> Mr husband পর্ব ২৩, ২৪ - Romantic story - ভালোবাসার গল্প - Bangla Love Story
-->

Mr husband পর্ব ২৩, ২৪ - Romantic story - ভালোবাসার গল্প - Bangla Love Story

আজ ফেয়রির বিয়ে।মোহনা-আরুশ,মোহ-রিদান, তমা বেগম,রিয়াদ সাহেব ও আনিসা বেগম সবাই সন্ধ্যের মাঝে পৌঁছে যায় কমিউনিটি সেন্টারে।ডাঃফেইজ,তার মা ও ফেয়রির মা তাদের স্বাগতম জানায়।পুরো সেন্টার টায় বিন্দু পরিমাণ কোলাহল নেই।কমিউনিটি সেন্টারটি বেশ বড়।প্রায় ১০০ জন মানুষের মতো গেস্ট আছে।আর সবাই নিজের মতো করে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করছে।হলুদের সাজানো টার থেকে বিয়ের সাজানো টা অনেক গুণ বেশি সুন্দর।পুরো কমিউনিটি সেন্টারে লাল,নীল,সবুজ কালারের লাইট জলছে তাই পুরো সেন্টারটি তেমন আলোকিত নয়।সেই সাথে স্লো মিউজিক চলছে।পরিবেশ টা মনোমুগ্ধকর।বর-বউ বসে আছে স্টেজে সেখানে অবশ্য অনেক আলো।ক্যামেরাম্যানরা ঘিরে রেখেছে স্টেজ টা।নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলায় ব্যস্ত তারা।আত্নীয়রা একে একে স্টেজে যেয়ে বর-বউয়ের সাথে ছবি তুলে আসছে।এসবই দেখে চলছেন আনিসা বেগম।বেশ ভালো লাগছে তার এমন পরিবেশে।বিয়ে বাড়িতেও যে এতোটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকা সম্ভব তা তিনি এখানে এসে জেনেছেন নাহয় হয়তো তার জানাই হতো না।কারণ বাংলাদেশের প্রতিটি বিয়েতেই লাউড মিউজিক দিয়ে কানের পর্দা ফাটাবার মতো অবস্থা উৎপন্ন হয়। এক গোল টেবিল ঘিরে অবস্থিত ৮ চেয়ারের মাঝে ৭ টি চেয়ার দখল করে বসে আছে মোহ-রিদান,মোহনা-আরুশ,তমা বেগম-রিয়াদ সাহেব ও আনিসা বেগম।সবাই বিভিন্ন গল্পে মেতে উঠেছে।হটাৎ ৮ম চেয়ারটির শূন্যটা পূরণ করে সেখানে জায়গা করে নিলেন ডাঃফেইজ। 
-আপনাদের গল্পে অংশ নিতে পারি?(ডাঃফেইজ)
-অবশ্যই।(রিয়াদ সাহেব বলে ওঠেন)
সবাই হাসি মুখে সম্মতি দেয়।
-তবে এ সুন্দরীই কি আপনার মেয়ে মোহনা?(ডাঃফেইজ আনিসা বেগমকে প্রশ্নটি করেন)
-জ্বি। 
-আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।(মোহনা)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম, মা।তা মানতে হবে দু মেয়েই মায়ের মতো সুন্দরী হয়েছে।(হেসে কথাটি বলে ওঠে ডাঃফেইজ)
এ কথায় সবাই হেসে দেয়।কিন্তু আনিসা বেগম বেশ লজ্জা পায়। হাসি হাসি মুখেই রিয়াদ সাহেব বলে ওঠেন,
-ঠিক বলেছিস ফেইজ।বেয়াইন যেমন সুন্দর তার মেয়ে দুটিও একদম তার মতো হয়েছে।
-আপনারা তো আম্মুকে এ বয়সে দেখে এ কথা বলছেন!নানু বলে আম্মু যখন কিশোরী ছিলো তখন নাকি সে ছেলেরা লাইন দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতো।(মোহনা)
-বাহ!বেয়াইন সাহেবা তো তবে সময়কালে বেশ ক'জন ছেলেদের নিজের পিছন পিছন ঘুরিয়েছেন।(তমা বেগম)
-এখনও কম সুন্দরী নন তিনি।তা লাইনে কেউ আছে কি?(হাসি মুখেই আনিসা বেগমকে উদ্দেশ্য করে  বলে ওঠেন ডাঃফেইজ) 
এসব উক্তি শুনে আনিসা বেগম লজ্জায় লাল হয়ে আছেন।তিনি যেনো কিছু বলতেই পারছেন না।লজ্জায় তিনি নিচের দিকে তাকিয়ে আছেন।তার এমন লজ্জামাখা মুখটি দেখে সবাই আরেক দফা হেসে উঠলো।এভাবেই বিভিন্ন হাসি মস্করার মাঝে অনেকটা সময় কেটে গেল।কিন্তু এসবের মাঝেই রিদান বেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে চলছিলো ডাঃফেইজকে।ডাঃফেইজের আনিসা বেগমের দিকে তাকানোর সে চাহনি,কথার মাঝে আনিসা বেগমের সুনাম করা এসবের কিছুই দৃষ্টি এড়ায়নি রিদানের।

ঘনিয়ে এলো বিদায় বেলা।বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ বিদায় নিয়ে চলেও গিয়েছে।অনেকে আবার বিদায় নিচ্ছে।সেই সাথে মোহরা ও বিদায় নিতে এগিয়ে যায় ডাঃফেইজের মায়ের কাছে।একে একে সবার থেকে বিদায় নিয়ে উপস্থিত হয় তারা ডাঃফেইজের কাছে।
-এখনই চলে যাবেন?ফেয়রির বিদায় পর্যন্ত নাহয় থাকেন?(ডাঃফেইজ) 
-নারে ফেইজ।প্রচুর ক্লান্ত আর থাকা সম্ভব নয়।(রিয়াদ সাহেব)
-তুই তো ক্লান্ত হবিই।বুড়ো হয়ছিস বলে কথা।
-সে আমি একা নই,তুই ও হয়েছিস।
-দেখ তো আমায়,কোথাও ক্লান্তিভাবটা দেখছিস?আমি এখনো যুবকই আছি।(কথাটি বলেই তিনি তাকান আনিসা বেগমের দিকে।চোখে চোখ পরতেই আনিসা বেগম দৃষ্টি নামিয়ে নেন।কেনোই যেন আজ খুব লজ্জা পাচ্ছেন তিনি ডাঃফেইজের চাহনিতে) 
-আচ্ছা থাক।আবার দেখা হবে।(রিয়াদ সাহেব)
-আচ্ছা।(ডাঃফেইজ) 
মোহ-রিদানও সালাম দিয়ে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।মোহনা-আরুশও ডাঃফেইজের কাছে এসে সালাম দেয়।ডাঃফেইজ,মোহনাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে, 
-শরীর ভালো যাচ্ছে তো মা তোমার? 
-জ্বি আঙ্কেল। 
-তোমার মনে হয় ৭ মাস চলছে?
-জ্বি। 
-আরুশ,তোমার শাশুড়ী বলেছেন তুমি নাকি মোহনাকে বিছানা থেকেও নামতে দেও না।(বেশ গম্ভীর গলায় বলেন ডাঃফেইজ) 
-জ্বি......
-এটি ঠিক নয়।ওকে প্রতিদিন আধা ঘন্টার জন্যে হলেও হাটাবে।এ সময় এটি প্রয়োজন।বুঝলে ওল্ড  আঙ্কেল।(বলেই হেসে ওঠেন ডাঃফেইজ)
-ওকে ইয়াং আঙ্কেল।(আরুশও হেসে জবাব দেয়)
-সাব্বাস!!বুঝে নিয়েছো তাহলে যে আমি এখনো ইয়াং। 
-জ্বি।(হেসেই বলে ওঠে আরুশ)
এভাবে কিছু কথা বলে মোহনা-আরুশও বিদায় নিয়ে গাড়ি চড়ে বসে।
আনিসা বেগম ধির পায়ে ডাঃফেইজের কাছে এসে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে "আসি" বলেই চলে যেতে চান কিন্তু হাতে টান পড়ায় থেমে যান তিনি।অবাক চোখে তিনি একবার হাতের দিকে ও একবার ডাঃফেইজের মুখের দিকে চাইলেন।ডাঃফেইজ আনিসা বেগমের এমন চাহনিতে অপ্রস্তুত হয়ে হাতটি ছেড়ে বলে ওঠেন,
-সরি।
-কিছু বলবেন কি? 
-সেদিনের কথাগুলো নিয়ে ভেবে দেখেছিলেন? 
-দেখুন,আমি আপনার সাথে পুরোপুরি একমত।সমাজ পরিবর্তনশীল।কিন্তু এ পরিবর্তন একদিনে আসে না।যে সমাজে পরিবর্তন আনায় প্রথম অগ্রসর হয় তার বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়।আমার জীবনে সংগ্রাম কি কম ছিলো যে নতুন একটিকে আমন্ত্রণ করবো?
-আমি তো আপনায় সাহসী ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি তো ভীতু।চেষ্টা না করেই হার মেনে নিচ্ছেন।
-আনিসা ভীতু নয়।ভীতু এক মা।যে নিজের সুখের সন্ধানে নিজের সন্তানদের কষ্টে দেখতে পারবে না।তার সুখের জন্য উঠানো কদম,তার সন্তানের কষ্টের কারণ হবে তা কি করে মেনে নিবে এক মা?আমি নিজের একাকিত্ব টা হতে মুক্তির জন্য বিয়ে করলে এ সমাজ তা ভালো চোখে নিবে?নিবে না।সবার কাছে চরিত্রহীনায় পরিণত হবো।তাতে হয়তো তেমন কিছু যাবে-আসবে না কিন্তু আমার মেয়ে দুটির কি হবে?তাদের শশুর বাড়িতে তাদের কেমন চোখে দেখা হবে? কোনো নিশ্চয়তা আছে কি যে তাদের বিয়ে টা আমার ওমন কাজের পরেও টিকে থাকবে?

স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন ডাঃফেইজ এমনটা তো ভেবে দেখেনি সে।আসলে এ এক মায়ের চিন্তা,ভালোবাসা তার সন্তানের প্রতি।যা ডাঃফেইজ চাইলেও অনুভব করতে পারবেন না।ডাঃফেইজের এমন নিস্তব্ধতা দেখে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আনিসা বেগম ঠোঁটে একটু হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠেন,
-আসি।
বলেই এগিয়ে যান গাড়ির দিকে।নিজের মাঝে এক অদ্ভুত কষ্ট অনুভব করছেন আনিসা বেগম।এ কষ্টের কারণটি বুঝতে সক্ষম হলেন না তিনি।

!!
-মোহ ওঠো।
-উম রিদান,আরেকটু ঘুমুতে দেন।
-ক'টা বাজে খেয়াল আছে!কোচিং আছে আপনার। 
-প্লিজ আজ যাবোনা।
-না।মোহ ওঠো।
রিদানকে আরেকটু শক্ত করে জরিয়ে ধরে মোহ,রিদানের বুকে নাক ঘষে সে আবারও ঘুমে মনোযোগ দেয়। রিদান,মোহের কাজে অবাক।
হটাৎ মোহ ঘুমের মাঝেই টের পাচ্ছে রিদান তার ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিয়েছে।মোহ বেশ বুঝতে পারছে তার ঘুম ভাঙতেই রিদান এমনটি করছে।তাই মোহ কোনো নড়াচড়া না করে চুপচাপ রিদানের স্পর্শ অনুভব করে চলছে।বেশ অনেক টা সময় চুমু দেওয়ার পরও যখন মোহের দিক দিয়ে কোনো সাড়াশব্দ পায়না তখন রিদান মোহের ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দেয়।মোহ সাথে সাথে চোখ বড় বড় করে তাকায়,দেখে রিদান তার দিকেই তাকিয়ে আছে।রিদান তখনও ছাড়েনি মোহের ঠোঁট।এ সুযোগে মোহও রিদানের ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দেয়।কামড় টা বেশ জোরে হওয়ায় রিদান মোহকে ছেড়ে আহ করে ওঠে।এ দেখে মোহ ঠোঁট চেপে হেসে দেয়।রিদান নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে মোহের দিকে তাকাতেই দেখে মোহ দাঁত কেলিয়ে যাচ্ছে।এ দেখে রাগে রিদান আবারও মোহকে ধরতে আসতেই মোহ চটজলদি উঠে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।মোহের ওমন দৌড় দেখে রিদান রাগ ভুলে হেসে দেয়।

!!
-মা,কি রাধছো?
-পরোটা,গরুর মাংস,ডাল ভুনা,ডিম।
-এগুলো কি সকালের জন্য।(অবাক হয়ে বলে ওঠে মোহনা) 
-তো?
-এতো কিছু কেনো?
-কই এতো কিছু।এ প্রথম আরুশ নিজের শাশুড়ীর বাড়ি থাকতে এলো।তাকে ঠিকভাবে সেবা-যত্ন করতে হবে না?
-কোনো দরকার নেই।ওই হাঁদারামকে এতো সেবা-যত্ন করার।
-চর খাবি।যা এখান থেকে।কি যে হয়েছে আজকালকার মেয়েদের স্বামীর প্রতি কোনো ভক্তিই নেই।
-এই যে শুরু শাশুড়ি নাম্বার ০২।তোমরা দুই মা মিলে শুধু বকেই চলো আমায়।(কাঁদো কাঁদো ভাব করে বলে মোহনা)
মোহনার কথা শুনে হাতের কাজ ফেলে আনিসা বেগম নিজের মেয়ের কাছে এসে বসেন।মোহনার গালে হাত দিয়ে তিনি বলে ওঠেন,
-বেয়াইন কি খুব বকে তোকে?
মায়ের চোখে পানি টলমল করতে দেখে অবাক হয়ে যায় মোহনা।এমন কি বললো সে যে তার মা এতোটা আবেগি হয়ে উঠেছে।
-কাঁদছো কেনো?
-আগে বল,খুব বকে তোকে? 
-নাহ মা।
-সত্যি? 
-হ্যাঁ।এখন বলো কাঁদছো কেনো?
-এ এখন বুঝবি না।মেয়ের মা হয়ে যখন আদরে লালন-পালন করা সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিবি তখন বুঝবি মায়ের মনে কতো কু ডাক ডাকে।কতো অনিশ্চয়তায় দিন পাড় করে সে।তার মেয়েটির সাথে শশুর বাড়ির সবাই কেমন ব্যবহার করছে,তার মেয়েটি কষ্ট পাচ্ছে কি না এমন হাজারো প্রশ্ন ভিড় জমায় মায়ের মনে।
মোহনা অশ্রুসিক্ত নয়নে তার মাকে দেখে নিয়ে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো।মা-মেয়ে উভয়ই একে-অপরকে জরিয়ে ধরে বেশ কিছু সময় কাঁদার পর মোহনা তার মার থেকে সরে এসে মায়ের চোখের পানি মুছিয়ে বলে ওঠে,
-এতো চিন্তা করো কেন?আমার শশুর-শাশুড়ী অনেক ভালো। তারা দুজনই আদর করে আমায়।জানো গতকাল শাশুড়ী মা আমার পায়ে তেল মালিশ করে দিয়েছেলো।খুব যত্ন নেয় সে আমার।আর আরুশ তো আছেই।এখন থেকে কোনো চিন্তে করবে না তুমি।প্রমিজ? 
আনিসা বেগম আলতো হেসে তার মেয়ের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেন।

