> Mr husband পর্ব ৯, ১০ - Romantic story - ভালোবাসার গল্প - Bangla Love Story
-->

Mr husband পর্ব ৯, ১০ - Romantic story - ভালোবাসার গল্প - Bangla Love Story

মোহ নিজের গলায় কারো গরম নিঃশ্বাস অনুভব করছে।আলতো করে চোখ খুলে দেখে রিদান তার গলায় মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে। রিদানের হাত,পা মোহের ওপর।মোটকথা, রিদান একপ্রকার মোহকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। রিদানের দাড়ি গুলোও মোহের বুকে বিঁধছে। মোহ আস্তে করে রিদানকে সরানোর চেষ্টা করে কিন্তু পেরে উঠছে না।হটাৎ মোহের চোখ যায় রিদানের মুখের দিকে। অসম্ভব মায়াবী সেই মুখটা।রিদানের ছোট্ট ছোট্ট চুলগুলো কপালে ছড়িয়ে আছে,চোখের বড় বড় পাপড়িগুলো চেহারার সুন্দর্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। মোহের খুব লোভ হচ্ছে তার মিঃ হাসবেন্ডকে একটু ছুঁয়ে দিতে।মোহ আলতো করে রিদানের কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে ছোট্ট করে একটা চুমু এঁকে দেয়।কিন্তু এতেও যেন মোহ এর লোভ কমেনি। রিদানের ছোট্ট নাকটা খুব করে টানছে তাকে।মোহ ও আর দেরি না করে রিদানের নাকে টুপ করে একটি চুমু এঁকে দেয়। কিন্তু এবারও মোহের লোভ কমেনি।এতে খুব বিরক্ত মোহ।সে মনে মনে ভাবতে লাগলো,"আমি কি লুচু হয়ে যাচ্ছি?এতো কেন লোভ হচ্ছে আমার?"।এগুলো ভেবে রিদানকে নিজের উপর থেকে সরানোর চেষ্টায় লেগে পড়ে মোহ।কিন্তু ব্যর্থ হয় সে।আবারও চোখ যায় রিদানের দিকে।কেনোই যেনো রিদানের দাড়ি গুলো ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে তার।আলতো করে রিদানের দাড়িতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে।দাড়িতে হাত বুলোতে বুলোতে চোখ যায় রিদানের ঠোঁটের দিকে।আজ এই ঠোঁট টাও খুব টানছে তাকে। মোহ ধিরে ধিরে এগোতে থাকে রিদানের ঠোঁটের দিকে। কিন্তু হটাৎ সে ভাবে,"ছিঃ মোহ কতো বেহায়া, নির্লজ্জ তুই।এভাবে একটি ঘুমন্ত  ছেলের সুযোগ নিচ্ছিস!!"এমটা ভেবেই মোহ দূরে সরে যায় রিদানের থেকে।কিন্তু এর পর পরই আবারও মোহ ভাবে,"ঘুমন্ত ছেলেটা আমারই তো বর।আমার মিঃ হাসবেন্ডকে আদর করার অধিকার তো আছে আমার"।এটা ভেবেই আবারও মোহ এগিয়ে যায় রিদানের ঠোঁটের দিকে।ঠোঁটে ঠোঁট মিলানোর আগেই মোহের মনে জায়গা করে নেয় একগুচ্ছ লজ্জা। মোহ আবারও দূরে সরে যেতে চায় কিন্তু পারে না।কিছু বুজে ওঠার আগেই রিদান তার ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়।এমন আক্রমণে মোহ চমকে যায়।

 [একটা জিনিস আমি বুঝি না।মানুষ সকালে ব্রাশ না করে কেমনে রোম্যান্স করে?নায়ক-নায়িকাদের মুখে কি গন্ধ হয় না?🥴।অবশেষে বলা যায়,নায়ক-নায়িকারা অনেক খাটাশ 😅]

-তো প্রতিদিন সকালে এভাবে আমার ইজ্জত হরণ করা হয়?(রিদান)
-মানে?
-এইযে কপালে, নাকে,দাড়িতে।(বলেই ঠোঁট চেপে হাসে রিদান) 
মোহ লজ্জায় লাল হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
-জানো কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম ঠোঁটে তোমার স্পর্শ পাওয়ার।কিন্তু মেডাম তো একবার এগিয়ে আসে আবার পিছিয়ে যায়।এতো লজ্জা কই রাখো।অসহ্য! 
রিদানের কথা শুনে হেসে দেয় মোহ।মোহ এর হাসি দেখে আবারও এগিয়ে যায় রিদান,মোহ এর ঠোঁটের দিকে কিন্তু মোহ ধাক্কা দিয়ে রিদানকে সরিয়ে উঠে পরে। তারপর কাপড় নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।ওয়াশরুমের দরজা হালকা খুলে বলে....
-একটু ওয়েট করেন।আমি বের হয়েই আপনার কফি আনছি। 
-বলছি কি ওয়েট করলে তো অফিসের জন্য লেট হয়ে যাবে। তার চেয়ে দুজনে একসাথেই শাওয়ার টা নেই?
ঠাস করে দরজা লাগানোর আওয়াজ পায় রিদান।মোহের এমন কান্ডে হাসতে শুরু করে সে।

!!
গতকাল রাত থেকেই শরীর টা ভালো নেই আনিসা বেগমের।কেমন অস্থির অস্থির  লাগছে তার।অযথাই ঘামছেন তিনি।মাথা টাও ঝিমঝিম করছে তার।ভাবছেন ডক্টর দেখাবেন কিনা!এতো ছোট বিষয়ে ডক্টরের কাছে যাওয়া টা নেহাৎ ই সময় এবং টাকার অপচয় বলে মনে করছেন আনিসা বেগম।দুপুর হয়ে গিয়েছে।রোদের তাপটা অনেক বেশিই অনুভব হচ্ছে আনিসা বেগমের।দোকানে বসে থাকার মতো অবস্থায় নেই তিনি।সিদ্ধান্ত নিলেন এখনই দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরবেন। দোকানের স্টাফদের ছুটি দিয়ে তিনিও বেরিয়ে গেলেন।অনেক্ক্ষণ ধরে রিকশা খুঁজছেন তিনি।কিন্তু এ ব্যস্ত শহরে,গাড়ি চালকরাও ব্যস্ত।এক যাত্রী নামতে না নামতেই ভিড় জমে অনেকের।হাঁটতে হাঁটতে আনিসা বেগম ভাবছেন,এই ব্যস্ত শহরে শত ব্যস্ততার ভিড়ে একটি রিকশাও কি অবশিষ্ট নেই তার জন্যে!বেশ কিছু সময় হাঁটলেও এখন আর পারছেন না হাঁটতে।পুরো পৃথিবী টা মনে হচ্ছে ঘুরছে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না আনিসা বেগম,পড়ে গেলেন মাঝ রাস্তায়। তখনই একটি লোক ছুটে আসলেন তার কাছে।চোখে পানির ঝাপটা দিতেই আধো আধো চোখে তাকালেন আনিসা বেগম। একটু পানি পান করে ওই লোকটার সাহায্যে উঠে দাঁড়ালেন তিনি।
-একটু সামনেই আমার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আসুন আমার সাথে।(লোকটি)
কথা বলতে পারছেন না আনিসা বেগম। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন। 
-প্লিজ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। চলুন আমার সাথে।আমি একজন ডাঃ।আপনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন আপনার।(লোকটি)
আনিসা বেগম লোকটির সাহায্যে গাড়িতে যেয়ে বসলেন। এখন এই অপরিচিত লোকটিকে বিশ্বাস করা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই তার কাছে।

!!
মোহ ও তার শাশুড়ী রান্নাঘরে রান্না করছে।মোহ কেটে দিচ্ছে আর মোহের শাশুড়ী রান্না করছে।সেই সাথে চলছে হরেকরকমের গল্প।কাজের মেয়েটি ঘরের অন্য কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে গল্পে তিনিও যোগ দিচ্ছেন।রিদান ও রিয়াদ সাহেব অফিসে কোনো এক জরুরি মিটিং থাকায় অফিসে আছেন।কয়েকটি দিনের মাঝেই মোহ তার শাশুড়ীর অনেক ভাব জমে গেছে।মোহ তো কোনো কাজই তার শাশুড়ীর অনুমতি ছাড়া করে না।গল্পের মাঝেই মোহ বলে ওঠে.... 
-মা, একটা কাজে আপনার অনুমতি চাই।(মাথা নিচু করেই বলে মোহ)
-কোন কাজ?
-মা আসলে আমি আরও পড়তে চাই।(ভয়ে ভয়ে বলে মোহ)
-তোর কি মনে হয়, আমার মাস্টার্স কমপ্লিট করা ছেলের বউকে ইন্টার পাস করায়েই ঘরে বসিয়ে রাখবো?
-মানে?
-আরেহ বোকা,তোর বরের মতো তোকেও তো মাস্টার্স কমপ্লিট করতে হবে।নাহয় স্বামী-স্ত্রী সমান সমান হবে কি করে!(বলেই হেসে ওঠেন তমা বেগম)
এদিকে মোহ অবাক হচ্ছে তার শশুর বাড়ির সবাইকে দেখে।মোহনার বিয়ের পর মোহনাও তো পড়তে চেয়েছিলো।এতে আরুশ আপত্তি না করলেও মোহনার শাশুড়ী না করে দেয়, সাথে নানান কথাও শোনায়।মোহনার শাশুড়ীর চিন্তা "মেয়েদের এতো পড়ে কি হবে?বিয়ে হইছে বর,শশুর, শাশুড়ীর সেবা করবে আর বাচ্চা পয়দা করবে।এতো পড়ে কি করবে তারা?আর পড়াশোনা করালে নাকি মেয়েদের চরিত্র ঠিক থাকে না বরং পরপুরুষে আকৃষ্ট হয়।" এমন নানান কথা শোনায় মোহনা আর পড়াশোনার চিন্তা আনেনি মাথায়।
-মোহ, রিদানকে বল আজই তোকে ভর্তি করিয়ে দিতে।অনেক তো দেরি হয়ে গেলো।
-জ্বি মা,উনি বলেছেন আজ নিয়ে যাবেন ভর্তি করাতে।
-খুব ভালো।আমি চাইনা আমার মেয়ে, তার স্বামীর থেকে একটুও পিছিয়ে থাকুক।বুঝলি?
-জ্বি মা।(বলেই জরিয়ে ধরে মোহ তার শাশুড়ী মাকে)

!!
ভার্সিটিতে বসে আছে দিহান,সাথে তার বন্ধু-বান্ধব ও আছে।আজ তিশা আসেনি ক্লাস করতে।মেয়ে টাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে দিহানের।
-দিহান শোন?(রোশান)
-বল।
-কাল তুই আর তিশা একি সাথে বেরিয়ে ছিলি না?
-হ্যাঁ।
-কাল রাত ৮ টা দিয়ে তিশাকে কল করেই যাচ্ছি কিন্তু ওর ফোন অফ।কিছু জানিস এ ব্যপারে?
-এখনো কি অফ?
-হ্যাঁ।
বেশ চিন্তায় পরে গেলো দিহান। হয়তো কাল দিহানের কথায় কষ্ট পেয়ে সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে রেখে নিজেকে সময় দিচ্ছে তিশা।এমনটা ভেবেই এ বিষয়ে এতো গুরুত্ব দিলো না দিহান।
-তুই কেনো কল দিসিলি ওকে?(দিহান)
-একটু লাইন মারতে।(বলেই চোখ মারে রোশান)
-মানে?
-বাহ রে তিশার মতো সুন্দরী,হট মেয়ে আমাদের ফ্রেন্ড গ্রুপেই আছে আর আমি তার সাথে একটু লাইন মারবো না?
কথাটি শুনেই দিহানের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।তাও নিজের রাগ টা কন্ট্রোলে রাখে।
-লুচ্চামি ছাড় আর তিশার থেকে দূরে থাকবি!
-এহ আইছে, দূরে কেন থাকমু।মাম্মা যদি একটু চান্স পাই ছুঁয়ে দেখবার চাই।(বলেই হাসে রোশান)
এবার আর সহ্য হলো না দিহানের।ঠাস করে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দেয় দিহান রোশানের গালে।দিহানের এক থাপ্পড়েই রোশানের নাক দিয়ে রক্ত পরতে শুরু করে। দিহানের এমন কাজে সবাই অবাক হয়ে যায়। দিহান তৎক্ষনাৎ ওখান দিয়ে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়,নিজের রাগ টাকে কমাতে।

!!
বিকেলে মোহকে ভর্তি করিয়ে নিয়ে আসে রিদান।কোচিং সকাল ৯ টায় শুরু।সেজন্য এখন থেকে রিদান ও মোহ একই সাথে বেরোবে।মোহ ও রিদান ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা হালকা বাতাস ছুঁয়ে দিচ্ছে তাদের।রিদানের হাতে কফির কাপ তবে খাচ্ছে দুজনেই।একই কাপে দুটি ঠোঁটের ছোঁয়া একে-অপরকে স্পর্শ করছে বারেবার। 


-আপনার বিপি কতো হাই ছিলো ধারণা আছে আপনার? এতোটা খামখেয়ালী কি করে করতে পারেন আপনারা? প্রানের কি কোনো দাম নেই?(ডাক্তার) 
-আসলে বুঝে ওঠতে পারিনি। ভেবেছিলাম দুর্বলতার জন্য হয়তো খারাপ লাগছিলো।(আনিসা বেগম)
-হুম।এমন অসচেতনতাই প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়। 
-ভবিষ্যতে এমনটি আর হবে না।(লজ্জিত হয়ে বলেন আনিসা বেগম) 
-জ্বি,সেটিই আশা করছি।কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছি।চেষ্টা করবেন দুশ্চিন্তা না করার।আর বাড়ি ফিরে টক জাতীয় খাবার খাবেন আর দুদিন রেস্ট করবেন। 
-জ্বি আচ্ছা। 
-এভাবে একা যাওয়া ঠিক হবে না। আপনার স্বামীকে  কল করে আসতে বলুন।
-সমস্যা নেই, একাই যেতে পারবো। 
-প্লিজ! আপনাকে এ অবস্থায় একা ছাড়াটা একদমই ঠিক হবে না। 
-আসলে আমার স্বামী নেই।আর মেয়ে-জামাইকে কল দিয়ে তাদের ডিস্টার্ব করতে চাচ্ছি না।
-আচ্ছা। আসলে আমিও বাড়ির দিকেই ফিরবো।আমি ড্রপ করে দেই?
-না না।শুধু ঝামেলা করবেন না দয়া করে।আমি একাই যেতে পারবো। 
-I insist,please? 
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলেন আনিসা বেগম। 

!!
দের বছর আগে____🖤
-আরুশ।(আরুশকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বলে ওঠে মোহনা) 
-হুম।
-দেখ।
পেছন থেকে হাতটি বাড়িয়ে আরুশের সামনে রাখতেই আরুশের চোখে পরে প্রেগ্ন্যাসি কিট।পজিটিভ দেখেই আরুশ স্তব্ধ হয়ে যায়।খুশিতে তার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে।দ্রুত সে মোহনার দিকে ঘুরে মোহনাকে জরিয়ে ধরে।বেশ কিছু সময় পর সে মোহনাকে ছেড়ে মোহনার পেটের কাছে বসে মোহনার পেটে হাত দিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে "Our baby"। সেদিন একে একে পরিবারের সবাইকে কল করে জানায় আরুশ।নিজের খুশিটা ছড়িয়ে দিতে থাকে সবার মাঝে। তখন আরুশদের সাথে আরুশের বাবা-মাও থাকতেন।তারাও খুব খুশি ছিলো এনিয়ে।এভাবে দিন যেতে থাকে।আরুশ অফিসের কাজে খুব ব্যস্ত থাকতো তাই জন্যে মোহনার সাথে তার তেমন কথা হতো না।দিনে অফিস আর রাতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুম।এদিকে মোহনা অন্তঃসত্ত্বা জেনেও মোহনার শাশুড়ী রান্নার সব কাজ মোহনাকে দিয়েই করাতেন।তিনি সারাদিন পান চিবোনো এবং সিরিয়াল দেখা ব্যতীত কোনো কাজই করতেন না।বাসার কাজের মেয়েটি বাসার অন্য সকল কাজ করলেও রান্নার সব কাজ মোহনাকেই করতে হতো।এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা ছিলো না মোহনার শাশুড়ীর।তার মতে,"অন্তঃসত্ত্বা হলেই যে বসে বসে খেতে হবে এমনটি নয়।তারাও যখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলো তখন সারাদিনই খেটেছেন। ঘরের সব কাজ তারাই করতেন।কই তাদের সময় তো তাদের শাশুড়ীরা তাদের বসিয়ে খাওয়ায়নি।আর কাজ করার ফলে তাদের সন্তান জন্মেও কোনো প্রকার সমস্যা হয়েছিলো না"।কিন্তু প্রতিটি মানুষের শারীরিক সক্ষমতা এক রকম নয়।কেউ কেউ শারীরিক ভাবে একটু দুর্বল হয় আবার কেউ কেউ খাবারের পুষ্টিগুণ গুলো ভালোভাবে না পাওয়ায় তাদের শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিনসের অভাব হয়।অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মায়ের শরীরেই বেড়ে ওঠে বাচ্চা তাই মায়ের শরীরের পুষ্টিগুণের চাহিদা বেড়ে যায়।যে সকল মেয়েরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী নয় তাদের দিয়ে এসময় কাজ করানো টা মোটেই উচিৎ নয়।এতে মায়ের সাথে বাচ্চার ও সমস্যা হয়।এসব বিষয়ে অবগত ছিলেন না মোহনার শাশুড়ী।যখন মোহনার ৩ মাস চলছিলো তখন।একদিন রান্নার কাজে তাকে ঝুঁকে কিছু করতে হচ্ছিল। অনেকক্ষণ পেটে চাপ পড়ায় সে পেটে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে কিন্তু সে সেদিকে তেমন গুরুত্ব দেয়না।ধিরে ধিরে ব্যথা বেড়ে যেতে থাকে।তখন কাজটি অসম্পূর্ণ রেখে উঠে দাঁড়িয় মোহনা কিন্তু ব্যথা কমার জায়গায় আরও বেড়েই চলছিলো।সহ্য করতে না পেরে মোহনা ডাক দেয় তার শাশুড়ীকে।তখনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।অপারেশনের পর ডাক্তার জানায় তাদের,মোহনা পেটে চাপ দিয়ে কাজ করার ফলে বাচ্চার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে যা বাচ্চা দুর্বল হওয়ায় তার মৃত্যুর কারণ হয়েছে।তখন আরুশ ও মোহনা একদম ভেঙে পড়ে। আরুশ এ সবের জন্য নিজেকে দায়ী করে।তার উচিৎ ছিলো মোহনার খেয়াল রাখা।কিসের অভাব আছে তার?কেন তার বাচ্চা অপুষ্টিতে দুর্বল ছিলো?কেন মোহনার ওসময় কাজ করতে হয়েছে?। আরুশ যদি একটু খেয়াল রাখতো তাহলে হয়তো আজ তারা তাদের সন্তান হারাতো না।

বর্তমান_____🖤

বারান্দায় বসে পুরনো সেই দিনগুলো মনে করছিলো আরুশ। কতো কষ্টে তাদের কাটিয়ে উঠতে হয়েছিলো নিজেদের প্রথম সন্তানের মৃত্যুর সেই কষ্টটা।হুট করে মোহনা আরুশের কোলে বসে পরে।আরুশের গলা জরিয়ে ধরে বলে ওঠে.....
-আরুশ, তুমি আমাকে এখন আর ভালোবাসো না(ঠোঁট উল্টিয়ে বলে কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে)
-কেনো?
-তুমি আমাকে একটুও আদর করো না,হুহ!
আলতো হেসে আরুশ মোহনার কোমর চেপে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে।দু'জনার নিঃশ্বাস একে-অপরের সাথে বারি খাচ্ছে। আরুশ দেরি না করে মোহনার ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়। প্রথমে ঠোঁটে ছোট চুমু দিয়ে ঠোঁটের আসে পাশেও চুমু দেয় আরুশ।তারপর আবারও মোহনার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয় সে।

!!
১ মাসের মাঝেই লাস্ট ইয়ারের ফাইনাল পরিক্ষা শুরু হবে।সেদিনের পর দিয়ে আজ ৪র্থ দিন হতে চললো কিন্তু তিশার কোনো খোঁজ নেই।পরিক্ষার প্রস্তুতির জন্য হলেও তিশার ভার্সিটি আশা উচিৎ।কিন্তু তিশা না ক্লাস করতে আসছে আর না ফোনটি অন করছে।তিশার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে দিহানের। দিহান তার এক মেয়ে ফ্রেন্ড অরিনকে বললো তিশার বাসায় যাওয়ার জন্য।অরিনের ও চিন্তা হচ্ছিল তিশাকে নিয়ে তাই সে রাজি হয়ে গেলো যাওয়ার জন্য। এখন অরিনের আসার অপেক্ষায় আছে দিহান।বেশ কিছু সময় পর অরিন ভার্সিটিতে এলো।দিহান, অরিনকে দেখা মাত্র দৌড়ে গেল তার কাছে। 
-কিরে!তিশার কি খবর?(দিহান)
-ভালো না রে।(অরিন)
-মানে?
-ও খুব চুপচাপ ছিলো।কিছুই বলছিলো না।উসকোখুসকো চুল আর চেহারার অবস্থাও খারাপ করে রেখেছে।দেখে মনে হচ্ছিলো কয় রাত ঘুমোয়নি।ওর এ অবস্থা দেখে যখন আন্টিকে জিজ্ঞেস করি, ওর কি হয়েছে তখন আন্টি কিছু একটা লুকোনোর চেষ্টা করছিলো।
চুপ করে শুনছিলো দিহান,অরিনের কথাগুলো।দিহান একদম নিশ্চিত কিছু একটা হয়েছে তিশার সাথে।নাহয় তিশার মতো মেয়ে শুধু একটা রিজেকশনে কখনোই এতোটা ভেঙে পরবে না।বরং হাত ধুয়ে দিহানের পেছনে লেগে যাওয়ার কথা ছিলো তার।উটপটাং যত কাজ আছে সেসব করে হলেও সে দিহানের ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা করতো।কিন্তু তিশার এমন অনাকাঙ্ক্ষিত রিয়াকশনই বলে দিচ্ছে, তিশার সাথে অবশ্যই কিছু হয়েছে।

!!
সন্ধ্যায় আনিসা বেগমের ফ্ল্যাটে আসেন মোহ ও তার শাশুড়ী একটু সময় কাটাতে।এসে দেখেন আনিসা বেগম এ অসময়ে ঘুমিয়ে ছিলেন।ব্যাপারটা বেশ সন্দেহজনক লাগলো মোহের কাছে।হটাৎ মোহের চোখ যায় টেবিলের উপর রাখা ডাঃ এর প্রেসক্রিপশনের দিকে।ওটি হাতে নিয়ে দেখে আজকের তারিখ।সিটি হসপিটালের বেশ নামকরা ডক্টর ডাঃফেইজের দেওয়া প্রেসক্রিপশন।সেই সাথে মোহ জানতে পারে তার মায়ের বিপি হাই।মোহ খুব রেগে যায় তার মায়ের ওপর বিষয়টি লুকোনোর জন্য।মোহের শাশুড়ী, আনিসা বেগমের প্রেসার এমন অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া টা ভালো মনে করলেন না তাই সে আজ রাত টা মোহ কে তার মায়ের সাথেই কাটাতে বলেন।বেশ কিছু সময় মোহদের সাথে কাটিয়ে সন্ধ্যার নাস্তা টা সেরে মোহের শাশুড়ী ফিরে যান নিজ গৃহে।মোহ, তার মা কে রেস্ট করতে বলে পা বারায় রান্নাঘরের দিকে।কিছু রান্না করা নেই তাই রাতের খাবার ব্যবস্থা টা মোহেরই করতে হবে।
এদিকে মোহের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে রিদান।হটাৎ তার মা কে একা ফিরতে দেখে রিদান এগিয়ে যায় তার কাছে।
-মা, তুমি একা যে!মোহ আসেনি?
-মোহ আসবে না বাবা।ওর মায়ের শরীর টা তেমন ভালো না তাই ও ওর মায়ের সাথেই আজ রাত টা থাকবে।
-কি হয়েছে মায়ের?
-বিপি হাই।
-আমি দেখা করে আসছি।
-যা।
দ্রুত পদে আনিসা বেগমের ফ্যাটে যায় রিদান।যেয়েই তার শাশুড়ীর খোঁজ-খবর নিতে ব্যস্ত হয়ে পরে সে।বেশ কিছু সময় শাশুড়ীর সাথে গল্প করে রিদান।এরই মাঝে মোহ সহজ কিছু রান্না শেষ করে রুমে এসে দেখে রিদান ও তার মা গল্প করছে।প্রায় আধা ঘন্টার মতো সময় কাটিয়ে রিদান চলে যাওয়ার জন্য দরজা অব্দি আসে সাথে মোহও।আনিসা বেগম তার রুমেই আছেন।রিদান কিছু না বলেই জরিয়ে ধরে মোহকে।মোহ অবাক হলেও পরে সেও জরিয়ে ধরে রিদানকে।রিদান মোহের ঘাড়ে মুখ গুঁজেই বলে ওঠে "I am going to miss you a lot"। রিদানের কথায় আলতো হাসে মোহ।সে ও তো রিদানকে অনেক মিস করবে।কি অদ্ভুত! কয়েকটি দিনেই তারা এতোটা আপন করে নিয়েছে একে-অপরকে যে একটি রাতের দূরত্বটাও চাইছে না তারা।বেশ কিছু সময় এভাবে একে-অপরের সাথে জরিয়ে থাকার পর মোহের থেকে সরে এসে রিদান পা বারায় নিজের ফ্ল্যাটের দিকে।রিদানের যাওয়ার পানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোহ। 





চলবে...




Writer:- Mahzabin




NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner