> ধাক্কা | Bangla New Comics Story | বাংলা নতুন রম্যগল্প
-->

ধাক্কা | Bangla New Comics Story | বাংলা নতুন রম্যগল্প

আজ শুক্রবার, শফিকের অফিস নেই। দুপুরে স্ত্রীর হাতের রান্না ভুনা খিচুড়ি আর গরুর মাংস খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার পর শরীরটা একটু ম্যাজ ম্যাজ করছিলো। ছোট খাটো একটা ঘুম দিয়ে উঠে দেখলো সন্ধ্যা হয়ে গেছে! বাইরে ঝুম বৃষ্টি দেখে তার মনের মধ্যে রোমান্টিকতা জেগে উঠলো। ভাবছে বউয়ের সাথে একটু রোমান্স করে নিলে মন্দ হয়না!

শফিকের স্ত্রী নাসরীন তখনও ঘুমুচ্ছে। চোখে কাজল, কপালে টিপ, গায়ে নীল রঙের একটা শাড়ি, শফিক মনে মনে ভাবলো, "আমার বউটা কত্ত সুন্দর!" আলতো হাতের ধাক্কায় সে স্ত্রীর ঘুম ভাঙালো।

নাসরীন চোখ মেললো, দেখলো শফিক তাকিয়ে আছে তার দিকে। স্বামীর মনোবাঞ্ছা বুঝতে পেরে মিষ্টি করে হাসলো নাসরীন। 

শফিক খুব আবেগ নিয়ে কিছু প্রেম ভালবাসার কথা বলতে যাবে, ঠিক এমন সময় বাড়ির বাইরে থেকে চিৎকার শোনা গেলো। কেউ একজন বলছে- "কেউ আছেন? আমাকে একটু সাহায্য করুন! একটু ধাক্কা দিন!"

শফিক না শুনার ভান করে আবার বউয়ের দিকে এগিয়ে গেল। তখন চিৎকারটা আবার শোনা গেল। নাসরীন বললো, "মনে হচ্ছে কেউ একজন বিপদে পড়েছে! যাও না একটু সাহায্য করো!"

"আরে ধুর! বাদ দাও তো ওসব!" নাক সিটকালো শফিক। তারপর মুচকি হাসি হেসে বললো, "দেখছো না কি চমৎকার আবহাওয়া? প্রেম করার জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত পরিবেশ আর পাবে? চলো না একটু রোমান্স করি!"

নাসরীনের ঠোঁটেও লাজুক হাসি ফুটে উঠলো, "কোনো রকম অসভ্যতা করবে না, বলে দিচ্ছি কিন্তু!"

"পৃথিবীর সকল প্রেমিকরা অসভ্য মাই লাভ..." শফিক আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু বাইরে থেকে আবার চিৎকার শোনা গেল- "আল্লাহর এই দুনিয়ায় কি আমারে সাহায্য করার মত কেউ নাই? একটু ধাক্কা দেন না ভাই"!

নাসরীন বললো, "আমার মনে হয় তোমার যাওয়া উচিত।"

"কিন্তু বাইরে তো অনেক বৃষ্টি! রাস্তায় পানি জমে গেছে!"

"তাতে কি হয়েছে? একজন লোককে সাহায্য করার জন্য একটু কষ্ট না হয় করলে?"

"ধুর! বাদ দাও না!" বিরক্ত হচ্ছে শফিক। "বৃষ্টির মধ্যে হয়তো কোনো ঠ্যালাওয়ালার ঠ্যালাগাড়ির চাকা গর্তে পড়ে গেছে! এখন ডাকছে ধাক্কা দেয়ার জন্য! কে যাবে এই বৃষ্টির মধ্যে কাঁদা পার হয়ে তাকে সাহায্য করতে?"

"শফিক, তুমি কি গত বছর বৃষ্টির সেই দিনটিন কথা ভুলে গেছো? ভুলে গেছো সেদিন কি ঘটেছিল?"

শফিক ভোলেনি গত বছরের কথা। ঠিক এক বছর আগে, এমনই এক বৃষ্টির দিনে নাসরীন হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যথা! প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাস্তায় তখন হাঁটু সমান পানি জমে গিয়েছিল। শফিক কোনোমতে একটা গাড়ি ঠিক করে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলো। পথে একটা ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকায় গাড়ির চাকা আঁটকে গেলো।

এদিকে নাসরীনের অবস্থা তখন শোচনীয়, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে না নিলে হয়তো বাঁচানো যাবেনা। শফিক অনেক ধাক্কাধাক্কি করেও গাড়ির চাকা গর্ত থেকে তুলতে পারলো না! আর কোনো উপায় না পেয়ে সে চিৎকার করে ডাকছিলো, "ভাই! কেউ কি আছেন? আমাদের সাহায্য করুন! একটু ধাক্কা দিন! নইলে আমার স্ত্রীকে বাঁচানো যাবেনা"!

শফিকের কাঁতর কণ্ঠের চিৎকার শুনে আশে পাশের বাড়ি ঘর থেকে কিছু লোকজন এই ঝুম বৃষ্টির মাঝেও বেরিয়ে এসেছিলো। বৃষ্টি, কাঁদা, পানি সব উপেক্ষা করে তারা গায়ের সমস্ত জোর এক করে গাড়িটাকে পেছন থেকে ধাক্কা লাগালো। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় গাড়িটা গর্ত থেকে তোলা সম্ভব হলো।

সেদিন সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছুতে পেরেছিলো বলেই শফিকের প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রাণ রক্ষা পেয়েছিল। কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে না এলে এটা সম্ভব ছিলো না!

"কি ভাবছো?"

নাসরীনের প্রশ্নে বাস্তবে ফির এলো শফিক। মাথা নেড়ে বললো, "না, আমি ভুলিনি!"

"তাহলে বসে আছো কেন?" তাগাদা দিলো নাসরীন। "যাও, লোকটাকে সাহায্য করো। রোমান্স করার টাইম তো অনেক পাবে! কিন্তু লোকটাকে এখন সাহায্য না করলে তার হয়তো তার বিরাট কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে!"

আবারো চিৎকার শোনা গেলো, "আল্লাহর দোহাই লাগে ভাই! একটু ধাক্কা দিন!"

নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাসা থেকে বের হয়ে আসলো শফিক। এমনিতেই সন্ধ্যা হয়ে গেছে, তার উপর বৃষ্টির কারণে আকাশ ঘন কালো! রাস্তার পাশের বাতিগুলোও জ্বলছে না। মনে হচ্ছে যেন মধ্যরাত! মনে মনে বিপদে পড়া লোকটাকে গালি দিল শফিক, "শালা! বিপদে পড়ার আর সময় পেলি না? দিলি তো আমার রোম্যান্টিক মুহূর্তটা নষ্ট করে!"

সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শফিক কাঁদা পানির মধ্যে অনেকটা আন্দাজে এগিয়ে গেল। এখনও চিৎকার শোনা যাচ্ছে, "ভাই! কে আছেন? একটু ধাক্কা দিন! দয়া করে একটু ধাক্কা দিন!"

শফিক চিৎকার করলো, "ভাই আপনি কোথায়? আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা!"

অচেনা কণ্ঠে উৎসাহ প্রকাশ পেল! যেন প্রচণ্ড হতাশার মাঝে আলোর দিশা খুঁজে পেয়েছে! "এই যে ভাই! এইযে! আপনার ডান দিকে।"

শফিক খেয়াল করলো আওয়াজটা রাস্তা থেকে নয়, বাড়ির পেছনে বাগানের দিক থেকে আসছে। এই সময় বাগানের মধ্যে কি সমস্যায় পড়েছে লোকটা? ওদিকে তো কোনো গর্ত নেই!

শফিক কাঁদা মাড়িয়ে আরও সামনে এগিয়ে এলো। বাগানের ভেতর ফুল গাছ গুলো চোখে পড়ছে। কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। শফিক আবার বললো, "ভাই, আপনাকে তো দেখছি না আমি"!

"আরো সামনে আসুন ভাই! মাঝখানের ফাঁকা যায়গাটাতে আসুন।"

শফিক ফুলগাছ পার হয়ে এসে ফাঁকা যায়গাতে দাঁড়ালো। এতক্ষণে আবছাভাবে নজরে পড়লো- একটা লোক বাগানের ভেতর দোলনার মধ্যে বসে আছে। অন্ধকারে ভালো করে বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু মনে হচ্ছে লোকটা সম্পূর্ণ উলঙ্গ! ঘটনা কি? পাগল না তো?

লোকটা খ্যাক খ্যাক করে হাসলো। দাঁতগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! 

"ভাই, অনেকক্ষণ ধরে এই দোলনাটাতে বসে আছি। একটু দোল খেতে খুব ইচ্ছে করছে। এত্ত ডাকছি, কেউ আসছে না! আপনি একটু ধাক্কা দিন না!"

শফিক বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো। 







Writer:- নাজিম উদ দৌলা






(একটি বিদেশী শর্টফিল্ম অবলম্বনে)
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner