নীড়াকে আমি খুন করতে চাইনি৷ তবে নীড়ার কাছ থেকে আমার অনেক তথ্য জানার ছিলো।
হঠাৎ গলায় মারাত্মক শক অনুভব করি। আস্তে আস্তে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
জ্ঞান হারানোর পথে আমার বার বার মনে পড়ছিলো,আমার আর কখনোই
নীড়ার ফর্সা গালদুটোতে ব্লেডের কোনা টেনে ছবি আঁকা হলোনা।
যখন চোখ মেলে তাকালাম চারদিকে অদ্ভুত আবছা অন্ধকার বাদে আর কিছুই দৃষ্টিগোচর হলোনা।
একটা ঢালা বিছানায় আমাকে ফেলে রাখা হয়েছে।
আবছা অন্ধকারেই দেখতে পেলাম রুমে একটা ১০০ ওয়াটের হলুদ বালব সিলিং থেকে লম্বা হয়ে বেয়ে আসা তারের মাথায় ঝুলে আছে। এক কোনায় পরে আছে একটা চেয়ারের ভাংগা কংকাল। চেয়ারে বসার জায়গায় থাকা ফোম গুলো ছেড়াফাড়া অবস্থায় রুমের অন্য এক কোনে পড়ে আছে।
দেয়ালে অনেক হিজিবিজি লেখালেখি। পুরো রুম জুড়ে ভেজা মাটির একটা সোঁদা গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। মাথার নিচে দু হাত দিয়ে উপরের সিলিং এর দিকে তাকিয়ে শুয়ে রইলাম। বুঝছি না এখন আমার কি করা উচিৎ কিংবা কি করতে হবে।
অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। সময় কাটানোর জন্য অন্ধকার নিয়েই ভাবতে শুরু করলাম।
অন্ধকার জিনিসটা ভালো নাকি খারাপ?
যদি অন্ধকার খারাপ হয় তাহলে ভালো কে? আলো?
অন্ধকারের রঙ কালো।
আলোর রঙ কি?
নাকি আলোর নিজস্ব কোন রঙ নেই?
যার মাঝে নিজস্বতা নেই সে বেশি উত্তম নাকি যার নিজস্বতা আছে সে বেশি উত্তম?
সময় কাটিয়ে দেয়ার জন্য এ প্রশ্নগুলোর উত্তর ভেবে চিনতে বের করাটাই এনাফ।
আঁটসাট বেঁধে প্রথম প্রশ্নের উত্তর ভাবতে শুরু করবো, এমন সময়ে
বাইরে থেকে খটখট আওয়াজ শুনতে পেলাম। বুঝতে পারলাম কে বা কারা যেন চাবি ঘুরিয়ে দরজার লক খুলছে।
একজন লোক দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করেই সুইচ টিপে লাইট জ্বালিয়ে দিলো। আমার রুমে বিচ্ছিন্ন ভাবে ছড়িয়ে রাখা অন্ধকার ও আমার অগোছালো চিন্তাভাবনার জালগুলো হুট করেই কেমন উধাও হয়ে গেল। আলো জ্বালানোর পরে বুঝতে পারলাম রুমে আমি একা ছিলাম না এতক্ষন।
ফ্লোরে দু চারটা নেংটি ইঁদুর ও ঘোরাঘুরি করছিলো। অন্ধকারের ভেতর ওগুলো আমার দৃষ্টির আড়ালে ছিল। হুট করে লাইট জ্বলে ওঠায় ওরা দৌড়ে একটা গর্তের ভেতর ঢুকে গেল। গর্তের ছোট্ট মুখটা এখান থেকে অন্ধকার দেখাচ্ছে। মাটির উপরে ইট বিছিয়ে মেঝে তৈরি করা,
সেটাও এইমাত্র খেয়াল করলাম। দুজন কালো মুখোশ পরিহিত লোক এসে আমার জন্য এক বোতল পানি এবং একটা পাউরুটি দিয়ে চলে গেল।
স্বাভাবিক ভাবেই ওরা আবারো আসবে। আর এর ভেতর এখান থেকে পালানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
ইঁদুর দুটি অন্ধকারের রহস্যময়তা দিয়ে আমাকে এখান থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজে দিয়েছে।
চেয়ার থেকে একটা কাঠের টুকরো খুলে নিয়ে সেটা দিয়ে ইট সরিয়ে দরজা থেকে ডান দিকের কোনায় দেয়াল ঘেষে গর্ত খুড়তে শুরু করলাম। মাটি ভেজা ভেজা থাকায় বেশ অল্প পরিশ্রমেই দু তিন ফুট গভীর গর্ত খোড়া সম্ভব হয়।
ওদের দেয়া পাউরুটি টুকরো টুকরো করে গর্তের ভেতরে ফেলি। এরপর চেয়ারের পরিত্যক্ত ফোম এবং বাকি কাঠের টুকরোগুলো গর্তের ভেতরে ফেলি।
এবার আমার অপেক্ষার পালা।
অপেক্ষার প্রহরগুলো সবসময় দীর্ঘ হয়। ওদের আসার আগ পর্যন্ত আমি আবার আমার আলো - আধারের চিন্তাভাবনা গুলো নিয়ে বসলাম।
ওদের পায়ের শব্দ যখন শুনতে পেলাম ততক্ষনে আমার মনে জাগা প্রশ্নগুলোর উত্তর যথাযথভাবে বের করে ফেলেছি।
যাই হোক ওরা দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করার আগেই আমি দরজার পাশে এমন ভাবে গিয়ে দাঁড়াই যাতে দরজা ধাক্কা দিয়ে খুললে আমি কপাট এর আড়ালে ঢাকা পরি।
ওরা দরজা খুলেই লাইটের সুইচ টিপে। কিন্তু লাইট আমি আগেই ভেংগে ফেলেছিলাম। লাইটের আলো না জ্বলায় ওরা দ্রুত গতিতে মোবাইলের টর্চ ফেলে। রুমের এক কোনায় গাড় অন্ধকারযুক্ত বড় একটি গর্তের মুখ দেখে দুজনেই ছুটে যায় সেদিকে। আমি এ সময়ে সুযোগ বুঝে দরজার আড়াল থেকে বের হয়ে ঝেড়ে দৌড় দিলাম। ওরা চেয়ারের টুকরো, ফোম সরানোর পরে নেংটি ইঁদুর দুটো লাফালাফি করে বের হবে। এরপর বুঝতে পারবে গর্তটা আসলে ওদের বোকা বানানোর জন্য বানিয়েছিলাম। ততক্ষনে আমি এদিক থেকে পগার পার হয়ে যাব।
আমার প্লান অনুযায়ী কাজ ও হয়। দূর থেকে আসা কিঞ্চিৎ আলোর সোজা দৌড়াতেই আমি একটা সিঁড়ি পেয়ে যাই। সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার পর দেখতে পাই আমি কোন একটা বাড়ির গ্যারেজের ভেতরে আছি। গ্যারেজের একদম শেষ মাথায় সিঁড়ি কেটে আন্ডারগ্রাউন্ড সিক্রেট শেল বানানো হয়েছে। সেখানেই আটকে রাখা হয়েছিল আমাকে। গ্যারেজটি একটি দ্বিতল বিশিষ্ট বাংলো বাড়ির। বাড়িটির চারপাশে উঁচু দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত। চোখের পলকে ছুটতে ছুটতেই চারদিকে চোখ বুলালাম। দেয়াল ঘেষে একটা পেয়ারা গাছ দাঁড়ানো আছে। ছুটে পেয়ারা গাছ বেয়ে দেয়াল টপকানোর সময় গ্যারেজের দিকে চোখ গেল। দুজন কালো পোশাক পরিহিত লোক আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওদের দিক থেকে দৃষ্টি সরে চোখ পড়লো বাংলো বাড়ির দরজায়। দরজাতে মস্ত বড় এক তালা ঝুলছে। তবে উপরের তলার ঝুল বারান্দায় সদ্য ধুয়ে দেয়া কাপড় রোদে মেলে দেয়া হয়েছে। সব জামাকাপড়ের ভেতরে একটা জামার উপর আমার দৃষ্টি আটকে যায়।
হলুদ ও সাদা রেখা টানা একটা কুর্তি।
" ইলিয়ানার"
গায়ে বেশ কয়েকবার দেখেছি এ কুর্তি টি।
আগে পালাতে হবে পেয়ারা গাছে বসে বসে এ নিয়ে ভাবার সময় নেই।
লাফ দিয়ে দেয়ালের ওপারে গেলাম।
আশেপাশের বিলবোর্ড দেখে নিশ্চিত হলাম এটা উত্তরা সাত নম্বর সেক্টর।
নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, একটা প্রফেশনাল ভিক্ষুকের মত লাগছে আমাকে। হাতে টাকা পয়সাও নেই।
এই মুহূর্তে ভিক্ষা করে কিছু ইনকাম করলেও মন্দ হয়না।
দাঁড়ি গোফ তো আগে থেকেই বেশ লম্বা লম্বা হয়ে ছিল। তার উপরে এখন ছেড়া জামাকাপড়।
পকেট থেকে একটা পাকা পেয়ারা বের করে কামড় বসালাম। পালানোর সময়ে গাছে পেকে হলুদ হয়ে থাকা পেয়ারার বেশ কয়েকটা তুলে নিয়েছিলাম।
খেতে খেতে ছাত্রাবাসের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। ওখানের ছোট একটা কাজ শেষ করে আমাকে নিজ বাসায় ফেরত যেতে হবে খুব দ্রুত।
সবকিছু ঠান্ডা মাথায় চিন্তাভাবনা করে রাখলেও আমার মাথায় খুন চেপে আছে। মনের অভ্যন্তরীণ একটা পশু রক্তপিপাসায় কুকড়ে মরছে।
ওকে শান্ত করতে হবে রক্তিম হিংস্রতার খেলায়। আর সেটার জন্য আমার খুব দ্রুত বাসায় ফেরাটা জরুরি।
প্রায় দু ঘন্টা হাঁটার পরে মাতৃছায়া ছাত্রাবাসে পৌছালাম।
আসার পরেই শুনলাম এ ক'দিনে সিদ্দীক চৌকির নিচ থেকে বের হয়নি। শুধু উঠে বাথরুমে গিয়েছে আবার এসে চৌকির নিচে ঢুকেছে। ওকে লোক দিয়ে খাওয়া দাওয়া পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমি শেষবার সিদ্দীক কে বলে গেছিলাম আমি আসার আগ পর্যন্ত যেন চৌকির নিচ থেকে বের না হয়। ও আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে জেনে মনের ভেতরে অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করতে লাগলো।
ঠিক করলাম, সিদ্দীককে আমার ভৃত্য হিসেবে পার্মানেন্ট জায়গা দিতে হবে। তবে আমার বেহাল অবস্থা দেখে সিদ্দীক এবং নতুন ম্যানেজার সহ অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করলো এবং জানতে চাইলো কি হয়েছে!
শুধু উত্তর দিয়েছি আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো।
মুহুর্তের ভিতর এ'কান ও কান করতে করতে খবরটা পৌঁছে গেল ছাত্রাবাসের মালিকের কাছে।
তিনি আমাকে জরুরীভাবে দেখা করার জন্য জোর তলব করলেন।
ম্যাচের ম্যানেজার নতুন জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করে আমার জন্য। ফ্রেশ একটা গোসল দিয়ে সেলুনে গিয়ে চুল দাড়ি ছোট করি। এরপর খাওয়া দাওয়া এবং বিশ্রাম পর্ব শেষে ম্যাচের মালিকের নিজস্ব শো রুমে দেখা করতে যাই।
.
.
কাঠের ফার্নিচারের শো রুম।
তাও আবার একটা বিল্ডিং এর সপ্তম তলায়।
শো-রুমে আছে কাঠের নানান আসবাবপত্র, ওগুলো ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করার জন্য একটা ছোকরাও রাখা হয়েছে। সাথেই লাগোয়া একটা ছোট্ট রুমে নিজের জন্য বিলাস বহুল বিছানা রেখে বিশ্রামের জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
দেয়াল জুড়ে রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার পোষ্টার লাগিয়ে রেখেছেন।
প্রথম দেখাতেই আগে জিজ্ঞেস করলাম, মাস তিনেক আগে শেষ হয়ে যাওয়া নির্বাচনে ব্যবহৃত হওয়া পোস্টার এখনো দেয়ালে সেটে রাখার প্রয়োজনীয়তা কি!
উনি উত্তরে জানালো, দুনিয়াতে একটু চালাক না হলে, টিকে থাকা খুব কঠিন।
যখন নির্বাচন চলছিলো তখন এই শো রুমের অস্তিত্ব ও ছিলো না।
পরে যে নির্বাচিত হয়েছেন তার নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার পোস্টার স-যত্নে দেয়ালে সেটে রেখে খুব সহজেই তার সুদৃষ্টিতে আসা যায়।
তার বক্তব্য শুনে মনে মনে বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারলাম না।
ওনার সাথে আরো কিছুক্ষন কথা হলো।কথা বলে বুঝতে পারলাম,
আমি কিভাবে কি কিডন্যাপ হয়েছি,কিভাবে ছাড়া পেলাম, এটা শুনে বিনোদন নেয়ার জন্যই আমাকে ডাকা হয়েছে। ওনার কাছে আমার কিডন্যাপ ও বের হয়ে আসার বিষয়টি একটি এডভেঞ্চারের গল্পের মত উপভোগ্য এর বাইরে কিছুই না। আমিও ওনাকে খুশি করতে আরো সত্য ঘটনার সাথে ভয়ানক ও লোমহর্ষক কিছু বিষয় বর্ণনা করে ওনার শ্রবনযোগ্য করে তুললাম। বিনিময়ে রাতের ডিনারটাও ওনার সাথেই হয়ে গেলো।
আমার সাথে গল্প করে উনি বোধ হয় অনেক বেশি আনন্দ পেয়েছেন। ফেরার সময়ে হাতে কিছু টাকা গুজে দিয়ে আমাকে বললেন পরদিন আবার আসতে।
সালাম দিয়ে বের হয়ে আসলাম আমি।
ঘড়িতে দেখলাম - রাত ১১ টা ৪০ বাজে।
সিদ্ধান্ত নিলাম এ সময়ে নতুন একটা বাসা খুঁজতে বের হবো। আজ সারা রাত বাসা খুঁজবো।
টু লেট প্লেটে তো আর লেখা নেই যে রাতে কল দেয়া নিষেধ।
সুতরাং " রাতে কল করা যাবে না" নিজে নিজে এত বেশি বুঝে লাভ নেই।
সিদ্দীক ও আমি মেইন রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছি।
উদ্দেশ্য সামনের একটা আবাসিক এড়িয়ায় ঢুকে ভাড়া নেয়ার জন্য নতুন বাসা খুঁজবো।
হঠাৎ করে আমার চোখ গেল নির্জন রাস্তায় চলতে থাকা একটা হুড নামানো রিক্সায়।
রিকশায় বসে থাকা মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
মেয়েটি আর কেউ নয়, "নীড়া"।
আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই রিকশা আমাদের ওভার করে চলে গেল দূর থেকে আরো দূরে।
মুহূর্তেই মাথাটা ঝিম ঝিম করতে শুরু করলো
মাথায় বেশি প্রেসার থাকলে মানুষ নাকি চোখে ভুলভাল দেখে। কিন্তু আমার মন মেজাজ তো একেবারে ফুরফুরে।
তবুও এই মুহুর্তে এ সময়ে নীড়াকে দেখলাম কিভাবে! যদি মেনেও নেই যে নীড়া মরেনি। আমার সামনে মারা যাওয়ার অভিনয় করেছে, তবুও ওর যে অবস্থা ছিলো তাতে উঠে হাঁটতে পারার কথা না।
তবে যার সাথে আমি বন্ডেজ সেক্স এ জড়িয়েছিলাম, সে কি নীড়া ছিল না?
অবশ্যই নীড়া ছিলো।
নীড়ার সাথে আমি বেশ অনেক দিন যাবৎ একত্রে কাজ করেছি। একটা মানুষ বর্তমান ডিজিটাল যুগে চেহারা চুরি করতে পারলেও চাল-চলন কথাবার্তা তা তো আর চুরি করতে পারবে না!
তবে কি নীড়ার কোন জমজ বোন আছে?
খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। চুপিচুপি অজ্ঞাতসারে কাউকে অনুসরণ অনুকরণ করলে অনেক ভয়ানক সব তথ্য বের হয়ে আসে।
যেমনটা বের হয়েছিলো মাষ্টার মাইন্ড মণিকার বেলায়।
মণিকার পেছনে বেশ কিছু সময় আমি ব্যয় করেছি। ওকে ফলো করেছি। ও যাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ফলো করেছি। তাদের সাথে অজ্ঞাত পরিচয়ে কথা বলেছি।
আর এ সব কিছু ঘাটতে ঘাটতেই বের হয়ে আসে ভয়ানক এক সত্য।
আমার স্ত্রী সাবিহার প্রাক্তন প্রেমিক ফারহানের ব্যপারে খুব ভালো ভাবেই জানতো মণিকা। কারণ সাবিহা মণিকাকে বিশ্বাস করে নিজের ব্যক্তিগত সব কিছু শেয়ার করেছিলো।
সাবিহার বাসা থেকে অন্যত্র বিয়ে ঠিক করে ফেলায় ও ফারহানের কাছে পালিয়ে চলে আসে। কিন্তু ফারহান সেদিন সাবিহার হাত আঁকড়ে ধরে রাখতে পারেনি।
ভাগ্যক্রমে সাবিহার সাথে পার্কে আমার দেখা এবং কথাবার্তা হয়।সেখান থেকেই আমি প্রথমে ওর অস্থায়ী, পরে একমাত্র এবং স্থায়ী আশ্রয় হয়ে উঠি।
আমাদের বিবাহিত জীবনে সাবিহাকে আমি ওর পরিবারের কোন সদস্যকে কখনো ফোন করতে দেখিনি। তাদের কথা ওর মুখে বলতেও শুনিনি এমনকি আমি ও বাদে ওর পরিবারের কাউকে চিনিওনা। এভাবেই কেটে যায় বেশ কিছুদিন। সময়ের আবর্তনে, শারিরীক এবং মানসিক চাহিদায় সাবিহা একজন মা হয়ে ওঠার প্রস্তুতি নেয়। যখন সাবিহার প্রেগন্যান্সির নিশ্চিত হয়, আমি অতি উৎসাহ নিয়ে আমার পরিবারের সবাইকে শুভ সংবাদ দেয়ার সাথে সাথে মিষ্টি মুখও করাই।
সাবিহাও তখন অনেক খুশি ছিলো। কিন্তু ওর এই খুশির বিষয়টি শেয়ার করার মত ওর নিজের পরিবারের ভেতরে তেমন কেউই ছিল না।
মস্তিষ্কের কোনা কানায় অনেক খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে মণিকার কথা মনে করে সাবিহা।মণিকার নাম্বার সাবিহার মুখস্তুই ছিল। ও শর্তসাপেক্ষে
স্ত্রী এবং মা হিসেবে নতুন জীবন শুরুর কথা মণিকার সাথে শেয়ার করে।
মণিকা তার সাইলেন্ট গেম প্লে শুরু করে তখন থেকেই।
কথায় কথায় সাবিহার কাছ থেকে অনেক কথা-ই জেনে নেয় মণিকা।
আমার ভালো চাকরি , সাবিহার সুখী জীবনের সাথে মণিকা নিজের সদ্য ব্রেকাপে মোড়ানো ভালোবাসাহীন একাকিত্ব জীবনটাকে পাশাপাশি দাঁড় করায়।
হয়ত কুরুচিপূর্ণ সিদ্ধান্তটা ঠিক এ সময়টাতেই ওর মাথায় ভর করেছিলো।
মণিকা সাবিহার প্রাক্তন প্রেমিক ফারহানের সাথে যোগাযোগ করে। সাবিহার বর্তমান সুখী জীবনযাপনের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলতে থাকে ফারহান নিজেও।মণিকা স্বাভাবিক ভাবে আমার স্ত্রীর সাথে ফোন আলাপ অব্যাহত রাখে।
এরপর সাবিহা যখন তার প্রেগনেন্সির দিনগুলো আমার সাথে দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা মাখিয়ে পার করছিলো,
ততদিনে মাষ্টারমাইন্ড গেইম প্লে করার জন্য নিজেদের স্টেজ নিঁখুতভাবে সাজাতে শুরু করেছিলো মণিকা ও ফারহান।
দেখতে দেখতে আমাদের সুন্দর ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
প্লান অনুযায়ী জন্মের দিন দুইয়ের মাথায় মণিকা আমার স্ত্রীকে ফোন করে।
জানায় হুট করে ফারহানের খোঁজ পেয়েছে সে।
ফারহান সেদিন সাবিহাকে গ্রহণ করতে আসেনি কারণ ঠিক সে-দিন ই ফারহানের ক্যান্সারের প্রাথমিক স্টেজ ধরা পরে।
কেমোথেরাপি নিয়ে এতদিন জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকলেও এখন ফারহান হাসপাতালের বেডে তার অন্তিম মুহুর্তের প্রহর গুনে চলেছে।
স্বভাবিক ভাবেই সাবিহা এ খবরটি শুনে একদম ই ভেংগে পরে।
মেসেঞ্জারে ছবি পাঠিয়ে ফারহানের মেডিকেল রিপোর্ট দেখায় মণিকা। হাসপাতালের বেডে শোয়া অবস্থায় ফারহানের ছবিও শেয়ার করে।
আর সেদিন মাঝ রাতেই আসে ফারহানের ফোন।
জীবনের অন্তিম মূহুর্তের দোহাই দিয়ে ফারহান সাবিহাকে বলে ,
আমার ও সাবিহার কন্যা সন্তানের নাম তাদের ভালোবাসা চলাকালীন সময়ে ঠিক করে রাখা নামে রাখতে।
সাবিহা তার আবেগের কাছে পরাজিত হয়ে সেটাই করে। এরপর মণিকা সাবিহার সহোযোগিতার জন্য আমাদের বাসায় এসে ওঠে। ওদের ষড়যন্ত্রের পথ আরো সুগম হয়। সাবিহাকে মণিকাই বিভিন্ন কথা বলে ফারহানের কাছে পাঠাতো। সাবিহা গিয়্র দেখতো ফারহান হাসপাতালের বেডে মুমূর্ষু অবস্থায় শুয়ে আছে।
ফারহান ও মণিকা দুজনেই সাবিহাকে বুঝায়,
ফারহান যে কোন সময়ে মারা যেতে পারে। ওর চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া দরকার কিন্তু প্রয়োজনীয় আর্থের নির্ভরযোগ্য উৎস নেই।
এভাবেই শুরু হয় সাবিহার কাছ থেকে টাকা পয়সা লুটপাট করার প্রক্রিয়া।
এর মাঝে সাবিহা একদিন ফারহানকে দেখতে হাসপাতালে গেলে মণিকা ইচ্ছে করেই আমার শিশু বাচ্চাটির গলায় চুলের ক্লিপ ঢুকিয়ে দেয়। আমি যাতে সাবিহার উপর ক্ষেপে গিয়ে ওকে ডিভোর্স দেই এবং আমার দেনমোহরের টাকা পেয়ে সাবিহা সেটা ফারহান এবং মণিকার কাছে তুলে দেয় এজন্যই এমন একটা জঘন্য প্লান করেছিলো ও।
কাকতালীয় ভাবে পাঠাও রাইড নিয়ে বাসায় আসার সময়ে আমি সাবিহাকে বাইকের পেছনে দেখে ওকে ভুলভাবে সন্দেহ করি।
তবে সন্দেহ করলেও আমি ভুলভাল কোন স্টেপ বা সিদ্ধান্ত নেইনি এজন্য নিজেই নিজেকে হাজারবার স্যালুট জানাচ্ছি এখন।
ধৈর্যশীল মানুষরা সব সময়ই কোন না কোন ভাবে জিতে যায়।
যাই হোক,
যখন ফারহান এবং মণিকা দেখলো তাদের প্লান কাজ করছেনা তখন ফারহান আমাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে করে আমার জমানো সব টাকা পয়সা এবং জায়গা জমি সাবিহার নিজের হয়ে যাবে,
যেটা ও ফারহানের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করবে এবং একটা পর্যায়ে যার বড় একটা অংশের মালিক হবে মণিকা এবং ফারহান।
আগের প্লান ঠিকঠাক ভাবে কাজ না করলেও এবারের প্লান টা ঠিক ই কাজ করে। আমার ফেক পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বানিয়ে, অফিসিয়ালি আমাকে মৃত ঘোষনা করা হয়।
হাসপাতালের রিসিপশন ক্যাশিয়ারের থেকে শুরু করে কয়েকজন নার্সরা মিলে শুধু সাবিহা নয়, সাবিহার মত অনেকের কাছ থেকেই এভাবে কন্টিনিউয়াসলি টাকাপয়সা আত্মসাৎ করতে শুরু করে ফারহান এবং মণিকা।
যত দ্রুত সম্ভব আমাকে সাবিহার সাথে যোগাযোগ করে সবকিছু ওকে খুলে বলতে হবে৷ তবে ফারহানের হাত আন্ডারগ্রাড পর্যায়ে একটু বিস্তৃত।
হুটহাট কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবেনা।
সবথেকে ভালো হবে অত্যন্ত গোপন জায়গায় কোন একটা বাসা খুঁজে সেখানে সাবিহা ও আমার মেয়েকে নিয়ে আসলে। মাথায় অনেক বিষয় গন্ডোগোল পাকিয়ে আছে।
মৃত নীড়া, জীবিত নীড়া, ইলিয়ানা, বন্ডেজ ক্লাব ঘরের রহস্য, ফারহান এবং মণিকা এসব কিছুর ঘোর কাটিয়ে উঠে খুব স্বাভাবিক একটা জীবনে ফিরে যাওয়াটা কি আদৌ সম্ভব হবে আমার!
এসব কিছুর টানাপোড়েন এ আমার বাক শক্তি হারানো ফুটফুটে মেয়েটার ভবিষ্যৎ নিয়েও আমি চিন্তিত।
মণিকার পশুত্বের কারণে আমার মেয়েটা তার কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছে এটা যখন ই মনে হয়,
ইচ্ছে করে ওর জিহবা বের করে একটা খুটির সাথে লোহা মেরে আটকে রাখি।
এখন রাগ করার সময় না।
যা করতে হবে সব কিছু ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।
সিদ্দীকের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে সাবিহার সাথে কথা বলার জন্য ওর ফোনে একটা ফোন দেই আমি।
বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর ফোন পিক করে কেউ একজন।
এতদিন পরে বহুল পরিচিত ভালোবাসা মাখা কন্ঠ টা শুনব এমনটা আশা থাকলেও
ওপাশ থেকে পাতলা একটা পুরুষ কন্ঠ শুনতে পাই আমি।
" এতক্ষন এই কলটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম, মিষ্টার শহর, ওরফে ফাহাদ।
তুমি পাতায় পাতায় চললেও আমি পাতার শিরায় উপশিরায় চলি।
বরশিতে আটকে পরা মাছের মত তুমি আমার হাতে আটকে গেছ।
যতই ছুটাছুটি করো, তোমার ভাগ্যের শেষ লেখা হলো তুমি মাছের মতই শেষমেশ শিকারির ব্যাগে প্যাকেট হবে।
সাবিহা এবং তোমার কন্যা,
আমার কাছে বন্দী অবস্থায় আছে। আগের বাসায় খুঁজে লাভ নেই ওরা আমার কাছে গোপন জায়গায় আছে। এবার তোমার বরশির মাছের মত ব্যাগের ভেতর চলে আসার পালা। বাই দ্যা ওয়ে আমার পরিচয় নিশ্চয়ই আঁচ করতে পেরেছো,তবুও বলছি,
আমি ফারহান।
ফোনটা কেটে দিলাম।
নিজেকে বড্ড ভাংগাচোরা লাগছে।
পৃথিবীর কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া কি আর কিছু করার আছে আমার??
হঠাৎ মনে পড়লো রুই কাতলা ধরার মাছের বরশিতে যদি কখনো হাঙ্গর আটকে যায়, তাহলে সেটা মাছ শিকারীর জন্য বিপদজনক হয়ে ওঠে।
সুতরাং নিজেকে অসহায় শিকারে পরিণত করার থেকে আরো বেশি শক্তিশালী সত্তায় পরিণত করতে হবে।
সামনে যে এক কঠিন যুদ্ধ বাকি আমার।
______________________
যেহেতু আমার গোপন করা পরিচয় ওরা জেনে গিয়েছে তার মানে আমি শতভাগ নিশ্চিত হলাম যে ইলিয়ানা কোনো না কোনো ভাবে ওদের সাথে জড়িত।
নগরীর দেয়াল গুলো নতুন পুরাতন টু লেট বিজ্ঞাপন হাতে অনেক দায়িত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রাত দুটা বেজে পনের মিনিট। সিদ্দীকের ফোন থেকে একটা চকচকে টু লেট বিজ্ঞাপনে ফোন দিলাম।
বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর ফোন পিক করলো একজন মাঝবয়েসী লোক।
- হ্যালো.... কে....
- জ্বী বাসা ভাড়া নেয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।
- ফাযলামী পাইছেন মিয়া! রাইতের বেলা ঘুম নষ্ট করে বাসা ভাড়া খুঁজতেছেন?
- আপনি কি বাসার মালিক?
- না আমি এই বাড়ির দারোয়ান।
- দারোয়ান হইলে তুমি রাতে ঘুমাও কেন? তোমার দায়িত্ব রাতে গেটে দাঁড়িয়ে পাহারা দেওয়া।
কাজে ফাঁকিবাজি করো আবার চিল্লাচিল্লি করছ?
- আচ্ছা আপনে কামের কথা কন। কি জানতে চান?
- নাহ তোমার মত কাজে ফাঁকি দেয়া দারোয়ান যে বাড়িতে আছে সে বাড়িতে আমি উঠবো না৷ আমার মালামাল সব চুরি হয়ে যাবে।
বলে ফোন কেটে দিলাম।
সিদ্দীক দেখি আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।
যাক ওর আমার সাথে হাঁটতে যে বোরিং লাগছে না এটাই ঢেড়।
কিছুক্ষন পরে ফোন দিলাম অন্য একটি বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপনের নাম্বারে।
এবার ও ফোন রিসিভ হলো।
ফোন ধরেই ছেলেটা বললো,
-"হ্যা" সোনা বলো।
- এক্সকিউজ মি, বাসা ভাড়ার নেয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।
- জানি সোনা। তোমার মত আমাকে কেউ ভালোবাসেনা।
আমিও তোমাকে মিস করি খুব।
( পাশ থেকে কান্নাজড়িত নারী কন্ঠে কেউ একজন বলছে,
দেখো শাহেদ তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, প্লিজ তুমি অন্য কারো সাথে কথা বলে আমাকে কষ্ট দিওনা। আমার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমার সব শূন্যতা - পূর্ণ করে দিব।
মেয়েটা তার কথা চালিয়ে যাচ্ছিলো আমি ফোনটা কেটে দিলাম।
পারিবারিক কলহ হয়ত।
ছেলেটা এমন একটা ভাব করেছে যে সে তার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে কথা বলছে, হয়ত তার স্ত্রীর কোন আচরণে কষ্ট পেয়েই এমন একটা অভিনয় করলো।
আরো বেশ কিছু নম্বরে কল দিলাম, কয়েকটা ফোন রিসিভ হয়নি। মাঝে একটা ফোন রিসিভ হওয়ার পর একটা বাচ্চার হাসির শব্দ শুনতে পেয়েছি শুধু। বাবা মা সহ ঘুমিয়ে যাওয়ার পর হয়ত কলের সাউন্ডে বাচ্চাটার ঘুম ভেংগে যায়। আলোর ফোয়ারা দেখে ফোন হাতে নেয়ায় চাপ লেগে রিসিভ হয়ে যায় ফোনটি।
বেশ কিছুক্ষন ধরে ওর হাসির শব্দ শুনি আমি।
এরপর নিজ থেকেই ফোনটি কেটে যায়।
মানুষের জীবনের রাতের গল্পগুলো যে কতটা ভিন্ন তা আমি মাঝরাতে কল না দিলে কখনোই বুঝতাম না।
কিছু গল্প একান্ত রাতের ই থাকে যা কখনো দিনকে বলা হয়ে ওঠে না।
শেষবার যাকে কল দিলাম, তার কণ্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছিলো সে এখন বাসার বাইরে আছে। ফুরফুরে ফ্রেশ মেয়েলি কন্ঠস্বর।
এত রাতে বাসা খোঁজার জন্য কল করেছি দেখে মোটামুটি সবাই বিরক্ত হলেও মেয়েটাই প্রথম জিজ্ঞেস করলো, ভাইয়া আপনি কি বড় কোন বিপদে পড়েছেন?
জবাবে বললাম, বিপদ আমার উপরে এসে পড়েছে।
মেয়েটা আমাকে মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করতে বললো।
পাঁচ মিনিট পরে মাথায় হেলমেট, কনুই ও হাঁটুতে আর্মর লাগানো একটা মেয়ে স্কেটিং করতে করতে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
জিজ্ঞেস করলো আমরাই বাসা ভাড়া নেয়ার জন্য কল করেছি কিনা!
জবাবে জানালাম হ্যাঁ।
মেয়েটি পুনরায় প্রশ্ন করলো,
খেয়েছেন কিছু? দেখে তো মনে হচ্ছে খাওয়া দাওয়া হয়নি আপনাদের। ভেতরে চলুন,আমার সাথে খাবেন।
সাহস ভালো, কিন্তু দুঃসাহস ভালো না। মেয়েটি যা করছে সেটা এক প্রকার দুঃসাহসিক কাজ, আমরা যদি প্রফেশনাল ডাকাত হতাম,তবে এর কপালে আজ ভীষন খারাপ কিছু ছিলো।
যেতে যেতে মেয়েটি বললো, নতুন স্কেটিং শিখছি, তাই অনেক রাতে স্কেটিং করতে বের হই। রাস্তা একদম ফাঁকা থাকে।কথা বলা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ঘেউ ঘেউ করে দুবার কুকুরের ডাক শুনলাম। মেয়েটির পায়ের দিকে ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলাম পা ঘেষে সাদা লম্বা লোমযুক্ত একটা কুকুর দাঁড়ানো। আমার দৃষ্টি কুকুরটার দিকে দেখে মেয়েটি বললো, এ হলো আমার সবথেকে কাছের বন্ধু, " প্লুটো"।
যখন মেয়েটিকে অনুকরণ করে ওর বাসায় ঢুকলাম, তখন আমার ধ্যান ধারণা পুরোপুরিভাবে বদলে গেল।
কারো কারো ক্ষেত্রে দুঃসাহস করাটাও জায়েজ আছে।যখন গেট থেকে ভেতরে ঢুকতে গেলাম, তখন দেখলাম গেটে দুজন কর্তব্যরত পুলিশ দাঁড়ানো। মুহূর্তেই বুঝে নিলাম পুলিশের কোন উর্ধতন কর্মকর্তা বা বড় কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের বাড়ি এটা।
পুরো বাড়িটা সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত।
আমাদের নিয়ে বসানো হলো নিচতলার বিশাল এক গেস্টরুমে। এখানটা শুধুমাত্র গেস্টদের জন্য ব্যবহার করা হয়।মেয়েটা আমাদের বসিয়ে দিয়ে চলে গেল। একটু পর কিছু কর্মচারী এসে আমাদের মুখরোচক সব খাবার দাবার খেতে দিল।
গেস্ট রুমে বিশ্রামের ব্যবস্থাও ছিল। কর্মচারী আমাদের জানালো, যাতে আমরা খেয়েদেয়ে রেস্ট নেই। সকালে আমাদের সাথে ওনার ম্যাডাম কথা বলবে।
খেয়েদেয়ে বিশ্রামের জন্য বসলাম। ঘুমানোর ব্যবস্থা থাকলেও এখন ঘুম আসবেনা। আগে নিজের সাথে কথা বলতাম। এখন তাও কথা বলার জন্য সিদ্দীক আছে।
ওকে ডেকে বললাম, বুঝলে সিদ্দীক, ম্যাচের মালিকের বিষয়টা আমার কাছে অত্যন্ত রহস্যজনক বলে মনে হয়েছে।
সিদ্দীক মনোযোগ সহকারে আমার মুখের দিকে তাকালো।
বললো কিভাবে?
- কেউ এমন একটা জায়গায় কেন শো রুম দিবে, যেটা লোকচক্ষু থেকে অন্তরালে?
মনে হয়না ওনার ওখানে তেমন বেশি একটা বেচাকেনা হয়।
তবুও এত টাকার শো রুম নিয়ে বসার উদ্দেশ্য কি!
- তাইতো! বুঝতে পারছিনা। উদ্দেশ্য কি!
-এটা আমি ঢাকা শহরের বেশ কিছু জায়গায় খেয়াল করেছি। খুব দামি দামি আসবাবপত্র সহকারে এমন এমন জায়গায় বড় বড় শো রুমের স্টল দেয়া হয়, যেখানে মানুষ সপ্তাহের পর সপ্তাহ উঁকি দিয়েও হয়ত দেখে না। বেঁচাকেনা একদম ই নেই। তবুও স্টলগুলো বছরের পর বছর টিকে থাকে।
- এর পেছনে কারণ কি হতে পারে?
- একটা ব্যখ্যা আমার কাছে আছে।
- কি ব্যখ্যা?
- এই যে ধরো যারা এমনটা করে, তাদের কোন না কোন ভাবে অবৈধ লেনদেনের সাথে জড়িত।
এদের প্রচুর ব্লাক মানি থাকে। কখনো আইনী ভাবে নোটিশ দিয়ে এ টাকার উৎস কোথায় তা জানতে চাওয়া হয়, তখন এসব শো রুম থেকে কেনা বেচার একটা হিসেব দেখিয়ে দেয়া যায়।
ব্লাক মানিকে হোয়াইট মানি করার একটা প্রসেস মাত্র।
সিদ্দীক মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো, তার মানে আমাদের ঐ ম্যাচের মালিকের ব্লাক মানির সোর্স আছে?
- তার নেই। তবে তার স্ত্রীর আছে।
- আপনি কিভাবে জানলেন?
সেটা বলবো, তার আগে আমাকে বন্ডেজ ক্লাবটায় ঢোকার ব্যবস্থা কর সিদ্দীক।
সব রহস্য ওখানেই লুকিয়ে আছে, সব।
- আমি কিভাবে ব্যবস্থা করমু স্যার!
- তোমার ম্যাডাম বন্ডেজ ক্লাবে যেত, রাইট?
- হুম।
- তাহলে ওখানে প্রবেশের নিয়ম কানুন তোমার জানা আছে।
- ম্যাডাম একটা কার্ড ইউজ করত। ওটা সাথে রাখলে ঢোকার সময় কেউ বাঁধা দেয় না।
- কার্ড টা তোমার ম্যাডাম কোথায় রাখতো? তুমি জানো?
- ওনার রুমে খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে।
- আচ্ছা তুমি যেহেতু ঐ বাড়িতে দাড়োয়ানের কাজ করতে, বাড়িটা তোমার হাতের নকশার মত চেনা।
তুমি আমাকে বাড়িটার কোথায় কি আছে তা খুলে বলো ভালো করে।
- আপনে কি ঐ বাড়িতে ঢোকার প্লান করতেছেন।
- হুম, তুমি শুধু আমাকে বলো বাড়িটার কোন পাশে কি কি আছে! কিভাবে ঢোকা যায় সেটা আমি বের করবো।
- কিন্তু, আপনাকে বন্ডেজ ক্লাবে কেন ঢোকা লাগবে? এছাড়া কোন উপায় নেই?
- সিদ্দীক তোমাকে বলেছিলাম না ঐ ম্যাচের মালিককে আমার সন্দেহজনক মনে হয়েছে?
- হুম।
- সে নিয়মিত বন্ডেজ ক্লাবে যায়। তবে তার ক্ষেত্রে আরো একটা জঘন্য বিষয় আমি উদঘাটন করেছি। সে একজন সমকামী।
- কিভাবে উদঘাটন করলেন?
- তার শো রুমের কর্মচারী ছেলেটিকে অবজারভার করে।
টর্চের আলো জানালা দিয়ে ভেতরে ফেলতেই দেখতে পাই এক বিভৎস দৃশ্য।
খাটের উপরে পরে আছে দুটি পচা গলা লাশ।
পোকা গিজিগিজ করছে লাশের ভেতরে।
একটি লাশ বিছানার ঠিক মাঝ বরাবর। আরেকটি বিছানার একদম কিনারে।
কিনারের লাশটি থেকে একটি পা পচে গিয়ে ফ্লোরের উপরে খুলে পরে আছে। দৃশ্যটি দেখেই আমার মাথা ঘুরে উঠে। মনে হচ্ছিলো সানসেট থেকে পা ফসকে এখনি নিচে পরে যাব।
কোনরকম টাল সামলে নিজের নাক চেপে ভেতরে ঢুকে পারলাম। পেছন পেছন ঢুকলো সিদ্দীক এবং সবশেষে বাবুমিয়া।
লাশদুটোর দিকে তাকানোর ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও বার বার চোখ চলে যাচ্ছে। মুখমন্ডলের মাংস গলে ক্ষয়ে পড়েছে। প্রচন্ড ভয়ানক লাগছে দেখতে। তবে এদের কিভাবে খুন করা হয়েছে লাশের অবস্থা দেখে সেটা একেবারেই বোঝার উপায় নেই।
রুমের লাইট জ্বালানো যাবেনা। কারণ আশপাশের সবাই জানে এ বাড়িটা পরিত্যক্ত।
হুট করেই আমাদের কানে অদ্ভুত কিছু শব্দ এসে লাগলো।
বাবুমিয়া ভয়ে বেশ কিছুক্ষন ধরেই আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়ছেন। সিদ্দীক বার বার বাবুমিয়াকে খোঁচাচ্ছে, আপনি আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ ছাড়া কি আর কোন সুরা বা দোয়া জানেন না?
বাবুমিয়া উত্তর দেয়, ভয়ে সে সবকিছু ভুলে গেছে।
সিদ্দীক এবং বাবুমিয়াকে হাতের ইশারায় চুপ করতে বললাম।
ওদের কানের কাছে গিয়ে বললাম, আমার মনে হয় এ বাসাতে আমরা বাদেও আরো একজন আছে।
আমরা ছিলাম দ্বিতীয় তালায়, শব্দগুলো হচ্ছিলো নিচতলা থেকে। সিদ্ধান্ত নিলাম ফ্ল্যাশ লাইট বন্ধ করে সিদ্দীকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সিঁড়ি থেকে নিচে নামব। হয়ত লাশগুলোর খুনী এখনো এই বাসাতেই ঘাপটি মেরে বসে আছে।
আমরা দুজন সামনে আগানোর সময় হুট করে বাবুমিয়া পেছন থেকে আমার জামাটা খামচে ধরলো।বললো, তার প্রচন্ড ভয় লাগছে। সে নিচে যাবেনা। তার উপর এবার আমি চরমভাবে বিরক্ত হলাম।
কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম, এখানে আমরা ছেলেখেলা করতে আসিনি। কাজে এসেছি। শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।গাঢ় অন্ধকারে সিঁড়ি বেয়ে তিনজন আস্তে আস্তে নিচে নামছি।
বুকের ভেতর ঢিপঢিপানি বেড়েই চলেছে। এই মনে হচ্ছে হুট করে লাইট জ্বলে উঠবে, দেখব অস্ত্রধারী কিছু লোক আমাদের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে আছে।
আবার মনে হচ্ছে এই বুঝি পুলিশ এসে বাড়ি ঘেরাও দিলো। তবে মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতিও ও কাজ করছিলো, যা আমাদের সামনের দিকে পা বাড়াতে সাহায্য করে।
হুট করেই কিচেনের কাছ থেকে ঝপাং করে একটা স্টিলের বাটি পড়ার শব্দ হলো।
এরপর কারো দৌড়ানোর শব্দ। এরপর আবারো ধপাস করে একটা বিকট শব্দ। একটা মেয়েলী কন্ঠে আর্তচিৎকার,
পরে সবকিছু চুপচাপ। যেমন অন্ধকার, তেমনি নিরবতা।
সিদ্দীক ও বাবুমিয়া আমার পাশে আছে কিনা সেটাই টের পাচ্ছিনা। অন্ধকারে হাজার হাজার মানুষ একত্রে থাকলেও একা থাকার নিঃসঙ্গ অনুভূতি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়না।
বেশ কিছুক্ষন চারদিকে শুনশান নিরবতা বিরাজ করার পরে সাহস করে মোবাইলের টর্চ জ্বালালাম। সিদ্দীক এবং বাবুমিয়া ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। আমার দেখাদেখি তারাও লাইট জ্বালালো। চারদিকের অবস্থা প্রচুর খারাপ। মেঝে ভর্তি মোটা ধুলোর আস্তরণ, তার উপর বুটের পায়ের ছাপ। ছাপগুলো বেশ তাজা। আছে খালি পায়ের কিছু ছাপ ও।
যেখান থেকে এতক্ষন শব্দ আসছিলো সেদিকে লাইটের আলো ফেলতেই দেখতে পেলাম একটা জীর্ণ শীর্ণ মেয়ের দেহ মাটিতে লুটিয়ে আছে। জীবিত আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। তবে গায়ের চামড়া হাড়ের সাথে লেগে একদম কংকালের মত দেখাচ্ছে।
কে বা কারা যেন ওর হাত দুটো শিকল দিয়ে পেছনের দিকে বেঁধে রেখেছে।এক ছুটে তিনজন ই মেয়েটার কাছাকাছি গেলাম।
সিদ্দীক নাকের কাছে হাত নিয়ে দেখলো নিঃশ্বাস নিচ্ছে মেয়েটি। হয়ত ওকে কেউ এখানে বন্দী করে রেখে গেছে বহুদিন।হয়ত আমাদের আসার শব্দ পেয়ে মেয়েটি অন্ধকারে এলোপাতাড়ি দৌড়ে শক্ত কিছুতে ধাক্কা খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। শরীরের অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে,
বেশ কিছুদিন খাওয়াদাওয়া ছাড়াই কোনরকম ভাবে সার্ভাইব করে বেঁচে আছে মেয়েটি। ওকে উদ্ধার করে আমাদের সাথে নিয়ে যাওয়াটাও একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। আমার বিশ্বাস, এই মেয়েটিকে উদ্ধার করতে পারলে উপরে থাকা লাশ দুটির পেছনের রহস্য ও উদঘাটন করতে পারবো।
মেয়েটিকে ওখানে ওভাবে রেখেই আমি সিদ্দীকের নির্দেশনা অনুযায়ী চলে যাই ওর মালিকের লিভিং রুমে। জিনিসপত্র গুলো সব ছড়ানো ছিটানো আছে। সোনার গহনা সহ নগদ বেশ কিছু ক্যাশ টাকাও এদিক সেদিক ছড়ানো।
দেখে মনে হচ্ছে আমার আগে কেউ এখানে এসে বিশেষ কিছু খুঁজে গিয়েছে। তবে যে-ই আসুক টাকা পয়সার প্রতি তার লোভ লালসা ছিলনা। তাহলে এগুলো লুটপাট করে সব নিয়ে যেত।
সিদ্দীক কে বললাম, এখানে সোনা গহনা এবং নগদ ক্যাশ যা আছে সব প্যাক করো, আমাদের নিতে হবে এগুলো।
বাবুমিয়া এববগ সিদ্দীক দুজনেই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। হয়ত আমার পারসোনালিটির সাথে এমন একটা কথা মানানসই নয়। সিদ্দীক বললো, বস, আপনে আমাকে চুরি করতে বললেন!
বললাম, চুরি নয় সিদ্দীক,
অপ্রয়োজনীয় ভাবে ফেলে রাখা প্রয়োজনীয় জিনিস ভালো পথে ব্যয় করাটা একটা ভালো কাজ। কথা বাড়ানোর সময় নেই৷ যা বলেছি, দ্রুত করো।বাবুমিয়া এগিয়ে এসে বললো, এগুলো আমি প্যাকেট করার কাজ করি। তোমরা অন্য কাজ সেরে ফেলো।
সিদ্দীককে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার ম্যাডামের বেডরুম পর্যন্ত তোমার আসা যাওয়া ছিলো সিদ্দীক। তিনি তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কোথায় রাখতেন,তা নিশ্চয়ই জানো তুমি।
সিদ্দীক আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তার বক্স খাটের সাথে লাগোয়া একটা ড্রয়ার আছে,ডান পাশেই৷ ওটার ভেতরে তিনি তার ঔষধের প্রেসক্রিপশন সহ সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখতেন।
একটু খুঁজতেই পেয়ে গেলাম ড্রয়ারটি। কিন্তু সেখানেও কেউ কিছু খুঁজে গিয়েছিলো। সবকিছু ছড়ানো ছিটানো। কয়েকটি ঔষধের পাতা, আর কিছু তেলাপোকা ছাড়া ড্রয়ারে কিছুই ছিলোনা৷ সিদ্দীককে জিজ্ঞেস করবো, আর কোথায় তোমার ম্যাডাম তার কাগজপত্র রাখতে পারেন?
কিন্তু এ প্রশ্নটি করার জন্য পেছনে ঘুরে দেখি সিদ্দীক সেখানে নেই৷ বাবুমিয়ার ও টাকাপয়সা এবং গহনা প্যাকিং করা শেষ। তিনি এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সিদ্দীক কোথায়?
সে আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গিমায় মুখ বড় বড় করে বললো,
সে কি! আমি তো এগুলো প্যাকিং করায় ব্যস্ত ছিলাম। সিদ্দীক তো ছিলো তোমার কাছেই। আমি কিভাবে বলবো!
না বলে এভাবে হুট করে গায়েব হয়ে যাওয়াটা আমার পছন্দ হলোনা।
এটলিস্ট আমাকে বলে যেতে পারতো।
হুট করে কোথায় চলে গেল! নাকি অন্য কোন বিপদ হলো সে সন্দেহটাও আমার মাঝে দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
অন্ধকার বড়ই অদ্ভুত বিষয়। এখানে নিশ্চুপে অনেক অদ্ভুত কিছু ঘটে যেতে পারে। কিন্তু এখন এমন একটা অবস্থা, শুধু অদ্ভুত নয় আমাদের সাথে চরম খারাপ কিছু ঘটে গেলেও আমাদের কিছু করার বা বলার নেই। সবটাই ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে হবে।
বন্ডেজ ক্লাবে ঢোকার জন্য যে এক্সেস কার্ডটি দরকার হয়, সেটি খুঁজতে এখানে আসা অথচ এখানে আসার পরে নতুন কতকিছুর সম্মুখীন হয়ে গেলাম।
কোথায় কার্ডটি থাকতে পারে চিন্তা করতে করতে কোন সমাধান খুঁজে পেলাম না।
এখানে যে বা যারা আগেও কোনকিছু খুঁজে গিয়েছে তারাও কি আমার মত এ কার্ডটি খুঁজেছে! যদি এটাই খুঁজে থাকে এবং পেয়ে নিয়েও যায় তাহলে আমার আশায় গুড়েবালি।
হুট করেই কাঠের একটা ওয়ারড্রবের উপরে চোখ গেলো।
ওয়ারড্রব দেখে মাথায় আসলো,জামাকাপড় এর কথা। সিদ্দীক এর মালকিন তো বেশ মোটা ছিলো, তিনি ঢোলাঢুলা জিন্সের প্যান্ট পড়তেন। ঐ প্যান্টের পকেটগুলো খুঁজে দেখা যেতে পারে।
যেরকম ভাবা সেরকম ই কাজ আগালাম।
তবে ওয়ারড্রবের জামাকাপড় না ঘেটে বাইরের হ্যাংগারে ঝুলতে থাকা বড় বড় জিন্সের প্যান্টের পকেটগুলো চেক করতে শুরু করলাম। বেশ কয়েকটা প্যান্ট চেক করার পরে নিরাশ হতে হলো আমাকে।
কিছুই খুঁজে পাইনি কিছু খুচরো টাকা ছাড়া।
পকেটে মাত্র খুচরো বিশ টাকা পাওয়া গেল।
টাকার সাথে সাথে মনে আসলো,মানিব্যাগের কথা।
আরে হ্যাঁ। মেয়েরা তো টাকা বা কাগজপত্র তাদের পার্সে রাখে।
এদিক সেদিক চোখ বুলাতেই একটা ক্রিম কালারের পার্সের দিকে আমার নজর গেল।
ওয়ারড্রবের উপর থেকে পার্স নিয়ে সেটার ভেতর তল্লাশী চালানোর পর বেশ কিছু কার্ড উদ্ধার করলাম, এর ভেতর ক্রেডিট কার্ড, ভিসা কার্ড এবং আমার কাঙ্ক্ষিত বন্ডেজ ক্লাবের কার্ডটির ও দেখা পেয়ে গেলাম। যা ছিলো সবকিছু সহ পার্সটি নিজের কাছে নিয়ে নিলাম।
এবার আমাদের বের হওয়ার পালা।
সিদ্ধান্ত নিলাম মেয়েটিকে আমাদের সাথে নিয়ে যাব।
এ সময়টাতে সিদ্দীককে আমাদের খুব প্রয়োজন ছিলো।
কিন্তু ওকে খোঁজার মত ফুসরৎ নেই, চিৎকার করেও ডাকা যাবেনা।
ধরা পরে যাওয়ার ভয় আছে।
আমার হাতে যা ছিলো তার সবকিছু বাবুমিয়ার কাছে তুলে দিলাম।
নিজের কাঁধের উপরে তুলে নিলাম মেয়েটিকে। মনে হলো পাটখড়ি দিয়ে বানানো কোন পুতুল কাঁধে তুলে নিয়েছি। এতটাই হালকা। আমার মনে হচ্ছে, এখান থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে মেয়েটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
দ্রুত পায়ে, হেঁটে উপরের তলায় উঠে গেলাম। জানালা থেকে বের হয়ে মেয়েটিকে নিয়ে নিচে নামাটা খুব বড় রিস্কের ব্যাপার হবে। কিন্তু চেষ্টায় কোন কমতি রাখা যাবেনা।
যখন আমি ও বাবুমিয়া জানালা থেকে বের হওয়ার জন্য জানালার কাছাকাছি চলে আসলাম,
দেখতে পেলাম বাড়ির গেটের সামনের রাস্তায়, বেশ কয়েকটি পুলিশের গাড়ি দাঁড়ানো।
তাদের গাড়ি থেকে বিচ্ছুরিত হওয়া, নীল লাল লাইটের আলোয় আমাদের চোখ তাঁতিয়ে উঠলো।
চলবে...
Writer:- হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