সাদ আদ-দ্বীন কোপেক ( আরবি: سعد الدين كوبك بن محمد) পূর্ন নাম সাদ আদ-দ্বীন কোপেক বিন মুহাম্মদ (মৃত্যু :১২৪০) রুমের ১৩শ শতাব্দিতে সেলযুকের সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদের অধিনস্থ আদালতের প্রশাসক ছিলেন। সাদ আদ-দ্বীন কোপেক প্রথমে সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ এর অধিনস্থ শ্রম মন্ত্রী ও আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরবর্তীকালে বেয়াহির হ্রদের তীরে কুবাবাদবাদ প্রাসাদ নির্মাণের তদারকি করেছিলেন।
তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী মানুষ ছিলেন, যিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেলজুক সাম্রাজ্যের অনেক উচু পদে পৌছিয়ে ছিলেন।
সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ এর রাজত্বের সময়ের ইতিহাসে আমির সাদ আদ-দ্বীন কোপেকের নামটি সর্বপ্রথম পাওয়া যায়। তিনি অনুবাদক, আমির-ই শিকারী (প্রধান শিকারী), স্থাপত্যবিদ, সেনা প্রধান, প্রধান বিচারপতি, বিভিন্ন জয়গার প্রধান শাসনকর্তা এবং অর্থমন্ত্রী এর দায়িত্ব পালন করেন।
সর্বপ্রথম তিনি রাষ্ট্রের অনুবাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিকারের মৌসুমে এবং বিনোদনমূলক কাজের জন্য সেলজুক সাম্রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাকে প্রেরন করা হয়, তখন থেকেই তাকে প্রধান শিকারীর পদে উন্নীত করা হয়।
এরপর শীঘ্রই, আমির সাদ আদ-দ্বীন কোপেক কে একটি সেনা ইউনিটের সেনাপ্রধান এর দায়িত্বে দেওয়া হয়। ১২২৬ সালে, সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ তাকে আয়ুউবিদের বিরুদ্ধে হেরপুটের যুদ্ধে সেলজুক সেনাবাহিনীর সেনাপতি হিসেবে তাকে প্রেরন করেন।
এরপর তাকে সমগ্র সেলজুক সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব উন্নীত করা হয় এবং তিনি সেনাবাহিনীর সর্বচ্চো পদমর্যাদায় অধিকারী হন।
এটা আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে-ই হবে যে
আমীর সাদ আদ-দ্বীন কোপেক অনেক বড় মাপের এবং প্রতিভাসম্পন্ন স্থাপত্যবিদ ছিলেন, তিনি অসংখ্য বিশাল বিশাল ভবন তৈরি করেছিলেন, যার মধ্যে অনেক গুলোই এখনও দাঁড়িয়ে আছে।
সাদ আদ-দ্বীন কোপেক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা একটি ক্যারাভানসরাই কোনিয়া যাওয়ার রাস্তায় ২৭ কিলোমিটার দূূূরে আকসারায় তৈরি করেছিল। "জাজাদিন ক্যারাভানসরাই" নামে পরিচিত, ক্যারাভানসরাই এর দুটি শিলালিপি রয়েছে: সেখানে কোপেকের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে লিখা আছে এবং প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১২৩৫-৩৬ খ্রিষ্টাব্দে।
তখনকার সময়ে তার নামের অর্থ আজকের অর্থের বিপরীত অর্থে বুঝাতো। তুর্কি ভাষাতে বর্তমানে "কোপেক" অর্থ হলো কুকুর, কিন্তু ঐ সময়ে "কোপেক" এর অর্থ বুঝাতো একনিষ্ঠতা, আনুগত্য পরায়নতা, আন্তরিকভাবে সেবা করা এবং বিশ্বস্ততা ইত্যাদি।
আমির সাদ আদ-দ্বীন কোপেক একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার জন্ম, মৃত্যু এবং তার জীবনের সাথে জড়িত এমন ঘটনা এখনও আজকের ঐতিহাসিকরা গভীরভাবে গবেষণা করে যাচ্ছে। আমির সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর সমাধি টি কোনিয়ার ইলিগিন জেলায় অবস্থিত।
সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর জন্মঃ
সেলজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর ছোটবেলার জীবনী সম্পর্কে তেমন কোন বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না এবং তার জন্ম তারিখ এবং জন্মস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কোন কিছু বলা যায় না কিন্তু তার যুবক বয়সের জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য আছে। যাইহোক, অনেকে বলে থাকে যে তার বাবা-মা কোনিয়ার সম্মানিত পরিবারের সদস্য ছিলেন এবং তার মায়ের নাম ছিল শাহনাস হানিম। অন্যদিকে, সেই সময়ের এবং আজকের বেশিরভাগ ঐতিহাসিকরা মনে করেন, যে এটি সাদেদিন কোপেক নিজের বানানো কথা।
এখন আমি আপনাদের সেলজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাসের উল্লেখ করা এবং সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর নিজের হাতে লেখা তার ব্যক্তিগত ডায়েরি থেকে তার আত্মজীবনী পড়ে শুনাবো.
সাদ আদ-দ্বীন কোপেকের মা শাহনাস হানিম, কোনিয়ার একটি ধনী এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের কন্যা ছিলেন। কোপেকের মা অর্থাৎ শাহনাস হাতুন অনেক সুন্দরী ছিলেন। সুলতান গিয়াসউদ্দীন কায়হুস্রভ (সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ এর বাবা) তার প্রেমে পরে যায়, তার কোকরানো চুল এবং অনুরূপ চেহারা দেখে সে তার প্রভাবিত হন একদম লায়লা এবং মজনুর মতো।
শাহনাস হানিম সুলতানের প্রাসাদে গোপনে যাওয়া এবং আসা করতো। সাদ আদ-দ্বীন কোপেকের নানী ব্যতীত কেউ এই ব্যাপারে কেউ জানত না।
কিছুদিন পর তাদের ভিতরে দূরত্ব তৈরি হয় এবং পরে কোপেকের মা শাহনাস হানিম অন্য এক ব্যাক্তিকে বিয়ে করেন কিন্তু ইতিমধ্যেই তিনি দুই মাসের গর্ভবতী ছিলেন। শাহনাস হানিম তার স্বামী কে ধোকা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি কুমারী। তার বুদ্ধিমান মা এর কথায় সে বিশ্বাস করেছিলেন যে তার মেয়ে কুমারী ছিলো এবং বিয়ে করার পর কোপেকের মা শাহনাস হানিম কে তার বাড়িতে নিয়ে যায় তার সাত মাস পরেই সাদ আদ-দ্বীন কোপেক জন্মগ্রহণ করেন।
এই কথা বলার মাধ্যমে, সাদ আদ-দ্বীন কোপেক প্রমান করার চেষ্টা করেছিলেন যে তিনি সেলজুক রাজবংশের বংশধর, যদিও তিনি সুলতান গিয়াসউদ্দীন কায়হুস্রভ এর অবৈধ সন্তান ছিলেন।
সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর ডায়েরিতে তার আত্মজীবনীতে, আরও লিখেছিলেন যে তার মা শাহনাস হানিম, সবার কাছে তার স্বামীর পুত্রের পরিচয় দিয়েই তাকে বড় করেছিলেন, কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন যে সুলতান গিয়াসউদ্দীন কায়হুস্রভ তার জন্মদাতা বাবা এবং সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ তার ভাই ছিলেন।
সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর নানী মারা যাওয়ার আগে তাকে এই গোপন কথা তাকে বলে গিয়েছিলেন।
কিন্তু লেখকরা এবং ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে সেলজুক সাম্রাজ্যের সিংহাসন অর্জনের জন্য সাদ আদ-দ্বীন কোপেক তার ডায়রিতে এই কথা গুলো উল্লেখ করেছেন। একই প্রসঙ্গে সেই সময়ের সবচেয়ে নামকরা পারস্যের ইতিহাসবিদ এবং লেখক ইবনে বিবি মনে করেন, এই গল্পটির কোন ভিত্তি নেই এবং তিনি বলেছেন এই গল্প টি সামঞ্জস্যহীন এবং "বিভ্রান্তিকর" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
আজকালকার গবেষকরা তার "কোপেক" নামটি নিয়ে এবং তার জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে ঘাটাঘাটি করে এই সিদ্ধান্তে পৌছিয়েছে যে তিনি গুলামহানে (একটি ইসলামীক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান) বড় হয়েছেন এবং তিনি ছিলেন “ডেভশিরমেহ” তাই তিনি তুর্কি ছিলেন না। কারন যে সব শিশুরা “ডেভশিরমেহ” থেকে আসে তারা সত্যিকার অর্থে তুর্কি হয় না। তিনি গুলামহানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছিলেন এবং তিনি গুলাম (সুলতান কে রক্ষা করার জন্য নিয়োজিত সেনা) ছিলেন।
সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর উত্থানঃ
সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ এর সময় সাদ আদ-দ্বীন কোপেক সেলজুক সাম্রাজের একজন বিশিষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ লোক হয়ে উঠেন। ১২৩৭ সালে কায়সারীতে খাবর খাওয়ার সময় তার বাবা সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ কে খাবারে বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল (ধারনা করা হয় সাদ আদ-দ্বীন কোপেক-ই তাকে হত্যা করে ছিলেন)। তার বাবার মৃত্যুর পর সাদ আদ-দ্বীন কোপেক সেলজুক সাম্রাজের সিংহাসনে কিলিক আরসালান এর পরিবর্তে গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ কে সিংহাসনে বসানোর জন্য কূটকৌশল অবলম্বন করেন সত্যিকার অর্থে সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ এর মৃত্যুর পর তার ছেলে কিলিক আরসালান এরই সিংহাসন পাওয়া কথা ছিল।
ইবনে বিবির বর্ননা অনুযায়ী, যুবক সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ সম্পূর্ণ রূপে সাদ আদ-দ্বীন কোপেকের নিয়ন্ত্রণে ছিলো, সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ কে হত্যা করার পর অন্যায়ভাবে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য হিংস্র পরিকল্পনা করেছিলেন সাদ আদ-দ্বীন কোপেক। সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ তার নিয়ন্ত্রণে থাকার কারনে, সাদ আদ-দ্বীন কোপেক তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রসাশনিক এবং সামরিক কমান্ডারদের ভিতর থেকে তার সমস্ত প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে থাকে।
তিনি অনেক নির্দোষ মানুষকে হত্যা করেন তার মধ্যে, তিনি আলতুন আবু আতাবে কে হত্যা করেন যিনি সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ এর শিক্ষক ছিলেন। সাদ আদ-দ্বীন কোপেক তাকে বিশ্বাসঘাতকতা করার মিথ্যা অপবাদ দেন। তারপরে এই নির্দোষ মানুষটাকে জোরজবরদস্তি করে দিভানের দিকে নিয়ে যান, সেখানে একটি গ্রামে তাকে তীরের ফলা দিয়ে তার দেহ ক্ষতবিক্ষত করে তাকে হত্যা করা হয়। তারপর সাদ আদ-দ্বীন কোপেক হুসামেডিন কেমার, টেসডিন পেরভেন সহ আরো অনেক কে হত্যা করেন। এই ভাবে রাষ্ট্রের বিশ্বস্ত সব মানুষ কে সাদ আদ-দ্বীন কোপেক হিংস্রভাবে ক্রমানয়ে হত্যা করতে লাগলেন যার ফলে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং ভই-ভাইয়ের সম্পর্কের ভাঙ্গন দেখা দেয়।
এরপর সাদ আদ-দ্বীন কোপেকে সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ এর ভাই রাজপুত্র ইজেডডিন কিলিক আরসালান কে হত্যা করেন, তার সাথে তার ছোট ভাই রুকনউদ্দীন এবং তাদের মা আইয়ুবী শাহাজাদী মেলিকী আদিলা সুলতানা কে ও হত্যা করেন। ঐতিহাসিকদের বর্ননা অনুযায়ী সাদ আদ-দ্বীন কোপেক তাদেরকে আঙ্কারর কায়সারি কায়কোবাদ প্রাসাদে নিয়ে যান। সেখানে তিনি মেলিকী আদিলা সুলতানা কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং সেখান থেকে তার ছেলেদেরকে বুরুগুলু প্রাসাদে নিয়ে যায় এবং সেখানেই তাদের কে হত্যা করেন।
সাদ আদ-দ্বীন কোপেক খাওয়ারিজমিদের আনুগত্যে সন্দেহ করেছিলেন। সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ, জালাল আল-দিন মঙ্গুবার্তির (খাওয়ারিজমি সাম্রাজ্যের শেষ অধিপতি) এর সেনাবাহীনিকে আনাতোলিয়ান বিভিন্ন দুর্গে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োজিত করেছিলেন।সাদ আদ-দ্বীন কোপেক তাদের নেতা কিরখানকে কারাবন্দী করেছিলেন। ফলস্বরূপ, খাওয়ারিজমিদের সমস্ত সৈন্যরা বিদ্রোহ শুরু করেন এবং দুর্গে তাদের সৈনিক পদ ত্যাগ করে দিয়ার মুদার প্রোভেন্সে পালিয়ে যায়, সেখানে তারা ভাড়াটে সৈনিক হিসাবে আইয়ুবীদের সাথে যোগ দেয়।
তখন থেকেই কোপেক কে সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ বিশ্বাসঘাতক হিসেবে সন্দেহ করতে শুরু করেন এবং তার জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায়। সাদ আদ-দ্বীন কোপেক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে শুরু করে এবং রাষ্ট্রের বিশ্বস্ত সব সৈনিকদের বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে তাদের সৈনিক পদ কেরে নিতো বা বিভিন্ন সময় তাদের হত্যা করতো।
এই সময় সাদ আদ-দ্বীন কোপেক সবার কাছে অত্যাচারী হিসেবে পরিচিত হতে থাকে এবং নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়েও ক্ষমতা দেখাতে থাকে।
সাদ আদ-দ্বীন কোপেক রাষ্ট্রের কোন নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করতো না এবং সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সুলতানের তলোয়ার পড়তে শুরু করে এবং নিজকে সুলতান গিয়াসউদ্দীন কায়হুস্রভ এর সন্তান এবং সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ এর ভাই হিসেবে প্রচার করতে শুরু করেন।
এক পর্যায়ে, গুরুতর ভাবে তিনি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরেন তিনি অদ্ভুত আচরণ শুরু করেন, এবং এটা দিন দিন বাড়তে থাকে।
সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর পতন ও মৃত্যুঃ
যুবক সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ লক্ষ্য করলেন, তার রাষ্ট্র, তার জনগণ এবং নিজের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসাবে দাড়িয়েছে সাদ আদ-দ্বীন কোপেক। সিভাসের প্রধান কমান্ডার, আমির হুসামেদ্দীন কারাকা এর সাথে সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল এবং আমির সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর বিশ্বাসঘাতকতার জন্য, তার দুর্নীতি জন্য, অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করার জন্য সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমির হুসামেদ্দীন কারাকা এর কাছে সাহায্য চান। সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ আমির হুসামেদ্দীন কারাকা কে, আমির সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর বিশ্বাস অর্জন করতে বললেন। আমির হুসামেদ্দীন কারাকা সেলজুক সম্রাজ্যের একমাত্র সেনাপতি যাকে আমির সাদ আদ-দ্বীন কোপেক ভিতরে ভিতরে ভয় পেত এবং সন্দেহ করতো। যেহেতু আমির হুসামেদ্দীন কারাকা, আমির সাদ আদ-দ্বীন কোপেকের সন্দেহ বাড়াতে চায় না, তাই তিনি গোপনে সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ এর সাথে দেখা করলেন এবং পরিকল্পনা করলেন যে কীভাবে সাদ আদ-দ্বীন কোপেক কে কীভাবে হত্যা করবেন।
সাদ আদ-দ্বীন কোপেক অবাক হয়েছিলেন যখন তিনি প্রাসাদে আমির হুসামেদ্দীন কারাকা কে দেখতে পেলেন। কোপেক জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ এর সাথে দেখা করতে এসেছ?, আমির হুসামেদ্দীন কারাকা তার বিশ্বাস অর্জন করতে চাইলেন এবং তার অনেক প্রশংসা করে জবাব দিলেন "আমি কিভাবে আপনার অনুমতি না নিয়ে সুলতানের সাথে দেখা করতে পারি, আমি আপনাকে আমার আশ্রয়স্থাল হিসেবে মনে করি এবং আমার সবচেয়ে সাহয্যকারী হিসেবে আপনাকেই মনে করি।
সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর বিশ্বাস অর্জনের পর আমির হুসামেদ্দীন কারাকা তার সহকারী ও পরিচারক হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন। কিছুদিন পর, তিনি আমির সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর রাতের খাবারে এবং বিনোদন করার অনুষ্ঠানের সময় উপস্থিত হন যেটা সুলতানের প্রাসাদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই সময় আমীর হুসামমেডিন কারাকা আমির সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর আরোও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস অর্জন করতে পরেছিলেন। সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদও এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয় তখন আমির সাদ আদ-দ্বীন কোপেক প্রচুর পরিমাণে মদ পান করেছিলেন। সেখান থেকে আমির হুসামেদ্দীন কারাকা বাথরুমে যাওয়ার অযুহাতে সুলতানের অনুমতি নিয়ে স্থান ত্যাগ করলেন। তিনি প্রাসাদের বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন আমির সাদ আদ-দ্বীন কোপেক বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য এবং তিনি তার বিশ্বস্ত সৈনিকদের প্রস্তুত থাকার জন্য আদেশ দিলেন।
কিছুক্ষণ পর, যখন সাদ আদ-দ্বীন কোপেক বাইরে এসেছিলেন, আমির হুসামেদ্দীন কারাকা তার তরোয়ালের দ্বারা সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর মাথায় আঘাত করলেন, কিন্তু তোলয়ার টা সরে গিয়ে তার মুখে আঘাত করলো। সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর সম্পূর্ণ মুখ রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল, সে জীবন বাঁচানো জন্য প্রাসাদ থেকে দূরে সরে গেল।
আমির-ই-এলেম তোগান (সেলজুক সাম্রাজের একজন নিষ্ঠাবান এবং দায়িত্বশীল আমির ছিলেন) , যিনি আমির হুসামেদ্দীন কারাকা এর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি তার তলোয়ার টি বের করে সাদ আদ-দ্বীন কোপেক কে খোঁজোর জন্য চলে গেলেন। নিজের জীবন বাঁচানো জন্য সাদ আদ-দ্বীন কোপেক একটা দূর্গের ভিতরে প্রবেশ করলেন (যেটা সে নিজেই তৈরি করেছিল)। সেখানেও আমির হুসামেদ্দীন কারাকা এর বিশ্বস্ত সৈনিকরাও প্রস্তুত ছিল তাকে হত্যা করার জন্য। আমির হুসামেদ্দীন কারাকা ও আমির-ই-এলেম তোগান, সাদ আদ-দ্বীন কোপেক কে ধরার আগেই তারা তাদের তলোয়ার দিয়ে টুকরো টুকরো করে হত্যা করে।
সাদ আদ-দ্বীন কোপেক হত্যার করার ফলে, সুলতান ও রাষ্ট্র উভয়ই একটি বড় হুমকি থেকে বেচে যার। সুলতান গিয়াসউদ্দিন কায়কোবাদ আদেশ দেন যে তার মৃতদেহটি লোহার খাঁচারে ঢুকিয়ে কনিয়ার জাজাদ্দীন হাম (যেটা সাদ আদ-দ্বীন কোপেক ১২৩৭ সালে তৈরি করে ছিলেন) দুর্গের একটি উচ্চ স্থানে প্রদর্শিত করার জন্য, যাতে করে যারা বিশ্বাসঘাতকতা এবং সীমালঙ্ঘন করে তারা যেন প্রত্যেকে এর দ্বারা শিক্ষা পায়।
যাইহোক, ইতিহাস থেকে জানা যায় যে দড়ি দিয়ে লোহার খাঁচাটি বাধা ছিলো হঠাৎ করে দড়ি টা ছিড়ে গিয়ে লোহার খাঁচাটি পড়ে যায় মানুষের ভিড়ের মধ্যে যারা নিচে দাঁড়িয়ে দেখতাছিল এবং লোহার খাঁচাটির নিচে চাপা পরে কিছু মানুষ মারা গিয়েছিল মানে মৃত্যুর পরেও সাদ আদ-দ্বীন কোপেক মানুষের জীবন নিয়ে ছিল। এভাবেই সাদ আদ-দ্বীন কোপেক এর করুন ভাবে মৃত্যু হয় এবং ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের শেষ হয়।
লেখক:- Md Saymun Husain