নিজেদের একমাত্র সন্তান মারা যাওয়ার ধাক্কাটা তখনো সামলে নিতে পারেনি তখনো পরিবারটি, অন্যদিকে বেড়েই চলতে লাগলো এমন সব অদ্ভুতুড়ে উৎপাত দিন দিন। ১৯৯৭-২০০০ মাত্র তিন বছরের মধ্যেই এক এক করে অন্য ভাইয়ের পুরো পরিবারের সবাই মারা গেল। প্রথম দিকে ছেলেদের উপরই পালাক্রমে আক্রমন চলে বেশি সেই অশরীরীর।
এরপর এক এক করে দুই ছেলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে ও কিছু দিন পরেই এক ছেলে মারা যায়। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি মাও। বাকি ছেলেদেরও এবং বাবারও নাকি এমনই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। যদিও তাদের সাথে ঘটা ঘটনা গুলোর তেমন বিস্তারিত বিবরন পাওয়া যায় নি আর।
তবে এটা শোনা যায় যে জানাজার আগে তাদের যারা গোসল করিয়ে ছিল, তারা নাকি মৃতের দেহে অনেক আঘাতের দাগ দেখতে পান। অনেকটা জোরে থাপ্পর মারলে যেমন হাতের ছাপ পড়ে থাকে, আবার পিঠে পেটে জোরে ঘুসি মারলে যেমন কালসিটে পরে তেমন।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো এরা যেখানে মারা যায় সবার রুমই ভেতর থেকে আটকানো ছিলো।
তো এভাবে পরিবারের সবগুলো মৃত্যুর সাক্ষী হয়ে শেষ পর্যন্ত সেই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী ই অবশিষ্ট ছিল। ততদিনে বয়সের ভারেও জেকে ধরেছে তাদের।
তবে এতো কিছুর পরেও এ বাড়ি থেকে কিন্তু যাননি তারা। হয়তো সেটাই শেষ করা ভুল ছিল সেই পুলিশ কর্মকর্তার। অথবা হয়তো তিনি আর নিতে পারছিলেন না। ২০০১ সালে একদিন সেই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত দেহটাও পাওয়া গেল তার নিজের ঘরে, ফ্যানের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায়।
এটাই শেষ মৃত্যু ছিল ওই বাড়ির, আর সব ঘটনার সাক্ষী হয়ে বেচে রইল এক বৃদ্ধা মহিলা। যিনি সেই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী।
তবে এর পর তিনি আর ওই বাড়িতে থাকেন নি, আবার যানও নি। সাথে লাগোয়া যে তিন তলা বাড়িটা সেটার তিন তলায় থাকতে শুরু করেন তিনি। ছবিতে গোল করে মার্ক করা যে জানালাটা দেখা যাচ্ছে, সেই রুমেই থাকতেন তিনি।
আশপাশের অনেকেই অনেক অদ্ভূতুড়ে ঘটনা দেখতে পান এই বাড়িতে। বিশেষ করে তিন তলা বাড়ির দোতলা থেকে, মূলবাড়ির যে আধা ছাদে আসার যায়গাটা, সেখানে নাকি অনেকেই হটাৎ তাকিয়ে এক কালো ছায়ার মত অশরিরিকে চলাচল করতে দেখেছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, সেটা নাকি ঠায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিল তাদের দিকে। কেউ কেউ সেটাকে মনের ভুল ভেবে ভুলে যেতে চায়। আর কারো কারো মনে রয়ে আজীবনের জন্য ভয়াল এক স্মৃতি হিসেবে।
পরিবারটির সাথে এমন ভয়ঙ্কর সব ঘটনা ঘটার কারন খুঁজতে গেলে বেশির ভাগ লোকই মনে করেন, তাদের এই পারিবারিক ভালোবাসা ও ছেলেদের সাফল্য, বিশেষ করে সেই একমাত্র ছেলের পুলিশে চাকরি পাওয়া, অনেকেরই চক্ষুশুল হয়ে ওঠে।
আর এসব কারনেই নাকি তাদের উপর কালো যাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিক করা হয়েছিল।
এবং এই কারনে হয়তো সেই বাড়ীতে জ্বিনদের উৎপাত শুরু হয়। অনেকেই এমন কি এখনও রাতে ওই বাড়ি থেকে অদ্ভুত সব আওয়াজ পান। গভীর রাতে হঠাৎ হঠাৎ জোরে চিৎকার চেচামেচির শব্দ ভেসে আসে বাড়ি থেকে, যদিও বা পুরো বাড়িতে কোন কাক-পক্ষিটিও থাকতো না, বা থাকেও না।
ওদিকে পুলিশের স্ত্রী বৃদ্ধা মহিলা পেছনের তিন তলা বাড়ীটির ওই একটা রুম নিয়েই থাকতো, তার পুরো বাড়িতে কোনো ভাড়াটিয়া থাকতো না। দীর্ঘদিনে বাড়িটি এলাকায় বুড়ির বাড়ি নামেই খ্যাতি পেয়ে যায়।
তবে ঐ বৃদ্ধা মহিলাকে সেই বাড়িতে শেষ ২০১৪ সালেই দেখা যায়।
হঠাৎ করেই কোথায় যেন গায়েব হয়ে যায় সে!!
গায়েব হওয়া বলার পেছনে কারন গুলো হলো, কেউ তার যাওয়া বা আসার দৃশ্য দেখেনি।
এমনকি খোজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় তার কোনো পরিচিত আত্মীয়দের বাড়িতেও যায় নি, কারন আসলে তার তেমন কেও ছিলই না।
আর সব থেকে আজব কারনটা হল, বাড়ির ভেতরের সব কিছু সেই স্বাভাবিক ভাবে আগের মতই ছিল। কেউ চলে গেলে যে নূন্যতম কিছু নেয়ার ব্যাপার থাকে, তারও কোন প্রমান পাওয়া যায় নি।
সবার মনে এক অসঙ্গায়িত প্রশ্ন রেখেই মিলিয়ে গেল সেই বুড়ির বাড়ির বুড়ি।
শেষ করবো বাড়িটির বর্তমান অবস্থার সামান্য একটু বর্ননা দিয়েই।
বাড়িটি সেই ২০১৪ সাল থেকে আজ অব্দি ঠিক সেভাবেই পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়েই আছে।
আপনি চাইলে যেকোন সময় বাড়িতে গিয়ে ভেতরে দেখে আসতে পারেন। ভেতরের সমস্ত আসবাবপত্র, টিভি, রেফ্রিজারেটর, সোফা খাট সব খুটিনাটি জিনিস একটাও এখনও বাসা থেকে গায়েব বা চুরি হয় নি। তবে সবকিছু লন্ডভন্ড অবস্থায় পড়ে আছে।
যেন কেউ তার প্রবল আক্রোস ঝেড়েছে বাড়ির সব কিছুর উপর। আর দিনে যান বা রাতেই, সাবধান এ বাড়ির চারপাশে সব সময় এক ভয়ঙ্কর দর্শন বিশাল কালো রঙের কুকুর ঘুরে বেড়ায়, যেন অতি সযত্নে পাহারা দিচ্ছে এই মৃত্যুপুরীকে।
এমন কি গাছের আমটি পর্যন্ত পেড়ে খাবার সাধ্যটি নেই কারো।
আর যারাই বা সব বাধা টপকে পেছন দিয়ে পাচিল টপকে ভেতর পর্যন্ত গিয়েছে, কেউই অদৃশ্য কারো হাতে দু চার টা চড় থাপ্পড় না খেয়ে খালি মুখে ফেরেনি লোকমুখে শোনা যায়।
এমনকি একটি ভৌতিক অনুসন্ধানকারী টিমের একজনকেও সেই দোতলার রুমে আঘাতের স্বীকার হতে হয়েছিল, কে যেন পেছন থেকে স্বজোরে ঘুসি দেয় তার পিঠে, আর ভাঙা সোফাটার উপর লুটিয়ে পড়ে সে। তারপরে সাথে সাথেই বের হয়ে যায় টিমটি।
টিমের সেই ছেলেটার জ্বর শরীর ব্যথা ছিল বেশ কয়েক সপ্তাহ।
তারপর ছেলেটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।
আসলে কি কারণ ছিল সেইসব ঘটনার পেছনে?
কালো জাদু নাকি অন্য কিছু?
তা আজও রহস্যই রয়ে গেছে...
সমাপ্ত...
Writer:- Akiluz Zaman