> Mr husband পর্ব ১৩, ১৪ - Romantic story - ভালোবাসার গল্প - Bangla Love Story
-->

Mr husband পর্ব ১৩, ১৪ - Romantic story - ভালোবাসার গল্প - Bangla Love Story

আরুশ এক ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোহনার দিকে।ধিরে ধিরে এগিয়ে গিয়ে সে মোহনার ঠোঁট টি নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়।এদিকে মোহনা গভীর ঘুমে বিভোর।বেশ কিছু সময় পর আরুশ মোহনার থেকে সরে এসে তাকায় মোহনার চেহারার  দিকে।ঘুমের মাঝেও তার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠেছে।এদেখে আলতো হেসে মোহনাকে বুকে জরিয়ে শুয়ে পরে আরুশ।
সকালে কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙে আরুশের।পাশে তাকিয়ে দেখে মোহনা চোখ ঢলতে ঢলতে উঠছে।মোহনাকে উঠতে নিষেধ করে নিজে এগিয়ে যায় দরজার দিকে। দরজা খুলা মাত্র নিজের মা-বাবাকে দেখে আরুশের মুখে আনন্দ ফুটে ওঠে।আরুশ সালাম দিয়ে জরিয়ে ধরে তার মাকে।তারপর বসার রুমে তাদের বসতে দিয়ে আরুশ নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়,মোহনাকে জানানোর উদ্দেশ্যে।ঠিক তখনই আরুশের মা বলে ওঠে,
"বৌমা কোথায়, আরুশ?"
-মা,ও তো ঘুমোচ্ছে।একটু বসো ওকে ডাকছি।(বলে আবারও এগিয়ে যেতে শুরু করে আরুশ নিজের রুমের দিকে) 
-ও এখনো ঘুমোচ্ছে? কি যুগ-জামানা আসছে!!ঘরের বউ রা নাকি বেলা ৯ টা পর্যন্ত ঘুমায়!
কথাটি শুনে বেশ রাগ হয় আরুশের তবে কিছু না বলে সে নিজের রুমে প্রবেশ করে।মোহনা এখনো শুয়ে আছে। আরুশ, মোহনার পাশে বসতেই মোহনা বলে ওঠে,
"কে এসেছে,আরুশ?"
-বাবা আর মা এসেছেন।
আরুশের কথা শোনা মাত্র উঠে বসে মোহনা।ভয় ভয় কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
"তুমি কি আম্মুকে বলেছো, আমি ঘুমোচ্ছি?"
-হ্যাঁ।
-কেনো বললে?জানো না আম্মু এটা অপছন্দ করেন?
-আম্মুর এসব কাজের জন্য মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় তার ওপর।ঘরের বউরা দেরি করে উঠতে পারবে না,স্বামীর আগে খেতে পারবে না, মাথায় ২৪ ঘন্টা কাপর রাখতেই হবে,কারো সামনে নিজের মতামত বক্ত করতে পারবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।এগুলো কেমন কথা?
-আম্মু কিন্তু একেবারে ভুল নয়,তবে সম্পুর্ণ সঠিক ও নন বটে।
-সঠিক টা কি দেখো তুমি এর মাঝে?মাঝে মাঝে মনে হয় মাকে কিছু কঠিন কথা শুনিয়ে দেই।
-ছিঃ আরুশ।কতো জঘন্য তোমার চিন্তা।উনি আমাদের মা,তার সাথে খারাপ ব্যবহার করার অধিকার রাখি না আমরা।
-হু।
-আম্মু সম্পুর্ন ভুল নন কারণ,তাদের সময় সমাজ টা এমনই ছিলো।আম্মুও সারা জীবন এসব নিয়ম মেনে এসেছেন।আমরা তো আমাদের জীবন এবং আমাদের আশেপাশের মানুষের থেকেই সব শিক্ষি,তাই না?আম্মুও এসব নিয়মই শিক্ষা পেয়েছেন।তার কাছে এগুলোই গ্রহণযোগ্য।কিন্তু সময়ের সাথে সমাজে,মানুষের চিন্তায় যে পরিবর্তনগুলো এসেছে তা আম্মু মেনে নিতে পারছেন না।তার কাছে এ পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য নয়।এখন সম্পর্ক বজায় রাখতে মাঝে মাঝে সমঝোতা করতে হয়।আম্মু যেহেতু পারছেন না তাহলে সমঝোতা নাহয় আমরাই করি?
-অবশ্যই।(মোহনার কপালে চুমু দিয়ে বলে আরুশ) 
তারপর মোহনা ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে আর আরুশ বেড গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পরে। 

!!
রিদি ক্লাস শেষে তার এক বান্ধবী নিশির সাথে কথা বলতে বলতেই ভার্সিটি হতে বেরিয়ে আসে।ভার্সিটির গেট হতে খানিকটা দূরে দাড়িয়ে রিদির অপেক্ষা করছে মিহাদ।নিশির সাথে কথা বলার মাঝেই রিদি মিহাদের দেখা পায়।ছেলেটি তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।মিহাদের দিকে তাকিয়ে একটু হাসে রিদি।অতঃপর নিশির সাথে দু-চারটি কথা বলে বিদায় নিয়ে এগিয়ে আসে রিদি, মিহাদের দিকে।
-আসসালামু আলাইকুম। (রিদি)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। (মিহাদ)
-চলুন হেঁটেই নাহয় গল্প করতে করতে আমার বাড়ি অব্দি যাই?(রিদি)
-যাওয়া যায়।তবে তার আগে কোনো এক রেস্টুরেন্টে বসি?
-বিল কে দিবে?
-আমি।
-আপনার টাকায় কেন খাবো আমি?আমাকে কি ফকির মনে হয়?
-আরে না না।আচ্ছা তবে তুমি দিও।
-কেন আপনার বিল আমি কেন দিবো?আমার বাপের টাকা কি গাছে ফলে?
মিহাদ বেচারা বুঝে উঠতে পারছে না জবাবে কি বলবে সে।এমন অদ্ভুত মেয়ে সে জীবনে প্রথম দেখলো।মিহাদের এমন বেচারাওয়ালা লুক দেখে প্রচুর হাসি আসে রিদির।নিজের হাসি দমিয়ে রাখতে না পেরে কিছুটা শব্দ করে হেসে ওঠে সে।রিদির হাসি দেখে মিহাদ বুঝতে পারে রিদি মজা করছিলো তাই সে নিজের বোকামির জন্য মাথা চুলকে নিজেও হেসে দেয়।
-পরে কোনো একদিন নাহয় যাওয়া যাবে রেস্টুরেন্টে। আজ থাক?(রিদি)
-আচ্ছা,তবে তুমি আরো একদিন দেখা করতে চাইছো?
-আরও একদিন কেনো!অনেক দিনই চাইছি।পুরো ১ বছর জ্বালিছেন আমায়,শোধ নিবো না?
উত্তরে হাসে মিহাদ।এভাবেই গল্প করতে করতে রিদির বাড়ি পৌঁছে যায় তারা।
-সরি, ভেতরে আসতে বলতে পারছি না।বাড়িতে মা-বাবা দুজনই আছেন।
-আরেহ ঠিক আছে।একেবারে বিয়ের প্রস্তাব নিয়েই নাহয় বাড়িতে আসবো।(চোখ মেরে বলে মিহাদ) 
উত্তরে কিছু না বলে রিদি বাড়ির ভেতর ঢুকে যায়। তার লুকিয়ে হাসি টা মিহাদের নজরে পরেনি।

!!
সকালে উঠার পর দিয়েই মন টা ভালো নেই মোহের।রাতে ভালো করে ঘুমও পড়েনি সে।অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছিলো রাতে আবার ফজরের সময়ই ঘুম ভেঙে যায় তার।নামাজ পরে বিছানায় শুতেই মোহের চোখ যায় রিদানের দিকে।ছেলেটা ঘুমায়ও কতো সুন্দর করে।একদিনও রিদানকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঘুমোতে দেখেনি মোহ।হটাৎ মোহ, রিদানের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে আলতো করে রিদানের কপালে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলোকে সরিয়ে রিদানের দাড়িতে হাত বুলোতে থাকে।আজ থেকে আগামী ৭ দিন লোকটাকে দেখবে না ভাবতেই মন টা চরম আকারে খারাপ হয়ে যায় মোহের।বেশ কিছু সময় দাড়িতে হাত বুলিয়ে আলতো করে কপালে একটি চুমু দিয়ে রিদানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরে মোহ।রিদানের হৃৎস্পন্দন বেশ ভালো করে শুনতে পারছে সে।এভাবেই বেশ কিছু সময় কাটাবার পর ঘড়িতে ৬ঃ৪৫ বাজতেই এক বিকট শব্দ হতে শুরু করে।এ শব্দ টি একদম সহ্য হয় না মোহের।এ শব্দটি মানেই আতংক। স্কুলে পড়াকালীন পরিক্ষার সময় এ বিকট শব্দেই ঘুম ভাঙতো তার।সকালের সেই প্রেমময় ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিতো এই বিকট আওয়াজটি।আজ আবার মোহের সতিনের রুপ ধারণ করেছে এই বিকট আওয়াজ।কতোই না শান্তি খুজে পাচ্ছিলো সে রিদানের হৃৎস্পন্দন শুনে কিন্তু এই বিকট আওয়াজটির তা সহ্য হলো না।সতিনের মতো মোহের শান্তিটা কেরে নিলো এটি।তাই তো এই আওয়াজ টাকে ঘৃণা করে মোহ।চটজলদি উঠে এলার্ম বন্ধ করে ধিরে ধিরে ডাকতে শুরু করে মোহ,রিদানকে।আজ ইচ্ছেই করছে না ডাকতে।উঠলেই তো চলে যাওয়ার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পরবে।তবুও ডাকতে হবে।ডাকার একপর্যায়ে রিদানের ঘুম ভাঙে তবে সে চোখ না খুলেই মোহকে নিচে শুইয়ে মোহের ওপর উঠে মোহের গলায় মুখ গুঁজে শুয়ে পরে।মোহ তো রিদানের কাজে চরম অবাক।রিদানের গরম নিঃশ্বাস গলায় অনুভব হওয়ায় মোহের মাঝে এক শিহরণ কাজ করা শুরু করে।সে কাঁপা কাঁপা গলায় রিদানকে বলে,
"উঠুন, দেরি হয়ে যাচ্ছে।"
-তুমি এতো জলদি ঘুম থেকে ওঠো কেনো,মোহ!জানো তোমার ঘুমন্ত মুখটি দেখার কতোটা লোভ আমার?(রিদান বেশ অভিমানী স্বরেই কথাটি বলে)
রিদানের কথায় আলতো হাসে মোহ।রিদান, মোহের গলায় ছোট্ট চুমু ও সেই সাথে একটি কামড় দিয়েই উঠে পরে।এদিকে মোহ ব্যথায় "আহহ" শব্দ করে অবাক হয়ে তাকায় রিদানের দিকে।রিদান বাঁকা হেসে বলে,
"এটি ঘুম থেকে জলদি উঠার শাস্তি"
কথাটি বলে আর অপেক্ষা না করে পা বারায় ওয়াশরুমের দিকে।এদিকে মোহ গলায় হাত ঢলতে ঢলতে বলে,"এর পাল্টা জবাব নিশ্চয়ই পাবেন,মিঃ হাসবেন্ড"।অতঃপর মোহ এগিয়ে যায় রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে।কফির জন্য দুধ চুলোয় বসিয়ে আবারও রুমে ফিরে আসে।ততক্ষণে রিদান ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে।শাওয়ার নেয়নি।মোহ ও ওয়াশরুম খালি পেয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখে রিদান বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। মোহ চটজলদি চলে যায় কফি বানাতে। কফি নিয়ে রুমে এসে দেখে রিদান গোসল করতে ওয়াশরুমে ঢুকেছে।মোহ কফিটি ঢেকে রেখে রিদানের জন্য ড্রেস  সিলেক্ট করে বের করে বিছানার উপর রেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। বেশ কিছু সময় পর রিদান ডেকে ওঠে তাকে।রিদানের ডাকে সাড়া দিয়ে রুমে প্রবেশ করে দেখে রিদান শার্টের বোতাম না লাগিয়ে কফি পান করছে।মোহ বেশ বুঝতে পারছে বোতাম গুলো তার জন্যেই খুলে রাখা হয়েছে।তাই সে এগিয়ে গিয়ে বোতাম গুলো লাগিয়ে দিতে আরম্ভ করে। এদিকে রিদান কফি পানের মাঝেই মোহকে দেখে চলছে।মেয়েটির মন ভালো নেই তা বেশ বুঝতে পারছে সে।তারও ভালো লাগছে না যেতে। কিন্তু কাজে তো অবহেলা কাম্য নয়।বোতামগুলো লাগানো শেষে মোহ তাকায় রিদানের দিকে। রিদানও তাকিয়ে আছে তার দিকে।মোহ সরে যেতে চাইলে রিদান তার কোমর জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলে ওঠে, 
"খেয়াল রেখো।পৌঁছে জানাবো।আর হয়তো কাজের চাপে বেশ একটা কল দিতে পারবো না।মন খারাপ করবে না।"
-জ্বি।নিজের খেয়াল রাখবেন।
মোহ রিদানের দিকে তাকিয়েই কথাটি বলে। রিদান আলতো হেসে জরিয়ে ধরে মোহকে।বেশ কিছু সময় এভাবে পার করার পর মোহ-রিদান খাবার টেবিলে উপস্থিত হয়।সবাই একই সাথে সকালের নাস্তা সাড়ে।অতঃপর রিদান ও রিয়াদ সাহেব বিদায় নিয়ে রওয়ানা হয় নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে। 

!!
পরন্ত বিকেল। কিছু সময়ের মাঝেই সন্ধ্যে নামবে।মোহ ছাঁদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে।ফোনটি এতোদিন অবহেলিত কোনো এক জায়গায় পড়ে থাকতো।তবে রিদান রওয়ানা হওয়ার পর থেকেই যেনো ফোনটি বেশ মূল্যবান বস্তুতে রুপান্তরিত হয়েছে।মোহ ফোনটি একমুহূর্তের জন্যও নিজের থেকে আলাদা করছে না। সেই সকাল থেকে এই পর্যন্ত একটু পর পরই ফোনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে মোহ।কিন্তু রিদানের একটিও কল/মেসেজ আসেনি। ছেলেটি ঠিকভাবে পৌঁছেছে কিনা তা নিয়ে বেশ চিন্তে হচ্ছে মোহের।বাতাসে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সন্ধ্যে নামার আগ মুহূর্তের পরিবেশ টা উপভোগ করতে আরম্ভ করে মোহ।বেশ কিছু সময় পর হটাৎ ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে।মোহ ভাবে হয়তো রিদান কল করেছে।উৎসাহ নিয়ে বেশ তরিঘরি করে ফোনটির দিকে তাকাতেই মোহের মনটি কালো মেঘে ছেয়ে যায়।কোনো একটি আননোন নাম্বার হতে কল এসেছে।তাই নিজের সব উৎসাহ হারিয়ে ফেলে মন খারাপ করেই কলটি রিসিভ করে। 
-আসসালামু আলাইকুম।কে বলছেন?(মোহ)
-এখনো নাম্বারটি সেভ করিস নাই?
-জেইন!সরি দোস্ত। ব্যস্ততায় ভুলে গিয়েছিলাম।
-কি এতো ব্যস্ততা?
-তেমন কিছু না।ভর্তি পরিক্ষার জন্য পড়তে হচ্ছে।সেই সাথে নতুন একটি সম্পর্কে জরিয়েছি। 
-হুম।নতুন সম্পর্কের জন্য পুরনো সম্পর্কগুলো অবহেলা করতে হয় না। 
-অবশ্যই।আচ্ছা বল,কেমন আছিস?
-আছি।দেখা করতে পারবি?
-উনি তো কিছু দিনের জন্য বাইরে গিয়েছেন।উনি আসলে নাহয় দেখা করি?
-তোর কাছে এখন রিদানই সব?আমি কিছুই না?
-উফ!কবে দেখা করতে চাইছিস?
-কাল।
-আচ্ছা দেখি।
-দেখাদেখির কিছু নেই।তোর কাল আসতেই হবে।
-আচ্ছা আচ্ছা।
ফোনটি রেখে মোহ ছাঁদ থেকে নেমে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়।মাগরিবের আযানের পর নামাজ পড়ে মোহ পড়তে বসে যায়।রিদান না থাকায় তার একটি দিনই যেন ১০০ দিনের সমান মনে হচ্ছে। গত কাল এ সময়টি রিদান ওর সাথেই ছিলো।মোহ পরছিলো আর রিদান তার পাশেই বসে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে মোহের সাথে বিভিন্ন দুষ্টুমি করে যাচ্ছিলো।প্রতিদিন মোহ যখন সন্ধ্যায় পড়তে বসতো তখন মোহ কিছু না বুঝলে রিদান তা বুঝিয়ে দিতো আবার পড়াও ধরতো।এসব মনে পড়ায় মোহের আর পড়তে ইচ্ছে হলো না।সে এগিয়ে গেলো তার শাশুড়ীর রুমের দিকে খানিকটা সময় গল্প করার উদ্দেশ্যে। 
 

"একটু যদি তাকাও তুমি
মেঘগুলো হয় সোনা,
আকাশ খুলে বসে আছি
তাও কেন দেখছো না?
.
একই আকাশ মাথার উপর
এক কেন ভাবছো না?
আকাশ খুলে বসে আছি
তাও কেন দেখছো না?
.
আসবে বলে ঐ যে দেখো
মেঘেরা দাঁড়িয়ে,
আকাশটাকে দেখি চলো
মেঘটাকে তাড়িয়ে!
.
মেঘের মতো হাটবো দুজন
হাত কেন রাখছো না?
আকাশ খুলে বসে আছি,
তাও কেন দেখছো না?"
.
বারান্দায় যেখানে শীতল বাতাস গুলো শরীর জুড়িয়ে দিচ্ছে সেখানে গানটি মন ছুঁয়ে দিচ্ছে। রাত ১০ টা বাজতে খানিকটা সময় বাকি।রাতের খাবার টা শেষ করে একাকিত্বতা উপভোগ করতেই মোহ বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।হটাৎ এ গানটি মনে পড়তেই তা চালু করে শোনায় মনোযোগ নিবেশ করে মোহ।এ গানটি যেনো তার মনের হালই বক্ত করছে।
গানটি শেষ হতেই মোহের ফোনে একটি মেসেজ আসে। 

"পৌঁছেছি বিকেল ৫ টায়।সরি এসে ফ্রেশ হয়েই একটি মিটিং এ উপস্থিত হতে হয়েছিলো।ওখান দিয়ে এলাম সবে।তাই জানানোর সময় পাইনি।প্রচুর টায়ার্ড,কথা বলার এনার্জি নেই। অনেক সরি!!"___(মিঃ হাসবেন্ড) 

সেই সকাল দিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণে রাত ১০ টায় এ মেসেজ টি পেয়েছে মোহ।কত্তো আনরোম্যান্টিক হলে মানুষ এমন মেসেজ দেয়,ভেবে পায় না মোহ।মেজাজ টা এতো টাই খারাপ হয়েছে তার যে মেসেজের কোনো রিপ্লাই দিতে বিন্দু পরিমান ইচ্ছে হলো না।আবারও গান ছেড়ে তাতে মনোযোগ দেয় মোহ। 

!!
সকাল সকাল দিহান উপস্থিত হয়েছে তিশার বাসার সামনে।গেটের সামনে দাঁড়িয়ে তিশাকে একটি মেসেজ করলো,
"বাসার বাইরে আছি।জলদি এসো।"
মেসেজটি পেয়ে তিশা নিজেকে যথেষ্ট শক্ত করে ধিরে ধিরে এগিয়ে যায় গেটের দিকে।আগে দিয়ে ভার্সিটি যাবার জন্য রেডি হয়ে ছিলো তিশা।কিন্তু নানান ভয় এসে জড়ো হচ্ছে তিশার মনে।হাত-পা কাঁপছে তার। না জানি বাইরে কি অপেক্ষা করছে তার জন্যে।কাঁপা কাঁপা হাতে গেট খুলতেই তিশা,দিহানকে দেখতে পায়।দিহান কে দেখেই যেনো ভয় গুলো বিদায় নিতে শুরু করে তিশার মন হতে।  এই ছেলেটার মাঝে কি আছে তা বুঝে ওঠে না তিশা কিন্তু দিহানের মাঝে ভরসা খুঁজে পায় সে।যার ফলে তার হাত কাঁপাটা থেমে যায়।তবুও মনে একটু একটু ভয়টা ঠিকি আছে।দিহান তিশাকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দেয়।দিহানের সেই মুচকি হাসি আর চাহনি যেন তিশাকে বলছে,
"আমি আছি তোমার সাথে।"
আর দিহানের বাড়িয়ে দেওয়া হাতটি যেনো বলছে,
"হাতটা শক্ত করে ধরো।যাই হোক,যতোটাই খারাপ হোক একসাথে মোকাবেলা করবো।"
তিশা চটজলদি দিহানে হাতটি শক্ত করে ধরে নেয়।হাতটি ধরার সাথে সাথেই তিশা নিজের মাঝে এক অদ্ভুত সাহস অনুভব করে।যেনো দিহান সাথে থাকলে সে যেকোনো পরিস্থিতিতে সুরক্ষিত থাকবে। দিহান তিশার হাত ধরে সামনের দিকে পা বাড়াতেই এক বাধা অনুভব করে। পিছনে তাকিয়ে দেখে তিশা চোখ বুজে দাঁড়িয়ে আছে। দিহান তিশার কাছে যেয়ে বলে,
"ভয় পেয়ো না তিশা।তোমার, আমি আছি তো।"
এ কথাটিই যথেষ্ট ছিলো, তিশার সব ভয়কে একেবারে শেষ করবার জন্যে। তিশা চোখ খুলে তাকায় দিহানের দিকে।তারপর একটি মুচকি হাসি দিয়ে দিহানের হাতটি ধরে হাঁটা শুরু করে। 
রাস্তায় এসে দাঁড়াতেই মহল্লার মানুষগুলো কেমন যেনো আড় চোখে দেখছিলো তিশাকে।সেই সাথে তিশার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে একজন আরেক জনের সাথে ফিসফিসিয়ে কিছু বলাবলি করছিলো।তিশার খুব খারাপ লাগতে শুরু করে।তবুও সে তার মাঝের সাহসিকতা ধরে রাখছে, শুধু মাত্র দিহানের জন্য। হটাৎ করেই তিশার কানে আসে, 
"আরে,এটা সেই মেয়েটা না,যে কিছুদিন আগে উসকোখুসকো চুল,ছেঁড়া জামা নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলো?"
"হ্যাঁ,শুনেছি মেয়েটির ওরনা টাও গায়ে ছিলো না।সেই সাথে হাতে নাকি কারো ৫ আঙুলের দাগ ও ছিলো"
"ছিঃ ছিঃ!!এ মেয়ে তো নষ্টা।"
"কার না কার কাছে নিজের ইজ্জত হারিয়েছে, কে জানে।"
"এসব মেয়েদের এমনই হয়।বাপ-মা বেশি স্বাধীনতা দিলে যা হয় আরকি!"
"এমন চরিত্রহীন,নষ্টা মেয়ে এ মহল্লায় থাকলে তো আমাদের মেয়েগুলোরই বিপদ।"
"আরেহ!দেইখেন কিছু দিনের মাঝেই এই নষ্টা মেয়েরে সতি সাজায়ে কোনো এক পোলার ঘাড়ে চাপায়ে দিবেনে।"
এসব কথা শুনে তিশা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।এতোক্ষণ ধরে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সবটা শুনছিলো তিশা।কিন্তু আর পারছে না সে।দিহানের থেকে নিজের হাতটি ছাড়িয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই হাতে টান অনুভব করে।দিহান, তিশার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে এনে রাস্তায় উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
"ধর্ষণ হওয়া মানেই মেয়েটি নষ্টা?দুশ্চরিত্রা?আচ্ছা,কোনো মেয়ে কি নিজ ইচ্ছায় নিজের দেহকে ওই সব জানোয়ারদের কাছে বিলিয়ে দেয়?যখন তার ধর্ষণ হয়,তখন মেয়েটি কি সেসব উপভোগ করে?নাকি নিজেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে?এখন বলবেন মেয়েদের পোশাকে সমস্যা থাকে তাই জন্যেই তার ধর্ষণ হয়।তিশা তো এই মহল্লারই মেয়ে,কেউ না কেউ নিশ্চয়ই চেনেন ওকে।ওকে নিশ্চয়ই দেখেছেন,সব সময় ফুলহাতা ঢিলেঢালা পোশাক পড়তে!ও কি ওরনাকে ফ্যাশনের মতো ব্যবহার করেছে কখনো? নাহ করেনি।যথেষ্ট শালীন ও।আর না জেনেই শুধু ধারণার উপর ভিত্তি করে কতোটি কথা শুনিয়ে দিলেন!আপনাদের মাঝে কেউ কি দেখেছে তিশাকে ধর্ষণ হতে?একজন মেয়ে হয়ে অপর একজন মেয়েকে শুধুমাত্র ধারণার ওপর ভিত্তি করে অপমান করতে বিবেকে বাঁধেনা?পরিশেষে বলতে চাই তিশা ধর্ষিত নয়,ওর ধর্ষণ হয়নি।"
কথাটি শেষ করে আর একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে তিশাকে নিয়ে একটি রিকশায় উঠে পরে দিহান।আর তিশা! সে তো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দিহানকে দেখে চলছে।তিশা মনে মনে ভাবছে, সে কোনো ভুল মানুষের ওপর ভরসা করেনি বরং এমন একজনকেই ভরসা করেছে যে এটার যোগ্য। দিহান যেমন তিশার হাতটি ধরে কথা দিয়েছিলো,তেমনই কথাটি রাখার সময় আসতেই ঠিক নিজের কথাটি রেখেছে।তিশা হুট করে বলে ওঠে,
"তুমি আমার বিশ্বাস,ভরসা,সাহস,অনুপ্রেরণার আরেক নাম দিহান।"
হুট করে তিশার এমন কথায় চমকে যায় দিহান।উত্তরে কি বলা উচিৎ তার জানা নেই।তাই উত্তরে কিছু বলে না দিহান।সে নিজে এখনো বুঝে উঠতে পারেনি সে তিশাকে ভালোবাসে কিনা!!বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো দিহান,তার কাজগুলো কি তিশার মনে আশা সৃষ্টি করছে?কিন্তু সে তো ফ্রেন্ড হিসেবেই তিশার সাহায্য করছে।কি করা উচিৎ এখন তার!না সে এখন তিশাকে একা ছাড়তে পারছে আর না সে তিশাকে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছে।

!!
সকালের রোদ মুখে এসে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় মোহের।আধো আধো চোখ খুলে আবারও চোখ বুজে নেয় সে।চোখ বন্ধ করতেই রিদানের বলা সেই কথাটি আবারও প্রতিধ্বনিত হয় তার কানে। 
"তুমি এতো জলদি ঘুম দিয়ে ওঠো কেনো,মোহ!জানো তোমার ঘুমন্ত মুখটি দেখার কতোটা লোভ আমার?"
কথাটি নিজের কানে প্রতিধ্বনিত হতেই মোহের ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।একটু একটু করে চোখ মেলে রিদানের জায়গাটায় তাকায়।জায়গা খালি পড়ে আছে।আবারও মনটি খারাপ হয়ে যায় মোহের।হটাৎ মনে পড়ে কালে রাতের রিদানের দেওয়া সে মেসেজটির কথা।একটি কলের জন্য কতোই না অপেক্ষা করে ছিলো সে।রিদান কি পারতো না দু মিনিটের জন্য হলেও একটি কল দিতে।মোহের মনে অভিমানরা বাসা বাধতে শুরু করে দিয়েছে।ছেলেটা ওর একটুও কেয়ার করে না।মোহ তার ফোন টি হাতে নিয়ে রিদানের দেওয়া সে মেসেজটি আবারও পড়ে।হটাৎ মোহের মনে পড়ে যখন সে ঢাকা দিয়ে তার মামার বাড়ি যায় তখন পৌঁছতে প্রায় ৫/৬ ঘন্টা লেগে যায়। পৌঁছানোর পর মোহের একটুও এনার্জি থাকতো না।বাসায় যেয়েই ঘুমিয়ে পরতো ক্লান্ত হওয়ায়।রিদান ও তো বেশ কয়েক ঘন্টা জার্নি করেই ওখানে পৌঁছেছে।তারপর একটু রেস্ট না করেই কোনো এক মিটিং এর জন্য বেরিয়ে পড়েছিলো।তাহলে রাত ১০ টায় যে তার শরীরে বিন্দু পরিমাণ এনার্জি থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।এমনি ভাবতেই মোহের খারাপ লাগা শুরু হয়।সে অকারণেই তার মিঃ হাসবেন্ডের ওপর রেগে ছিলো।কাল রাতে তার উচিৎ ছিলো একটি মেসেজ দিয়ে রিদানের শরীর টা কেমন,খেয়েছে কিনা তা জেনে নেওয়া।এসব ভাবতে ভাবতেই ফোন বেজে ওঠে মোহের।ফোনটি হাতে নিয়ে দেখে রিদান কল দিয়েছে।
-আসসালামু আলাইকুম।(মোহ)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম,বেগম সাহেবা!উঠেছেন?
-নাহ।
-এটা কেমন কথা মোহ।আজ আমি নেই আজই তুমি লেট করে ঘুম দিয়ে উঠলে?
একটু হাসে মোহ। তারপর বলে ওঠে, 
-ঘুম ভেঙেছে অনেকটা সময় হলো কিন্তু বিছানা দিয়ে উঠতে ইচ্ছে হচ্ছে না। 
-আচ্ছা,আমি থাকতে তো ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই বিছানা দিয়ে গায়েব হয়ে যেতা!
-আপনি উঠে পরলে আমাদের দুজনের মাঝে যেকোনো একজনের ফ্রেশ হতে দেরি হয়ে যায় তাই আমি আগে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিই।
-এটা না করে দুজন একসাথে ফ্রেশ হলেই তো হয়!
উত্তরে কিছু বলে না মোহ।মোহের কোনো সাড়া না পেয়ে রিদান বলে ওঠে, 
-তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো?ইসস!তোমার লজ্জায় লাল হওয়া মুখটা একদম যেনো আপেল। খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়। 
এবার শব্দ করে হেসে ওঠে মোহ।হাসতে হাসতেই বলে ওঠে, 
-আপেলের কালার তো লাল নয়।
-তাহলে স্ট্রবেরি।
-না আপেল না স্ট্রবেরি।এটা মোহ।
-আর মোহ টা আমার।
কথাটি শুনে মোহের মাঝে এক ভালোলাগা কাজ করে।ঠোঁটে ফুটে ওঠে এক লজ্জা মাখা হাসি।
-কেমন আছেন?নিজের খেয়াল রাখছেন তো?
-তুমি যেমন আছো ঠিক তেমনই আছি।আমার খেয়াল টা নাহয় তোমার কাছে আসার পর তুমিই রেখো।
-জ্বি অবশ্যই।এখন যেহেতু আমি ওখানে উপস্থিত নেই তাই আমার হাসবেন্ডের খেয়াল রাখার দ্বায়িত্ব টা আপনায় দিলাম।
-যো হুকুম, বেগম সাহেবা।
উত্তরে একটু শব্দ করে হাসে মোহ।
-আচ্ছা,এখন রাখছি।কাজ আছে একটু।খেয়াল রেখো।আল্লাহ হাফেজ।(রিদান)
-যে দ্বায়িত্ব দিলাম তা অবশ্যই পালন করবেন।আল্লাহ হাফেজ। 
ফোনটা রেখে আলতো হেসে কাজে মনোযোগ দেয় রিদান।

!!
ভার্সিটিতে পৌঁছাতেই তিশার ফ্রেন্ডস রা এতো দিন পর তিশাকে দেখে দৌড়ে আসে তিশার কাছে।তারা তিশার সাথে ঘটা কোনোকিছুই জানে না।তাই তারা নানান প্রশ্নের ঝুলি খুলে বসে।এসব প্রশ্নে তিশা বুঝে উঠতে পারছিলো না কি উত্তর দিবে।তাই মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো তিশা।সব ফ্রেন্ডস রা তিশার এমন ব্যবহারে অবাক।কারণ তিশা খুব দুষ্টু  আর চঞ্চল স্বভাবের।এমন চুপচাপভাব টা তিশার কাছ থেকে কেউই মেনে নিতে পারছে না।দিহান সবার বিস্ময়মাখা চেহারার পেছনের কারণটি বেশ বুঝতে পারছে।তাই দিহান বলে ওঠে,
"তোরা সবটা পরেও জানতে পারবি।বেচারি এতো দিন পর এসেছে,ট্রিট দিবি না?"
পরিস্থিতি টা স্বাভাবিক করতেই কথাটি বলে দিহান।দিহানের কথায় বাকি ফ্রেন্ডস রাও সায় দেয়। তারা কিছুটা বুঝতে পেরে আর কোনো প্রশ্ন না করে তিশাকে নিয়ে ক্যান্টিনে যায়।




চলবে...




Writer:- Mahzabin



NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner