করার সাথে সাথে খেয়াল করুন সাদমানের শ্বাস প্রশ্বাস কেমন. স্বাভাবিক আছে , বুক ওঠা নামা করছে, বাতাস আসা যাওয়া করছে সবার শ্বাস প্রশ্বাস একেবারে বন্ধ হয়ে যায় না.
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে হলে শ্বাস প্রশ্বাস কেমন হতে পারে সেটা দেখিয়ে দিচ্ছি. যদি সাদমান আপনার কোথায় কোনো সাড়া না দেয় আর সাস প্রসেস বন্ধ হতে হবে এমন কথা নেই তাহলে ধরে
নেবেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে হয়েছে. এখনি সিপিআর শুরু করতে হবে. ধরেন আপনি বুঝতে পারছেন না শ্বাস স্বাভাবিক নাকি. মনে হচ্ছে শ্বাস আছে কিন্তু সাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক সেটা বুঝতে পারছেন না
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে কিনা শিওর না. তাও আপনি CPR শুরু করবেন. অনেকে ভয় পান, মনে করেন যদি CPR শুরু করি কিন্তু আসলে সিপির এর দরকার ছিলো না তাহলে কি সাদমানের অনেক বড় ক্ষতি হবে?
উত্তর হলো না. বুকে চাপ দিলে সাদমান এর অনেক ক্ষতি হবে এমন কোনো দুশ্চিন্তা আপনার করার দরকার নেই. আপনি বুকে চাপ দেয়া শুরু করবেন. ও সুস্থ থাকলে নিজেই আপনাকে সরিয়ে দেবে.
সব গাইড লাইন এই অতি দ্রুত CPR দেয়া শুরু করতে বলে. যদি সাদমানের কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে হয়ে থাকে আপনি কিছু না করলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে মারা যাবে তাই সাদমানের কোনো ক্ষতি হবে এমন 
চিন্তা বাদ দিয়ে CPR শুরু করবেন যত দ্রুত সম্ভব. এখন CPR দেয়ার নিয়মটা বলি. 
সাদমানের বুকের পাশে হাঁটু গেরে বসবেন. বুকের ঠিক মাঝখানে এক হাতের তালুর নিচের অংশ রাখবেন. আরেক হাতের তালু তার ওপরে বসবেন. তারপরে আঙ্গুল গুলো একটা আরেকটার ভেতর ঢোকাবেন
তারপর সাদমানের বুকের ওপর ঝুঁকে আসবেন যাতে আপনার কাঁধে আর হাতের তালু সোজা একটা লাইন বরাবর আসে. হাতটা এভাবে থাকলে আপনি সহজে সাদমানের বুকে চাপ দিতে পারবেন
তারপর সাদমানের বুকে চাপ দেবেন যাতে অন্তত ৫ cm দেবে যায়. ৫ cm কিন্তু অনেক ডুপ. CPR দেয়ার অটোমেটিক মেশিন আমরা হাসপাতালে ব্যবহার করি. বুঝতেই পারছেন খুব জোরে চাপ দিতে হয়
এবং খুব দ্রুত করতে হয় প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১২০ বার. ১ সেকেন্ডে প্রায় দুই বার চাপ দিতে হয়. এই কাজটা সাদমানের জীবন বাঁচাতে অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ. বুকে চাপ দিয়ে আপনি সাদমানের শরীরে আর ব্রেইনে রক্ত পাঠাচ্ছেন. দুইটা চাপ এর মাঝানে খেয়াল রাখবেন সাদমান এর বুকের অবস্থান যেন আগের অবস্থায় ফিরে আসে. এতে রক্ত চলাচল করবে.সারাক্ষন বুকে চাপ দিয়ে রাখবেন না . এক চাপ দিয়ে তারপর হাল্কা করে ছেড়ে দেবেন . দুই চাপ এর মাঝখানে বুকে ভর দেবেন না. একজন মানুষ স্বাভাবিক ভাবে ২ মিনিট এর বেশি বুকে চাপ দিতে পারে না. তাই ২ মিনিট পরপর বা তার আগেও যদি কেউ ক্লান্ত হয়ে পরে মনে হয় সে ৫ cm ডাবাতে পারছে না তাহলে অন্য আরেকজন তার জায়গা নেবে. যাতে সব চেয়ে কম সময় নষ্ট হয় সেই চিন্তা করবেন. ৩০ বার বুকে চাপ দেয়ার পর দুইটা রেস্কিউ বৃৎ দিতে হয়.
তারপর আবার ৩০ বার বুকে চাপ তারপর রেস্কিউ বৃৎ তারপর আবার বুকে চাপ. এভাবে চালিয়ে যেতে হয়. রেস্কিউ বৃৎ কিভাবে দিতে হয়. এক হাত দিয়ে রোগীর মাথা হালকা নিচু করে আরেক হাতের দুই 
আঙ্গুল দিয়ে থুতনি উঁচু করে যে হাত রোগীর মাথায় সেই হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে রোগীর নাক বন্ধ করে রোগীর মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে ১ সেকেন্ড ধরে শ্বাস ছেড়ে রোগীর ফুসফুসে বাতাস ঢোকানোর চেষ্টা 
করতে হবে. তবে অনেকেই রেস্কিউ বৃৎ দিতে পারেন না বা করতে সাচ্ছন্দ বোধ করেন না. তখন এটার দরকার নাই. রেস্কিউ বৃৎ না দেয়ার কারণে দয়া করে CPR দেয়া থেকে বিরত থাকবেন না.


