রোদমিলা এই জঙলের কোথায় হারিয়ে গেলো,, এসব ভাবতে ভাবতে শিশীর বাড়িতে এসে শুয়ে পরলো,,
কিন্তু ওর মাথা থেকে এই জিনিসটা সরতেছেনা যে,, রোদমিলা কেনো প্রতিদিন রাতেই ওর সংগে দেখা করে,, দিনের বেলা কেনো দেখা করে না?
আর জঙলের কোথায় গিয়ে মিশে যায়,,
খুজে পাওয়া যায় না কেনো,,
কেউ ওকে চিনেওনা কেনো?
আর ওই লোকটাই বা কে,, যিনি ওকে জঙলে প্রবেশ করতে নিষেধ করলো,,
তাহলে কি রোদমিলা কোনো সাধারণ মানুষ না?
রোদমিলা যদি মানুষ ই না হয়,, তাহলে ও কে আর কি চায়?
কেনো এমন করতেছে,, এর শেষ কোথায়?
রোদমিলার সৌন্দর্য আর কথাবার্তা চালচলন ও স্বাভাবিক মানুষের মতো,,
ওর চোখে শিশীরের জন্য গভীর প্রেমের ছাপ ও দেখা যায়,,
শিশীর অনুভব করলো,, রোদমিলার জন্য ওর বুকটা চিনচিন করছে,, তারমানে ও নিজেও রোদমিলাকে ভালোবেসেছে,,
শিশীর সিদ্ধান্ত নিলো,, আগামীকাল রোদমিলাকে সরাসরি প্রশ্ন করবে,, তারপর ওর মুখের উত্তর শুনে সবকিছু চিন্তা ভাবনা করবে,,
কিন্তু তার আগে এটা প্রমান করতে হবে,, রোদমিলা কি আসলে মানুষ নাকি অন্য কিছু,,
যদি অন্য কিছু হয়,,তাহলে সেটাই বা কি?
আর ও যাই হোক না কেনো,, ওকে তো ভালোবাসছি,,ও আমাকে ভালোবাসে,,, আমার তো কোন ক্ষতি করবে না,,
আমিও আমার জীবন থাকতে ওর কোন ক্ষতি হতে দিবো না,,
এসব ভাবতে ভাবতে শিশীর ঘুমিয়ে পরলো,,
রোদমিলা হলো জলপরী রাজ্যের রাজকুমারী,,
ওর মা বাবা দুজনেই এরাজ্যের প্রধান,,
উনারা কিভাবে যেনো খবর পেলো রোদমিলা একটা মানবের প্রেমে পরেছে,,, আর এটা তাদের জন্য শোভা পায় না,,
তাই উনারা রাজ দরবারে রোদমিলা আর ওর বান্ধবীদের ডাকলো,,
সকলের উপস্থিতিতে রোদমিলাকে জিজ্ঞেস করলো,, তুমি কি কোনো মানব এর সংগে সম্পর্ক করছো?
রোদমিলা মাথা নারিয়ে বললো,, জ্বি জাহাপনা,, আমি একজন মানব এর প্রেমে পরছি,,
ওর বাবা হুংকার দিয়ে বললো,, তুমি কি জানো এর পরিনতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে,,
তোমাকে ১০০০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে আর ওই মানব এর মৃত্যু অবধারিত হবে,,
রোদমিলা বললো,,
জাহাপনা আপনি আমার জন্মদাতা,, আমার রাজা,,,
আপনার কাছে আমি মিনতি করে বলছি,, আপনি একবার শুধু মানবটার সংগে কথা বলে দেখুন,,
তারপর আপনার সব হুকুম আমি মাথা পেতে নিবো,,,
রোদমিলার মা,, মহারানী তার মেয়ের এমন আকুতি মিনতি দেখে একটু দয়া হলো,,
উনি বললো,, ঠিক আছে জাহাপনা,,, আপনি ওর সংগে গিয়ে সেই মানবটাকে একবার দেখে আসুন,,
তারপর আমরা আমাদের মতামত দিবো,,
রাজসভার সবাই একই মতামত পোষন করলো,,
মহারাজা তাই বললো,, ঠিক আছে,, আজকে আমি আর মহারানী ছদ্মবেশে ওই মানবের সংগে গিয়ে দেখা করে আসবো,,
যদি আমরা ওই মানবের কোন খারাপ দিক দেখি,, তাহলে তোমাকে ভুলে যেতে হবে ওই মানবকে,,
আর যদি মানবটা ভালো হয়,, তাহলে অবশ্যই আমরা তোমার প্রেমের প্রাধান্য দিবো,,
রোদমিলা অনেক খুশি হলো,, ওর বান্ধবীরা বললো,,আজকে তোর শিশীরের পরীক্ষা হবে,, কতো ভালোমানুষ সে,, এটার পরীক্ষায় হবে,,
রোদমিলা হাসি দিয়ে বললো,, আমার বিশ্বাস আছে,, আমি ওকে অনেক গভীর থেকে পর্যবেক্ষন করেছি,,, ও জিতবেই সকল পরীক্ষা,,
ভরদুপুরে শিশীর পান আর সুপারি কিনতে বাজারে গিয়েছে,,
ভালো দেখে কিছু পান আর সুপারি,, চুন,, ইত্যাদি কিনে,, বাড়ি ফিরতেছে,,
এমন সময় রাস্তায় দুজন বুড়ো পুরুষ আর মহিলার সংগে ওর দেখা,,
শিশীরের কাছে এসে বললো,,
বাজান,, আমরা দুইজন অসহায় মানুষ,, আমাগো কাছে কতগুলো সোনার গহনা আছে,, আমরা এই বাজারে একা একা এই গহনা গুলো নিয়ে চলাফেরা করতে ভয় পাইতেছি,,
তোমাকে দেখে আমাদের ছেলের বয়সী মনে হলো,, যদি কিছু মনে না করো,, এই গহনা গুলো একটু রাখো,, আমরা বাজার থেকে কিছু কেনাকাটা করে আইসা,, আবার নিয়ে যাবো,,
শিশীর বললো,, বুড়ি মা,, আপনারা কেনো এতো গহনা নিয়ে বের হইলেন,, দিনকাল ভালো না,, যদি এগুলো কেউ চুরি করে নিয়ে যায়,, তখন কি করবেন?
বুড়ি বললো,, ৪ গ্রাম পরে আমার মেয়ের বাড়ি,, আমার নাতনীর বিয়ে তো,, তাই ওর জন্য এই গহনা গুলো নিয়ে যাচ্ছি,,,
এখন যদি তুমি একটু গহনা গুলো রেখে,, আমাদের আরো কতকিছু কেনা কাটা করার সুযোগটা দিতে,তাইলে তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো,,
শিশীর বললো,,ঠিক আছে,, আপনারা গহনা গুলো দিন,, আমি ঐ গাছের নিচে বসে থাকবো,, আপনারা জলদি করে আইসেন,,
তারপর বুড়ো-বুড়ি তাদের গহনার পুটলিটা শিশীরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে,, বাজারের ভেতর ঢুকে পরলো,,
শিশীর পুটলিটা হাতে নিয়ে বুঝলো বেশ অনেকগুলো গহনা আছে,,
কিন্তু গ্রামের অসহায় বৃদ্ধ মানুষ গুলো ওকে বিশ্বাস করে,, আমানত রেখে গেছে,, এগুলোর প্রতি লোভ কোনভাবেই করা যাবে না,,
গাছের তলায় বসে,,শিশীর বসে বসে বাঁশি বাজাচ্ছে আর রোদমিলাকে স্বরন করতেছে,,
রাত হলেই আজকে কি কি জিজ্ঞেস করবে,, সেগুলোর চিন্তা করতেছে,,,
প্রায় ২ ঘন্টা হয়ে গেলো,, বুড়ো-বুড়িরা আসছে না,,
এদিকে বিকেল ও হয় গেলো,,, ওর মামা বাড়ি থেকে একটার পর একটা কল আসতেছে,,
শিশীর কল ধরে বললো,,, আমি আসতেছি একটু পর,,
তারপর বাঁশি বাজাচ্ছে,, চোখ খুলে দেখে বুড়ো-বুড়িরা আসছে,, ওকে দেখে উনারা খুব খুশি চোখে তাকিয়ে আছে,,
শিশীর বললো,, বুড়ি মা,, আপনাদের আনানত এর জন্য এখনো বসে আছি,, ভয় পেয়েছিলাম আপনাদের আবার কিছু হলো না তো,,
উনারা বললো,, না বাবা আমাদের কিছু হয়নি,,, তবে তুমি খুব ভালো ছেলে,, এই জমানায় এমন ভালো ছেলে খুজে পাওয়া যায় না,,
তোমার মা বাবা নিশ্চয়ই ভালো মানুষ,, নয়তো এমন সন্তান সহজে কোনো মায়ের পেটে হয় না,
শিশীর হাসি দিয়ে বললো,, দোয়া করবেন আমার জন্য,,
উনারা শিশীরের মাথায় আর পিঠে হাত বুলিয়ে,, দোয়া দিয়ে চলে গেলো,,
শিশীর ও বাড়ি ফিরে গেলো,,
ওর মামা জিজ্ঞেস করলো এতো দেরি হইছে কেনো?
শিশীর সবকিছু খুলে বললো,,,
ওর মামা শুনে বললো,, তোর সংগে নিশ্চয়ই ভালো কোনো জিন-পরীর দেখা হইছিলো,, উনারা কোনো মানুষ না,,, তাই তোকে পরীপরীক্ষা করার জন্য এমন টা করেছে,,
এই আশে পাশের চৌদ্দ গ্রামে এমন বুড়ো-বুড়ি নেই,,, যাদের কাছে এতগুলো গহনা থাকতে পারে,,
তোর ভাগ্যভালো তুই সততার পরিচয় দিয়েছিস,,
শিশীর এসব কথা কানে নিলো না, কারন ও জানে,, ভালো কিছু করলে,,তার ফলও ভালোই হয়, রাত হলো - পান সুপারি গুলো নিয়ে শিশীর বেরিয়ে পরলো।
চলবে...
Writer:- Unknown