পুলিশের গাড়িগুলো লোহার মেইন ফটকের সামনের রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে আছে। আমরা জানালার পেছন থেকে পেছনে সরে এসেছি। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটার দিকে কেউ একজন বেশ কয়েকবার টর্চ লাইট মারলো।ভয়ে আমাদের দুজনের ই অবস্থা খারাপ। একেতো বিছানার উপরে দুটো লাশ, তার উপর সাথে একজন অর্ধমৃত মেয়ে। যদি এ অবস্থায় ধরা পরি৷ ফাঁসির দঁড়িতে ঝুলতে হবে আমাদের সবাইকে।
আশ্চর্যজনক ভাবে আমাদের মাঝে তখন অর্ধগলিত লাশ নিয়ে কোন প্রকারের ভয়ভীতি কাজ করছেনা। লাশ দুটো থেকে বের হতে থাকা গন্ধটাও মানিয়ে গেছে।
নিঃশ্বাস আটকে দুজনে চুপচাপ বসে রইলাম বেশ কিছুক্ষন।
এ বাড়িটার মূল গেটে মস্ত বড় এক তালা ঝুলানো থাকায় এবং পরিত্যক্ত হওয়ায় পুলিশের লোকজন আর এদিকটায় ঘাটালো না। তবে ঐ এলাকার নাইট গার্ডের সাথে তাদের বেশ কয়েকজন৷ অনেক সময় নিয়ে কথা বললো।
হয়ত সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংগার জন্য ইনভেস্টিগেশন করতে এসেছে।
দুজনেই দাঁতে দাঁত চেপে উত্তেজনায় কাঁপা-কাঁপি করছিলাম, এমন সময়ে কাঁধের উপর একটা ঠান্ডা শীতল হাতের স্পর্শ পেলাম। আমার গা শিওরে উঠলো। কিন্তু কিছু বলার মত পরিস্থিতি ছিলোনা। কানের কাছে ফিসফিসানি শব্দ শুনতে পেলাম-
বস আমি সিদ্দীক।
সিদ্দীকের মাথার উপর একটা চাটি মেরে জিজ্ঞেস করলাম, "কোথায় গিয়েছিলে আমাকে না বলে বেয়াদব!"
সিদ্দীক মাথায় হাত ডলতে ডলতে, বলল বস আমি তো ছলনার ছবি খুঁজতে গিয়েছিলাম।
" আমাকে বলে যেতে পারলেনা!"
বস আপনি কাজে বিজি ছিলেন তাই না বলেই চলে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম দু মিনিটে চলে আসব। কিন্তু ছলনার ছবি দেখে আমি ইমোশন কন্ট্রোল না করতে পেরে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম। তাই আসতে দেরি হলো।
হঠাৎ আমাদের সাথে করে নিয়ে আসা মেয়েটি পানি- পানি করে কোঁকাতে লাগতো। সিদ্দীক দৌঁড়ে নিচে চলে গেলো পানি আনতে। পুলিশের গাড়িগুলো গেটের রাস্তা থেকে সরে গিয়েছে।
কিন্তু জার্মান শেপার্ড কুকুরটাকে সাথে নিয়ে ওখানকার নাইট গার্ড ঘন ঘন চারদিকটা টহল দিচ্ছিলো।
সিদ্দীক পানি এনে দেয়ার সাথে সাথে মেয়েটি ঢকঢক করে বেশ অনেকখানি পানি পান করলো।
তবে ওর গায়ের শক্তি এতটাই কমে গিয়েছিলো যে মুখ দিয়ে দুটো শব্দ উচ্চারণ করার মত ও পরিস্থিতিতে ছিলো না। পানি খেয়ে চুপচাপ মরার মতই পরে রইলো। প্রথমে আমি সিদ্দীক কে দড়ি বেয়ে নিচে নামতে বললাম।
তারপর বাবুমিয়াকে এবং সবশেষে নামার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি। সিদ্দীক ও বাবুমিয়া নেমে যাওয়ার পরে যখন কাঁধে মেয়েটিকে নিয়ে নামতে গেলাম, বুঝলাম যে ওজনে হালকা হলেও একজনকে কোলে নিয়ে দঁড়ি বেয়ে উপর থেকে নিচে নামা কতটা কষ্টকর। হাত পায়ের চামড়া উঠে গিয়েছে বেশ কয়েকজায়গা থেকে,
মনে মনে ভাবলাম! এই মেয়েটিকে তো ফেলে আসলেও পারতাম। একে সাথে করে নিয়ে আসার কারণ কি! শুধুমাত্র দায়িত্ববোধ নাকি রহস্য সমাধান এর চেষ্টা!
অতি কষ্টে মেয়েটিকে সাথে নিয়ে নিচে নামলাম।
এবার আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়ার পালা।
আসার পথে ব্যাকইয়ার্ড এ বাবুমিয়া একটা নর্দমার মত জায়গা খুঁজে পেলো।
হুট করেই সে নর্দমাটির কাছে গিয়ে দু-হাতে কাদা নিয়ে গায়ে মাখা শুরু করে দিলো। তার এমন আচরণে আমি এবং সিদ্দীক হতবাক হলাম।
বাবুমিয়া আমাদের অবস্থা বুঝতে পেরে নিজে নিজেই বললো,
' কুকুরের ঘ্রাণ শক্তি অনেক বেশি থাকে। আমরা সবাই গায়ে কাঁদা মেখে ওর সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেও ও আমাদের ঘাটাবে না। কারণ ভেজা কাঁদা গায়ে মাখলে শরীর থেকে বিচ্ছুরিত হওয়া ঘ্রাণ নষ্ট হয়ে যাবে।
আর কুকুরটিও অপরিচিত ঘ্রাণ পেয়ে আমাদের ঘাটাবে না।
বলে সে আরো বেশি করে কাদা দু হাতে নিয়ে পুরো গা ঢেকে ফেললো। শুধুমাত্র চোখ ছাড়া তার আর কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। পেছনের গেট থেকে আমাদের সবার আগে সে বের হলো,
এবং আমাদের বললো আমরাও যেন কাদা মেখে তার পেছন পেছন আসি।
বাবুমিয়া দু হাত দুদিকে ছড়িয়ে ভাব নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মেইন রাস্তায় চলে গেলে। ওখানে কিছুক্ষন পর পর ই জার্মান শেপার্ড কুকুরটি এসে ঘুরে ঘুরে টহল দিচ্ছিলো।
কুকুরিটি হুট করেই রাস্তার মাঝে এমন অদ্ভুত ভাবে একটা লোককে হাঁটতে দেখে মুখ নিচু করে ঘরঘর করতে শুরু করলো। আমরা চাপা স্বরে বাবুমিয়াকে ডাকলাম। কিন্তু কাদা মাখার সময়ে হয়ত উনি ওনার কানের ফুটো ও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাই কুকুরের ঘরঘর কিংবা আমাদের ডাক কিছুই উনি শুনতে পান নি।
কুকুরটি যখন দৌড়ে এসে ওনার পেছন বরাবর কামড়ে ধরলো, তখন উনি বুঝতে পারলেন কাঁদা মেখেও পার পাওয়ার উপায় নেই। কিন্তু একটা উপকার হয়েছে৷ কাদার বাজে স্বাদ জিহবায় লাগায় কুকুরটি কামড় বসানো দাঁত উঠিয়ে নিয়ে এদিক সেদিক মাথা ঝাঁকি দেয়৷ এ সুযোগে মোটা পেটটি দু হাতে চেপে ধরে ঝেড়ে দৌড় লাগায় বাবুমিয়া।
একটু পর ফোনের ভিডিও অন করে পেছন পেছন দৌড়াতে শুরু করে নাইট গার্ডের লোকটিও। সামনে বাবুমিয়া, পেছনে কুকুর এবং তার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে নাইটগার্ড। কিছু সময়ের মধ্যেই রাস্তাটি পুরো ফাঁকা হয়ে যায়৷ সিদ্দীক ও আমি সময় নষ্ট না করে দ্রুত মেয়েটিকে কাঁধে নিয়ে বের হয়ে রাস্তার উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করি।
বেশ কিছুক্ষন হাঁটার পরে ভাগ্য সহায় হয়। একটা সি এন জির দেখা পেয়ে যাই আমরা। দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। বাবুমিয়াকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছিলো তবে আমাদের হাতে আর কোন উপায় ও ছিলনা।
সিদ্দীক এমন চিন্তার সময়ে বলে উঠলো,
বস আমার মনে হয় বাবুমিয়া পা* দিয়েছিল। যার গন্ধেই কুকুরটি টের পেয়ে ওনার পেছনে কামড়ে ধরে।
সিদ্দীককে ধমক দিলাম!
কি বলছো এসব!
বিরক্ত প্রকাশ করলাম এবং বললাম, ওয়াচ ডগরা শুধুমাত্র অপরিচিত ঘ্রাণ নয়, অদ্ভুৎ চলন - বেশবুশা এবং অপরিচিত শব্দতেও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।
আমি এটা আগেই জানতাম। কিন্তু বাবুমিয়াকে নিষেধ করিনি কারণ আমি জানতাম ধাওয়া দিতে বাবুমিয়ার পেছন পেছন নাইট গার্ড ও কুকুর দুটোই ছুটে যাবে এবং আমাদের রাস্তা ফাঁকা হয়ে যাবে।
,
,
সিদ্দীক আমার কথা শুনে কি বুঝলো, না বুঝলো তা আমি বুঝতে পারলাম না। সে মুখ চেপে কিছুক্ষন হাসলো, এমন অবস্থায় ওর হাসি আমার মোটেই ভালো লাগছে না।
হাসপাতালের সামনে নামার পর পরই দ্রুত গতিতে মেয়েটিকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করার ব্যবস্থা করতে হলো। শহরের হাসপাতাল এবং খাবার হোটেলগুলোই শুধুমাত্র সারারাত খোলা থাকে।
কিন্তু ক্লিনিকগুলোতে এভিডেন্স ও কাগজপত্র ছাড়া রোগী ভর্তি করানোটা আজকাল খুব টাফ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোতে আবার টাকা কথা বলে।
ভাগ্যিস বাবুমিয়ার কাছ থেকে টাকার ব্যাগটি আমি আগেই নিয়ে রেখেছিলাম।
আপাতত সব ঝামেলার একটা ছোট ইতি হয়েছে। তবে বাবুমিয়াকে দ্রুত উদ্ধার করতে হবে আমাদের এবং যেহেতু বন্ডেজ ক্লাবের এক্সেস কার্ডটি হাতে পেয়েছি,
খুব দ্রুত আবার পা রাখতে হবে পেইনফুল সেক্স, মাদকাসক্ত এবং সমকামীদের গোপন আস্তানায়। হাতে নষ্ট করার মত সময় একদম ই নেই।
আমার কন্যা এবং স্ত্রী অন্য একজনের হাতে বন্দী। অন্য একজন বলতে তার ই সাবেক প্রেমিকের কাছে বন্দী।
আল্লাহ না করুক, ফারহান যেন সাবিহার উপর কোন প্রকার যৌননির্যাতন না করে এটুকুই আমার প্রার্থনা।
মনে মনে বললাম, একটু ধৈর্য্য ধরো সাবিহা, আমি আসছি। খুব দ্রুত আমি তোমার কাছে আসছি।
উত্তরার একটা বিষয় আমার খুব ভালো লাগে,
তা হলো রাত তিনটা বাজুক আর চারটা হাউজবিল্ডিং মোরে নর্থ টাওয়ার এর পাশে সব সময় টং দোকান খোলা পাওয়া যায়। চা - সিগারেটের, হট পেটিস আর পোড়ানো ভুট্টার মত মুখরোচক স্ট্রিট ফুড রাতভর বিক্রি করে দোকানীরা।
সিদ্দীককে নিয়ে চলে গেলাম সেখানে।
গরম ধোয়া ওঠা দুধ চায়ের ভেতর পাউরুটি চুবিয়ে খেতে খেতে দুজনেই ভেবে চলেছি,
"কুকুরের ধাওয়া খেয়ে বেচারা বাবু-মিয়ার শেষমেষ কি অবস্থা হলো!"
বেশ কয়েককাপ চা শেষ করার পরে আমাদের রাত ও শেষ হয়ে আসলো। অদূরের মসজিদ থেকে ভেসে আসলো ফজরের আযানের ধ্বনি।
নির্ঘুম রাত কাটানোর অভ্যেস সিদ্দীকের না থাকলেও আমার ছিলো। তবে আমাদের উপর থেকে যে পরিমাণ ধকল গিয়েছে, মনে হচ্ছিলো ঘুমে ও ক্লান্তিতে রাস্তার উপরে পরে যাব দুজনেই।
বাংলাদেশ মেডিকেল থেকে মেয়েটির আপডেট জানার জন্য গেলাম।
ডাক্তাররা আমাদের দিকে বারবার সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে।
হুট করে মাথায় একটা বিষয় চলে আসলো।
মেয়েটির জ্ঞান ফেরার পরে যদি ডাক্তারদের কাছে কোন উল্টাপাল্টা স্টেটমেন্ট দেয়,তাহলে আমরা অকারণেই ধরা পরে যাব। সুতরাং মেয়েটির চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সব টাকা পরিশোধ করে এখান থেকে সটকে পড়াই ভালো।
মেয়েটিকে প্রয়োজনীয় ঔষধ এবং কিছু ফলফলাদি কিনে দিয়ে আমি ও সিদ্দীক বাসার উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেই।
বাবুমিয়াকে নিয়ে ভেতরে ভেতরে প্রচুর টেনশন কাজ করছিলো আমার। কারণ এমনটাও হতে পারে জার্মান শেপার্ড কুকুর এবং নাইটগার্ড বাবুমিয়াকে পাঁকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।
এমনটা না হলেই বেশ ভালো হবে। কারণ বাবুমিয়া ধরা পরে যাওয়াটাও আমাদের জন্য বিপদের।
ক্লান্ত শ্রান্ত শরীরে আমি এবং সিদ্দীক ব্যাগভর্তি টাকা ও সোনা-গহনা নিয়ে একটা শপিংমল এ ঢুকি। দুজনের জন্য দুটো ভালো মানের স্মার্ট-ফোন,জুতা, বেশ কিছু জামাকাপড় এবং নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্য সামগ্রী কিনে রওনা দেই বাসার উদ্দেশ্যে।
ফেরার পথে একটা হোটেল থেকে গরম ভাত এবং ঝোল করে রান্না শোল মাছ পার্সেল করে নিয়ে নেই।
অনেকদিন পরে আয়েশ করে প্রিয় খাবার খাওয়া হবে আজ।
রুমে ঢোকার পরে দুজনেই গোসল করে ফ্রেশ হয়ে পেটপুরে খাওয়া-দাওয়া করে লম্বা একটা ঘুমের উদ্দেশ্যে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
যখন আমার ঘুম ভাংগে তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। সিদ্দীকের দিকে তাকিয়ে দেখি ও এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।
ওকে আর ডাকলাম না। রুম থেকে বের হয়ে পায়চারী করতে করতে ফুলগাছগুলোর কাছে গেলাম।
নিয়মিত পানি পেয়ে বেশ সুন্দর ফুল ফুটেছে গাছগুলোতে। জিনিয়া, গ্যাজনিয়া, হাসনাহেনা, রেইন লিলি পর্তুলিকায় গিজগিজ করছে পুরো ছাদ।
সুন্দর সুরভিত ঘ্রাণে মনটা মুহুর্তেই ফুরফুরে হয়ে গেলো। এমন একটা ফ্রেশ পরিবেশ আরো বেশি উপভোগ্য করে তুললো অসম্ভব মিষ্টি একটা হাসির শব্দ।হাসির শব্দটি অনুকরণ করে পেছনে তাকাতেই দেখতে পেলাম সাদা পোলো টিশার্ট এবং জিন্স পরিহিত সেই মেয়েটিকে, যাদের বাড়িতে আমরা ভাড়া উঠেছি। সাথে প্লুটো নামের কুকুরটাও রয়েছে। মোবাইলের স্ক্রিনে নজর দিয়ে একনাগাড়ে হেসে যাচ্ছিলো মেয়েটি।
আমাকে দেখে হাসির স্রোতে কিছুটা বাণ টেনে বললো, কি খবর ভাইয়া?
কেমন আছেন?
- জ্বী ভালো।
- আপনাদের সাথে পরে আর কথা হয়নি। আসলে সময় করে উঠতে পারিনি। এজন্য দুঃখিত।
- না ঠিক আছে। আসলে আমরাও একটু ব্যস্ততার ভেতরে ছিলাম।
- কোন সমস্যা হলে জানাবেন।
- আপনার সাথে যোগাযোগ করার উপায়?
- আমাকে না। আমাদের বাড়ির কেয়ারটেকার কে জানাবেন ও আপনাদের যে কোন সমস্যায় সাহায্য করবে। আমি বলে দিয়েছি। তবে আপনি আমার ফোন নম্বর রাখুন।
কখনো গল্প করতে ইচ্ছে হলে ফোন দিবেন।
- জ্বী। দিন।
হাত থেকে ফোনটি নিয়ে নিজের নম্বর টাইপ করে দেয় মেয়েটি।
আমি ফোনটি হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি নামে সেভ করবো?
উত্তরে জানালো,
- অস্পৃশ্য সারিকা ।
অস্পৃশ্য সারিকা? পুরোটাই আপনার নাম?
- "নাহ পুরোটা আমার নাম না। আমার নাম শুধু সারিকা।
এখনো অস্পৃশ্য হয়ে উঠতে পারিনি৷ তবে শীঘ্রই হব।"
কথার আগা মাথা বুঝলাম না।
কি উত্তর দিব, তা ভেবে না পেয়ে বলে ফেললাম, আপনার হাসি সুন্দর।
মেয়েটি জবাব দিলো - আপনি আমার হাসি দেখেছেন?
- একটু আগেই দেখলাম।
- আর বলবেন না, একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সম্প্রতি, একটা ইয়া মোটা চোর কিছু একটা চুরি করে গায়ে কাঁদা মেখে পালাচ্ছিলো। একটা কুকুর পেছন পেছন ধাওয়া করে তাকে ইচ্ছেমতো কামড়েছে।বেচারার পেট ধরে দৌড়ানোর সে ভিডিও দেখলে মৃত মানুষ ও হেসে উঠবে।
মনের অজান্তেই বাবু মিয়ার কথা স্মরন হলো।
আমি বললাম, দেখি ভিডিওটা..
স্ক্রিনে স্পষ্ট করে দেখতে পেলাম,
বাবু মিয়া পেট ধরে দৌড়াচ্ছে। পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে এবং ক্রমাগত কামড় দিয়ে যাচ্ছে জার্মান শেপার্ড কুকুরটি।
বাবুমিয়া ও কুকুরের পেছনে যে দৌড়াচ্ছে সে ই ভিডিওটা করেছে। মানে ঐ নাইটগার্ড হারামজাদার কাজ এটা।
ভিডিওটা মাত্র ২৪ সেকেন্ডের। কিন্তু হাজার হাজার লাইক ও শেয়ারের বন্যা বয়ে গেছে।বাবু-মিয়া এখন কোথায় কিভাবে আছে তাও জানা নেই। দুশ্চিন্তায় কপালে ভাজ পড়লো আমার।
- কি ব্যাপার আপনার হাসি পায়নি?
- না। আমার বরং কান্না পাচ্ছে।
- কেনো?
- এই লোকটি আমার বন্ধু। আর উনি কোন চোর নয়। গায়ে কাঁদা মেখে কুকুরের সামনে দিয়ে হাঁটলে কুকুর কামড়ায় কিনা সেটা এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়েই বেচারার এই হাল হয়েছে।
- আপনি সত্যি বলছেন?
- হ্যাঁ। ওকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে, কোথায় আছে কেমন আছে, কিছুই খোঁজ পাইনি।
- এটা কোন ব্যপার হলো। আপনি দশ মিনিট পর নিচে আসুন। ওনাকে খুজতে বের হব।
- না থাক, সমস্যা আছে।
- কি সমস্যা আমাকে খুলে বলুন।
মেয়েটির সাথে কথা বলে আমি অনেক কনফিডেন্স পেলাম মনে মনে। ওকে বিশ্বস্ত একজন মানুষ মনে হলো। সবথেকে বড় কথা মেয়েটি অভাবে নেই। যারা অভাবে থাকেনা তারা মানুষকে অকারণে বিপদে ফেলে না। বরং সেধে এসে সাহায্য করে।
"আপনাকে আমি খুব মজার একটা গল্প বলতে পারি।
গল্পটা আমার জীবনের, যদিও শুনলে বাস্তব বলে মনে হবে কিনা আমি জানিনা। তবে বিশ্বাস করা না করা আপনার ব্যপার। "
সারিকাকে বেশ আগ্রহী দেখা গেল। ও নিচের দিকে যেতে যেতে বললো, আপনি রেডি হয়ে নিচে আসুন। আমরা একসাথে আপনার বন্ধুকে খুঁজব। খুঁজতে খুঁজতে গাড়িতে বসেই আপনার গল্প শুনব।
সারিকা নিচে চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আমি রুমে ঢুকে সিদ্দীককে ডেকে তুললাম।
চোখ ডলতে ডলতে ও জেগে উঠল। চারদিক তখন অন্ধকার হয়ে গেছে।
তড়িঘড়ি করে উঠে জিজ্ঞেস করলো,
-এখন কয়টা বাজে?
- সময় যতই হোক, প্রেসার নিওনা।
রুমের চাবি দিয়ে গেলাম। আমি দেখি বাবু মিয়ার ব্যপারে কি করা যায়। তুমি ঘরদোর গুছিয়ে পরিষ্কার করে রেখো।
- আমাকে নিবেন না?
- উঁহু, তুমি এখন মহিষের মত ঘুমাও। আমি গেলাম।
- আচ্ছা স্যার।
সিদ্দীক আচ্ছা ঘুমাচ্ছি স্যার,
বলে ফোন নিয়ে বসে গেলো।
জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যপার ঘুমাই বলে এখন আবার ফোন টিপছো কেনো?
সিদ্দীক জানালো সে গুগলে সার্চ দিচ্ছে কিভাবে মহিষের মত ঘুমানো যায়।
ওর কথা শুনে হাসব না কাঁদব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বোঝাবুঝির মত সময় ও হাতে নেই।
বন্ডেজ ক্লাবের এক্সেস কার্ড টা পকেটে নিয়ে নতুন কেনা জিন্স, শার্ট, ঘড়ি, স্নিকারস শরীরে চাপিয়ে পরিপাটি হয়ে রওনা দিলাম।
সাথে নগদ ক্যাশ রাখা ভালো। তাই বের হওয়ার আগে বেশ কিছু টাকাও সাথে নিলাম।
নিচে পৌঁছে দেখি বাসার কেয়ারটেকার আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। হুট করে গেটাপে এত চেঞ্জ দেখে ভ্রু কুঁচকে আমার আপাদমস্তক দেখে নিলো সে।
তাকে অনুসরণ করে এগিয়ে যেতেই দেখলাম "ফেরারি এফ ফর-থ্রি-ও" স্পোর্টস কার নিয়ে অপেক্ষা করছে সারিকা। গাড়িটির হুড ওপেন করা। ড্রাইভারের সিটে সারিকা বসা। পেছনের সিটে প্লুটো। সামনের সিট ফাঁকা রাখা হয়েছে আমার জন্য।
গাড়িতে চেপে বসলাম।
বসার পরে সারিকা বললো, বাবু মিয়াকে উদ্ধার করতে হবে দ্রুত। কোথায় যেতে হবে বলুন।
ওকে সিদ্দীকের ম্যাডামের বাসার সামনের রাস্তার কথা জানালাম। ওখানের নাইট গার্ডটি ই ঐ ভিডিও ধারণ করেছিলো।
সারিকা গাড়ি স্টার্ট দিলো।
ও খুব দ্রুত গতিতে গাড়ি চালায়।
প্লুটো পেছনের সিটে বসে বেশ ভালোই উপভোগ করছে। কিন্তু সারিকার দ্রুত গতিতে গাড়ি টানা এবং মাঝে মাঝে হার্ড ব্রেকের চক্করে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো।
ও কানে হেডফোন গুজে গাড়ি চালাচ্ছে। আমার পুরো ঘটনা খুলে বলার জন্য মনে মনে যে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম তা ভেস্তে গেল। কারণ আমি ওর কাছে আমার লাইফ স্টোরি শোনার জন্য কোন আগ্রহ দেখছিনা।
সেন্টি খেয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বসে রইলাম।
ঢাকার রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হলে যে কমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আমরাও সে সমস্যাটার ভেতরেই পড়লাম।
চিরাচরিত জ্যাম।
জ্যামের ভেতর কিছুক্ষন বসে থাকার পরে সারিকা নিজ থেকেই বললো, বেশ বোরিং লাগছে। বোরিং সময়টা কাটানোর জন্য আপনার লাইফ স্টোরি শোনাটা খুব জরুরি।
বলে ফেলুন। তবে বাড়িয়ে বা বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলবেন না।আমি মিথ্যাবাদীদের ঘৃণা করি।
-বেশ।
অতঃপর আমি সাবিহার সাথে আমার পরিচয় পর্ব থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমার সাথে যা কিছু ঘটেছে সবকিছু ঘন্টাখানেক সময় নিয়ে বিস্তারিত খুলে বললাম সারিকার কাছে। সারিকা গভীর মনোযোগ দিয়ে সবকিছু শুনলো।
সবকিছু শোনার পরে ও একটা কথাই বললো- আপনার জীবনের গল্পের উপসংহারটুকু এখনো বাকি। আপনি চাইলে আমি শেষ অংশটুকুতে অংশগ্রহণ করতে পারি।
মনে একটা খুশির ঢেউ বয়ে গেল। যেমন ই হোক, বাবু মিয়া, সিদ্দীক, আমি, সারিকা মিলে আমাদের একটা ছোটখাটো টিম হলো।
আমাদের টিমের নাম কি দেয়া যায়! টিম বুলেট! টিম ব্লাক, নাকি অন্য কিছু!
- কি ভাবছেন?
- ভাবছি আমাদের ছোটখাট একটা টিম হলো আমি সিদ্দীক তুমি বাবুমিয়া।
- আরো একজন আছে।
- কে?
- আমার প্লুটো।
- বেশ আমাদের টিমের নাম টা তবে কি দেয়া যায়?
- উম, ডি স্কয়াড
এটার মানে কি?
- ডেভিল স্কয়াড।
- ডেভিল কেন?
- ONLY Devils can Destroy the Devils..
- Nice name, huh.
কথা বলতে বলতে পৌঁছে গেলাম নাইট গার্ড লোকটির এড়িয়ায়।
সারিকা গাড়ি থামিয়ে ওনাকে বাবুমিয়ার কথা জিজ্ঞেস করলো।
লোকটি হাসতে হাসতে বললো ওনাকে উত্তরা থানার ওসি কাল রাতে পিকাপে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন।
ওখানে দেরী না করে সারিকা গাড়ি নিয়ে ছুটে চললো থানার দিকে।
থানায় ঢুকে একটু খোঁজ নিতেই বাবুমিয়ার সন্ধান পাওয়া গেলো। তাকে পুলিশি নজরদারির মধ্যে চিকিৎসা নেয়ার জন্য একটা প্রাইভেট মেডিকেলে এডমিট করানো হয়েছে। কুকুরের কামড় খেয়ে অবস্থা মারাত্মক হয়ে গেছিলো।
সারিকা ওসিকে বললো,বাবুমিয়া নির্দোষ ওনাকে ছেড়ে দিতে।
ওসি পান চিবাতে চিবাতে বললো, ওনার নামে তো অনেক মামলা দেয়া যায়।
কিন্তু এসব মামলা টামলায় ঠুকিয়ে আমাদের লাভ টা কি বলুন! আমিও চাচ্ছি ওনাকে আপনারা নিয়ে যান আর আমাদের কিছু চা নাস্তার ব্যবস্থা করুন তাহলেই হবে।
-চা নাস্তার বিল কত লাগবে আপনাদের?
-বেশি না, হাজার পঞ্চাশেক হলেই হবে।
- আপনাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়া আমার পক্ষে কোন ব্যপার ই না।
কিন্তু এ টাকা আপনাকে না দিয়ে গরিবদের দিলে কাজে লাগবে। আপনার লজ্জা করা উচিৎ আপনি আইনের মানুষ হয়ে বে-আইনী কাজ করছেন।
- নির্লজ্জ হিসবে আমার একটু নাম-ডাক আছে বৈ কি। তবে আপনার মত সুন্দরীদের মুখ থেকে এমন কথা শুনতে আমি পছন্দ করিনা।
- আমার অনেক কিছুই আপনার পছন্দ হবেনা।
- আর কিছু পছন্দ হোক বা না হোক তোমার সুন্দর ঠোঁটদুটো ভারী পছন্দ হয়েছে আমার।
কথাটা বলার সাথে সাথেই সারিকা টেবিল থেকে পেপার ওয়েট উঠিয়ে সোজা ওসির মুখের উপর ছুড়ে মারে। সাথে সাথে ঠোঁট কেটে রক্ত ছিটকে পরে আশেপাশে।
পকেট থেকে মোবাইল ফোন উঠিয়ে সারিকা ঝটপট একটা নম্বর ডায়াল করে, ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতেই সারিকা চিৎকার করে বলে,
" ভাইয়া, উত্তরা থানার অসি কামরুল আমাকে ইভটিজিং করেছে।"
ওপাশ থেকে ফোন কেটে দেয়া হয়।
হুট করে কয়েকসেকেন্ডের ভেতরে এমন একটা কান্ড এত দ্রুত ঘটে গেল যে আশপাশের সবাই নিরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্রিং ক্রিং করে টেলিফোন বেজে উঠে।কামরুল হোসেনের ফোন রিসিভ করার কথা থাকলেও সে মুখে হাত চেপে বসে থাকায় ফোন রিসিভ করে অন্য একজন।
ওপাশ থেকে কি যেন বলা হলো, যে পুলিশটি ফোন ধরেছে সে বার কয়েক স্যার- স্যার, জ্বী স্যার, জ্বী স্যার বলে যাচ্ছে।
একটু পর ফোন রেখে দিয়ে, কামরুল সাহেব কে বললো, স্যার আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার জন্য নোটিশ আসবে শীঘ্রই। সারিকার দিকে তাকিয়ে লোকটি হাত উঁচু করে স্যালুট দিয়ে বললো ম্যাডাম আপনার গেস্ট কে আমি স-সম্মানে ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছি।
অতঃপর বাবুমিয়ার উপর থেকে আইনি সব ধরনের ঝামেলা চলে গেলো। সারিকা কি যেন একটা পেপারে সাইন করলো। আমাদেরকে বাবুমিয়া যে হসপিটালে এডমিট আছে সেটার ঠিকানা দিয়ে দিলো।
সারিকা বের হয়েই আমাকে বললো, বাবুমিয়ার কাছে আমরা পরে যাব। কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে যে যতটা রিস্কে আছে তার থেকেও বেশি রিস্কি অবস্থায় আছে আপনাদের উদ্ধারকৃত মেয়েটি।আগে ওর কাছে গিয়ে ওর শরীরের কন্ডিশন চেক করতে হবে।
গাড়িতে চেপে বসে আমি ও সারিকা খুব দ্রুত বাংলাদেশ মেডিকেলের দিকে অগ্রসর হতে থাকি।
পথে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
- আপনার ভাইয়া কি করেন?
- ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ বাংলাদেশ পুলিশ।
সারিকার ভাই পুলিশের মহাপরিচালক। এতে করে সুবিধাই হলো। অন্তত প্রশাসনিক একটা ব্যাকাপ আমাদের সাথে আছে।
বাংলাদেশ মেডিকেলে পৌঁছানোর পরে ঐ মেয়েটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া ডাক্তার যখন আমাকে দেখলো রাগে ফেঁটে পড়লো। আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেনি।দায়িত্বহীন মানুষদের সে পছন্দ করেনা আরো কত কিছু বললো,সব কিছুই মুখ বুজে সহ্য করলাম। তবে
মেয়েটির শারিরীক অবস্থা আগের থেকে ভালো। চললাম স্যালাইনটা পুশ করা শেষ হলেই আমরা ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারব। কিন্তু আরো হাজার ত্রিশেক টাকা বিল পে করতে হবে।
সারিকা ও আমি মেয়েটির সাথে দেখা করতে যাই। ও আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিলো শুধু৷ কোন কথাবার্তা বলছেনা।
আমি মেয়েটির কানের কাছে গিয়ে বললাম। আমিই তোমাকে ঐ বাড়িটা থেকে বের করে এনেছি। ভয় নেই তোমার কোন। তবে পুলিশের কাছে বা ডাক্তারদের কাছে তুমি এখনই ঐ বাড়ি বা তোমার সাথে যা ঘটেছে তা নিয়ে কিছু বলবে না৷ তাহলে আমাদের অনেক বড় বিপদ৷তো হবেই, সাথে সাথে আমাদের মিশন ও কম্পলিট হবে না৷
মেয়েটি আমার কথা বুঝলো নাকি বুঝলো না তা জানিনা। তবে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি আশ্বস্ত হলাম। মাঝে মাঝে মানুষের চোখের ভাষা মুখের চেয়েও স্পষ্ট কথা বলে।
.
.
.
চারদিকে পার্টি লাইটের নীল লাল আলো। মেয়েরা ছোট খাট ড্রেস পরে মদ সরবরাহ করছে।
কেউ কেউ চারপাশে একাধিক মেয়ে নিয়ে বসে মদ পানে ব্যস্ত। কেউ আবার নিজের সঙ্গীকে নিয়ে চলে যাচ্ছে নির্দিষ্ট কামরাতে। বন্ডেজ জোনের পাশাপাশি রয়েছে
গে জোন, লেসবো জোন ও।
এখানে মানুষ নিজের দৈহিক অঙ্গের থেকেও ফ্যান্টাসির জন্য বেশি ইউজ করে বিভিন্ন ধরণের সেক্স টয়।
মেয়েদের জন্য রয়েছে ভাইব্রেটর, ডিলডো, চেইন বলস সহ আরো অনেক উপকরণ। একেক টাইপের ফ্যান্টাসির জন্য একেক ধরণের টুলস ইউজ করা হয়। আমার আগ্রহ সব ছাপিয়ে বন্ডেজ জোন এর দিকে।
এখানে মেয়েদের স্পর্শকাতর অঙ্গে আঘাত করার জন্য বিভিন্ন ধরণের উপকরণ পাওয়া যায়। আপাতত বন্ডেজ জোনের কোন কক্ষ ই খালি নেই। আপাতত আমাকে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হবে ওখানে ঢোকার জন্য।
সময় কাটানোর জন্য এক গ্লাস রেড ওয়াইন নিয়ে বসলাম অল্প অল্প করে চুমুক দিচ্ছি আর চারদিকটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখে নিচ্ছি। হঠাৎ আমার চোখ আটকে গেলো একটা সুদর্শন মেয়ের উপরে।
নিজের চোখ দু হাত দিয়ে ঘষে আবারো ভালোভাবে মেয়েটিকে দেখে নিলাম। না, আমি কিছুতেই ভুল দেখছি না।
পকেট থেকে ফোন বের করে ঝটপট একটা মেসেজ টাইপ করলাম।
বেশ অনেক্ষন অপেক্ষা করার পরে বন্ডেজ জোনে ঢোকার সুযোগ হলো। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই মেয়েদের চিৎকার চেঁচামেচিতে কান ভারি হয়ে উঠলো।
ওখানে একদল পারফর্ম করে অন্যদল সিনেমা হলের মত টিকেট কেটে তা উপভোগ করে।
বন্ডেজ সেক্স এর ক্ষেত্রে মেয়েদের বলা হয় স্লেভ এবং ছেলেদের বলা হয় মাষ্টার।
এখানে ছেলেদেরকে উপযুক্ত মাষ্টার রোল প্লে করার ট্রেইনিং ও দেয়া হয়। যারা এখানে মাষ্টার হওয়ার ট্রেইনিং দেয় তাদের ভেতর একজন ছেলেটার নাম পিটার। আমার দরকার ওকেই।
কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজি করার পর ই পিটারকে পেয়ে গেলাম। কিন্তু আমার ধারণা ভুল না হলে পিটার আমাকে খুব ভালোভাবেই চেনে। এবং আমার বিশ্বাস, পিটারকে কোনভাবে হাত করতে পারলেই আমার অনুসন্ধানের শুরুর সুঁতোটা পেয়ে যাবো।
কিন্তু পিটারকে হাত করাটা ভীষণ কষ্টসাধ্য হবে।
মানুষকে দু-ভাবে হাত করা যায়। এক হলো টাকা-পয়সা দিয়ে এবং নারীর লোভ দেখিয়ে নারীর প্রতি পিটারের আকর্ষণ থাকবেনা এটা শিওর। কিন্তু টাকার প্রতি আকর্ষণ থাকাটা স্বাভাবিক। যারা ট্রেইনার হিসেবে কাজ করে তাদের বসবাস এ অন্ধকার জগতেই। থাকা খাওয়া থেকে শুরু করে এখানে সব ধরণের ফ্যাসিলিটিই দেয়া হয় ওদের।
পিটারকে বাগে আনার জন্য কি করা যায় ভাবছি। এমন সময় হঠাৎ একটা আয়ডিয়া আসলো মাথায়।
______________________
মেয়েটির নাম মালিহা। বাবা- মা এবং ও নিজে। এ তিনজনের সাজানো গোছানো একটা ছোট্ট সংসার ছিলো। কিন্তু একটামাত্র ফোনকল ওদের জীবনে যে এমন ধ্বস নামাবে সেটা কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি মালিহা।
মালিহার বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরীজীবি নিজের কষ্টার্জিত টাকাপয়সার সাথে পেনশনের টাকা মিলিয়ে এ শহরেই ছোট একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করেছিলেন। মালিহাদের বাসায়
তবে অফুরন্ত সুখ শান্তির সাথে বসবাস করাটা খুব বেশিকাল স্থায়ী হয়নি মালিহাদের কপালে। হঠাৎ আসা একটা এনোনিমাস ফোন কল বদলে দেয় মালিহাদের জীবন।
সেদিন ছিলো মালিহার জন্মদিন।
মাঝরাতে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে। "শুভ জন্মদিন" জানানোর পরে জানতে চাওয়া হয়,
"what's your untold desire "
মালিহা উত্তরে জানায়,
আমার আব্বু আম্মুর স্বপ্ন পূরণ করাই আমার অব্যক্ত ইচ্ছে।
এ উত্তরটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় মালিহার জন্য।
পরদিন সন্ধ্যায় একটা মাইক্রোবাস আসে।
বাসের সাথে আসে কয়েকজন লোক। ওদের সবার মুখেই কালো মাস্ক পড়া ছিলো। দরজা নক করার পরে যখন মালিহার বাবা দরজা খুলে দেয়, ঠিক তখন ই তার মুখের উপরে একধরণের চেতনা নাশক স্প্রে করে কালো মাস্ক পরিহিতদের একজন। কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই অজ্ঞান হয়ে যান মালিহার বাবা।
এরপর মালিহা এবং তার মাকেও একইভাবে স্প্রে করে অজ্ঞান করা হয়৷ ধীরে সুস্থে সিসি ক্যামেরা ডিজেবল করে সবাইকে ওঠানো হয় মাইক্রোবাসে।
নিয়ে যাওয়া হয় অজ্ঞাত কোন এক জায়গায়৷
সেখানে নানাভাবে অত্যাচার করে হত্যা করা হয় মালিহার বাবা এবং মা কে।
মালিহাকে শুধুমাত্র বাঁচিয়ে রাখা হয়,নিয়মিতভাবে ধর্ষণ এবং শারিরীক অত্যাচার করতে করতে ভীষণ দুর্বল করে ফেলা হয় মালিহাকে।
এর উপরে কোন প্রকার খাবার পরিবেশন না করায় মালিহার শারিরীক অবস্থা আরো অবনতির দিকে চলে যায়।
শুধুমাত্র পানি খেয়ে কোনরকমে বেঁচে থাকে সে।
এ কয়েকদিনে মালিহার বাবা মায়ের লাশ গলে পচে একাকার হয়ে গেছে।
এমন একটি পর্যায়ে হঠাৎ করে ঐ ঘরে আগমন ঘটে সিদ্দীক,শহর এবং বাবু মিয়ার।
মালিহার সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানতে পারলো সারিকা শহর এবং সিদ্দীক।
একটা বিষয় ওরা খুব ভালোভাবে আঁচ করতে পারছে, কোন না কোন ভাবে বন্ডেজ ক্লাবের সাথে সিরিয়াল কিলিং গ্যাং টা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বেশ ঠান্ডা একটা কক্ষ। চারদিকে হিমায়িত বরফের ধোঁয়া উড়ে বেড়াচ্ছে। কক্ষটির ফ্লোরের উপরেও আছে বরফের আস্তরণ। একফোঁটা রক্ত শরীর থেকে বের হয়ে গড়িয়ে পড়ার আগে ঠান্ডা হয়ে জমে যায়, এমন একটা পরিবেশে জামাকাপড় খুলে উদম অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয়েছে পিটারকে।
পিটারের পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে।
নিচের দাঁতের পাটির সাথে উপরের পাটি ধাক্কা খাচ্ছে।
পিটারের পুরুষাঙ্গ ছোট হয়ে একটা কীটপতঙ্গের আকার ধারণ করেছে। পিটারের পিঠের দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে হাসপাতালের রিসিপশনের মেয়েটিকে, যে ফারহানের ক্যান্সারের নাটক সাজাতে সাহায্য করেছিলো।
বন্ডেজ ক্লাবের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ ই মেয়েটির দেখা মেলে। ওকে দেখার সাথে সাথেই আমি সারিকাকে কল দেই। সারিকা তার টার্গেট অনুযায়ী মেয়েটির কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা চালায়।
ক্লাবের ভেতরে একজন আরেকজনের কাছাকাছি যাওয়া বা ক্লজ হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে ড্রিংকস শেয়ারিং।
দু হাতে পিওর ভদকার দুটো কড়া পেগের গ্লাস নিয়ে রিসিপশনের মেয়েটির দিকে এগিয়ে যায় সারিকা।
একটি গ্লাস মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
হেই আই এম সারিকা। নাইস টু মিট ইউ।
মেয়েটি একটু ইতস্তত করে সারিকার কাছ থেকে ড্রিংকস এর গ্লাসটি নিয়ে বলে,
- হেলো আই এম প্রাপ্তি সরকার।
- প্রাপ্তি, সরাসরি ই বলি,আই যাস্ট ক্রাশড অন ইউ। আমি একজন লেসবিয়ান।কিছুক্ষন ধরেই একজন উপযুক্ত পার্টনার খুঁজছিলাম।
আর এ ভীড়ের মাঝে আমার দু-চোখ হুট করেই তোমাকে খুঁজে পেলো। তোমার ফিগার দেখে আমার শরীরে অলরেডি উত্তেজনা ছড়িয়ে গেছে। তুমি চাইলে ব্যপারটা বিছানা পর্যন্ত গড়াতে পারে।
- সারিকা, তুমিও বেশ সুন্দর। কিন্তু আমি আসলে লেসবিয়ান না। আমার রাফ সেক্স পছন্দ। সেটাও কোন সামর্থবান ছেলের সাথে।
- ট্রাস্ট মি, আমি তোমাকে নিরাশ করব না।
তোমার আজ নতুন এক অভিজ্ঞতা হবে। হাত এবং জিহবার কাজে আমি খুব পারদর্শী। আর ভেবনা তোমাকে আমি ফ্রী অফার করছি। প্রতি মিনিট হিসেবে তোমাকে আমি পাঁচ হাজার টাকা করে পে করব।
এত টাকার অফারের কথা শুনে প্রাপ্তির লোভের জীভ থেকে লালা গড়াতে শুরু করলো। এক মিনিটে পাঁচ হাজার টাকা পেলে প্রাপ্তি সারিকার নোংরা জায়গা গুলো ও নিজের মুখ দিয়ে পরিষ্কার করতে রাজি আছে। প্রাপ্তি নিজের মোটা দেহ নিয়ে এতদিন একটা ফ্রাস্ট্রেশন এ ভুগলেও আজ তার নিজের শরীর নিয়ে গর্ব হচ্ছে৷ এই মোটা শরীরের বদৌলতেই সে এখন মিনিটে পাঁচ হাজার টাকা রোজগার করতে যাচ্ছে।
মনে মনে এতটা উচ্ছাসিত হয়েছে সেটা সারিকাকে বুঝতে দেয়না প্রাপ্তি। আমতা আমতা করে রাজী হয়। এমন একটা ভাব নেয় যে মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই সারিকার সাথে লেসবো সেক্স করতে যাচ্ছে।
লেসবিয়ান জোনের একটা কামরায় সারিকা এবং প্রাপ্তি ঢুকে পরে। তবে ওখানে ঢুকতে হলে একটা এগ্রিমেন্ট কাগজে সাইন করতে হয়, তা হলো তারা দুজন একে অপরের পূর্ব পরিচিত এবং বিশ্বস্ত ।
সারিকা এবং প্রাপ্তি কামরার ভেতরে ঢোকার পর একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে। এমন সময় সারিকা হাতের আংগুলের ফাঁকে লুকিয়ে রাখা ইলেক্ট্রিক জ্যাপিং প্রাপ্তির ঘাড়ে পুশ করে। মুহুর্তেই কয়েকবার কাঁপুনি দিয়ে নিস্তেজ হয়ে যায় প্রাপ্তি।
মনে মনে প্রাপ্তিকে দুটো গালি দিয়ে অথরিটিকে ফোন দেয় সারিকা।
ক্লাব ভলান্টিয়ার আসার পর সারিকা বলে , ভাইব্রেটর ডিলডো খারাপ হয়ে শক লেগে অজ্ঞান হয়ে গেছে প্রাপ্তি। ওকে বাইরে নেয়ার কোন ব্যবস্থা করা যাবে নাকি!
সারিকার কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হওয়ায় প্রাপ্তির অজ্ঞান হয়ে পরে থাকা দেহকে ক্লাবের বাইরে নিয়ে সারিকার কাছে হস্তান্তর করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এমন হরহামেশাই হয়ে থাকে অতিরিক্ত বন্ডেজ কিংবা সেক্স টয়ের ব্যবহারে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা অথবা মৃত্যুবরণ করাও।
এটাকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই দেখা হয় এখানে।
খুব সহজে সারিকা প্রাপ্তিকে বাগে পেয়ে যায়৷
আর তারপরই প্রাপ্তিকে নিয়ে আসা হয় D.Squad এর গোপন আস্তানায়।
প্রাপ্তির পর দ্বিতীয় শিকার ছিলো পিটার।
পিটারকে বাগে আনাটা বেশ সহজ ছিলো৷ এক্ষেত্রেও সারিকার ভূমিকা ছিলো মুখ্য। শহর পিটারকে খুঁজে বের করার পরে সারিকা পিটারের সাথে বন্ডেজ ক্লাবেই যোগাযোগ করে।
সারিকা পিটারের কাছে বন্ডেজ সেক্স এর হোম সার্ভিস চায়।
পিটার সারিকার বাসায় গিয়ে সারিকার সাথে বন্ডেজ সেক্স এ লিপ্ত হবে, যদি সারিকা পূর্ণ সেটিসফেকশন পায় তবেই পিটারকে পুরষ্কার হিসেবে অনেক টাকা পে করা হবে।
পিটার এমন একটা অফার পাওয়ার সাথে সাথেই না করে দেয়। কারণ হুট করে ক্লাবের বাইরে সার্ভিস দেয়টা নিরাপদ নয়। তবে বুদ্ধিমান সারিকা পিটারের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, তোমার অনেক নামডাক শুনে তোমার কাছে এসেছিলাম। তোমার আগে কোন ট্রেইনর আমাকে পূর্ণ সুখ দিতে পারেনি। তুমিও হয়ত পারবেনা তাই আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছ!
পুরুষত্ব নিয়ে কথা বলায় পিটারের গায়ে লাগে। সে অনেক বাঘা বাঘা মেয়েকে বন্ডেজ সেক্স করে একদম ঘায়েল করে দিয়েছে আর সারিকা তো ছিমছাম শরীরের সুন্দরী একটা পুতুল। ধরার আগেই ভেংগে যাবে এমন একটা অবস্থা। পিটার সারিকার কাছ থেকে একটা কাগজে সাইন করিয়ে সারিকার বাসার ঠিকানা রেখে দেয়৷
ঠিক সময়মত পৌঁছে যাবে এমন একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেদিনের মত সারিকার কাছ থেকে বিদায় নেয়।
যথাসময়ে যখন সারিকার কথামত পিটার এসে উপস্থিত হয়, সে বুঝতে পারে বড় ধরণের কোন একটা ফাঁদে সে আটকে গেছে।
পিটার এবং প্রাপ্তি, দুজনকেই বন্দি করা হয় ডি স্কয়াড এর টর্চার সেল এ।
টর্চার সেলের কক্ষের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে।
এখানেই জামাকাপড় খুলে দুজনকে পিঠাপিঠি করে বেঁধে রাখা হয়েছে। সারিকা বেশ কয়েকবার পায়চারি করে যাওয়ার পরে টর্চার সেলের ভেতরে ঢুকি আমি।
আমাকে দেখে হাড় শীতল বরফের ভেতরে থেকেও যেন বড়সড় একটা ধাক্কা খায় পিটার। ওর হাত বাঁধা না থাকলে দুচোখ দিয়ে নিশ্চয়ই এখন ও নিজের চোখ ডলতো।
পিটার কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা। কারণ ঠান্ডায় ওর ঠোঁট জমে আছে। সারিকাকে ইশারা দেয়ার সাথে সাথে ও কক্ষের তাপমাত্রা বাড়াতে শুরু করলো।
কিছু প্রশ্ন উত্তর পর্ব এবারে সেরে নেয়া যাক।
একটা চেয়ার টেনে নিয়ে গিয়ে পিটারের সামনে বসলাম।
মাথার উপরে লাল রঙ এর লাইট আবছা আলো বিলিয়ে যাচ্ছে। ওর চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
পিটারকে ঠান্ডা মাথায় বললাম,
ভয় পেওনা পিটার।
তোমাকে শুধুমাত্র কয়েকটা প্রশ্ন করবো।
ঠিক ঠিক উত্তর দিবে। এর বেশি কিছু নয়।
পিটার আমার দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো।
মৌনতা সম্মতির লক্ষন।
পিটারের কাছে আমার প্রথম প্রশ্ন ছিলো-
আমাকে কিভাবে কবে থেকে চেনো?
পিটার- নীড়া ম্যাডামের সাথে আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম। তবে আপনার নাম আমি আরো কয়েকদিন আগে শুনেছি। নীড়া ম্যাডামের কাছেই।
-ফারহান এর সাথে তোমার পরিচয় কিভাবে?
প্রশ্নটা শুনে চুপ হয়ে যায় পিটার। আমি আমার পায়ে থাকা শক্ত বুটের জুতোর তলা দিয়ে ওর পুরু-ষাঙ্গের উপরে চাপ প্রয়োগ করি।
ও ব্যাথায় চিৎকার করে ওঠে।
চিৎকার করতে করতেই বলে,
-নীড়া, নীড়া।
পায়ের প্রেসার হালকা করলাম।
পিটার বলতে শুরু করলো,
ফারহান মূলত কোন কাজ ই করেনা। তবে ও উচ্চাভিলাষী জীবন যাপনে অভ্যস্ত। আর ওর এমন জীবনযাপন করার জন্য প্রচুর টাকা পয়সার দরকার হয়৷ টাকার যোগান দিতে ও টার্গেট করে শহরের ধনী ধনী মেয়েদেরকে।
একটা বিষয়ে সবাই অবগত যে, ক্লাবে যে সকল মেয়েরা আসে তাদের টাকাপয়সার অভাব থাকেনা। অনেকেই বিপুল পরিমান অর্থের মালিক হয়ে থাকে। আর ফারহান এমন মেয়েদের সাথেই যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি করে এবং পরে নানান অযুহাতে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
যেহেতু আমি একজন বন্ডেজ ট্রেইনার, আমার সাথে এমন অহরহ ধনী মেয়েদের যোগাযোগ থাকবে এটা স্বাভাবিক। তাই ফারহান নিজ থেকে এসেই আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং কয়েকজন মেয়েদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার কথা বলে।বিনিময়ে আমাকে বেশ বড় অংকের টাকার লোভ দেখানো হয়৷আমি ফারহানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হই এবং ওকে হেল্প করি। ফারহান এভাবে আমার সাথে জড়িয়ে যায়।
- সেদিন রাতে আমাকে খুন করার জন্য ফারহানের সাথে তুই ও যোগ দিয়েছিলি। আমাকে মারতে চাওয়ার কারণ কি? বল।
- পৃথিবীর সকল অনুভূতির উর্ধ্বে হলো ভালোবাসার অনুভূতি। নীড়ার সাথে বন্ডেজ সেক্স এর সম্পর্ক ছাপিয়ে, আমি ওকে আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু তখন হুট করেই ও আমার সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে এবং বার বার আপনার কথা বলতে থাকে। ও এটাও বলেছিলো আপনাকে মাষ্টার বানিয়ে আপনার সাথেই ও বাকি জীবনটা কাটাতে ইচ্ছুক। আমি এ কথা শোনার পর থেকেই আপনার প্রতি মনে মনে অনেক রেগে যাই। ভালোবাসার টান ছাড়াও নীড়ার ছিলো আমার কাছে এটিএম কার্ডের মত। ওর কাছ থেকে আমি যে কত টাকা নিয়েছি তার হিসেব নেই। কিন্তু আমাদের মাঝে বাঁধা হয়ে আবির্ভূত হন আপনি। তাই আপনাকে ফলো করে মেরে ফেলার প্লান করি। এতে আমাকে সঙ্গ দেয় ফারহান। কারণ ফারহান ও ওর পারসোনাল ইস্যু নিয়ে আপনার উপর ক্ষোভ পুষে রেখেছিলো। ফারহানের সাথে আপনার শত্রুতা কি সেটা আমি জানি না। জিজ্ঞেস ও করিনি কখনো। তবে আমাদের দুজনের উদ্দেশ্য একই ছিলো। আপনাকে আমাদের মাঝ থেকে সরিয়ে দেয়া।
এজন্যই নীড়ার বাসা থেকে বের হওয়ার পরে আপনার উপর হামলা করে তুরাগ নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
পিটারের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ওর ঘাড় বরাবর খুব জোরে একটা ঘুষি দিতেই ও ঘাড় কাত করে অচেতন হয়ে পরে।
এরপর চেয়ার টেনে নিয়ে গিয়ে বসি প্রাপ্তির সামনে।
মেয়েটি স্বাভাবিকের তুলনায় একটু মোটা। অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি খুব শান্তভাবে ওর চোখের উপরে আমার ঘৃণার দৃষ্টি রাখলাম।
ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞেস করলাম,
ফারহান বর্তমানে কোথায় আছে?
- আমি সত্যি ই কিছু জানিনা ফারহানের ব্যপারে।
- হাসপাতাল থেকে একসাথে তিনজন স্টাফ রিজাইন নিয়েছো৷ সবাই ফারহানের কালোকারবারীর সাথে যুক্ত ছিলে এবং টাকার হিসসা ও নিতে। তোমরা না জানলে কে জানবে!
সোজা আংগুলে ঘী না উঠলে আংগুল কিভাবে বাঁকা করতে হয় সেটা আমার ভালো করে জানা আছে।
মেয়েটি বললো, আমি যদি জানতাম, আপনাকে বলে দিতাম স্যার।
সারিকাকে বলি, সারিকা প্রাপ্তির ফোনটা আমাকে দাও।
সারিকা প্রাপ্তির ফোন এনে আমার হাতে দেয়। বার বার লক খুলতে রিকুয়েষ্ট করার পর ও প্রাপ্তি ওর ফোনের লক খুলতে অস্বীকৃতি জানায়। বাধ্য হয়ে ওর গালে কষিয়ে একটা চড় মারতে হলো। এত জোড়ে চড় লেগেছে যে প্রাপ্তি ওহ মা বলে একটা চিৎকার দিয়ে নেতিয়ে পড়লো। বোধ হয় অজ্ঞান হয়ে গেছে। এতটা সময় ধরে হিমশীতল কক্ষে থাকার পরে এমনিতেই ব্লাড সার্কুলেশনের স্পীড কমে লো প্রেসারে ভুগিছিলো। তার উপর এমন একটা চড়!
অজ্ঞান হওয়ায় ভালোই হলো। ওর ফিংগারপ্রিন্ট ইউজ করে সহজেই ফোনের লক খুলে নিলাম। কল লিস্ট চেক করে পেলাম মাত্র একদিন আগেই ফারহানের সাথে ওর কথা হয়েছে। তাও এক দু-মিনিট না। বেশ অনেক্ষন।
প্রাপ্তি তাহলে আমাদের মিথ্যা বলেছে। ওর জ্ঞান আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাক। ততক্ষন আমি কি করব তা ভাবতে ভাবতে প্রাপ্তির ফোনের গ্যালারিতে ঢুকলাম।
ওর ফোনের ভিতর ওর নিজের ই হাজার হাজার ন্যুডস ছবি। এসব ছবি দিয়ে বৃদ্ধ টাকা ওয়ালা লোকদের ফাঁদে ফেলে কিছু টাকা হাতানোর ব্যবস্থা করে প্রাপ্তি। তবে ফারহান বা পিটারের মত বড় দান মারার প্লেয়ার প্রাপ্তি না। ওর দেহের সাইজ দেখে মেয়েদের সংস্পর্শে আসার একদম ই সুযোগ পায়না এমন ছেলে ছাড়া কোন ছেলেই সেক্স করার আগ্রহ পাবেনা।
তবুও প্রাপ্তির ভাগ্যে দু একজন পেডোফাইল টাইপ ধনী লোক জুটে যায়। আর তাদের কাছ থেকে পাওয়া টাকা দিয়েই হাই সোসাইটিতে শো অফ করে ঘুরে বেড়ায় প্রাপ্তি।
যাই হোক ওর জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যেহেতু ফারহানের সাথে খুব রিসেন্টলি ওর যোগাযোগ হয়েছে, সুতরাং ওর কাছ থেকে ফারহানের বর্তমান ঠিকানা উদ্ধার করা সময়ের ব্যপার মাত্র।
তবে মাথা থেকে একটা বিষয় সহজে দূরীভূত হচ্ছে না। তা হলো আন্টোল্ড ডিজায়ার জানতে চেয়ে প্রশ্ন করে যে গ্যাং টি ওদের হদিস এখনো মিললো না। তবে আমাকে যেখানে আটকে রাখা হয়েছিলো সেখানে অভিজান চালালে হয়ত কোন একটা ক্লু খুঁজে পাওয়া যাবে।
বেশ কিছুক্ষন পরে চোখেমুখে পানির ছিটা দিতেই চোখ মেলে তাকায় প্রাপ্তি। ওকে আবারো জিজ্ঞেস করি ফারহানের অবস্থানের ব্যপারে। প্রাপ্তি চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে করতে ফারহানের অবস্থান সম্পর্কে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানায়। যখন নীড়ার সাথে বন্ডেজ সেক্স এ লিপ্ত ছিলাম তখন অত্যাচার চালাতে চালাতে আমার মনে একটা নিষ্ঠুর ইচ্ছে জেগেছিলো,
ওর গালে ধারালো ব্লেড দিয়ে আঁকিবুঁকি করা। সে ইচ্ছেটা পূরণ করার আরেকটা উপায় পাওয়া গেলো।
পকেট থেকে মানিব্যাগে রাখা নতুন ধারালো ব্লেড টা বের করলাম। প্রাপ্তির দিকে একবার তাকানোর পরে মনে হলো ওর গালে না। সুবিশাল স্তনে ব্লেডের কোনা দিয়ে আঁকিবুঁকি করাটাই আমার জন্য বেশি শান্তির হবে। ভাবনা অনুযায়ী আমি ব্লেডের এক কোণা ওর বাম স্তনে গেঁছে এলোমেলো ভাবে টানতে শুরু করলাম। মুহুর্তেই ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসলো। টপ টপ করে ফ্লোরে রক্ত পড়ছে। স্তনের উপর থেকে ব্লেডের পোঁচ চলে গেলো পেটের উপরেও। মুহুর্তেই কয়েকশ রেখায় পরিপূর্ণ হয়ে গেলো ওর পেটের চামড়াটাও।
এর ভেতরে সারিকার থাপ্পড় খেয়ে হুট করে চেয়ার থেকে নিচে পরে গেলাম।
সাথে সাথে শুনতে পেলাম গগনবিদারী চিৎকার করে চলেছে প্রাপ্তি। ব্লেড দিয়ে দেহে রেখা এঁকে দিতে দিতে আমি এমন একটা ঘোরের ভেতরে চলে গিয়েছিলাম,
এতক্ষন ধরে প্রাপ্তির বা সারিকার কোন কথা কিংবা চিৎকার আমার কানে এসে লাগেনি।
সারিকার থাপ্পড়ে আমি ঘোর থেকে বাস্তবতায় পদার্পণ করি। আমার দিকে তাকিয়ে সারিকা বলে, মেয়েটি তো বলেই দিয়েছে সবকিছু। তুমি তবুও ওকে এত নৃশংসভাবে আঘাত করে চলেছো কেনো!
বললাম- দুঃখিত। আমি আসলে ঘোরের ভিতরে ছিলাম প্রাপ্তি কি বলেছে কিছুই শুনিনি।
- সমস্যা নেই। আমি সবকিছু শুনেছি। এবার ওঠো। সময় নষ্ট করাটা আমাদের জন্য ঠিক হবেনা।
প্রাপ্তির শরীর থেকে প্রচুর ব্লাড ঝড়ছে।
এভাবে কিছুক্ষন থাকলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে ও।
সারিকা ওর পরিচিত এবং বিশ্বস্ত একজন সার্জারি স্পেশালিস্ট ডাক্তারের তত্তাবধানে প্রাপ্তিকে রেখে দেয়।
আমি এবং সারিকা আবারো গাড়িতে চেপে৷ বসি।
গাড়ি ছুটে চলে বাবু মিয়াকে মুক্ত করে বাসায় দিয়ে আসার জন্য।
যখন গিয়ে হাসপাতালে বাবুমিয়ার কেবিনে পৌঁছালাম, দেখলাম বাবুমিয়া উপুর হয়ে শুয়ে আছে। সে চিৎ হয়ে শুতে পারেনা। বসতে পারেনা এমনকি বিশেষ কাজেও তার গুরুতর সমস্যা হয়। আমাকে দেখা মাত্রই বাবুমিয়া আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লো। সারিকাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম বাবুমিয়ার সাথে।
এটাও বলে দিলাম, সে সব ধরণের আইনি ঝামেলা থেকে মুক্ত।
বাবুমিয়া আনন্দে সারিকার হাত ধরে কেঁদে দিলো। এত ইমোশনাল মানুষ আমি দুনিয়ায় কম দেখেছি। বাবুমিয়াকে আমাদের সাথে করে নিয়ে আসলাম।সে আমাদের সাথে বেশ কিছু সময় ব্যয় করে নিজের বাসায় চলে যায়। সারিকা গাড়ি করেই তার নিজ বাসার সামনে নামিয়ে দেয় তাকে।
এ পুরো সময়টা আমি পথে পথে সারিকাকে বার বার জিজ্ঞেস করেছি প্রাপ্তি ফারহানের লোকেশন কোন জায়গায় বলেছে, সারিকা আমাকে একটাই জবাব দিয়েছে,
তোমাকে বলবোনা আমি তোমাকে নিয়ে যাব গাড়ি চালিয়ে। এটা তোমার জন্য বেশি এক্সাইটমেন্ট এর হবে। তবে যাওয়ার আগে আমাদের কিছু টুলস নিয়ে যেতে হবে।
সারিকার একঘেয়েমিতার কাছে আমাকে হার মানতে হলো।চুপচাপ বসে রইলাম।
ঠিক করলাম আজ রাতেই অপারেশন এ নামব।
সারিকা আমি এবং সিদ্দীক তিনজন একত্রে যাব। সারিকা বেশ কিছু টুলস সাথে নিলো। জ্যাপিং গান, যেটা দিয়ে ইলেকট্রিক শক প্রয়োগের মাধ্যমে মুহুর্তেই অজ্ঞান করে ফেলা যায় যে কাউকে,
সাথে কিছু শক্ত দড়ি, আমি রিভালবার ইউজ করতে পারি কিনা জিজ্ঞেস করে সারিকা। আমি উত্তরে জানাই হ্যাঁ, রিভালবার চালানোতে আমি অভ্যস্ত। আমাকে তিন রাউন্ড বুলেট সহ একটা রেজিস্ট্রেশন করা গ্লোক থার্টি সেভেন রিভালবার দেয়া হয়। সিদ্দীক ও বাদ যায়নি। ওকে দেয়া হয় একটা বেসবল ব্যাট।
মোটামুটি সবকিছু প্রস্তুত করার পর আমরা রাতে রওনা দেই ফারহানের গোপন আস্তানার উদ্দেশ্যে।
বেশ অনেকটা পথ পার হয়ে মূল ঢাকার বাইরে চলে যাই আমরা। যখন গন্তব্যে পৌঁছাই তখন রাত্র দুটা বেজে ত্রিশ মিনিট।
অনেকটা গ্রাম্য একটা অঞ্চল। পায়ে হেঁটে কিছু কাঁচা পাকা বাড়ি পার হতেই চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাইটিং এর একটি তিনতলা বাসার উপর নজর যায় আমাদের।
বাসার চারদিকে জেলখানার দেয়ালের মত উঁচু প্রাচীর,উপরে আবার কাঁটা তারের বেড়ী লাগানো। এ দেয়াল টপকানো একেবারেই অসম্ভব কিন্তু গেট থেকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টাও করা যাবেনা। তাহলে সব প্লান বরবাদ হয়ে যাবে আমাদের। আশপাশের দেয়ালে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম কোনো উপায় আছে কিনা দেয়াল টপকানোর। সারিকা মনে মনে গালি দিলো প্রাপ্তিকে।ও একবারের জন্য ও বলেনি যে এ বাড়িটির চারদিকে এমন দুর্ভেদ্য দেয়াল রয়েছে।
দড়ি দিয়ে বেয়ে কোনভাবে উপরে উঠলেও কাটাতারের বেড়ায় হাত পা ছিড়ে যেতে পারে। ওপাশে যদি কোন গার্ড ঘোরাঘুরি করে তাদের ও চোখে পড়ে যেতে পারি।
সব মিলিয়ে গুড়ে বালি পড়ার মত অবস্থা তৈরি হলো। মূল গেটের ফাঁকা দিয়ে ওপাশে কি আছে সেটা দেখার ও কোন ওয়ে নেই। কারণ প্রধান ফটকটি ছিলো পুরোটাই লিফটের দরজার মত সলিড স্টিলের তৈরি।
অনেক ভাবনা চিন্তা করার পরে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা সিদ্দীক কে রেকি করার কাজে এ এলাকায় কিছুদিন রেখে যাব। ও ছদ্দবেশে ঘুরেফিরে এখানের কার্যক্রম লক্ষ করবে এবং আমাদের রিপোর্ট জানাবে। যখন ভেতরে ঢোকার মত কোন উপায় খুঁজে বের করতে পারব তখন দ্রুত আমরা চলে আসব এবং বন্দীদের মুক্ত করব। আমার ধারণা যদি ভুল না হয়, তবে এখানে আমার কন্যা এবং স্ত্রীর মত আটকা পরে আছে আরো অনেকেই।
আমি একটা বিষয় খুব ভালো করে বুঝতে পারছি, সারিকা চাইলে ওর ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে খুব দ্রুত স্পেশাল সোয়াট বাহিনী দ্বারা সবাইকে উদ্ধার করতে পারে। তবে ও নিজের এডভেঞ্চারের জন্য আমাদের সাথে মিলে নিজেই কাজ করছে। তবে এ বিষয়ে সারিকাকে আমি কিছু বলতে চাচ্ছিনা৷ ও নিজ থেকে আমার জন্য যা করেছে যতটুকু করেছে সেটাই অনেক।
সেদিন রাতে সিদ্দীক কে ওখানে রেখেই আমরা ফিরে আসি। আমাদের প্রথম যাত্রা সফল হয়নি। এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি প্রাপ্তির শারিরীক অবস্থা ঝুঁকিমুক্ত৷
ও এখন ব্যাথায় মাঝেমাঝে চিৎকার চেঁচামেচি করছে।
পিটারের অবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক আছে।
ওর কাছ থেকে আমার আর নতুন কিছু জানার বা তথ্য পাওয়ার নেই। তবে একটা বিষয়ে আমি পিটারের সাহায্য নিব। সে ইচ্ছেটা আমার মনের ভিতরে আপাতত গোপন রাখলাম।
.
.
.
.
আনটোল্ড ডিজায়ার প্রশ্ন করা গ্যাং এর কার্যক্রম ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের হট টপিকে চলে এসেছে অনেক পুলিশ এবং সিক্রেট গোয়েন্দারা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে চলেছে ওরা কে বা কারা। কিন্তু ফলাফল শূন্য। ফোন নম্বর ট্রাক করেও কোন লাভ হচ্ছেনা কারণ এমন লোকদের ফোন দিয়ে ওরা মানুষদের ফোন করছে যে লোকগুলোকে ইতিমধ্যেই ওরা মেরে ফেলেছে৷
লোকেশন ট্রাক করে কিংবা সিসি ক্যামেরা ঘাটাঘাটি করেও কোন প্রকার লাভ হচ্ছেনা। অনেক গুলো ফোন রেকর্ডিং বিভিন্ন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে ফাঁস করেছে গোয়েন্দা বিভাগ। যা শুনে পুরো দেশবাসির মনের ভিতরে কাঁপন ধরে গেছে। এখন কেউ আর আননোন নম্বরে সহজে ফোন রিসিভ করেনা। কেউ কেউ করলেও যদি আনটোল্ড ডিজায়ার কি এটা জিজ্ঞেস করে তবে ফোন অফ করে পুলিশে খবর দেয়া হয়৷
আনটোল্ড ডিজায়ার সিক্রেট এভাবে ওপেন হয়ে যাওয়ায় ঐ গ্যাং এর এক্টিভিটি অনেকটাই কমে যায়৷
কিন্তু বিষয়টা মোটেই ভালো লাগলো না আমার কাছে। ইচ্ছে ছিলো ওদের ভেতরকার রহস্য উদঘাটন করা। এজন্য ওদের কার্যক্রম ওদের মত চালাতে দেয়টা খুব ই জরুরী ছিলো।
সিদ্দীকের সাথে নিয়মিতভাবে আপডেটেড থাকায় খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেলাম আমরা।
ও ওখানে মসজিদের খাদিম হিসেবে কাজ নিয়ে গুপ্তচরের দায়িত্ব পালন করছে।
হঠাৎ করে আমাদের কাছে বাবুমিয়ার একটি কল আসে। সে জানায় তার ফোনে একটা আননউন নাম্বার থেকে কল এসেছে এবং জানতে চাওয়া হয়েছে হট ইজ হিজ আনটোল্ড ডিজায়ার।
এরকম একটা কিছু ঘটার খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো। সাথে সাথেই বাবুমিয়াকে জানালাম যাতে আমাদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করে। বাবুমিয়া জানালো সে তার ফার্নিচারের দোকানেই আছে। সারিকা এবং আমি দ্রুত তৈরি হয়ে রওনা দিলাম বাবু মিয়ার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে।
পৌঁছানোর পরে জিজ্ঞেস করলাম সে কি কোন উত্তর দিয়েছিলো কিনা! বাবু মিয়া জানালো সে কিছুই বলেনি ফোন রেখে দিয়েছে। পরে আরো বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলো কিন্তু সে পিক-আপ করেনি। আমি সারিকা এবং বাবু মিয়া অপেক্ষা করতে থাকলাম আরো একবার ফোন আসার। প্রায় ঘন্টা দুই পরে একটা ফোন আসলো।
লাউড স্পিকারে রেখে ফোন রিসিভ করলাম।
ওপাশ থেকে ছেলে মেয়ে মিশ্রিত গলায় একটা প্রশ্ন ভেসে আসলো,
মিস্টার, হট ইজ ইউর আনটোল্ড ডিজায়ার।
যতটা সম্ভব পারা যায়, গলা বাবু মিয়ার মত করে উত্তর দিলাম, মাই আনটোল্ড ডিজায়ার ইজ সিয়িং ইউ।
অর্থাৎ আমার না-বলা চাওয়া হচ্ছে আপনাকে দেখা।
ওপাশ থেকে টুট টুট সাউন্ড হয়ে ফোন টা কেটে গেলো।এরপর আমরা সবাই নিশ্চুপ। পরবর্তীতে আবারো ফোন আসলো ঠিক দশ মিনিট পরে।
রিসিভ করার পরে ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো,
অবশ্যই আপনি আমাকে দেখবেন।
আমি ই হবো আপনার দেখা শেষ মানুষ।
এরপর আবারো নিজ থেকেই ফোনটা কেটে যায়।
বাবুমিয়া ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়।
সারিকা এবং আমি বাবু মিয়াকে অভয় দেই৷ আমরা থাকতে ওনার কোন ক্ষতি হতে দিবনা এটাও জানাই।
সে কিছুটা আশ্বস্ত হয়।
সারিকা এবং আমি প্লান করে বাবু মিয়াকে এমন কিছু জায়গায় ঘুরতে যেতে বলি যে সকল জায়গা সাধারণত লোকজন খুব কম যায়। ওরা বাবুমিয়াকে যে ফলো করবে সেটা খুব ভালোভাবেই জানা ছিলো আমাদের।
তবে আমাদের প্লান ফেইলর হয়। কয়েকদিন কেটে গেলেও বাবুমিয়া কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়নি।
প্রতিদিনের মত বাবুমিয়া সকাল সকাল তার শো রুমের দোকানে এসে বসেন। আরাম আয়েশ করেন টিকটক ভিডিও বানান।
টিকটক ভিডিও বানানো তার নতুন অভ্যেস। বাবুমিয়া বর্তমানে সেলিব্রেটি একজন পারসোন। কুকুরের ধাওয়া খাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে সে অনলাইনে খুবই জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। তার যে কোন ভিডিও খুব দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুলে দেয়।
টিকটক ভিডিও বানানোর সময়ে সে খুবই সিরিয়াস মুডে থাকে। কিন্তু তার ভিডিও বানানোতে ব্যাঘাত ঘটায় একজন নিউ কাষ্টমার। কিছুটা বিরক্ত হয়ে বাবুমিয়া ভিডিও অফ করে কাষ্টমারের প্রতি মনোযোগী হন।
কি ধরণের ফার্নিচার তার পছন্দ জিজ্ঞেস করেন,
নীল শাড়ি পড়া মেয়েটি জানায় একটা ভালোমানের ওয়ারড্রব দরকার তার। বাবুমিয়া তার কর্মচারী ছেলেটিকে বলেন যে ওয়ারড্রবগুলো তাদের কালেকশন এ আছে সেগুলো দেখাতে। ছেলেটি মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ওয়ারড্রব গুলো দেখায়। বাবুমিয়া ফোনের দিকে পুনরায় মনোযোগী হয়।
হুট করে ধুপ করে কিছু পরে যাওয়ার শব্দে বাবুমিয়া এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে পায় তার সহকর্মী ছেলেটি মাটিতে পরে আছে। নীল শাড়ি পরিহিত মেয়েটির মুখে বাঁকা হাসি।
বাবুমিয়া উঠে দরজার দিকে দৌড়াতে যাবে,
এমন সময়ে সাথে করে নিয়ে আসা রিভালবার বের করে বাবুমিয়ার দিকে তাক করে ধরে মেয়েটি।
বাবুমিয়া দু হাত উপরে তুলে দিয়ে ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
কম্পিত গলায় প্রশ্ন করে কে আপনি?
মেয়েটি উত্তর দেয়, যাকে দেখা আপনার অপ্রকাশিত ইচ্ছে ছিলো, আমি সে।
ভালোভাবে দেখে রাখুন। কারণ একটু পর একটা গুলি আপনার মাথা এঁফোড় ওঁফোড় হয়ে বেরিয়ে যাবে।
" সে সুযোগ আর তুমি পাবেনা"
কথাটা শুনেই পেছন ফিরে তাকায় মেয়েটি।
আমার হাতে থাকা রিভালবারটি মেয়েটির দিকে তাক করে রেখেছি। মেয়েটি পেছন ঘোরার সাথে সাথেই সারিকা একটা স্পিনিং কিক মেরে ওর হাতে থাকা রিভালবারটি ফেলে দেয়।
সম্পূর্ণভাবে আমাদের হাতে ধরা পরে যায় অদ্ভুত ফোনকলের পেছনে থাকা মানু্ষটি।
ওকেও নিয়ে আসা হয় আমাদের টর্চার রুমে।১২ ঘন্টা ফ্রিজিং তাপমাত্রায় রেখে তারপর ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
দু হাত পেছনে বেঁধে স্টিলের চেয়ারের সাথে বেঁধে আটকে রেখে চলে আসি আমি ও সারিকা।
সারিকা চলে যাওয়ার ঠিক কিছুক্ষন পরে আমি আবারো আমাদের টর্চার সেলের ভেতরে ঢুকি।
মেয়েটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি,
" আমাকে মারতে চাওয়ার পেছনে তোমার উদ্দেশ্য কি ছিলো ইলিয়ানা রহমান? "
ইলিয়ানা চোখ তুলে আমার দিকে তাকায়।
ও দৃঢ় গলায় বলে,
তুমি আমাদের পুরো টিমের কাছেই টার্গেট হয়ে গেছিলে। আমরা একটা মিশনে আছি।
- আমি টার্গেট হয়ে গেছিলাম? এর পেছনে কারণ কি?
- আমাদের টিম সমাজের আগাছা নিধনে কাজ করে। খোঁজ নিয়ে দেখবে, এখন পর্যন্ত যারা আমাদেএ হাতে মৃত্যুবরণ করেছে তারা কোনো না কোনো ভাবে খারাপ ও অবৈধ কাজের সাথে জড়িত।
সমাজ থেকে এমন মানুষদের ধরে ধরে সরিয়ে দেয়াই আমাদের টিমের কাজ।
তুমি আমাকে চাইলে মেরে ফেলতে পারো ফাহাদ। কিন্তু আমি আমাদের টিম সম্পর্কে একটি তথ্য ও তোমাকে দিব না।
- ইলিয়ানাকে আমি যে ক'দিন ধরে চিনি, তাতে ওকে আমি অবিশ্বাস করতে পারলাম না।
রুম থেকে বের হয়ে চলে আসলাম। সারিকাকে জানালাম না ইলিয়ানা আমার পূর্ব পরিচিত।
ইলিয়ানার সাথে আমার আরো কিছু কথা ছিলো। কিন্তু সারিকা চলে আসতে পারে তাই দ্রুত বের হয়ে চলে আসলাম।
আমার এখন দরকার মালিহার বাবা মায়ের ব্যপারে খোঁজ নেয়া। তারা কি কোন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলো কিনা এবং বাবুমিয়ার বা আমার অপরাধটাও বা কি যার কারণে আমাদের মেরে ফেলার জন্য টার্গেট করা হয়েছে,
এগুলো সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়ার।
চলবে...
Writer:- হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