চলে আসলাম কিন্তু মনের আগ্রহ কিছুতেই কমলো না যে কি আছে যে উনি নিষেধ করলো?
তাই সীদ্ধান্ত নিলাম কাল দুপুরে যখন দারোয়ান না থাকবে কেউ না থাকবে তখন আসবো এসে ভালভাবে দেখবো কারন আমার হরর বিষয়ে প্রচুর আগ্রহ ছিলো আর আমি সম্ভবত ভুতে বিশ্বাস করতাম না খুব একটা। তাই তার পরের দিন দুপুর ২ টায় বাড়িতে আসলাম, আসার পর যা দেখলাম তা আমার পুরো ধারনাটাকেই পাল্টে দিলো...
দেখলাম একটা বাচ্চা ছেলে যখন দৌড় দিয়ে গেইট পার হয়ে বাড়িরটির সামনে এসে যখন ঘরের ভিতর ডুকে পরছে। আমি বাড়িটির একপাশে দাড়িয়ে ছিলাম আমার এখান থেকে দরজা আর ঘরের ভিতর পরিদৃষ্ট হয় না এমন স্হানে দাড়িয়ে ছিলাম। তখন আমার হঠাৎ স্বরণে এলো এই বাড়িতেতো কারোর প্রবেশের নিষেধ তাহলে বাচ্চাটা কার?
ভাবলাম কেউ এসেছে বোধ হয়...
যাইহোক খুশি হলাম এটা ভেবে আজ বাড়ির ভিতরে কি আছে কি দেখতে পারবো!
এটা ভেবে এক দু'পা করে সামনে এগিয়ে গেলাম এবং যা দেখলাম তা ছিলো আমার কল্পনাতীত। দেখলাম দরজাটা বন্ধ এটা চোখে পরতেই যখন আমার ভিতরটা ধুক করে উঠলো তাহলে আমি কি দেখলাম বাচ্চাটা কই গেলো দরজার কাছে গিয়ে মিলিয়ে গেলো...?
এটা দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না এক দৌড়ে বাইরে চলে এলাম অনেক ভয় পেয়েছিলাম। বাড়িতে গেলাম গিয়ে ভাবতে লাগলাম...
কি হলো আমার সাথে?
ঐদিন রাতে অনেক জ্বর উঠলো আমার মুখ অনেক কালো হয়ে গেছিলো কোনো ঔষুধেই কমছিলো না আমি খেতে পারতাম না কিছু সব খাবার দুর্গন্ধ মনে হতো। আমার দাদী আদিম যুগের মানুষ তাই জ্বীন ভুতে তিনি বিশ্বাস করতেন খুব।
তিনি আমাকে দেখে আমার বাবাকে বললেন আমার আচরনে নাকি খুব সন্দেহ লাগছে আমার অসুখ নাকি ঔষুধে কমবে না। একটা হুজুরকে ডেকে আনতে বলে।আমাকে জিজ্ঞাস করে আমি সব ঘটনা খুলে বলি...
এসব শুনে বাবা দাদীর কথা মতোই একটা হুজুরকে ডেকে আনে আর হুজুর আমাকে দেখে বাবাকে বলে আপনারা অনেক দেরী করে ফেলেছেন, আজ রাতটা হয়তো দেরী করলে আপনারা আপনাদের ছেলেকে ফিরে পেতেন না!!কারন আমার অবস্হা তখন ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছিলো।
আমার মা হুজুরকে জিজ্ঞাস করলো কি হয়েছে আমার ছেলের? হুজুর বললো ওর উপর কোনো এক খারাপ জ্বীনের বাতাস লেগেছে। যাইহোক হুজুর আমাকে ৩ দিন ঝাড়ফুঁক করলেন দুপুরে নিমপাতা দিয়ে গোসল করালেন আল্লাহর দয়ায় ৩ দিন পর সুস্হ হয়ে গেলাম।
কিন্তু কেন এমন হয় মনের এই প্রশ্নটার উপর খুজে পাচ্ছিলাম না। তারপর যে ঘটনাটি হলো আমার মনের পুরো প্রশ্নের উওর পেয়ে গেলাম আর বাড়িটির সম্পুর্ন ঘটনাটি জানতে পারলাম...
সুস্হ হওয়ার পর আমার চাচাতো ভাই সবুজ (ছদ্মনাম) তাকে সব বললাম সে একটা মুচকি হাসলো বুঝতে পারলাম সে বিশ্বাস করে নি কারন সে খুবই সাহসী আর জ্বীন ভুতে বিশ্বাসি না। সে আমাকে বললো সে নাকি রাতে একা বাড়িতে যাবে দেখবে কি আছে আর আমাকে প্রমান করে দিবে এসব কিছু হয় না। আমি তারে বললাম না দরকার নাই সবুজ। নিজের বিপদ যাতে নিজে ডেকে না আনে ওয়ার্নিং দিলাম। সবুজ ছিলো অনেক জেদী স্বভাবের একটি ছেলে আমি জানতাম সে যখন বলে ফেলছে তাহলে যাই হয়ে যাক সে যাবেই আর এই বাসার সামনে সিকিউরিটি ঠিকঠাক মতো পাহাড়া দেয় না দিনেই পাওয়া যায় না আর রাতে সবুজের এ বাড়িতে প্রবেশ করার মতো অসম্ভবের মতো কিছু না।
তাই এটা ভেবে সবুজকে বললাম, দেখ ভাই আমার প্রমান লাগবে না। তোর কথাই আমি মেনে নিলাম তারপরো তুই ঐ বাড়িতে যাওয়ারো চেস্টা করিস না...সে আমার কথার জবাব না দিয়ে চলে গেলো...
ঘটনা ৪:
(সবুজের সাথে ঘটা ঘটনা)
পরদিন থেকে হঠাত তাকে আর আকাশকে খুজে পাওয়া যায় নি। আকাশ ছিলো নাকি প্রতিবেশি আর তার সাথে সবুজের বন্ধুও। তাদের মায়ের কাছে শোনা গেলো রাতে নাকি তারা তাদের নিজ নিজ বাড়িতে শুয়েছিলো। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে তাদের খোজে পাওয়া যাচ্ছে না!
বোঝতে পারছিলাম না তারা কই গেলো?
সবাই অনেক খোজাখোজি করলাম আর সারাদিন খোজে না পেয়ে পরের দিন পুলিশের কাছে মিসিং কমপ্লেইন করলাম তারাও কিছু করতে পারলো না...
ঘটনাটি ঘটার ৫ দিন পর সবুজকে অচেতন অবস্হায় ঐ বাড়ির পেছনে পাওয়া যায়। কিন্তু অবাক করা বিষয় আমরা ঐ বাড়িতেও খোজ নিয়েছিলাম পাইনি দারোয়ান আর আমরা সবাই মিলে বাড়ির চারপাশে ভাল করে পরিদর্শন করেছিলাম....কিন্তু তাহলে হঠাত সে কোথা হতে এলো এখানে...?
তাকে অচেতন অবস্হায় কুড়িয়ে নিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। তার জ্ঞান ফিরে এলো কিন্তু সে কিছু বলতে পারলো না কাউকে চিনতে পারলো না আর অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো এটা দেখে তার বাবা (আমার চাচা) একটি হুজুরকে ডেকে আনলো হুজুর তাকে অনেক্ষন দেখলো, দেখে বললো তার উপর একটি অশুভ জ্বীন ভর করেছে...
এটা শুনে চাচা হুজুরকে বললো তার ছেলেকে ভাল করে দিতে যতো টাকা লাগে দিবে। হুজুর বললো, টাকা দিয়ে জীবন দেওয়া যায় না। উনি আরো বললো, আল্লাহকে ডাকতে উনি যথাসাধ্য চেস্টা করবেন। তিনি কিছু জিনিস জোগার করে দিতে বললেন। তারপর চেস্টা করলেন অনেক ঝারফুক করলেন কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। তিনি বললেন তার দ্বারা সম্ভব না জ্বীনটার অনেক শক্তিশালি অশুভ ক্ষমতাবিশিষ্ট। এই জ্বীন নাকি সবুজকে মেরে ফেলবে খুব তারাতারি!!!
উনি সবুজকে আরো বড় হুজুরকে দিয়ে দেখাতে বললেন।চাচা বললেন এমন হুজুর কোথায় পাবে যে তার ছেলেকে ভাল করতে পারবে?
হুজুর বললেন উনার হুজুর যার কাছে উনি শিক্ষা লাভ করেছেন তার অনেক ক্ষমতা সে অনেক বড় বড় সমস্যা সমাধান করেছেন...
তারপর ঐ হুজুর তার হুজুরকে নিয়ে আসলেন এবং তিনি তাকে দেখলেন বললেন পারবেন এটা শুনে সবাই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। ঐ হুজুর সবুজকে গোসল করিয়ে আনতে বললেন। গোসল করিয়ে আনার পর কিছু আমল করে তাকে ঝাড়ফুঁক করলেন। সবুজ অজ্ঞান হয়ে গেলো তার পর পানি ছিটিয়ে সমনের কনিষ্ঠা আঙুলে ঘিট দিলেন। দেওয়ার পর জিজ্ঞাস করলো তুই কে? কিছুক্ষণ পর সবুজের মধ্যে দিয়ে জ্বিনটি কথা বললো!!!
জ্বীনটি বললো সে একটি জ্বীন। তারপর জিজ্ঞাস করলেন তুই তার শরীরে প্রবেশ কেন করেছিস? জ্বীনটি বললো সে নাকি ঐ ছেলেকে না নিয়ে যাবে না। আবার ঝাড়ফুঁক করার পর কিছুক্ষণ জ্বীনটি হুজুরের কাছে মাফ চাইলো।
হুজুর বললো তুই এই ছেলেটির শরীরে কেন ভর করেছিস,
জ্বীনটি বললো, ঐদিন সে আর আরেকটি ছেলে ঐ বাড়িতে এসেছিলো রাত ৩ টায়। বার বার ভয় দেখিয়ে সতর্ক করার পরো তারা ভিতরে ঢুকে খুব বড় অপরাধ করেছে তাই ভর করেছি। হুজুর জানতে চাইলো ওর সাথের ছেলেটি কোথায়। জ্বীনটি বললো ঐ ছেলেটি অনেক ভিতু ভয় পেয়ে গেছিলো তাই সে আর নেই তাকে অন্য জ্বীনেরা মেরে ফেলেছে, এই ছেলেটির অনেক সাহস তাই এখনো আছে জ্বীনটি আরো বললো ঐ ছেলেটির লাশ নাকি কখনো খুঁজে পাবে না।
হুজুর বললো অন্য জ্বীন মানে তোরা কয়জন? আর তোরা এই বাড়িতে কি করিস? এটা কি তোদের বাড়ি? তুই কোন সাহসে ছেলেটিকে মেরে ফেললি আর ওর লাশ কোথায় পাবো? সব বল নয়তো ছারবো না..!!!
জ্বীনটি বললো, এই জ্বীনরা নাকি ছেলেটির লাশ অদৃশ্য করে দিয়েছে। আর বাড়িতে নাকি থাকে তাই বাড়িটা তার।হুজুর বললো তোরা এই বাড়ি ছেরে চলে যা। তাহলে তোকে মুক্তি দিবো...
জ্বীনটি বললো তারা এই বাড়ি ছেরে যেতে পারবে না।হুজুর জিজ্ঞাস করলো কেন কি তার কারন?
জ্বীনটি বললো কিছুবছর আগে যখন কাউস মিয়া ভবনটি তৈরি করবে সীদ্ধান্ত নেয় কাজ শুরু করে তখন থেকে সে প্রতিদিন একটা স্বপ্নে দেখতো যা ছিলো নিষেধাজ্ঞা। হুজুর জিজ্ঞাস করলো কে নিষেধ দিয়েছিলো? জ্বীনটি বললো, একটি তান্ত্রিক। কারন যে জায়গার উপর সে বাড়ি তুলতে যাচ্ছিলো সেটা ছিলো কবর স্হান। সে কম দামে পেয়েছিলো জমিটি। আর তান্ত্রিক প্রতি অমাবস্যার রাতে রাত ১২ টার পর এসে ধ্যান করতো। এটা ছিলো তার জায়গা...
তান্ত্রিকটি তাকে নিষেধ করেছিলো সে এসব কথা না শুনে তান্ত্রিকটির বিরুদ্ধে ব্যবস্হা ন্যায়। তান্ত্রিকটি তাকে বলেছিলে তাকে এই বাড়িতে থাকতে দিবে না। তান্ত্রিকের কথা শুনে নি উল্টে তাড়িয়ে দেয়। আর জ্বীনগুলো নাকি তান্ত্রিকের পোষা জ্বীন তাদের তান্ত্রিক ঐ জায়গার ভিতরে বন্ধী করে দিয়েছে। জীবিত প্রানীর রক্ত আহুতি দিয়েছে...
জ্বীনটি আরো বললো কবরস্থানে কাউস মিয়ার যেসকল বাড়ি ছিলো সবগুলো পরিতক্ত। কারন ঐ বাড়ি গুলোতেই তান্ত্রিক জ্বীন চালান দিয়েছে। আর তান্ত্রিককের মৃত্যুর আগে তারা নাকি ঐ স্হান পরিত্যাগ করতে পারবে না কারন তারা বন্ধি। জ্বীনটি বললো, এবার আমাকে ছেরে দেন। তারপর হুজুর বললো যাওয়ার পরো সে আরো সবুজের উপর আসবে নাকি। জ্বীনটি বললো, নাহ তাকে আর ধরবে না তবে সে যাতে আর ঐ বাড়ির আসে পাশেও না যায়! তার কিছুদিন পর সবুজ সুস্হ হয়ে উঠে।
তারপর সোহান আমাকে বললো, এই কাহিনী আমি সম্পুর্ন পরীলক্ষিত করেছি নিজ চোখে। এর ভিতরে নাকি এখনো অনেক কাহিনী আছে যা মানুষের অজানা।আর যা নাকি বিবরন করলে শেষ করা যাবে নাহ। কিন্তু এই বাড়িতে কেউ গেলে আর ফিরে আসে না আর তাই কাউস মিয়া এই বাড়িটিতে ভাড়া দেয় না।আর অনেক জায়গায় তিনি যাওয়ার পরো নাকি এই সমস্যার সমাধান পায় নি।
এসব কাহিনী শুনার পর সব কিছু বুঝতে পারলাম কেন এই ভবন পরিতক্ত। তবে এখনো কিছু প্রশ্ন থেকেই যায় কেনই বা এই বাসাটির নিয়ে বসাই চুপ থাকে? এমন কি হয়েছিলো যে তান্ত্রিকের জ্বীন চালান জেনেও কেন কাউস মিয়া চুপ আছে..?
এসকল প্রশ্নের উওর আজো সবার অজানা। আসলে কি হয়েছিলো সেদিন...???
আমাদের ঘটনাটি এই পর্যন্তই...
সমাপ্ত...
Writer:- Akiluz Zaman