> কুমরাল আবদাল | কুমরাল আবদাল এর জীবনী | History | Ottoman Empire | Kumral Abdal
-->

কুমরাল আবদাল | কুমরাল আবদাল এর জীবনী | History | Ottoman Empire | Kumral Abdal

"কুমরাল আবদাল" সম্পর্কে দুটি বিখ্যাত তুর্কি ইতিহাস বইয়ে তার নাম উল্লেখ আছে। তাদের মধ্যে

একটি হল তেভারিহ-ই আল-ই ওসমান
বইটি লিখেছেন "আসিক-পাসাজাদা"

আর দ্বিতীয় বিইটির নাম হেস্ত বিহিস্ত
বইটি লিখেছেন "ইদ্রিস-ই বিতলিসী" 

আপনি যদি ইংরেজিতে তার সম্পর্কে তথ্য পেতে চান তবে তুরস্কের এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম, রিলিজিয়াস ফাউন্ডেশনে তার সম্পর্কে তথ্য রয়েছে।

উসমানী সাম্রাজ্যের ইতিহাসে "কুমরাল আবদাল" নাম টা উল্লেখযোগ্য ভাবে স্মরনীয়। "কুমরাল আবদাল" উসমানী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা উসমান গাজীর ধর্মীয় ও আদ্ধ্যাতিক গুরুদের মধ্যে একজন। কুমরাল আবদাল একজন সুফি ও সাধক এবং সেই সাথে একজন দরবেশ ছিলেন। তাঁর কথা ছিল জ্ঞান ও উপলব্ধিতে পরিপূর্ণ। কখনও কখনও, তিনি এমন কিছু বলতেন যা সাধারন লোকেরা বুঝতো না কিন্তু তা জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ ছিল। তার নামে তুরস্কের অনেক জায়গার নামকরণ করা হয়েছে। "কুমরাল আবদাল" একজন কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং তিনি উসমানী সাম্রাজ্যের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

"কুমরাল আবদাল" ১২১০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার আগে "কুমরাল আবদাল" বুসরা'র ইয়েনিশেহিরে বসবাস করতেন। তিনি উসমান সম্পর্কে যখন বুঝতে পারে যে এই ছেলেটি ভবিষ্যতে একটি সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করবে! তারপর থেকে সে উসমান গাজীর সাথে যুদ্ধে অংশ নিতে শুরু করে। "কুমরাল আবদাল" যুদ্ধে উসমানের বাহিনীর পতাকাবাহী ছিলেন।

গৃহহীন, ছন্নছাড়া একদম সাদামাটা জীবনযাপন করতেন "কুমরাল আবদাল" তিনি সবসময় বলতেন এই পৃথিবী একটা মুসাফির খানা এখানে সবাই মুসাফির রাজা থেকে শুরু করে একদম রাস্তার ফকির পর্যন্ত তাই তিনি সবসময় মুসাফির এর মতোই জীবনযাপন করতেন। সাধারণ মানুষ মাঝেমধ্যে তাকে আধপাগল মনে করত। সে অনেকটা আল্লাহর জন্য পাগল-টাইপের মানুষ, সবাই তাকে বুঝবে না। 

(তবে আমি তাকে  অনেক ভালোবাসি। আমি মনে করি এমন পাগল মানুষ হলেও কেয়ামত সহজ হতো আমার জন্য)

"কামাল-পাসাজাদা" সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিকরা মনে করেন কুমরাল আবদাল এর পূর্বপুরুষরা মোঙ্গলিয়ার অধিবাসী ছিলেন। সে হিসেবে কুমরাল আবদাল একজন মোঙ্গল। ইসলাম গ্রহনের পূর্বে তার নাম দুরুত বা তুরগুত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরতগ্রুল গাজীর সহযোগী এবং উসমান গাজীর শশুর শায়েখ এদেবআলী এর সংস্পর্শে এসে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার পর তার নাম রাখা হয় "কুমরাল আবদাল" কারন...

কুমরাল অর্থ (চুল, দাড়ি, গোঁফের জন্য) হালকা বাদামী বা গাঢ় স্বর্ণকেশী।

আবদাল অর্থ আল্লাহর ওলিদের বিশেষ দল।

হযরত শুরাইহ ইবনে উবাইদ (রহ.) বলেন, হজরত আলী (রা.) ইরাকে অবস্থানরত অবস্থায় তাঁকে শামবাসীদের ব্যাপারে বলা হলো, আপনি তাদের ওপর অভিশাপ করুন! তখন তিনি বলেন, না, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে শাম ভূখণ্ডে আবদালরা (আল্লাহর ওলিদের বিশেষ দল) থাকেন, তাঁরা ৪০ জন থাকেন, যখনই তাঁদের থেকে একজন মারা যান, আল্লাহ তাঁর স্থানে অন্য একজনকে রাখেন, তাঁদের বরকতে বৃষ্টি হয় ও শত্রুর ওপর জয়লাভ হয়। ভবিষ্যতে তাঁদের অছিলায় শামবাসীদের থেকে আজাব উঠিয়ে নেওয়া হবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮৯৬)

তিনি ছিলেন শায়েখ এদেবালির একনিষ্ঠ শিষ্য। সে সময় শায়েখ এদেবালি এস্কিসেহিরের কাছে ইটবার্নু নামক একটি গ্রামে বাস করতেন এবং তিনি সেখানে তার ছাত্রদের কোরআন, হাদিস, ফিকাহ শেখাতে এবং মানুষকে শান্তির বার্তা ইসলামের দাওয়াত দিতে ব্যস্ত থাকতেন। ইসলাম গ্রহনের পর "কুমরাল আবদাল" ও সেখান থেকে জ্ঞান অর্জন করতেন। পরে শায়েখ এদেবআলী তার ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে চৌকস এবং মেধাবী দু'জনকে শিক্ষার্থীদের প্রশীক্ষন, ধর্মীয় জ্ঞান, ইসলামের দাওয়াত প্রচার এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেলেন। যার মধ্যে একজন হলেন "কুমরাল আবদাল"।

"কুমরাল আবদাল" উসমানী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। "কুমরাল আবদাল" একজন দরবেশ মুজাহিদ। ঐতিহাসিকভাবে, শায়েখ এদেবালি সৎ পেশাদারদের একটি সংগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল যাকে তুর্কি ভাষায় আহি এবং আরবীতে আখি বলা হয়। এই সংগঠনের সাথে যুক্ত দক্ষ ব্যক্তিরা ইসলামী নীতিমালাকে সামনে রেখে বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করতেন।  

কথিত আছে যে উসমান একবার শায়েখ ইদেবালীর বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন এবং সেখানে তিনি রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন, উসমান দেখতে পান যে তার বক্ষ থেকে একটি বড় গাছ গজিয়ে উঠছে, যার শাখাগুলি সমগ্র পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে। আর ঘুম থেকে ওঠার পর যখন তিনি এই স্বপ্ন শায়েখ ইদেবালীকে বলেন, তখন কুমরাল আবদালও সেখানে ছিল। আর শায়েখ এদেবালী এই স্বপ্নের ব্যাখ্যার দায়িত্ব "কুমরাল আবদাল" কে দিলে "কুমরাল আবদাল" উসমানকে সুসংবাদ দিলেন যে তার মাধ্যমে একটি ইসলামি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা পাবে। উসমান গাজী আনন্দিত হয়ে "কুমরাল আবদাল" কে তার তলোয়ার ও মগ (পানি পান করার গ্লাস) পুরস্কার হিসেবে দেন।

১৬৩১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণকারী আরেক উসমানীয় ইতিহাসবিদ "আহমেদ-দেদে-মুনেকিম্বাসি" তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে খিজির (আঃ) কুমরাল আবদালকে একটি দীর্ঘস্থায়ী উসমানীয় সাম্রাজ্য উত্থানের ঐশ্বরিক বার্তা দিয়েছিলেন। আর কুমরাল আবদাল উসমান গাজীকে এই সুসংবাদ পৌছে দেন।

উসমানীয় ঐতিহাসিক "ইদ্রিস-ই বিতলিসী" এর মতে, "কুমরাল আবদাল" একজন দরবেশ ছিলেন যিনি কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন।

কথিত আছে, কুমার আবদাল একটা পাএ নিয়ে ৪০ বছর আল্লাহর দয়া ভিক্ষা চেয়েছেন, যেটা উসমান গাজী কে উপহার দিয়েছিলো এবং উসমান গাজীকে সেটা দিয়ে একটা দীর্ঘ কিংবদন্তি এবং হৃদয়গ্রাহী উপদেশ দিয়েছিল...

গ্রহন কর, আমার কাছে তোমার জন্য ছোট্টো একটা উপহার আছে, উসমান বে। তুমি এক মহান বে, তুমি মনে করো না যে এটা আবার আমার কি জন্য প্রয়োজন। এটি  উপমা স্বরূপ, এটি উপলব্ধি করার জন্য। আমি "বে" আমিই "সবকিছু জানি" এই রকম আত্ন অহংকারী বে'এর আদর্শ থেকে তুমি যদি বেরিয়ে আসতে চাও তাহলে তোমাকে আবদালদের মতো হতে হবে। এটি হলো আবদালদের পাত্র। এটা ভিক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয়, উসমান বে। একজন আবদাল একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে ভিক্ষা চায় না। এই পাত্র'টি দ্বারা কুলোশিত নফস কে পরিশুদ্ধ করতে আবদালরা গলায় ঝুলিয়ে থাকে। কিভাবে জানো? বলছি তাহলে, তোমার যখন নফস কুলোশিত হবে তখন তুমি একজন গোত্রের বে হয়েও এই পাত্রটি গলায় ঝুলাবা এবং  কল্পনা করবা, এই পাত্রটি নিয়ে ভিক্ষুকের মতো পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছো। দেখবে তুমি যাদের সাথে একসময় প্রতিদ্বন্ধীতা করেছিলে দুনিয়ার অর্থ-সম্পদের জন্য, তারা এই অবস্থায় দেখে, তোমাকে হাসবে। তারা তোমাকে করুনা দেখাবে। তাদের প্রতিটি তুচ্ছতাচ্ছিল্য তোমার জন্য পুরুষ্কার স্বরূপ। দেখবে কেউ তোমাকে স্বর্নমুদ্রা দেবে, কেউ দেবে খাবার, আবার কেউ বা দেবে কুকুরের খাবার। প্রতিটি দিনের তুচ্ছতাচ্ছিল্য তোমার ভিতরে থাকা কুলোশিত নফস কে একে একে ধ্বংস করে দিবে। তোমার গলায় ঝুলানো এই পাত্রটি হবে তোমার প্রতিদিনের নিত্যসঙ্গী আর যখন তোমার কুলোশিত নফস একদম ধ্বংস হয়ে একদম পরিশুদ্ধ হবে তখন এই পাত্রটি তোমার মাথার মুকুট হবে। তুমি তখন বিশ্বটাকে নতুন একটা চোখে ভিন্ন ভাবে দেখতে পাবে। উসমান বে সমস্ত তুর্কমেনিয়াম, গোটা ইসলামী বিশ্ব, মাতা, পিতা, পুত্র, কন্যা এবং শিশুদের এমনকি আবদালদেরও আশার আলো তুমি হবে। এই পাত্রটা আমার ৪০ বছর ধরে নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল। আজ থেকে এই পাত্রটা তোমার। এই পাত্রটি একজন বে'কে সত্যতিকারে বে হিসেবে তৈরি করে। উসমান বে তুমি আলেমদের কাছ থেকে জ্ঞান আহরণ করবেন। তুমি আলেমদের আপনার তাবুতে জড়ো করবে। বড় বড় আলেমরা, হস্তশিল্পীরা, দক্ষ্য যোদ্ধারা আপনার তাবুতে এসে একত্রিত হবে। যারা যে বিষয়ে পারদর্শী আপনি তাদেরকে সেই বিষয়ে দায়িত্ব দিবেন। উসমান বে, আপনি একটি গোত্রের নেতা। পাহাড়ের নেকরে, পালের মেষ, প্রবাহিত বাতাস, ক্ষুদার্ত পাখি, নিজেদের অভিযোগ দিতে আসবে তোমার কাছে। তাদের তুমি ঠেকাবে কিভাবে? তাদের জন্য পর্যাপ্ত সময় কি পাবে? তোমার আহরণ করা জ্ঞান এবং তোমার কাছে একত্রিত হওয়া ব্যাক্তিরাই তাদের দায়িত্ব নিবে। তখন তোমার এই তাবুটিই হবে পৃথিবীর ন্যায় বিচারের কেন্দ্রস্থল এবং তোমার বংশধরদের উমানীয় হিসেবে স্মরণ করা হবে। 

উসমান গাজী সেগুত এর পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম দান করে সেখানে এদেবআলী এর দরবেশদের জন্য একটি দরগা তৈরি করে দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকরা মনে করেন "কুমরাল আবদাল" এর কিছু আদ্ধ্যাতিক শক্তি ছিল, যার মধ্যে তিনি অনেক কিছু আগে থেকেই ভবিষ্যতবানী করতে পারতেন। বিভিন্ন সময়ে উসমান গাজীকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেন। তার আদ্ধ্যাতিক শক্তি ব্যবহার করে উসমানীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য তাকে উসমানী সাম্রাজ্যের আদ্ধ্যাতিক প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। কুমরাল আবদাল ১২৮৬ খ্রিস্টাব্দে মারা যান।  এই সময়টা এরতুগ্রুল গাজীর মৃত্যুর সময়কালের কাছাকাছি।

"কুমরাল আবদাল" এর কবরস্থান বুসরা-এসকিসেহির রোডে বিলেসিকের, ইয়েডিলার জেলায়। 







Writer:- Md Saymun Husain
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner