আমার বিবাহিত স্ত্রীর কাছে তার প্রাক্তন প্রেমিক যেদিন পুনরায় ফোন দেয়, সেদিন আমার বাচ্চাটার বয়স ছিল মাত্র দু দিন।
ছোট বাচ্চার যত্ন করতে গিয়ে রাতের ঘুম একেবারেই হারাম হয়ে যায় বাবা মায়ের। উক্ত রাতেও আমরা দুজন জেগে ছিলাম।
বাচ্চার নাম কি রাখবো এটা নিয়ে রিতীমত ঝগড়া চলছিলো আমাদের দুজনার মাঝে। এ ধরণের ঝগড়ার ভেতরে অন্যরকম এক আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু ঐ আনন্দটুকু মাটি করে দিলো
হুট করে আসা একটা ফোন কল। কিছুক্ষন মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকে, আমার সাথে ঝগড়া বন্ধ করে উঠে বারান্দায় চলে গেলো সাবিহা। ফিরলো ঠিক আধাঘন্টা পরে।
ফিরে এসে আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর চাহনি দিয়ে জানালো, সে তার কন্যা সন্তানের নাম রাখতে চায় সাফা।
বেশ অবাক হলাম।কিন্তু কথা বাড়ানোর শক্তিটুকু আমার মাঝে ছিলো না৷ আমি জানতাম সাবিহার প্রাক্তনের নাম ফারহান।
চোখে মুখে একগাদা অভিমান নিয়ে বেডের একপাশে শুয়ে পড়লাম। দেয়ালের দিকে ফিরে শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম এই একটু পর হয়ত পেছন থেকে সাবিহা আমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করবে "জান, তুমি কি আমার সাথে রাগ করেছ?"
তখন আমার অভিযোগের ঝাঁপি খুলে ওকে বলবো "প্রাক্তনের নামের সাথে মিলিয়ে তুমি আমার রাজকন্যার নাম কেন রাখলে? "
আরো দু একটা শক্ত কথা শুনাবো৷ আরো বেশি অভিমান করে উঠে বারান্দায় চলে যাব।আমার রাগ ভাংগাতে আমার পেছন পেছন যাবে সাবিহাও।
শুয়ে শুয়ে কত কিছু ভেবে ফেলছি, কিন্তু সব সময়ের মত সাবিহা আর আমাকে সেদিন জড়িয়ে ধরেনি। জানতে চায়নি আমার অভিমানের কারণ। বন্ধ করা চোখ দিয়ে দু-ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো নিচে। নিজেকে অনেক একা লাগছে। অপেক্ষা করতে করতে কিছুক্ষন পরে নিজেই নিজেকে বুঝ দিলাম, হয়ত মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে বা ও আমাকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা। আমি বেশি রেগে আছি বুঝতে পেরে হয়ত ভয়ে কাছে আসতে পারছে না। আমার এত বেশি একা লাগছিলো যে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি নিজেই ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে অনুনয়ের সুরে বলবো, তুমি কিভাবে পারলে তোমার প্রাক্তনের সাথে মিলিয়ে আমার রাজকন্যার নাম রাখার কথা বলতে? আমি কি তোমাকে কম ভালোবাসি? বলো আরো কত ভালোবাসা লাগবে তোমার! এটা বলে ওকে অনেক অনেক আদর দিব। আমার ভালোবাসার পুরুটুকু উজাড় করে দিয়ে ওকে বলবো তুমি শুধু আমার।
মনে মনে এসব প্লান করে আমি উলটো দিক থেকে ঘুরে ওর দিকে ফিরি। দেখতে পাই সাবিহা কার সাথে যেন চ্যাটিং এ ব্যস্ত। টপাটপ কী-বোর্ড প্রেস করে মেসেজ লিখে যাচ্ছে৷ আমি যে ওর দিকে ঘুরলাম এই মাত্র, সেটাও ও খেয়াল করেনি। আমার মনের ভিতরে ওর কার্যক্রম নিয়ে যে অসম্ভব তোলপাড় হচ্ছে তাতে ওর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই৷
দুমড়ে মুচড়ে গোল হয়ে মাটিতে পড়ে থাকা ফেলনা কাগজের মতই অবহেলিত মনে হচ্ছিল নিজেকে।দীর্ঘ এক বছর অসীম ভালোবাসা ছাড়া সাবিহার কাছ থেকে আমি এমন অদ্ভুত আচরণ পাইনি।
বুকভরা চাপা দুঃখ নিয়ে নিরবে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে বালিশ ভেজাই৷ কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ি নিজের ই খেয়াল নেই।
যখন ঘুম ভাংগে, টের পাই সাবিহার হাত আমার কোমর জড়িয়ে আছে। সকালের মিষ্টি রোদ এসে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়েছে সাবিহার গাল। বড্ড নিষ্পাপ একটা ফুলের মত লাগছে ওকে। ওর ফর্সা গালটা অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত হয়ে মুহুর্তেই আমার কালকের সব রাগ অভিমান নিঃশ্বেস করে দিলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে তুমুল চুমু খেতে শুরু করলাম। কপাল ঠোট নাক গাল কিংবা গলা, কোথাও বাদ রাখলাম না৷ ও ঘুমের মাঝেই আমার মাথা শক্ত করে ওর বুকের মাঝে চেপে ধরলো। স্পষ্ট ওর বুকের হার্ট বিট শুনতে পাচ্ছি। ওর সরু নরম হাতের বাঁধনে আমি স্বর্গীয় ভালোবাসায় ডুবে রইলাম কিছুক্ষন।
পাশে আমার রাজকন্যাটাও ঘুমাচ্ছে। পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে নিজেকে এখন। ভালোবাসা আসোলেই যত বড় কষ্ট রাগ অভিমান বা ক্ষোভ থাকুক না কেন মুহুর্তের মাঝেই সব ভুলিয়ে দিতে সক্ষম৷ কাল রাতের সবকিছু আমি বেমালুম ভুলে গেছি। আর মনেও করতে চাইনা।
সাবিহার ঠোঁটে লম্বা একটা চুমু খেয়ে উঠে পরলাম। ও শারিরীক ভাবে অসুস্থ থাকায় সকালের নাস্তাটা আমাকেই বানাতে হয়।
ওঠার সময়ে হঠাৎ সাবিহার ফোনের দিকে আমার চোখ গেলো।
কি মনে করে যেন মোবাইল টা হাতে নিলাম।
প্যাটার্ন জানা থাকায় লক খুলে ওর ফোন ঘাটতে শুরু করি।
একটা সিম থেকে আসা আনরিড মেসেজ চোখে পড়লো। নম্বরটা F লিখে সেভ করা।
মেসেজটা ওপেন করতেই চোখ কপালে উঠলো আমার৷ শুধুমাত্র একটা মেসেজ ই এসেছে ওদিক থেকে, সেখানে লেখা ছিলো " ummmmaaaahhhh" বাকি সব মেসেজগুলো সাবিহা রাতেই ডিলেট দিয়ে রেখেছে।
হয়ত সাবিহা গুড নাইট লিখে ফোন রেখে দেয়ার পরে ঐ প্রান্ত থেকে এমন একটা মেসেজ সেন্ড করেছে ওর প্রাক্তন।
সাবিহার দিকে তাকালাম। ও আগের মতই ঘুমাচ্ছে। অপরূপ লাগছে ওকে। কিন্তু একটু আগে ওকে দেখে ঠিক যতটা ভালোবাসা তৈরি হয়েছিলো আমার মধ্যে, তার থেকেও বেশি ঘৃণা জেগে উঠছে৷ ইচ্ছে করছে গলা টিপে মেরে ফেলি। ও পুরোপুরিভাবে শুধু আমার। আমার নয় তো আর কারোই হতে পারবে না৷ একটা ধারালো ব্লেড এনে ওর গালে অনেকগুলো রেখা টেনে দিতে ইচ্ছে করছে। যাতে ওর সব সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়, সবার কাছে ওর গ্রহনযোগ্যতা হারিয়ে যায়। তখন আমি ছাড়া ওর আর দ্বিতীয় কোন পথ থাকবেনা।
অনেক কিছু উল্টাপাল্টা ভেবে ফেললাম। পর মুহুর্তেই আবার নিজেকে শান্ত করে ফেলি। একটা বিষয় ছোটবেলা থেকে আমার ভেতরে পরিলক্ষিত। তা হলো কেউ আমাকে কখনো রাগতে দেখেনি৷ আমার যত রাগ সব নিজের ভেতরে রেখে কন্ট্রোল করেছি, বাইরে হাসিমুখে থেকেছি।
কিন্তু এবার মনে হয়না আর নিজেকে শান্ত রাখা সম্ভব হবে।
তাও যতটা পারা যায় নিজেকে নিজে বুঝাই৷
অনেক ভেবে সিদ্ধান্তে আসি,
আমি সাবিহাকে কিছুই বলব না৷ ও ওর প্রাক্তন এর সাথে কথা চালিয়ে যাক। দেখি কথা বলা থেকে শুরু হয়ে দেখা সাক্ষাৎ সহ আরো কতদূর এ পানি গড়ায়৷ এমন একটা ভান করে থাকবো, যেন আমি কিছুই বুঝিনা।
বাসায় নাস্তা বানিয়ে রেখে এসে অফিসের জন্য বের হলাম।
এই সকালে অফিস টাইমে রিকশা পাওয়া ভার। যেখানে অফিস সেখানে বাস ও যায়না।
হাঁটতেও ভাল লাগছেনা। মন মেজাজ বিগড়ে আছে। দু একটা রিকশা খালি যাচ্ছে, তবে চালকদের দেখে মনে হচ্ছে এরা রিকশা না চালিয়ে মহাকাশযান চালাচ্ছে, "মামা যাবেন?" বলে ডাক দেয়ার আগেই সামনে থেকে রিকশা নিয়ে চলে যাচ্ছে। একেকজন যেন নাসার অফিসের কর্মকর্তা, তাদের গিয়ে জরুরি মিটিং এ এটেন্ড করতে হবে নাইলে দুনিয়া অচল হয়ে যাবে।
রিকশাওয়ালার ফোরটিন জেনারেশন উদ্ধার করে গালি ঝাড়লাম কিছুক্ষন।
এর মাঝে বৃদ্ধ এক লোক রিকশা নিয়ে আসলো আমার সামনে। বললো স্যার চলেন।
আমি একটা ছোট খাট লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম রিকশায়। ভাড়া কত, কোথায় যাব এসব আলাপ পরে করলেও হবে।
আগে উঠে নেই৷
ওঠা মাত্রই রিকশা চলতে শুরু করলো।আংকেল জিজ্ঞেস করলো কই যাবেন? বললাম ধানমন্ডি ১৫।
উনি রিকশা এনে একটা চায়ের দোকানের সামনে থামালো।
রিকশা থেকে নেমে একটা সিগারেট ধরালো, দুই কাপ চা নিল। এক কাপ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, বাবা চা খাও। একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। উনি মুখ থেকে সিগারেটের ধোঁয়া ফুস করে বের করে দিয়ে বললেন, দেখে মনে হইতাছে আমার সামনে কোন লাশ বইয়া রইছে। তোমারে অনেক চিন্তিত দেখাইতাছে। তুমি বাসায় চইলা যাও। মাথায় টেনশন নিয়া রাস্তাঘাটে চলা ঠিক না।
তুমি ধানমন্ডি ১৫ থেকেই তো রিকশায় উঠলা। কই যাইবা হেইডাও ঠিকমতো কইতে পারোনাই৷ রাস্তাঘাটে চলবা কিভাবে?
তার কথা শুনে লজ্জা পেলাম, দুনিয়ার সব রিকশাওয়ালা এক হয়না। একটু আগে যে সবাইকে একসাথে গালি দিলাম সে গালি আমি আবার ফিরিয়ে নিয়েছি।গালি ফিরিয়ে নিলে কি হয়? নিজের গায়ে এসে পড়ে? এটা নিয়া মহা চিন্তায় পরে গেলাম।
ওনাকে বললাম, মামা সামনে দুই মোড় ঘুরলেই " সীমান্ত স্কয়ার।" ওখানে আমাকে নামিয়ে দিন।
চা শেষ করে উনি আমাকে নিয়ে সীমান্তের সামনে নামিয়ে দিলেন। চেহারা থেকে দুশ্চিন্তার ছাপ মুছতে একটা সার্জিকাল মাস্ক পরে নিলাম।
.
.
.
অফিসে আমার সামনের ডেস্কে যে তরুণী মেয়েটি বসে, সে আজ কলাপাতা রঙ এর একটা শাড়ি পরে এসেছে। প্রায় ছ'মাস এখানে চাকরি করেছি, ওর দিকে কখনো তেমন ভাবে তাকাইনি৷ তবে আজ আমার চোখে ওকে কেন যেন বেশ সুন্দর লাগছে।
শুধুমাত্র সুন্দর লাগছে বলেই যে ওর দিকে আমি বেশ কিছুক্ষন ধরে তাকিয়ে আছি, তেমনটা নয়৷ ওর চেহারায় লাল একটা থাপ্পড়ের দাগ স্পষ্ট।
ঠোটের কোনায় ও ফাঁটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু ওর মনে একদম ফুরফুরে প্রফুল্লতা বিরাজমান। কথাবার্তায় কোন জড়তা নেই চেহারায় চিন্তার ছাপ নেই।
আড়চোখে ওকে দেখছিলাম আমি।
মাঝে চেয়ার টেনে একবার উঠে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় স্পষ্ট খেয়াল করলাম ও পা টেনে টেনে হাঁটছে। মনে হচ্ছে পায়ের উপরিভাগের কোন একটা অংশে ব্যাথা পেয়েছে অনেক।
গত ছ' মাসে ওর দিকে তেমন ভাল করে খেয়াল করিনি৷ হুট করেই ওকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি এ ব্যপারটা মেয়েটি কোনভাবেই টের পায়নি।
অফিসে ঢোকার পরে কেন যেন আমার মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে। আজ অফিসের কাজে একটু এদিক সেদিক হলেই সবার সাথে গলা উচু করে ধমক দিয়ে কথা বলছি।
এমনিতে সাধারণ দিনে কাজ-কর্ম করার সময়ে এ রুমটায় চাপা স্বরে কথাবার্তা বলার আওয়াজ শোনা যায়। কিন্তু আজ আমার ধমকা ধমকি, র্যুড বিহেভিয়ারের কারণে চারদিকে পিন পতন নিরবতা বিরাজ করছে। ঠান্ডা একটা মানুষ যখন রেগে যায় তখন চারদিকের সবাই কেমন অদ্ভুত ভাবে বদলে যায়। হাহাহা।
একটু পর অফিসের বস আমাকে কল দিয়ে ডাকলেন। এই বস লোকটাকে দেখলে আমার খাদক কত প্রকার কি কি তা মনে পরে যায়।মনে হয় আমার চিল্লাচিল্লিতে অতিষ্ঠ হয়ে কোন মাইনর পানিশমেন্ট দেয়ার জন্য ডাকলেন।
ওনাকে দেখলে আমার বিরক্ত লাগে।
হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে চেয়ারে বসলে শুধু পেটটাই দেখা যায়। টাক মাথাটা পেটের আড়ালে পরে থাকে। এই ব্যাটা রোমান্স করে কিভাবে সেটা নিয়ে আমি মাঝে মাঝে হিসেব নিকেশ করি। ফলাফল পাই মিশন - ইম্পসিবল। এজন্যই হয়ত এর বাচ্চাকাচ্চা হয়নি এখনো।
তার কামরায় গিয়ে বসতেই আমাকে বললো,
আ্যই একটু এদিকে আসো, আমার হাতের কাছে আসো।আমি উঠে তার কাছে যাওয়ার পর সে আমার পেটে হাত চাপড়ে দিয়ে বললেন সাবাশ, অফিসটা এভাবেই নিরিবিলি রাখবা সব সময়।দরকার হলে সবাইকে আরো বেশি বকা দিবা। গুড জব গুড জব। যাও গিয়ে বসো।
ওনার সামনের চেয়ারে এসে বসার পরে নিজেই আবার বললো,
তোমার পেটে হাত দিয়েছি তাই কিছু মনে করোনা৷ পিঠে চাপড় দিতে গেলে তো আমাকে চেয়ার থেকে উঠতে হতো। হেহেহে।
- আলসেমির একটা সীমা থাকে।
আমার মনে হচ্ছে এই লোক আলসেমি করার জন্যই বেতন পায়। উপর থেকে বলা আছে যত বেশি আলসেমি করবেন তত বেশি বেতন পাবেন। আর আমরা সারাদিন খাটাখাটুনি করে এর অর্ধেক বেতন ও পাইনা।
এই মোটা টাকলা লোকের নাম রামিম হয় কিভাবে তা আমি ভেবে পাইনা। এই নাম তো ওনাকে স্যুট করেনা। ওনার নাম থাকবে মোসাদ্দেক বা বাবলু। মনে মনে ভোটকা মোসাদ্দেক বলে গালি দিলে একটা অন্যরকম শান্তি পাওয়া যেত।
ওনার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে কাজে মন দেই আমি।
কাজের ফাঁকেই সাবিহাকে দুবার কল করেছিলাম, দুবার ই ফোন ওয়েটিং এ পেয়েছি।
.
.
.
বাসায় ফেরার পরে দেখলাম স্ত্রী মফস্বল থেকে তার ছোট ফুফাত বোনকে বাসায় নিয়ে এসেছে,আমার মেয়ের দেখাশোনা করার তাগিদে। ফোন ওয়েটিং এ পাওয়া নিয়ে আমার স্ত্রীকে কোন প্রশ্ন করলাম না। আমার মনে কষ্ট পাওয়া থেকেও আস্তে আস্তে দানা বেঁধেছে কৌতূহল। একটা মানুষ পরিপূর্ণ ভালোবাসা পাওয়ার পরেও, কোনো ধরণের অভাবে না ভোগার পরেও কোন সুখের জন্য সে অন্য নীড়ে ডানা মেলে এ প্রশ্নের উত্তর জানাটা আমার জন্য খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
বাসার নতুন মেম্বারের নাম মনিকা। সারাদিন ফেসবুক ব্রাউজিং আর ফোনে কথা বলে সময় কাটিয়ে দেয়৷ ওর থাকার জায়গা হয়েছে আমাদের গেস্টরুমে।একটু বেশি কথা বলার অভ্যেস, তবে কাজ কর্মে পটু। আমার মেয়েটার দেখভাল করায় কোন কমতি রাখেনা সে। বরং সাবিহা মনিকার সহযোগিতার জন্য বাড়তি সময় পাচ্ছে তার প্রাক্তনের সাথে কথা বলার।
সবকিছু আমার চোখের সামনে ঘটতে দেখলেও আমি সাবিহার সাথে এমন ভাবে মিশছি, যাতে ও কিছু বুঝতে না পারে৷ হুটহাট জড়িয়ে ধরা,চুমু খাওয়া,অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময়ে ওর জন্য হাতে করে চকলেট নিয়ে আসা, কিংবা ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে ভালোবাসি বলা। সবকিছুই আগের মতই আছে। শুধু মনটা আমার বিষিয়ে আছে ওর প্রতি। প্রচন্ড ঘৃণা নিয়ে কাউকে ভালোবাসার অভিনয় করা খুব কঠিন। আমি বুঝতে পারছি ওর উপর থেকে আমার ভালোবাসা উঠে গিয়েছে তবুও আমি শেষ দেখতে চাই।
এদিকে ও নিজেও আগের মত আমাকে রিসপন্স করছে। আমি ভালোবাসি বললে ও নিজেও পরম মমতায় চুমু খেয়ে আমাকে ভালোবাসি বলে।মাঝে মাঝে পেছন থেকে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে৷ কিন্তু আমার অনুপস্থিতিতে সে আবার তার প্রাক্তন এর সাথে যোগাযোগ করে। তাদের কথাবার্তা চালিয়ে যায়। মন কে বুঝ দিলাম,
ও হয়ত আমার উপস্থিতির অভাবে এমনটা করছে।আমি সারাক্ষন ওর কাছে উপস্থিত থাকলে ও হয়ত এমনটা করতো না। এটা ভেবে
অফিস থেকে সাতদিন ছুটি নিলাম।
সারাক্ষন ওর পাশে পাশে থাকি।
ফোন ধরার মত সময় খুব কম পায়। তবুও খেয়াল করতাম ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে ও পাচ সাত মিনিট ফোন নিয়ে বাথরুমেই কাটিয়ে দিত।
ফোন নিয়েই গোসলে যেত।
প্রথম দু'দিন প্রফুল্ল থাকলেও তৃতীয় দিন থেকে আমার উপর ওর বিরক্তিভাজন দৃষ্টি ফুটে উঠতে দেখি।
মনের ভিতর সাবিহার কাজকর্ম নিয়ে হাজারো প্রশ্ন-উত্তর পর্ব খেলা করছে।একটা বাচ্চার ভবিষ্যৎ ও ওর সাথে জড়ানো।
বিষণ্ণ মন নিয়ে গেস্ট রুমের কম্পিউটারে গিয়ে বসি গান শোনার জন্য।
পিসি অন করতেই দেখতে পাই পিসিতে ভিপিএন ইন্সটল করা। অথচ আগে কখনোই এটায় ভিপিএন ইন্সটল করা হয়নি।
মনে কিঞ্চিৎ সন্দেহ নিয়ে ব্রাউজিং স্টোরিতে ঢুকি।
যা দেখি তাতে আমার চোখ চড়কগাছ হয়ে যায়৷
মনে শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরছিলো.. কাজটা কার, আমার স্ত্রী সাবিহার নাকি তার বোন মণিকার!!
পিসি অন করতেই দেখতে পাই পিসিতে ভিপিএন ইন্সটল করা। অথচ আগে কখনোই এটায় ভিপিএন ইন্সটল করা হয়নি।
মনে কিঞ্চিৎ সন্দেহ নিয়ে ব্রাউজিং স্টোরিতে ঢুকি।
যা দেখি তাতে আমার চোখ চড়কগাছ হয়ে যায়৷
মনে শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরছিলো.. কাজটা কার, আমার স্ত্রী সাবিহার নাকি তার বোন মণিকার!!
মনে একরাশ সন্দেহ নিয়ে
ডেক্সটপ অফ করে উঠে গেলাম।
গেস্ট রুমের সোফায় দু হাত মাথার নিচে দিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছি।শীতকালে বেশ অনেক দিন ফ্যান না চালানোয় মাকড়সারা ফ্যানের পাখার সাথে জাল বুনেছে। এই জালে আদৌ কোন পোকামাকড় ধরা পড়বে কিনা জানা নেই তার। মাকড়সার জালে পোকামাকড় ধরা পড়ুক বা না পড়ুক, সাবিহার ভালোবাসার জালে আমি ধরা পরে গিয়েছিলাম।
তখন শীতের শেষ, বসন্ত আসবে আসবে করছে। শীতে ঝড়ে যাওয়া পত্রফলকের জায়গায় নতুন নতুন সবুজেরা কচি মাথা বের করে আগমনী বার্তার জানান দিচ্ছে৷ পাখ পাখালিরা গাছের ডালের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের মিষ্টি কন্ঠের অমীয় সুর তুলে ডেকে যাচ্ছিলো। আমি গাছের ডালের ফাঁক ফোকড়ে উঁকি দিয়ে তাদের দু একজনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এমন সময় হঠাৎ করেই সজোরে একটা ধাক্কা খেলাম। কেউ একজন মনে হয় ছুটে এসে আমার গায়ে পড়লো। উঁকি ঝুঁকি দিয়ে সুকন্ঠী পাখি খুঁজতে খুঁজতে একদম ই বেখেয়ালি হয়ে পড়েছিলাম তাই এরকম একটা ঘটনায় আসলে দোষ টা কার সেটা বুঝতে পারিনি৷ ধাক্কা খাওয়ার পরে দুজন দুদিকে ছিটে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেছি। কয়েকটি কুকুর ঘেউ ঘেউ করে দৌড়ে আসলো৷ দূর থেকে আক্রমনাত্মকভাবে তেড়ে এলেও আমাকে দেখে ওরা লেজ দুলাতে দুলাতে শান্ত হয়ে যায়। এই পার্কের গাছপালা, কাক,কুকুর আমার সবথেকে কাছের বন্ধু। আমি তড়িঘড়ি করে উঠে অপর প্রান্তে কালো বোরকা পরিহিত মেয়েটাকে সরি বললাম।
সেও ততক্ষনে নিজে উঠে পড়েছে।হাত দিয়ে নিজের গায়ের ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে
আমাকে কম্পিত গলায় বললো, আপনি সরি বলছেন কেন! আসলে দোষটা আমার ই। কুকুরগুলো অজানা কারণে আমাকে তাড়া করছিলো। পেছন ফিরে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আপনার গায়ে ধাক্কা খেলাম।
আমাকে মাফ করবেন।
পার্কে সাধারণত কালো বোরকা পরে নিকাব বেঁধে কেউ আসেনা। এখানে আসে উঠতি বয়সের রক্ত গরম তরুণ তরুণীরা। ওদের গায়ে থাকে বাহারি রঙ ও ডিজাইনের পোষাক।
সবুজ রঙ এর হাতা গোটানো মলিন পাঞ্জাবি, একটা আকাশি রঙ এর জিন্স আর তার উপর একটা কালো চাদর জড়িয়ে এখানে আসা হয় আমার। মাঝে মাঝে চোখে পরা চশমার আবছা কাছ চাদরের কোনা দিয়ে মুছতে মুছতে ভাবি এখানে একদম সেকেলে জামাকাপড় পড়ে বোধহয় আমি ই আসি। কিন্তু আজকে এই মেয়েটাকে দেখে আমার ধারণা চেঞ্জ হয়ে গেল। আমার মত আরো দু-এক জীব তাহলে আছে এ দুনিয়ায়।
মেয়েটার সাথে একটা বড়সড় ব্যাগ। বেশ ভালো ই ওজন হবে পুরোপুরি উঠানোর শক্তি নেই। দু হাত দিয়ে একপ্রকার মাটির সাথে টানতে টানতে আমার দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেল। ততক্ষনে সন্ধ্যের অন্ধকার নেমে এসেছে।
পাখিগুলো নীড়ে ফিরতে শুরু করেছে।ওদের আর দেখা পাওয়া যাবে না৷ সন্ধ্যে বেলা পাখিরা সবাই নিজ নিজ বাসায় ফিরে।হুট করে মনে প্রশ্ন আসলো আসলেই কি সবাই ফিরতে পারে?
মনে মনে দু-লাইন কবিতা খেলা করছে।
" কে বলেছে সব পাখিরাই সন্ধ্যে বেলা নীড়ে গেছে?
উড়তে উড়তে কিছু পাখির ডানা হয়ত চিড়ে গেছে।
কিছু কথা সন্ধ্যে জানে, হয়না বলা দিনের কাছে।
এই শহরে বিষন্নতার গল্প শত লুকিয়ে আছে।"
কবিতা আওড়াতে আওড়াতে পার্ক থেকে বাইরে আসলাম।
পার্কের গেট থেকে বের হলে হাতের ডানপাশে মনা মামার চায়ের দোকান৷ওখানে গিয়ে দাঁড়ালে শত ভীড়ের মাঝেও মনা মামা চাওয়ার আগেই আমার জন্য স্পেশাল দুধ চা বানিয়ে দেয়।
ধুমায়িত গরম চায়ের কাপে কয়েক চুমুক দিতেই, চোখে পড়লো কালো বোরকা পরিহিত সেই মেয়েটিকে। দু হাতে ব্যাগ মাটির সাথে প্রায় মিশিয়ে টানতে টানতে পার্কের গেট থেকে বের হলো। কয়েকটা রিকশাওয়ালা " আপা কই যাইবেন" বলে মেয়েটাকে পাগল বানিয়ে ফেলছে। ওদেরকে
" কোথাও যাবনা " এ উত্তর বারবার দিতে দিতে মেয়েটা নিজের মেজাজ হারিয়ে ফেলছে।
বেশ কিছুক্ষন ধরে ওকে দেখলাম।
ততক্ষনে আমার চার কাপ চা খাওয়া শেষ। এ পুরো সময়টুকু ওকে পর্যবেক্ষণ করার পর বুঝতে পেরেছিলাম,
মেয়েটার এখন আসলেই কোথাও যাওয়ার নেই।
"টুং করে একটা মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ আসলো।"
এক বছর আগের ভাবনার জগত থেকে আমি বাস্তবে ফিরে এলাম।
ফেসবুকে সচারাচর আমি অপরিচিত দের এড করিনা। কিন্তু এইমাত্র যে মেসেজ টা এসেছে সেটা অপরিচিত একটা আইডি থেকেই।
" কেমন আছেন আপনি? "
দেখে মনে হলো ও প্রান্ত থেকে যে মেসেজটি পাঠিয়েছে আমাকে সে আমাকে অনেক আগে থেকে চিনে। মাঝে বেশ কিছুদিন কথা হয়নি, অনেক খোঁজার পরে আমাকে খুঁজে পেয়ে এমন একটা প্রশ্ন করলো।
আমি রিপ্লাই না দিয়েই ঐ আইডির প্রোফাইলে যাই।
একটা কিউট মেয়ে পুতুলের ছবি দেয়া। ধারণা করে নেই ওপাশে যে আছে সে হয়ত একজন মেয়ে হবে। এর মাঝেই রুমে ঢোকে সাবিহা৷ এসে দেখতে পায় আমি ফোন হাতে সোফায় শুয়ে আছি।
সাবিহা ফোনটা আমার হাত থেকে নিয়ে টি টেবিলের উপর রেখে দেয়। এরপর আমার বুকের উপরে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকে। আগে ও এভাবে শুলে আমি শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরতাম। কেন যেন আজ ও সেভাবেই জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু আগের মত ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও নেই ওর প্রতি।
দায়িত্ববোধ থেকে জিজ্ঞেস করলাম, মন খারাপ? কি হয়েছে?
ও উত্তর দিলো, অনেক্ষন ধরে তুমি নেই, আমি খুঁজছিলাম তোমাকে। এখানে এসে একা একা শুয়ে আছো কেন?
আমি ওর প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারলাম না৷ ওর ও উত্তর পাওয়ার কোন তাড়া নেই৷ তাই দুজনেই চুপচাপ হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে রাখলাম। সাবিহার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে ও ভীষন কষ্ট পেয়েছে। ওর মন খারাপের চেহারা আমার বেশ চেনা। কি হতে পারে? কেন কষ্ট পেল?
ফারহান নিশ্চয়ই সাবিহাকে বকা দিয়েছে বা এমন কোন বিষয় নিয়ে বলেছে যার কারণে সাবিহা মনে কষ্ট পেয়েছে। কেন জানিনা,এখন ওর কষ্টে আমারও কষ্ট লাগছে।
.
.
.
পাঁচদিন ছুটি কাটিয়ে অফিসে গেলাম।
আমার সামনের ডেস্ক এর মেয়েটা আজ অন্যরকম ভাবে সেজে এসেছে।তাকে বলিউডের কোন নায়িকাদের মত লাগছে।তাদের চেহারার সৌন্দর্য যেমন ই হোক পোশাক পরিচ্ছদে বেশ আকর্ষণীয় লাগে।
বস রামীম বলেছেন অফিসের সবাইকে ধমকা ধমকি করে টাইট দিয়ে রাখতে আমিও সেটাই করছি। প্রয়োজনের বাইরে অফিসের সবার সাথে একটু কাঠখোট্টা ব্যবহার করছি। আস্তে আস্তে আমার একটা ডমিনেন্স সৃষ্টি হচ্ছে।
সামনের ডেস্কে বসা নীড়া ছাড়া বাকি সবাই এতে অখুশি।
তবে আজকেও একটা বিষয় আমার নজর এড়ায় নি। সেটা হলো নীড়ার গালে লাল হয়ে থাকা থাপ্পড়ের দাগ। ওকে কিছুক্ষন খেয়াল করার পর বুঝলাম ও আমাকে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে, কিন্তু সাহস করে বলতে পারছে না।
কেউ কিছু বলার আগে আমি আঁচ করার চেষ্টা করি সে, কি বিষয়ে বলতে পারে!!" অফিসের কোন কাজের ব্যপারে এ মেয়েটি আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না।
কারণ তাহলে কোন প্রকার হ্যাজিটেশন ছাড়াই বলে ফেলত। এত ইতস্তত করতো না।
এছাড়া কোন সাধারণ বিষয়েও সে আলাপ করতে চাইছে না। তাহলে ইনিয়ে বিনিয়ে অফিসের কোন কাজের কথা থেকে আলোচনা করতে করতে সাধারণ বিষয়েও আলাপ করে ফেলতে পারতো। যা বলতে চাচ্ছে সেটা হয়ত একটু স্পেশাল কিছু। আমি যতদূর জানি মেয়েটি বিবাহিত।
তাহলে ও কি আমাকে এসে বলবে যে ওর স্বামী ওর উপর অত্যাচার করে, এজন্য ই মাঝে মাঝে ওর গায়ে মারের দাগ দেখা যায়৷ মনে হচ্ছে ও এমন কিছুই হয়ত আমার সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছে।
ভাবছি নিজ থেকেই ডেকে কথা শুরু করবো কিনা!
এর মাঝে হঠাৎ করে একটা ফোন কল আসলো মনিকার নম্বর থেকে।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো!
ভাইয়া....
আমারে মাফ করে দেন, আমি মোবাইল টিপছিলাম বাবুকে বিছানায় রেখে, ও বিছানার উপরে রাখা একটা চুলের ক্লিপ মুখে দিয়ে গিলে ফেলেছে আমি খেয়াল করিনাই।
বাবু যেন কেমন করতেছে আপনে জলদি বাসায় আসেন।
ভয়ানক রাগ আর ভীষণ কষ্ট এ দুটো ফিলিংস আগে আমার ভেতর কাজ করেনি। আমি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলাম, বাবুর আম্মু কোথায়!
মনিকা জানালো আমি অফিসে আসার ঘন্টাখানেক পরই সে বাবুকে রেখে বের হয়ে গেছে। আমি কল কেটে সাবিহাকে ফোন দিলাম। ফোন সুইচড অফ।
মাথার উপরে আকাশ ভেংগে পড়লো আমার। চেয়ার থেকে স্যুট টা টান মেরে নিয়ে দৌড়ে অফিস থেকে বের হলাম।
রাস্তায় রিকশার জন্য দাঁড়ানোর সময় নেই। উদ্ভ্রান্তের মত আমি ছুটে চলেছি। কখন যেন আমার পেছনে পেছনে স্কুটি নিয়ে ফলো করে চলে এসেছে নীড়া। আমাকে দৌড়াতে দেখে বললো, স্কুটিতে উঠুন। কোথায় যাবেন বলেন আমি নিয়ে যাচ্ছি। এক লাফে স্কুটিতে উঠে ওকে বাসার ঠিকানা বললাম। ও যত দ্রুত পারে স্কুটি চালাতে লাগল। আমি পেছনে বসে ততক্ষনে এম্বুলেন্সে ফোন দিয়েছি।
আমাদের বাসায় পৌঁছানোর আগেই এম্বুলেন্স পৌঁছে গেছে। সাথে ছিল একজন অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞ।আমি নীড়া এবং ডাক্তার তিনজন ই দৌড়ে বাসায় যাই।মনিকা সাফাকে কোলে নিয়ে বসে আছে। মনিকার এন্ড্রয়েড ফোন ফ্লোরে পরে রয়েছে।ও আমাকে ওর বাটন ফোন থেকে কল করেছিল৷ ওটা হাতে নিয়ে সাবিহার মোবাইলে বার বার ডায়েল করে যাচ্ছিলো মনিকা। সাফার চোখমুখ লাল টকটকে হয়ে আছে ওর গলা থেকে কেমন যেন একটা শব্দ আসছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, শরীর বেঁকে যাচ্ছে।
এমন দৃশ্য আমার জন্য সহ্য করা অসম্ভব। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
তবে একটা বিষয় আমার এবং নীড়ার নজর এড়ায় নি। ফ্লোরে পরে থাকা মনিকার এন্ড্রোয়েড মোবাইলে তখন পর্ণ ভিডিও ক্লিপ চলছিল। ডাক্তার সেটাকে খেয়াল করার আগেই নীড়া ফোন উঠিয়ে পাওয়ার বাটন টিপে দেয়৷
ওদিকে মাথা ঘামানোর মত সময় আমার ছিলনা৷
মনিকা এবং আমি সাফাকে নিয়ে গিয়ে এম্বুলেন্সে বসি। এম্বুলেন্স হসপিটালের উদ্দেশ্যে ছুটে চলে।
স্কুটি নিয়ে আমাদেরকে পেছন পেছন ফলো করছিলো নীড়া।
সাফার অবস্থা অনেকটা খারাপ। ওকে অক্সিজেন মাস্ক দেয়া হয়েছে।
এম্বুলেন্স এসে দাঁড়ায় একটা সিগন্যালের সামনে৷ এখানে কতক্ষন আটকে থাকতে হয় কে জানে!!এখনকার ১ সেকেন্ড ও আমার কাছে ১ বছরের মত লাগছে।
আচমকা আমার চোখ আটকে যায় সিগন্যালে আমাদের এম্বুলেন্সের পাশ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকা একটা বাইকে।
সাবিহা!! হেলমেট পরিহিত একটা লোকের বাইকের পেছনে বসে সে দু হাত দিয়ে কান চেপে রেখেছে। এম্বুলেন্সের টানা পেঁপোঁ করে বাজতে থাকা শব্দ হয়ত তার কানে বিষ ঢালছে! কিন্তু সে কি আদৌ জানে! এই এম্বুলেন্সে রোগী হিসেবে কে আছে!
তার নিজ দেহ থেকে জন্ম দেয়া একমাত্র ফুটফুটে কন্যা সন্তান.....
.
.
___________________________
এম্বুলেন্স হাসপাতালের গেটে পৌঁছানো মাত্রই সাফাকে এমার্জেন্সির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এমার্জেন্সি কেবিনেটের গেট পর্যন্ত আমি নীড়া এবং মণিকা তিনজন ই ছুটে গিয়েছিলাম। মণিকার চোখে মুখে উৎকন্ঠার ছাপ স্পষ্ট। আমার নিজের অবস্থাটা,
খাঁচায় আটকে পড়া ঘুঘু পাখি নিজেকে মুক্ত করার জন্য যেমন ছটফট করে, ঠিক সেরকম-ই। নীড়া সবকিছু দেখে হতভম্ব।
আমার কাছে মনে হচ্ছিলো সময় খুব ধীরে ধীরে অতিবাহিত হচ্ছে। তাই অনুমান করে বলতে পারবো না ঠিক কতক্ষন পরে সাবিহা আমাকে কল করেছিল।
ফোন রিসিভ করা মাত্রই ওপাশ থেকে সাবিহার কন্ঠে চিৎকার করা আহাজারি শুনতে পাই। সম্ভবত কোন প্রতিবেশীর মাধ্যমে ও সাফার ব্যপারে খবর পেয়েছে।
সাবিহাকে সেদিন সত্যি ই আমার অনেক কিছু জিজ্ঞেস করার ছিলো। কিন্তু কেন যেন ওকে কিছুই জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করেনি। মানুষ প্রশ্ন-উত্তর তর্কাতর্কি তখন-ই করে যখন তারা একটা সমাধানে আসতে চায়। একটা গোলকধাঁধা থেকে বের হতে চায়। কিন্তু সাবিহা নিজেই নিজেকে গোলক-ধাঁধার ভেতরে আটকে রেখেছে। ওর সাথে আমার প্রশ্ন-উত্তর পর্ব জমবে না।
হাসপাতালের ঠিকানা দিয়ে দেই ওকে। বেশ দ্রুতই ও পৌঁছে যায়। এমার্জেন্সি-কেবিনেটের সামনে রাখাক ওয়েটিং চেয়ারে বসে থাকতে দেখে সাবিহা দৌড়ে আমার বুকের উপর এসে ঝাপিয়ে পড়ে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেয়।
ঠিক এই মুহুর্তে আমার কি করা উচিৎ!
সাবিহা কি আসলেই ওর সন্তানের প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি থেকে কান্না করছে, নাকি নিজের দোষ চাপা দেয়ার জন্য ইমোশনাল একটা নাটকের সৃষ্টি করছে সেটা বোঝার চেষ্টা করে হিমশিম খেলাম।
সাবিহার মুখের দিকে তাকালেই আমার পুরো শরীর অবিশ্বাসের বিষে বিষিয়ে উঠে। ওকে অনেক রহস্যময়ী মনে হয়। মনে হয় ও প্রতিনিয়ত মানুষ ঠকায়, ঠকবাজ, প্রতারক।
ওকে নিয়ে করা এসব ধারণাগুলো আমি নিজের ভেতরেই দমিয়ে রাখি। বাইরে এমন একটা ভাব দেখাই, সবকিছু ঠিক আছে।
সাবিহার কান্না দেখে আমারও নিজের উপর আর কন্ট্রোল থাকলো না৷ সাবিহাকে আমি ভালো না বাসলেও সাফাকে অনেক বেশি ভালোবাসি৷ আমার দু-চোখের কোনা থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরে। দু হাতে সাবিহাকে জড়িয়ে ধরে বলি, সব ঠিক হয়ে যাবে।
যত বড় অপরাধী ই হোক, সাবিহা একজন মা। একজন মায়ের কাছে সন্তানের এমন দুরবস্থার সময়ে চারদিক ভীষন অন্ধকার লাগে। আমি এ অবস্থায় ওকে আমার কোন কথা কিংবা কাজের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফেলতে চাচ্ছি না৷
.
.
মনিকার চোখ মুখ থেকে উৎকন্ঠার ছাপ চলে গেছে একটু দূরে বসে মনিকা ও নীড়া নিজেদের মাঝে কথা বলছে। মনিকা মাঝে মাঝে দাঁত বের করে হাসছে।ওকে দেখিলেই আমার অসহ্য লাগছে। নীড়ার চেহারা গাম্ভীর্যতায় পরিপূর্ণ। ওরা কি বিষয় নিয়ে এত খোশ গল্প- আলাপ করছে তা আমার বোধগম্য নয়, জানতেও চাইনা।
খানিক বাদেই এমার্জেন্সি কেবিনেট থেকে একজন ডাক্তার বের হয়ে এসে আমাকে ইশারা দিয়ে ডাকে। আমার বুকটা ধক করে উঠে। আমি উঠে ডাক্তারের কাছে যেতে চাইলে সাবিহা আমাকে আটকায়, "কোথায় যাচ্ছে? আমিও যাব।"
জবাবে বলি, একটু বসো। আমি শুনে আসছি ডাক্তার কি বলে।
সাবিহা এক চোখ অবিশ্বাস নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বসে রইলো।
আমি উঠে ডাক্তারের কাছে গেলাম।
তিনি বললেন,
" শহর আহমেদ, আপনার কন্যার অবস্থা আশংকাজনক। চুলের ক্লিপে থাকা সুচালো অংশ ওর গলার নরম মাংসের ভেতরে বিঁধে গিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি একটা অপারেশন পারফর্ম করতে হবে। এবি পজেটিভ ব্লাডের ব্যাকাপ এবং লাখ দশেক টাকা ম্যানেজ করুন খুব জরুরি।
ডাক্তারের কথা শুনে মনে হচ্ছিলো আমি টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে যাব।
দশ লাখ টাকা ম্যানেজ করা কোন ব্যপার না। আমার নিজের একটা ফ্লাট আছে। ওটার কাগজপত্র জমা দিয়ে দশ লাখ টাকা ম্যানেজ করা যাবে যে কোন মুহুর্তে।কিন্তু সাফার অবস্থার কথা চিন্তা করে আমি নিজেকে আর সামলাতে পারছিনা।
দ্রুত পায়ে হেঁটে সাবিহার কাছে এসে বললাম তুমি মনিকাকে নিয়ে সাফার কাছে এখানেই থাক। আমি আসছি। ডাক্তার কখনো কিছু বললে আমাকে সরাসরি ফোন দিয়ে জানাবে।
সাবিহা মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানালো। ওর কান্নার রেশ কমে এসেছে অনেকটা। উদাস দৃষ্টিতে গালে হাত দিয়ে বসে আছে সে। চুলগুলো অগোছালো হয়ে পিঠের উপর ছড়িয়ে আছে, সেদিকে খেয়াল নেই সাবিহার।
খুব দ্রুত বের হয়ে আসি হাসপাতাল থেকে।
পেছন পেছন আসে নীড়াও।
নীড়া আমাকে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে?
নিজের ভেতর কোন ভারী কথা চাপিয়ে রাখলে তা মানসিক কষ্ট আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই নীড়াকে বললাম "এই মুহুর্তে আমার লাখ দশেক টাকা এবং এবি পজেটিভ ব্লাড ম্যানেজ করতে হবে।"
নীড়া স্কুটি স্টার্ট দিল। আমি উঠে বসলাম।
নীড়া জিজ্ঞেস করলো, দশ লাখ টাকা কিভাবে ম্যানেজ করবে?
- ফ্লাটের কাগজপত্র বন্ধক রেখে।
- কাগজপত্র বের করে জমা দিয়ে টাকা আনতে কত সময় লাগবে?
- ঘন্টাখানেক তো লাগবেই।
- অনেক সময়ের ব্যপার। আমার সাফার জন্য সত্যি খুব টেনশন হচ্ছে।
নীড়া যে টেনশন করছে সেটা ওর স্কুটিতে চড়েই বুঝতে পারছি। ও স্মুথলি ড্রাইভ করতে পারছে না।
এভাবে চালালে নিজেদের ও কোন বাস বা ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে হাসপাতালে এডমিট হতে হবে।
নীড়া নিজ থেকেই বললো পাঁচ মিনিট সময় দরকার ওর।
একটা পার্কের পাশে স্কুটি দাঁড় করায় নীড়া।
পড়ন্ত দুপুরে একদমই ফাঁকা ছোট্ট এ পার্কটি। নীড়া হেঁটে ভেতরে ঢোকে। পেছন পেছন আমিও আগাই।আমার মনে সাফার অস্থিরতা বিরাজ করছে।
নীড়া একটা মোটা গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়।
আমার দিকে তাকিয়ে বলে, শহর এদিকে আসুন।
আমি গুটি গুটি পায়ে ওর দিকে এগিয়ে যাই।
নীড়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে, আমার অদ্ভুত একটা ইচ্ছে আছে। আপনি পূরণ করতে পারবেন?
আমি নিরস কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, কি ইচ্ছা?
নীড়া একটু ইতস্তত করতে করতে বললো,
আমাকে একটা থাপ্পড় দিতে পারবেন?
যত জোরে পারেন?
- কি বলছো এসব?
- জ্বী। ঠিক শুনেছেন।
- এটা কেমন ইচ্ছে?
- সময় নষ্ট করবেন না প্লিজ, আমাকে প্লিজ আপনি একটা থাপ্পড় দিন।
-শিওর?
- হ্যাঁ।
আমি হালকা ভাবে ওকে একটা থাপ্পড় মারলাম। চটাস করে উঠলো। মনে হচ্ছে একটু বেশি জোড়ে মেরে ফেলেছি। কিন্তু আমার ধারণা ভুল। নীড়া দাঁত কিটমিটিয়ে বললো "আর জোর নেই গায়ে? জোরে মারতে বলেছি।এত আস্তে কেন?"
ওর কথা শুনে একটু বিরক্তিকর মনে হলো আমার কাছে। যেহেতু নিজ থেকেই চাইছে তাই সজোরে ওর গালে একটা চড় লাগালাম।
ওর ঘাড় ঘুরে গেল। হাতের কয়েকটা আংগুলের ছাপ ওর ফর্সা গালে বসে লাল হয়ে গেছে। ও যখন আমার দিকে তাকালো, ওর চাহনী দেখে মনে হলো ও একটা ম্যাচের অবিষ্ফোরিত কাঠির মত হয়ে ছিল এতক্ষন, ম্যাচের কাঠি ঘষা দিলে ছোট একটা বিষ্ফোরণের মাধ্যমে যেমন আগুন জ্বলে উঠে, আমার থাপ্পড় খেয়েও নীড়া সেভাবেই জ্বলে উঠেছে। হুট করে ও ডান হাত দিয়ে আমার জামার কলার চেপে ধরে। অন্য হাত দিয়ে আমার মাথার পেছনের চুল খাঁমচে ধরে আমার ঠোঁটে ওর নরম ঠোঁট গুজে দেয়। নীড়ার ডান হাত আমার জামার কলার ছেড়ে গলায় চলে আসে। ধারালো নখগুলো বেশ কয়েকটা লাল রেখা এঁকে দেয় আমার শরীরে। এভাবে কয়েক সেকেন্ড। এরপর ছোট একটা ধাক্কা মেরে আমাকে সরিয়ে দেয় ও। আমার দিকে এমন নজরে তাকিয়ে ও হাপাচ্ছিলো, যেন আমি ওর সামনে একটা ছোট্ট হরিণ শাবক আর ও ক্ষুধার্ত বাঘিনী। এই ছোট্ট কয়েক মুহুর্তে কি হয়ে গেল তা বুঝে উঠতে আমার বেশ সময় লাগবে৷ আমার মাথায় তখন সবকিছু ছাপিয়ে সাফার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
আমি শার্ট ঠিক করে ওর সামনে থেকে চলে আসার জন্য পা বাড়ালাম। পেছন থেকে নীড়া অন্যরকম একটা কন্ঠে আমাকে ডাক দিয়ে বললো,
"ওহ - মাই মাষ্টার
আই উইল গিভ ইউ দ্যা মানি।
ফুল টেন লাখস।
ইউ যাস্ট হ্যাভ টু মেক মি ইউর স্লেভ।"
ওর কথা গুল আমার মাথার উপর দিয়ে গেল।
আমি পেছন ফিরে তাকালাম।
নীরা আমার দিকে এগিয়ে এসে বলতে লাগলো,
টাকা আর ব্লাড আমি ম্যানেজ করে দিচ্ছি।
আমার ১ ঘন্টাও সময় লাগবে না।
কিন্তু একটা শর্ত আছে,
আমি অস্ফুট কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, কি শর্ত?
নীড়া উত্তর দিলো,
তোমাকে আমার সাথে বন্ডেজ ক্লাবে যেতে হবে।
- বন্ডেজ কি?
- আজ রাতে গিয়ে গুগলে দেখে নিও...
.
.
.
নীড়ার স্কুটির পেছনে চড়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছি। ওর কার্ড থেকে পেমেন্ট করা যাবে। ব্লাডের ব্যবস্থাও ও করেছে।
মাথায় সাফার চিন্তার পাশাপাশি অন্য একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তা হল এতদিন নীড়ার শরীরে যে আঘাতের চিহ্ন গুল দেখেছিলাম সেগুলো ইচ্ছেকৃতভাবে নিজের শরীরে দিয়িয়েছে কিনা!!..
__________________________
নীড়ার স্কুটির পেছনে চড়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছি। ওর কার্ড থেকে পেমেন্ট করা যাবে। ব্লাডের ব্যবস্থাও ও করেছে।
মাথায় সাফার চিন্তার পাশাপাশি অন্য একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তা হল এতদিন নীড়ার শরীরে যে আঘাতের চিহ্ন গুল দেখেছিলাম সেগুলো ইচ্ছেকৃতভাবে নিজের শরীরে দিয়িয়েছে কিনা!
খুব শীঘ্রই আমার চিন্তাভাবনা থেকে নীড়ার ব্যপারটা হারিয়ে গেলো।
আমার মাথায় তখন ঘুরছিলো সাফা কেমন আছে, ওর কি অবস্থা।
হাসপাতালে পৌঁছাতে আমাদের বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়না। ডাক্তারের সাথে কথা বলে টাকা পেমেন্টের ব্যবস্থা করে নীড়া।
জোগাড় হয়ে যায় এ বি পজেটিভ ব্লাডও।
দুঃসময়ে নীড়ার এমন হুট করে এগিয়ে আসাটা সত্যি ই কল্পনার বাইরে ছিল আমার। তবে পৃথিবীতে একদম শুধু শুধু কেউ ই কিছু করে না। ওর সাথে বন্ডেজ ক্লাবে যেতে হবে।বন্ডেজ ক্লাব কি সেটা আমি এখনো জানিনা।হবে হয়ত কোন নাইট ক্লাব টাইপ কিছু একটা। তবে যাই হোক আমার যেতে কোন আপত্তি নেই৷ সাফার জন্য আমি সবকিছু করতে রাজি আছি।
খুব দ্রুততম সময়ের ভিতরে সাফার অপারেশন এর ব্যবস্থা হয়ে যায়। বেশ কয়েকজন সিনিয়র ডাক্তার মিলে একত্রে অপারেশন পরিচালনার কাজে হাত দেন।
নীড়া সব কাজ শেষ করে ওর নিজের বাসায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যাওয়ার আগে সবার অগোচরে আমার দিকে তাকিয়ে মুখ বাকা করে একটা ভেংচি কাটে।
সাবিহার শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটেছে।ও বার দুয়েক বমি করেছে। প্রেসার লো হয়ে গেছে। ডাক্তার ওকে চলে যেতে বলা সত্তেও চুপচাপ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে অপলক শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিলিং এর দিকে। মণিকার কাছে শুনেছি সাবিহা তার মোবাইল ফোনটি আছাড় মেরে ভেংগে ফেলেছে, আমি তখন চলে যাওয়ার পরে। মণিকা বলেছে, আমি শুনেছি। এতটুকুই।সাবিহার কোন কার্যক্রম আমার মনে এখন কোন প্রভাব ফেলছে না। কারণ তখন আমার মন মস্তিষ্ক অনুভূতির পুরোটুকু জুড়ে শুধুমাত্র সাফার কথা ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
চেয়ারে বসে থাকা, পায়চারি করা,সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা, ওটির রুম থেকে কখন ডাক্তাররা বের হবে তার অপেক্ষায় তীর্থের কাকের মত ওটির লোহার দরজার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না।
মনে মনে অনেক বেশি হতাশ হয়ে একটা চেয়ারে বসি। কখন যে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছি, তা টের পাইনি। ঘুম ভাংগে মণিকার ধাক্কা-ধাক্কিতে।
চোখ মেলে তাকাতেই ও জানায় ওটি থেকে ডাক্তাররা বের হয়েছেন। আমাকে ঘুমাতে দেখে তারা ডাকেন নি৷ ধীরেসুস্থে গিয়ে তাদের সাথে দেখা করতে বলেছেন।
.
মনের ভিতর একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে আমি প্রায় ছুটে গেলাম ডাক্তার সীমান্তের কেবিনে। উনি-ই অপারেশনের লিড ডাক্তার ছিলেন। যাওয়ার পর আমাকে ঠান্ডা হয়ে বসতে বললেন।
উনি প্রথমেই আমাকে বললেন, মিস্টার শহর আপনাকে এখন যা বলবো তা খুব শক্ত মন মানসিকতা নিয়ে শুনতে হবে অহেতুক কোন সিন ক্রিয়েট করবেন না। পৃথিবীতে চাইতে - না চাইতে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনা ঘটে যায়। এবং যা একবার ঘটে যায় তা হাজার চেষ্টা করলেও বদলানো যায়না। তাই চুপচাপ সবকিছু মেনে নেয়াটাই হলো যথোপযুক্ত কাজ।
আমার সাহস হচ্ছিলো না ডাক্তার কে নিজ থেকে কিছু জিজ্ঞেস করার। চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পরছিল।
ডাক্তার আমাকে এর পরেই বললেন,
" সাফার অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে মিস্টার শহর।"
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাফা কখনো কথা বলতে পারবেনা। ওর ভোকাল কর্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কথাগুলো শোনার পরে আমার অনুভূতি ঠিক কি রকম ছিলো সেটা আমি প্রকাশ করতে পারব না কিন্তু মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো,
ঠিক কি ভুলের জন্য নিষ্পাপ সাফা এতবড় একটা শাস্তি পেল?
সাবিহা যদি সাফাকে একটু টেক কেয়ার করত,
মেয়েটার জীবনের এতবড় একটা ক্ষতি হত না।
ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম, রিলিজ করবেন কবে?
ডাক্তার জানালো দিন পাঁচেকের মধ্যেই। তবে গলার ঘা শুকানোর আগ পর্যন্ত বাসায় নিয়ে যাওয়ার পরেও সাফাকে বেশ কিছুদিন পাইপের মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় খাবার খাওয়াতে হবে এবং এ কাজের জন্য বাসায় একজন নার্স রাখা অতি আবশ্যক।
আমি ডাক্তারের কথা শুনে চুপচাপ বের হয়ে আসলাম।
এসেই প্রথমে হাত পা ভালভাবে ধুয়ে প্রটেকশন নিয়ে সাফাকে দেখতে গেলাম। কয়েকটা পাইপ ওর গলার ভেতরে ঢোকানো। গলায় সাদা ব্যান্ডেজ করা। চোখ বুজে নিষ্পাপ একটা চেহারা করে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। ঘুমাচ্ছে অথবা ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে। এই মেয়েটা যখন বড় হবে যদি সবকিছু জানতে পারে, কতবড় একটা ক্কষ্ট পাবে,
আমার ওকে দেখে মনেই হচ্ছেনা ও কথা বলতে পারবে না।
সাফা জন্ম নেয়ার পর পর ই আমি প্রতিটা দিন অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি কবে ওর মুখ থেকে " আব্বু " বলে মিষ্টি একটা ডাক শুনতে পাব।
( এরপর কেটে যায় বেশ কিছু দিন)
.
.
.
সাফা অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। অফিস থেকে এক মাসের ছুটি নিয়েছিলাম প্রায়। আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি আছে।
এই এক মাসে অনেক কিছু বদলেছে। সাবিহা মোবাইল ফোন ব্যবহার একদম ই বন্ধ করে দিয়েছে। বাসায় সাবিহার কোন ফোন নেই। বাসা থেকে বের হওয়ার কথা চিন্তা করা তো দূরে থাক, সাফাকে ছেড়ে মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য ওয়াশরুমে গেলেও মাঝে মাঝে ফ্ল্যাশ না করে দৌড়ে চলে আসে। চোখের আড়াল হতে দেয়না একদম মেয়েটাকে।
আমার প্রতি ভালোবাসা ভক্তি আগের থেকে বেড়ে গেছে বহুগুণ।
একটা দুর্ঘটনা হুট করেই যেন সবকিছু বদলে দিল।
সকালে উঠে নিজে নাস্তা বানিয়ে তারপর আমাকে ডেকে তোলে সাবিহা।
আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে বসলে রুটির টুকরা ছিড়ে সাথে ভাজি বা ডিম নিয়ে আমার মুখে তুলে খাইয়ে দেয়। যদি একজন আরেকজনকে চা খাইয়ে দিতে পারতো সাবিহা মনে হয় আমাকে চাও খাইয়ে দিত।
অদ্ভুত এক ব্যপার হলো ভালোবাসা যত তীব্রই হোক না কেন একজন কখনো তার পার্টনারকে চা খাইয়ে দেয়ার দক্ষতা অর্জন করার চেষ্টা করেনা।
চা হলো একান্ত ব্যক্তিগত খাবার। কেউ ছোট ছোট চুমুক দিয়ে চা খায়। কেউ বড় বড় চুমুকে খায়। কেউ হালকা গরম খায়, কেউ প্রচন্ড গরম খায়। চা খুব সাধারণ একটা জিনিস হলেও এটা আরামসে খাওয়াটা মোটেই সাধারণ বিষয় নয়৷ অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া৷
আমার তো মনে হয় চায়ের কাপ তুলে পরিমিত পরিমানে খাইয়ে দেয়ার মত পার্টনার যে পাবে সে-ই পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী ভালোবাসা প্রাপ্তির খেতাবটাও পাবে৷
আমাকে খাইয়ে দেয়ার পরে নিজে খায় সাবিহা৷ এরপর বাবুর ছোট ছোট জামাকাপড়, কাঁথা ইত্যাদি কোনটা কখন কি ধুতে হবে বাবু কোন জামা পড়বে, কি খাবে, এগুল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে,এদিকে আমাকে বাইরে যেতে হয় বাজারের জন্য৷ বাজারে যাওয়ার আগে আমার গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরে কপালে পাপ্পি দিয়ে দেয়া৷ বাজার থেকে ফেরার পরে নিজের ওড়না দিয়ে আমার কপালের ঘাম মুছে দেয়া, ফ্যানের নিচে আমাকে বসিয়ে ঠান্ডা শরবত এনে আমাকে খেতে দেয়া ইত্যাদি ছোট খাট অনেক কাজ ওর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় যা আমি আগে কখনো ওর মাঝে খেয়াল করিনি।
তবে যা-ই করুক না কেন ওর দিকে তাকালে আমি আর আগের মত ভালোবাসা অনুভব করিনা। একবার কোন কারণে কারো উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেলে তার প্রতি আর নতুন করে ভালোবাসা জন্মায় না৷ আমার মনে সাবিহার কাজকর্মে কোন প্রভাব পড়ছে না।
ও যে মনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমাকে অতি ভক্তি দেখাচ্ছেনা সেটাও বা আমি কিভাবে শিওর হব?
.
.
.
দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে অবশেষে অফিসে উপস্থিত হলাম আমি৷
সবাই আমাকে দেখে সাফার কথা জানতে চাইলো। আমি জবাবে জানালাম ভালো আছে সাফা।এতদিন বাসায় থাকার দরুন, অফিসের কাজে একদম ই মন বসছে না। সাফার কাছে পড়ে আছে মনটা। সাবিহার ফোন নেই। মনিকাকে বেশ কয়েকবার ভিডিও কল দিয়ে সাফাকে দেখেছি।
সাবিহা কোথায় আছে বা কি করছে একবার ও জিজ্ঞেস করিনি। মাঝে সাবিহা একবার কল দিয়েছে আমাকে। বলেছে মণিকার ছোট বাটন ফোনটা সাবিহা নিজের কাছে এনে রেখেছে। চাইলে ওকে আমি ঐ সিমে কল করতে পারি। আমি আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলাম।
নীড়াকে অনেক দিন পর দেখলাম। ও আজ গোলাপি রঙ এর শাড়ি পরে এসেছে। সাথে ওর পাতলা ঠোঁটেও ম্যাচিং করে গোলাপী লিপ্সটিক।চুল অর্ধেক খোপা করা।
কলেজ পড়ুয়া বাচ্চাদের মত কিউট ও ছোট্ট লাগছিলো ওকে। সেদিনের কথা মনে পড়লো আমার। ওকে একটা থাপ্পড় দিলেই ওর সাদা গালটা একেবারে লাল টুকটুকে হয়ে যাবে৷ মনে মনে হাসলাম আমি।
নীড়া আমার দিকে তাকিয়ে বেশ কয়েকবার চোখ টিপ্পুনি দিয়েছে৷ হুট করে আমার মনে পড়লো বন্ডেজ কি সেটা গুগল করে দেখতে একদম ই ভুলে গিয়েছিলাম আমি।
এখন মনে পড়লেও গুগল করতে ইচ্ছে করছে না৷ নীড়াকে জিজ্ঞেস করেই জেনে নিতে হবে।
নীড়ার গাল দুটো আজ একদম সাদা দেখাচ্ছে। আগের মত আঘাতের চিহ্ন নেই৷ ও ছোটখাট বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে আমার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে।
ওর কার্যক্রমে আমি অদ্ভুত একটা আনন্দ পাচ্ছি।
একটু পর বেশ কয়েকটা ফাইল নিয়ে ও আমার ডেস্কে আসে৷ সবার সামবে এমন একটা ভাব করে যেন অনেক জরুরি কাজের জন্য ও কথা বলতে এসেছে আমার কাছে৷ কিন্তু এসেই ডেস্কের উপর ফাইলগুলো রেখেই আমাকে প্রথমে জিজ্ঞেস করে,
মিষ্টার শহর, সেদিনের চুমুটা কেমন ছিল বলুন, পুরো আগুন না?
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। কিছু বলতে পারলাম না।
নীড়া ওর ঠোঁট দুটোর উপর নিজের জিহবা ঘুরিয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তোমার লিপ্স গুলো কিন্তু খাঁটি মদের মত। তোমার বউ নিশ্চয়ই এতদিন তোমাকে খেয়ে নেশা করেছে তাই না?
ওর এমন সরাসরি কথাবার্তা শুনে আমার কথা ফুরিয়ে যায়।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জিজ্ঞেস করি, তুমি না বিবাহিত? তোমার হাজবেন্ড এসব জানলে তোমার ডিভোর্স হয়ে যাবে।
ও উত্তর দেয়,
ডিভোর্সটা আমি ই ওকে দিয়েছি। একেতো নিজে কোন জব করত না, খেত বউয়ের টাকায়, আর বউকে সন্তুষ্ট করার মত শক্তিও ওর ছিলো না৷
নীড়ার কথা শুনে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না৷ তবে ওর সাথে কথা চালিয়ে যেতে ভাল লাগছিলো আমার।
সাবিহা বেশ কয়েকবার কল দিয়েছে৷ নীড়ার সাথে কথা বলার রেশ টা নষ্ট করতে চাইনি৷ তাই ফোন পিক করিনি। গল্পে গল্পে একপর্যায়ে জিজ্ঞেস করে ফেলি,
আচ্ছা বন্ডেজ ক্লাব কি, আমাকে বলো তো খুলে।
- তুমি ধারণা নাওনি?
- না।
সমস্যা নেই৷ আজ অফিস ছুটির পরে তোমাকে নিয়ে যাব৷সব নিজ চোখে দেখে জেনে নিও। যাবে আমার সাথে?
- অবশ্যই যাব৷
আচ্ছা বেশি সময় ব্যয় করা যাবেনা তোমার ডেস্কে। সবার চোখ লাগবে। আমি উঠি এখন।
- আচ্ছা।
নীড়া চলে যাওয়ার পর আবার যখন সাবিহার কল আসলো, রিসিভ করলাম।
সাবিহা জানালো তার অনেক একা একা লাগছে। আমি কখন বাসায় ফিরবো জানতে চাইলো।এমনিতে তো পাঁচটার পরেই বাসায় ফিরি। তবে
ওকে জানালাম অফিসের জরুরি কাজ পরে গেছে। ফিরতে অনেক রাত হবে।
অফিস ছুটি হয় বিকেল পাঁচটার দিকে।
নীড়ার চোখেমুখে একটা কুটিল আনন্দ ঢেউ খেলছে।
কেন জানিনা, অকারণেই আমার বুকের মাঝে ধুকধুক করছে। এটা ভয়ের অনুভূতি কিনা তা বলতে পারব না,কারণ আমার ভেতরে অজানা একটা বিষয় সম্পর্কে জানার প্রবল আগ্রহবোধ টাও কাজ করছে।
নীড়ার পেছনে অনুসরণ করলাম।
ওর স্কুটিতে চেপে বসার আগে জিজ্ঞেস করলাম,
এখন কি ক্লাবে যাব?
উত্তরে নীড়া বললো- ধুর, না।
- তবে?
আগে তোমাকে নিয়ে ঘুরব, তারপর শপিং করব, তারপর খাওয়াদাওয়া, তারপর ক্লাব।
নীড়ার চোখেমুখে অপার এক আনন্দ দেখতে পাচ্ছি।
ওর হাসিটাও আজ অনেক প্রানবন্ত লাগছে।
জিজ্ঞেস করলাম- কোথায় ঘুরতে যাচ্ছি?
- চন্দ্রিমাতে।
উদ্যানটা আমার বেশ পরিচিত। সাবিহার সাথে আমার অনেক সুখকর স্মৃতি আছে এখানে।
নীড়া ওর পিংক কালারের স্কুটিটি পার্ক করে। এর একটু পর ই ঝামেলা বেঁধে যায়৷ ওর স্কুটির পেছনে সাদা রঙ এর একটা গাড়ি পার্ক করা ছিল। ওটার জানালা থেকে কে যেন একটা প্লাস্টিকের বোতল বাইরে ছুড়ে মারে। নীড়া গিয়ে বোতল হাতে তুলে আবার ঐ গাড়ির জানালা দিয়ে ভিতরে ছুড়ে দেয়৷ সাথে সাথেই জানালা দিয়ে বাইরে গলা বের করে উঁকি দেয় আন্টির বয়সি একজন মহিলা। সে অতি উত্তেজিত অবস্থায় এমন ভাবে গলাটা বের করেছে যে আরেকটু হলেই জানালার ফাঁকা দিয়ে টুপ করে বাইরে পরে যেত। ভাগ্যিস তার ইয়া বড় ভুড়ির রহমতে এমন একটা বিপদ থেকে বেঁচে গেলেন তিনি।
- এএএই এইই বেয়াদব মেয়ে, তুমি এটা কি করলে?
- আন্টি আপনি যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশ দূষণ করছেন। আমার যেটা করা বলে উচিত মনে করেছি সেটাই করেছি।
- চুপ করো বেয়াদব। আমি বোতল ফেলেছি দেখে দেশ নোংরা হয়ে গেছে, আর ঐ যে ঐ দেখ গাছের নিচে বসে একটা রিকশাওয়ালা যে প্রস্রাব করছে সেটা দেখছিস না?
- প্রস্রাবের থেকে প্লাস্টিক বেশি পরিবেশ দূষণ করে। আপনিও দরকার হলে ওখাবে গিয়ে প্রস্রাব করুন আমি কেন কেউ ই কিছু বলবে না। কিন্তু পলিথিন বা প্লাস্টিক যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকুন। এগুল অপচনশীল।
নীড়া মহিলাটির সাথে কথা কাটাকাটি করছে আমি দূর থেকে দেখছি৷ সাবিহা মোটেই এমন ছিল না৷ ও বরং ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করতো।
বিজয়ের হাসি হাসতে হাসতে নীড়া আমার কাছে এসে বলে, একদম ঠিক শিক্ষা দিয়েছি মহিলাটাকে। আর কোনদিন রাস্তায় প্লাটিক ফেলবে না।
- আমি কিন্তু ইচ্ছা করেই রাস্তার উপরে প্লাস্টিকের বোতল ফেলি।
নীড়া চোখ বড় বড় করে তাকালো।
বললো কেন?
- আমাদের ফেলা প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে তা বিক্রি করে অনেকের সংসার চলে যায়৷টোকাই নামক এক মানুষের দল আছে আমাদের শহরে ওদের কাছে এগুলো খুব প্রয়োজনীয় ।
- ডাস্টবিনে ফেললে তো সেখান থেকেই নিতে পারে।
- মানুষ যখন পুকুরে মাছকে খাবার দেয়, তখন কি সব খাবার একসাথে এক জায়গায় দেয় নাকি ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়?
- ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
কিছুক্ষন চুপ থেকে নীড়া বললো ওহ বুঝেছি।
মনটা হঠাৎ উদাস হয়ে গেল। নীড়ার সাথে ঘুরছি ঠিক ই কিন্তু আমার মনে পড়ছে সাবিহার কথা। ওর সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো আমার জীবনের সবথেকে দামি অনুভূতি গুলোর ধারক।
তবে সাবিহার মত নীড়া সবসময় গম্ভীর থাকেনা। খুব অল্পতেই হাসে ও৷বেশি হাসা মানুষগুলোর সাথে চলতে ভাল লাগে। চলার পথে গাছ থেকে টুপ করে একটা পাতা ছিড়ে হাতে দিয়ে যদি বলা হয়,
"পৃথিবীর কোন এক প্রেমিক তার ছাগলিকে প্রেমিকাকে ভালোবেসে একটা পাতা উপহার দিল"
এটুকুতেই ওরা বেশ খুশি হয়।
তবে নীড়ার আনন্দটা ঠিক কি নিয়ে সেটা বুঝতে আমার কষ্ট হচ্ছে।
আমার বাহুর ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বেশ কিছুক্ষন পার্কে হাঁটাহাঁটি করলো নীড়া।
নীড়াকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার স্ত্রী সন্তান আছে, তুমি জানো।
তবুও আমার সাথে মিশছো কেন?
নীড়া সোজাসাপটা উত্তর দেয়,
আমার মনে হয় তুমি আমার জন্য পারফেক্ট মাষ্টার হতে পারবে।
যখন অফিসের বাকি কলিগদের তোমার ভরাট কন্ঠে ধমক দিতে, আমি তোমার এগ্রেসিভ এটিটিউড এর উপর ক্রাশ খেতাম। আমার তো ইচ্ছে করতো তোমার কাছে সারাদিন বকা শুনি, বকা তো ভালো। মার খেতে ইচ্ছে করত।
- মার খেতে ভাল লাগে এটা আমি এই প্রথম শুনলাম।
উঁহু, শুধু মার না। আমি ভালোবাসা ও ব্যাথা একসাথে উপভোগ করতে পছন্দ করি।
- কিভাবে সেটা উপভোগ করে?
পেইন উইথ প্লেজার, ক্লাবে গেলে বুঝবে। এখন ওসব বাদ দাও। আমি কিছুক্ষন তোমাকে আমার মন থেকে অনুভব করার চেষ্টা করি।
আমি হ্যাঁ না এমন কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না।
বেশ ঘুরাঘুরি করলাম। বাদাম চানাচুর চা আইসক্রিম সহ অনেক স্ট্রিটফুড খেলাম আমরা। একটা বিষয় খেয়াল করলাম নীড়ার সাথে ঘুরতে বের হয়ে আমার বয়স কমে গেছে।
আমি তুলনা দেয়ার চেষ্টা করলাম দুজনের ভেতরে।
সাবিহার সাথে ঘুরতে বের হলে অনেক গম্ভীর হয়ে থাকতে হয় একটা দায়িত্ববোধ থাকে নিজের ভেতরে। ওকে গাইড করতে হয়। ওর কথা শুনতে হয়।
কিন্তু নীড়ার সাথে ঘুরতে বের হয়ে মনে হচ্ছে ছোটবেলার দুই বন্ধু মিলে ঘুরতে বের হয়েছি। প্রথমদিকে একটু গম্ভীর থাকার চেষ্টা করেও লাভ হলোনা।
কিছুক্ষন পর ই নীড়ার সাথে আমিও সেট হয়ে গেলাম। এদিক সেদিক তিড়িং বিড়িং করে লাফাচ্ছি, স্ট্রিট ফুড খাচ্ছি, মাঝে মাঝে একজন আরেকজন কে ধাওয়া দিচ্ছি কে কাকে ধরতে পারে দৌড়ে তা পরখ করে দেখছি, জীবনের এ অংশের আনন্দটা আমার কাছে এতদিন চাপা পরে ছিল। নীড়ার সঙ্গ পেয়ে যেন সব আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
বেশ ভালো একটা বিকেল সন্ধ্যা কাটালাম আমরা।
এরপর নীড়া আমাকে নিয়ে গেল একটা শপিং মলে।
সেখানে গিয়ে ইয়োলো শো রুম থেকে আমার জন্য বেশ দামি গেঞ্জি, প্যান্ট এবং বেল্ট কিনে দিল। বললো ট্রায়াল রুম থেমে চেঞ্জ করে আসতে। আমি নীড়ার কথা মত চেঞ্জ করে আসলাম। নীড়া আয়নার সামনে এসে আমার গায়ের সাথে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে বললো দেখো আমাদের কত সুন্দর দেখাচ্ছে,
নীড়ার জামাকাপড় এর চয়েস ভাল মানতে হবে আমাকে আগের থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় লাগছিল ব্লাক কালার টি-শার্ট স্ক্রাচ করা স্কাই ব্লু জিন্স এবং স্নাকারসে।
নিজের মনের অজান্তে নীড়ার কোমড়ে হাত দিয়ে ওকে আমার দিকে টেনে নিয়ে বললাম,
তোমাকে আমার পাশে সুন্দর দেখায়।।
নীড়ার আনন্দ মাখা মুখটা আগের থেকে আরো বেশি প্রফুল্ল হয়ে উঠলো।
শপিং শেষে আমরা একসাথে খাওয়া দাওয়া করলাম। নীড়ার বিশাল আয়োজন। ক্যান্ডেল লাইট ডিনার।
খাবারদাবার অর্ডার করে আমরা বসে আছি, নীড়া হঠাৎ আমার হাত চেপে ধরে বললো, এখন থেকে তোমাকে আমি মাষ্টার ডাকবো।
- ডেকে কি হবে?
- তুমি সত্যি ই আমার মাষ্টার হয়ে যাবে। আমি হবো তোমার স্লেভ।
তুমি যা চাও আমার সাথে করতে পারবে।
কি উত্তর দিব ভাবছিলাম।
এমন সময়ে খাবার চলে আসে। অকোয়ার্ড একটা সিচুয়েশন থেকে মুক্তি পাই আমি।
খাবার শেষ করতে করতে রাত ৯ টা বেজে যায়।
ফোন কখন যেন সুইচড অফ হয়ে রয়েছে খেয়াল করিনি। নীড়ার থেকে একটু দূরে গিয়ে ফোন অন করি।
অন করার কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই কল আসে সাবিহার। ফোন পিক করতেই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই সাবিহার। জিজ্ঞেস করে কোথায় আছি।
আমার উত্তর দিতে ইচ্ছে করছিল,
" তুমি কখন কোথায় ছিলে আমি কি জিজ্ঞেস করেছি?"
কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম কাজে আছি৷ রাতে হয়ত ফেরা হবে না৷
বাবু কি করছে জানতে চাইলাম। জানালো ও ঘুমিয়ে পড়েছে৷ আমি ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দেই।
অন্য কোন সময় হলে ও খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতাম। কিন্তু সাবিহা খাক কিংবা না খাক তাতে আমার আর কিছু যায় আসেনা।
.
.
.
৯ঃ৪৫ পর্যন্ত নীড়ার বাসার নিচে দাঁড়িয়েছিলাম। ও নিজের বাসায় ঢুকে চেঞ্জ করে এসেছে।
ড্রেস চেঞ্জ করে আসার পরে ওকে আমি একদম ই চিনতে পারলাম না৷
একটা পিংক কালার গেঞ্জির একপাশ থেকে অনেকটা নামানো৷ কাঁধের উপর থেকে ভেতরে পরিহিত ছোট ড্রেসের ফিতা দেখা যাচ্ছে। সাথে ব্লাক জিন্স এবং ব্লাক হাই হিল।গলায় ব্লাক চোখার,চোখে কালো কাজল। চাহনীতে এক সমুদ্র তৃষ্ণা
ওকে এমন রূপে আমি আগে কখনো দেখিনি৷
এসে বললো, মাষ্টার, কখনো মুভি দেখেছেন হলে?
- হ্যাঁ
- আজ আমরা বন্ডেজ ক্লাবে মুভি দেখবো৷ তবে এটা শুধুমাত্র এডাল্ট দের জন্য।
এখানে কোন ডিজিটাক স্ক্রিনের পর্দা থাকেনা৷ সরাসরি লাইভ দেখা হয়।
- আমাকে এখানে নিয়ে যাওয়ার কারণ?
- শেখানো, হাউ টু বি এ পারফেক্ট মাষ্টার।
কথা বলতে বলতে স্কুটি চলে আসে একটা নামকরা শপিং মল এর সামনে৷
নীড়াকে ফলো করে লিফট বেয়ে একদম রুফ টপে চলে যাই। সেখানে নানারকমের সী ফুড ফাস্ট ফুড ও চায়নিজ খাবারের দোকান।
এগুলোর ভেতরে মোটামুটি মানের একটা কোর্টে ঢুকে যায় নীড়া। ঢুকে একদম সরাসরি কিচেনে চলে যায়৷ পেছন পেছন যাই আমিও৷ কিচেনের একদম শেষ প্রান্তে তাকালেই কিছু পাটের চট ঝুলতে দেখা যায়। জায়গাটা বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। নীড়া এগিয়ে গিয়ে এক হাত দিয়ে চট সরায়। উন্মুক্ত হয় একটি গোপন লিফট।লিফটের ভেতর থেকে কেউ একজন বাইরে অবস্থান করা আমাদের ছোট একটা ছিদ্র দিয়ে দেখে নিল। একটু পর খুলে গেল দরজা। নীড়ার এখানে যাতায়াত আছে বোঝাই যায়৷
লিফট কতক্ষন ধরে নিচে নামে অনুমানের বাইরে। তবে একটা পর্যায়ে লিফটের চলন বন্ধ হয়৷ লিফট থেকে বাইরে বের হতেই কানে আসে ধুম ধারাক্কা নাচ গানের শব্দ।পুরো কামরা লাল নীল আলো আর ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ।
আমাদের মত এখানে অনেকেই জোড়ায় জোড়ায় আছে। অনেকে সিংগেল। মদ খেয়ে মাতলামো করছে। কিছু কিছু মেয়েরা ট্রে তে মদের গ্লাস নিয়ে বিক্রির জন্য সবার মাঝে হাঁটাহাঁটি করছে। তাদের বুকে কোন কাপড় নেই৷ একদম উদোম। নিচে হালকা কোন রকমের একটা কাপড় পেঁচিয়ে পড়া। মাতাল অবস্থায় অনেকেই ওদের গায়ে হাত বুলাচ্ছে। কিন্তু এতে মেয়েগুলোর কোন ভ্রুক্ষেপ ই নেই৷ তারা ব্যস্ত তাদের হাতের দামি ড্রিংকস গুল টাকাওয়ালা লোকদের খাইয়ে পকেট থেকে বেশি বেশি টাকা খসিয়ে নিতে।
নীড়া দুই গ্লাস ড্রিংক্স নেয়৷
আমার দিকে এগিয়ে দিলে আমি খেতে অসম্মতি জানাই৷ বলি আমি অভ্যস্ত নই৷ কিন্তু নীড়া বলে এরপর যা দেখতে যাচ্ছি তা তোমার স্বাভাবিক মাথা নিতে পারবেনা৷
তাই একটু ড্রিংস করে নেয়াটা জরুরি । ও আরো জানায় আর এটায় তেমন নেশা হবেনা৷ কিন্তু শরীরে উত্তেজনা বাড়বে৷
আমি নাক সিটকে কয়েক চুমুকে খেয়ে নিলাম।
নীড়া এবার আমাকে নিয়ে এগিয়ে গেল সামনে। কয়েকটা দরজা পার হয়ে একটা রুমের সামনে নিয়ে আসে আমাকে। গেটে হাত পা বাঁধা একটা অর্ধ উলঙ্গ মেয়ে বসে আছে এমন একটা পোস্টার লাগানো। নীড়া দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে। ভিতরে ঢোকার পর পর ই বুকের ভিতর ধুক করে উঠে আমার৷
সিলিং থেকে নেমে এসেছে একটা লম্বা তার। সে তারের মাথায় ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা ১০০ ওয়াটের একটা লাল লাইট
পুরো রুমকে আলোকিত করে রাখার দায়িত্ব নিয়েছে। লাইটের নিচেই রাখা একটা চেয়ার। চেয়ারের চারপাশে থাকা আরো কিছু মোটা মোটা শিকল ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দেখে মনে হচ্ছিল এটা একটা টর্চার সেল।
নীড়া হুট করে বাইরে গিয়ে আবার কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই চলে আসে। ওর হাতে দুটো সাদা রঙ এর টিকেট। আমরা রুমের অন্য কোনায় গিয়ে বসি৷ সেখানে ঐ ঝুলে থাকা লাল লাইটের বাতি পৌঁছায় না। আমরা সব ক্লিয়ার দেখতে পেলেও যারা লাইটের আলোর নিচে থাকবে তারা আমাদের দেখতে পারবেনা৷
আমাদের মত আরো বেশ কয়েক দম্পতি বসা আছে অন্ধকারের ভেতরে। তারাও আমাদের মত কিছু একটা দেখতে এসেছে।দম্পতি কেন বললাম। জুটি বলা ভাল, হয়ত আমাদের ই মত তারাও।আমার কাছে অবশ্য সার্কাসে বসে পশু পাখির নানা ধরণের পারফরম্যান্স দেখার মত ফিল হচ্ছিল।
কিছুক্ষন পরে শুরু হয় আসল ঘটনা।
প্রথমেই এক হাতে একটা চেইন ও অন্য হাতে মিডিয়াম সাইজ একটা লাঠি নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করে এক মাঝবয়েসী ছেলে।চেইনের অপর প্রান্তে বাঁধা আছে একজন মেয়ে৷ যে কুকুরের মত চার হাত পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটে ভেতরে আসে। নীড়া আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ভালো ভাবে দেখে শিখে নাও৷ কিভাবে ডমিনেন্স করতে হয়। নীড়া প্রায় আমার কোলে উঠে বসেছে। তার চোখ তখন মঞ্চের দিকে ।
মাঝবয়েসী ছেলেটা মেয়েটাকে লাঠি দিয়ে ইশারা করতেই মেয়েটা চেয়ারে উঠে বসলো৷ ছেলেটা মেয়েটাকে কি কি যেন বলছে, শোনা যাচ্ছে না। হুট করে মেয়েটার গালে সজোরে একটা চড় বসালো।এক চুলের মুঠি ধরে পেছন দিকে টান দিয়ে অন্য হাতের বেশ কয়েকটা আংগুল মেয়েটার মুখের ভেতরে ঢুকিয়ে ভেতর বাহির করতে শুরু করলো৷ এত জোরে চুল টানছিল যে মনে হচ্ছিল মেয়েটার মাথার চুল সব উঠে যাবে। মেয়েটাকে দেখে তবুও মনে হচ্ছেনা যে সে খুব বেশি ব্যাথা পাচ্ছে বরং তার চোখে খেলা করছে ছেলেটার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা আর আনুগত্য।
ছেলেটা কিছুক্ষন পরে মেয়েটার মুখ থেকে হাত বের করে আনে৷ নিজের প্যান্টের চেইন খুলে ফেলে একটানে৷ এরপর আরো একটা ঘৃণ্যতম দৃশ্য হজম করতে হয় আমার। ছেলেটা তার নিজের পুরু_ষাঙ্গ বের করে মেয়েটার মুখের ভেতরে প্রবেশ করায়৷ এর মাঝে বেশ কয়েকবার চড় দিতে দেখা যায় ছেলেটিকে।চড়ের শব্দগুলো আমাদের কানে এসে লাগছে৷ আমি ওদের থেকে চোখ সরিয়ে নীড়ার দিকে তাকাই। নীড়া বেশ উপভোগ করছে৷
একটু পর চেয়ার সরিয়ে ফেলা হয়। মেয়েটার হাত পেছন দিকে নিয়ে পড়ানো হয় হ্যান্ডকাফ।
লোহার ভাড়ি শেকল গুল নামিয়ে আনা হয় আরো নিচে। সেগুলোর সাথে মেয়েটিকে বেঁধে শূন্যে তুলে দেয়া হয় কিছুটা।
মেয়েটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে এভাবে শিকলে বদ্ধ হয়ে শূন্যে ভাসতে ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে। লোহার শেকল হাত পায়ের মাংসের ভেতরে কেটে পড়েছে।
এভাবে ঝুলন্ত অবস্থাতেই ছেলেটা মেয়েটির পরিহিত সব বস্ত্র টেনে ছিড়ে ফেলে।
উন্মুক্ত হয়ে যায় মেয়েটির ফর্সা দেহ। ছেলেটা শেকলের বাঁধা মেয়েটির চারদিকে ঘুরে ঘুরে কিছুক্ষন দেখে। যেন একটা বাঘ তার খাবার কে দেখছে।
একটু পর পাশের টেবিলে থাকা একটা স্কেল নিয়ে মেয়েটির রানে -বুকে প্রচন্ড জোরে আঘাত করে। ফর্সা দেহটি স্কেলের আঘাতে লাল হয়ে উঠে মুহুর্তেই। আঘাতের পর আঘাত দিয়ে
পশুর মত নির্মম ভাবে হামলে পরে মেয়েটির উপর। স্বাভাবিক যৌ_ন মিলনের থেকে বেশ হিংস্র ভাবে মিলন প্রক্রিয়া চালাতে থাকে ছেলেটি। এবার সাথে যোগ করে নেয় চামড়ার একটি বেল্ট। যৌ_ন মিলনের মাঝে মাঝেই চামড়ার বেল্ট দিয়ে আঘাত করে মসৃণ একটা শরীর রক্তবর্ণ করে দেয়।নীড়া ইতিমধ্যে অনেক উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো জানতে চেয়েছিলে না বন্ডেজ কি যেটা দেখলে এটাই হলো বন্ডেজ। কিছু মেয়েরা এরকম পেইন উইথ প্লে_জার পছন্দ করে, আমিও চাই তুমি আমাকে এভাবে অনেক আঘাত কর ও শারিরীক শান্তি দাও।
আমার হাত ধরে টান দিয়ে উঠিয়ে ফেলে নীড়া। বলে, চলো।
আমি জিজ্ঞেস করি কোথায়?
ও জানায় - ওর বাসায়।
ওর বাসায় এর থেকেও অনেক বেশি ইন্সটুমেন্ট রয়েছে। আজ আমাকে নীড়ার মাস্টার হতে হবে।
.
.
.
নীড়ার স্কুটি চেপে ওর বাসার নিচে আসার আগেই সাবিহার ফোন আসে।
রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে কান্না জড়িত কন্ঠ শুনতে পাই।
- সাফা অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে তুমি একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আস।
সাফার কথা শুনেই আমি নীড়াকে স্কুটি থামাতে বলি। রাত তখন দেড়টা।
নীড়া সাফার অসুস্থতার কথা জানালে ও আমাকে আটকায় না। তবে ওর চোখে আমি এক রাজ্যের হতাশা খুঁজে পাই।
.
.
.
রিকশা নিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছি। একটু আগে কি দেখেছি তা আমার মাথাতে নেই। মাথায় সাফার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
হঠাৎ আমার রিকশার সামনে এসে দাঁড়ায় কালো রং এর একটি প্রাইভেট কার।
সেখান থেকে নেমে আসে চারপাঁচ জন মানুষ। সবার হাতে দেড় ফুট সাইজের লোহার রড।
রিকশাওয়ালা রিকশা থামিয়ে পাশে দাঁড়ায়। লোকগুলোর ভেতর হাতা কাটা ড্যানিমের শার্ট পড়া ধূসর চোখের এক ছেলে এসেই আমার মাথায় সজোরে আঘাত করে।
ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটে পরে রিকশাওয়ালা চাচার নাকমুখে। তিনি চিৎাকার করতে করতে দৌড়ে কোথায় যেন চলে যান।
এরপরে আরো কয়েকটি এলোপাতাড়ি আঘাত এসে আমার শরীর ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। চোখ বন্ধ হয়ে আসে আমার। স্পষ্ট টের পাই আমাকে টেনে গাড়িতে তোলা হচ্ছে।
নড়ার মত শক্তি নেই। তবে জ্ঞান হারাইনি।
চোখ বন্ধ করে অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করলাম " সাবিহা!"
শেষপর্যন্ত সাবিহা আমাকে ট্রাপে ফেলল!
যে ছেলেটা আমাকে প্রথম আঘাত করেছিলো ওর গলায় চেইনের সাথে F বর্ণের একটা লকেট ঝুলানো।
ফারহান এরকম লকেট পড়ত। সাবিহার কাছ থেকেই জেনেছি। কিছুক্ষন বাদে গাড়ি থামে। আমি সব টের পাচ্ছি কিন্তু কিছু অনুভব করা বা নড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। কোন একটা উঁচু ব্রিজের ওপর থেকে আমাকে ছুড়ে ফেলা হয়েছে নিচে। ঝুপ করে পানিতে পরার পরে ক্রমে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছি নদীর গভীর পানির তলদেশে।
চলবে...
Writer:- হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