!!
দিহানের মেজাজ টা চরম খারাপ।আজকাল তিশা ও রোশান একজন আরেকজনের সাথে লেগেই থাকে।আর তিশাও প্রয়োজনের অতিরিক্ত দিহানের সাথে কথা বলে না এমনকি দিহানের দিকে তাকায়ও না।
"আজকাল তো রোশান খুব প্রিয় হয়ে গেছে। তাইলে ভার্সিটি নিয়ে যাওয়া আবার বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজ আমি কেন করবো?
আজই বলবো এ কাজ আর আমি পারবো না।ওই রোশানকেই বলুক।"
এসব ভাবতে ভাবতে রিকশায় করে তিশার বাড়ির সামনে পৌঁছে যায় দিহান।পৌঁছতেই এক বড়োসড়ো ধাক্কা খায় দিহান।রোশান বাইক নিয়ে তিশার বাড়ির গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।আর তিশা ঠিক তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে কারো অপেক্ষা করছে।রিকশা দিয়ে নেমে তিশার সামনে দাঁড়াতেই তিশা বলে ওঠে,  
-তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম।ধন্যবাদ তোমাকে এতো দিন, এতো কষ্ট করে আমার সাথে আসা-যাওয়া করেছ।এর জন্য আসলেই ঋণি থাকবো কিন্তু আর তোমাকে কষ্ট দিতে চাইছি না। 
আরও কিছু বলতে চাইছিলো তিশা কিন্তু দিহান তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রিকশায় চড়ে চলে যায়।দিহানের এমন ব্যবহার রোশান ও তিশা উভয়ের কারোরই কাম্য ছিলো না।

 

রাতে একজন আরেকজনের সাথে লেপ্টে ঘুমোনো, সকালের খুনসুটি, প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে নিয়ম করে মোহের কপালে চুমু এঁকে দেওয়া,বিকেলে একসাথে বারান্দায় বসে এক কাপের একই জায়গায় ঠোঁট ছুঁইয়ে কফি পান করা,বিকেল হতে সন্ধ্যা অব্দি একটু একটু দুষ্টুমির সাথে পড়াশোনা।এইতো এভাবেই কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটি মাস।এ কয়েকটি মাসে মোহ-রিদান একে-অপরের আরও কাছের মানুষে রুপান্তরিত হয়েছে।তাদের মাঝের মায়ার বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে।এসবের মাঝে মোহের ভর্তি পরিক্ষার ফলও প্রকাশ করা হয়ে গিয়েছে।রিদানের সহযোগিতা ও আল্লাহর ইচ্ছায় মোহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে।



রাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলো মোহ।ঠিক তখনই হটাৎ কোমরে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে মোহ আয়নার দিকে তাকায়।দেখে রিদান তার পেছনে দাড়িয়ে আয়নার মাধ্যমে চেয়ে আছে তার দিকে।মোহ আঁচড়ানো বন্ধ করে একদৃষ্টিতে দেখে চলছে রিদানকে।রিদান আয়না দিয়ে মোহের চোখে চোখ রেখে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থাকবার পর মোহের হাত থেকে চিরুনি টা নিয়ে নিজেই যত্নের সাথে চুল আঁচড়ে দিতে আরম্ভ করে।সে এতোটাই ধীরে ধীরে আঁচড়াচ্ছে যে হয়তো আজ রাত টা এভাবেই পার হয়ে যাবে।অবশেষে অনেকটা সময় পাড় করবার পর আঁচড়ানো শেষ হয় রিদানের।তারপর মোহ উঠে দাঁড়িয়ে চুল গুলো খোপা করবার জন্যে চুলে হাত দিতেই তাকে থামিয়ে দেয় রিদান।  
"খোলাই ভালোলাগে"
এ কথার উত্তরে মোহ আলতো হেসে চুলটি খোলা রেখেই বারান্দার দিকে পা বাড়ায়।কিছু টা এগোতেই রিদান তার হাতটি ধরে বাঁধা দেয়।
"ছাঁদে যাবে?"
-যাওয়া যায়।
-চলো তবে।
-উহু।আপনি যান,আমি আসছি।
-কেনো?একসাথেই চলো।
-প্লিজ? 
-আচ্ছা। 
বলেই রিদান ছাঁদে যাবার জন্যে পা বাড়ায়।এদিকে মোহ মুচকি হেসে নিজের কাজে লেগে যায়। 



রিদান হটাৎ নিজের বুকে কারো দুটি হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে যায়।মোহ পেছন থেকে জরিয়ে ধরেছে তাকে।এটি বুঝতে পেরে আলতো হেসে মোহকে নিজের সামনে এনে দাঁড় করায় রিদান।মোহকে দেখে অবাক হয়ে যায় সে।
মোহ লাল রং এর একটি শাড়ি পড়েছে।ঠোঁটে সিঁদুর লাল রং এর লিপস্টিকও লাগিয়েছে সেই সাথে চোখে হালকা কাজল।চুল গুলো খুলা যা বাতাসে উড়ে চলছে।
রিদান মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে দেখছে তার বউকে।রিদানের এমন চাহনিতে লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে মোহ।কিন্তু রিদানের এমনভাবে তাকিয়ে থাকাটা ভালোও লাগছে তার।এতো সাজগোছ তো তার মিঃহাসবেন্ডকে দেখানোর জন্যেই করেছে সে।আজ পরিপূর্ণভাবে স্ত্রীর মর্যাদা নিয়েই দম নিবে মোহ।নিজের মনে এমন সংকল্প নিয়ে কিছু টা সময় নিরাবতা পালনের পর সে একটি শ্বাস নিজের মাঝে টেনে নিয়ে কিছু বলে ওঠার আগেই রিদান বলে ওঠে, 
-হটাৎ এভাবে.........
আরো কিছু বলতে চাইছিলো রিদান কিন্তু মোহ তার ঠোঁটে হাত দিয়ে কথা বলতে বারন করে।রিদানের অনেকটা কাছে এসে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে মোহ বলে ওঠে,
"আপনার গোছালো জীবনটাকে অগোছালো করে দিতে চাই।আপনার ক্লান্তিতে কপালে জমে থাকা ঘামটি মুছে দেওয়া আঁচল হতে চাই।আপনার কপালে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অগোছালো চুলগুলোকে গুছিয়ে দেওয়া হাত হতে চাই।কাজের মাঝে বার বার আপনাকে বিরক্ত করে আপনার বিরক্তির কারণ হতে চাই।সারাদিনের কান্তি শেষে আপনার শান্তিপূর্ণ ঘুম হতে চাই।বিষন্নতার মাঝে আপনার ঠোঁটে ফুটে ওঠা হাসি টা হতে চাই।আপনার প্রেমময় সন্ধ্যের প্রেমিকা হতে চাই।হবেন আমার প্রেমিক?"
প্রথমে অবাক হলেও সময়ের সাথে সাথে রিদানের মন মুগ্ধতায় ভরে উঠলো।শেষের কথাটি শুনে সে ঠোঁটে আলতো হাসি ফুটিয়ে ধীরে ধীরে মোহের আরও কাছে এগিয়ে যেতে যেতে বলে ওঠে, 
"তোমার আকাশের সে মুগ্ধতার চাঁদটি হতে চাই।প্রচন্ড গরমে এক শীতল হাওয়া হয়ে তোমায় ছুঁয়ে দিতে চাই।তোমার ভিজে থাকা চুল যত্নের সাথে মুছে দেওয়ার অধিকার চাই।তোমার অকারণেই ঠোঁটে ফুটে ওঠা হাসির কারণ হতে চাই।পূর্ণিমার রাতে জোৎস্না বিলাসে তোমার সঙ্গী হতে চাই।তোমার সে লম্বা অযত্নে রাখা চুলে যত্নের সাথে ফুল গুঁজে দেওয়া প্রেমিক হতে চাই।হবে আমার প্রেমিকা?"
রিদান কথা বলার মাঝেই মোহের দিকে এগিয়ে চলছিলো আর মোহ পিছিয়ে যাচ্ছিলো। কথাটি শেষ করে দাঁড়িয়ে যায় রিদান ঠোঁটে বাঁকা হাসি নিয়ে।রিদানের প্রতিটি কথা মোহের হৃদয় স্পর্শ করার জন্য যথেষ্ট ছিলো।রিদানের দাঁড়িয়ে যাওয়া দেখে মোহ ও দাঁড়িয়ে যায়।কিছু টা সময় একে অপরকে দেখে নিয়ে মোহ দৌড়ে রিদানকে জরিয়ে ধরে।রিদানও জরিয়ে ধরে মোহকে।
অনেকটা সময় একে অপরের সাথে লেপ্টে থাকার পর রিদান দু'হাতে মোহের গাল স্পর্শ করে মোহের মুখটি উপরে তোলে।কপালে কপাল ঠেকিয়ে একে অপরের চোখের গভীরতা মাপতে ব্যস্ত হয়ে পরে তারা।মোহ,রিদানের চোখে এক মাদকতা দেখতে পারছে।যে মাদকতায় সে নিজেও জরিয়ে পরছে।ধীরে ধীরে তাদের ওষ্ঠদ্বয় একে অপরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে।চোখজোড়া বুঝে নেয় উভয়ই।অবশেষে,দুটি ঠোঁট একে-অপরের সাথে মিশে এক মাদকতায় জরিয়ে নেয় উভয়কেই।

!!
পরিক্ষা শেষ হয়ে ক'মাস পেরিয়ে গেছে।কিন্তু বন্ধুত্ব কি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোহতাজ থাকে?
পরিক্ষা শেষ তো কি হয়েছে!এ আধুনিকতায়,এতো এতো ডিভাইস কি শুধু প্রেম করবার বা টাকা কামাইয়ের জন্যেই ব্যবহৃত হবে?
নাহ!দিহান,অরিন,তুরান,তিশা ও রোশানের বন্ধুত্ব বেশ মজবুতই আছে।তারা,তাদের মাঝে দুরত্ব টা কখনোই বাড়তে দেয়নি আর ভবিষ্যতেও দিবেনা।
এইতো,প্রতিদিনই কথা হয় তাদের।সপ্তাহে একদিন গ্রুপ ভিডিও কলে জমিয়ে আড্ডা দেয় তারা।অবশ্য এদের মাঝে দু'জন লুকিয়ে লুকিয়ে একে অপরকে দেখে নেয় মন ভরে।
এখন আর তিশা,দিহানকে নক দেয় না।ভিডিও কলে অন্যদের সাথে আড্ডা দিলেও তারা উভয় একে অপরের সাথে কোনো কথা বলে না।তীব্র ইচ্ছা দুজনার মাঝে থাকা সত্ত্বেও কেউই মুখে তা প্রকাশ করে না।তিশা করেনা হয়তো তার আত্মসম্মান নতুবা অভিমানের জন্য।আর দিহান করে না তার আত্মগৌরব অথবা অহংকারের জন্য। 

ভিডিও কলে_________

-কার কি প্লান?ফটাফট বলে ফেল?(অরিন)
-এতো তাড়া কেন রে তোর?(তুরান)
-তাড়া থাকতে পারে না?(অরিন)
-তোর তো শুধু একটা জিনিসেরই তাড়া থাকতে পারে।(তুরান)
-আর তা হলো বিয়ের।(বলেই হেসে ওঠে তিশা।সেই সাথে অন্যরাও হাসছে।গম্ভীর মুখ শুধু একজনেরই।সে হলো দিহান।)
-দেখ না দিহাইন্না।কিছু কো ওগো।
-বাদ দে অরিন্না।যারা যেমন তারা অন্যদের ও ওমনই ভাবে।(দিহান)
-তো তোর মনে হয় আমার খুব তাড়া বিয়ের জন্যে?(হাসি হাসি মুখ করে দিহানকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলে তিশা)
দিহানসহ অন্য সাবাই অবাক তিশার মুখে দিহানের জন্য "তুই" ভাষাটা শুনে।
-কি বললা তুমি?(দিহান)
-আরেহ তুই করে বলছি দেখে অবাক হবার কিছু নেই।আমরা সবাই বেস্ট ফ্রেন্ডস সো তুই করে বলাটাই স্বাভাবিক।(তিশা)
তিশার এমন কথায় এক অজানা খারাপ লাগা কাজ করতে আরম্ভ করে দিহানের মাঝে।কিন্তু তাও সে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।অন্য সব ফ্রেন্ডস যেনো বিষ্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছে না কিন্তু তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না তারা।এরপর আরো কিছু সময় কথা বলার পর সবাই বিদায় নেয় একে অপরের থেকে।দিহান ও তিশা উভয়ই নিশ্চুপ ছিলো শেষের দিকে। 
ফোনটি কাটতেই তিশার চোখ দিয়ে আপনা-আপনিই কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।তিশা দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে বলে উঠলো,
"ভালোবাসাটা কি খুব কঠিন?একটু নাহয় চেষ্টা টা  করেই দেখতে,দিহান!"
ওদিকে কলটি কাটবার পর ফোনটি বিছানার ওপর ছুঁড়ে ফেলে দেয় দিহান।জানালার গ্রীল শক্ত করে মুঠো করে ধরে দিহান বলে ওঠে, 
"এতো ঠুনকো তোমার ভালোবাসা? রাগের মাথায় দুটো কথা শুনাবার জন্যে এতোটা দূরত্ব বাড়িয়ে দিলে?তুমি কি সত্যিই ভালোবেসেছিলে আমায়?"

!!
রিদান ও ডাঃফেইজ একটা কফিশপে সামনাসামনি বসে আছে।ডাঃফেইজই ডেকেছে রিদানকে কিন্তু আসবার পর দিয়ে এ নিরাবতা কাটছেই না।ডাঃফেইজ বারংবার কিছু বলবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলতেই পারছেন না।বারবার কোনো এক জড়তার কারণে থেমে যাচ্ছেন তিনি।রিদান হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে ডাঃফেইজ কি বলবেন তাকে তাই সে ওভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।অনেকটা সময়ের এ নিরাবতার অবসান ঘটিয়ে রিদান বলে ওঠে, 
-আঙ্কেল,আমি আপনার ছেলের মতো।আমাকে আপনি নির্দিধায় যেকোনো কিছু বলতে পারেন।
-আসলে রিদান,তুমি আমার থেকে অনেক ছোট।কীভাবে তোমায় কথাটি বলি,বুঝে উঠতে পারছি না।কিন্তু তুমি বেশ বুদ্ধি রাখো সে বিশ্বাসেই তোমাকে এখানে ডাকা।
-ধন্যবাদ।যেহেতু বিশ্বাস করে ডেকেছেন তাহলে নাহয় আরেকটু বিশ্বাস করে কথা টি বলেই ফেলুন।
-জানো তো,প্রতিটি মানুষেরই একটি সঙ্গীর প্রয়োজন হয়।দিন শেষে প্রাণ খুলে দুটি কথা বলবার ইচ্ছে টা সবারই হয়।নির্ঘুম কোনো রাত কাটাতে এক সঙ্গীর প্রয়োজন হয়।জীবনে এমন আরও বহু প্রয়োজন পূরণে একটি মানুষের সঙ্গীর প্রয়োজন হয়।দীর্ঘ ২০ টি বছর একাই জীবনটি কেটে চলছি।বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জিনিসে একটি সঙ্গীর প্রয়োজনবোধ করেছি বেশ ক'বার কিন্তু কোনো যোগ্য মেয়ে খুঁজে পাইনি।দীর্ঘ ২০ বছরেও কোনো মেয়ে আমার হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি।কিন্তু ২০ বছর পর আজ এমন একটি অসময়ে ভালোবাসার মতো জিনিসটি জীবনে আবারও ধরা দিবে তা ভাবিনি।জানি এ বয়স টা আর এ অনুভূতি টার মাঝে আকাশ-পাতালের পার্থক্য।কিন্তু শুধু মাত্র বয়স বাড়ার দোষে নিজের জীবন টাকে অসম্পূর্ণভাবে কাটিয়ে দেওয়া টা কি উচিৎ হবে?
-কখনোই নয়।জীবন একটিই।মরে গেলে এ আর পাওয়া যাবে না।তাই এ একবারেই নিজেদের মন ভরে বাঁচা উচিৎ। কোনো ইচ্ছেই ইচ্ছাকৃত অসম্পূর্ণ রাখা উচিৎ নয়।কেনো সমাজ ও অন্যের জন্য নিজের জীবনে কষ্টকে জায়গা করে দিবো?




চলবে...




Writer:- Mahzabin


NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner