বিয়ের প্রায় মাস ছয়েক পরে বউ কে বললাম
সিপা আমাকে তুমি প্রতিদিন টাই বেধে
দিবে। ব্যাপার টা অনেক রোমান্টিক।
সে বললো, পারবো না। আমার লজ্জা করে।
ওকে নিয়ে কালকে ঘুরতে গিয়েছিলাম। মাঝ
পথে বলেছিলো, খুব গরম লাগছে। ঠাণ্ডা
পানি পাওয়া যাবে না?
আমি তারপর প্রাণ জুস এনে বলেছিলাম,
দুইটা কাটি আনছি। চলো দুজনে মিলে একটা
খাই। সে নাকমুখ ফুলিয়ে জুস টা আমার হাত
থেকে নিয়ে হাত ব্যাগে রেখে দিয়ে
বলেছিলো, কোনো দরকার নাই। আমার লজ্জা করে ।
পরশু রাতে অনেক দিন পরে একটু
টেলিভিশনের সামনে বসার সময়
পেয়েছিলাম। সিপা আমার পাশের
সোফায় বসে চিপস খাচ্ছিলো। আমি
বলেছিলাম, আমি কী হিংস্র একটা প্রাণী?
আমার পাশে বসা যায় না?
সে আমার দিকে না তাকিয়েই বলেছিলো,
তা না, কিন্তু আমার লজ্জা করে।
এই কথা টা বলা শেষ না করতেই বাংলা
সিনেমায় নায়ক নায়িকার একটু রোমান্টিক
দৃশ্য এসে যায় । সাথে সাথে ও রুমে চলে
যায় দৌড় দিয়ে! আমি ভয় পেয়ে
গিয়েছিলাম। রুমে গিয়ে দেখি কাঁথার
নিচে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে!
ডাক দিয়ে বলেছিলাম, কী হলো? জ্বর
আসছে না কী? ও কাঁথার ভেতরে থেকেই
মাথা নাড়িয়ে বলেছিলো, না। আমার ওসব
সিনেমা দেখতে লজ্জা লাগে!
মন চাচ্ছিলো খাট থেকে কম্বল নিয়ে ওকে
ধামাচাপা দিয়ে দিতে! ঐদিন
গিয়েছিলাম বাজারে, কিছু আসবাবপত্র আর কাপড়চোপড় কেনার দরকার ছিলো। এক দোকানে ঢুকে সব পছন্দ করার পরে আমার মোবাইলে ফোন
এসেছিলো। তাই ওর হাতে এক হাজার টাকার পাঁচ টা
নোট দিয়ে বলেছিলাম, তুমি বিল দিয়ে
আসো। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি, ফোন
আসছে।
ও, আচ্ছা।
বলে আমার কাছ থেকে টাকা টা
রেখেছিলো।
পাঁচ মিনিট পরে দেখি ও আমার পিছনে
এসে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ফোনের কথা
শেষ করে বললাম, কতো রাখছে উনি?
ও ভেঙচি দিয়ে বলেছিলো, কতো রাখছে
মানে?
আমি তো পাঁচ হাজার টাকা ই দিয়ে
আসছি!
আমি অবাক হয়ে বললাম, দুই টা শাড়ি আর
একটা ওড়না। খুব বেশি গেলে তিন হাজার
টাকা হবে।
তুমি একটু দামাদামি ও করো নাই? আজব
তো! ও হাত থেকে শাড়ির ব্যাগ টা মাঠিতে
ফেলে দিয়ে বলেছিলো, একদম বকবেন না।
দামাদামি করতে আমার লজ্জা করে!
চোখে পানি আসছিলো সেসময় আমার! তবু
ও নিজেকে সামলে নিয়ে বলেছিলাম, জয়
হোক তোমার লজ্জার। জয় হোক তোমার
কেনাকাটার।
চলো বাড়ি যাই।
মনে মনে শপথ করেছিলাম, আর ওকে নিয়ে
কেনাকাটা করতে যাবো না। ও না কী জন্ম
থেকেই এমন! বিয়ের দিনে কবুল বলার সময়
কমপক্ষে বিশ বার কেঁদে কেঁদে বলেছিলো, আমি
কবুল বলতে পারছি না কেনো? আমার লজ্জা
করছে। ওর কাহিনী দেখে কাজী পর্যন্ত হেসে
বিয়ের আসর ছেড়েছিলেন। বহু কষ্টে সে কবুল
বললো। যখন ওকে গাড়িতে তুলে দিবে তখন
ও আবারো
বলছিলো, আমি গাড়িতে উঠবো না। আমার
লজ্জা করে।
বান্দীকে কোনোভাবেই গাড়িতে উঠানো
যায়নি। শেষে ও এসেছিলো এক গাড়ি করে,
আর আমি আরেক গাড়ি করে। বাড়িতে
আনার পর যখন মানুষ আসছিলো নতুন বৌ
দেখতে। তখন ও নিজেই ওর ঘোমটা টেনে
ধরে রেখে বলতো, ঘোমটা সরাবো না।
আমার লজ্জা করে।
তা যেই আসুক। সে ঘোমটা কোনোভাবেই
সরাবে না! নতুন বৌয়ের সাথে তো আর
জোরাজোরি করা
যাবে না। তাই কেউ আর বৌ ও দেখতে
পারেনি। বাসর ঘরে গিয়ে দেখেছিলাম সে আগেই
সোফায় বসে আছে ঘোমটা দিয়ে!
আমি গিয়ে বলেছিলাম, কী ব্যাপার?
সোফায় কেনো? ঘুমানোর জন্য খাট আছে
তো। ও বলেছিলো, আমাকে দেখার চেষ্টা
করবেন না একদম। আপনি খাটে গিয়ে শুয়ে
পরুন। কোনো ছেলের সাথে শুতে পারি না।
আমার লজ্জা করে।
বাধ্য হয়ে বাসর রাত টা মুড়ি চিবিয়ে
চিবিয়ে পার করেছিলাম! সে এই কথা
আজ ও বহমান রেখেছে। কোনো পুরুষ
মানুষের সাথে ও শুতে পারবে না।
ভেবেছিলাম এসব বাচ্চামী সময় গেলে ঠিক
হয়ে যাবে। কিন্তু না, ঠিক হচ্ছে না। আজকে সকাল
থেকে দেখছি ও মুচকি মুচকি হাসছে।
আমি রুমে গিয়ে নিজের উপর নিচ সব দেখে
আসলাম। সবই তো ঠিক আছে। কিন্তু ও
এভাবে হাসছে কেনো? জিজ্ঞেস করতেই ও
বললো, বলবো না। আমার লজ্জা করে।
আমি ওর হাসি এড়িয়ে যেতে চাইলাম
কিন্তু পারছি না। বারবার ওর ফোনের দিকে
তাকাচ্ছে আর হাসছে। খাওয়া শেষে
বললাম, তোমার ফোন টা দাও তো দেখি।
ও, না দেয়া যাবে না।
বলে দৌড়ে রুমে চলে গেলো। আমি রুমে
গিয়ে ভয় দেখিয়ে বললাম, তোমার ফোনে
অবৈধ কিছু আছে। যদি আমাকে না দেখাও
তাহলে পুলিশকে ফোন দিবো। ওরা এসে
যখন থানাতে নিয়ে গিয়ে পেটাবে না।
তখন হারে হারে টের পাবে।
আমি ভাবিনি এই কথা টা কাজে লাগবে। ও
আমার হাতে ফোন টা দিয়ে দুই হাত দিয়ে
মুখ লুকিয়ে রেখেছে । আমি ফোনের
স্ক্রিনলক টা খুলে দেখি একটা ছবি। ছেলে
টা তাঁর স্ত্রীর কপালে চুমু দিচ্ছে।
আর স্ত্রী সদ্যজাতক বাবুর কপালে চুমু
দিচ্ছে! আমি এটা দেখে হো হো করে হেসে
বললাম, ছবি টা কে পাঠাইছে?
ও, বলবো না, লজ্জা করে।
বলে আবার আমার সামনে থেকে চলে
গেলো। আমি মুখে হাসি নিয়ে অফিসের দিকে
রওনা দিলাম। সন্ধায় বাড়িতে ফিরে দেখি
কোথাও আলো নেই! অনেক ডাকাডাকি
করলাম, কোনো সারা নেই।
সবজায়গায় গিয়ে খুঁজলাম, কোথাও অস্তিত্ব
নেই! ওর নাম্বারে ফোন দিচ্ছি, ফোন টা খাটের
উপর বাজছে! ও গেলো কোথায়?
দারোয়ানকে নিচে নেমে জিজ্ঞেস
করলাম, সিপাকে কোথাও যেতে দেখছেন?
উনি বললেন, না তো।
আমি চিন্তিত হয়ে আবারো ঘরের ভিতরে
এলাম। ক্লান্ত হয়ে গেলাম একটু শরীরে পানি
ঢালতে। গিয়ে দেখি গোসলখানা ভিতর থেকে বন্ধ
করা! তারমানে সিপা ভিতরে। আমি সিপা বলে
ডাকতেই ও কান্না করে দিলো! বললাম কী
হয়েছে? তুমি গোসলখানায় কাঁদছো কেনো?
পরে- টরে ব্যাথা পাইছো না কী? দরজা
খুলো দেখি!
ও কেঁদে কেঁদে বললো, আরে সকালে গোসল
করতে এসে আর বেরোতে পারি নাই। দরজা
নষ্ট হয়ে গেছে। আর খুলছে না। আমার দম
বন্ধ হয়ে আসছে।
তাড়াতাড়ি দরজা খুলার ব্যবস্থা করুন না।
আমি কথা টা শুনে খুশিতে দুইটা লাফ
দিলাম! ও বললো, লাফাচ্ছেন মনে হচ্ছে? এদিকে
আমার যায় যায় অবস্থা।
আমি ভাবসাব নিয়ে বললাম, আমার কাছে
দরজা টা খুলার গোপন চাবি আছে। চাইলে
এক্ষণি খুলতে পারি। কিন্তু খুলবো না।
ও বললো, কীহ! সত্যি কথা? কিন্তু খুলবেন না
কেনো? আমি এবার মৃদু হেসে বললাম, খুলবো না।
আমার দরজা খুলতে লজ্জা করে।
ও দরজায় হাত দিয়ে ঠকঠক করে বললো,
আপনি তো ছেলে মানুষ! আর দরজা খুলতে
কীসের লজ্জা শুনি?
আর আমিই তো। কোনো লজ্জা নাই। আপনি
দয়া করে দরজা টা খুলুন।
আমি জোরেশোরে বললাম, আমার ক্ষিধা
পাইছে খেয়ে আসি। দুপুরে মনে হয় রান্না করো
নাই। সমস্যা নাই। বাইরে থেকে খেয়ে
আসছি। তুমি থাকো, আমার লজ্জা কাটলে
দরজা খুলে দিবো।
ও বললো, প্লীজ যাবেন না। দরজা টা খুলুন।
আমারো ক্ষিধা পাইছে।
আমি বললাম, কী করবো বলো? আমার লজ্জা
করে । আমি বাইরে থেকে খেয়েদেয়ে
আসলাম। ও এখনো বন্দী হয়ে আছে।
দারোয়ান জিজ্ঞেস করলো সিপাকে
পেয়েছি কী না। আমি বললাম বাপের
বাড়ি চলে গিয়েছে। দরজার এপাশে
থেকে বললাম, কলা আনছি তোমার জন্য।
খাবে না? ও ঝারি দিয়ে বলে, আমি তো ভূত। দরজা
না খুললে খাবো কীভাবে?
আমি একটা কলা মুখে নিয়ে বললাম, কী
করবো বলো? কেউ গোসলখানায় থাকলে
আমার দরজা খুলতে লজ্জা করে । যত যাই
বলো। আমি দরজা খুলতে পারবো না।
ও আস্তে আস্তে বললো, আপনার হঠাৎ এতো
লজ্জা আসছে কোথা থেকে? প্রতিশোধ
নিচ্ছেন না কী সুযোগ পেয়ে?
আমি, মনে করো তাই।
বলে আরো একটা কলা মুখে দিলাম। কলার
খোসা দরজার নিচ দিয়ে ওর কাছে
পাঠাচ্ছি । ও খালি রাগে ফাটছে। বলতে
শুরু করলো, শুনেন আমি আর লজ্জার কথা
বলবো না। টাই বেধে দিবো।
একসাথে টিভি দেখবো। কিছু কিনতে
গেলে দামাদামি করবো। এক ডাব, জুস
দুজনে খাবো, এক বাসনে ও দুজনে খাবো। তবু
ও প্লীজ দরজা টা খুলেন।
আমি একটা চেয়ার এনে দরজার সামনে বসে
ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। ও এসব বলেই
যাচ্ছে। আজকে দেখি ওর লজ্জা কোথায় যায়।
আমি শুনছি ও বলছে, আজ থেকে আমার আর
কোনো পুরুষের সাথে ঘুমাতে সমস্যা নাই।
না মানে শুধু আপনার সাথে আরকি । কই
গেলেন? কথা বলেন না কেনো?
আমি কখন ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই। হঠাৎ
চোখ খুলে দেখি বারো টা বেজে গেছে।
আর আলো ও কোনো কথা বলছে না। আমি
ওকে ডাক দিয়ে বললাম, সিপা কই তুমি?
কথা বলছো না কেনো? আমি ঘুমিয়ে পরছিলাম তাই দরজা খুলতে পারিনি। ও আমাকে ঝারি দিয়ে বললো, হারামীর বাচ্চা। এখন তো জেগে আছিস। দরজা খুল বলছি। আমি একটু ভয় পেলাম ওর কথায়। কিন্তু উত্তর
দিলাম, না। আমার লজ্জা করে। ও বারবার বলছে। আর বলবে না ওর লজ্জা করে। সব শুনে আমি বললাম, আচ্ছা সকালে খুলে দিবো। আমার লজ্জা করছে এখন। ও আবারো বললো, পেট পিঠ এক হয়ে যাচ্ছে ক্ষিধায়। আর আপনি মজা নিচ্ছেন?
আপনাকে জীবনে পেয়ে ভেবেছিলাম আমি
ধন্য। কিন্তু আপনি যে এমন একটা মানুষ তা
ভাবিনি আগে। আমি ঝারি দিয়ে বললাম, এতো কথা বলো কেনো? আমি তো একটা কানী বিয়ে
করছি। কলার খোসার সাথে যে চাবি দিয়ে
দিছিলাম এটা কী কেউ দেখছে? চাবি কী
আমার কাছে না কী যে আমি বাইরে থেকে
খুলবো? ও চিৎকার দিয়ে বললো, আল্লাহ্ গো! বলেন
কী? আমি তো রাগে আপনার খাওয়া কলার
খোসা সব বাথরুমে ফেলে দিছি! এখন কী
হবে?
Writer:- M Rahman