ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কাউস সাহেবের অন্তত ৩০ টিরও অধিক বাড়ি আছে।
যার মাঝে এটি একটি এবং ইস্কাটন গার্ডেন এর কোনো এক জায়গায় আরো একটি বাড়ি পরিত্যক্ত হয়ে পরে আছে।
স্থানীয়রা এটাকে পাঁচবাড়ি নামে ডাকে।
এই নামের কারণটা আমি জানতে পারিনি।
দূর থেকে এই খালি পরিত্যক্ত বাড়ি যে কেউর চোখ আকৃষ্ট করে।
কারণ দূর থেকে তাকালে বুঝা যায় বাড়িটি সম্পূর্ণ খালি।
কাছে হেটে গেলেই দেখতে পাবেন তালাবদ্ধ সুবিশাল একটি দরজা।
সচরাচর কাউকেই এখানে কেউ দেখে না।
একটু পাশে এগিয়ে আসলেই একটা চায়ের দোকান,
সেখানে দোকানদারের কাছ থেকে
জানতে পারি,
তিনি প্রায় ১১ বছর আগে এখানে এসেছেন, তখন থেকেই তিনি বাড়িটিকে একেবারে খালি দেখছেন।
তবে দুজন দারোয়ান এখানে পাহারা দেয়, পাহারাদারিই তাদের কাজ।
আর একজন বুয়া এসে প্রতি সাপ্তাহে বাড়ির সিড়ি ঝাড়ু মুছা দিয়ে চলে যায়।
আপনি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে দারোয়ানকে দেখতে পাবেন।
আমিও চায়ের দোকানে বসে দারোয়ানের অপেক্ষা করতে থাকি।
সন্ধ্যা হয়ে গেলে একজন মাঝ বয়সি হেংলা পাতলা ভদ্রলোক চায়ের জন্য দোকানে আসেন।
দোকানদার আমাকে ইশারা করে বলেন ইনিই আমার কাঙ্ক্ষিত লোক।
যেহেতু ব্যাপারটা ডিপ না। তারপরেও আমার কাছে ডিপ।
তাই আমি কোনো পরিচয় না দিয়ে চায়ে চুকুক দিয়ে দোকানিকে জিজ্ঞাস করলাম,
ভাই এই বাড়ি এমন খালী কেনো?
ভাড়া হয়না নাকি ভাড়া অনেক বেশি।
তখন দারোয়ান নিজে থেকেই বলে উঠলো।
বাড়ির মালিকের নিষেধ আছে ভাড়া দেওয়া।
আমিঃ তাহলে এভাবে ফেলে রাখার কারণ কি জ্বীন ভূত?
দারোয়ানঃ জ্বীন ভূত কিনা জানি না আমাদের নিজেদেরও গেট ছেড়ে দোতালায় কদম দেওয়ায় নিষেধ আছে।
শুধু শুক্রুবার সকালে বুয়া আইসা উপর থেকে নিচে পর্যন্ত ঝাড়ু মুছা দিয়া যায়। সে ছাড়া কেউই উপরে যাইতে পারেনা।
আমিঃ খালি বিল্ডিং। উপরে গেলেও কি আর না গেলেও কি।
না যাওয়াই ভালো জ্বীনে ঘার চাইপা ধরলে শেষ।
দারোয়ানঃ আপনে দেইখা আইছেন ওইহানে ভূত আছে?
আমিঃ দেখতে হলে তো ভিতরে যেতে হবে থাকতে হবে। তাহলেই না জানা যাবে। নাহলে সবাইতো ভূতের বাড়িই বলবে।
দারোয়ানঃ কোনো লাভ নাই।
আমিঃ কেনো?
দারোয়ানঃ দুইতালা থেকা পাঁচতালা সব দরজায় তালা দেওয়া। সব চাবি মালিকের ম্যানেজারের কাছে থাকে। কোনো রুমেই আপনে যাইতে পারবেন না।
আমিঃ আফসোস তাহলে ভূত দেখতে পারলাম না।
আসলে যতই চালাকি করি কোনো লাভ নেই। হয়তো তার কথা সত্যি অথবা সে যেতেই দিবে না।
অনেক চা পান বিড়ি খাইয়ে আমি ঢুকার চেষ্টা করেছিলাম।
কিন্তু লাভ হয়নি।
আমাদের পাশে বসে এক ছেলে আমার কথা শুনছিলো।
আমি আসলে নিজের চরকায় তেল দিতে গিয়ে তাকে একেবারেই ইগনোর করে ফেলেছি।
ছেলেটা আমার বয়সি হবে।
হয়ত একটু বড় অথবা একটু ছোটো।
দারোয়ান উঠে চলে যাওয়ার পর সে হালকা পাতলা আমাকে নিয়ে মজাই নিয়ে হেসে উঠে।
আমার মেজাজ খারাপ হলেও মাথা ঠান্ডা রেখে জিজ্ঞেস করে বসলাম।
ভাই মজা পাইছেন তাইনা?
সে চায়ের কাপ বেঞ্চে রেখে বলে,
আপনি সিউর কোনো নন পপুলার কোনো ইনভেস্টিগেটর তাইনা?
আমি তার কথার উত্তর দেইনি।
মাথা নিচু করে বসে ছিলাম।
সেঃ আমার নাম রেদোয়ান (ছদ্মনাম)
এখানে কাছেই একটা অফিসে জব করি এবং স্টুডেন্ট।
আমিঃ আমি নিলয় (ছদ্মনাম)
স্টুডেন্ট + হালকা লিখালিখি করি হরর আইটেম নিয়ে।
শুনেই রেদোয়ান কঠিন হাসি হরর আইটেম বলাতে।
রেদোয়ানঃ নিলয় ভাই। এখানে আসলে ভূত আছে কি নেই জানিনা।
তবে কয়েকটি কথা বলি।
রাতের চেয়ে দিনে এই বাড়ি আরো ভয়ানক বেশি মনে হয় আমার কাছে।
কারণ দারোয়ানরা ভিতরে কিন্তু থাকেনা ঠিক মত।
তার থেকে বড় কথা আমি নিজেও দু একবার কিছু কিছু দেখেছি।
নিলয়ঃ কি দেখলেন ভাই?
ঘটনা ১:
রেদোয়ানঃ অনেকদিন আগে, প্রায় ১-২ বছর হবে।
আমি আর ছোটো বোন রোজার ঈদের শপিং করে বাসায় ফিরছিলাম।
রাত মনেহয় ১২:৩০ বা একটার কাছাকাছি। এই বাড়ির কিছুটা দূর আসতেই,
আমার বোন হঠাৎ আমাকে ডেকে বলে, ভাইয়া দেখ বাসাটায় মনেহয় আগুন লাগছে তাকা দেখ।
আমি মুখ তুলে তাকাতেই দেখি এই বিল্ডিং এবং সত্যি সত্যি চার তালায় একটা রুমে দাও দাও করে আগুন জ্বলছে।
আমি তো আগে থেকেই জানি এই বাড়ি খালি।
তাও দ্রুত গিয়ে এই দারোয়ানকে বলতেই সে হেসে উড়িয়ে দেয়। তারে টেনে হিচরে ওখানে আনতেই দেখি সব অন্ধকার।
মানে আগুন নাই। আমি আর বোন বেকুব হয়ে গেলাম একেবারেই।
তারপর...
চলবে....
Writer:- Akiluz Zaman