রিদান ল্যাপটপে নিজের কাজ করছিলো।কাজের মাঝেই হটাৎ চোখ যায় মোহ এর দিকে।মোহ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাঁধছে।তাকে দেখতে বেশ আবেদনময়ী লাগছে।রিদান ল্যাপটপ রেখে এগিয়ে যায় মোহের দিকে।রিদানের এভাবে এগিয়ে আসার কারণ বুঝতে না পারায় মোহ আয়ানায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে লাগে রিদানকে।রিদান পেছন থেকে যেয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরে মোহকে।মোহ এর ঘাড়ে মুখ গুঁজে মোহের পেটে তার হাতজোড়া রাখে।এতে মোহ এর পুরো শরিরে যেনো বিদ্যুৎ বয়ে যায়।অতি উত্তেজনাবশত মোহ ঘুরে রিদানকে জরিয়ে ধরে।রিদান মোহ কে নিজের থেকে একটু সরিয়ে মোহের গলায় চুমু বসিয়ে দেয়।এতে ধিরে ধিরে মোহের নিঃশ্বাস ভারী হতে থাকে।রিদান যেনো আরও উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে।রিদান,মোহের কপালে, দুচোখে,গালে, থুতনিতে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।অবশেষে, রিদান মোহের ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়।বেশ কিছু সময় পর মোহকে ছাড়ে রিদান।মোহ থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে সে। তারপরই ওয়াশরুমে ঢুকে পরে রিদান।রিদানের এমন কাজে বেশ অবাক হয় মোহ। মোহ ভেবেছিলো আজ হয়তো রিদান ওকে একদম নিজের করে নিবে কিন্তু রিদান এমন টা করলো না।মোহ রিদানের এমন কাজের কোনো কারণ খুজে পাচ্ছে না।
!!
রিদান শুয়ে আছে বিছানায়।ওয়াশরুমের কাজ সেরে মোহ বেডে এসে বসলো মাত্র। নিজের বালিশ ঠিক করে যেই শুতে যাবে তখনই রিদান হেঁচকা টানে মোহ কে নিজের বুকে নিয়ে আসে।মোহকে দুহাতে জরিয়ে ধরে বলে ওঠে......
-এটাই তোমার বালিশ।
-এভাবে ঘুম আসবে না।
-আসবে।আজ থেকে এভাবেই ঘুমাবা।
মনে মনে বেশ খুশিই হয় মোহ। তাই কিছু না বলেই ঘুমানোর চেষ্টা করে।বেশ কিছু সময় পর দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে।
!!
আজ বৌভাত।সেই বিকেল হতে সন্ধ্যা হলো পার্লরের মেয়ে গুলো সাজিয়েই চলছে মোহকে।মোহের এভাবে বসে থাকতে খুবই বিরক্ত লাগছে তাও কিছু করার নেই।কারণ তার শাশুড়ী চান,তার পুত্রবধুকে যেনো কোনো পরির থেকে এক বিন্দুও কম না লাগে।সব মেহমানদের মাঝে মোহ এর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে রিদান।হটাৎ চোখ যায় সিঁড়ির দিকে, মোহ আর তার শাশুড়ী নিচে আসছে।মোহ এর দিক থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।খুবই সুন্দর লাগছে তাকে।মোহ কে রিদানের পাশে বসানো হলো।মোহ নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। ফুলহাটা ব্লাউজের শাড়ি এবং মাথায় হিজাব পরেছে মোহ।মুখ ব্যতীত অন্য আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না তার।হটাৎ মোহ এর বোন এসে জরিয়ে ধরে মোহকে।মোহ এতোদিন পর নিজের বোনকে দেখে আনন্দ ধরে রাখতে পারে না, সে নিজেও জরিয়ে ধরে তার বোনকে।একে একে মা,মামা-মামি,রিদি,দিহান সবার সাথে কুশল বিনিময় হয় মোহের।এভাবে সবার মাঝে বেশ ভালোভাবেই সম্পুর্ন হয় রিদান-মোহের বৌভাত অনুষ্ঠান। মেহমান বিদায়ের পর মোহ-রিদানও মোহের পরিবারের সাথে রওনা হয় মোহের মায়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
!!
রাতে ক্লান্ত থাকায় পৌঁছেই ঘুমিয়ে পড়ে সবাই।সকালে রিদানের ঘুম ভাঙতেই পাশে তাকিয়ে দেখে মোহ নেই।পুরো রুমে চোখ বুলিয়েও মোহকে দেখতে পায় না রিদান। এতে বেশ বিরক্ত হয় সে।বিয়ের পর একবারও ঘুমন্ত মোহকে দেখেনি।মেয়েটা এতো জলদি কেন ওঠে সকালে? ভাবতেই মেজাজ টা খারাপ হয় তার।তারপর উঠে চলে যায় ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে।একেবারে শাওয়ার নিয়ে বের হয় সে।ওয়াশরুম হতে বের হয়েই দেখে মোহ কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে তার অপেক্ষায়। মোহকে দেখে বাঁকা হেসে এগিয়ে যায় রিদান মোহের দিকে।মোহের কোমর জরিয়ে একদম নিজের সাথে জরিয়ে নেয় মোহকে।
-কি করছেন!ছাড়ুন (মোহ)
-আই ওয়ান্ট মাই মর্নিং কিস।ড্রু ইট ফাস্ট।
রিদানের কথায় চোখ বড় বড় করে অবাক দৃষ্টিতে তাকায় মোহ,রিদানের দিকে।
-কি হলো?এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
উত্তরে কিছু বলে না মোহ বরং নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।
-তোমার কি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে?আমার ও সমস্যা হচ্ছে না।কিস না করলে আজ আর ছাড়া পাচ্ছো না তুমি।(বলেই আবারও বাঁকা হাসে রিদান)
রিদানের কথায় মোহের বুঝতে আর বাকি থাকে না যে আজ তার রক্ষা নেই।মোহ টুপ করে রিদানের ঠোঁটে একটা চুমু দিয়ে দেয়।মোহ এর কাজে রিদান মোহ কে ছেড়ে জোরে হেসে দেয়।মোহ লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। রিদান নিজের হাসি থামাতেই মোহ বলে..
-নিচে সবাই অপেক্ষা করছে।আপনি গেলে সবাই একসাথে খাবার শুরু করবে।
-আচ্ছা চল।
নিচে সবাই খাবার টেবিলে বসে রিদান-মোহের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।রিদি,দিহান,মোহনা,আরুশ(মোহনার হাসবেন্ড),মোহের মামা-মামী থাকবে কিছু দিন। রিদির পাশেই বসে মোহ আর মোহের পাশে বসে রিদান।মোহ বসতেই রিদি মোহকে খোঁচা দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে....
-কিরে ভাইয়াকে আনতে যেয়ে তো নিজেই হারিয়ে গিয়েছিলি।ভাইয়া বুঝি খুব রোমান্টিক!(বলেই চোখ মেরে হাসতে থাকে রিদি)
মোহ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে রিদির দিকে যেনো চোখ দিয়েই গিলে খেয়ে ফেলবে।এভাবে হাজারো গল্প, মজার মাঝে শেষ হয় তাদের খাওয়ার পর্ব।
!!
রুমে সোফায় বসে রিদান ল্যাপটপে কাজ করছিলো। বেশ কিছু সময় বোনদের সাথে গল্প করে রুমে আসে মোহ। মোহকে রুমে আসতে দেখে রিদান মোহ কে নিজের পাশে বসতে বলে।মোহ রিদানের পাশে বসতেই রিদান বলে....
-মোহ,আমার একটা প্রশ্ন আছে।
-জ্বি বলেন।
-শুনেছি তোমার বাবা মারা গিয়েছেন।কিন্তু কি হয়েছিল বাবার সাথে তা জানি না।জানাবে?
বেশ কিছু সময় নিস্তব্ধ থাকে মোহ। তারপর বলে..
-আসলে আমার বাবা বেঁচে আছেন।
অবাক হয়ে যায় রিদান।কিন্তু তাও কিছু বলে না,অপেক্ষা করে মোহের বলার।
-আজ থেকে ১২ বছর আগে,আমার ৬ বছর পূর্ণ হওয়ায় বার্থডে পার্টি আয়োজন করা হয়েছিলো।সেদিন বাবা বাসায় ফেরেনি।নিজের বার্থডেতে বাবা অনুপস্থিত থাকায় খুব কেঁদেছিলাম আমি আর মা কে বার বার বাবার কথা জিজ্ঞেস করছিলাম।প্রতিবারই মা কাজের বাহানা দিচ্ছিলেন। পুরো পার্টিতে মা কে অনেকের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় বাবার জন্য।বাবাকে বার বার ফোন করার পরও বাবা ফোন রিসিভ করছিলেন না।অবশেষে ফোন বন্ধ করে রাখেন।আমার বার্থডের পরের দিন, রাত ১২ টার পর বাড়ি ফেরে বাবা।তখন আমরা দুবোনই ঘুমচ্ছিলাম। হটাৎ বাবা-মার তুমুল ঝগড়ার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। সেরাত বাবা, মায়ের গায়ে হাত ও তোলে।অথচ সেই মহিলা তার চিন্তায় সারাদিনে এক ঢোক পানি ও পান করেন নিই।সেরাত মা খুব কেঁদেছিলেন। আমরা দুবোন এসব আড়াল থেকে দেখি কিন্তু কিছুই করার ছিলো না আমাদের। ঔ রাতের পর থেকে মাকে কখনো মন খুলে হাসতে দেখিনি।প্রায় সময়ই দুঃশ্চিন্তায় থাকতেন।বাবার সাথে ঝগড়া লেগেই থাকতো।এভাবেই পাড় হয়ে যায় ৮ মাস।তারপর একদিন হুট করে বাবা, মাকে জানায় সে ডিভোর্স চাচ্ছে। এতে মা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েন।কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছিলেন না মা।ডিভোর্স হলে কোথায় যাবেন সে আমাদের দুবোন কে নিয়ে?কেথায় থাকবেন?কি করবেন?কে দেখাশোনা করবে আমাদের?একা মা কি করে দুই মেয়েকে পালবেন?আরও নানান প্রশ্ন ঘিরে ধরে তাকে।১২ বছরের সংসারের মায়া কাটানো কি খুব সহজ?ডিভোর্সের পর কিভাবে সে তার সংসার, স্বামী ছাড়া থাকবেন?
মা খুব অনুরোধ করে বাবাকে যাতে সে মা কে ডিভোর্স না দেয়,খুব কান্না করে,বাবার কাছে সম্পর্ক টা ভিক্ষা চায়। কিন্তু বাবার মনে একটুও দয়া হলো না।সে ডিভোর্স দিবেই।শেষে মাও হাল ছেড়ে দিলো।শুধু জানতে চেয়েছিলো, সে এমন কি দোষ করেছিলো যার শাস্তি স্বরূপ তার স্বামী তাকে ডিভোর্স দিতে চাইছে।তখন বাবা বলে,মায়ের কোনো দোষ নেই।সে নাকি অন্য একজনকে ভালোবাসে,তার সাথে সংসার করতে চায়।ব্যাস!সেদিনের পর থেকে মা একদম পাথরের মূর্তির ন্যায় থাকা শুরু করলো।এক এমন মানুষ যার কোনো অনুভূতি নেই।তিন মাস পর তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। মা,মামার থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে এক ভারা বাসায় ওঠেন।মায়ের বেশ কিছু স্বর্ণের গহনা ছিলো সেগুলো বিক্রি করে প্রায় ১০ লাখের মতো টাকা পায়।সেই টাকা দিয়ে এই কাপড়ের দোকান খোলে।এই দোকানের আয় দিয়েই মা আমাদের সংসার টা চালায়।এই দোকান দেওয়ার শুরুর দিকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় মার কিন্তু সে একাই সেই সব সমস্যার মোকাবেলা করেন বুকভরা সাহস নিয়ে।বাবার নির্দয়ের মতো কাজটা যেন মাকে একটি যোদ্ধায় পরিণত করে দিয়েছিলো।আমার মা তার জীবন সংগ্রামের প্রতিটি যুদ্ধে এক বুক মনোবল আর আল্লাহর রহমতে জয়ী হতে হতে আজ এখানে পৌঁছেছে।আমার মা একজন নারী যোদ্ধা।
নিচের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলেই থামে মোহ।কথাগুলো বলার সময় কখন যে কেঁদে দিয়েছে সে খেয়ালই করেনি।রিদানের দিকে তাকিয়ে দেখে রিদান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।মোহ ও রিদানের দিকে তাকিয়েই কেঁদে চলছে।মোহ খুব করে চাইছে, রিদান যেনো তাকে নিজের মাঝে জরিয়ে নেয়।হটাৎ রিদান মোহের খুব কাছে এসে মোহের চোখের জল আস্তে করে মুছে দিয়ে প্রথমে মোহ এর কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো তারপর ধিরে ধিরে মোহের দুচোখের পাতায় চুমু দিয়ে মোহের মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো।মোহের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রিদান। মোহ যেনো স্বর্গের সুখ অনুভব করছে রিদানের বুকে।মোহ ও আঁকড়ে ধরেছে রিদানকে।বেশ কিছু সময় এভাবে থাকার পর মোহ রিদানের বুক হতে মাথা উঠিয়ে বলে....
-জানেন ডিভোর্স দেওয়ার আগে ওই লোকটা একবার ও আমাদের কথা ভাবেনি।আর ডিভোর্সের পর ও একবারও আমাদের খবর নেয়নি।আমরা বেঁচে আছি নাকি মারা গেছি তার খবর নেওয়ার ও প্রয়োজনবোধ করেনি ওই লোকটা।একজন বাবা কি করে এতো স্বার্থপর হয়?কি করে তার বাচ্চাদের ভুলে ঔ মহিলাকে নিয়ে সুখে থাকতে পারে সে?(বলেই ডুকরে কেঁদে দেয় মোহ।রিদান আবারও মোহকে নিজের বুকে চেপে ধরে। মোহের কথা শুনতে শুনতে বেশ কয়েকবার সে নিজের চোখ মুছে নিয়েছে।)
বিছনায় শুয়েও কেঁদে চলছে মোহ।মোহ এর কান্না সহ্য না হওয়ায় রিদান মাথা উঠিয়ে মোহ এর ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়।রিদানের এমন কাজে চমকে যায় মোহ।প্রায় অনেকটা সময় পর রিদান ছাড়ে মোহ কে। মোহ লজ্জায় অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে।এ দেখে বাঁকা হাসে রিদান।বিছনায় শরীর এলিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
-এখন চুপচাপ ঘুমাও।যদি কাঁদতে দেখি তাহলে অর্ধেক কাজটা আজই সম্পূর্ণ করবো।
রিদানের কথায় মুচকি হেসে চোখ বুজে নেয় মোহ।রিদানের সেই স্পর্শ মোহের সব কষ্টই যেনো দূর করে দিয়েছে।রিদানের স্পর্শ মোহের কষ্টগুলোকে সরিয়ে মোহের মনে একরাশ ভালোলাগা সৃষ্টি করেছে।এভাবেই ঘুমিয়ে যায় দুজন।
!!
আজ শাশুড়ীর বাড়িতে দ্বিতীয় দিন রিদানের।রিদানের দুই শালি ঘিরে ধরেছে তাকে,বাইরে ঘুরতে যাওয়ার বায়না তাদের।রিদানও না করলো না।আজ রিদান-মোহ,মোহনা-আরুশ,রিদি আর দিহান মোট ৬ জন মিলে যাবে বাইরে ঘুরতে। মোহদের বাড়ি হতে মাওয়া ঘাট খুব একটা দূরে না।তাই তারা বিকেলে মাওয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে বেরোবে। দিহান তিনটি বাইক ভারা করে আনলো।একটাতে মোহ-রিদান আরেকটা তে মোহনা-আরুশ আর বাকি একটায় দিহান আর রিদি যাবে।পরিকল্পনা অনুযায়ী বিকেলে বেড়িয়ে গেলো ওরা।মোহ বাইকে উঠে রিদানের কাঁধে হাত রাখতেই রিদান মোহের হাত টা এক ঝটকায় সরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, "আমি কি কোনো পরপুরুষ যে এভাবে ফরমাল ভাবে, দুরত্ব রেখে বসছো?"। রিদানের কথায় মোহ মাথা নিচু করে রাখে।আবার রিদান বলে ওঠে," এখন কি জরিয়ে ধরার কথাটাও বলে দিতে হবে?"।রিদানের এমন কথায় সাথে সাথে রিদানকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে মোহ।মোহের এমন কাজে আলতো হেসে বাইক স্টার্ট দেয় রিদান।
!!
-মোহনা, তুমি উঠতে পারবা তো?
-হ্যাঁ।
-আস্তে, সাবধানে ওঠো।
-হুম,উঠেছি।
-শক্ত করে জরিয়ে ধরে বসে থাকবা।একটুও হাত ঢিলা করবা না।
-আচ্ছা।
-শোনো, আমি বাইক একদম আস্তে আস্তে চালাচ্ছি। কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে আমাকে বলবা।
-উফফো আরুশ!এতো চিন্তা করছো কেনো?
-চিন্তা করবো না?আমার একটা মাত্র বউ।যে একটা পিঁপড়ের কামড়ই সহ্য করতে পারেনা,সেই নাজুক বউ টা আমার অংশকে এই পৃথিবীতে আনতে কত্তো কষ্ট করছে।তার কষ্ট টা তো ভাগাভাগি করতে পারবো না কিন্তু তার যত্ন তো নিতে পারি?
আরুশের কথায় চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে মোহনার।সে খুব শক্ত করে আরুশকে জরিয়ে ধরে, আরুশের পিঠে মাথা রেখে বলে...
-অনেক ভালোবাসি তোমায় মিঃ হাসবেন্ড।
-সারাজীবন থাকবে তুমি এ হৃদয় জুড়ে।
-আমার সবটা জুড়ে শুধুই তুমি।
!!
আজ আবহাওয়া অনেক সুন্দর। আকাশটা হালকা মেঘলা।হালকা ঠান্ডা হাওয়া বইছে।যাওয়ার রাস্তা টা অনেক সুন্দর একদম যেনো বিদেশের রাস্তা।কোনো যানজট নেই, কোলাহলমুক্ত পরিবেশ।সবার মাওয়া ঘাট পৌঁছানোর প্রায় ৩০ মিনিট পর মোহনা-আরুশ পৌঁছায়।তাই দিহান বলে...
-উড বি ফাদার এখন থেকেই নিজের বেবিকে নিয়ে খুব প্রটেকটিভ।
-তা তো বটে।(আরুশ)
-সে কথা আর বলিস না ভাই।সারা রাস্তা মনে হলো হেঁটেই এসেছি।(মোহনা)
মোহনার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।
-কথা কম বলে সাবধানে বাইক থেকে নামো মোহনা।(আরুশ)
-হইছে আর ঝাড়তে হবে না।সাবধানেই নামছি। (ভেঙচি দিয়ে বলে ওঠে মোহনা)
ওদের কাহিনি দেখে সবাই হাসতে থাকে।তারপর সবাই একসাথে নদীর পাড়ে যেয়ে দাঁড়ায়। আরুশ, মোহনা কে একহাতে শক্ত করে জরিয়ে রেখেছে নিজের সাথে। রিদান মোহের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।রিদি আশেপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে।আর দিহান সবার ছবি তুলতে ব্যস্ত।
!!
মোহ-রিদান হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটছে।মোহনা-আরুশ এখনো নদীর পাড়েই আছে।দিহান রিদির ছবি তুলতে ব্যস্ত।আজ মোহ লেমন কালারের ফুলহাতা লং ড্রেস পরেছে,সাথে হোয়াইট কালারের হিজাব। মুখে ফেস-পাউডার,লিপস্টিক,কাজল দিয়ে হালকা সেজেছে।রিদান হাঁটার মাঝেই বেশ ভালোভাবে লক্ষ করছে তার বউকে।রিদান আর মোহ যেখানে হাটছে সেখানে মানুষজন খুবই কম।আর যারা আছে তারা নিজেদের কাজে ব্যস্ত।এই সুযোগে রিদান টুপ করে মোহের গালে একটি চুমু এঁকে দেয়।হটাৎ রিদানের এমন কাজে মোহ হাঁটা অফ করে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে রিদানের দিকে।রিদান একটা হাসি দিয়ে আবারও হাঁটা শুরু করে মোহ কে নিয়ে।আর এদিকে মোহ তো লজ্জায় লাল।
-সুন্দর লাগছে তোমায়।
-আপনাকেও।(বলেই লজ্জায় নিচের দিকে তাকায় মোহ। রিদান আজ আকাশী কালারের একটি পাঞ্জাবি পরেছে।হাতা কনুই পর্যন্ত উঠানো।সাথে সাদা পায়জামা।)
-আমাকে সুন্দর লাগলেও লাভ নেই।
-কেনো?
-বউ তো আমার দিকে তাকায়ই না।সে তো মাটিই দেখতে ব্যস্ত।(ঠোঁট উল্টিয়ে সাড ফেস করে বলে রিদান)
-জ্বি না।আমি দেখেছি আপনাকে।একদম 'নাম্বার ওয়ান দিলওয়ালা' মুভির হিরোর মতো লাগছে আপনাকে।
-আচ্ছা।তাই?
এবার বেশ লজ্জা পায় মোহ। কি থেকে কি বলে দিয়েছে সে!!মাথা নিচু করেই মোহ বলে...
-হুম।
আলতো হাসে রিদান।
-আচ্ছা মোহ,যদি তুমি কিছু মনে না করো তবে একটি প্রশ্ন করি?
-জ্বি।
-মা সেকেন্ড বিয়ের বিষয়ে ভাবেনি কখনো?
-উহু।বাবার সাথে ডিভোর্সের পর মা অনুভূতি শূন্য হয়ে গিয়েছিল।তখন আবার নতুন সংসার এগুলো নিয়ে ভাব্বার আবস্থাতে ছিলো না সে।সেই সাথে আমাদের নিয়ে টিকে থাকার সংগ্রাম তো ছিলোই।
-হুম।দেখো,তোমাদের দু-বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।কিছু দিন পর আমরা সবাই চলে যাবো।তখন তো মা একদম একা হয়ে যাবে।আর তাছাড়া এতো দিন তোমাদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলো দেখে মা একাকিত্ব টা ওভাবে অনুভব করেনি।এখন তো তার উপর তেমন কোনো দ্বায়িত্বও নেই।তাহলে একাকিত্ব টা কি বেশি অনুভব হবে না?
মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোহ রিদানের দিকে।বিয়ে হয়েছে তাদের মাত্র চারটি দিন হলো।এই ক্ষুদ্র সময়ে কতটা আপন করে নিয়েছে রিদান তাকে।
-এই কথাটি আমিও ভেবেছি। কিন্তু কিছু কি করার আছে?(মোহ)
-এ বিষয় টা নিয়ে ভাবতে চাই।আমার মনে হয়, তোমার আর মোহনা আপুর এ বিষয়টা গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। এতো দিন তোমাদের ভালোর জন্য মা বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন তোমাদের উচিৎ মায়ের কথা চিন্তা করে তার ভালোর জন্য কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া।
-হুম।আপনি এতো ভালো কেনো রিদান।আমার মা কে নিয়ে ভাবার খুব তো প্রয়োজন ছিলো না আপনার।তবে কেনো এতো ভাবছেন?
-তুমি আমার স্ত্রী মোহ।তুমি আমারই।যদি তুমি আমার হও তাহলে তোমার মা কি আমার মা নয়?নিজের মা নিয়ে ভাব্বার অধিকার নেই সন্তানের?
রিদানের প্রশ্নের জবাবে কিছু বলে না মোহ।রিদানকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে কেঁদে দেয় মোহ।
-আপনি আমার জীবনে আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার মিঃ হাসবেন্ড।আপনার অর্ধাঙ্গিনী হওয়া টা আমার সৌভাগ্য।
রিদানের কিছু বলার আগেই দিহান বলে ওঠে...
-পার্ফেক্ট পিকচার। রোম্যান্স ইন আ পাবলিক প্লেস।
মোহ রিদানকে ছেড়ে চোখ গরম করে তাকায় দিহানের দিকে।
-এই তুই ছবি তুলেছিস কেন?
-বাহ রে! তোরা সবার সামনে রোম্যান্স করবি আর আমার পিক তুলায় দোষ।
দিহানের কথায় বেশ লজ্জা পায় মোহ।
-প্লিজ ভাই আমার।ডিলিট কর।
-ইম্পসিবল।
-ঠিক দিহান।এই পিক ডিলিট হবে না।এই প্রথম আমার বউ আমাকে জরিয়ে ধরলো।ভালোই হলো তুমি মোমেন্ট টা ক্যাপচার করেছো।অনেক ধন্যবাদ। (রিদান)
-মোস্ট ওয়েলকাম ভাইয়া।(দিহান)
রিদানের কথার পর মোহ আর কিছু বলতে পারে না।তারই দোষ! এভাবে জরিয়ে ধরা ঠিক হয়নি।কিন্তু সে তো ইচ্ছে করে করনি।অতি আবেগের বশে জরিয়ে ধরেছিলো।
!!
আজও আকাশে চাঁদ আছে।রাত ৮ টা বাজে।মাওয়া ঘাটের এক রেস্তোরাঁয় আছে ওরা।মোহ রেস্তোরাঁর জানালার ধারে দাঁড়িয়ে নদীর উপর জ্বলজ্বল করা চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। রিদান তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
-কি আছে ও চাঁদে?
-মুগ্ধতা।
-আমার মাঝে নেই?
-উহু।
একটু মন খারাপ হয় রিদানের। তাই নিচের দিকে তাকিয়ে বলে
-ওহ।
এবার মোহ রিদানের দিকে তাকায়। বেশ কিছু সময় রিদানের দিকে তাকিয়ে থাকার পর মোহ বলে...
-আপনার মাঝে অনেক মায়া।
মোহের কথায় অবাক হয়ে তাকায় রিদান মোহের দিকে।মোহ রিদানের দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে আবার ও তাকায় চাঁদের দিকে।রিদান ও আলতো হেসে প্রকৃতির রুপে মুগ্ধতা খুঁজতে থাকে।
!!
-মোহনা তোমার এখন খেয়ে নেওয়া উচিৎ। আমার বাচ্চাটার খুদা লেগেছে নিশ্চয়ই।
-খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
-না ইচ্ছে হলেও খেতে হবে।আমার বাচ্চা টা ক্ষুদার্থ।
-ওহ, তোমার শুধু বাচ্চারই চিন্তা?
-উহু, বাচ্চার মায়েরও।
-হুহ।
-খাইয়ে দিবো?
উত্তরে হেসে সম্মতি দেয় মোহনা।
চলবে...
Writer:- Mahzabin