ডিফিব্রিলেটর এর ব্যবহার:-


এটাকে এরই নাম অনেকে চিনেন. এটার মাধ্যমে রোগীকে ইলেক্ট্রিক শক দেয়া হয়. হার্ট শুধু কাঁপছে পাম্প করতে পারছে না, ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে হার্ট এর এই কাপাকাপি কিছু মুহূর্তের জন্য বন্ধ করা হয়
হার্ট যদি ভালো থাকে তাহলে হেয়ার আবার স্বাভাবিক ভাবে বীট করা শুরু করতে পারে. উন্নত দেশে পাবলিক প্লেস এ যেমন শপিং মল এ, হোটেল, স্কুলে এই যন্ত্র বিভিন্ন জায়গায় রেখে দেয়া হয়
যাতে প্রয়োজনে দ্রুত ব্যবহার করা যায়. এগুলো যে কেউ ব্যবহার করতে পারে. পাব্লিক প্লিস এ যেসব ডিফিগলাইটার থাকে সেগুলোই ধাপে ধাপে বলে দেয় কোনটার পরে কি করতে হবে
রোগীর প্রয়োজন না হলে ইলেক্ট্রিক শক দেয় না. তাই এখানেও রোগীর কোনো ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নাই. বরং বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণে বেড়ে যায়.আমাদের দেশি পাবলিক প্লেসে
সাধারণত এ যন্ত্রটা থাকে না আপনারা যারা আমার এই ভিডিও দেখছেন আপনার অফিস এর জন্য, বিল্ডিং সোসাইটি বা স্কুল এর জন্য কয়েকজন মিলে একটা ডিফিব্রিলেটর কিনে এটা কিভাবে
ব্যবহার করতে হয় সেটা শিখে নিতে পারেন. ডিফিব্রিলেটর হাতের কাছে থাকলে সেটা ব্যবহার করবেন. আর না থাকলে CPR চালাতে থাকবেন. কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে কখনো কখনো ডিফিব্রিলেটর
 ব্যবহারের দরকার হয় না. CPR যথেষ্ট. কতক্ষন CPR চালিয়ে যাবেন. যতক্ষণ না জরুরু সেবা থেকে সাহায্য আসে বা সাদমান এর জ্ঞান ফিরে আসে.

আর এই সব কিছুর আগে দেখে নেবেন যে জায়গাটা আপনার জন্য নিরাপদ কিনা. রাস্তারমাঝখানে কেউ হটাৎ করে অজ্ঞান হলে আপনি কিছু না দেখে সেখানে ছুটে গেলে আপনার কোনো দুর্ঘটনা ঘটে 
যেতে পারে. তাই নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তারপর আগাবেন. প্রাক্টিকাল ক্লাস এর মাধ্যমে যদি শেখার সুযোগ থাকে তাহলে এগুলো অবসসই শিখে নেবেন. আমাদের স্কুল গুলোতে এটা শিখতে পারলে 
সবচেয়ে ভালো হতো. আশা করছি এমন বিপদে যেন আপনাদের কখনোই পড়তে না হয়. যদি বিপদ এসেও তাহলে আপনি জানেন আপনাকে কি করতে হবে. যতটুকু মনে থাকে ততটুকু দিয়ে চেষ্টা করতে হবে.
আপনার চেষ্টাতে হয়তো একটা জীবন বেঁচে যাবে. আর তা না হলেও আপনি জানবেন আপনি আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন.




NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner