আরুশ, মোহনার মাথায় তেল লাগাতে ব্যস্ত আর মোহনা বাদাম চিবোনোতে।চোখ ভরা ঘুম আরুশের। কিন্তু তার বউ ঘুমোতে পারছে না মাথা ব্যথায়।বউকে ঘুম না পড়িয়ে বেচারা নিজেও ঘুমোতে পারছে না।প্রেগ্ন্যাসিতে মোহনা কেমন যেন বাচ্চা বাচ্চা হয়ে গিয়েছে।সময়ে-অসময়ে তার বিভিন্ন আবদার শুনে আরুশ মিনি স্ট্রোক করে।মোহনার কোনো আবদার অপূর্ণ রাখাই যায় না।মেয়েটি এখন ছোট্ট, ছোট্ট বিষয়েও কেঁদে দেয়।আগের থেকে এখন আদরের চাহিদা টাও বেশি মোহনার।ছোট্ট, ছোট্ট আদরে আগলে রাখতে হচ্ছে তাকে।আরুশ কোনো প্রকার কমতি রাখছে না নিজের তরফ থেকে।ভালোবাসায় আগলে রাখছে তার স্ত্রীকে।মোহনার এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবদার,সময়ে-অসময়ে ঠোঁট উল্টিয়ে আদর চাওয়া আবার ছোট্ট ছোট্ট বিষয়ে কান্না জুড়ে দেওয়া খুব উপভোগ করছে আরুশ। কই আগের বার তো এমন কিছুই উপভোগ করেনি সে!কি করে করবে?কাজের ব্যস্তায় দিন শেষে "কেমন গেল দিনটি?" প্রশ্ন করার সময়ও পায়নি সে।সমাজে এমন অনেক পুরুষই আছে যারা কাজের ব্যস্ততায় নিজ সন্তানের একটু একটু করে বেড়ে ওঠা টা উপভোগ করতে পারে না।কিন্তু গর্ভাবস্থার এ দিনগুলো খুবই উপভোগ করার মতো হয়।
!!
রাত ১ টা বাজে।কিন্তু মোহের চোখে ঘুম নেই।চিন্তা হচ্ছে তার, রিদান রাতে খেয়েছে কি না!এখনো ঘুমিয়েছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।অবশেষে মোহ সিদ্ধান্ত নিলো, সে রিদানকে কল করবে।কল দিতেই রিসিভ করে নিলো রিদান।
-আপনি এখনো জেগে আছেন?
-হু।বউকে ছাড়া ঘুম আসছে না।
-খেয়েছেন?
-হু।তুমি?
-হুম।
-তুমি ঘুমাওনি কেনো?
রিদানের প্রশ্নে চুপ করে থাকে মোহ।কি করে বলবে,তার মিঃ হাসবেন্ডের চিন্তায় তার ও ঘুম হারিয়ে গিয়েছে।
-বুঝেছি,তোমারও আমাকে ছাড়া ঘুম আসছে না।
রিদানের কথায় লজ্জায় লাল হয়ে যায় মোহ।কিন্তু তাও কিছু বলে না।মোহের কোনো সাড়া না পেয়ে ফোনটি কেটে দেয় রিদান।এদিকে ফোন কাটায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় মোহ।রিদান কি তার চুপ করে থাকায় ভুল বুঝে রাগ করলো?হটাৎ মোহের ফোনে একটি মেসেজ আসে।
"দরজা টা খোলো"_(রিদান)
মেসেজ টা দেখে মোহের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তবে কি রিদান এসেছে!বেশি না ভেবে মোহ চুপচাপ আস্তে করে তার মায়ের পাশ থেকে উঠে এগিয়ে যায় দরজার দিকে। দরজা খুলতেই দেখা পায় রিদানের।ঠোঁটে আলতো হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।
-আপনি এখানে কেনো এসেছেন?
-আমার শাশুড়ীর বাড়ি।১০০ বার আসবো।তোমার কি?(বলেই রিদান ঘরের ভিতর ঢুকে পরে)
মোহের মায়ের রুমের পাশের রুমে ঢুকে বিছানায় বসে রিদান।রিদানের পিছু পিছু মোহ ও আসে সে রুমে।
-বসো।(রিদান)
মোহ বসতেই রিদান, মোহের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।অনেকটা সময় রিদান চুপ করে শুয়ে থাকে মোহের কোলে।আর এদিকে মোহ খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তার মিঃ হাসবেন্ডকে।মোহ এর মনে আবারও লোভ উৎপন্ন হয়।তার খুব ইচ্ছে করছে রিদানের চুলগুলো ছুঁয়ে দিতে। রিদানের এভাবে চুপ করে শুয়ে থাকায় মোহ ভাবে হয়তো রিদান ঘুমিয়ে গিয়েছে। তাই সে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে রিদানের চুলে।চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিজের অজান্তেই রিদানের কপালে একটি চুমু দিয়ে দেয় মোহ।সাথে সাথেই রিদান আলতো হেসে চোখ খুলে তাকায়। রিদানের তাকানোতে অবাক হওয়ার পাশাপাশি বেশ লজ্জাও পায় মোহ।রিদান কিছু না বলে মোহের কোমর আঁকড়ে ধরে চোখবুঁজে শুয়ে থাকে।
!!
প্রতিদিন নিয়ম করে রাত ১১ টায় কল দেয় মিহাদ রিদিকে।বেশি না হয়তো ৫-১০ মিনিটই কথা হয় তাদের। কিন্তু এ সময় টুকু মিহাদের প্রতিটি দিনের শ্রেষ্ঠ সময়।আর রিদিও কোনো কারণ ছাড়াই এ সময় টায় ফোন হাত নিয়ে রাখে।ঠিক ১১ টায় মিহাদ কল দিতেই কলটি রিসিভ করে নেয় সে।এ কলটি যেনো অতি কাঙ্ক্ষিত তার।আজ ১১ টা ১০ বাজতে চললো তবে মিহাদ এখনো কল করেনি।হাতে ফোন নিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে রিদি।হটাৎ মিহাদের কল আসে।কলটি আসতেই রিদির ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে কিন্তু সেই সাথে অভিমান টাও বেশ থাকায় কলটি রিসিভ করে না সে।এভাবে ৩ বার কল আসার পর ৪র্থ বারে কলটি রিসিভ করে রিদি।কল রিসিভ করে মিহাদকে কিছু বলতে না দিয়েই রিদি বলে ওঠে.....
-এতোই যখন ব্যস্ত তবে কি দরকার কল দেওয়ার?প্রতিদিন কল দিতেই হবে এমনটি নয়।এখানে তো কেউ ফোন হাতে নিয়ে কলের জন্য অপেক্ষায় থাকে না।
-বাব্বাহ এতো অভিমান!(মিহাদের কন্ঠ শুনে বুঝা যাচ্ছে ছেলেটি হাঁপাচ্ছে)
-হাঁপাচ্ছেন কেনো?
-১১ টায় তোমায় কল দিতে যেয়ে দেখি ফোনে টাকা নেই।বিকাশ টাও খালি করে রেখেছি এক বন্ধুকে টাকা ধার দিয়ে।উপায় না পেয়ে বেরিয়ে পরলাম ফ্লাক্সি দোকান খুঁজতে। আশেপাশের সব দোকানই বন্ধ ছিলো।তাই দেরি হওয়ার ভয়ে এক প্রকার দৌড়ে দোকান খুঁজতে আরম্ভ করলাম। অবশেষে পেয়েও গেলাম এক দোকান। টাকা টা ঢুকিয়েই কল দিলাম।
-সরি!
-কি করছো?
-বারান্দায়।
-আসবো?
-কোথায়?
-তোমার বাসার নিচে।
-মার খেতে?
-থাক।আমি বাসায় যাচ্ছি।
মিহাদের কথায় হেসে দিলো রিদি।
-কাল নাহয় ছুটির সময় ভার্সিটিতে এসেন?
রিদির কথায় অবাক হয়ে যায় মিহাদ।
-ডেটে ডাকছো?
-দেখা করতে ডাকছি।
-কেনো?
-দেখতে হবে তো,যে চুইংগাম টা আমার পিছে লেগে আছে তা আসলে খাওয়ার যোগ্য কিনা!
রিদির কথায় খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় মিহাদ।রিদির কথার অর্থ রিদি মিহাদকে কাছ থেকে জানতে চায়।রিদি পরিক্ষা করে দেখতে চায় মিহাদ রিদির জন্য উপযুক্ত কি না।
-অর্থাৎ,তুমি আমায় নিয়ে ভাবতে চাইছো?
-হয়তো।
-আসবো।(ঠোঁটে হাসি রেখেই বলে মিহাদ)
-অপেক্ষা থাকবে।
বলেই ফোনটি কেটে দেয় রিদি।তার ঠোঁটেও হাসি বিদ্যমান।
!!
ফজরের আযানের ধ্বনি কানে আসতেই মোহের ঘুম ভেঙে যায়। আলতো ভাবে চোখ খুলে দেখে সে আধশোয়া হয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিল আর রিদান এখনো তার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। মোহ ধিরে ধিরে রিদানকে ডাকতে শুরু করে।
-রিদান প্লিজ ওঠেন। আযান দিয়ে দিয়েছে।একটু পরেই আম্মু নামাজের জন্য উঠবেন।
রিদান ধিরে ধিরে একটু চোখ খোলে।কিন্তু না উঠে মোহের কোমর আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজেই বলে "আর একটু"। কিন্তু একটু পরেই আনিসা বেগম উঠে যাবেন, সেই সাথে তমা বেগম ও রিয়াদ সাহেব ও উঠে যাবেন। তাই মোহ আবারও ডাকা শুরু করলো রিদানকে।বেশ বিরক্তি নিয়েই উঠে বসলো রিদান।আড়চোখে মোহকে দেখে বাঁকা হেসে মোহের মুখোমুখি বসে বলে," গিভ মি মাই মর্নিং কিস"।মোহ রিদানের থেকে একটু দূরে সরে বলে ওঠে, "ইয়ুক রিদান,আপনি এখনো ব্রাশ করেননি"। কথাটি মোহ মজা করে বললেও রিদান অপমানবোধ করে।প্রতিত্তোরে রিদান কিছু না বলে চলে যেতে যায় কিন্তু পেছন থেকে মোহ রিদানের হাতটি ধরে ফেলে।রিদান পেছনে না তাকিয়েই বলে " হাত ছাড় মোহ"।রিদানের চোখে মোহ অপমানবোধ দেখতে পেয়েছিলো তখন।তাই সে রিদানকে চলে যাওয়া থেকে আটকায়।ভুল বুঝাবুঝিকে কখনোই বাড়তে দেওয়া উচিৎ নয়। এটি খুব মজবুত সম্পর্কেও খুব সহজে ফাটল ধরাতে পারে।তাই প্রত্যেকের উচিৎ তাদের সম্পর্কে এটিকে বিন্দু পরিমাণ জায়গা না দেওয়া।যখনই বিপরীত মানুষটি ভুল বোঝে তখনই সেই ভুল বুঝাবুঝি টা পরিস্কার করে দেওয়া উচিৎ। অনেকে অভিমান করে, "কেন প্রিয় মানুষটি তাদের ভুল বুঝলো অথবা কেন অপর মানুষটি তাদের না বলা কথাটি বুঝে নিলো না ইত্যাদি "। এ অভিমান টাই উচিৎ নয়। ভুল বুঝাবুঝি বিষয়টি সম্পূর্ণ পরিস্কার করেও তো অভিমান করা যায়।এতে সম্পর্কে ফাটল ধরে না বরং অভিমান তখনই সার্থক হয়। কারণ বিপরীত মানুষটি তার ভুল বুঝতে পারে আর তখনই সে অভিমান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে।
মোহ রিদানের সামনে যেয়ে রিদানের ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়।মোহের এমনটি করায় রিদান অবাক হলেও তার চেহারায় আনন্দ ফুটে ওঠে।
!!
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি।আমি দিহান,তিশার ফ্রেন্ড।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।ভিতরে এসো।
-জ্বি। আন্টি প্লিজ তিশাকে একটু ডেকে দেন।
-বাবা,আসলে তিশা আজকাল ওর রুম থেকে বেরই হয় না।খাবার সময়টাও আমি জোর করে একটু খাইয়ে আসি।
-ওর এমন করার কারণ টা কি জানা আছে আপনার?
এমন প্রশ্নে তিশার মা কেমন যেন অপ্রস্তুত হয়ে পরেন।তিনি নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে শুরু করেন।তার এমন ব্যবহারে দিহান স্পষ্ট বুঝতে পারে তিশার মা কথাটি বলতে অস্বস্তিবোধ করছেন।তাই দিহান আবারও বলে ওঠে....
-আন্টি আপনি আমায় চেনেন না তাই আমায় কিছু বলতে আপনি অস্বস্তিবোধ করবেন এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি আপনায় আস্বস্ত করছি,আপনি নির্দিধায় আমায় সবটা বলতে পারেন।ওয়াদা করছি,আমার দ্বারা তিশার কোনো প্রকার ক্ষতি হবে না।
দিহানের এমন কথায় স্বস্তি পেলেন তিশার মা। তিনি বেশ কিছু সময় নিরব থেকে বলতে শুরু করেন।
-শেষ যেদিন তিশা ভার্সিটিতে গিয়েছিলো সেদিন খুব দেরি করে বাড়ি ফেরে তিশা।হয়তো ৯ টা বাজার একটু আগে ফেরে।(এ কথাটি শুনে বেশ অবাক হয় দিহান।কারণ ৭ঃ৩০ পর্যম্ত দিহান,তিশার সাথেই ছিলো।সে জায়গা দিয়ে তিশার বাড়ি পৌঁছোতে ৮ টার বেশি বাজার কথা না।তবে ১ ঘন্টার মতো দেরি কেনো হয়েছিলো তিশার!)যখন তিশা বাড়ি ফেরে তখন ওর কাছে ওর ব্যাগ,ফোন কিচ্ছুটি ছিলো না।তিশাকে রাস্তায় দৌড়াতে দেখে আমাদের পাশের বাসার মেয়েটি তিশাকে ডাক দেয়।কিন্তু তিশা শুনছিলোই না ও দৌড়েই যাচ্ছিলো।তিশা নাকি খুব কাঁদছিলো সেই সাথে তিশার মুখে ভয় পরিস্কার দেখা যাচ্ছিলো। ঔ মেয়েটি তিশার কাছে দৌড়ে যায়।তিশাকে অনেকটা স্বাভাবিক করে,বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে যায় মেয়েটি।তিশার হাতে কারো ৫ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। তিশার শরীরে ওর ওড়না টাও ছিলো না।কামিজের নিচের কিছুটা অংশ ছিড়া ছিলো।ওকে অনেকবার জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে ওর সাথে কিন্তু ও কোনো কথাই বলে না।সেদিনের পর থেকে আমার মেয়েটি একটি কথাও উচ্চারণ করেনি।
বলেই কাঁদতে শুরু করেন তিশার মা।কথাগুলো শুনে দিহান একপ্রকার কাঁপতে শুরু করে।দিহান কিছুই ভাবতে পারছে না।নিজের মাঝে একটি চিনচিনে কষ্ট অনুভব করছে সে।তবে কি তিশা মানুষ রুপি কোনো জানোয়ারের ভোগের বস্তু হয়েছিলো?না কিছু ভাবতে পারছে না সে।চোখটি জলে টলমল করছে তার।কিছুক্ষণ সময় নিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে দিহান বলে ওঠে....
-আন্টি, আমি তিশার সাথে দেখা করতে চাই।প্লিজ আমাকে তিশার রুম টা দেখিয়ে দিবেন?
-আসো আমার সাথে।
দিহান ধিরে ধিরে এগিয়ে যায় তিশার রুমের দিকে। রুমে প্রবেশ করতেই চোখ যায় তিশার দিকে।দিহানের হৃৎস্পন্দন যেনো বেড়েই চলছে।মেয়েটি দু-হাটুর ভাজে মুখ গুঁজে বসে আছে। দিহানকে রুম দেখিয়ে রুম হতে বেরিয়ে যান তিশার মা। দিহান ধিরে ধিরে যেয়ে তিশার মুখোমুখি বসে, কাঁপা কাঁপা গলায় আলতো করে ডাক দেয় তিশাকে।দিহানের আওয়াজ পাওয়া মাত্র তিশা মুখ তুলে তাকায় ওর দিকে।দিহানকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে যায় তিশা।একভাবে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থাকার পর তিশা ধিরে ধিরে হাত বারিয়ে দিহানের গাল স্পর্শ করে।হটাৎ করেই তিশা শব্দ করে কান্না করে দেয়।ধিরে ধিরে তিশার কান্নার বেগ যেন বেরেই চলছে।দিহান কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে শক্ত করে জরিয়ে ধরে তিশাকে নিজের বাহুডোরে।তিশার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে দিহান।এভাবে বেশ কিছু সময় পাড় হবার পর তিশা অস্ফুটে স্বরে বলে ওঠে "আমি অপবিত্র নই,দিহান"।
-আমি অপবিত্র নই,দিহান।সেদিন আমার রেপ হয়নি।জানি কেউ এ কথা বিশ্বাস করবে না।সবার মনেই সন্দেহ আমি ধর্ষিত।কিন্তু আমায় ধর্ষণ করা হয়নি।কেউ বিশ্বাস না করলেও তুমি তো করো?(দিহানের বুকে মাথা রেখে অশ্রুসিক্ত করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিশা দিহানের মুখের দিকে)
-অবশ্যই।জানি,আর যাই হোক তিশা,তার দিহানকে মিথ্যে বলতেই পারেনা।(নিজের ভিজা চোখটা মুছে ঠোঁটে হাসি টেনে বলে ওঠে দিহান)
দিহানের কথায় তিশার ঠোঁটেও হাসি ফুটে ওঠে।তিশা তার চোখ দুটি বন্ধ করে শক্ত করে জরিয়ে ধরে তার প্রিয়কে।বেশ কিছু সময় এভাবে থাকার পর দিহান বলে ওঠে.....
-তুমি আমার কাছে এখন যতটা পবিত্র, ধর্ষিত হলেও এতোটাই পবিত্র থাকতে,তিশা। অপবিত্র তারা কখনোই হতে পারে না যারা নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিজের সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করে কিন্তু হেরে যায় কিছু হায়নাদের তীব্র লালসার কাছে।অপবিত্র তো তারা,যারা সামান্য টাকার জন্য নিজের শরীরকে হাজারো মানুষ রুপি জানোয়ারদের বিলিয়ে দেয়।অপবিত্র তো তারা যারা ঘরে স্বামী রেখে,হোটেলে যায় দেহের খিদে মেটাতে।অপবিত্র তো তারাও যারা অর্ধনগ্ন পোশাক পরে পুরুষদের মাঝে কামুকতা সৃষ্টি করে।তুমি তো এদের দলভুক্ত নও তিশা।
তিশা মুগ্ধ নয়নে তাকায় দিহানের দিকে।দিহানের কথায় ব্যথিত হৃদয়েও স্বস্তি খুঁজে পায় সে।তিশা আবারও চোখ বুজে দিহানের হৃৎস্পন্দন শোনায় মনোযোগ দেয়।এতোদিন সে চাপা কষ্টে ডুবে থাকলেও দিহানকে দেখা মাত্র তার ভিতরের কষ্টগুলো বেরিয়ে আসে।যেনো এতো দিন তার কষ্টগুলো এই ভরসার মানুষটাকেই খুঁজছিলো।
-তিশা?
-হু।
-সেদিন কি হয়েছিলো?(দিহান)
তিশা, দিহানের বুক থেকে মাথা ওঠাতে যায় কিন্তু দিহান তিশার মাথা নিজের বুকে শক্ত করে চেপে ধরে।
-এভাবে থেকেই বলো।(দিহান)
দিহানের বুকে মাথা রেখেই তিশা কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে শুরু করে।
ফ্লাশব্যাক____💮
সেদিন তিশার পেছন থেকে কেউ একজন তিশার মুখ চেপে ধরে।রাস্তা টা অনেকটা অন্ধকার ছিলো আর ওই রাস্তায় মানুষের আনাগোনা সবসময়ই কম থাকে।কারণ ওই দিকে জনবসতি খুব কম আর জায়গাটা গাছপালায় আবৃত। লোকটি তিশাকে রাস্তা থেকে টেনে গাছপালায় আবৃত জায়গায় এনে তিশাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়।তিশাকে টেনে আনার সময়ই কোথাও তিশার ব্যাগ আর ফোনটা পড়ে যায়।লোকটি নিজের শার্ট খুলে তিশার কাছে যেয়ে তিশার শরীর থেকে ওরনা টা টেনে ফেলে দেয়।এদিকে তিশা ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।লোকটাকে নিজের কাছ থেকে সরানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু লোকটার সাথে পেরে ওঠে না। লোকটা তিশার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিতেই তিশার চোখ পরে ওর হাতের কাছে থাকা একটি পাথরের ওপর।লোকটা ওর মাঝে এতোটাই ডুবে ছিলো যে অন্য দিকে তার কোনো খেয়াল ছিলো না। তিশা এ সুযোগে পাথর টি নিয়ে লোকটার মাথায় আঘাট করে।ফলে লোকটি ব্যথায় আর্তনাদ করে ওঠে।লোকটি ব্যথায় দুর্বল হয়ে পড়ায় তিশা লোকটিকে ধাক্কা দিয়ে উঠে চলে যেতে যায় কিন্তু লোকটি তিশার হাত শক্ত করে ধরে বসে।তিশা হাতটি ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু পেরে ওঠছিলো না।তাই তিশা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে লোকটার মেইনপার্টে লাত্থি দেয়। এতে লোকটি তিশার হাত ছেড়ে ব্যথায় চিৎকার করতে থাকে।আর এ সুযোগে তিশা দৌড়ে পালায়।পালানোর সময় কোনো এক গাছে তিশার জামা বেঁধে ছিরে যায়।তিশা এতোটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো যে ওর কোনোদিকে খেয়াল ছিলো না।বেশ জমজমাট রাস্তায় এসেও দৌড়াতে থাকে তিশা, যেনো দৌড় থামালেই লোকটি এসে ধরে ফেলবে তাকে।ঠিক সে সময়ই তিশাকে দেখতে পায় তিশার পাশের বাসার মেয়েটি।
বর্তমান____💮
তিশা কথাগুলো বলার সময় একাধারে কেঁদেই চলছে। কথাগুলো বলার সময় বেশ কয়েকবার কথাগুলো আঁটকে যাচ্ছিলো তার গলায়।কথাগুলো শেষ হতেই দিহান তিশার গাল দু'হাতে স্পর্শ করে তিশার মুখটি উপরে তুলে তিশার কপালে চুমু খেয়ে আবার তিশাকে জরিয়ে ধরে।
-তুমি কথাগুলো আন্টিকে বলোনি কেনো?জানো,সে কতো টেনশনে আছেন!
-জানি না কেনোই জানি কেউকে কিছু বলতে ইচ্ছে হয়নি।কথা গুলো গলা পর্যন্ত এসেই আটকে যেতো।
-কাল ভার্সিটিতে আসবা।
-পারবো না দিহান।হবে না আমার দ্বারা।
-কেনো?
-ভয় হয়।যদি বাইরে গেলে আবারও........
-আহহা!এমন কিচ্ছুটি হবে না।আমি এসে তোমায় নিয়ে যাবো আবার আমিই দিয়ে যাবো।আর ১ টি মাসও নেই পরিক্ষার।এ সময় তোমার ক্লাস করাটা জরুরি।
উত্তরে কিছু বলে না তিশা। খুব ভয় কাজ করছে তার মাঝে।বেশ কিছু সময় তিশার সাথে কাটিয়ে দিহান রওয়ানা হয় নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে।
!!
-মোহ!১ সপ্তাহের জন্য আমার শহরের বাইরে যেতে হবে অফিসিয়াল কাজে।(রিদান)
কথাটি শুনেই মন খারাপ হয়ে যায় মোহের।কিন্তু তা প্রকাশ করেনা সে।
-কবে যাবেন?
-কাল।
-আচ্ছা।
-ভাবছি আজ অফিসে যাবো না।
রিদানের কথায় মোহের মন কিছুটা ভালো হয়ে যায়।
-তুমি রেডি হও। কোচিং এর সময় হয়ে এসেছে।
-আজ না গেলে হয় না?
-কেনো?
-না মানে এমনিই ইচ্ছে করছে না।
-আচ্ছা। কাল দিয়ে বাবার সাথে যাবে-আসবে।
-একাই পারবো।
-উহু।বাবাকে বলেছি আমি,সে বলেছেন এই এক সপ্তাহ সেই তোমাকে ড্রপ করবে আবার পিকও করবে।
-আচ্ছা।চলুন নাস্তা টা করে আসি।
-চলো।
!!
বেলা ১১ টা।তমা বেগম রাঁধতে রান্নাঘরে প্রবেশ করেছেন। আজ আনিসা বেগমকে তাদের সাথেই দুপুর ও রাতের খাবারের পর্বটা সারার প্রস্তাব দিয়েছেন তমা বেগম। আনিসা বেগমও না করতে পারলেন না।মোহ রান্না ঘরে আসতেই তার শাশুড়ী বলে ওঠেন....
-তুই এখানে কি করছিস?
শাশুড়ীর কথায় বেশ অবাক হয় মোহ।সে তো প্রতিদিনই রান্নায় তার শাশুড়ীকে সাহায্য করে তবে আজ কেন এভাবে প্রশ্ন করছেন তমা বেগম! মোহ কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই তমা বেগম বলে ওঠে.....
-রিদান কাল ১ সপ্তাহের জন্য বাইরে যাবে।এখন তোর ওকে সময় দেওয়া উচিৎ। দেখ, ওর কিছু লাগে কি না।আর প্যাকিং ও তো করতে হবে।যা রুমে।
তমা বেগমের কথায় বেশ খুশি হয় মোহ।ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে সে এগিয়ে যায় তার রুমের দিকে।আজ দিনটা রিদানের সাথেই কাটাতে চেয়েছিলো মোহ।তাই তো সে আজ কোচিং এ যায়নি।ইচ্ছের বিরুদ্ধেই রান্না ঘরে গিয়েছিলো মোহ কিন্তু তার শাশুড়ী কতোই না নিখুঁতভাবে বুঝে নিয়েছে তার মনের ইচ্ছে টা।
রুমে প্রবেশ করে দেখে রিদান রুমে নেই।তাই মোহ বারান্দায় উঁকি দিতেই দেখে রিদান রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।মোহ,রিদানের পাশে এসে দাঁড়ায় কিন্তু মোহের উপস্থিতি যেনো রিদান টেরই পেলো না।সে সামনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রিদানের এমন কাজ একটুও ভালো লাগলো না মোহের।সে রিদানের কাছাকাছি যেয়ে একদম রিদানের গা ঘেঁষে দাঁড়ালো।রিদান বাঁকা চোখে দেখে নিলো মোহকে।কিন্তু মোহ তা দেখলো না।রিদানের এতো কাছে দাঁড়াবার পর ও যখন রিদানের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখলো না তখন মোহ ইচ্ছে করে এক-দু বার কাশি দিলো।মোহের এসব কাজে বেশ হাসি পাচ্ছে রিদানের।কারণ,মেয়েটি রিদানের মনোযোগ চাচ্ছে কিন্তু তা মুখে প্রকাশ না করে এসব কান্ড করছে।হুট করে রিদান,মোহের হাত ধরে হেঁচকা টানে মোহকে নিজের বুকের ওপর ফেলে মোহের কোমর চেপে ধরে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে।মোহ-রিদান উভয়ই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে একে-অপরের দিকে।এর মাঝেই হুট করে মোহ রিদানের কপালে একটি চুমু এঁকে দিয়ে লজ্জায় চোখ বুজে নেয়।বেশ কিছু সময় এভাবে থাকার পর মোহ তার ঠোঁটে রিদানের ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব করে।মোহ তার একটি চোখ খুলে রিদানের দিকে তাকাতেই দেখে রিদান ওর দিকে তাকিয়েই চুমুতে ব্যস্ত।লজ্জায় মোহ আবারও চোখ বুজে নেয়।বেশ কিছু সময় পর একে-অপরের থেকে সরে কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে উভয়ই।
-পুরো একটি সপ্তাহ ওখানে থাকতে হবে?
-হু।
-অন্য কেউ গেলে হয়না?
-কেনো?আমি গেলে কি সমস্যা?(রিদান জানে মোহ তাকে মিস করবে তাই জন্যই যেতে দিতে চাইছে না।সকালে মোহের মন খারাপ হওয়াটা বেশ বুঝেছিলো রিদান)
-আপনি তো কোনো কাজের না।যেয়ে অযথাই সময় নষ্ট করবেন। (বলেই ঠোঁট চেপে হাসে মোহ)
-আচ্ছা, তাই?
-হুম তাই।
রিদানের হেসে টুপ করে মোহের নাকে একটি চুমু দেয়।রিদানের এমন কাজে মোহ ও হেসে দেয়।
!!
দোকানে স্টাফরা তার অনুপস্থিতিতে ঠিকঠাকভাবে কাজ করছে কিনা তা দেখতে কিছু সময়ের জন্য দোকানে আসেন আনিসা বেগম। একটু পরেই তিনি ফিরে যাবেন নিজ গৃহে। হিসেবের খাতায় চোখ বুলোনোর মাঝে আনিসা বেগমের কানে আসে এক পরিচিত কন্ঠ। তিনি চোখ তুলে তাকাতেই দেখতে পান সে দিনের সেই ডাক্তার, ডাঃফেইজ কে।ডাঃফেইজ কিছু শাড়ি দেখাতে বলছেন।আনিসা বেগম ভাবলেন হয়তো তিনি তার স্ত্রীর জন্য শাড়ি কিনতে এসেছেন।ঠোঁটে হাসি টেনে এগিয়ে যান আনিসা বেগম ডাঃফেইজের দিকে।
-আসসালামু আলাইকুম। (আনিসা বেগম)
-আরেহ,আনিসা বেগম!ওয়ালাইকুম আসসালাম।শরীর এখন কেমন আপনার?
-জ্বি আল্লাহর ইচ্ছায় এখন সুস্থই।
-দু'দিন রেস্ট নিতে বলেছিলাম তাহলে এখানে কি করছেন?
-আসলে,একটু দেখতে এলাম ওরা কিভাবে ম্যানেজ করছে।একটু পরেই বেরোবো বাড়ির উদ্দেশ্যে।
-আচ্ছা তবে এ দোকানটিই আপনার?
-জ্বি।
-বাহ!এ দোকানের শাড়িগুলোই মা পড়েন।এখানের শাড়িগুলো নাকি অনেক দিন টেকসই হয় সেই সাথে ভালো কারুকাজের শাড়ি পাওয়া যায়।মায়ের জোরাজোরিতেই এসেছি আমি।তার এ দোকানেরই শাড়ি লাগবে।নিজের শরীরটা খারাপ থাকায় আসতে পারছিলেন মা তাই আমাকে পাঠালেন।
-এতোটা সুনামের যোগ্য কিনা জানি না, অনেক ধন্যবাদ।শরীর খারাপ বলতে কি হয়েছে খালাম্মার?
-আসলে তেমন কিছু নয়।হাটুতে ব্যথা এই আর কি!
-ওহ।আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো ভাবির জন্য শাড়ি নিতে এসেছেন।(হেসে বলে ওঠে আনিসা বেগম)
-ভাবি?
-আপনার স্ত্রী।
-সে এ পৃথিবীতে নেই।অনেক আগেই মৃত্যুবরন করেছে।
-ওহ,দুঃখিত।
-শাড়ি দেখা যাক?
-অবশ্যই।
অতঃপর আনিসা বেগম নিজ দোকানের সবচেয়ে ভালো মানের শাড়ি গুলো বের করে দেখালেন ডাঃফেইজ কে। সেই সাথে শাড়ি পছন্দ করতেও সাহায্য করলেন।অবশেষে ডাঃফেইজ কে বিদায় দিয়ে নিজেও রওনা দিলেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। রিদান নিজের গাড়িতে আনিসা বেগমের যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো।
!!
দুপুরে সবাই একসাথে খাবার টেবিলে উপস্থিত হয়।খাওয়ার প্রায় শেষের দিকে রিয়াদ সাহেব, রিদানকে উদ্দেশ্য করে বলেন.....
-রিদান,আমি ভাবছি তোমাদের বিয়ের তো বেশ কিছু দিন পাড় হয়ে গিয়েছে। এক সপ্তাহ পর অফিসের কাজটি শেষ করে নাহয় মোহকে নিয়ে কোথাও ঘুরে এসো?
-বাবা, মনে হয় না ওটা নিয়ে ভাবতে পারবো।এই প্রোজেক্ট টা নিয়ে কাজের চাপটা বেশি।কাজের চাপটা কমলে নাহয় ঘুরে আসবোনে।
-উহু।এটা তোমার একার মতামত।মোহের এ মতামতে সম্মতি থাকলেই এটি গ্রহণযোগ্য হবে।আর কাজ টা কিছু দিন আমিও সামলাতে পারবো ওটা নিয়ে তুমি ওতো ভেবো না।তুমি আর মোহ আলাদাভাবে কথা বলে পরে আমায় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিও।
-জ্বি আচ্ছা।
খাবার পর্ব শেষে মোহ ও রিদান নিজেদের রুমে এসে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে।
চলবে...
Writer:- Mahzabin