> রবের সাথে যোগাযোগ
-->

রবের সাথে যোগাযোগ

আজ তানিয়ার দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার খাতা দেখাবে। সকাল থেকেই খুব টেনশনে আছে ও। সব পরীক্ষা ভালো হলেও যত চিন্তা সেই অংক নিয়ে।  অংক তো সবগুলো করে আসে ঠিকই কিন্তু সংখ্যা উল্টা-পাল্টা লেখায় নম্বর কম পেয়ে যায় প্রতিবার। আর অংকের ব্যাপারটাই এমন ,পুরো নিয়ম ঠিক হলেও শুধু উত্তর ভুলের জন্য শূণ্য পেতে হয়। তাই অংক নিয়ে মহা চিন্তায় আছে তানিয়া। 

সকাল দশটায় যথারীতি খাতা দেখানো শুরু করলেন ক্লাস টিচার লিজা মিস।  সব বিষয়ের খাতা দেখানোর পরে সবার শেষে দিলেন অংক খাতা। খাতার নম্বর দেখে তানিয়া আবারও হতাশ!!!  ৮০ পেয়েছে!! খাতার ভিতরে খুলে দেখে সেই একই  কাহিনী !! একটা অংকে যোগের জায়গায় বিয়োগ করে রেখেছে আর একটা অংকে রাফ থেকে সঠিক উত্তর তুলতে ভুল করেছে! ব্যস, ১০+১০=২০ নম্বর কাটা!! এবারও আর পজিশন আগানো হলো না তানিয়ার!!

বাসায় ফিরতে না ফিরতেই নানুর ফোন। হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল , “ কি রে আপুনি এবার অংকে কত পেলি?” তানিয়া আর কি উত্তর দিবে? চুপ করে রইল।
 
পাশ থেকে মা বলল , “কত আর পাবে? সেই আগের মতো একই ভুল। পরীক্ষার হলে যে ওর মন কোন দিকে থাকে আল্লাহ্ জানে। এত অমনোযোগী মেয়েটা ।” 

নানু তখন বলল, “শোন আপুনি তোকে একটা বুদ্ধি দেই । এখন থেকে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করবি বেশি করে। যে সময়গুলোতে দুআ কবুল হয় সেসময় বেশি করে দুআ করবি। কখন কখন দুআ কবুল হয়, জানিস তো?” “না জানি না”, তানিয়া বলল। নানু তখন বুদ্ধি দিল, “তোর তো বৃষ্টি অনেক পছন্দ। বৃষ্টি এলেই হাত ভিজাতে ছুটে যাস। এরপর যখন বৃষ্টি আসবে তখনই দুআ করবি,  আল্লাহকে বলবি যেন তোর মনোযোগ বাড়িয়ে দেন।।”
 
এমনিতে নানুর সব উপদেশ শুনতে ভালো না লাগলেও এই কথাটা বেশ পছন্দ হলো তানিয়ার।    

 পরদিন স্কুলে টিফিন টাইমে খেলার জন্য মাঠে যাবে তানিয়া আর তুবা, এমন সময় ঝমঝম বৃষ্টি শুরু হলো। দুই বান্ধবী বাধ্য হয়ে বারন্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করতে লাগল। তানিয়া বলল, “ কিরে কাল খাতা দেখতে আসলি না কেনো?”

 তুবা বলল, “আর বলিস না, পরশু বিকালে সাইকেল চালানোর সময়  পড়ে গিয়ে হাঁটুতে ব্যথা পেয়েছিলাম। ব্যথার জন্য জ্বরই এসে গেল। দুই দিন তো বিছানা থেকে উঠতে পারিনি। আল্লাহ যে কেন এত কষ্ট দেয়ার জন্য আমাকেই বেছে নিলেন!??”

শুনে তানিয়া বলল, “ছি!! এভাবে আল্লাহকে দোষ দিতে হয়  না । আমার নানুর কাছে শুনেছি মহানবী (সা:) বলেছেন, “মুসলিম ব্যক্তির উপর যে বিপদ-আপদ, রোগ-ব্যাধি আসে আল্লাহ তার বিনিময়ে তার গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি বান্দা একটা কাঁটার আঘাত পেলেও…”( সহীহ বুখারী : ৫৬৪১)  তাই আমাদের উচিত অসুখ হলে  “লা বাস তাহুরুন ইনশাআল্লাহ” বলা; যেন সেই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ গুনাহ মাফ করে দেন।

 তানিয়ার কথা শুনে তুবা বলল, “ কিন্তু আমরা তো ছোট মানুষ, ফেরেশতারা কি আর এখন আমাদের গুনাহর হিসাব লিখছেন নাকি? "

তানিয়া বলল, “ শোন এখন থেকেই যদি অসুখ হলে গুনাহ মাফ করার নিয়তে দুআ করার অভ্যাস করি তবে বড় হলেও যখন আমলনামায় গুনাহর হিসেব লেখা হবে তখন এই দুআর বদলে গুনাহ কাটাকাটি করে নেয়ার অভ্যাসটা রয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ “।

“হুম, তোর কাছে আজ নতুন কিছু শিখলাম ,” তুবা বলল।

এদিকে বৃষ্টি বেড়েই চলেছে ,থামার কোনো লক্ষণ নেই। বৃষ্টি দেখতে দেখতে তানিয়ার হঠাৎ মনে পড়ল, কাল বলা নানুর বুদ্ধিটার কথা। দৌঁড়ে বারান্দার এককোণে গিয়ে দুই হাত তুলে বলল, “ হে আল্লাহ !! আমি বৃষ্টির সময় দুআ করছি, তুমি আমার মনোযোগ বাড়িয়ে দাও। আমি যেন অংকে আরও মনোযোগী হতে পারি। ”

 দুআ শেষে ফিরে এসে দেখে তুবা সানজানার সাথে গল্প করছে। তুবার ব্যথা পাওয়ার ঘটনা শুনে সানজানা বলছে,  “আমিও তো প্রতিবার দাদা বাড়িতে বেড়াতে গেলে শুধু পড়ে গিয়ে ব্যথা পাই না হয় অসুস্থ হই।”  

দাদী বলে, “আমার উপর নাকি বদনজর আছে”। তাই এবার আমার দাদী আমার জন্য হুজুরের কাছ থেকে একটা তাবিজ এনে দিয়েছে। এই দেখ!! বলে গলায় ঝুলানো তাবিজটা দেখালো সানজানা।। এখন আর আমার কোনো বিপদ হবে না দেখিস!! 

 সানজানার কথা শুনে হেসে ফেলল তানিয়া। তুবার দিকে তাকিয়ে বলল, “আচ্ছা তোর যে জ্বর হলো,তখন কি ওষধ খেয়েছিলি?’
 তুবা বলল, “ হ্যাঁ, পাশের বাসার ডাক্তার আন্টি ঔষধ লিখে দিয়েছিল, সেটা খেয়েই তো ব্যথা, জ্বর কমলো।” 

“আচ্ছা তুই যদি ঔষধ না খেয়ে সেগুলো গলায় ঝুলিয়ে রাখতি তবে কি তুই সুস্থ হতি? ”, তানিয়া জিজ্ঞেস করল।

“কি বলিস এটা?” তুবা আর সানজানা একসাথে বলে উঠল।

 তখন তানিয়া বলল, “তাহলে তোরাই বল, গলায় কিছু লেখা ঝুলিয়ে রাখলে তা কিভাবে বিপদ থেকে রক্ষা করবে? তার চেয়ে বরং আমরা এবার ধর্ম বই থেকে যে সূরা ফালাক , সূরা নাস আর সূরা ইখলাস শিখেছি তা যদি সকাল-সন্ধ্যা পড়ি তবে এগুলোই আমাদের বদনজর থেকে রক্ষা করবে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইলে শয়তান কোনো ক্ষতি করতে পারবে না ইনশাঅল্লাহ। ”

ওর যুক্তি শুনে  সানজানা মাথা নেড়ে বলল, “ তুই বোধহয় ঠিকই বলেছিস।  সবাই যে তোকে পাকনি বলে, ঠিকই বলে আসলে।”

তানিয়া তখন আরও একটু পাকনা চেহারা করে বলল, “ আমাদের উচিত সবসময় রবের সাথে যোগাযোগ রাখা। কিছু পেতে হলে তার কাছে দুআ করা , অসুস্থতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য  তাঁর প্রেরিত সূরা পড়া আর তারপরও যদি অসুখ হযেই যায় তবে “লা বাস তাহুরুন ”পড়ে তার বিনিময়ে গুনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা। তাহলে দুনিযার জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যাবে, বুঝলি?

টিফিন আওয়ার শেষের ঘন্টা পড়ায় ওদের ক্লাসে ফিরতে হলো। তানিয়া, তুবা, সানজানা সবাই মনে মনে ঠিক করলো, এখন থেকে ওরা সবসময় রবের সাথে যোগাযোগ রাখবে।






লেখা:- সামিন বিনতে ইয়াসির
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner