> Mr husband পর্ব ১৫, ১৬ - Romantic story - ভালোবাসার গল্প - Bangla Love Story
-->

Mr husband পর্ব ১৫, ১৬ - Romantic story - ভালোবাসার গল্প - Bangla Love Story

রান্নায় ব্যস্ত মোহনা।হটাৎ নিজের কোমরে কারো শীতল স্পর্শ পায় সে।শীতল সে হাতের স্পর্শটি কোমর হতে পেট অব্দি এসে থামে।সেই সাথে ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করছে সে।আরুশ, মোহনার ঘাড়ে মুখ রাখতেই তার দাড়ি গুলো মোহনার কাঁধে বিঁধে যাতে মোহনার পুরো শরীরে শিহরণ বয়ে যায়।মোহনা নিজেকে সামলে বলে ওঠে,
-ঢং এর রোম্যান্স রাখো তো।যাও গিয়ে শশা টা কাটো।
-এ জন্যেই করল্লা পছন্দ করা মেয়েদের বিয়ে করতে হয়না!
মোহনাকে ছেড়ে কথাটি বলতে বলতে কাজ আরম্ভ করে আরুশ। আর এদিকে আরুশের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বেচারার স্যাড বেবিওয়ালা লুক দেখে আর কথায় লুকিয়ে হাসতে থাকে মোহনা।
মোহনা নিজের হাতের কাজটি শেষ করতেই দেখে আরুশ সালাদ তৈরি করছে।বেচারা এখনো মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছে।এ দেখে মোহনা ঠোঁট চেপে একটু হেঁসে আরুশের কাছে যায়।আরুশের কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে।মোহনা আরুশের একদম কাছে যেয়ে নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে আরুশের ঘাম মুছে দিয়ে আলতো হেসে জরিয়ে ধরে আরুশকে।আরুশ ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে ভদ্র ছেলের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে তার বউ এর কাজ দেখছে।সেই সাথে সেও মোহনাকে আবদ্ধ করে নেয় নিজের বাহুডোরে।এভাবে কিছু সময় পাড় করার পর মোহনা বলে ওঠে, 
"ভালোবাসি,কাজের বেটা।"
-কাজের বেটা?
-হ্যাঁ।
-মানে আমি কাজের ছেলে?
-হ্যাঁ।তুমি ছেলে,সেই সাথে অনেক কাজেরও তাই কাজের ছেলে।
বলেই ঠোঁট চেপে হাসে মোহনা।
-আচ্ছা!!
বলেই আরুশ মোহনার গলায় কামড় বসিয়ে দেয়। 
-আহহ!!রাক্ষস একটা।
-ঠিক। (বলেই চোখ মারে আরুশ) 
এমন সময় মোহনার শাশুড়ী চেচিয়ে ওঠেন।
"বৌমা,আজ কি দুপুরের খাবার টা কপালে আছে নাকি উপোস থাকতে হবে?"
সাথে সাথে মোহনা আরুশের থেকে দূরে সরে তারাহুরো করে কাজ করতে আরম্ভ করে। আরুশ ও সাহায্য করছে মোহনাকে।বেশ কিছু সময় পর মোহনার শাশুড়ী রান্নাঘরে এসে নিজের ছেলেকে কাজ করতে দেখে বলে ওঠেন,
"ছিঃ ছিঃ!!কি বেশরম মেয়ে,নিজের স্বামীরে খাটাইতে লজ্জা করে না?সামান্য একটা রান্নার কাজও হয়না তোমার দ্বারা?এতেও বর লাগে?"
আরুশ কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাবে ওমনি মোহনা থামিয়ে দিয়ে বলে,
"ভুল হয়ে গিয়েছে আম্মু।উনাকে রান্নাঘরে আসতে দেওয়া উচিৎ ছিলো না।এরপর থেকে এ ভুল আর হবে না।"
"হুম।আর কতক্ষন লাগবে?"
-হয়ে গিয়েছে। বসেন, এখনি আনছি টেবিলে।
-হু।(বলেই প্রস্থান করেন আরুশের মা)
-তুমি মার কোনো কথার প্রতিবাদ কেনো করো না মোহনা?
-মায়ের সাথে আবার কিসের প্রতিবাদ?দেখো এখন আমি যদি নিজের পক্ষে কিছু বলতাম তবে মা হয়তো কথায় কষ্ট পেতেন।এ বিষয়টি তার মনে গেঁথে যেতো।আর কথায় কথা বাড়ে।আমি প্রতিবাদ করলে এইযে পরিস্থিতি যে শান্ত দেখছো এমন টা থাকতো না বরং ঘর টা একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতো।যেখানে শাশুড়ী ও ছেলের বউ একে অপরকে কথার মাধ্যমে প্রহার করতো।
-আমার শাশুড়ী নিশ্চয়ই একজম আদর্শ মা।তাই তো এমন মহৎ চিন্তার অধিকারী তুমি।
-আমার শাশুড়ী ও অনেক ভালো,শুধু একটু রাগী। 
-হুম, চলো জলদি।তোমার রাগী শাশুড়ী বারও নিজের সে কেলে রেডিও চালু করে দিবেন।
আরুশের কথায় একটু হেসে কাজে লেগে যায় মোহনা।

!!
দুপুরের খাবার টা শেষ করতেই জেইনের কল পায় মোহ।কলটি রিসিভ করতেই জেইন বলে ওঠে,
-বিকেল ৫ টায় Rainbow coffee shop টায় চলে আসবি। 
-তুই কি একাই আসবি?
-উহু!Have a surprise for you bebz.
-Are you going to introduce me with your girlfriend?
-Won’t tell you right now.Come then you will see!
-Okay.Let me inform Ridan about this.I know he will not deny.
-As your wish.But you will meet me today at any cost!
-fine!
কল টা কেটেই মোহ রিদানকে কল দেওয়া স্টার্ট করে।২ বার কল দেওয়ার পরও কল রিসিভ করে না রিদান।হয়তো ব্যস্ত আছে ভেবে মোহ ও আর কল দেয় না।ফোনটি হাতে নিয়ে রিদানের কলের অপেক্ষা করতে থাকে।আধা ঘন্টা পাড় হবার পরও রিদানের কল না পেয়ে টেনশনে পড়ে যায় মোহ।৫ টা বাজতে আর ১ ঘন্টা অবশিষ্ট আছে।এখন দিয়ে প্রস্তুতি না নিলে ওখানে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে।একটু ভেবে মোহ পা বারায় তার শাশুড়ীর রুমের দিকে। 
-আম্মু!আসবো?
-আয় আয়।কিছু বলবি?
-হ্যাঁ মা আসলে,আপনি যদি অনুমতি দেন তবে বিকেল ৫ টায় আমি একটু বাইরে যেতাম!
-সে যা।এতে আর অনুমতির কি আছে!তা কাজ টা কি?তোর শশুর সাথে গেলে ভালো হবে কি?
-না মা,আসলে আমার এক বন্ধু দেখা করতে চাইছিলো তাই জন্যে।
-কোথায় যাবি?
-Rainbow coffee shop
-আচ্ছা যা।তবে মাগরিবের আগে ফিরে আসবি।
-আচ্ছা। 
বলেই মোহ তার শাশুড়ীর কক্ষ ত্যাগ করে এগিয়ে যায় নিজ কক্ষের উদ্দেশ্যে।
৫ টার মাঝেই মোহ পৌঁছে যায় সেখানে।শপের ভেতরে ঢুকতেই চমকে যায় সে।তার দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড বসে আছে তার অপেক্ষায়।মোহের দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড।একজন জেইন আর আরেকজন আলবি।আলবি মোহকে দেখা মাত্র দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে মোহকে।মোহ ও শক্ত করে জরিয়ে ধরে তার বান্ধবীকে।জেইন ও উঠে আসে ওদের কাছে।
-আরে লেসবু দুইটা।আর কতো রোম্যান্স করবি পাবলিক প্লেসে।সবাইকে জানাতে চাইছিস যে তোরা লেসবিয়ান? 
-থাপরাইয়া কান ফাটায়ে দিমু। (আলবি)
-নিজে তো গে, আসছে আমাদের বলতে।
-আমি গে না গো বাছা!প্রমাণ দেখিতে চাও?
জেইনের কথায় মোহ আর আলবি একে অপরের সাথে চোখাচোখি করে বলে,
"দেখা"
-আগে একটু বসি?সবাইরে তো লেসবু ফিল্ম দেখাইছিস।আরো দেখানো বাকি আছে?
জেইনের কথাটা শেষ হতেই মোহ আর আলবি মারতে শুরু করে তাকে।অতঃপর তিনজনই যেয়ে বসে পড়ে। 
-জলদি দেখা।(আলবি)
-হ্যাঁ জলদি।(মোহ)
-ওয়েট।বলেই জেইন নিজের ফোনে একজনের ছবি বের করে আলবি ও মোহকে দেখায়।
-ওর নাম সুমিয়া।
-বাহ!দারুণ দেখতে।(মোহ)
আলতো হাসে জেইন অতঃপর ফোনটি পকেটে রেখে দেয়।
-তা কেমনে কেমনে?(মোহ)
-জানিস না আমি অনেক হ্যান্ডসাম।মেয়ে রা দেখলেই পটে যায়!!সুমিয়াও পটে গিয়েছিলো তারপর ও ই আমাকে পটায়।
-মেয়েদের পছন্দ এতো টাও খারাপ না।কি বলিস আলবি?(মোহ)
-হু।(আলবি)
-জলদি বল সত্যি কাহিনি টা কি?(মোহ)
-আসলে আমাদের পরিচয় টা হয় একজন আরেকজনের সাহায্য করে।ভাগ্যক্রমে বারে বারে আমরা এমন পরিস্থিতিতে পরি যে একজনের আরেকজনের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। আর সবসময়ই আমরা উভয়ই উভয়ের সাহায্য করি।এভাবেই ধিরে ধিরে!! 
-ওওওওহো।
এভাবেই তিনজনে জমিয়ে আড্ডা দিতে শুরু করে।কিন্তু আলবি একটু চুপচাপই ছিলো।

!!
রিদান প্রায় ৫ বার কল দিয়েছে মোহকে।কিন্তু মেয়েটি কল রিসিভই করছে না।রিদাম না পেরে তার মাকে কল দেয়।রিদানের মা জানান মোহ তার কোনো এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছে। বেশ খারাপ লাগে রিদানের।বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছে ভালো কথা কিন্তু কল টা তো রিসিভ করাই যেতো।এতো কি বিজি যে কলটা রিসিভ করার সময়টি পাচ্ছে না।সেই সাথে একটু জানিয়েও গেলো না মোহ তাকে।এসব ভেবে অনেকটা খারাপ লাগে রিদানের।সন্ধ্যে ৭ টা বাজতে চললো মোহ বাসায় পৌঁছেছে কি না তা নিয়েও চিন্তে হচ্ছে রিদানের।সে ফোনটি হাতে নিয়ে মোহকে আবারও কল দেয় কিন্তু এবারও মোহ ফোন ধরে না।তাই রিদান আবারও তার মাকে কল দেয়।
-মা,মোহ বাসায় পৌঁছেছে?
-হ্যাঁ,রুমেই আছে।
-ওহ,আচ্ছা।তোমায় পরে কল দিবো,রাখছি।
ফোনটি কেটে রিদানের খারাপ লাগাটা আরও বেরে যায়।মোহ নিজের রুমে আছে তবুও তার কলটি রিসিভ করলো না।অন্তত বাসায় এসে তো রিদানকে একটি কল করা উচিৎ ছিলো।
.
মোহ ফ্রেশ হয়ে বেরোলো ওয়াশরুম থেকে।আয়নার সামনে দাঁড়াতেই তার রিদানের কথা মনে পড়লো।ছেলেটি থাকলে হয়তো তাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরতো। সাথে সাথেই ফোনটি খুঁজে হাতে নিয়ে দেখে রিদানের ৬ টি মিসড কল।মোহের চরম খারাপ লাগতে শুরু হয়।তারাহুরোর মাঝে ফোনটি সাথে নিতে ভুলে গিয়েছিলো সে।সাথে সাথেই কল দেয় রিদানকে।কিন্তু রিদানের ফোন বন্ধ।মন টা খারাপ হয়ে যায় মোহের।
 

"আমায় ভাসাইলি রে, আমায় ডুবাইলি রে
অকুল দরিয়ার বুঝি কূল নাই রে।।

কুল নাই সীমা নাই অথৈ দরিয়ার পানি
দিবসে নিশিথে ডাকে দিয়া হাতছানি রে
অকুল দরিয়ার বুঝি কূল নাই রে।।

পানসা জলে সাঁই ভাসায়ে সাগরেরও বানে ।।
আমি জীবনের ভেলা ভাসাইলাম।
কেউ না তা জানে রে।।
অকুল দরিয়ার বুঝি কূল নাই রে।।
আমায় ডুবাইলি রে
আমায় ভাসাইলি রে"
দিহানের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গানটি গাইছে তিশা।
ক্যান্টিনে তারা সব বন্ধুরা বসে গ্রুপ স্টাডি করছিলো।এর মাঝেই হটাৎ রোশান জোর করে তিশাকে একটি গান শোনাতে।এতে সবাই সায় দেয়। কারণ পড়ার মাঝে বিনোদন টা উপকারী।তিশাও আর না করলো না।দিহানের দিকে তাকিয়েই গানটি শুরু করে আর শেষ টাও দিহানের দিকে তাকিয়েই হয়।গানটি শেষ হতেই সবাই তিশার সুনামে পঞ্চমুখ।কিন্তু দিহান কিছুই বলে না।পুরো গানের মাঝে সে এক দু বার তিশার দিকে তাকিয়েছিলো।হটাৎ তিশা, দিহানকে উদ্দেশ্য করে বলে, 
-সবাই সুনাম করছে কিন্তু তুমি তো কিছুই বললে না, দিহান!
-হ্যাঁ রে তুই ও কিছু বল।(অরিন)
-কিরে বই এ মুখ গুঁজে আছিস কেন,বল তিশাকে কত্তো সুন্দর গান গায় ও।(তুরান)
-এতো বলাবলির কি আছে?হয়তো সুন্দর গায় কিন্তু আমার তেমন ভালো লাগেনি।(খুবই সুন্দর গাও তুমি তিশা।মনে মনে)
সবাই দিহানের বিরোধিতা করলেও তিশা কিছুই বলেনি।চোখ ছলছল করছিলো তার কিন্তু সবার অগোচরেই নিজের নিজের চোখের জলটি মুছে নেয় সে।
.
এ তো সেই দিহানই যে ওর ওই খারাপ সময়ে ওকে বুকে আঁকড়ে ধরেছিলো।এখন যে ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরেছে তার পেছনে এ ছেলেটির ভূমিকা অপরিসীম।যখন ওই ঘটনার পর তিশা ভার্সিটিতে আসে তখন ওর বন্ধুদের মনে হাজারো প্রশ্ন।দিহান কতোই না সুন্দর করে ওদের সামনে সেসব ঘটনা তুলে ধরে।সেই সাথে দিহানই তার কথার মাধ্যমে সবাইকে উৎসাহিত করে তারা যেনো তিশাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করে।দিহান আর বাকি সব বন্ধুরা তিশাকে স্বাভাবিক করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে।অতঃপর আল্লাহর রহমতে তিশা এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।তাহলে তিশার দুঃসময়ের বন্ধু কেন তিশার সুসময়ে তার কষ্টের কারণ হচ্ছে!! 

!!
রাতটি অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতেই পেরিয়ে গেলো মোহের।কিন্তু রিদানের একটিও কল এলো না।ফোনটাও বন্ধই বলে যাচ্ছে।দুশ্চিন্তা মোহকে ঘিরে ধরেছে।ফজরের নামাজ শেষ করেই সে পা বাড়ায় তার শাশুড়ীর কক্ষের দিকে।
-আম্মু আসবো?
-আয়।কিছু বলবি?
-আসলে,কাল সন্ধ্যে দিয়ে উনাকে কল করে যাচ্ছি কিন্তু তার ফোন বন্ধ বলছে।এখনো ফোন বন্ধই।
-কি বলিস!!কাল সন্ধ্যায়ই তো ওর সাথে কথা হলো,তোর কথা জিজ্ঞেস করছিলো।
খারাপ লাগাটা যেনো আরও বেরে যায় মোহের।ফোনটি সাথে না নিয়ে যেয়ে ভুল করে ফেলেছে সে।
-তার সাথে অফিসের কেউ আছে নিশ্চয়ই!কারো কাছ থেকে উনার কোনো খবর জানা যাবে?
-হ্যাঁ।ওর পি.এ প্রিয়তা।ওকে কল দিলে বলতে পারবে।
-আব্বু কে একটু বলুন না মা!!
-বলছি।তুই চিন্তে করিস না।রিদান ঠিক আছে।তোর বাবা কল করতে করতে, তুই বরং আমার জন্যে একটু চা নিয়ে আয়।
-জ্বি।
অতঃপর মোহ চা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো অপরদিকে রিয়াদ সাহেব কল দিলেন প্রিয়তাকে।কিছু সময় পর মোহ চা নিয়ে শশুর-শাশুড়ীকে দেয়।
মোহের শশুর বলে ওঠেন,
-বৌমা!তোমার গুণধর বর প্রেজেন্টেশন তৈরিতে সেই সন্ধ্যে দিয়ে সারা রাত ব্যস্ত ছিলেন।সেই সাথে বেচারি প্রিয়তাকেও রাতভোর ঘুমাতে দেয়নি সে।ফোনে নাকি চার্জ ছিলো না।তোমার গুণধর বরের এতোটাই গুণ যে সে ফোনটি চার্জে দেওয়ার পর তা খোলা টা প্রয়োজনবোধ করেন নাই।
-হ্যাঁ বাবা খুব গুণ,তবে তা আমার বর হওয়ার জন্যে নয় বরং আপনার সুপুত্র হওয়ায়।(বলে আলতো হাসে মোহ) 
-বাহ তমা,নিজের মেয়েকে তো একদম নিজের মতো বানিয়ে নিয়েছো।সে ও আমাকে তোমার মতো খোঁটা দিচ্ছে। 
-হুম।দেখতে হবে তো মেয়ে টা কার।
এমন কিছু কথোপকথন চলার পর মোহ পা বারায় নিজ কক্ষের উদ্দেশ্যে।খুব কষ্ট অনুভব করছে মোহ।রিদান সারারাত একটি মেয়ের সাথে ছিলো।সেই সাথে সে তার ফোন টা খোলার ও প্রয়োজনবোধ করেনি কেন?একটি বারো কি তার মনে হয়নি তার স্ত্রীর কথা?একটু ও ইচ্ছে হয়নি তার সাথে কথা বলার?
.
মোহের অভিমান টা এতোটাই বেশি ছিলো যে সে তার কান্নাটা ধরে রাখতে পারলো না।কাল সারা রাত ঘুমোয়নি সে।রিদানের চিন্তায় সারা রাত ছটফট করেছে।আর রিদান,অন্য একটি মেয়ের সাথে কাজে মগ্ন ছিলো একটি বারও মোহের কথা ভাবেনি সে।যদি ভাবতো তাহলে নিশ্চয়ই একটা বারের জন্য হলেও ফোনটি খুলে মোহকে একটি কল দিতো!

!!
হটাৎ ডোর বেল বাজায় ঘুম ভাঙে রিদানের।সারা রাত প্রেজেন্টেশনের কাজ করতে হয়েছে তাকে।এ মিটিং টি ২ দিন পর হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু কিছু কারণে মিটিং টি আজই হবে।কাল রাতে দুদিনের কাজ সে একা সম্পূর্ণ করেছে।প্রিয়তা শুধু একটু একটু হেল্প করেছিলো তাও রাত ১ টা অব্দি। ১ টা বাজতেই রিদান তাকে তার রুমে পাঠিয়ে দিয়েছিলো।রিদান খুবই দায়িত্ববান একটি ছেলে।সেই সাথে সে যে কাজই করে তাতে তার সাফল্য চাই ই চাই।তাই সে যেকোনো কাজ নিজের সর্বচ্চো টা দিয়ে করে।কাল রাতে মিটিং টা আজই হবে শোনার পর পরই যেনো সে দিন-দুনিয়া সব ভুলে গিয়েছে।এখন তার সম্পূর্ণ মনোযোগ আজকের মিটিং টা সফল করায়।
ঘুমের রেশ একটু কাটিয়ে রিদান দরজা খুলতেই প্রিয়তা বলে ওঠে, 
-স্যার, আপনি এখনও ঘুমাচ্ছেন!!মিটিং এর মাত্র ১ ঘন্টা বাকি।আধা ঘন্টা তো পৌঁছাতেই লেগে যাবে।
-সিট!আগে ডাকতে।যত্তসব ফাউল লোক রাখছি কাজে!!
বলেই রিদান তারাতাড়ি ওয়াশরুমে ঢুকে যায় ফ্রেশ হতে।বের হয়ে কোনোরকম রেডি হয়েই বেরিয়ে পরে মিটিং এর উদ্দেশ্যে।

!! 
বেলা ১১ টা।রিদানের কল না পেয়ে মোহের অভিমান যেনো বেড়েই চলছে।সারা রাত নির্ঘুম কাটাবার পর সকালে কান্না করায় মোহের মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে।এখন অব্দি সে সকালের খাবার টাও খায়নি।হটাৎ রুমে তার শাশুড়ী প্রবেশ করে, 
-কি হলো মা?নিচে আসছিস না কেনো?
-এমনি মা মাথা ব্যথা করছে।
-আগে বলবি তো।তুই বস আমি আসছি।
কিছু সময় পর মোহের শাশুড়ী এক হাতে খাবারের প্লেট অন্য হাতে তেলের বাটি নিয়ে রুমে আসেন।
-ওঠ,আজ আমি তোকে খাইয়ে দিবো!
-না মা,আপনার কষ্ট করতে হবে না।আমার সত্যি খাওয়ার ইচ্ছে নেই। 
-বুঝেছি আমার হাতে খেতে চাইছিস না।আমি তো আর তোর আপন মা না।
-মা তো মা ই।আপন আর পর কি?নিন জলদি খাইয়ে দিন।
আলতো হেঁসে তমা বেগম, মোহকে খাইয়ে দিতে শুরু করেন।খাওয়ানো শেষে তিনি জোর করে মোহকে বসিয়ে মোহের মাথায় তেল দিয়ে দেন।তেল দেওয়া শেষে তমা বেগম উঠতে নিলেই মোহ তাকে জরিয়ে ধরে বলে ওঠে, 
"আপনি এ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শাশুড়ী,মা।আসলে,  আপনাকে শাশুড়ী বললে আপনার অপমান হবে।তাই আপনি আমার শাশুড়ী নন বরং আমার মা।কতো ভাগ্যবান আমি!আল্লাহ আমায় একটি নয়,দু-দুটি জান্নাত দান করেছেন।"
তমা বেগম আলতো হেসে মোহের কপালে চুমু দিয়ে বলেন,
"লক্ষী মেয়ে আমার।যা একটু বিশ্রাম নে।মাথা ব্যথা একদম কমে যাবে"
কথাটি বলে মোহের কক্ষ দিয়ে প্রস্থান করেন তমা বেগম।আর মোহ ও চুপচাপ যেয়ে শুয়ে পরে।বেশ কিছু সময় এভাবে চুপচাপ শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে যায় মোহ।

!!
আরও একবার প্রমাণ হলো রিদান আহসান যাই করে তাতে সাফল্য নিশ্চিত।আল্লাহ তাকে সব ক্ষেত্রেই সাফল্য দান করেন হয়তো তার কঠোর পরিশ্রমের উপহার হিসেবে। আজকের মিটিং এ রিদানের প্রেজেন্টেশন দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়।রিদানের দৃষ্টিকোণ,অনন্য চিন্তা-চেতনা,কাজের দক্ষতা এগুলো তার প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।সবাই তার সুনামে পঞ্চমুখ।মিটিং শেষ করে বাসায় পৌঁছে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই মোহের মুখটি ভেসে ওঠে তার সামনে।মেয়েটির সাথে কথা হয়না তার গত কাল দিয়ে।চটজলদি ফোনটি হাতে নেয় রিদান।কল দিতেই যাবে তখন মনে পড়ে যে মিটিং টির জন্য তার আরও কিছু দিন এখানে থাকতে হতো তা তো আজই শেষ অর্থাৎ রিদান চাইলে আজই ব্যাক করতে পারে।এমনটি ভাবতেই রিদান আর দেরি করে না।ড্রাইভারকে গাড়ি রেডি করতে বলেই ব্যাক গুছিয়ে বেরিয়ে পরে রিদান তার স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দিতে।
.
রাত ১ টা,,,, 
মোহ ফোন হাতে আধশোয়া হয়েই ঘুমিয়ে আছে।সারা টা দিন ফোন হাতে নিয়েই ছিলো সে।রিদানের সাথে কথা বলার তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত তার মন অস্থির হয়ে আছে।রিদান রুমে প্রবেশ করে মোহকে এভাবে দেখে বেশ বুঝতে পারছে তার ফোনের কলের অপেক্ষায়ই মেয়েটি এভাবে ঘুমিয়ে পড়েছে।নিজের মাঝে এক ভালোলাগা কাজ করে রিদানের মাঝে সেই সাথে অপরাধবোধ ও।রিদান মোহের পাশে বসে আলতো করে মোহের কপাল থেকে চুল সরিয়ে কপালে এক গভীর চুমু এঁকে দেয়।তারপর উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মোহ আধ শোয়া হয়েই ঘুমিয়ে আছে তাই রিদান মোহ কে ঠিক করে শুইয়ে দিতে যায়।ঠিক তখনই মোহের ঘুম ভেঙে যায়।রিদামকে দেখে সে ভুত দেখার মতো চমকে যায়। চোখ বড় বড় করে কিছু সময় তাকিয়ে থাকার পর রিদানের গাল আলতো করে স্পর্শ করে। এতে রিদান আলতো হেসে মোহের পাশে বসে পরে।মোহ ও ঠিকভাবে বসে তাকিয়ে থাকে রিদানের দিকে। সময়ের সাথে মোহের চোখে জলের আবির্ভাব হচ্ছে তীব্রভাবে।ফলে মোহের চোখে জলের পর্যাপ্ত জায়গার অভার পড়ায় বেরিয়ে এসে গাল গড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করে।হুট করে মোহ কিছু না বলেই উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে পরে।মোহের এমন কাজের কারণ বুঝতে বেশি দেরি হয়না রিদানের।সে বেশ বুঝেছে মোহের এমনটি করার পেছনে রয়েছে একরাশ চাপা অভিমান।
রিদান মোহকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে মোহের ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলে ওঠে, 
"সরি"
মোহ তার অভিমান কাটিয়ে কিছু বলতেই পারছে না।চোখ দিয়ে নোনাজল বেয়েই চলছে।মোহের কোনো সাড়া না পেয়ে রিদান মোহের পেটের দিক দিয়ে একটু কাপড় উঠিয়ে স্লাইড করতে থাকে।সেই সাথে ঘাড়ে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে।তাও মোহ কিছুই বলছে না। এবার রিদান মোহকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে ওঠে, 
"জানি ভুল হয়ে গিয়েছে।কাজের চাপে তোমায় বড্ড অবহেলা করে ফেলেছি।সত্যি সরি!"
এবার মোহ রিদানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, 
"দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?"





চলবে...






Writer:- Mahzabin


NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner