> আনটোল্ড ডিজায়ার পর্ব ৪, ৬
-->

আনটোল্ড ডিজায়ার পর্ব ৪, ৬

বেশ অনেক দিন পরে টিভিতে আমার কন্যা সাফার মুখ দেখলাম। প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পরে নিজ কন্যার ফুটফুটে মুখটা দেখতে পেলাম।
মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। তবে 
সাফা এখন পিতৃহারা,  আর আমার স্ত্রী সাবিহাকে এখন সবাই  বিধবা হিসেবে চেনে। টিভিতে সাবিহা এবিং সাফার ইন্টারভিউ নিচ্ছে। সাবিহা অঝোরে চোখের পানি ফেলে মিডিয়ার সামনে আমার কিছু  ভালো দিক তুলে ধরলো।
আমার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাইলো সরকারের কাছে। ইন্টারভিউ চলাকালীন সময়ে সাবিহা যখন কান্না করছে টেলিভিশন পর্দার ওপারে।ঠিক তখন  আমি সাবিহার কথাগুল শুনে মনে মনে হাসছিলাম। 
এর ভেতরে দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করে হাসু।
হাসুর ভালো নাম হাসান।গায়ের রঙ টা অদ্ভুত রকম কালো। তবে স্বভাবে হাসু বেশ চঞ্চল, কথা বলার সময়ে ঘাড় কাত করে কথা বলাটা ওর মূদ্রা*দোষ। 
 গ্রামের সবাই ওকে হাসু ডাকে।এখানের লোকরা সহজ সরল। এতটাই সহজ সরল যে, মানুষের নামটাকেও তারা সহজ করে ডাকার চেষ্টা করে। এভাবেই অনেকের সহজ পরিচয় হাসান থেকে হাসু, মিজান থেকে মিজু, শফিক থেকে শইফ্যা হয়ে ওঠে।
তাড়াতাড়ি রিমোট চাপ দিয়ে চ্যানেল ঘুরিয়ে দিলাম। 
সাবিহার ইন্টারভিউ দেখাচ্ছিল যেখানে সেখানের টিভি পর্দার  ডান পাশে আমার একটা  ছবি ভাসছিলো। 
যদিও এ ছবি দেখে  আমাকে খুঁজে বের করার উপায় নেই কারো। কারণ আগে ক্লিন শেভ করা আমার মুখে এখন ঘণ, খোঁচা  দাড়ি। 
নিজের নামটাও বদলে দিয়েছি। শহর আহমেদ থেকে ফাহাদ খান। 
চুলগুলো বেশ বড় হয়েছে। কিছুদিন পর ছোট খাট একটা ঝুটি বেঁধে ফেলা যাবে। 
 আমার মাঝে পুরোনো শহরকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত পরিচিত মানুষ ছাড়া অন্য কারো একেবারেই নেই।
যাই হোক, 
হাসু রুমে ঢুকেই মুখ কালো করে জিজ্ঞেস করলো, 
'' ও ছার,  ছার আমনে  চা খাইবেন? আফায় আমনেরে চা বানাইয়া দিতে কইছে।''
বুঝলাম হাসুর এখন চা বানাতে ইচ্ছে করছে না।
তাই ওকে একজন  চা বানাতে আদেশ করা সত্ত্বেও ও আমার কাছে বানাবে কিনা, এবং আমি খাবো কিনা তা জিজ্ঞেস করছে,  সম্ভাবনা কম হলেও "খাবনা" কথাটি শোনার আশায়।
হাসুকে নিরাশ করলাম না। বললাম চা খেতে ইচ্ছে করছেনা। সাথে সাথে হাসু লাফাতে লাফাতে  নাচতে নাচতে  চলে গেল।
আগে চা বানানোর ক্ষেত্রে হাসুর এমন অনীহা দেখা যায়নি। বুঝলাম
বাসায় হয়ত দুধ কিংবা চিনি ফুরিয়ে গেছে, যেটা আনতে যেতে হবে আরো ১০/১৫ কি. মি দূরের এক বাজারে।বাসার দৈনন্দিন জিনিসপত্র শেষ হয়ে গেলে তা বাজার থেকে কিনে  আনার জন্য হাসুর কোন বিকল্প নেই৷ এজন্যই ও মহা খুশি। আপাতত বাজারে যাওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলেছে হাসুর। ওর খুশি হওয়ার কারণ এটাই।

.

 আমি যে গ্রামটিতে আছি এ গ্রামের নাম মহেশপুর।  ঢাকা থেকে অনেক দূরে। তবুও ঢাকায় যে আমার মৃত্যুখবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটা আমি মহেশপুর  বসেই জেনে ফেলেছি।
কে বা কারা যেন একটা বিকৃত চেহারার লাশকে আমি বলে চালিয়ে দিয়েছে। টাকা খরচ করে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বদলে অন্যের লাশকে আমার লাশ বানিয়ে দেয়ায় আমি এখন অফিসিয়ালি ডেড।
মহেশপুর গ্রামের চেয়ারম্যান ইদ্রীস আলীর বাসায় আমার থাকার ব্যবস্থা  হয়েছে। 
অবশ্য এখানে থাকার পেছনে যার অবদান সবথেকে বেশি তার নাম হলো "ইলি"। 
ভালো নাম ইলিয়ানা। 
নদীর পানিতে ভাসতে ভাসতে এ গ্রামে এসে পৌঁছেছি  ব্যপারটা  এমন নয়৷
যতদূর মনে আছে আমি নদীর গভীরে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছিলাম।
এরপর যখন জ্ঞান ফেরে নিজেকে আবিষ্কার করি একটা টিনের চালা দেয়া ঘরের বদ্ধ রুমে।
হাত পা নাড়ানোর মত শক্তি ছিলনা৷ শুধু বুঝতে পারছিলাম কেউ বা কারা আমাকে উদ্ধার করে সেবা শুশ্রূষা চালাচ্ছে। যখন সবকিছু পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারলাম,
তখন বুঝলাম আমি মাদক চোরাচালানকারী একদল লোকের হাতে পরেছি৷ 
পুরোপুরিভাবে সুস্থ হতে আমার প্রায় একমাস লেগে যায়৷ এই একমাস তারা আমার আদর যত্নের কোন কমতি রাখেনি।
কিন্তু যখন একটু সুস্থ হয়ে উঠলাম, আমার কাছে প্রস্তাব আসলো, আমাকে তাদের সাথে মাদক সরবরাহের কাজে নিয়োজিত প্রাণ হতে হবে। অন্যথায় আমার পরিণতি - মৃত্যু। 
মাদক ব্যবসায়ীদের বাহ্যিক পরিচয় ছিলো ওরা জেলে।
সারারাত নদীতে মাছ ধরে, সেই মাছ বিক্রি করে সংসার চালায় । 
কিন্তু রাতের আঁধারের চাদরে তাদের মুখোশটা ছিল ভিন্ন।
কোটি কোটি টাকার মাদক মাছের শরীরে ঢুকিয়ে বা অন্য কোন ভাবে নির্বিঘ্নে পরিবহণ করে৷ 
এই মাদক ঢাকা শহরে ঢুকিয়ে দেয়ার পর কিছু খুচরো ব্যবসায়ী তা সংগ্রহ করে এবং ঢাকার বিভিন্ন আনাচে কানাচে নিজের দক্ষতায় গোপনীয়তা সহকারে কাষ্টমারদের হাতে পৌঁছে দেয়।
.
.
.

ইলিয়ানা রহমান, 
বয়স ২৩
বর্তমানে জার্নালিজম নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে।
পাশাপাশি জব করত একটা বেসরকারি টিভি চ্যানেলের জুনিয়র রিপোর্টার হিসেবে। আমাদের মাদক সরবরাহের ব্যপারে গুপ্তচর লাগিয়ে অনেক তথ্য জোগাড় করে ফেলে সে। কিন্তু যারা মাদক চোরাচালানকারী হিসেবে বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছে, তারা অতিশয় ধূর্ত এবং খুব অল্প সময়ের ভেতরেই ইলিয়ানার গোপন অভিযান সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যায়।
আমি নিজ থেকে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি৷ কারণ,  আমি যার জন্য পৃথিবীতে বেঁচে থাকবো, সে-ই চেয়েছিলো আমার মৃত্যু। বরং এ মাদকব্যবসায়ী লোকগুলো আমাকে হীন একটা কাজ করতে আমার উপর জোড় খাটালেও আমি বেঁচেই আছি তাদের জন্য।
প্রকাশ্যে কোন কাজে কেউ বাধ্য করলে যতটুকু মেনে নেয়া যায়, পেছনে বসে ষড়যন্ত্র করে কাছের মানুষরা ক্ষতি করার চেষ্টা করলে এবং সেটা জানতে পারলে নিজেকে কিছুতেই বুঝ দেয়া যায়না।পুরো পৃথিবীটা তখন বিষাদময় মনে হয়। 
আমার কাছেও পৃথিবী বিষাদময় এখন।
মনে একটু প্রফুল্লতা আনতে সন্ধ্যায় ওদের ডেরার সামনে আয়োজন করা খালি গানের গলার  আসরে যোগ দেই। সবার ভেতরে আসলাম ভাইয়ের গলা অনেক ভালো।  আসলাম ভাইকে আমার ব্যক্তিগত দিক থেকেও ভাল লাগে।
সে নিজে সময় নিয়ে আমাকে অন্যভাবে মাদকের বিষয়টা বুঝিয়ে দিয়েছে।
" দেখো ভাই, আমি কিন্তু কোন প্রকার নেশা করিনা।
আমার ছোট পোলা মাইয়া আছে, বউ আছে। টানাটানির সংসার। আমিও চাইনা আমার মাইয়াপোলাগুলা মাদক সেবী হউক। কিন্তু তাও আমি মাদক চালান দেই বাজারে।
কেন জানো? যত বড় বড় রাজনীতিবিদ, বড়লোকরা আছে, এরা এবং এদের ছেলেরাই বেশিরভাগ মাদক সেবন করে। 
আমি চাই আস্তে আস্তে এসব অসৎ লোকরা সবাই ধ্বংস হয়ে যাক। ওদের পকেটের কিছু অবৈধ টাকা আমাদের হাতে আসুক। "
আসলাম ভাইয়ের কথা ফেলার মত না। যাক তাও মনকে একটু শান্তি দেই আমি। 
যখন প্রফুল্ল চিত্তে গানের আসরে বসে আসলাম ভাইয়ের " আমার ভাংগা তরী ছেড়া পাল" গানটা শুনছিলাম,  তখন কানে ভেসে আসে একটা মেয়ে কন্ঠের আর্তচিৎকার। 
গান শোনা ছেড়ে আমি উঠে যাই৷ 
শব্দ অনুসরণ করে করে আবিষ্কার করে ফেলি,
জুনিয়র রিপোর্টার ইলিয়ানা রহমান কে কিডন্যাপ করে উঠিয়ে আনা হয়েছে।
ওকে একটা রুমে আটকে রাখা হয়েছে এবং ধর্ষণ করার বন্দোবস্ত চলছে।
কোন একটা কারণে ওরা সেদিন ইলিয়ানাকে ধর্ষণ না করে শুধুমাত্র ওদের গোপনীয় কামরায় আটকে রেখে চলে যায়।
ওদের সাথে ঠিক ঠাক ভাবে কাজ করার সুবাদে আমি ওদের খুব বিশ্বস্ত একজন হয়ে উঠেছিলাম।
তাও একটু লুকিয়ে লুকিয়ে আমি প্রবেশ করি ইলিয়ানাকে যে কামরায় আটকে রাখা হয়েছে সেখানে। 
প্রথমে ঢুকেই চোখ বন্ধ করে ফেলতে হয় আমার।
এমন একটা ধাক্কা খাব ভাবিনি।
দু হাত দুদিকে খুটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে ওর। 
মাথাটা নুইয়ে পড়ছে।
পরনে শুধুমাত্র আন্ডারওয়্যার ছাড়া আর কিছুই নেই। গায়ের সব জামাকাপড় ছিড়ে ফেলা হয়েছে। হাত ও বুকের কিছু কিছু জায়গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
বুঝলাম কেন রেপ না করেই আটকে রাখা হয়েছে ওকে। 
মেয়েটার পিরিয়ড শেষমেশ ওর রক্ষা কবচ হয়ে দাঁড়ালো।
সিদ্ধান্ত নিলাম,
আমার যা হয় হোক,
মেয়েটাকে আমি এখান থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করব।
.
.
অনেক কষ্টে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে যখন আমি একটা ডিংগি নৌকায় ইলিয়ানাকে উঠিয়ে দেই, ও আমার হাত চেপে ধরে। 
বলে আমি একা পারব না। 
আপনি আমার সাথে চলুন। নইলে আমার করুণ পরিণতি হবে মৃত্যু। 
আমি কি যেন একটু ভেবে নৌকার মাঝিকে ঘাটে রেখে ইলিয়ানাকে নিয়ে নৌকা করে রওনা দেই অজানা গন্তব্যে।
নৌকায় বসেই জেনে নেই ও বাড়ি থেকে অনেক আগেই বের হয়ে এসেছে। ইন্টার পাশ করেছে ঢাকাতে ফুপুর বাসায় থেকে। ওর গ্রামের বাড়ি মহেশপুর।  সেখানে যেতে পারলে আর কোন বিপদ নেই। 
বেশ কিছুক্ষন পার হয়ে যাওয়ার পর  ডিংগি নৌকা নিয়ে ফেরত আসছিনা দেখে   মাঝি গিয়ে আমাদের কথা বলে দেয় মাদক চোরাচালানকারী দলের সদস্যদের কাঁছে।
মুহূর্তেই আমাদের খোজার জন্য স্পিডবোড ও দ্রুতগামী ট্রলার নিয়ে বের হয়ে পড়ে ওরা।
সাপের লেজে পা দিয়ে সাপকে জীবিত রাখাটা যেমন বিপদ, একজন সাংবাদিক কে অপহরণ করে তাকে জীবিত ছেড়ে দেয়াটা তার থেকেও বেশি বিপদের।
রাতের বেলা খুব দূর থেকেও স্পিড বোডের শব্দ ভেসে আসে। বুঝতে পারি আমাদের পেছনে লোক লেগেছে। 
নৌকা কিনারায় ভিড়িয়ে লাফ দিয়ে নেমে যাই। 
পরবর্তীতে ছুটে নদীর পাশের একটা মফস্বলে  গিয়ে ঢুকি।
মফস্বলের শেষ মাথায় একটা কাচা রাস্তা। এটা শহরের দিকে চলে গেছে। ঐ রাস্তা ধরে দৌড়াতে থাকি আমরা। পুরো সময়টা আমি ইলিয়ানার হাতের কবজি ধরে রেখেছিলাম শক্ত করে।
ও শুধু আমার লিড অনুসরণ করছিল।
কিছুদূর যাওয়ার পরে একটা ভ্যান পাই আমরা। ভ্যানে উঠে নিকটস্থ বাস স্টান্ডের উদ্দেশ্যে শুরু হয় আমাদের মাঝ রাতের ভ্যান যাত্রা। 
ইলিয়ানা ভ্যানে বসার পরে ওর মাথাটা আমার কাধের উপর দিয়ে চোখ বুজে চুপ করে থাকে। 
বুঝতে পারছিলাম না ঘুমিয়ে গেছিল কিনা।
তবে চাঁদের আলো এসে ওর চোখমুখে পড়ায় ঘুমন্ত ইলিয়ানাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিল।
ফর্সা মেয়েরা অসহায় হয়ে পড়লে আরো বেশি সৌন্দর্যে বৃদ্ধি পায়। 

যাই হোক,প্রায় দু দিন ভেংগে ভেংগে জার্ণি করে, অনেক কষ্টের পরে আমরা মহেশপুর পৌঁছাই। 
ওর বাবা নিজের মেয়েকে পেয়ে এত আনন্দ করলো, মনে হলো যেন কোন মৃত ব্যক্তি তার জীবন আরেকবারের জন্য ফিরে পেয়েছে।
ইলিয়ানা পুরো সত্য ঘটনাটাই ওর বাবার সামনে উপস্থাপন করে।
ওর বাবা সবকিছু শুনে বুঝতে পারেন ঢাকা কিংবা অন্য কোথাও আমার জন্য নিরাপদ নয়।
তিনি আমাকে তাদের সাথেই থেকে যেতে বলেন। 
এরপর থেকে ঐ বাড়িতেই আমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়।দুমাসে আস্তে আস্তে বাড়ির সবাই আমার খুব আপন হয়ে ওঠে,সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসে। 
হাসু,  চেয়ারম্যান আংকেল, ইলিয়ানা থেকে শুরু করে এখানে কাজ করা প্রতিটা মানুষের কাছে আমার সম্মান অনেক অনেক বেশি।
 তবে ইলিয়ানার ব্যপারটা ভিন্ন। ও আমাকে একটু অন্যভাবে ভালোবাসে। ও খুব কাঠখোট্টা একজন মেয়ে। রোমান্টিকতা জানেনা। ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলতে শিখেনি। রোবটের মত কিছু কাজ করে নিজের  ভালোবাসার জানান দেয়। 
আমি হাসি। 
আর তো মাত্র কয়েকটা দিন। সবাইকে না বলে টুপ করে পালিয়ে যেতে হবে এখান থেকে।পালিয়ে যেতে হবে আমার নগরীতে।
এতদিন নিরব দর্শক হয়ে দেখেছি সব। 
এবার ঢাকা ফেরার পালা।
আমার শহরে পা রাখবো খুব শীঘ্রই, তবে নম্র- ভদ্র,সবকিছু মেনে নেয়া শহর আহমেদ হিসেবে নয়। 
ফাহাদ হিসেবে।
একজন শিকারী হিসেবে।
আমার শিকারের লিস্টটাও যে  অনেক বড়।
ভাবতে ভাবতেই শরীরের রক্তগুলো শিরশির করে উত্তাল হয়ে ওঠে। হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে যায়।
বিড়বিড় করে উচ্চারণ করি দুটো লাইন,
শেষ নাহি যে, শেষ কথা কে বলবে,
আঘাত হয়ে দেখা দিলো, আগুন হয়ে জ্বলবে।
  

______________________
পূর্ণ পূর্নিমার আকাশ।একটা প্লাস্টিকের চেয়ার হাতে নিয়ে ইলিয়ানাদের বাড়ির পেছনের বড় বাগানটায় হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি।
এখানে আসার একটা কারণ আছে। বাগান ভর্তি সারি সারি আমগাছ।আম গাছের পাতা বেশি ঘন কিংবা বেশি পাতলা হয়না।  পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদ দেখার দৃশ্য বড়ই মধুর লাগে। জোছনার আলোর ছিটেফোঁটা এসে গায়ে পড়ে। পাশেই একটা বড় ঝাকড়া গাছের পাতার ফাঁকে একঝাঁক জোনাকিপোকা জ্বলছে নিভছে। এ যেন প্রাকৃতিক মরিচ-বাতি।  একটা সময় ছিল যখন তালগাছের পাতায় পাতায় ঝুলন্ত বাবুই পাখর বাসার দেখা মিলতো। 
কিছু বাবুই পাখিরা  অতিরিক্ত বুদ্ধিমান হয়।
কথিত আছে রাতের অন্ধকার দূর করতে দিনের বেলা জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে নিজের বাসার দেয়ালে উলটো করে গেঁথে রাখে এই পাখিগুলো।সন্ধ্যে নামলেই তাদের বাসা নীলচে সবুজে আলোয় আলোকিত হয়ে উঠতো। আজকাল তো এরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে শহরের আনাচে কানাচে কিছু বিষণ্ণ চড়ুইদের দেখা মিললেও প্রতিভাবান বাবুই পাখিরা  অভিমান করে লুকিয়ে গেছে কোথাও।
মাথার পেছনে দু-হাত বেঁধে আকাশের দিকে তাকিয়ে চন্দ্রবিলাস করছিলাম। হঠাৎ একটা ঘ্রাণ এসে নাকে লাগলো। 
খুব পরিচিত ঘ্রাণ। 
বুঝলাম ইলিয়ানা এসেছে। ইলিয়ানা তার লম্বা চুলে বেলি ফুলের সেন্ট দেয়া একটা তেল ব্যবহার করে। তাই নিঃশ্বব্দে হেঁটে আসলেও ওর উপস্থিতি টের পাই। 
আমি যে বুঝতে পেরেছি ইলিয়ানা আমার পেছনে দাঁড়ানো, সেটা আমি ওকে বুঝতে দেইনা। 
বেশ কিছুক্ষন ও দাঁড়িয়ে থাকে, প্রায় ঘন্টাখানেক। 
হুট করেই টুং টাং আওয়াজে না চাইতেও পেছনে ফিরে তাকাতে হয়।  হাত থেকে চায়ের কাপ ফেলে দিয়েছে ইলি। 
তার মানে আমার জন্য চা এনেছিল। "শালার মশা মারতে গিয়ে জন্য চা টা পরে গেলো"
ইলির বিরক্তিমাখা কন্ঠ...
ভাগ্য ভাল একঘন্টা আগে পরেনি। একদম গায়ের উপর যেভাবে পড়েছে গরম হলে তো পুরো গা ই ঝলসে যেত।
ইলিয়ানা এবার চুপ হয়ে যায়। 
কি যেন একটু ভেবে বলে,
" জানেন? আমি আপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলে অনেক নিরাপদ বোধ করি। মনে হয় আপনি আমার জন্য দুনিয়ার সবথেকে নিরাপদ জায়গা। আপনার পাশে থাকলে আমার মাথায় থেকে সব দুশ্চিন্তারা ভেগে চলে যায়। আমি ভালো থাকি। "
- বাহ। তোমার ভালো লাগা বা ভালো থাকার একটা কারণ আমি, এটা জেনে খুব ভালো লাগলো।
- আমি কি করব বলুন তো। আমার তো সারাক্ষন ই আপনার পাশে চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে করে।
- আমার কাছে ঠিকানা রেখে, তুমি পাখি হয়ে উড়ে যাও।
আপনার কথা বুঝতে পারছিনা। 
সময় হলে বুঝবে। রাত অনেক হয়েছে, বাসার দিকে চলো।
ইলিয়ানা বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করে। পেছনে পেছনে আমি ইলিয়ানাকে অনুসরণ করি। পাশের এক ঝোপ থেকে হাসু বের হয়ে হাসু আমার পেছনে হাটা শুরু করে।
হাসুকে ঝোপ থেকে বের হতে দেখে অবাক হই একটু। 
ওর দিকে চোখ বড় করে তাকাতেই ও এক গাল হেসে বলে "আমার দোষ নাই, আমনেরা কি করেন, হেইডা দ্যাখতে আমারে চাচাজান পাডাইছে"
ইলিয়ানা বিষয়টি ভালোভাবে নিল না। আমার দিকে এমন ভাবে  তাকালো,  মনে হলো সে তার বাবার এমন কাজের জন্য নিজেই লজ্জিত। 
আমি মনে মনে হাসলাম। 
অন্তত ছোট হলেও অভিমান করার মত একটা কারণ পাওয়া গেল। বিশ্বাস যেখানে হারিয়ে যায় সেখানে নিজের অবস্থান স্থায়ী করার ইচ্ছে কারো মাঝেই থাকেনা। এ উসিলায় আমি সেদিন ভোর রাতেই ওদের বাড়ি ছেড়ে চলে আসি। কিন্তু কোথাও যেন একটা হাহাকার কাজ করছিলো ইলিয়ানার জন্য। এ 'কদিনের দেখায় ইলিয়ানার মাঝে আমি একটা ছোট খাট কারণ ও খুঁজে পাইনি, যেটাকে কেন্দ্র করে ওকে কোন দোষে দোষী সাব্যস্ত করা যায়। অনেকটা নিঁখুত স্বভাবের মানুষ যদি কোন ভেংগেচুরে যাওয়া, ঠকে যাওয়া ব্যক্তির সামনে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করে বেড়ায়, তবে যে কেউ ই ইম্প্রেসড হতে বাধ্য।একটা জিনিস
মনে হলো পুরুষ মানু্ষ জীবনে বহুবার প্রেমে পড়ে, কারণে অকারণে প্রেমে পড়ে।
আর প্রতিটা প্রেম ই তাদের কাছে প্রথম প্রেম।
নারীরাও প্রেমে পড়ে হয়ত বহুবার।  কিন্তু তাদের প্রেম হয় শুধু প্রাপ্তির জন্য। অকারণে তারা প্রেমে পড়েনা। 
মাথার ভেতর এমন সব আজগুবি চিন্তা করতে করতে হেঁটে চলে এসেছি বহুদূরে।  মাথায় বিভিন্ন ধরণের ভালমন্দ চিন্তাভাবনা চালাতে থাকলে  অকপটে বহুদূর হেঁটে ফেলা যায়। 
মহেশপুর গ্রামে খারাপ কাটেনি আমার দিন। বিদায় নেয়ার সময় মনে মনে ভাবছিলাম,ইলিয়ানার জন্য হলেও আমার এ প্রস্থান শেষ প্রস্থান নয়। সকালে উঠে আমাকে না দেখলেই ওর ভেতর অদ্ভুত এক শূন্যতা কাজ করবে। 
এই শূন্যতার অনুভূতিটা আমিও পেয়েছি।
স্রোতের বিপরীতে বৈঠা মেরে নৌকা চালিয়ে নিচ্ছিলো হারুণ মাঝি। মাঝিদের নামগুল অদ্ভুত,  মাঝি শব্দটার সাথে সুন্দর ভাবে মিল খায়। সকালে পাখি ওঠার আগেই এরা উঠে পরে। ঘাটে এসে দু-একজন যাত্রীদের আসায় বসে থাকে। 
নৌকা দিয়ে মহেশপুর পার হয়ে ওপারে গেলেই একটা ছোট্ট শহর৷ এ শহরে কিছু যান্ত্রিক ভটভটি চলাচল করে। 
ঘণ্টাখানেক ভটভটিতে করে এগিয়ে গেলেই ঢাকার বাস পাওয়া যায়৷ এখানে দিনে একটাই বাস। সকাল সকাল রওনা না দিলে সেটা মীস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
অনেক ঝামেলা পেরিয়ে ভাগ্যক্রমে বাস পাই। আমি অবশ্য বেশ আগেই চলে এসেছি। আরো দু-ঘন্টা পরে বাস ছাড়বে। 
বাসের সিটে হেলান বসে চোখ বন্ধ করতেই ঘুম চলে আসে চোখে।
রাতে না ঘুমানোর দরুন এটা।
পুরোপুরি ঘুম ভাঙ্গার আগেই আমার অবচেতন মস্তিষ্ক হুট করে মাত্রাতিরিক্ত সচেতন হয়ে যায়।
নাকে সেই চির পরিচিত ঘ্রাণ,
চোখ মেলতে ইচ্ছে করছেনা। জানি চোখ মেললেই দেখব আমার সামনে ইলিয়ানা রাগী একটা মুড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 
চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম... 
আস্তে আস্তে ঘ্রাণটা হারিয়ে গেল।
চোখ খুলে দেখলাম আমার ভ্রান্ত ধারণা। আমি হয়ত ওকে বেশি অনুভব করছি তাই এমনটা ঘটছে। 
চোখ বন্ধ করে ফেললাম আবার৷ কখন যে সময় কেটে গেল টের পাইনি। 
যখন ঘুম ভাংগে তখন বাস তার পূর্ণ গতিতে চলছে।
আড়মোড়া ভেংগে পাশে তাকাতেই ছোট খাট একটা চিৎকার দিলাম। বাসভর্তি লোকজন সব আমার দিকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে তাকালো।
চিৎকার দেয়ার অবশ্য একটা কারণ ও আছে। আমার পাশেই বসে আছে ইলিয়ানা।আমি যে চিৎকার দিয়ে ফেলেছি, পুরো বাসের লোকজন হতচকিত হয়ে উঠেছে কিন্তু তার কোন রিয়াকশন নেই। সে ছাগলের মত কেক চিবাতে ব্যস্ত।একটু পর বোতলের মুখ খুলে ঢকঢক করে পানিও খেলো।
ওকে দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি কি বলব তা বুঝছিলাম না। তবে মনের কোথাও যেন একটু আনন্দ হচ্ছে।
একটু ভালো-লাগা দোলা দিয়ে যাচ্ছে।

আমার সাথে একবিন্দু ও কথা বলেনি ইলিয়ানা।
বরং আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা পিঠা সহ আরো অনেক কিছু একা একাই সাবার করেছে। এমন একটা ভাব নিচ্ছে আমি তার পাশে বসা অপরিচিত একজন মানুষ৷ আমাকে সে চিনেই না। 
আমার মনে আবার একটু কালো মেঘ জমল।
মনে মনে ভাবলাম, ঠিক আছে আমার পথে আমি ওর পথে ও।যে যার মত করে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যাব। কিন্তু ও আমার দিকে একবারেএ জন্য  আড়চোখেও যে তাকাচ্ছে না বিষয়টি আমি মেনে নিতে পারছিনা।
এরকম গুমোট পরিবেশে চুপচাপ থেকেই পুরোটা রাস্তা শেষ হয়ে গেল। বাস থেকে সবাই খুব তাড়াতাড়ি করে নামছে। সবার সাথে নেমে গেল ইলিয়ানাও। 
আমার নামার তাড়া নেই। কারণ আমার কোন গন্তব্য নেই। আমি নিজেও জানিনা আমাকে এখন কোথায় যেতে হবে। ইলিয়ানার আমূল পরিবর্তন আমাকে অবাক করলো। ও সবার সাথে নেমে যাওয়ার পর আমি মনে মনে অনেকটা কনফিউজড হয়ে গেলাম।
হয়ত আমি ওকে এতটা বেশি অনুভব করেছি যে অন্য কোন মেয়েকে আমি ইলিয়ানা রূপে দেখে এসেছি পুরোটা রাস্তা।
মস্তিষ্ক মাঝে মাঝে মানুষের অনুভূতিকে বোকা বানায়।
বাস থেকে নেমে আশেপাশে তাকালাম,এখান থেকে শিকড় নামের একটা বাসে উঠতে হবে৷ কেন জানিনা মনে হচ্ছে আমাকে প্রথম গন্তব্য হবে ঐ বন্ডেজ ক্লাব।
হিসেবের অগোছালো খাতাটার গোছালো হিসেবের শুরুটা ওখান থেকেই করতে হবে। 
... 

 
_________________________
বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরে একটা বাস পেলাম। অতিরিক্ত যাত্রীদের চাপে বাস একদম কানায় কানায় পূর্ণ৷ তাও ঠেলে ঠুলে ভীড়ের মাঝে জায়গা খুঁজে চলেছি।জীবন সব জায়গায় যুদ্ধের। পেছন থেকে বেশ কয়েকবার আমার জামা কাপড় টেনে ধরেছে কে বা কারা যেন, ফাঁকা জায়গায়  কার আগে কে  গিয়ে  দাঁড়াতে পারবে সেটার একটা অহেতুক প্রতিযোগিতা চলছে।  যাই হোক বাসের উপরের হাতল ধরে কোন রকম জায়গা করে কলাবাদুড়ের মত ঝুলে রইলাম৷ এত গাদাগাদি অবস্থা যে  নিঃশ্বাসের সাথে অক্সিজেন না অন্য মানুষের বর্জন করা কার্বণ ডাই-অক্সাইড প্রবেশ করছে। এর মধ্যেই পায়ের উপরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলাম। চাপাচাপির  ভেতরেও ছোটখাট একটা লাফ দিয়ে উঠলাম। যে ব্যক্তি আমার পায়ের উপর তার পা দিয়ে পিষে দিয়েছে তার কলার ধরে দুইটা থাপ্পড় দিতে পাশে তাকালাম। 
দেখি, ভিড়ের মাঝ থেকে বিড়ালের মত উঁকি মেরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ইলিয়ানা। আমার পায়ের উপরে ইলিয়ানাই তার হাই হিল জুতা দিয়ে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত আক্রমণ চালিয়েছে। মানুষের বেশিরভাগ  হ্যালুসিনেশন হয় যখন সে একা থাকে, কিংবা তার মস্তিষ্ক যখন ঘুম বা বিশ্রামের অভাবে ভুগে। এই ভিড়ের মাঝে আমার হ্যালুসিনেশন অবশ্যই হচ্ছেনা।আমার পাশে যে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে সে অবশ্যই ইলিয়ানা।
তবে ওর মাথা থেকে এখন আর বেলী ফুলের ঘ্রাণ পাচ্ছিনা। পুরো বাস জুড়েই ঘামের একটা আঁসটে গন্ধ ছড়িয়ে আছে। 
হেল্পারকে চিৎকার করে বাস থামাতে বললাম। বাস থামলো। ভীড় ঠেলে বাস থেকে নামার জন্য এগিয়ে যাচ্ছি।
ঢোকার সময় যেমন আমার জামা কেউ পেছন থেকে টেনে ধরেছিলো, এবার ও তাই হলো। পেছনে ফিরে দেখলাম ইলিয়ানা। 
এবার বুঝলাম বাসে ঢোকার  সময় ইলিয়ানাই আমার জামাকাপড় টেনে ধরে সাপোর্ট নিয়ে ভীড়ের ঠেলে আমার পাশে জায়গা করে নিয়েছিল।  
বাস থেকে নামার পরে জিজ্ঞেস করলাম,
কি ব্যাপার ইলি? আমার সাথে লুকোচুরি কেন?
- কিসের লুকোচুরি? 
- প্রথমে ঢাকায় আসার বাসে উঠে আমার সামনে দাঁড়িয়েছিলে। আমি চোখ মেলে দেখি নেই তুমি। পরে আবার দেখি আমার পাশের সিটে বসে আছ।
 বাস থেকে নেমে আবার উধাও। 
পরবর্তীতে শিকড় বাসে আবার আমাকে ফলো করে আমার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছ, আমি নেমেছি আমার সাথে তুমিও নেমেছ। সমস্যাটা কি?
-কোন সমস্যা নেই।জানতাম  আপনি হয়ত চলে আসতে পারেন পালিয়ে। তাই আমি পিছু নিয়েছিলাম আপনার। বাসে উঠে আমি প্রথমে আপনাকে খুজে বের করি৷ এরপর আপনার পাশে বসার জন্য পাশের সিটের লোকটার থেকে আমি টিকেট কিনে নেয়ার উদ্দেশ্যে বাস থেকে নেমে তাকে ম্যানেজ করি৷ পরে বাস ছাড়ার ঠিক আগ মুহুর্তে আপনার পাশে বসি। এবং তখন আপনি ঘুমাচ্ছিলেন। আমার একটু রাগ ছিল তাই আপনার সাথে কথা বলিনি। এর পরের বার বাস থেকে আগে আগে নেমে ইচ্ছে করেই লুকিয়েছিলাম। আপনি যখন অন্য বাসে উঠলেন আমি আবার আপনার পিছু নিয়েছি। এখন  আমি আপনার সাথে যাব,আপনি যেখানে যাবেন সেখানেই। 
- কেন? আমার সাথে কেন?
- আমার ঢাকায় থাকার মত জায়গা নেই৷ 
- তুমি যে ফুফুর বাসায় বড় হয়েছ সেখানে যাও।
- ওখানে শুধু ফুফু না। আমার ফুফু,চাচা মামা,  সবাই আছেন। গেলে তারা আমাকে  সাদরে জায়গা দিবেন। কিন্তু মাদক চোরাকারবারিদের হাত থেকে আমি রেহাই পাব না। আমাকে যে কোন সময় তুলে নিয়ে যাবে। 
ইলিয়ানা কথাটা মিথ্যে বলেনি।  শুধু ইলিয়ানার নিজ এড়িয়াতে নয়, পুরো ঢাকাটাই ওর জন্য অনিরাপদ৷ 
কিছুক্ষন ভাবলাম। 
ইলিকে বললাম,  এর একটা সমাধান আমার কাছে আছে। 
তুমি তোমার ফুফু, মামা চাচা যার ইচ্ছে তার কাছেই থাকতে পারবে।নিরাপদ ভাবেই।
- কি সমাধান?
- বলব তবে একটা শর্ত আছে। 
- কি শর্ত?
আজ সারাদিন আমার সাথে ঘুরতে হবে৷ যেখানে যেখানে যাব, বাস ভাড়া খাওয়ার বিল, সব তোমাকে পরিশোধ করতে হবে৷ সর্বোপরি আমি যা বলব তা শুনতে হবে৷ 
- আমি রাজি। 
সাথে সাথে "আমি রাজি" কথাটা এমন ভাবে বললো যেন মনে হল ও দৌড় প্রতিযোগিতায় দৌড়ের জন্য রেডি হয়ে ছিল। বাঁশির সংকেত সোনার সাথে সাথে যেমন প্লেয়ার দৌড় শুরু করে ইলিয়ানাও সেভাবে প্রশ্নের সাথে সাথেই রাজি বলে দিল। 
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, না ভেবে কোন কাজ করলে যে  পরিণতি খারাপ হয়, তার উপযুক্ত একটা শিক্ষা ইলিয়ানাকে দিতে হবে। 
যেহেতু খরচের ভাড় ইলিয়ানার, বাসে না উঠে একটা সি এন জি নিলাম। 
- আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?
- এমন একটা জায়গায় যেখানে মেয়েদের মারা হয়।
- কি আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন?
- না মেরে ফেলা হয়না।কিভাবে বুঝাই কালো বেল্ট দিয়ে মেয়েদের পেছনে মারা হয়।
- কি সব অশ্লীল কথাবার্তা।  আপনি আমাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন কেন?
- টুইস্ট আছে। 
- কি টুইস্ট?
- মেয়েরা ওখানে  ইচ্ছে করেই মার খায়। তাদের মার খেতে ভাল লাগে। পেইন উইথ প্লেজার। বুঝবেনা তুমি।
- পুরো বিষয়টি ঘোলাটে লাগছে আমার কাছে। আমাকে খুলে বলুন।
- বেশি খুলে বলতে পারবোনা। আমার শরম করে।
- ফাজলামো করছেন আমার সাথে?
- বেশি কথা না বলে চুপ থাকো। আমি কি করি তা দেখো। 
ইলিয়ানা কনফিউজড হয়ে বসে থাকে। বুঝতে পারছিলাম আমার উপর থেকে ওর অগাধ বিশ্বাসের চাকে ঢিল পড়েছে।
আধাঘন্টা পরে সি এন জি গিয়ে থামলো একটা বিশাল শপিং মলের সামনে। ইলিয়ানা এখানে আগেও এসেছে। ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে পরিচিত জায়গা দেখে ওর ভেতরের নার্ভাসনেস টা একটু কমেছে। 
নীড়ার সাথে টপ ফ্লোরের যে রেস্তোরাঁয় ঢুকেছিলাম সেখানটায় আবারো গিয়ে বসলাম৷ তবে তাদের কাষ্টমার হিসেবে৷ খুব সতর্কতার সাথে ওদের ওখানের কার্যক্রম খেয়াল করতে লাগলাম।
আমি এবং ইলিয়ানা বেশ অনেকগুলো খাবার অর্ডার করলাম যাতে অনেক ক্ষন বসে খাওয়া যায়।
আমরা উক্ত রেস্তোরায় ঢোকার পরে এখন পর্যন্ত দুজন মহিলা কিচেনের দিকে ঢুকেছে। 
তাদের দেখে কোন ভাবেই বাবুর্চি মনে হয়নি। মোটামুটি শিওর হলাম এরা দুজন ই আন্ডারগ্রাউন্ড ক্লাবের সদস্য। তবে ওদের হেঁটে যাওয়াটা একদম স্বাভাবিক ছিল।
কেউ কিছু জিজ্ঞেস  করেনি, বাঁধাও দেয়নি। 
হয়ত ওদের আগে থেকেই চেনে এজন্য অথবা ওরা চলাফেরা করার জন্য নির্দিষ্ট কোন কোড ব্যবহার করে। 
এতক্ষনের অবজারভেশনে দুটো জিনিস খুব করে চোখে পড়লো। 
**খাবার সার্ভ করে এমন একজনের কাছে আর্মর রয়েছে। হবে হয়ত কোন রিভালবার বা পিস্তল। জামার উপর থেকে শিওর হতে পারছিনা।
** দুজন মহিলা, যারা ভেতরে গেলো তাদের ভেতর একজন বেশ মোটা এবং  ফর্সা। 
সাথে করে একজন হ্যাংলা পুরুষ নিয়ে এসেছে। তাকে একগাদা খাবার কিনে বসিয়ে দিয়ে মহিলাটি ভেতরে ঢুকে গেছে। হ্যাংলা লোকটি নিসন্দেহে একজন ভোজন রসিক। চিকন হলে কি হবে সে গোগ্রাসে খাবার খাচ্ছে। 
তার লম্বা মোচে খাবার লেগে কি একটা বিশ্রী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। বুঝলাম এ লোকটি হয়ত ঐ মহিলার গাড়ির ড্রাইভার হবে। 
ওর সাথে কোন রকম ভাব জমানো গেলে বন্ডেজ ক্লাব সম্পর্কে অনেক তথ্যই জেনে নিতে পারবো।
হুটহাট কোন মানুষকে পটানোর ক্ষেত্রে মেয়ে মানুষ বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ইলিয়ানাকে বললাম, ঐ লোকটির টেবিলে গিয়ে তার সামনা সামনি বসতে। 
ইলিয়ানা আমার দিকে তাকালো। 
ওকে আশ্বস্ত করলাম, তুমি গিয়ে যাস্ট বসো। বাকি সবকিছু আমি সামলাবো। যা বলবো,
শুধু আমার সাথে কথায় তাল মেলাবে। 
ইলিয়ানা যেহেতু আগে কথা দিয়েছিলো আমি যা বলবো তা শুনবে,
সুতরাং ও আমার কথা শুনতে বাধ্য ছিল।যথারীতি গিয়ে ও লোকটার সামনের টেবিলে বসলো।
লোকটি একবার তাকিয়ে ইলিয়ানাকে দেখল। এরপর তার হালুম হুলুম করে খাওয়া বন্ধ রেখে অতি ভদ্রতার সহিত খেতে শুরু করলো। 
কিছুক্ষন পরে আমি গিয়ে ইলিয়ানার পাশে বসি। 
লোকটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
ভাই যদি কিছু মনে না করেন, আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি?
 লোকটি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। বললো, 
কি প্রশ্ন করিবেন? 
খাওয়া অনেক বাকি,
আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, 
খাওয়ায় মনোযোগ দি।

"বাহ, কি সুন্দর কবিতা!!" বলে হাত তালি দিলাম। 
ব্যাটার কবিতা বলার বাতিক আছে।
অথবা ইলিয়ানার সামনে কবি সাজতে চাইছে। তাই আমিও রসিকতা করে বললাম,
ভাইজান তো একদম ভোজন রসিক।
দাঁড়ি মোচেও লেগে আছে খাদকের প্রতীক।
বড় জানতে ইচ্ছে করে মহাশয়,
কি আপনার পরিচয়?
লোকটা বেশ মজা পেলো।। সে খাওয়া রেখে কবিতার লাইন মিলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
 ছন্দে ছন্দে জবাব দিলো,
নাম আমার সিদ্দীক,
খ্যাতি আছে চারদিক। 
হঠাৎ করে আমার পরিচয় 
জানতে কেন চাইছেন তা জানতে ইচ্ছে হয়।
" বাহ ভাই বাহ, আমি হার মানলাম ছন্দের যুদ্ধে আপনাকে হারানো যাবেনা।" 
কথাটি ম্যাজিকের মত কাজ করলো। সে একদম গলে গেল। এদিকে ইলিয়ানা হা করে সব দেখছে।
বললাম, জনাব সিদ্দীক। এইযে আমার পাশে যে বসে আছে, এ হচ্ছে আমার কাজিন। বুঝলেন? আপনার মত সেও ভোজন রসিক। কবিতা শুনতেও অনেক পছন্দ করে। ও তো নিজের মুখে বলতে লজ্জা পায়, তাই আমিই বলে দিচ্ছি আপনার খাওয়া দেখে আমার বোন ক্রাশ খেয়েছে আপনার উপরে৷ 
ও আপনার ফ্যান হয়ে গেছে। এজন্যই আসলে অন্য সিট থেকে উঠে আপনার সামনে এসে বসেছে। 
সিদ্দীক হতভম্ব হয়ে গেল আমার কথা শুনে। আড়চোখে বেশ কয়েকবার ইলিয়ানাকে দেখলো৷ এদিকে ইলিয়ানা রেগে একদম লাল হয়ে আছে। কিন্তু ওর কিছু বলার বা করার নেই।
আমার কাজের উপরে ওর প্রশ্ন করা নিষেধ।
সিদ্দীক কে আরো নানান কথাবার্তা বলে অফার করলাম আমাদের সাথে বাইরে নেমে কোথাও একটু ঘুরে আসার। ও ঘড়ি দেখলো। আমাকে জানালো ওর হাতে আরো ঘন্টাখানেক সময় আছে। সুতরাং যাওয়াই যায়। মহিলাটি ঢুকেছে আরো এক ঘন্টা আগে।
হিসেব টুকে নিলাম।মহিলাটি দু-ঘন্টা করে  ক্লাবে সময়  দেয়।
আমি - সিদ্দীক এবং ইলিয়ানা পাশাপাশি হাঁটছি। সিদ্দীক নতুন নতুন ছন্দ বানাচ্ছে এক পর্যায়ে ইলিয়ানাও ব্যপারটি উপভোগ করতে শুরু করে।এর ভেতরেই ঘটে গেল এক অকাজ। কোথা থেকে একটা কাক এসে আমার মাথার উপরে তার সাদা বিষ্ঠা ত্যাগ করে চলে গেল।
ইলিয়ানা তা দেখে হেসেই খুন। 
ওর নির্মল হাসি দেখতে আমার বেশ ভালো লাগছে।
সিদ্দীক কবিতা বানালো,
আপনি হাঁটছিলেন আমাদের পাশে,
উড়ন্ত কাক এসে হেগে দিল আপনার কেশে,
আপনি রাগবেন না। করবেন না মুখ ফ্যাকাশে,
আপনার ভাগ্য ভালো হাতি ওড়েনা আকাশে।
কবিতার আগা মাথা আমি না বুঝলেও ইলিয়ানা আগের থেকেও বেশি হাসতে শুরু করলো৷ মনে হলো ও হাসতে হাসতে মাটিতে পরে গড়াগড়ি খাবে।
আমি বললাম কি ব্যাপার এখানে হাসার কি হলো,,
ইলিয়ানা আমাকে বুঝিয়ে দিলো,
আপনার ভাগ্য ভাল হাতি আকাশে ওড়েনা। লাইনটার মানে বুঝছেন? 
- না।
যদি হাতি আকাশে উড়তো,আর সে যদি কাকটার মত আপনার মাথায় হাগু করতো, তাহলে আপনার কি অবস্থা হত ভেবে দেখেন। 
আমি বিষয়টি কল্পনায় ভেবে দেখলাম এবং যথারীতি ভয় পেলাম। আসলেই ভাগ্যিস হাতি ওড়েনা আকাশে।
সিদ্দীকের সাথে বেশ অনেক সময় কাটালাম।
সুক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতম তথ্য আমি বেশ কৌশলের সাথে জেনে নিলাম। 
ওকে বিদায় দিয়ে ইলিয়ানার সাথে ঢাকা শহরের বিশেষ কিছু জায়গায় রিকশা নিয়ে অনেক ঘুরাঘুরি করলাম। রিকশায় ঘুরতে আমার ভাল লাগে। যেহেতু ভাড়া ইলিয়ানা দিবে,আমার ঘুরে বেড়াতে সমস্যা কোথায়!
একটা জায়গায় এসে রিকশা থামলো। 
ইলিয়ানাকে বিদায় জানানোর সময় হয়েছে।
ও অধীর আগ্রহে কান পেতে আছে, মাদক চোরাচালানকারীদের হাত থেকে নিজেকে কিভাবে সেফ রাখবে সেটা জানার জন্য।
ওকে বললাম -
বোরকা ও নিকাব পরিধান করে চলাফেরা করতে। 
এটা সকল ধরণের শত্রু থেকে একটা মানুষকে মুক্ত রাখতে সক্ষম।
বুদ্ধিটা ওর পছন্দ হয়েছে। ওকে  নির্দিষ্ট কিছু সময় বেঁধে দিলাম বাসায় ঢোকা এবং বের হওয়ার জন্য।
ও আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
আমার থাকার ব্যবস্থা না হয় হলো। আপনার কি হবে? 
- মহাপুরুষদের থাকার জায়গার অভাব নেই।
উত্তর দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।
ইলিয়ানার সাথে আর দেখা হবেনা আমার। আমি জানি ও আমার প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে আছে৷ যতক্ষন না ওর চোখের সামনে দিয়ে উধাও হয়ে যাব ও তাকিয়ে থাকবে। মনে অদ্ভুত এক কষ্ট হচ্ছে। এ কষ্টের উৎপত্তি ভালোবাসা,ভালোলাগা নাকি মায়া থেকে তা আমি জানিনা৷ 
.
.
মাতৃছায়া আবাসিক হোস্টেল।
এ হোস্টেলের ম্যানেজারের নাম  জাফর। বয়স ৩০ পেরিয়েছে। 
তাকে জিজ্ঞেস করলাম সিট খালি আছে কিনা, 
উত্তরে জানালো আছে। এক মাসের এডভান্স দিয়ে বুকিং করতে হবে৷ 
- কয়টা সিট খালি আছে?
- ৫/৬ টা৷ যেটা পছন্দ ইচ্ছামত নিতে পারবেন।
- আমার কাছে এডভান্সের টাকা নাই৷
চলতি মাসের ও ভাড়া নাই।
- পাগল নাকি, তাহলে সিট খুজতেছ ক্যান?
- সিট খালি ফেলে রাখলে টাকা পাইবেন? যে কয়দিন থাকব, প্রতিদিন পঞ্চাশ টাকা দিব নগদ। 
ব্যপারটা আপনেও গোপন রাখলেন, আমিও রাখলাম।
- ১০০ করে দিলে ভাবতে পারি।
- ৫০ এর বেশি দিবনা। 
- আচ্ছা। থাকেন, কিন্তু সিট যখন ভাড়া হয়ে যাবে, তখন কিন্তু ছেড়ে দিতে হবে৷ 
- বলতে হবেনা।
.
.
.
রাত তিনটা ত্রিশ
হঠাৎ করেই ক্রিং ক্রিং শব্দে রিং আসে নাজিফা খানম এর ফোনে। 
ঘুমাতুর চোখে ফোন রিসিভ করে সে।
- হ্যালো, কে বলছেন?
ওপাশ থেকে অদ্ভুত এক হাসির শব্দ ভেসে আসে। এরপর কিছুক্ষন সব চুপচাপ।
" What is your untold Desire?   Nazifa khanom" 
নাজিফা খানমের ঘুম পুরোপুরি কেটে যায়৷ তার শরীরের লোম দাঁড়া হয়ে ওঠে।
- কে বলছেন?
- আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
আপনার অপ্রকাশিত একটা ইচ্ছের কথা বলুন। যা কোনদিন কাউকে প্রকাশ করতে পারেন নি। 
- কেন?
-আমি সেটা পূরণ করব।
- আপনি আমার এমন অপ্রকাশিত ইচ্ছে পূরণ করতে কেন যাবেন?
- কারণ আমি যাকে খুন করব বলে ঠিক করি, আগে তার আন্টোল্ড ডিজায়ার ফুলফিল করে নেই আর তারপর... বেলুন ফাটার মত ঠাস করে একটা শব্দ হয়ে ফোন কেটে গেল।
নাজিফা খানমের শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে৷ সিদ্দীক কে ফোন দেয় সে। গেট ভালো করে লক করা আছে কিনা পুনরায় চেক করতে বলে।



মেয়েটা আমার বেশ বড় হয়ে গেছে।
ক্ষুধার্ত ব্যক্তির সামনে খাবার না থাকলে যে কষ্টটুকু পাবে, তার থেকেও বেশি কষ্ট পাবে তার সামনে লোভনীয় সব খাবার রাখলে। একইভাবে  অতি প্রিয়জনকে না দেখার চেয়ে আড়াল থেকে দেখাটা  আরো বেশি কষ্টের। আমি এখন ঠিক সে কষ্টটাই বুকের মাঝে অনুভব করছি। সাফাকে এত কাছ থেকে দেখেও ওকে ধরতে পারছি না, ছুতে পারছিনা, আদর করে কোলে নিতে পারছিনা।
ওকে  নিয়ে মাঝে মাঝেই ঘুরতে বের হয় সাবিহা, সাথে থাকে মনিকাও।মনিকাকে সাথে নিয়েই  ঘোরাঘুরি করে, কখনো পার্কে কখনো বা কোন রেস্তোরায়। 
আমি আড়াল থেকে খুব সন্তোপর্ণে ওদেরকে অনুসরণ করি। আমার একটা দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো, 
সাবিহাকে অনুসরণ করলে আমি অবশ্যই ফারহানকে খুঁজে পাবো।
এবং আমার বিশ্বাস আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে না। 
সাবিহাকে একদিন সাফাকে নিয়ে একা বের হতে দেখি।সাথে মনিকা ছিল না।
মনে মনে আমার সন্দেহ জাগে যে সাবিহা হয়ত ফারহানের কাছে যাচ্ছে।তাই বরাবরের মত ওকে আমি ওকে ফলো করতে শুরু করলেও এবার আমার আগ্রহটা দ্বিগুণ ছিল।
সাবিহা একটা সি. এন জি নিয়ে যাত্রা শুরু করে।
লম্বা যাত্রা,
গুলশান, বারিধারা পার হয়ে ভাটারার ভিতর থেকে সাবিহার সি এন জি গিয়ে থামে এভারকেয়ার হসপিটাল এর সামনে। পূর্বে যা এপলো হসপিটাল হিসেবে পুরো বাংলাদেশে পরিচিত ছিলো।
সামনে কি হতে যাচ্ছে তা আমার ধারণার বাইরে।
সাবিহা প্রথমে হাসপাতালে ঢুকে রিসিপশনে থাকা মেয়েটার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে লিফটের ভেতরে প্রবেশ করলো। লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার পরে ও কোন তলায় গেল তা আর আমি অনুমান করতে পারলাম না। 
একবার ভাবলাম রিসিপশনে কথা বলে জেনে নিব কিনা, পরবর্তীতে মনের ভেতরে কেমন যেন একটা না বোধক অনুভূতি আসলো। রিসিপশনের মেয়েটাকে আবার অনেক জবাবদিহি করতে হবে, আমি কে বা কি! কোন ভাবেই আমার অস্তিত্ব কাউকে বুঝতে দেয়ার এক চুল সুযোগ ও রাখা যাবে না। 
ওয়েটিং রুমে বসে ভাবতে লাগলাম কি করা যায়।
 অনেক্ষন বাদে সাবিহা নিচে  নামল। ক্যাশিয়ারের কাছে বেশ কিছু টাকা বুঝিয়ে দিয়ে সে  চলেও গেল। ওর গন্তব্য এখন নিজের বাসা।সুতরাং ওকে আর ফলো করে লাভ নেই। একটা বিষয় বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,
ও ক্যাশে টাকা দিল কেন? নিশ্চয়ই ওর কোন রোগী আছে এখানে। 
কিন্তু ও কার চিকিৎসার ভার বহন করছে? আমার জনামতে ওর তো পরিচিত কেউ নেই!
বসে রইলাম হাসপাতালেই।সাবিহা কার কাছে এসেছে সেটা কিভাবে বের করা যায় ভাবতে ভাবতে মাথায় এলো ইলিয়ানা বা সিদ্দীকের কথা।ইলিয়ানার ঠিকানা আমার রাখা হয়নি। আমি জানি সিদ্দীক কোথায় থাকে। 
ওকে একটু ভুলিয়ে ভালিয়ে ম্যানেজ করে আনতে পারলেই.......
ভাবনার জগতে এটুকু আগানোর পর আমার মাথা থেকে সব চিন্তা নিমিশেই দূর হয়ে গেল। আমি বুঝতে পারলাম সাবিহা কার সাথে দেখা করতে এসেছিল।ঠিক  এই মাত্রই আমার চোখের সামনে লিফটের দরজা খোলার পর  বের হয়ে এলো ফারহান। শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে ও হেঁটে আসছে, ওর চেহারা অদ্ভুত রকমের ফ্যাকাশে  ।ওকে দেখামাত্রই আমার মস্তিষ্কের নিউরণ গুলো  কাঁপা-কাঁপি শুরু করে দিল।
চোখ বুজে একটা বড় নিশ্বাস নিলাম। নিজেকে ঠান্ডা রাখা জরুরি। তাও মন্দের ভালো ফারহানকে খুঁজে পেতে আমাকে তেমন বেশি একটা পরিশ্রম করতে হয়নি।
কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো ফারহান হেঁটে সোজা ক্যাশিয়ারের কাছে গেল। ক্যাশিয়ার ফারহানকে বেশ কিছু  টাকা দিল। একটা টিস্যু দিয়ে ও নিজের মুখমণ্ডল মুছতে মুছতে রিসিপশনের মেয়েটার সাথে হাশিমুখে কথা বলল কিছুক্ষন।
এরপরে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নেয় ফারহান। 
ওর পেছনে ফলো করার জন্য আমিও একটা রিকশা নেই। চালক মামাকে আমি ডিরেকশন দিচ্ছিলাম কখন কিভাবে চালাবে। কেউ আমার উপর সন্দেহ করা তো দূরে থাক, আমি যে কাউকে ফলো করছি সেটাই বুঝতে পারবেনা।
এতক্ষন যা যা ঘটেছে তা আমি নিজের মত করে কোন একটা ব্যখা দাঁড় করিয়ে মিলিয়ে নিলেও এখন আমার চোখের সামনে যা ঘটলো সেটা দেখার জন্য আমি একটুও প্রস্তুত ছিলাম না।
বেশ সুন্দর করে সেজে গুজে রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল মণিকা।
ফারহানের রিকশা গিয়ে থামল মণিকার সামনেই। টুপ করে মণিকা উঠে পরে রিকশাতে। 
দৃশ্যটা দেখে আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই। 
রিকশা নিয়ে ওদের ফলো করতে থাকি। 
দুজনে গিয়ে সি শেল রেস্তোরার সামনে নামে। 
সেখানে দুজনেই ভরপেট খাওয়াদাওয়া করে। এরপর তাদের গন্তব্য হয় কাছেরই একটা আবাসিক হোটেলে।
প্রায় পাচ ঘন্টা একত্রে সময় কাটিয়ে মণিকা বের হয়ে চলে যায়। ফারহান থেকে যায় ঐ হোটেলেই। 
সারারাত এখানে থাকা যাবেনা। এসব রাস্তায় গভীর রাতে পুলিশি টহল হয়। আমাকে সন্দেহক্রমে ধরে কোন প্রশ্ন করে বসলে উপযুক্ত জবাব তো দিতে পারব ই না উলটো ধরা পরে যাওয়ার ভয় আছে।। সুতরাং আজ মাতৃছায়া হোস্টেলে ফিরে যেতে হবে। যাওয়ার আগে একবার সিদ্দীকের সাথে দেখা করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এই ছেলেটাকে আমার সবথেকে বেশি কাজে লাগবে।
সিদ্দীকের বাসার সামনে যখন পৌঁছালাম,
গেটে তখন প্রচুর লোকজন।  সিদ্দীককে হাতকড়া পড়িয়ে রাখা হয়েছে। সাংবাদিকেরা বিভিন্ন প্রশ্ন করে যাচ্ছে ওকে। সিদ্দীক কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উচ্চস্বরে কান্না করতে করতে বলে চলেছে,
"আমি কিছু জানিনা ভাই,
আমি কিছু করিনাই। 
মাফ কইরা দেন ভাই, 
আমারে মাফ কইরা দেন মাফ কইরা দেনন ভাইইইইইইই।"
অদ্ভুত ব্যপার। ও কিছু না করলে মাফ কেন চাচ্ছে।
ভীড় ঠেলে ঠুলে ওর কাছে গেলাম। ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সিদ্দীক তোমাকে কেন আটকে রেখেছে, সিদ্দীক আমার দিকে তাকালো। আমার ডাক শুনে বেশ কিছু পুলিশ ও সাংবাদিক ও আমার দিকে তাকাল। বুঝলাম ভুল করে ফেলেছি। তবে ভাগ্য ভালো আমাকে এক নজর দেখে তারা সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সিদ্দীক আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে ঐ দুই লাইন ই জিকিরের মত আওড়াচ্ছে। 
আমি আবার ও ডাক দিয়ে বললাম, তুমি যদি কিছু না-ই করে থাকো, তাহলে মাফ চাচ্ছো কেন? 
কথাটা বলার সাথে সাথে সিদ্দীক থেমে গেলো,
বেশ কিছুক্ষন নিরব থেকে তারপর আবার উচ্চস্বরে কান্না করতে করতে আওড়াতে থাকলো..
"আমি কিছু জানিনা ভাই
আমি কিছু করিনাই,
ছাইড়া  দেন ভাই, 
আমারে ছাইড়া দেন, ছাইড়া দেন, ছাইড়া দেন ভাইইইই।"
ওর প্রতিভা দেখে আমার এখন অজ্ঞান হয়ে যেতে মন চাচ্ছে। তবে হঠাৎ করেই একজন পুলিশ অফিসার  ছুটে এলো।সিদ্দীককে যে দুজন হাতকড়া পড়িয়ে রেখেছিলো তাদের উদ্দেশ্য করে বললো, সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। দাঁড়োয়ান নিজের কাজে গেটেই পাহাড়া দিচ্ছিলো। খুনী পেছনের গেট টপকে ভেতরে প্রবেশ করেছে। ওকে ছেড়ে দিন। 
সিদ্দীকের হাতকড়া খুলে দেয়া হলো৷ ও আমার দিকে কৃতজ্ঞতার চোখে তাকালো। সিদ্দীককে ছেড়ে দেয়ার পর সাংবাদিকরা পুলিশকে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।
এই সুযোগে সিদ্দীক ভীড়ের মাঝ থেকে কোথায় যেন ছুটে গেলো।
আমি ভীড় থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।
হঠাৎ  সিদ্দীক এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। আমার দু  হাত চেপে ধরে বললো, বস আপনে আমার কবিতার ভুল ধরাইয়া না দিলে আমি জীবনেও ছাড়া পাইতাম না। সব আপনার বুদ্ধির খেলা বস।
আমি হাসলাম৷ ওকে বললাম এমন কিছুই না। তবে কাহিনী কি বলোতো। হুট করেই সিদ্দীকের চোখে পানি দেখতে পেলাম।
ও কান্না করতে করতে বললো, ভাইজান,কাল রাতে নাকি আফামনিকে খুন করে গেছে৷ খালি শরীলডা পাওয়া গেছে।
মাথা পাওয়া যায়নাই। 
আমরা কেউ টের পাইনাই৷ আজ আফামনির ক্লাবে যাওয়ার কথা। কথাটা বলেই দাঁত দিয়ে জিভ চেপে ধরলো সিদ্দীক। কথা ঘুরিয়ে বললো,
আজ আফামনির বাইরে যাওয়ার কথা৷ সারাদিনেও যখন তাকে পাইলাম না৷ আমি সন্ধ্যায় দরজা নক করি। কেউ খুলেনা। কয়েকবার কল দেই। কেউ রিসিভ করেনা। অনেক্ষন পর আমি তিনডা ৯ এ কল দিয়ে সাহায্য চাইলে পুলিশ আসে আর তার লাশ উদ্ধার করে। 
- হুম।
সিদ্দীককে অনেক প্রশ্ন করার ছিলো।
কিন্তু এখন ওকে কিছুই জিজ্ঞেস করা যাবেনা৷ 
মানসিক ভাবে ও একটু শক্ত হোক। তারপর ওর কাছ থেকে অনেক তথ্য নেয়া যাবে। 
সিদ্দীককে বললাম, এখানে আজ তোমার থাকা ঠিক হবেনা৷ তুমি বরং আমার সাথে আমার বাসায় চলো। 
সিদ্দীক বলা  মাত্রই  রাজি হয়ে গেল। ওকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
.
.
.
রাত তিনটার কাছাকাছি সময়ে হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠে। আমি মোটামুটি শিওর ছিলাম, এটা ইলিয়ানা ছাড়া আর কেউ ই না। কারণ আমার ফোন নম্বর ও ছাড়া আর কেউ জানেনা। 
ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা হাসির শব্দ ভেসে আসলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম - কে?
ওপাশ থেকে একটা প্রশ্ন ভেসে এলো- What is your untold desire?? 
ভয়েসটা এত গম্ভীর ও ঠান্ডা যে শুনেই আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো।




ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা হাসির শব্দ ভেসে আসলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম - কে?
ওপাশ থেকে একটা প্রশ্ন ভেসে এলো- What is your untold desire?? 
ভয়েসটা এত গম্ভীর ও ঠান্ডা যে শুনেই আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো।
কিছুক্ষন সময় চুপ থেকে ভাবছিলাম কি উত্তর দিব। আমার কাছে আনটোল্ড ডিজায়ার শব্দটাকে খুব পরিচিত মনে হচ্ছিলো। কিছু না বলে ফোন রেখে দিলাম। কিন্তু এর পর ও সেম নম্বর থেকে বেশ কয়েকবার কল আসে। 
আমি রিসিভ না করে মোবাইল অফ করে রাখি। 
.
.
সিদ্দীক মানুষ হিসেবে খারাপ না। মাথার কাছে বসে মাথা টিপে দিচ্ছে।
ও আবার স্পেশাল  সরিষা তেলের মাসাজ খুব ভালো দিতে পারে। পাশের রুমে থাকা শরীফের কাছ থেকে একটুখানি সরিষা তেল আনিয়ে নিয়েছি। শরীফ ছেলেটা বেশ রগচটা। তবে এ ক'দিনে ওর সাথে মোটামুটি একটা খাতির গড়ে উঠেছে। শরীফের সাথে কথা বলে যা বুঝলাম, 
কোন এক কারণে এখানের ম্যাচ ম্যানেজারের উপর সে প্রচন্ড বিরক্ত।পরে অবশ্য কারণ খুঁজে পেয়েছি।  শরীফ নিজেই এখানের ম্যানেজারের পদে বসতে চায়। আমার সাথে সে একটু খাতির জমিয়ে কথা বের করতে চাইছে আমি কিভাবে কি এখানে আছি। 
যাই হোক শরীফের ব্যপারটা মাথার একপাশে রেখে আমি সিদ্দীকের হাতের মালিশ উপভোগ করছিলাম।কপাল ভ্রু এবং মাথার তালুর চামড়া টেনে টেনে অদ্ভুত সুন্দর একটা ম্যাসাজ করে দেয়। বেশ রিলাক্সিং এবং আরামদায়ক। 

কি মনে করে যেন হুট করেই সিদ্দীক কে  জিজ্ঞেস করলাম,
তোমার ম্যাডামকেও কি ম্যাসেজ করে দিতে?
স্পষ্ট টের পেলাম সিদ্দীকের হাত কেপে উঠলো।
খানিক বাদে সে এক কথায় উত্তর দিলো - " না "
আমি আর কথা বাড়ালাম না। 
.
.
.

আমার স্ত্রী সাবিহার থেকেও মণিকার বিষয়টি আমার কাছে বেশি খটকা লাগছে। 
ফারহানের সাথে সাবিহার একটা সম্পর্ক হয়ত ছিলো আগে। কিন্তু মণিকা ঢুকলো কোথা থেকে।
 কিছুক্ষন চিন্তা করেও তেমন  কোন লাভ হলোনা। ওদের কার্যক্রম ফলো করা ছাড়া আর উপায় নেই।
একটা ফ্রেশ ঘুম দিলাম। ঘুম ভাঙলো দরজা ধাক্কাধাক্কির শব্দে।
দরজা খুলতেই রুমে প্রবেশ করলো ম্যাচ ম্যানেজার। আজ মাতৃছায়া ম্যাচের মালিক এসেছে।  মাসিক মিটিং হবে।
 খুব দ্রুত আমাদেরকে একটা রুমে উপস্থিত হতে বলা হলো।
ম্যানেজার আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলো আমাদের। এর ভেতরে শরীফ এসে দাঁড়ালো তার পাশে। বললো চলেন সবাই।মুখে কোন রকম পানির ঝাপটা মেরে, দরজা লাগিয়ে সিদ্দীক আর আমি তাদের সাথে বের হয়ে গেলাম।
মিটিং এ কার কি সমস্যা ম্যাচে থাকতে সে বিষয় নিয়েই মূলত কথা ওঠে। 
এক পর্যায়ে আমার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে একজন অভিযোগ তোলে। 
ছাদ থেকে জামা কাপড় বাতাসে উড়ে নিচে পরে হারিয়ে যায়৷ক্লিপেও কাজ হয়না। এ বিষয়ে কোন একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।। একজন এ বিষয়ে অভিযোগ তোলার পরে আস্তে আস্তে সবাই একত্রে অভিযোগ তুলল। কারো প্যান্ট, কারো শার্ট আবার কারো আন্ডারওয়্যার গায়েব হয়ে যাচ্ছে। 
ম্যাচের মালিক নির্দেশ দিলেন ছাদের চারপাশে জাল দিয়ে লম্বা বেড়া দিয়ে দিতে।হিসেব করে দেখা গেল এই জালের বেড়া দিতে খরচ হবে প্রায় ৩ হাজার টাকা। ম্যাচের সবার কাছ থেকে টাকা তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। 
মিটিং শেষের পর্যায়ে এমন সময় আমি বাড়িওয়ালার কাছে কয়েকটা কথা বলার অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে দেখে বুঝলেন আমি এখানে নতুন। বললেন নাম পরিচয় দিয়ে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করার জন্য।
গলায় খাকড়ি দিয়ে গম্ভীরমুখে নিজের নাম বললাম।সবাই আমার দিকে মনোযোগের দৃষ্টিতে তাকালো,
"  সিদ্দীক কে ইশারা দিতেই সিদ্দীক আমার হাতে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিল। আমি সেখান থেকে পুরানো কিছু শার্ট বের করলাম। 
সবাই আমার হাতের শার্ট দেখে চোখ বড় বড় করে ফেললো।
এগুলো ম্যাচের সদস্যদের ব্যবহৃত শার্ট।
শরীফ বিষ্ফোরিত চোখে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ওর চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। এমনিতেই ছেলেটা একটু রগচটা তার উপর ওর চেহারার এ অবস্থা দেখে আমার হাসি পেল। সবার সামনে হেসে ফেললাম। ম্যাচ মালিম জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার এগুলো কাদের শার্ট?
আমি উত্তর দিলাম, এখানের সব শার্ট ই এই ম্যাচের মেম্বার্স দের।কিন্তু কোনটা কার শার্ট তা আমি জানিনা। 
শরীফ উড়ে এসে ছো মেরে আমার হাত থেকে ৪/৫ টা শার্ট নিয়ে গেল।
এগুলো নাকি ওর গার্লফ্রেন্ডের গিফট করা দামি শার্ট। পরাপর কয়েকটা গিফটের শার্ট হারিয়ে ফেলায় ওর ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছিল।
"গিফট দেয়া সামান্য শার্ট ই আগলে রাখতে পার না আমাকে কি করে আগলে রাখবে "
অযুহাতে ওর গার্লফ্রেন্ড চলে যায়।
চারপাশে গুনগুন চলছে ছোট বড় গালির আওয়াজ ও শোনা যাচ্ছে, কেউ কেউ নিজেদের হারিয়ে যাওয়া শার্ট খুঁজছে।আমি উচ্চশব্দে হালকা কাশি দিয়ে, কথা বলার প্রস্তুতি নিলাম।
সবাই নিজ নিজ কাজ থামিয়ে আমার দিকে তাকাল।
বললাম,
আপনাদের ছাদ থেকে ধোয়া শার্ট ও প্যান্ট  গুলো ইচ্ছা করে ফেলে দেয়া বাড়ির পেছনের  দিকটায়। 
সেখান থেকে  পুরাতন কাপড় ক্রয় বিক্রয়ের কাজ করা ব্যবসায়ীর একজন অল্প বয়সী কর্মচারী এসে এ শার্ট প্যান্ট গুলো নিয়ে যেত। তাদের দুজনেরই টাকা পয়সা ভাগ করে নেয়ার চুক্তি ছিল। 
বিষয়টি আমি খেয়াল করেছি বেশ কিছুদিন ধরেই তবে বলার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। 
শরীফ জিজ্ঞেস করল, কে এই লোক,
ম্যাচমালিক সব শুনে  রেগে আগুন হয়ে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন কে এই হারামজাদা,
আমি উত্তরে জানালাম, আপনাদের বর্তমান ম্যাচ ম্যানেজার।
সবাই আমার কথা শুনে ম্যানেজারের বসার জায়গার দিকে তাকালো। কিন্তু কোন ফাঁকে যে সে চম্পট দিয়েছে সেটা আমরা কেউ ই খেয়াল করিনি। 
ম্যাচ মালিক তীব্র রাগে ফেটে পড়েছেন।তার বক্তব্য তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করা হয়েছে। রাগের মাথায় বলে ফেললো,
"ও যে এভাবেও টাকা ইনকাম করে তা তো আমাকে বলেনি। বলবেই বা কেন আমাকে তো ভাগ দেয়া লাগবে তাহলে,
সবাই মিলে ম্যাচমালিকের  দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন। উনি নিজের ভুল বক্তব্য সরিয়ে নিয়ে বললেন, না মানে তাহলে তো শাস্তি পেতে হতো। 
শরীফ অনেক ক্ষেপে আছে৷ সে লোক লাগিয়েছে ম্যানেজার কে ধরে আনার জন্য। ম্যাচ ম্যানেজারের দায়িত্বটাও তাকে দেয়া হয়েছে। 
সে আমার উপর অনেক বেশি সন্তুষ্ট।  আমার ও সিদ্দীকের জন্য তিন মাস ফ্রী থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ম্যানেজারের দায়িত্ব পেলে উপরি ইনকাম অনেক সেটা ভেবেই হয়ত আমাদের এমন একটা সুযোগ দিয়েছে। যাই হোক আমার কাজ শেষ হওয়ার পরে আমি বের হয়ে গেলাম। সিদ্দীককে বললাম পুলিশ তোমাকে খুঁজবেই,  যেহেতু তুমি বাড়ির দারোয়ান ছিলে, তোমার জবানবন্দির জন্য আবার ও পুলিশ তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইবে। তুমি লুকিয়ে থাকো৷ সে আমার কথা শুনে সত্যি ই মনে হয় অনেক ভয় পেয়েছে। তাই খাটের নিচে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল।

সিদ্দীককে মাতৃছায়া ম্যাচে রেখে আমি বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। 
পুরোটা দিন মনিকাকে ফলো করলাম। ঘুরে ঘুরে অনেক তথ্য ও জোগাড় করলাম।এরপর যা জানলাম তাতে আমার নিজের ভেতরে প্রচন্ড পরিমান পাপ বোধ কাজ করতে শুরু করলো।
আমার খুব দ্রুত সাবিহার সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ।  দুপুরের ধুলো পড়া রাস্তায় তপ্ত রোদে পা চালিয়ে আমার নিজের বাসার দিকে এগোচ্ছি। 
এক হাতে একটা কাগজের  ঠোংগা। ভেতরে কিছু কাঁচা পেয়াজ। আরেক হাতে একটা সিংগাড়া। পানির পিপাসা পেয়েছে খুব। ঠিক করেছি বাসায় গিয়ে সাবিহার হাত থেকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে এ ভীষন তৃষ্ণা মেটাতে হবে। এমন সময়ে ফোনে কল আসলো।নতুন ম্যানেজার 
শরীফ কল দিয়েছে।
ম্যাচের পুরানো ম্যানেজার কে শাহবাগের একটা চায়ের দোকান থেকে আটক করেছে তার লোকজন। ম্যাচে এনে সবাই মিলে উত্তম মাধ্যম দেয়ার পরে নাকি তার প্যান্ট ছিড়ে বের হয়ে আসে সপ্তাহ খানেক আগে ম্যাচের আরেক সদস্য জাহিদের আন্ডারওয়্যার। 
এসব শুনে আমি শরীফকে বললাম তাকে বেশি বেইজ্জতি না করতে। 
শরীফের সাথে কথা বলা শেষ হতে না হতেই একটা মাইক্রোবাস এসে থামে আমার ঠিক পেছনে। সেখান থেকে বের হয় মাস্ক পরিহিত কয়েকজন যুবক। ওদের নামার ভঙ্গী দেখেই আমি বুঝতে পারি সামথিং ইজ রঙ। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইলেক্ট্রিক টেজার দিয়ে দূর থেকে আমাকে শক দেয়া হয়। আমি সজ্ঞানে মাটিতে লুটিয়ে পরি। আমাকে মাইক্রোতে উঠানোর আগ পর্যন্ত আমার জ্ঞান ছিল।
পুনরায় যখন আমার জ্ঞান ফেরে,আমি আৎকে উঠি।
আমাকে একটা চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে।তার সামনেই  অপর এক চেয়ারে মুখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় বসে আছে নীড়া।
নীড়া আমাকে দেখে প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে ঠিক ই চিনতে পারে।
কান্না করতে করতে বলে, শহর, আমি আমার অপ্রকাশিত ইচ্ছেটা প্রকাশ করে ফেঁসে গেছি।
আমার জন্য তোমার ও ক্ষতি হয়ে গেল।
আমি প্রশ্ন করলাম মানে কি এসবের? 
নীড়া কান্না করতে করতে বললো,
অনেক লম্বা কাহিনী। শুধু এতটুকু জেনে রাখো, আমি একটা সাইকোপ্যাথের ফাঁদে আটকা পড়েছি। যে মানুষের অপ্রকাশিত ইচ্ছে জানতে চায়। পরে  সেটা পূরণ করে দিয়ে তাকে মেরে ফেলে। আমার কাছে জানতে চেয়েছিলো আমার আন্টোল্ড ডিজায়ার কি? 
অনেক অনুরোধ করার পরে আমি বলেছিলাম-
 শহর নামের একজনের  সাথে বন্ডেজ সে*ক্স করা।
অতঃপর তিন দিন চেষ্টার পরে ওরা তোমাকে আমার সামনে নিয়ে আসলো। এখন যদি আমার ইচ্ছেটা পূরণ হয় তবে আমি মারা যাব। আর তুমি আমার ইচ্ছেটা পূরণ করতে না চাইলে তোমাকে মেরে ফেলা হবে।

 

অনেক অনুরোধ করার পরে আমি বলেছিলাম-
 শহর নামের একজনের  সাথে বন্ডেজ সে*ক্স করা।
অতঃপর তিন দিন চেষ্টার পরে ওরা তোমাকে আমার সামনে নিয়ে আসলো। এখন যদি আমার ইচ্ছেটা পূরণ হয় তবে আমি মারা যাব। আর তুমি আমার ইচ্ছেটা পূরণ করতে না চাইলে তোমাকে মেরে ফেলা হবে।
নীড়ার সাথে কথাবার্তা বেশিদূর এগোতে না এগোতেই রুমে প্রবেশ করে কালো কাপড় পরিহিত একজন লোক। দেখে বোঝা যাচ্ছে না সে পুরুষ নাকি মহিলা।দুটো টুকরো কাগজ আমার এবং নীড়ার হাতে দেয়া হয়। আমাদের গলায় লাগানো হয় ইলেক্ট্রিক শক দিতে সক্ষম হারনেস।
এর পরে  আমার ও নীড়ার হাতের বাঁধন মুক্ত করে দিয়ে প্রস্থান করে অদ্ভুত লোকটি। দুজনেই কাগজের টুকরো গুলোর ভাজ খুলি। ওখানে লেখা ছিলো এই রুমের পাশেই অপর একটি রুম আমার এবং নীড়ার বন্ডেজ করার জন্য উপযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে। 
ওখানে নিয়ে নীড়ার শেষ এবং অপ্রকাশিত  ইচ্ছেটা পূরণ করতে হবে৷আমি যদি কোন ভাবে দ্বীমত পোষন করি, তবে আমাকে ইলেক্ট্রিক হারনেস দ্বারা শক দিয়ে খুন করা হবে। 
নীড়া বা আমার ভেতরকার কারো একজনের মৃত্যু নিশ্চিত। অবশ্য আমি তো আগেই অফিসিয়াল ভাবে মৃত একজন মানুষ। 
চট করে কথাটা মনে পড়তেই মাথায় একটা বিষয় গোলমেলে লাগলো।
সবার মত নীড়াও তো জানতো যে আমি মারা গিয়েছি। তাহলে ও আমাকে প্রথম দেখাতে কেন আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো না!
" শহর তুমি বেঁচে আছো?" গাড়ি এক্সিডেন্ট এ মারা যাওনি?"
বিষয়টি খুব সাধারণ ভাবে ভাবতে ভাবতে জটিল হয়ে ওঠে।  নীড়া চেয়ার ছেড়ে উঠে আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। ওর উপর কোথা থেকে যেন একটা সামান্য বিরক্তিমাখা রাগ আমার মস্তিষ্কে জমাট বাঁধে। হুট করে দাঁড়িয়ে আমি নীড়ার চুল মুঠি করে ধরে টান দিয়ে নিয়ে হাঁটতে থাকি পাশের রুমের উদ্দেশ্যে। নীড়া যেন এটাই চাইছিলো।
সে ব্যাথায় আহ করে চিৎকার দিয়ে উঠে।কিন্তু মুখে একটা প্রশান্তির হাসি লেগে আছে।
পাশের রুমে ঢুকতেই দেখতে পেলাম সেই বন্ডেজ ক্লাবের মতই একটা সুসজ্জিত রুম।কালো রঙ এর দুটো মোটা চেইন দেয়াল বেয়ে নেমে এসেছে। আরো আছে লাঠি, চামড়ার বেল্ট,ছোট আকৃতির ক্রিকেট ব্যাট, কালো গ্লাভস,  মোটা দড়ি, হ্যান্ডকাফ,এবং সব শেষে ছেলেদের আর্টিফিশিয়াল রাবারের পুরুষাঙ্গ। 
আমাকে এগুল নিয়ে কাজ করতে হবে ভাবতেই গা গুলিয়ে উঠছে। কিন্তু কিছু করার নেই।
 নীড়ার চোখের দিকে তাকালাম। ওর চোখের ভাষা পড়তে আমার অসুবিধা হলোনা৷ 
নীড়াকে যত দেখছি তত রাগ বাড়ছে। 
রাগ কমানোর সুযোগ টাও আছে। চুলের মুঠি ধরে ওকে আমার সামনে দাঁড় করালাম। 
এরপর গায়ের সর্ব শক্তি দিয়ে গালে সজোরে একটা থাপ্পড় মারলাম। নীড়ার ঘাড় কাত হয়ে গেল।ও ছিটে গিয়ে পড়লো আমার থেকেও দু হাত দূরে। গালের চামড়া ফেটে গিয়ে দরদর করে রক্ত পড়ছে। নীড়ার তাজা রক্ত দেখে আমার মাঝে অদ্ভুত এক নেশা জেগে উঠলো।
ওকে তুলে নিলাম। রক্তে লাল হয়ে থাকা নীড়ার মুখমন্ডলের ভেতর থেকে সাদা দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে নীড়া বলে,
" আই ওয়ান্ট মোর" 
নীড়ার পরিহিত জামার গলা ধরে দু হাতে দু দিকে সজোরে টান দিতেই ফরফর করে ওর দামি জামাটা ছিড়ে গেল।জিন্সের প্যান্ট টাকেও আর  নিয়ম মাফিক বোতাম এবং চেইন খোলার মাধ্যমে অপসারণ করা হয়নি।  আমার  নিজের ভেতর থেকে হঠাৎ যেন  একটা পশু বের হয়ে এসেছে।
নীড়ার চোখে এতক্ষন প্রশান্তি খেলা করলেও এখন শুধুই ভয় দেখতে পাচ্ছি। 
নীড়া আমাকে জিজ্ঞেস করলো-
Are you a monster?? 
বাঁকা ঠোঁটে একগাল হেসে উত্তর দিলাম- No, It's my Devil Form.
নীড়াকে আর কোন কথা বলার সুযোগ দিলাম না৷ টেবিলের ওপরে থাকা একটা কাপড়ের টুকরো ওর মুখে ঢুকিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিলাম। এবার ওর মুখ থেকে আর কোন কথা বের করার সুযোগ নেই। 
 নীড়া শুধুমাত্র অন্তর্বাস পরিহিত অবস্থায় আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওর গায়ের সাদা চামড়া গুলো দেখে আমার মাথায় এক ধরণের নেশা জেগে যায়৷ যে করেই হোক এ সুন্দর সাদা চামড়াগুলোর রাজপথে  লাল রক্তের আন্দোলন নামাতে হবে।
হাতে একটা চামড়ার বেল্ট নেই৷ এটাকে ঠিক বেল্ট বলা যায়না। ছোট একটা কাঠের হাতলে লাগানো অনেকগুলো চামড়ার কালো ফিতা। নীড়ার পিঠে সর্বোচ্চ জোড় দিয়ে একটা আঘাত করতেই নীড়া বিষ্ফোরিত চোখে মাটিতে লুটিয়ে পরে। মাত্র একটা আঘাতেই এমন অবস্থা হবে বুঝিনি। মারার জন্য আবার এগোতেই নীড়া তার দু হাত দিয়ে ইশারা দিলো আমাকে থামতে। কে শোনে কার কথা! ওকে টেনে তুলি আমি। দুহাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে দেই। মোটা দুটো শেকল যা সিলিং থেকে নিচের দিকে ঝুলানো, 
সে দুটোর সাথে নীড়ার হাত পা বেঁধে কপিকল এর সাহায্যে একটু উপরে তুলে নেই। আমার ঠিক কোমড় বরাবর।  নীড়া মাটি থেকে উঁচুতে দুটো শিকলের বাধনে দোলনার মত চ্যাং দোলা হয়ে দুলছে।
হাতে ক্রিকেটের ছোট ব্যাট নিয়ে ওর পেছনের মাংসল অংশে বেশ কয়েকবার আঘাত করি৷ নীড়ার শরীর মুচড়ে ওঠে ব্যাথায়। 
ঠাস ঠাস শব্দে পুরো রুম নড়ে ওঠে। যেন  কোন মিস্ত্রী হাতুড়ি পিটাচ্ছে।
ওর গায়ের চামড়া ফেটে, ফাঁটার ফাঁক থেকে রক্ত চুইয়ে ফ্লোরে পড়ছে। 
নীড়ার চোখ দেখে মনে হচ্ছে ও এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাইছে। কিন্তু ওকে তো এত সহজে আমি ছেড়ে দিতে পারিনা। এ তো সবে শুরু। 
নীড়ার গায়েরপ্রতিটা অংশ আমার নিজের মুখের শক্ত কামড়ে ক্ষত বিক্ষত করে দিতে শুরু করলাম। বুক কিংবা নাভী, রক্তপাত হচ্ছিল দেহের প্রতিটি অংশ থেকে। 
এ তো গেলো পেইনের চাপ্টার এবার প্লেজারে আসা যাক।
আমার গায়ের পরিহিত বস্ত্র কখন পরিত্যাগ হয়েছে সেটা আমারও খেয়ালের বাইরে। নীড়ার রক্ত মাখা মুখের ভেতরে আমার পুরুষত্ব গর্জন করে। রক্ত এবং প্রিমেচিউর স্পার্ম এর আধিক্যে  নীড়া বার কয়েক বমি করে দেয়। ওর পেটের উপরে আমার নখ খামচি কেটে গভীর ক্ষত তৈরি করতে থাকে। কপিকলের সাহায্যে নীড়ার দু পা দুদিকে ছড়িয়ে দেয়া হয়।আমি এতটাই হিংস্র হয়ে উঠেছিলাম যে নীড়ার উপর হামলে পড়ে বিস্ট এর মত শারিরীক সম্পর্ক চালানোর বেশ কিছুক্ষন পরে টের পেলাম নীড়ার দেহ নিস্তেজ অবস্থায় আছে। 
সাথে সাথে মনে একটা ভয়ানক সন্দেহ দোল খেলে গেল। রক্তমাখা হাতে নীড়ার পালস চেক করলাম। পেলাম না৷ নীড়ার রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত বুকে মাথা রেখেও কোন হার্টবিটের আওয়াজ শুনলাম না৷ 
নিজের বস্ত্রহীন ও নীড়ার রক্তে মাখামাখি হয়ে থাকা শরীর নিয়ে ছুটে গেলাম অপর রুমে। ঐ রুমের দরজা ওপাশ থেকে বন্ধ ছিলো। 
পাগলের মত দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে ,চিৎকার  করে চলেছি।
এক পর্যায়ে দরজা খুলে। 
কালো কাপড় পরিহিত অদ্ভুত কিছু লোক এসে ঝুলন্ত নীড়ার দেহের কাছে যায়৷ কিছুক্ষন পরে, চারজন চার প্রান্তে ধরে একটা খাটের উপর নীড়াকে শুইয়ে রেখে ওকে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রুম থেকে বের হয়ে যায়। 
মুখ হাত দিয়ে  ঢেকে আমি ফ্লোরে বসে পড়ি।
আমার দ্বারা এটা কি হয়ে গেলো!
নীড়াকে আমি খুন করতে চাইনি৷ তবে নীড়ার কাছ থেকে আমার অনেক তথ্য জানার ছিলো।
হঠাৎ গলায় মারাত্মক শক অনুভব করি। আস্তে আস্তে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
জ্ঞান হারানোর পথে আমার বার বার মনে পড়ছিলো,আমার আর কখনোই
নীড়ার ফর্সা গালদুটোতে  ব্লেডের কোনা টেনে ছবি আঁকা হলোনা। 








চলবে...








Writer:- হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ


NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner