|৫|
মুকুট পাহাড়ের চূড়ায় তখন প্রভাতি সূর্য। কোমল কুসুমের মতোই ঈষৎ কমলা তার গায়ের রঙ। সুব্রত সেই গাছ জোড়ার কাছে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে চাইল। কুসুমপেলব সূর্যের দিকে চেয়ে মৃদুস্বরে বলল,
' বৃষ্টি!'
পাহাড়ের চূড়ায় তখন বন্য হাওয়া। আচমকা এসে উড়িয়ে দিয়ে যায় গোছা গোছা চুল। চাদর। সুব্রতর মধুমাখা স্বর। লাবণ্য তার আগলা চুলের গোছা সামলাতে সামলাতে আকাশের দিকে চাইল। গায়ের পাতলা চাদরটা সরে যাচ্ছে বারবার৷ লাবণ্য এক হাতে চাদর সামলে চূর্ণ চুল গুঁজল কানের পাশে।
' বৃষ্টি! এতো সুন্দর আকাশ দেখে আপনার হঠাৎ বৃষ্টির কথা মনে পড়ল কেন?'
সুব্রত আকাশের দিকে মুখ তুলে চোখ বন্ধ করল। গভীর এক শ্বাস নিয়ে ঈষৎ হাসল,
' বৃষ্টির প্রতি আপনার এতো ক্ষোভ কেন?'
লাবণ্য অসহিষ্ণু কন্ঠে বলল,
' বৃষ্টি মানেই তো প্যাচপ্যাচে কাদা। এখন হঠাৎ বৃষ্টি নামলে কী সাংঘাতিক কান্ড ঘটবে ভেবে দেখেছেন?'
সুব্রতর হাসি চওড়া হলো। চোখ মেলে ঘাড়টা ঈষৎ বাঁকিয়ে লাবণ্যর মুখের দিকে চাইল। লাবণ্যর মুখের উপর প্রভাতি সূর্যের মায়া। ঝলমলে, লাবণ্যময়ী মুখে
ঝিকমিক করছে দুটো চোখ।
' তবে তো পাহাড়ের সাথে আপনার মিতালির সম্ভবনা ক্ষীণ। পাহাড়ের প্রথম ভালোবাসা বৃষ্টি অথচ আপনার এতো অপছন্দ! যারা পাহাড় পছন্দ করে তাদের বৃষ্টি পছন্দ করতে হয়, এটাই নিয়ম। দেহকে ভালোবেসে প্রাণকে ঘৃণা করলে চলবে কেন?'
লাবণ্য স্থির চোখে সুব্রতকে দেখল। দীর্ঘদেহী সুব্রতর সরু নাকের ডগায় আভিজাত্যের স্পর্শ। চাবুকের মতো চিবুকে এক ফালি নরম রোদ্দুর। লাবণ্য সুব্রতের চোখের দিকে চেয়ে বিভোর হয়ে শুধাল,
' আপনার বুঝি বৃষ্টি খুব পছন্দ?'
সুব্রতর দৃষ্টি ঝলমল করে উঠল হঠাৎ। সমস্ত মুখে ছড়াল অদ্ভুত এক তৃপ্তি। খুব আদুরে কন্ঠে বলল,
' বৃষ্টি! বৃষ্টি তো আমার আজন্ম প্রণয়িনী, লাবণ্যপ্রভা।'
সুব্রতর এই ছোট্ট কথায় ছলকে উঠল এক সমুদ্র আদর। সাদা, কৌতূহলী চোখদুটোতে ফুটল তার নিদারুণ প্রকাশ। চোখের ভাষায়, অতি সাধারণ কথায়, এমন ছলকানো ভালোবাসায় বৃষ্টিকে বড়ো ঈর্ষা হলো লাবণ্যর। পরমুহূর্তেই তুলতুলে এক অনুভূতিতে ছেয়ে গেল গোটা মন। বিড়বিড় করে বলল,
' লাবণ্যপ্রভা?'
সুব্রত মাথা নাড়ল,
' আমাকে মধ্যযুগীয় নায়ক বানানোর পুরস্কারস্বরূপ আপনাকে মধ্যযুগীয় নায়িকা বানিয়ে দেওয়া হলো। লাবণ্যপ্রভা! সুন্দর নাম। নামটা আপনার পছন্দ হয়নি?'
