সন্ধ্যে নামার আগের আকাশটার প্রেমিক আমি।এ সময় পরিবেশটা এক ঠান্ডা বাতাস ছেড়ে সবাইকে জানান দেয় যে এখন তারা সূর্যের তাপ হতে মুক্ত।আকাশের সে রং টা খুব করে টানে আমায়।ইচ্ছে হয় এক মুক্ত পাখির ন্যায় উড়ে চলি সে আসমানের বুকে।হাত দুটি প্রসারিত করে সারা গায়ে মেখে নিই সে তৃপ্তি মাখা বাতাস।"
[আসলেই সন্ধ্যের আকাশটা আমায় খুব টানে।মন খারাপ থাকলেও অনেকটা ভালো হয়ে যায়।কি আছে সে আকাশে?
মোহ আকাশের দিকে তাকিয়ে একাধারে কথাগুলো বলে চোখ বুজে নেয়।হটাৎ নিজের কানে কারো গরম নিঃশ্বাস অনুভব করে মোহ।ঠোঁটে ফুটিয়ে তোলে আলতো হাসি।রিদান,মোহের কানে ছোট্ট এক চুমু দিয়ে বলে ওঠে,
-তোমার ইচ্ছে গুলো আমার।
মোহের হাতদুটো নিজের হাতের মাঝে নিয়ে রিদান আবারও বলে ওঠে,
-তোমার সবটা আমার আর আমার সবটা তোমার।তোমার স্বপ্ন,ইচ্ছে সব পূরণ করার দ্বায়িত্ব আমার।সাফল্যের পথে আমি তোমায় এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহো দিবো আবার খারাপ পথ থেকে তোমাকে দূরে সরিয়ে রাখবো।স্বামীর মতো তোমায় আগলে রাখবো আর প্রয়োজনে তোমায় শাষণ করবো,প্রেমিকের মতো তোমায় ভালোবাসবো,বন্ধুর মতো তোমার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবো।না এক কদম আগে না এক কদম পিছে,তোমার সাথে কদমে কদম মিলিয়ে চলবো।এটি ওয়াদা তোমার মিঃহাসবেন্ডের।
চোখ গড়িয়ে জল পরছে মোহের।নিজের অজান্তেই তার চোখ জলে ভরে উঠেছে।উহু,এটা কোনো কষ্টের কান্না না।এটা অতি সুখের কান্না।মোহ নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে রিদানকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলে,
-আপনার মতো বর কখনোই আমার প্রাপ্য নয়,রিদান।অনেক আগেই বলেছিলাম আপনি আমার জীবনে আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।যার যোগ্য আমি নই।
এটুকু বলেই মোহ,রিদানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড়ে রুমে চলে যায়।রিদান,মোহের এমন কাজের কোনো কারণ না বুঝতে পেরে মোহের যাওয়ার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।কিছু সময় বারান্দায় বসে রিদানও রুমে প্রবেশ করে দেখে মোহ নামাজ পড়ছে।কিন্তু কোন ওয়াক্তের নামাজ!!এখন তো নামাজের ওয়াক্ত নেই।রিদান বিছানায় যেয়ে বসে অপেক্ষা করতে থাকে মোহের নামাজ শেষ হওয়ার।বেশ কিছু সময় পর মোহের নামাজ শেষ হয়।মোহ জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে আসতেই রিদান বলে ওঠে,
-কোন ওয়াক্তের নামাজ ছিলো?
-নফল।
-হটাৎ?
-যখনই মনে হয় আল্লাহ আমায় এমন কিছু দান করেছেন যার আমি যোগ্য নই অর্থাৎ খুব ভালো কিছু তখন আমি ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করি।আজ অবশ্য ১০ রাকাত পড়েছি।
বলেই মুচকি হাসি দিয়ে মোহ রুম ত্যাগ করে।এদিকে রিদানের ঠোঁটেও ফুটে ওঠে মনোমুগ্ধকর হাসি।
!!
-আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন?(ডাঃফেইজ)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।ভালো আছি।আপনি?(আনিসা বেগম)
-জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।
-তা কোনো কাজ ছিলো কি?
-কেনো কাজ ছাড়া কি খবর নেওয়া যায় না?
-আমাদের সম্পর্ক টা নিশ্চয়ই ওমন নয়?
-তা কেমন?
-পেশাদারী।
-ব্যক্তিগত করা যায় না?
-মানে?
-কিছু না।আমরা চাইছি,বিয়েতে আপনার বড় মেয়ে অর্থাৎ মোহনাও যেনো শরিক হয়।
-আসলে ও তো অসুস্থ। আর আরুশ তো ওকে বিছানা দিয়েও নামতে দিতে চায় না এসময়।
-জ্বি বুঝতে পারছি।কিন্তু বিয়েতে আসলে ওর কোনো প্রকার সমস্যা হবে না ইন শাহ আল্লাহ।এটির নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
-আচ্ছা,ওদের বলবো।আর ধন্যবাদ আপনাকে।
-ওদের সিদ্ধান্তটি জানাবেন আমায়।
-জ্বি আচ্ছা।
-রাখছি।
কলটি কেটেই আনিসা বেগম চিন্তায় পরে গেলেন।আজকাল ডাঃফেইজের আচরণ একদম স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না তার।লোকটির হলো টা কি?আর ওমন কথার মাধ্যমে সে কি বুঝাতে চাইছে!!
!!
"ছিঃ ছিঃ অনি(আরুশের মা)।তোর বাড়ি এতো দিন পর এলাম আর তুই এগুলো খেতে দিলি আমাদের?
-আসলেই অনি!কি এগুলো?"
"এমন খাবার তো প্রতি সন্ধ্যায় আমাদের কাজের লোকদের খাওয়াই।"
"নুডলস আর চা?সিরিয়াসলি?তোর বাসায় এসে আমাদের এগুলো খেতে হবে?"
"মাত্র এ দুটি ফকিন্নি মার্কা খাবার খাইয়ে আমাদের আপ্যায়ন করবি?"
এসব উক্তি শুনে অনি বেগম যেনো লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছেন। ঠিকই তো বলছে তার বান্ধবীরা।এতো দিন পর বান্ধবীর বাসায় এসে এসব খাবার খাবেন তারা?তাদের একটা স্টাটাস আছে!এমন দু আইটেম তাদের সামনে কি করে পরিবেশন করলো মোহনা?মোহনার উচিৎ ছিলো দু-চার রকমের পিঠা আর কিছু চিকেন আইটেম তৈরি করা।নিজের রাগ টাকে দমিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে অনি বেগম বলে উঠলেন,
-এগুলো কি মোহনা?এ দু আইটেম মেহমানদের সামনে পরিবেশন করে আমায় অপমান কেনো করলে?আমার ছেলের কি টাকার অভাব আছে নাকি যে বাসায় বাজারের অভাব হবে?কেনো ভালো কিছু রাঁধলে না?
অনি বেগমের বান্ধবীদের ওসব উক্তি শুনেই চোখে জলেরা ভিড় জমায় মোহনার চোখে।তার উপর শাশুড়ীর কথায় আর নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না।নিচের দিকে তাকিয়ে সমানে চোখের ফেলে চলছে মোহনা।
-উত্তর দিচ্ছো না কেনো?(চেচিয়ে বলে ওঠে অনি বেগম)
অনি বেগমের চিৎকারে কেঁপে ওঠে মোহনা।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে,
-মা,আমার পাপাপায়ে খখখুব ববব্যাথা।
-থামো।পোয়াতি আমরাও হইছি।এরকম পা ব্যথা নিয়ে ৭/৮ জনের জন্য রান্না করছি।
-মা প্লিজ!! নিজের উদাহরণ সব জায়গায় টেনো না।(হটাৎ আরুশ উপস্থিত হয় রুমে।মেহমান আসার পর দরজা লাগাতে ভুলে গিয়েছিলেন অনি বেগম)
-আরুশ তুই!!এসেই শুরু করে দিলি বউয়ের উকালতি করা।
-মা,মোহনা শারীরিকভাবে দুর্বল।এর অবস্থায় ডক্টর ওকে কাজ বেশিরভাগ সময় বিশ্রাম করতে বলেছে।অতিরিক্ত শারীরিক চাপ ওর আর বাচ্চা উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।
-কি বলতে চাইছিস,আমি খাটাই তোর বউকে?
-মোহনাকে দিয়ে কোনো কাজ করাচ্ছো না তুমি?
-যা করছে,ওর সংসারের কাজই করছে।বিয়ে করে এ বাড়িতে আসছে তা শাশুড়ির সেবা করবে না?ঘরের কাজ,রান্না-বান্না ও ই করবে।এগুলো না করতে পারলে বিয়ে করে আসছে কেন?
-বিয়ে করে আমার বউ হয়ে আসছে।সে আমার বউ,তোমার মেয়ে এ ঘরের চাকরানী না।যখন সুস্থ থাকে তখন নিজের সংসারের কাজ তো করে এখন যখন ও অসুস্থ তখন কি তুমি তোমার মেয়ের কিছু দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে পারো না মা হিসেবে?মা,তুমি কি পারো না মোহনাকে নিজের মেয়ের মতো দেখতে।এ মেয়েটি কিন্তু তোমায় মা ই ভাবে।
চোখ ছলছল করে ওঠে অনি বেগমের।সত্যি তো তার ভুল রয়েছে।এ সংসারের দায়িত্ব মোহনা যা মেয়েটি সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করে কিন্তু ভুল হয়ে যায়।অনি বেগম চাইলেই পারেন মোহনাকে শিখিয়ে নিতে।মেয়েটির অসুস্থতায় কিছু দায়িত্ব ভাগ করে নিতে।অনি বেগম নিশ্চুপভাবে এসব ভেবে চলছেন।
মোহ-রিদান পাশাপাশি বসে আছে গাড়িতে।বিকেলে অফিস থেকে এসেই রিদান বেরিয়ে যায় মোহকে নিয়ে।মোহ এখনো জানে না কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে।কিন্তু তা নিয়ে তার মাথা ব্যথা নেই।তার মিঃহাসবেন্ড তাকে যেখানেই নিয়ে যাক,মোহের পুরো বিশ্বাস আছে জায়গাটি অবশ্যই তার পছন্দ হবে।মোহ জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখে চলছে।রাস্তার দুপাশে রয়েছে অসংখ্য গাছপালা।কিন্তু রাস্তাটা একদম পাকাপোক্ত।বেশ কিছু সময় পর তারা গন্তব্যে এসে পৌঁছায়।রিদান ও মোহ একই সাথে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।মোহ বের হয়ে চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে আশেপাশে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট পাহাড় আছে।মোহের আশপাশটা দেখার মাঝেই রিদান মোহের হাতটি ধরে।মোহ,রিদানের দিকে তাকাতেই রিদান মুচকি হেসে পাহাড়ের উপরের দিকে এগোতে থাকে।মোহও বিনা প্রশ্নে রিদানের হাত ধরে তার কদমের সাথে কদম মিলিয়ে চলতে থাকে।
🖤
পাহাড়ের চুড়ায় চোখ বুজে একে-অপরের হাতের উপর হাত রেখে শুয়ে আছে মোহ-রিদান।পড়ন্ত বিকেল,নিশ্চুপ পরিবেশ,উপরে আকাশ আর নিচে ঘাস।এ সময় টা উপভোগ করার মতো।হটাৎ রিদান উঠে দাঁড়িয়ে মোহকেও দাঁড় করায়।মোহের দৃষ্টি রিদানের দিকে আর রিদানের দৃষ্টি ও আকাশ পানে। আকাশের দিকে তাকিয়েই রিদান বলে ওঠে,
-হাত গুলোকে প্রসারিত করে,সন্ধ্যে নামার আগ মুহূর্তের এ ঠান্ডা বাতাসটি নিজের গায়ে মেখে নেও মোহ।(রিদান)
রিদানের কথায় মোহ ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে হাতদুটো প্রসারিত করে একবার নিঃশ্বাস টেনে বেশ কিছু সময় পর তা ছাড়ছে।এমন বেশ কয়েকবার করার পর হটাৎ নিজের পেটে রিদানের হাতের স্পর্শ পায় মোহ।রিদানের হাতটি নিজের পেটে আরেকটু চেপে ধরে মোহ চোখ বুজে বলে ওঠে,
-নিজেকে আকাশে উড়ন্ত এক মুক্ত পাখির ন্যায় মনে হচ্ছে রিদান।যেখানে আমি অনায়েসে নির্মল বাতাস নিজের মাঝে ধারন করতে পারছি।ও আকাশ টাকে অনুভব করতে পারছি।নিচে তাকালে অসংখ্য মানুষদের চলাচল দেখতে পারছি।
এগুলো বলে মোহ, রিদানের দিকে ফেরে।রিদানের চোখের দিকে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থাকার পর মোহ বলে ওঠে,
-কি করে আপনার শুকরিয়া আদায় করতে সক্ষম হবো আমি?
-চুপ।বলেছিলাম না,তোমার ইচ্ছে গুলো আমার,তোমার সব ইচ্ছে,স্বপ্ন পূরণ করার দ্বায়িত্ব আমার!
উত্তরে মোহ কিছু বলে না ঠোঁটে হাসি নিয়ে নিরব দৃষ্টিতে দেখে চলছে রিদানকে।রিদান মোহের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে আবারও বলে ওঠে,
-এবারও নাহয় ১০ রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিও।(একটু বাঁকা হেসে)
রিদানের কথায় মোহ কিছু না বলে ধিরে ধিরে রিদানের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আলতো করে রিদানের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে আস্তে করে বলে ওঠে,
-১০ রাকাত কম হয়ে যাবে না?
রিদান একঘোর লাগা দৃষ্টিতে মোহকে দেখে নিয়ে মোহের ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়।এভাবেই একে-অপরের মাঝে হারিয়ে যায় তারা।
!!
রিদির বাসায় কথা বলে গিয়েছেন মিহাদের বাবা-মা।কিন্তু রিদির পরিবার এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি।রাতে রিদি,দিহান ও তাদের বাবা-মা রিদির রুমে বসে আছে।
-আমার মনে হয় মিহাদ ছেলেটি ভালো!(রিদির মা)
-তোমার মনে হওয়ায় কিছু যায় আসে না।একদম নিশ্চিত হতে হবে।(রিদির বাবা)
-বাবা, মিহাদ ভালো ছেলে।(রিদি)
-তুই কি করে জানিস?(রিদির বাবা)
-আসলে বাবা,আমি আগে থেকেই মিহাদকে চিনি।
ঠাস করে এক থাপ্পড় পরলো রিদির গালে।রিদির মা থাপ্পড়টি মেরেছেন।
-এক বেগানা পুরুষের সাথে মুখ কালো করে এখন নিজের কু কাম ঢাকবার জন্যেই কি এ বিয়ের নাটক?(রিদির মা)
-আহা দিহানের মা!! কি করছো।কিছু না জেনে গায়ে হাত তুলছো কেনো!(রিদির বাবা)
-তো কি করবো।এক বেগানা পুরুষকে কিভাবে চেনে ও?আর সে ছেলে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে ওর জন্য! বুঝতে পারছো?নিশ্চয়ই এদের.......
-মা,এমন কিছুই না।(রিদি)
-একদম কথা বলবি না।অসভ্য মেয়ে।
-মা প্লিজ।রিদির কোনো দোষ নেই। ওকে কেনো বকে যাচ্ছো।(দিহান)
-তা দোষ টা কার?প্রেম করবে ও,মুখ কালো করবে ও আর দোষ টা কি পাড়াপড়শির হবে?
-ও প্রেম করেনি।প্রথমদিকে মিহাদ ভাইয়া ওকে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করতো।এটি জানার পর আমি ভাইয়ার সম্পর্কে খোঁজ নেই তারপর জানি ভাইয়া খুবই ভালো একটা ছেলে। সবাই তার সুনামই করেছে।তাই আমি আর ভাইয়াকে বাধা দেইনি রিদিকে কল দিতে।কারণ আমি চাইছিলাম ওদের মাঝে চেনা-জানা টা বাড়ুক। আর রিদির তাকে ভালো লাগলে ওদের বিয়ে টা হোক।
ঠাস!দিহানের গালেও থাপ্পড় পরলো।কিন্তু এ থাপ্পড় টা দিয়েছে দিহানের বাবা।
-ছেলে ভালো দেখে বোনকে পাপ কাজ করতে উৎসাহিত করা টা তোমার দ্বায়িত্ব ছিলো?ব্যাপারটা আমাদের জানাতে পারতে! আমরা দেখে শুনে বিয়ে দিয়ে দিতাম।তোমরা দুজনেই আমাদের থেকে ব্যাপারটি লুকিয়ে ভুল করেছো।সেই সাথে আমাদের কষ্ট দিয়েছো।আমরা ছোটবেলা দিয়েই তোমাদের সকল আবদার মেনেছি।তোমাদের মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছি।এরপরও কি এটি আমাদের প্রাপ্য ছিলো?
-আমাদের ক্ষমা করে দেও বাবা।আমরা বুঝিনি এ নিয়ে তোমরা এতোটা কষ্ট পাবে।(দিহান)
-বাবা,আমি মিহাদকে আগে পছন্দ করতাম না কিন্তু ওর মাঝে কিছু কিছু জিনিস দেখে আমার ওকে ভালো লেগে যায়।তারপরই ওকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতে বলি।আমি কোনো নোংরামি করিনি।(কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে রিদি)
-আর তোর কথা বিশ্বাস করতে হবে আমাদের? (রিদির মা)
-আহহা দিহানের মা থামো।আমার পুরো বিশ্বাস আছে আমার মেয়ের উপর।তাকে আমি যা শিখিয়েছি তা সে কখনোই ভুলবে না।(রিদির বাবা)
বাবার এমন উক্তি শুনে রিদি দৌড়ে যেয়ে তার বাবাকে জরিয়ে ধরে।রিদির বাবাও পরম স্নেহের সাথে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।তারপর দিহানকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-কি রে ভবিষ্যৎ বান্দর টিমের আব্বা,ভবিষ্যৎ দুলাভাইয়ের ঠিকঠাকভাবে খবর নিছিলি?ছেলে ভালো তো?
-জ্বি আব্বা।এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন।(দিহান)
!!
ড্রয়িং রুমে বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে টিভি দেখছেন অনি বেগম।মোহনা ভয়ে ভয়ে তার শাশুড়ীর কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
-মা,আজ কি রাধবো?
-তোমায় রাধতে হবে না।
-মা,প্লিজ রাগ করে থাকবেন না।আমিই রাধবো,আপনি শুধু হুকুম করেন।
-আমাকে কি দজ্জাল শাশুড়ী মনে হয় তোমার?
-অবশ্যই নয়,মা।
-খুব কাজ করাই তোমায় দিয়ে?
-না মা।
-অত্যাচার করি তোমায়?
-নাহ।মা,দয়া করে আরুশের কথা গুলো মনে গেঁথে নিবেন না।ও কিছু না বুঝেই কথা গুলো বলেছে।
এতোক্ষণ বেশ গম্ভীর গলায় কথাগুলো বলছিলেন অনি বেগম।এবার তিনি উঠে মোহনার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
-আমি কোনো সিরিয়ালের শাশুড়ী নই যে কিনা নিজের ছেলের বউয়ের সাথে হিংসে করে বা কুটনামি করে।আমি শুধু এটুকু চাই যে তোমার সংসারের দ্বায়িত্বগুলো তুমি বোঝো এবং তা সঠিকভাবে পালন করো।ভদ্রতা,শালীনতা রক্ষা এবং এ বাড়ির বৌ হিসেবে এ বাড়ির সম্মান রক্ষা করা উচিৎ তোমার।সেই সাথে শশুর-শাশুড়ীর সেবা করাও তোমার দ্বায়িত্ব। ঠিক বলছি?
-জ্বি মা।
-কিন্তু কাল আরুশের কথাটি ঠিক ছিলো যেহেতু তুমি অসুস্থ তাই বড় হিসেবে আমার উচিৎ তোমাকে সাহায্য করা।
-বড় হিসেবে কেনো মা?মা হিসেবে কেনো নয়!
এ কথার উত্তরে কিছু বলে না অনি বেগম সে নিরব দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মোহনা আবারও বলতে শুরু করে,
-মা এ সংসার টা আমার কীভাবে হলো?বিয়ের পর স্বামীর সব স্ত্রীর হয় সে হিসেবেই তো।তাহলে স্বামীর মা,স্ত্রীর মা হবে না কেনো?আমি আপনাকে নিজের মা ই মনে করি।সে আপনি আমায় মেয়ে মনে করুন বা নাই করুন।
এবার অনি বেগম ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে মোহনার কপালে একটি চুমু দিয়ে বলে ওঠে,
-পায়ে ব্যথা আছে?
-জ্বি।
-রুমে যাও।আমি রসুন আর তেল গরম করে আনছি।
-না মা.......
অনি বেগম চোখ গরম দেখাতেই মোহনা কিছু না বলে মাথা নিচু করে এগিয়ে যায় নিজের রুমের দিকে।মোহনার ভয় পাওয়া দেখে মুচকি হাসেন অনি বেগম।
!!
রিদানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে মোহ।আর রিদান মোহের চুলগুলো নিয়ে খেলায় ব্যস্ত।হটাৎ মোহ বলে ওঠে,
-আচ্ছা,আমি যদি না থাকি তাহলে আপনার খারাপ লাগবে?
-না থাকো মানে?
-যদি কিছু দিনের জন্য কোথাও বেড়াতে যাই?
-আমিহীনা কোত্থাও যাবে না তুমি।
-যদি এমন কোথাও যাই যেখানে আপনি যেতে পারবেন না।
-আমি যেতে না পারলে তোমাকেও যেতে দিবো না।
-যদি আমি মর.......
আর কিছু বলতে পারে না মোহ।রিদান,মোহকে বিছানায় ফেলে মোহের উপর নিজের ভর ছেড়ে মোহের ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়।বেশ কিছু সময় চুমু দেওয়ার পর মোহের ঠোঁটে কামড় বসিয়ে তারপর ঠোঁট ছেড়ে মোহের কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
-একদম বাজে বকবে না।
দৌড়াবে!
চলবে....
Writer:- Mahzabin