মোহনার মাথায় এক গভীর চুমু দিয়ে আরুশ জরিয়ে নিলো তার স্ত্রীকে নিজের বাহুডোরে।বেশ ক্লান্ত মোহনা।এখন তারা উবারের এক গাড়িতে।রাত হয়ে যাওয়ায় আরুশ মোহনাকে নিয়ে বাইকে আসতে রাজি হয়নি।আরুশের বুকে মাথা রেখে বেশ শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে মোহনা।আরুশ, মোহনাকে নিজের সাথে জরিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোহনার দিকে।মোহনার চেহারায় এক প্রশান্তির ছোঁয়া দেখতে পারছে।ঘুমের মাঝেও সে আরুশকে বেশ শক্ত করে জরিয়ে ধরে রেখেছে।স্বামীর বুকটা তো প্রত্যেক স্ত্রীরই সবচেয়ে নিরাপদ আর ভরসার স্থান।বেশ কিছু সময় মোহনার দিকে তাকিয়ে থাকার পর আরুশ মোহনার পেটে হাত বুলিয়ে বলে ওঠে...
-বাবা,তোর মা কে বেশি কষ্ট দিস না।তোর মা অনেক নাজুক,ভবিষ্যতে আমাদের দুজনকে মিলেই তো এনার খেয়াল রাখতে হবে।কি রে!মার খেয়াল রাখবি না?জলদি পৃথিবীতে আয় সোনা!
বাড়ি পৌঁছানোর পরেও মোহনার ঘুম ভাঙে না।তাই আরুশ মোহনাকে কোলে তুলে বাসায় নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
!!
রিদান-মোহ বাইকে।মোহ রিদানকে শক্ত করে জরিয়ে রিদানের পিঠে মাথা রেখে আশেপাশের প্রকৃতি উপভোগ করছে।রিদান খুব আস্তে বাইক চালাচ্ছে যেন সে চাইছেই না এ রাস্তটা শেষ হোক।
-শুনছেন?(রিদানের পিঠে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করেই বলে মোহ)
-হুম।
-এভাবে চালালে তো সকাল হয়ে যাবে পৌঁছাতে।
-তো?
-একটু দ্রুত চালান।
-উহু।ওয়েদার কতো রোম্যান্টিক ফিল করছো?
-হু।
-আইসক্রিম খাবা?
খুশিতে আত্মহারা হয়ে মোহ বলে "পাওয়া যাবে???"
উত্তরে আলতো হাসে রিদান। এখন রাত ১১ টা ছুঁই ছুঁই। বলতে গেলে কোনো দোকানই খোলা নেই।বেশ খানিকটা সময় খোঁজার পর ওরা একটি মুদি দোকান খোলা পায়।যেহেতু মোহ চকলেট ফ্লেভার আর রিদান ভানিলা ফ্লেভার লাইক করে তাই দুটো মিক্সড এক ব্ক্স আইসক্রিম কেনে রিদান। কিনা শেষে আবারও বাইক স্টার্ট দেয় রিদান।
-আইসক্রিম টা কি রুমে বসে খাবো?(মোহ)
-হ্যাঁ।(রিদান)
-তাহলে তো একটুও মজা লাগবে না!
-তাহলে কোথায় খেলে মজা লাগবে?
-ছাঁদে।জানেন,আমাদের ছাঁদে একটা ছোট্ট বেড আছে।ওটায় বসে মেঘের পেছনে আধা লুকোনো চাঁদ আর ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করে আইসক্রিম খেতে অনেক মজা লাগবে।
-আচ্ছা! তবে তাই হবে।
-প্লিজ এখন তো একটু দ্রুত চালান।
আলতো হেসে রিদান বাইক দ্রুত চালানো স্টার্ট করে।
!!
-ওই ছোটি যা তো এক কাপ চা করে আন।(দিহান)
-দিহান! আমি তোর চাকর না।(রিদি)
-তুই আমার চাকরই।যা জলদি।নাহলে আম্মুকে মিহাদ এর কথা বলে দিবো।(বলেই চোখ মারে দিহান)
-উফফ!যাচ্ছি।
রিদির কথায় বাঁকা হেসে ফোন হাতে নেয় দিহান।বিকেল থেকেই ফোন হাতে নেওয়ার সময় হয়নি তার। আর এখন বাজে রাত ১১ টা।ফোনের ডাটা অন করতেই বেশ কিছু মেসেজ এসে ভিড় জমায় তার ইনবক্সে।তার ফ্রেন্ডস গ্রুপেই বেশ কয়েকটি মেসেজ এসেছে।দিহান মেসেজেস চেক করতেই দেখে.....
-দিহান আছিস?(তুরান)
-ও তো অনেকক্ষণ ধরেই অনলাইনে নেই।(অরিন)
-অরিন তুই দিহানের এতো খোঁজ রাখিস কেন?(তিশা)
-বাহ রে!ও আমাদের ফ্রেন্ড না?(অরিন)
-আর কেউ তো এতো খেয়াল রাখে না যে দিহান কখন অনলাইনে ছিলো বা কতো ক্ষণ অনলাইনে নাই!(তিশা)
-কি হইছে তোর বল তো!যদি একটু খেয়াল রাখিও তাতে তোর সমস্যা কি?(অরিন)
-একদম তর্ক করবি না।বলছি দূরে থাকতে থাকবি।(তিশা)
এমন আরও অনেক মেসেজ যা দেখে দিহানের খুবই হাসি পায়।দিহানের জন্য তিশা শুধুই ফ্রেন্ড। কিন্তু তিশার জন্য যে সে শুধুই ফ্রেন্ড না তা বেশ বোঝে দিহান।অবশেষে দিহান ছোট্ট করে একটা মেসেজ দেয়....
"বিকেলে একটু বাইরে ঘুরতে গিয়েছিলাম।ফিরলাম আধ ঘন্টা হলো।"
প্রায় সাথে সাথেই দিহানের ইনবক্সে মেসেজ দেয় তিশা।
-একটু বলে তো বের হবা!কত্তো টেনশন হচ্চিলো জানো? (তিশা)
-না তো।(দিহান)
-নেক্সট টাইম বলে বের হবা।
-পারবো না।
-তোমার বাড়ি পৌঁছে যাবো কিন্তু!
-হাহা।
-দেখে নিও।আচ্ছা,ওই অরিনের সাথে কি তোমার খুব কথা হয়?
-হ্যাঁ।(দিহান, তিশাকে জ্বলাতেই কথাটি বলে।আসলে এমন কিছুই না।)
-কেনো?
-আমরা ভালো ফ্রেন্ড তাই।
-তোর ভালো ফ্রেন্ডের গু**লাই।একদম কথা বলবি না ওর সাথে।
দিহান এমন মেসেজই আশা করছিলো তিশার থেকে।মেয়েটা খুবই বদমেজাজি। রাগলে মাথা ঠিক থাকে না তার।মেসেজ টা দেখে আলতো হেসে রিপ্লাই না দিয়েই ফোনটা রেখে দেয় দিহান।তখনই রুমে চা নিয়ে আসে রিদি।রিদি চা টা টেবিলে রেখে দিহানকে উদ্দেশ্য করে একটি ভেঙ্গচি দিয়ে চলে যায় নিজের রুমে।
!!
রুমে এসেই রিদি কাপড় নিয়ে গোসলে চলে যায়।প্রায় ১ ঘন্টা গোসল করে বের হয় সে।ফুল জোরে ফেন ছেড়ে বিছানায় শরির এলিয়ে দেয় সে।কিছু সময় পরই ফোনের রিংটোনের আওয়াজে ফোনটি হাতে নিয়ে দেখে মিহাদ কল দিয়েছে।বেশ বিরক্ত রিদি এ লোকটার উপর।জানে, কল রিসিভ না করা পর্যন্ত এই ছেলে থামবে না তাই রিদি কলটা রিসিভ করে।
-আসসালামু আলাইকুম।(রিদি)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।(মিহাদ)
-কেনো কল দিয়েছেন?
-কেনো আবার!তোমার খোঁজ নিতে।
-আপনি কি বোঝেন না আমি আপনাকে অপছন্দ করি?
-বুঝি।
-তবে বেহায়ার মতো কেনো বার বার কল দেন?
-তোমাকে আমার অনুভূতি বুঝাতে।
উত্তরে কিছু বলে না রিদি।তাই মিহাদ আবারও বলে ওঠে...
-কেমন আছো?
-ভালো
-খেয়েছো?
-হ্যাঁ।
-ক্লান্ত?
মিহাদের এমন প্রশ্নে বেশ অবাক হয় রিদি।মিহাদ কি করে বুঝলো ও ক্লান্ত!
-হু।কি করে বুঝলেন?
-তোমার কন্ঠ শুনে।
-ওহ
-আচ্ছা ঘুমাও তাহলে।রাখছি।
ফোনটা কেটে দেয় রিদি।
!!
ছাঁদের খাটে শুয়ে আছে মোহ।মোহের পেটে মাথা রেখে শুয়ে আছে রিদান।রিদানের ছোট চুলগুলো মোহের পেটে বিঁধছে। এতে এক অদ্ভুত শিহরণ অনুভব করছে মোহ।মোহের পেট হতে মাথা উঠিয়ে রিদান বলে ওঠে,
-চলো আইসক্রিম টা খেয়ে নেই।
-হু
অতঃপর দুজনেই উঠে বসে। আইসক্রিম এর সাথে একটাই চামচ এনেছে রিদান।
-চামচ তো একটা!আমি নিচে থেকে আরেকটা নিয়ে আসছি?
-একই চামচে খাই?
লজ্জায় কিছু বলে না মোহ।মোহ মাথা নিচু করে রেখেছে।রিদান বেশ বুঝতে পারছে মোহ লজ্জা পাচ্ছে তাও রিদান বলে....
-চুপ করে আছো যে?আচ্ছা!আমিই চামচ নিয়ে আসি।
রিদান উঠতে গেলেই মোহ রিদানের হাত ধরে ফেলে।
-এক চামচেই হবে।(মোহ)
আলতো হেসে মোহের পাশে বসে রিদান।
-খাইয়ে দেও।(রিদান)
অতঃপর মোহ, রিদানকে আর রিদান, মোহ কে খাওয়ায়।
!!
সকালে রিদান-মোহ,মোহনা-আরুশ বারান্দায় বসে আছে।রিদি আর দিহান ক্লান্ত থাকায় এখনো ঘুম।বড় রা বাজার-ঘাট,রান্নায় ব্যস্ত।
-আপু, তোকে কিছু বলার আছে।
-হ্যা, বল।
-আসলে আজ তো আমরা সবাই চলে যাবো।
-হুম তো?
-আসলে আপু, আমি আর রিদান মায়ের কথা ভাবছিলাম।
কথাটি শুনে মোহনা মাথা নিচু করে কিছু ভাবতে থাকে।
-আসলেই!মা একদম একা হয়ে যাবে।(আরুশ)
-একটা কাজ করলে কেমন হয়?(মোহনা)
-কি কাজ?(মোহ)
-মা,যদি তোর অথবা আমার সাথে আমাদের বাসায় এসে থাকে,তাহলেই তো হয়।(মোহনা)
-আপু, তুই তো জানিস আম্মুর আত্মসম্মান কতোটা বেশি।(মোহ)
-হ্যা, আম্মু এই প্রস্তাবে একটুও রাজি হবে না। (আরুশ)
-আমরা চাইলে আরেকটা কাজ করতে পারি।(রিদান)
-কি?(মোহ)
-আমাদের বাসার উপরের ফ্ল্যাট খালিই আছে।মা তো ফ্রীতে থাকবেন না তাই সে চাইলে ভাড়া দিয়েই থাকবেন।এতে সারা দিনে বেশ কিছু সময় সে মোহ আর আম্মুর সাথে কাটাতে পারবেন।(রিদান)
-বাহ!(আরুশ)
-খুব ভালো আইডিয়া। (মোহনা)
মোহ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে তার মিঃ হাসবেন্ডের দিকে।ছেলেটা খুবই বুঝবান আর বুদ্ধিমান।
আরুশ মোহনার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে মোহনার কপালে এক গভীর চুমু দিলো।মোহনা চোখ বুজে তার মিঃ হাসবেন্ডের ভালোবাসা উপভোগ করছে।হটাৎ রুমে রিদি ঢুকে পরে....
-সরি সরি।আমি কিছু দেখিনি।(অন্য দিকে ফিরে বলে রিদি)
-দেখবি না কেন!ভালো করে দেখ।বরের আদর-সোহাগ তোর কপালে নাই বুঝলি।তাই দেখেই জীবন পার কর।(রিদির আওয়াজ শুনে আরুশের থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে রিদিকে উদ্দেশ্য করে বলে মোহনা)
-কপালে নাই কেন?
-তোর মতো ভুতনিরে কে বিয়ে করবে?
-দুলাভাই আপনি বলেন, আমি দেখতে ভুতনিদের মতো?
-অবশ্যই না।আমার শালিকা কোনো হিরোইনদের দিয়ে কম না।(আলতো হেসে বলে আরুশ)
-শুনেছো?(মোহনাকে উদ্দেশ্য করে বলে রিদি)
-পাম পাম।(মোহনা)
রিদি কিছু বলার আগেই মোহ রুমে প্রবেশ করে।
-আপু, তোরা রেডি?(মোহ)
-হ্যাঁ।
-রিদিপু,তোরাও রেডি?(মোহ)
-হ্যাঁ,আমরা সবাই রেডি।তোরা?(রিদি)
-আমরাও।(রিদান রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে)
-আপু,মায়ের সাথে কথা বলতে হবে তো!(মোহ)
-চল এখনই বলি।(মোহনা)
-আমরা ৪ জনই যাই?(রিদান)
সবাই সম্মতি দিলো।
-রিদি, আমরা মায়ের কাছে যাচ্ছি।তুই একটু দেখ সব ঠিকঠাক ভাবে প্যাক করা হয়েছে কিনা?(মোহনা)
-আচ্ছা। (রিদি)
!!
বিভিন্ন ধরনের রান্না করে তা প্যাক করায় ব্যস্ত আনিসা বেগম আর তার ভাবি অর্থাৎ মোহের মামি।
কাজের মাঝেই আনিসা বেগমকে ডেকে ওঠে তার বড় মেয়ে মোহনা।ডাক শুনতে পেয়ে কাজের খালাকে কাজ বুঝিয়ে তিনি এগিয়ে যান তার রুমের দিকে।আনিসা বেগম রুমে প্রবেশ করেই দেখেন তার দু মেয়ে ও জামাইরা বসে আছে তার অপেক্ষায়। কারণ বোধগম্য না হওয়ায় সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় তার মেয়েদের দিকে।
-মা, আসলে আমাদের কিছু বলার ছিলো। (মোহনা)
-হ্যাঁ,বল।
মোহনা কিছু বলার আগেই আরুশ বলে ওঠে...
-আহা মা!চিন্তার কোনো ব্যাপার নেই।আপনি আগে বসুন।
আনিসা বেগমকে মোহ,তার আর মোহনার মাঝে বসায়।আনিসা বেগমের বিপরীত সোফাতেই বসে আছে তার দু মেয়ে-জামাই।
-মা আসলে,আমাদের বাসার উপরের ফ্ল্যাট টা খালি আছে।আমরা সবাই চাচ্ছি তুৃমি ওই ফ্ল্যাটে শিফট হও।(মোহ)
-কেনো?
-তোমার এখানে একা ভালো লাগবে না।(মোহনা)
-আরেহ না, আমি এখানে ঠিক আছি।
-মা প্লিজ।
-আরেহ বোকা মেয়ে, মেয়ের শশুর বাড়িতে মেয়ের মায়ের থাকাটা মানায় না।তুই বুঝবি না এগুলো বাদ দে।
-কিন্তু.....(মোহ)
-কোনো কিন্তু নেই।আমি আমার ডিসিশন জানিয়ে দিয়েছি।
-মা, আমার একটি অনুরোধ, আমি কি কিছু বলতে পাড়ি?(রিদান)
-এভাবে বলছো কেনো বাবা!অবশ্যই বলতে পারো।
-মা,আমরা চাই আপনি আমাদের সাথে থাকেন।আমি জানি না আপনি আমায় ছেলে মানেন কি না!কিন্তু আমি আপনাকে নিজের মা মানি।আমি চাই না আমি থাকতে আমার মা দিনের পর দিন একাকিত্ব অনুভব করুক।কেন একা থাকবেন আপনি?এতো দিন আপনার দুটো মেয়ে ছিলো, এখন আপনার একটি ছেলেও আছে।আমার মা কেন আমার থেকে দূরে কষ্টে দিন কাটাবে আর আমরাও কেন তার মমতার ছোঁয়া থেকে দূরে থাকবো।আমাদের কি একটু মমতার আশ্রয় দেওয়া যায় না?(রিদান)
আনিসা বেগম চোখে জল নিয়ে পরম স্নেহের সাথে হাত রাখলো রিদানের গালে।তার চোখে এক অদ্ভুত আনন্দ আর তৃপ্তির ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে।
-ছেলে একটা নয় মা।আজ থেকে আপনার দু মেয়ে আর দু ছেলে।(আরুশ)
আনিসা বেগম অতি মমতার সহিত জরিয়ে ধরলো তার দু ছেলেকে।
-আমার অনেক সখ ছিলো ছেলের কিন্তু পূরণ হয়নি।আজ এতো বছর পর এসে আমার ইচ্ছে টা পূর্ণ হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি।(রিদান আর আরুশের গালে হাত রেখে বলেন আনিসা বেগম)
মোহ আর মোহনা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে দেখছে তাদের।রিদানকে দেখে অবাক হচ্ছে মোহ।এমন মানুষ আজও পৃথিবীতে আছে তা বিশ্বাস করাই মুসকিল। কি দিয়ে তৈরি এই ছেলে!ভেবে পায় না মোহ।মোহ আর মোহনাও যেয়ে জড়িয়ে ধরে আনিসা বেগমকে।তার চার ছেলে-মেয়ে একসাথে জরিয়ে ধরেছে তাকে।বেশ কিছু সময় পর সরে দাঁড়ায় তারা।
-মা, আপনার অনুমতি পেলে আপনার ওখানে শিফট হওয়ার ব্যবস্থা করবো?(রিদান)
-আমার এক শর্ত আছে।
-জ্বি মা, বলেন।
-আমি ফ্রীতে থাকবো না।ভাড়া দিয়েই থাকবো।
-জ্বি মা।তবে অনুমতি আছে?
উত্তরে হেসে সম্মতি দেয় আনিসা বেগম। অতঃপর সবাই বেরিয়ে পরে। আনিসা বেগম আর মোহের মামা-মামী রয়ে গিয়েছেন।প্যাকিং এর কাজ শেষ হলে মোহের মামা-মামী চলে যাবে তাদের বাড়ি।আর মোহের মা মোহদের বাড়ি।
!!
বাসায় পৌঁছাতে রাত হয়ে যায়। বাড়ি ফিরেই মোহ চলে যায় তার শশুর-শাশুড়ীর ঘরে তাদের খোঁজ নিতে।প্রায় আধা ঘণ্টা তাদের সাথে কথা বলে রুমে এসে কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায় মোহ।এদিকে রিদান ফ্রেশ হয়ে কিচেনে যায় কফি বানাতে।মোহ ফ্রেশ হয়ে বের হয়েই দেখে রিদান দুকাপ কফি নিয়ে রুমে ঢুকছে।
-কফি?(রিদান)
-ধন্যবাদ।(মোহ)
-চলো বারান্দায় বসে খাই।
-চলুন।
বারান্দায় দুটো চেয়ার আর একটি টি-টেবিল আছে।বারান্দা টা বেশ খোলামেলা হওয়ায় বাতাসের আনাগোনা বেশি।হটাৎ রিদান মোহের হাত থেকে কফির কাপ টা নিয়ে নিজের কাপ টা মোহকে ধরিয়ে দেয়।রিদানের এমন কাজে প্রথমে অবাক হলেও পরে মুচকি হাসে মোহ,যা রিদানের চোখ এড়ায় না।রিদানও বাঁকা হেসে যেদিকে মোহ এর ঠোঁটের ছোঁয়া লেগে আছে সেখানে ঠোঁট লাগিয়ে কফি পান করে।মোহ ও ঠিক একই কাজ করে।রিদানের প্রতি মোহের ভালোগালাটা যে দিন দিন বাড়ছে তা মোহ আর রিদান উভয়ই বুঝতে পারছে।
কফি শেষে উঠে গ্রীলের কাছে যেয়ে দাঁড়িয়ে নিজের কোমর পর্যন্ত চুলের খোঁপা টা খুলে দিলো মোহ।বাতাসে মোহের চুলগুলো উরছে।নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না রিদান।ধিরে ধিরে মোহের কাছে যেয়ে পেছন থেকে মোহকে জরিয়ে ধরে মোহের চুলে নাক ডুবিয়ে দিলো রিদান।রিদানের এমন কাজে মোহ চোখ বুঝে আলতো হাসে।এভাবেই বেশ কিছু সময় তারা একে-অপরের সাথে লেপ্টে থাকে।
!!
রাত ১২ টা।রিদি মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।এতো দিন মোহদের বাসায় থাকায় একটুও পড়া হয়নি তার।হটাৎ ফোনের রিংটোন বাজায় মনোযোগ নষ্ট হয় তার।বেশ বিরক্তি নিয়েই ফোনটি হাতে নেয় সে।ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে "মিঃ ডিস্টার্ব" নামটি।ইচ্ছা না থাকা শর্তেও ফোন ওঠায় সে।
-আসসালামু আলাইকুম।(রিদি)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।কি করছো?(মিহাদ)
-পড়ছি।
-আজই তো জার্নি করে বাড়ি ফিরলে।কি দরকার ছিল আজ পড়তে বসার।ঘুমিয়ে রেস্ট নিতে পারতে!
-আমি জানি আমার জন্য কোনটা ভালো।
-পিচ্চি মানুষ, বেশি বুঝতে হবে না। যেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
-আমি পিচ্চি?
-অবশ্যই।
-আমি অনার্স ২ বর্ষে পড়ছি।
-আমার মাস্টার্স পড়া শেষ হয়েছে চার বছর আগে।
-আপনি বুড়ো, আমি মোটেও পিচ্চি না।
-তুমি পিচ্চিই।আর একদম বুড়ো বলবে না আমায়।
-বুড়ো,বুড়ো,বুড়ো।
বলেই ফোনটা কেটে দেয় রিদি।খুবই মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার।তার বয়স ২০ পেরিয়ে ২১ এ পড়তে চলেছে আর লোকটা বলে কিনা ও পিচ্চি। এসব ভেবে মেজাজ খারাপ হলেও রিদি ভাবে লোকটা ঠিকি বলেছে,আজ ওর রেস্ট নেওয়া উচিৎ।কাল থেকে পড়লেই ভালো হবে।বিছানা গুছিয়ে শুয়ে পরে রিদি।আর এদিকে রিদি ফোন কেটে দেওয়ার পর হাসতে শুরু করে মিহাদ।মেয়ে টা আসলেই পিচ্চি, এখনো বাচ্চামো যায়নি তার।
!!
সকালে রিদান ঘুম থেকে উঠে আজও মোহ কে দেখতে পেলো না।প্রচুর মেজাজ খারাপ হয় রিদানের।কতো ইচ্ছা তার,ঘুমন্ত বউ টাকে দেখবে।কিন্তু মোহ ইচ্ছে টা পূরণ হতেই দিচ্ছে না
-মোহ,আমার কফি দেও।(চেচিয়ে কথাটি বলে ওয়াশরুমে চলে যায় রিদান ফ্রেশ হতে)
মোহ কফি নিয়ে রুমে এসে দেখে রিদান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে।পোশাক দেখে মনে হচ্ছে রিদান অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে।
-আজ অফিসে যাবেন?(মোহ)
-হু।এদিকে এসো।(রিদান)
মোহ রিদানের কাছে যেতেই রিদান মোহের হাত থেকে কফি টা নিয়ে বলে....
-শার্টের অবশিষ্ট বোতাম গুলো লাগিয়ে দেও।
মোহ চুপচাপ বোতাম গুলো লাগিয়ে দেয়।বোতাম লাগানো শেষে মোহ সরে যেতে নিলেই রিদান মোহের কোমর জড়িয়ে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে।
-বিকেল ৫ টায় ফিরবো,নিজের আর আম্মুর খেয়াল রেখো।(বলেই মোহের কপালে এক গভীর চুমু দেয় রিদান)
মোহ চোখ বুজে আলতো হাসে।
!!
কলেজে দিহান আর তিশা বসে পড়ছিলো।তিশা পড়ার মাঝেই বেশ কয়েকবার তাকায় দিহানের দিকে।কিন্তু দিহান খুব মনোযোগ সহকারে পড়ছে।
-দিহান, তুমি কি কিছু বোঝো না?
-কি বুঝবো?
-কিছুই কি বুঝো না?
-সবই তো বুঝি,কেন তুমি কোনটা বুঝতেছো না? বলো বুঝিয়ে দেই।
-তোমার মাথা।গর্ধব কোথাকার!
-পড়তে দেও তো আমায়।
দিহান কথাটি বলার সাথে সাথেই তিশা দিহানের বই টা কেড়ে নেয়।
-ওই আমার বই দেও।(দিহান)
-পারলে নেও।
বলেই তিশা দৌড় দেয়। পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে দিহান।বেশ কিছু সময় দৌড়ানোর পর হটাৎ দিহান তিশার পেটে হাত দিয়ে তিশাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে তিশার হাত থেকে বইটি নিয়ে তিশাকে ছেড়ে দেয়।দিহানের কাজে তিশা লজ্জায় লাল হয়ে আর কিছু না বলেই বেরিয়ে যায় ক্যান্টিন হতে।তিশার এমন কাজের কারণ বোধগম্য হয়না দিহানের।
চলবে...
Writer:- Mahzabin