লাবণ্য উত্তর দিল না। খানিক বিস্ময় নিয়ে চেয়ে থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে চাইল। সুব্রত হাসল। পাহাড়ী ঘাসের উপর লম্বালম্বি শুয়ে বলল,
' আমার মনে হচ্ছে নামটা আপনার পছন্দ হয়েছে। ঠিক এই মুহূর্তে আপনাকে এই নামটিতেই সব চাইতে বেশি মানাচ্ছে। লাবণ্যময় মুখখানিতে প্রভাতি সূর্যের প্রভা। আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে লাবণ্যপ্রভা।'
লাবণ্য স্তম্ভিত হয়ে গেল। দেহখানি যেন দুলতে লাগল উত্তেজনায়। পাহাড়ি, উদ্দাম বাতাসেও দেখা দিল মরণপণ শ্বাসরোধ। লাবণ্য নিঃশেষিত শক্তি নিয়ে সুব্রতর দিকে চাইল। সুব্রত ঘাসের উপর লম্বালম্বি শুয়ে আছে। দীর্ঘকায় দেহটা ঘাসের আস্তিনে তলিয়ে গিয়েছে প্রায়। ঠোঁট দুটোতে সদা প্রাণবন্ত হাসি। চোখের উপর দামী লেন্সের ক্যামেরা। মেঘহীন আকাশের ছবি উঠে যাচ্ছে, ক্লিক! ক্লিক!
ফেরার পথে খুব একটা কথা বলল না সুব্রত। নিজের মনে ছবি তুলল। মাঝে মাঝে দুই একটা প্রশ্ন করল, উত্তর পেলো কী পেলো না সে নিয়েও খুব ভাবল না। সপ্রতিভ লাবণ্য গম্ভীর হয়ে রইল আরও বেশি। তার মনোজগৎ-এ চলল বিরামহীন তর্ক। সুব্রত কেন বলল ওমন কথা? কেন দিল তাকে বিশেষ নাম? কেবল বন্ধু বলে? নাকি সুপ্ত কোনো অনুভূতি বলে? কী চায় সুব্রত? কী চায়? রিসোর্টের সামনে এসে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল সুব্রত। কপাল কুঁচকে বলল,
' আপনি হঠাৎ গুটিয়ে গেলেন যে? আমার কেন মনে হচ্ছে, আপনি খুব একটা স্বস্তি পাচ্ছেন না?'
লাবণ্য স্থির তাকাল। আচমকা প্রশ্ন করল,
' আপনি কী সব মেয়েকেই এমন ডাকেন?'
সুব্রতর কপালের ভাঁজ গাঢ় হলো,
' বুঝতে পারলাম না। কীসের কথা বলছেন?'
লাবণ্য উত্তর দিতে পারল না। অদ্ভূত এক অস্বস্তি হলো। সুব্রতর মুখের দিকে ক্ষণকাল চেয়ে থেকে বলল,
' কিছু না।'
সুব্রতর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ভেবে ছেঁড়া মেঘের মতোই চঞ্চল দিন কাটলো লাবণ্যর। কখনও ভীষণ খুশি, কখনও অভিমান, কখনও বিদ্বেষ, কখনও বা গভীর প্রেম , নাম না জানা অসংখ্য অনুভূতিতে ছেয়ে রইলো মন। তারপর সন্ধ্যা নামল। রিসোর্টের লাউঞ্জে সুব্রতদের আড্ডা বসল। লাবণ্য আজ আর সেদিকে এগুলো না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল জ্বলজ্বলে সন্ধ্যা তারাটির দিকে। এক্সিবিশনের আর দুটো দিন বাকি। তারপরই ফিরতে হবে গন্তব্যে। ব্যস্ত হতে হবে রোজকার রুটিনের ধরাবাধাঁ নিয়মে। নাভিশ্বাস উঠলেও মগ্ন থাকতে হবে চাকরি, পরিবার আর নিজস্বতার যুদ্ধে। লাবণ্যর মন খারাপ হলো। সুব্রত নামক কৃষ্ণমানবটিকে ফেলে যেতে হবে ভাবতেই অবসন্ন হয়ে এলো মন। সন্ধ্যার শিরশিরে ঠান্ডায় বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে উদাস চেয়ে রইল। নাজমুল এলো বেশ সমারোহ করে। চকচকে হেসে বলল,
' কী অবস্থা? জমিদারপুত্রের প্রেমেই মগ্ন হলে তবে? তোমার মতো মেয়েও যে এমন আচমকা প্রেমে পড়ে যেতে পারে ভাবতেই পারিনি।'
লাবণ্য কপালে ঈষৎ কুঞ্চন ফেলে বলল,
' জমিদারপুত্র? এ আবার কে?'
নাজমুল অবাক হয়ে বলল,
' কে আবার? সুব্রত, ওই নাটকের ছেলেটা। যার সাথে বেড়াও মাঝে মাঝে।'
' তা তাকে জমিদারপুত্র বলার কারণ?'
নাজমুল চূড়ান্ত বিরক্ত। চোখদুটোতে বিতৃষ্ণ ভাব। নাজমুল বিতৃষ্ণ চোখে লাবণ্যর দিকে চাইল। অপ্রসন্ন কন্ঠে বলল,
' জমিদারের ছেলেকে জমিদারপুত্র বলব না তো কী বলব? মুচিপুত্র বলব? নাকি মেথর পুত্র বলে সেলাম ঠুকব?'
লাবণ্য হকচকিয়ে গেল। কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে বলল,
' আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, নাজমুল ভাই। সুব্রতবাবু জমিদারপুত্র? আজকাল জমিদার টমিদার আছে নাকি দেশে? আশ্চর্য!'
' এখন নেই। তবে, এক সময় ছিল। আমি খবর নিয়ে জেনেছি। সুব্রতর দাদা ছিলেন বিরাট জমিদার। ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে জমিদার শাসন উঠে গেলেও প্রতাপ প্রতিপত্তি কমেনি এক বিন্দু। সুব্রতর বাবাও বোধহয় খুব স্ট্রিক্ট টাইপের মানুষ। ব্যবসা, সহায়-সম্পত্তি নিয়ে এখনও বেশ ঠাঁট নিয়েই চলাচল। অনেকটা আগেকার জমিদারদের মতোই।'
লাবণ্য বিস্ময় নিয়ে বলল,
' আপনি এর মাঝেই এতো খবরাখবর নিয়ে ফেললেন?'
নাজমুল উদাস কন্ঠে বলল,
' হ্যাঁ, নিয়ে ফেললাম। হাতে কোনো কাজ টাজ নেই। তাই ভাবলাম ইনভেস্টিগেশন করা যেতে পারে। তাছাড়া তুমি যদি ফট করে এক্সিবিশন আইকন হয়ে যাও তাহলে এটা একটা জব্বর খবর হয়ে যাবে না? এক্সিবিশন আইকন লাবণ্য নাট্যপুত্র সুব্রতর প্রেমে! ব্রেকিং নিউজ! ব্রেকিং নিউজ! আমাদের চ্যানেল রাতারাতি হিট। সাংবাদিকদের কত ভাবতে হয় দেখেছ?'
লাবণ্য হেসে ফেলল। নাজমুল হঠাৎ তিক্ত কন্ঠে বলল,
' জমিদার বংশের ছেলে হয়েও এসব নাটক ফাটক করে বেড়ানোর মানে কী? ভরং দেখেছ? টাকা-পয়সার চিন্তা ভাবনা নাই বলে ভরং ধরে থাকে। জমিদার মানেই সমস্যা। জমিদারদের ছেলেপুলে তো আরও সমস্যা। এদের কিছু হয় আধ-পাগলা, কিছু মেয়ে-পাগলা, কিছু হয় পুরো পাগলা। আমার মনে হয় এই সুব্রত হলো আধ-পাগলা। কী সব পাগল ছাগলের পাল্লায় পড়ে গেলে বল তো?'
লাবণ্য উত্তর দিল না। সুপ্ত মনোজগতে ভাবনা সমূহের ঢেউ উঠল আচমকা। সুব্রত জমিদার বংশের ছেলে? কই!দেখে তো বুঝার উপায় নেই। চোখে-মুখে অহংকারের লেশমাত্র নেই। নেই কোনো দম্ভ। কেমন সতেজ, সাধারণ, আন্তরিক তার সঙ্গ। লাবণ্যর ভালো লাগাটা বিস্তৃত হলো শিরায় শিরায়। দম্ভহীন অথচ তীক্ষ্ণ ব্যক্তিত্বের এই মানুষটিকে ভালোবেসে ফেলতে ইচ্ছে করল হঠাৎ। প্রেমের দুয়ার খুলে ঝিলিক দিয়ে উঠল কুসুমাসব প্রণয় আলো।
সকালে ঘুম ভাঙতে দেরী হয়ে গেল লাবণ্যর। ভোরের প্রথম আলো গা ছুঁতেই মনে পড়ল সুব্রতর সাথে সেই দিনের ব্যাপারটা নিয়ে কথা হয়নি এখনও। সুব্রতর কথা মনে পড়তেই পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো ঝলমলে সকালের দিকে তাকাল লাবণ্য। বারান্দার কংক্রিট ভেদ করে আসা এক সরু আলোর রেখায় আঙুল দিয়ে খেলা করতে করতে বিড়বিড় করল,
' লাবণ্যপ্রভা! আপনাকে সুন্দর লাগছে লাবণ্যপ্রভা।'
লাবণ্যর কোমল চিবুক অস্বস্তিতে শক্ত হয়ে গেল। কেমন ধাঁধার মতো রহস্যময় লাগতে লাগল কৃষ্ণমানবের মুখ। তৈরি হয়ে খাওয়ার জন্য নিচে নামতেই দূরের এক টেবিলে সুব্রতদের বসে থাকতে দেখল সে। লাবণ্য সেদিকে যাবে কী যাবে না তা নিয়ে বেশ দোটানায় পড়ল। আশেপাশে মাথা ঘুরিয়ে পরিচিত কাউকে খুঁজলো। নাজমুল কোণার এক টেবিলে বসে চা খাচ্ছিল। দৃষ্টি লাবণ্যর উপর স্থির। ঠোঁটে মৃদু মৃদু হাসি। লাবণ্য তাকাতেই ভ্রু নাচাল নাজমুল। লাবণ্য দ্রুত সেদিকে এগিয়ে গিয়ে গলা নামিয়ে বলল,
' নাজমুল ভাই? আমার সাথে ওই টেবিলটাতে বসবেন চলুন।'
নাজমুল চোখ ছোট ছোট করে বলল,
' কেন? এখানে বেশ হাওয়া। এখানে বসতে কী সমস্যা?'
নাজমুল ঠোঁট টিপে হেসে লাবণ্যর অপ্রস্তুত মুখের দিকে চেয়ে রইল। লাবণ্য উত্তর খুঁজে না পেয়ে হাসল। নরম কন্ঠে বলল,
' চলুন না। আমার একা বসতে অস্বস্তি হচ্ছে।'
নাজমুল হেসে ফেলল। আয়েশী ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,
' জমিদারপুত্র কী জাদু করেছে বল না?
এই টেবিলে থাকা যে হলো না!'
লাবণ্য মুখ ঘুরিয়ে হাসল। লজ্জা আর অস্বস্তিতে লাল হয়ে গেল মুখ। সুব্রতদের কাছাকাছি টেবিলে গিয়ে বসতেই কৌশিকের নজরে পড়ল লাবণ্য। লাবণ্যকে চুপচাপ ম্যনু ঘাটতে দেখে উঠে এলো কাছে। বলল,
' আরে আপনি? আমি তো ভেবেছিলাম হারিয়ে গিয়েছেন।'
লাবণ্য মাথা তুলে চাইল। মৃদু হেসে বলল,
' হারাতে আর পারলাম কই? বসুন না।'
কৌশিক বসল। লাবণ্য আড়চোখে পাশের টেবিলে বসা কৃষ্ণমানবটিকে দেখল। অতঃপর হঠাৎ উপলব্ধি করল, সুব্রতর মাঝে আসলেই অন্যরকম এক ব্যাপার আছে। তার নিঃসংকোচ চাহনি, সবল দেহে অন্যরকম এক দ্যুতি। আভিজাত্যের স্পর্শ। লাবণ্যর হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা? এখনও যদি দেশে জমিদার শাসন চলতো তবে কেমন হতো? সুব্রতকে বুঝি জমিদারবাবু ডাকা হতো? তখন কেমন দেখাতো তাকে? বড় বড় গোঁফ থাকতো? আগেকার জমিদারদের যেমন ছিল? বিশাল গোঁফের সুব্রতকে কল্পনা করে অজান্তেই হেসে ফেলল লাবণ্য। নাজমুল আর কৌশিক উভয়ই ভ্রু বাঁকিয়ে চেয়ে রইল।
' কী ব্যাপার বল তো লাবণ্য? একা একা হাসছ!'
কৌশিকের হঠাৎ তুমিতে নেমে আসায় খুব একটা অবাক হলো না লাবণ্য। নিজেও বাছ-বিচার ছেড়ে বলল,
' বিশেষ কিছু নয়।'
' আলবাত বিশেষ কিছু। টেবিলে বসে থাকা দু'দুটো পুরুষ মানুষকে উপেক্ষা করে যদি তুমি একা একা হাসতে বসো তবে তার থেকে বিশেষ কিছু আর হতেই পারে না। উই হেভ অপজিট রিয়াকশনস্। তোমার উচিত আমাদের দিকে মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকা। কিন্তু তুমি তা করছ না।'
লাবণ্য হেসে ফেলল। তার হাসির ঝংকারে আশেপাশের দুই একজন চোখ ফিরিয়ে তাকালেও সুব্রতার মগ্নতা কাটল না। সে আগের মতোই গল্পে নিমগ্ন। লাবণ্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
' বাজে বকা বন্ধ করো।'
চলবে...
Writer:- নৌশিন আহমেদ রোদেলা