ঘুমের মাঝে মোহ ওর ঠোঁটে কারো স্পর্শ অনুভব করে। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে রিদান ওর ঠোঁটজোড়া দখল করে রেখেছে।মোহ নড়াচড়া না করে, চুপটি করে অনুভব করছে তার মিঃ হাসবেন্ডের স্পর্শ।বেশ কিছু সময় পর রিদান, মোহের ঠোঁট ছেড়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মোহের চেহারার দিকে।মোহ চোখ বন্ধ করে রাখায় রিদান ভাবছে মোহ ঘুম।রিদান বেশ কিছু সময় মোহের দিকে তাকিয়ে থাকার পর মোহের কপালে চুমু খায়। তারপর মোহ এর দুচোখের পাতায় এবং গালে চুমু দিয়ে মোহ কে নিজের বুকে জরিয়ে ঘুমিয়ে যায় সে,সাথে মোহ ও।
!!
সব প্যাক করা সম্পূর্ণ হলো আজ আনিসা বেগমের।রিদান মালামাল নেওয়ার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে।প্রায় ৮-১০ জনের মতো লোক ঠিক করেছে মালামাল নেওয়ার জন্য।কাজের লোক দিয়ে নতুন বাসা সম্পূর্ণ পরিস্কারও করিয়ে রেখেছে রিদান।মোহ এর মা বেশ অবাক হন রিদানের বিবেকবুদ্ধি দেখে।ছেলে টাকে কিচ্ছু বলতে হয় না, বলার আগেই সে সবটা করে ফেলে।মোহের মা সন্তুষ্ট তার মেয়ের জন্য রিদানের মতো মিঃ হাসবেন্ড পাওয়ায়।কিছু সময় পরই রিদান এসে নিয়ে যাবে আনিসা বেগমকে।এদিকে মোহ এর মামা-মামীও রওনা দিয়েছে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। হটাৎ কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজার দিকে এগিয়ে যান আনিসা বেগম। দরজা খুলে দেখেন রিদান এসেছে।
-আসসালামু আলাইকুম মা।(রিদান)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা।ভিতরে এসো।(আনিসা বেগম)
-মা, আপনি রেডি?
-হ্যাঁ।
-তবে চলুন যাওয়া যাক।
-চলো।
রিদান প্রাইভেট কার নিয়ে এসেছে।আনিসা বেগম গাড়িতে বসতেই রিদান গাড়ি স্টার্ট দেয়।প্রায় ৩০ মিনিটের মাঝে তারা পৌঁছে যায় বাড়ি।মোহ, তার মা কে দেখে জরিয়ে ধরে।আনিসা বেগম ও তার মেয়েকে জরিয়ে ধরে। তারপর তমা বেগম আর রিয়াদ আহসান এর সাথে কুশল বিনিময় করে চলে যান নিজের ফ্ল্যাটে।মোহ আর তার শাশুড়ী রান্না শেষ করে যাবেন আনিসা বেগমের সাহায্যের জন্য।
!!
মোহনার আজ-কাল কিছুই ভালো গালে না।আরুশ অর্থাৎ তার মিঃ হাসবেন্ড তাকে কোনো কাজই করতে দেয় না।আরুশ অফিসেও যায় না।অফিসের কাজগুলো ঘরে বসেই করে।আরুশ তার চাচার কোম্পানিতে চাকরি করে তাই সে চাচার সাথে পরামর্শ করেই,অফিসের কাজগুলো ঘরে বসে করার সিদ্ধান্ত নেয়।তার চাচাও এ ব্যাপারে সম্মতি দেয়।মোহনার যদি ওয়াশরুমেও যাওয়া লাগে তবেও আরুশ গেট পর্যন্ত সাথেই যায়।মোহনার সব কিছুতে আরুশের এমন এক্সট্রা কেয়ার ভালো লাগে না।এই সময় মোহনার বিভিন্ন ধরনের জিনিস খেতে ইচ্ছে করে কিন্তু আরুশের তাতেও সমস্যা।এটা অস্বাস্থ্যকর, ওটা অস্বাস্থ্যকর বলে মোহনাকে বাঁধা দেয়।বিকেলের দিকে মোহনার ভালো লাগছিলো না বসে থাকতে তাই সে ভাবে ছাঁদে গেলে ভালো লাগবে।আরুশ ওয়াশরুমে থাকায় মোহনা একাই এগিয়ে যায় ছাঁদের সিঁড়ির দিকে।কয়েকটা সিঁড়ি উঠতেই অসাবধানতা বশত মোহনার পা কাপড়ের সাথে বেঁধে মোহনা পড়ে যেতে নিলেই আরুশ এসে মোহনা কে ধরে।মোহনা কে ঠিক মতো দাড় করিয়েই ঠাস করে এক থাপ্পড় মারে আরুশ।রাগে আরুশের চোখগুলো লাল হয়ে গিয়েছে।
-কি জন্য একা একা উঠতে গেলি তুই?আমি কি মরে গিয়েছিলাম?আমাকে ডাকা গেলো না?আল্লাহ না করুক, তুই যদি পড়ে যাইতি তাহলে কি হতো?আগের বারের কথা ভুলে গিয়েছিস তুই?(আরুশ)
আরুশের প্রশ্নের কোনো জবাব নেই মোহনার কাছে।আসলেই ভুল করে ফেলেছে সে।মোহনা মাথা নিচু করে কেঁদেই চলছে।
-আগের বার আমার ভুলের জন্য আমি বাবা হওয়া থেকে বঞ্চিত হলাম।আবারও কি.....আর বলতে পারে না আরুশ।নিজেও কেঁদে দেয় সে।সন্তান হারানোর কষ্ট মা-বাবার থেকে ভালো আর কেউ বুঝতে পারবে না।মোহনা কিছু না বলে জরিয়ে ধরে আরুশকে।
-আমি অনেক দুঃখিত আরুশ।আর এমন হবে না।
আরুশও কিছু না বলে শক্ত করে জরিয়ে ধরে মোহনাকে।দুজনের চোখেই জল বিদ্যমান।
!!
দিহান বিবিএ লাস্ট ইয়ারে পড়ছে।মাস্টার্সে পড়ার জন্য সে বিদেশে এপ্লাই করতে চায়।স্কলারশিপ পেলে সে পাড়ি জমাবে বিদেশের মাটিতে।দিহান খুবই ভালো স্টুডেন্ট তাই সে অনেকটা আশাবাদী স্কলারশিপ নিয়ে।তার বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছে টা সে এখনো কেউকে জানায়নি।ভার্সিটির ক্যাম্পাসে একা বসে বিভিন্ন চিন্তায় মগ্ন দিহান।এমন সময় হটাৎ তিশা এসে বসে দিহানের পাশে।
-এইযে,মিঃভাবুক।কি এতো ভাবছো?
-তুমি কখন আসলা?
-এইতো এখন।
-ওহ।
-আমায় নিয়ে ভাবছিলা?
-তোমাকে নিয়ে ভাবার কি আছে?
-আমি কত্তো সুন্দরী,আমাকে কিভাবে পটাবা এগুলো ভাব্বা।
-তুমি সুন্দরী?
-অবশ্যই।
জোরে জোরে হাসতে থাকে দিহান।কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলে,
-তোমায় দেখলে শাঁকচুন্নি ও ভয় পাবে।(দিহান)
কথাটি বলে আবারও হাসতে শুরু করে দিহান।দিহানের কথায় বেশ কষ্ট পায় তিশা।নিজের অজান্তেই তিশার চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে।দিহান হাসির মাঝে তিশার চোখে পানি দেখে সাথে সাথে হাসি থামিয়ে দেয়।অবাক হয় সে।এতো ছোট বিষয়ে কেউ কিভাবে কাঁদতে পারে! কিন্তু কেনোই যেন দিহানের খুব খারাপ লাগে তিশার চোখে পানি দেখে।দিহান ধিরে ধিরে তিশার কাছে যেয়ে আলতো করে তিশার চোখের পানি মুছে দেয়।তিশা অবাক চোখে তাকায় দিহানের দিকে।দিহানের চোখে অদ্ভুত কিছু দেখতে পায় তিশা।
-সরি।(দিহান)
দিহানের ব্যবহারে খুব অবাক তিশা। ৩ বছরের ও বেশি সময় ধরে দিহানের সাথে ওর বন্ধুত্ব।কিন্তু দিহান কখনো ওর সাথে এতো কোমলতার সাথে কথা বলেনি। তবে আজ এমন কি পরিবর্তন এলো তাদের মাঝে!
!!
রিদি আর তার ২ বান্ধবী রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলো।দূর থেকে দাঁড়িয়ে মিহাদ দেখছে তার প্রিয় কে। খাওয়ার মাঝেই রিদিদের এক ফ্রেন্ড ফাহাদ এসে উপস্থিত হয়। ফাহাদের সাথে অনেক দিন পর দেখা হওয়ায় রিদির বান্ধবীরা তাকে ফরমাল হাগ করে।কিন্তু রিদি তা করে না।তাই ফাহাদ নিজেই রিদি কে জরিয়ে ধরতে যায় কিন্তু রিদি সরে যায়।
-কিরে,এতো দিন পর দেখা, একটা হাগ দিবি না?(ফাহাদ)
-কেন রে তুই কি আমার মায়ের পেটের পোলা?আমার ভাই লাগিস?এই হাগ টাগ করে আলগা পিরিত করার ইচ্ছা নাই আমার।পোলা মানুষ ১০০ হাত দূরে থাক।আমি আমার বরের পার্সোনাল প্রপার্টি।হুহ!!(রিদি)
রিদির কথায় ফাহাদ ফিক করে হেসে দেয়।
-মেয়েদের তো এমনই হওয়া উচিৎ। আসলেই তোর বর অনেক লাকি হবে রে।
-ঠেঙ্গের গু।ঝালমুড়ি খা। (রিদি)
ফাহাদের কথায়, রিদির দুই বান্ধবীর মুখটা কালো হয়ে যায়।তারাও তো মেয়ে কিন্তু রিদির মতো তারা তো ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায়ে রাখে না। রিদি ছেলেদের সাথে খুব একটা কথা বলে না কিন্তু তারা তো খুব ফ্রী তাদের ছেলে ফ্রেন্ডস দের সাথে।রিদির চলাফেরায় ফাহাদের মতো অন্যরা ও প্রসংশা করে কিন্তু তাদের কেউ এমন প্রসংশা করে না।এতে খুব হিংসে হয় তাদের।প্রত্যেক মুমিন মেয়েরই উচিৎ তার স্বামীর জন্য নিজের পবিত্রতা রক্ষা করে রাখা।শুধু শারীরিক সম্পর্ক করলেই মানুষ অপবিত্র হয় তাছাড়া হয়না এটি ভুল।ছেলেদের সাথে অবাধ মেলামেশা এবং অশ্লীল কথোপকথনের মাধ্যমেও মেয়েদের পবিত্রতা নষ্ট হয়। তারা ব্যাভিচারিনী হয়ে যায়,সাথেই তারা তাদের স্বামীর হক নষ্ট করে। রিদি তার পবিত্রতা ঠিকি রক্ষা করছে কিন্তু তার বান্ধবী রা নিজের পবিত্রতা নষ্ট করে নিজেদের সস্তায় রুপান্তরিত করছে।
দূর থেকে এগুলো দেখে মনে মনে খুব খুশি হয় মিহাদ।তার হবু বউ কতো সুন্দর করে তার হক নষ্ট হওয়া থেকে হেফাজত করছে।আজকাল তো আধুনিকতার নামে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরেছে অশ্লীলতা। এতো আধুনিকতার মাঝেও রিদি খুব সাধারণ একটি মেয়ে।সবসময় ঢিলেঢালা,ফুলহাতা জামা পড়ে সে।কোমড় পর্যন্ত ওড়না দিয়ে ঢাকা থাকে তার তাই তার শরিরের গঠন উপর থেকে বুঝা যায় না।মুখে তেমন কোনো মেকাপ করে না সে।লিপস্টিক আর কাজল দিয়েই সাজায় নিজেকে।রিদির এই সাধারণত্ব টাই অসাধারণ লাগে মিহাদের কাছে।প্রচন্ড ভালোবাসে সে এই মেয়েকে।এই মেয়ে কেই নিজের স্ত্রী বানাবে সে যেকোনো মূল্যে।
!!
মোহনা বিছানায় শুয়ে আছে। আজ বিকেলের ঘটনা মনে হতেই বুক কেঁপে উঠছে তার।যদি সে পড়ে যেতো তবে কি হতো! ভাবতে পারে না মোহনা।তার দু -চোখ গড়িয়ে পানি পরছে।হটাৎ আরুশ এসে মোহনার ওপর ভর দিয়ে শুয়ে পরে। মোহনার গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে অশ্রু গুলো শুষে নেয়। তারপর মোহনার যে গালে বিকেলে থাপ্পড় মেরেছিলো সে গালে অসংখ্য চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিতে থাকে।গালে ঠোঁট লাগিয়েই আরুশ বলে "সরি"। মোহনা আলতো হেসে আরুশকে আরো নিবিড়ভাবে জরিয়ে ধরে।বেশ কিছু সময় পাড় হওয়ার পর আরুশ মোহনার পেটে হাত দিয়ে বলে," আমার বাবা টা কেমন আছে?"।মোহনা বলে ওঠে,"বাবার মতোই পাঁজি হবে তার বাচ্চা"।
-শুরু হয়ে গেলা তো?বাচ্চাটা আমার এখনো পৃথিবীতেই এলো না আর তুমি এখন দিয়েই ওর পিছে লাগসো,হুহ!(আরুশ)
আরুশের কথায় হেসে দেয় মোহনা।আরুশের নাক টা হালকা করে টেনে দিয়ে মোহনা বলে....
-হইছে আর রাগ করতে হবে না। ঘুমাও।
আরুশ একটু হেসে মোহনা পেটে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে মেহনাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
!!
রাত ১০ টা বাজে রিদান রুমে এসেছে।অফিস থেকে এসেই গিয়েছিলো শাশুড়ীর ঘরে।সেখানেই দেখে তার মা ও স্ত্রী ও উপস্থিত। মোহ,মোহের মা,আম্মু(শাশুড়ী) আর রিদান একসাথে বেশ কিছু সময় গল্প করে কাটায়।অতঃপর মোহ তার শশুরকে খাবার দেওয়ার জন্য নিজ গৃহে এসে পড়লেও রিদান ও তার মা, আনিসা বেগমের সাথেই থেকে যান।রিদান,তমা বেগম ও আনিসা বেগম তিন জন একসাথে আনিসা বেগমের জোড়াজুড়িতে তার বাসায়ই রাতের খাবার সম্পাদন করেন।আর মোহ ও তার শশুর এক সাথে নিজেদের গৃহে ভোজন করে।মোহের শশুরের শরীর টা তেমন ভালো না থাকায় তিনি এখন অব্দি যাননি আনিসা বেগমের গৃহে।রুমে এসে ফ্রেশ হতে চলে যায় রিদান।একেবারে গোসল সেরেই বের হয় সে।বের হতেই দেখে মোহ মন খারাপ করে বিছানায় বসে আছে।
-মন ভালো?(আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে বলে রিদান)
-হু।
-ভেবে বলছো?
-হু।
-আচ্ছা মোহ তোমার HSC রেজাল্ট দিয়েছে কতদিন হলো?
-এইতো ২৫ দিনের মতো।
-তাহলে এখন তোমার কোনো ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ।
রিদানের কথায় মোহের চেহারায় মনমরা ভাব টা বিদায় নিয়ে এক খুশির ঝলক জায়গা করে নিয়েছে।মোহ বেশ উৎসাহী কন্ঠে প্রশ্ন করে...
-আপনি আমায় পড়াশোনা করার অনুমতি দিচ্ছেন?
-অবশ্যই।
খুশিতে মোহ রিদানকে জরিয়ে ধরে ছোট্ট করে বলে,"ধন্যবাদ"।রিদান ও আলতো হেসে জরিয়ে ধরে মোহকে।
বিকেলের দিকে মোহ এর শশুর-শাশুড়ী ঘুমিয়ে পড়ে আর মোহের মা ও থাকে তার দোকানে। তাই কোনো কাজ না থাকায় মোহ চলে আসে ছাঁদে।আজ ও আকাশ টা মেঘলা।মোহ একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ডুব দেয় চিন্তার সাগরে।
"যাকে হারিয়ে ফেলার ভয় তোমার মাঝে কাজ করে না,যার অল্প ব্যস্ততায় তোমার মাঝে অভিমান জমে না,যার ক্ষুদ্র কষ্টে তোমার মাঝে অস্থিরতা জন্মায় না, যার সাথে পুরো একদিন কথা না বললেও তোমার মাঝে কোনো কষ্ট অনুভব হয় না,তার থেকে দূরে থেকে "সে কেমন আছে"/"কোনো সমস্যা হয়নি তো তার"/"কোনো কষ্টে নেই তো সে" এমন হাজারো প্রশ্ন যদি ভিড় না জমায় তোমার মাঝে তবে কি তুমি আদৌও ভালোবেসেছো তাকে?"
-উহু না।(রিদান)
হটাৎ রিদানের কন্ঠ শুনে চমকে যায় মোহ। ছাঁদে তো ও ব্যতীত অন্য কেউ ছিলো না তবে রিদান কখন এলো।রিদান কি তবে সবটা শুনে নিয়েছে!
-কখন এলেন?(মোহ)
-যখন তুমি নিজের মাঝে হারিয়ে ছিলে।
-আসলে মেঘলা আকাশের দিকে বেশি সময় ধরে তাকিয়ে থাকলেই আমি আর নিজের মাঝে থাকি না,কেনোই জানি হারিয়ে যাই বিভিন্ন চিন্তার গহীনে।
-হু।
-চলুন ফ্রেশ হয়ে নিন।আপনার জন্য কিছু খাবার রেডি করি?
-উহু।কিছু সময় নাহয় ছাঁদেই থাকি?
-অবশ্যই।
!!
দিহান আর তিশা হাঁটছিলো রাস্তার পাশে দিয়ে। উদ্দেশ্য একটু সামনে যেয়েই তিশাকে রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে নিজেও রওনা দিবে বাড়ির দিকে। আজ একটা টপিকে গ্রুপ স্টাডি করতে যেয়ে খুব দেরি করে ফেলেছে তারা।চারিদিকে অন্ধকার ছেয়ে গিয়েছে।হাঁটার মাঝেই তিশা, দিহানের হাতটি ধরে। এতে দিহান অবাক হলেও কিছু বলে না।দিহান ভাবছে,গলিটি জনমানব শূন্য হওয়ায় তিশা হয়তো ভয়ে তার হাতটি ধরেছে।আর এদিকে তিশা ভাবছে,সে দিহানের হাত ধরলো কিন্তু দিহান কিছু বললো না তবে কি দিহানের ভালো লেগেছে তার হাত ধরায়?সেই সাথে মনে পড়লো সেদিনের দিহানের অদ্ভুত সেই চাহনি।দিহানের এমন ব্যবহার কি এটিই প্রকাশ করছে না যে দিহানের মনেও তিশার জন্য কিছু আছে!
-দিহান?
-হু।
-I love you.
দিহান অবাক চাহনিতে তাকিয়ে আছে তিশার দিকে।দিহান আগে থেকেই বুঝতো, তিশা তাকে পছন্দ করে কিন্তু তিশা এভাবে তাকে প্রপোজ করে বসবে তা ভাবেনি দিহান।এমনটি নয় যে দিহান অপছন্দ করে তিশাকে।কিন্তু পছন্দ করা আর ভালোবাসা কি এক?উহু কখনোই এক নয়।জীবনে চলার পথে অনেকেই পছন্দ হতে পারে আমাদের তবে কি সবাইকেই নিজেদের জীবনসঙ্গী বানানো যায়!শুধু পছন্দের উপর ভিত্তি করে কেউকে সারাজীবন সাথে রাখার ওয়াদা দেওয়া নেহাতই বোকামি অথবা ছলনা।
-কিন্তু আমি তোমায় ভালোবাসি না,তিশা।
-তুমি আমায় ভালোবাসো না?
-না।
-তাহলে সেদিনেই সেই অদ্ভুত চাহনি আর আজ আমি তোমার হাত ধরার পরেও যে তুমি কিছু বললে না!
-কোন অদ্ভুত চাহনি?আর আজ আমি ভেবেছি তুমি হয়তো ভয় পাচ্ছো তাই হাত ধরেছো,এতে কি বলবো আমি?
-ওহ।(নিচের দিকে তাকিয়েই বলে তিশা।তিশার চোখ দিয়ে অবাধ্য অশ্রুগুলো সমানে বেয়ে চলছে।)
-আমাকে ভালোবাসা যায় না?
-ভালোবাসা এভাবে হয়না তিশা।আমরা নিজের ইচ্ছায় কেউকে ভালোবাসতে পারি না।
-হুম,স্যরি।তোমার আর আমার সাথে আসতে হবে না।আমি একা চলে যেতে পারবো।
-কিন্তু.... আচ্ছা।
বলেই দুজনে এগিয়ে যায় নিজেদের গন্তব্যের দিকে।তিশার পা যেনো চলতেই চাইছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে তার।চোখের পানি গুলোও অবাধ্যের মতো বেরিয়ে আসছে।কিছু দূর যেতেই পেছন থেকে কেউ তিশার মুখ চেপে ধরে...............
!!
সন্ধ্যায়, টেবিলে বসে পড়ছে রিদি ঠিক সে সময় কল দেয় মিহাদ।মিহাদের এমন সময়-অসময়ে কল দেওয়ায় চরম বিরক্ত রিদি।
-এই কি সমস্যা আপনার?(রিদি)
-কই কোনো সমস্যা নেই তো।আমি তো আলহামদুলিল্লাহ সমস্যামুক্তই আছি।(হেসে জবাব দেয় মিহাদ)
-কল দেওয়ার থাকলে রাত ১১ টায় দিবেন।এর আগে-পরে কল দিলে খুব খারাপ হবে।(বলেই ফোনটা কেটে দেয় রিদি।)
রিদির এমন কাজের কোনো কারণ খুজে পেলো না মিহাদ।ভেবেছিলো আবার কল দিবে কিন্তু পড়ে ভাবলো রাত ১১ টায়ই কল দেওয়া ভালো।
!!
রাত ১১ টা বাজে, মোহ চোখ বুজে বসে আছে বিছানায়।সামনেই সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে রিদান।হটাৎ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই রিদান বলে ওঠে....
-কাল তোমাকে কোচিং এ ভর্তি করাবো।বিকেলের দিকে রেডি হয়ে থেকো।
-আচ্ছা।
রিদানের কিছু বলার আগেই মোহ এর ফোনে কল আসে।মোহ দেখে কোনো এক unknown নাম্বার হতে কল এসেছে। তাই ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে ফোনের দিকে,মোহ মনে করার চেষ্টা করছে নাম্বার টা পরিচিত কিনা!এদিকে এতো রাতে কল আসায় রিদানও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় মোহ এর দিকে।
-কি হলো কল রিসিভ করছো না যে?
-অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এসেছে।
-ধরে দেখো কে কল দিয়েছে।
-আপনি ধরুন।রং নাম্বার হলে যদি মেয়েদের কন্ঠ শোনে তাহলে বার বার কল করে ডিস্টার্ব করে।
-হু।দেও
একবার কল হয়ে কেটে গিয়েছে।দ্বিতীয় বার কল আসতেই কলটি রিসিভ করে রিদান।
-আসসালামু আলাইকুম।(রিদান)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।এটা কি মোহ এর নাম্বার নয়?(একটি ছেলে বলে ওঠে)
-জ্বি।
-মোহ তেমার পরিচিত কেউ হয়তো।কথা বলো।(বলেই ফোনটি মোহ কে দিয়ে দেয় রিদান)
-আসসালামু আলাইকুম। (মোহ)
-কি রে ফকিন্নি! ছেলেটা কে?
ফোনের ওপাশের ছেলেটির আওয়াজ শুনার সাথে সাথে মোহ খুশিতে আত্মাহারা হয়ে যায়।
-জেইন তুই?
-জ্বি।
-দোস্ত কত্তো দিন পর!কই ছিলি এতো দিন।এক্সাম শেষ হওয়ার পর থেকেই তোর কোনো খবর নেই।
-আরেহ ঝামেলায় ছিলাম জায়গাজমি নিয়ে।আজই দেশের বাড়ি দিয়ে ঢাকায় ফিরলাম।
-ওহ।
-ঐ ছেলে টা কে?
-আমার সোয়ামী। (একটু হেসে বলে মোহ)
-কিহ!তোর বিয়ে হয়ে গেছে?
-হ্যাঁ।তোকে অনেকবার কল দিসিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ ছিলো তোর।
-তুই কি মজা করছিস?
-আরেহ না।সত্যি, আমার বিয়ে হইছে........
আরো কিছু বলতে চাইছিলো মোহ কিন্তু তার আগেই কল কেটে যায়।কারণ বুঝতে পারে না মোহ।মোহ ভাবছে হয়তো নেটওয়ার্ক এর জন্য কেটে গিয়েছে। তাই মোহ আবার ও কল ব্যাক করে কিন্তু কল ঢোকে না,ফোন বন্ধ। মোহ দুশ্চিন্তায় পরে যায়।হটাৎ মোহ অনুভব করে দুটি হাত তাকে জরিয়ে ধরেছে।রিদান মোহকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,"তা তোমার সোয়ামি টাকে একটু আদর তো করতে পারো"।মোহের কানে রিদানের গরম নিঃশ্বাস গুলো বারি খাচ্ছে।এতে মোহ নিজের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করছে।কথাটি বলেই রিদান মোহ এর কানে আলতো কামড় বসায়।মোহ খামচে ধরে রিদানের হাত।মোহ এর কাজে রিদান আলতো হাসে।
-চলো ঘুমাবে।(রিদান)
-হু।(মোহ)
অতঃপর দুজনেই শুয়ে পরে ঘুমাবার উদ্দেশ্যে।
!!
রাত ৩ টা।
হটাৎ মোহনার ঘুম ভেঙে যায়। প্রচন্ড খুদা লেগেছে তার। পাশে তাকিয়ে দেখে আরুশ খুব শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। আরুশের এতো শান্তির ঘুম দেখে খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে মোহনার।মা হওয়ার জন্য বেচারি কত্তো কষ্ট করছে।রাতে ঘুমোতে পারে না,কিচ্ছুটি খেতে পারে না বার বার বমি হয়,কত্তো কত্তো ওষুধ ও খেতে হয় ওর।মাত্র ৫ টি মাসে তার অবস্থা এতো খারাপ হয়ে গিয়েছে।পেটে ভারি ভাব থাকায় হেটে-চলে,বসে-শুয়ে কোনোটিতে শান্তি পায় না সে।দিন তো সামনে আরো পরে আছে।আরো কত্তো কষ্ট সহ্য করতে হবে তার হিসেব নেই।আর এই মহাশয় বাবা হবেন কিন্তু কোনো কষ্টই সহ্য করতে হচ্ছে না তার।এমন অবিচার তো মানা যায় না।মোহনা আরুশের কানের কাছে যেয়ে আরুশের কানে খুব জোরে কামড় দেয়।আরুশের ঘুম ভেঙে যায় আর সে একপ্রকার চিৎকার করেই ঘুম দিয়ে উঠে পরে।সে গভীর ঘুমে ছিলো না দেখে তেমন সমস্যা হয়নি কিন্তু গভীর ঘুম হতে মানুষকে এভাবে জাগালে দূর্ঘটনা হতে পারে।
আরুশ উঠেতেই মোহনা তার আবদারের ঝুলি খুলে বসে।এতো রাতে তার পাস্তা খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। আরুশ এতে একটুও বিরক্তি প্রকাশ করলো না। সোজা চলে গেল কিচেনে পাস্তা বানাতে।
চলবে...
Writer:- Mahzabin