> ডেটিং | Mysterying Story | Bangla Short Story | Boipoka365
-->

ডেটিং | Mysterying Story | Bangla Short Story | Boipoka365


এ্যানির সাথে প্রথম ডেটিং শেষে রাত দশটায় বাসায় ফিরে টিভি অন করতেই পুনম এর চোখ মুখ থুবড়ে পড়লো একটা নিউজ হেডলাইনে। টিভি স্ক্রীনে এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে গড়িয়ে চলেছে একটা নিউজ, এ্যানির রহস্য জনক মৃত্যু।

নিউজটা দেখতেই নাআআআআ করে চীৎকার করে সোফা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো পুনম। ওর মা স্নিগ্ধা সেন হন্তদন্ত করে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে বাবা ? তুই অমন করে চীৎকার করে উঠলি কেন ? কি হয়েছে তোর ?

পুনম মাথা হেঁট করে আছে। কি হয়েছে ওর ও নিজেও বুঝতে পারছে না। ঠকঠক করে কাঁপছে সর্বাঙ্গ। কপাল রীতিমতো ঘেমে গেছে। চুপসে গেছে চোখ মুখ।

শুধু আজকাল বলে


কথা নয় ভার্সিটিতে এ্যানি যখন ইংরেজি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছিলো এর পর থেকেই ও কেবলমাত্র সহপাঠীদেরই ক্রাশ ছিলো না, ক্রাশ হয়ে উঠেছিলো ফ্যাকাল্টির অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের ছাত্রদেরও। এমন কি ক্লাশ টিচারেরাও ক্রাশ খেতো। যা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরে এ্যানি প্রতিদিন লাঞ্চ সেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে উঠে পড়ে বিল্ডিং এর ছাদে। ছাদে বসেই বিকেলটা কাটায়। বিকেল হলে ছাদে অন্যান্য ফ্ল্যাটের অনেকই এসে আড্ডা দেয়। বিশেষত মহিলা তরুণী কিশোরী এরাই। সাথে বাচ্চা কাচ্চাও থাকে। বাচ্চাকে নিয়ে কেউ বা আদরে আদরে পূর্ণ করে দেয়। কেউ বা নিচের বা উপরের ফ্ল্যাটের একে অন্যের সাথে খোশ গল্পে মেতে ওঠে।

একদিন এ্যানি লক্ষ্য করলো একটা খোকা ফুলের টবের কাছে গিয়ে কটা গোলাপ ছিঁড়ে ছিঁড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলো মেঝেতে। অন্যদিকে এক ফুটফুটে খুকি গোলাপ ফুলকে আদর সোহাগে ভরিয়ে তুলছে।

অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে থাকতে এ্যানি ভাবলো এই দুষ্ট প্রকৃতির খোকাটা বড়ো হয়ে একদিন বড্ড বদমায়েশ হবে। আর ছোট্ট খুকিটার বুকে কি স্নেহ মায়া যেন নিশপিশ করছে শরীর জুড়ে।

মনে মনে আরো ভাবে ছেলেরা মনে হয় প্রকৃতিগতভাবে নিষ্ঠুর হয় মেয়েদের তুলনায়। অন্যদিকে মেয়েরা হয় কোমল মনের ও স্নেহ পরায়ন। হবেই না বা কেন ! সাধে বলে কিনা মেয়েরা মায়ের জাত। তাই জন্মলগ্ন থেকেই মেয়েদের মধ্যে এই সুপ্ত অনুভূতি বিরাজ করে।

অন্যেরা একের সাথে গপ্পো সপ্পো করে সময় গুজার করলেও এ্যানির তা হয়ে ওঠে না। কারণ ছোটবেলা থেকেই এ্যানি বাবা মায়ের কড়া অনুশাসনে বড়ো হয়ে উঠেছে। তাই অনেক সময় ইচ্ছে থাকা সত্বেও কারো সাথে তেমন একটা মেলামেশা করতে পারে না। সেটা মেয়ে হোক আর ছেলেই হোক।

এটা ভেবে মাঝে মাঝে মনমরা হয়ে যায় এ্যানি।

প্রতিদিন অনেকেই প্যারাপেট ওয়ালে গা ঠেঁসে বা একটু ঝুলে পড়ে চারপাশের দৃশ্য অবলোকন করে অপার আনন্দ উপভোগ করে।

একদিন এ্যানিরও ইচ্ছে হলো সেও প্যারাপেট ওয়ালে বুক লাগিয়ে চোখ দিয়ে চষে বেড়াবে পুরো শহর। কোথাও বেড়াতে যাওয়ারও সুযোগ হয়ে ওঠে না। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বাস করেও সেই ভার্সিটিতে যাওয়া আর আসা গন্ডিডেই সীমাবদ্ধ থাকে ভ্রমনের সুপ্ত ইচ্ছে। শপিং এ গেলেও সেই মায়ের হাত ধরেই যাওয়া আসা।বিয়ে বাড়ি কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও তাই। আমি যে এখন অনেক বড় হয়ে গেছি মা সেটা বুঝতেই চান না, মনে মনে ভাবে এ্যানি। ছোটবেলায় যাওয়া হয়েছিলো দিদিমার বাড়ি। বলতে গেলে একদম গন্ডগ্রামে। তবুও খুব মজা হয়েছে। গ্রামের ছোট হতে বুড়ো অনেকেই দেখতে এসেছিলো তখন। কি কিউরিওসিটি ছিলো ওদের চোখে মুখে। শহরের মানুষ বলে কথা। আমাদের মাঝেই মনে হয় ওরা খুঁজে পেয়েছে স্বপ্নের শহর। বান্ধবীও জুটে গিয়েছিল তিন চার জন। ওরা কি উতসাহ নিয়েই না এদিক সেদিক ঘুরিয়ে নিয়ে দেখিয়েছে গ্রামের পুকুর। বাঁশঝাড়। পেয়ারা গাছ। কামরাঙা গাছ। পুকুর পাড়ের তাল গাছ। তাল গাছ দেখে মনে পড়ে গিয়েছিলো সেই কবিতা " তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে কোথা পাবো ডানা সে "। ক্ষেতে শিম গাছ লাউ গাছে ভর্তি মাচাং। ঢেউ খেলছে পুরো শস্য ক্ষেত জুড়ে। পাতার ফাঁকে মাটিতে সবুজ ঘাসে শুয়ে চোখ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ঢ্যামা ঢ্যামা সব কুমড়ো ক্ষেতের এখানে ওখানে। হলদে কুমড়ো ফুল যেন মাথা উঁচিয়ে চোখ মারছিলো কাউকে। এ ছাড়াও ইয়া বড়ো বড়ো কতো রকমের গাছ ঘিরে রেখেছে পুরো গ্রামটিকে। দিদিমনির বাড়ির উঠোনের কোণে বড় একটা ঝাঁকড়া বেলি ফুল গাছ ছিলো। ফুলে ফুলে ভরে ছিলো গাছটা। আমি যখন দু'চারটা ফুল ছিঁড়েছি অমনি আমার বান্ধবীরা মিলে এক কোঁচা ফুল তুলে দিয়েছিলো আমাকে। আমাকে বলেছে এগুলো বেলি ফুল। আমি কি তখোন অতো সব বুঝি বেলি ফুল না ছালি ফুল ! তারপর উঠোনে বসে মালা গেঁথে আমার গলায় পড়িয়ে দিয়েছিলো। কি যে আনন্দ হয়েছিলো আমার যা এতো গাছ পালা ক্ষেত দেখেও হয়নি। তখন হৃদয় দিয়ে সেসব দৃশ্যের মজা উপলব্ধি করতে না পারলে তখনকার কথা মনে পড়লে এখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করি সেসব অপূর্ব দৃশ্য। তখন যে ভালো লাগেনি তা নয়। বেশ লেগেছিলো ওরা যখন হাত ধরে টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো। প্রথমে আমি যেতে চাইছিলাম না। লজ্জা পাচ্ছিলো। মা বলেছেন, যা না রে এ্যানি, ওরা এতো করে বলছে যখন।

একদিন বিকেলে এ্যানি ঠিকই ছাদে এসে প্যারাপেট ওয়ালে গা ঘেঁষে ঝুঁকে পড়লো। কিছুক্ষণ ধরে নিচে তাকিয়ে দেখলো এদিক সেদিক। তারপর ওয়াল ঠেসে ধরে চারদিকে চোখ বুলিয়ে চললো যতোদূর চোখ যায়। যেদিকেই চোখ যায় শুধুই রঙ বেরঙের বহুতল ভবন, সাপের মতো আঁকা বাঁকা রাস্তা আর গাড়ির বহরের পিপড়ার মতো দীর্ঘ সারি।

এসব দেখে কিছুতেই মন ভরে না এ্যানির। মনে মনে ভাবে এই শহরে গ্রামের মতো গাছ পালায় ভরে থাকলে এমন কি ক্ষতি হতো। কারো আছে ছাদ কৃষি। আবার ফুলের টবে সজ্জিত বাগান। আরো ভাবে শহরের মানুষগুলো কি উল্লুক ? ভবনের দেয়াল ঘেঁসে ঘেঁষে হলেও যদি কয়েকটা করে গাছ লাগাতো তাহলে পুরো শহরটাই একটা সবুজ বনানীতে পরিণত হতো। মানুষ প্রাণ ভরে অক্সিজেন নিতে পারতো। বায়ু দূষণে শহরটা একটা নরকে পরিণত হয়েছে। শহরের মানুষগুলো এতো এতো খায় তবুও রোগে শোকে মরে। অথচ গ্রামের মানুষেরা এতো মজাদার খাবার না খেয়েও ওদের রোগ বালাই কম হয়। এটাও একটা অন্যতম কারণ সেটা হলো বিশুদ্ধ বায়ু সেবন।

এসব ভাবতে ভাবতে এ্যানির মন ছটফট করে। ইচ্ছে করে তখনি দিদিমনির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কয়েক দিন আবার থেকে আসি। আরো নানা প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারে এ্যানির মনের কোণে।

হঠাৎ কেন যেন মনে পড়ে পুনমকে। পুনম মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হলে কি হবে মেধাবী বটে। দেখতেও হ্যান্ডসাম। কিন্তু ওর একটাই দোষ কোনো মেয়ের প্রতি ওর দুর্বলতা নেই। আর থাকবেও কি করে। ছেলেটা এক্কেরে মেয়েলি স্বভাবের। এতো লাজুক যে কোনো মেয়ে গায়ে পড়ে কথা বলতে চাইলেও কেমন যেন বিব্রত বোধ করে ও। সৃষ্টি কর্তা ওকে ছেলে না বানিয়ে মেয়ে বানালেই ওর স্বভাবের সাথে বেশ মানাতো।

সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা গড়িয়ে কখন যে আকাশে চাঁদ উঠে গেছে ওদিকে খেয়ালই নেই এ্যানির।

আকাশের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো মুচকি হাসছে চাঁদ। পুনমও এমন মুচকি হাসি দিয়েই এ্যানির প্রপোজালে সাড়া দিয়েছিলো ভাবতেই বার বার পুলকিত হয়ে ওঠে এ্যানি। বহুদিন পর পুনমের বোধোদয় হয়েছে। ও বুঝতে শিখেছে একটা মেয়েকে। ভালোবাসার ঘ্রাণ শুঁকতে শিখেছে পুনম। এবার হয়তো অন্য আর ফেউ হয়ে ছুক ছুক করবে না আমার পিছু। একটা শেল্টার হলো অন্তত। কারণ লাজুক হলেও পুনম ভীষণ একরোখা আর প্রতিবাদী স্বভাবের।

এ্যানি ভাবে দেখতে দেখতে ভার্সিটি লাইফের তিনটে বছর কেটে গেল। নিজেকে এখন অনার্স থার্ড ইয়ারের ছাত্রী ভাবতেই অনেকটা ম্যাচুউরড্ ম্যাাচুউরড্ মনে হয়।

হলে কি হবে সমস্যা হচ্ছে মোবাইলে পুনমের সাথে কথা বলার কোনো স্কোপ নেই। ছাদে মোবাইল নিয়ে গেলে মা সন্দেহ করবে আর রুমে বসে তো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মোবাইল কেনার সময় বলেই দেয়া হয়েছে নিজ পরিবারের সদস্য ছাড়া আর অন্য কারো সাথে মোবাইলে কথা বলা যাবে না। এটা শুধুই কোনো আপদ বিপদের জন্য ।

চারপাশে লক্ষ্য করে দেখে এ্যানি কখনো ঝলমলে আলো কখনো আলোছায়া। বুঝতে বাকি থাকে না এসবই মেঘের তেলেসমাতি। চাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখে ভেতরে দুটো বড় বড় কালো দাগ। মনে মনে ভাবে এ-ই বুঝি তাহলে চাঁদের কলঙ্ক। আবার ভাবে ধ্যাৎ চাঁদের আবার কলঙ্ক হতে যাবে কেন ? চাঁদ কি কারো সাথে ফস্টিনস্টি করেছে নাকি যে চাঁদের কলঙ্ক হবে ! যত্তোসব আজাইরা কথা।

পুনমের কথাটা বার বার মনে পড়ে এ্যানির। ভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়ায় বসে এ্যানির হাতে হাত রেখে পুনম প্রশ্ন করেছিলো, একটা সত্যি কথা বলবে এ্যানি ?

কি কথা বলো !

আগে বলো সত্যি করে বলবে কিনা।

এ্যানি এক গাল হেসে বলেছে তোমার এমন কি কথা জানার থাকতে পারে আমার কাছে যা সত্যি করে বলতে হবে ? তুমি কি ভাবো আমি কখনো কোনো ব্যাপারে তোমাকে মিথ্যে বলেছি ?

আমি সেটা বলছিনে।

তাহলে কোনটা ?

আচ্ছা সত্যি করে বলতো, কতো ছেলের ক্রাশ তুমি। অথচ সবাইকে বাদ দিয়ে আমাকে তোমার এতো ভালো লাগলো কেন ?

এ্যানি পুনমের নাকের ডগা টেনে দিয়ে বলেছে, এখনও পুৃচকে ছোড়া আছো বুঝি ? তাও বুঝো না ?

পুনম মাথা ঝুঁকিয়ে বলেছে না বুঝি না।

না বুঝলে আর বুঝার কাম নেই। তোমাকে অতো বুঝিয়ে বলতে পারবো না।

একথা বলায় মনে হয় ভেতরে ভেতরে আরো বেশি খুশি হয়েছিলো পুনম।

পুনম কতোবার চেয়েছে এ্যানিকে নিয়ে মাঝে মধ্যে এখানে সেখানে ঘুরবে। একটা ভালো রেস্টুরেন্টে স্ন্যাক্স খাবে। কোনো একদিন লাঞ্চ করবে বুফে অফারের কিন্তু সেই বাবা মায়ের কঠিন অনুশাসন একমাত্র ভার্সিটি ছাড়া আর কোথাও যাওয়া চলবে না। তাই কোনো বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে এমন কথাটাও মুখ ফুটে মাকে বলার সাহস হয় না এ্যানির। তাই পুনমের সাথে যেটুকু কথা হয় ক্লাশের ফাঁকে ফাঁকে হয় লাইব্রেরিতে বসে নইলে ক্যাফেটেরিয়ায়। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো ছাড়া উপায় নেই।

পুনমও চায় এ্যানিকে নিয়ে সেও বাইরে ঘোরাফেরা করুক। এ্যানিও সেটাই চাই। শুধু এ্যানির সাহসের অভাবে তা আর হয়ে ওঠে না।

পুনম আর এ্যানি দু'জনেই এমন একটা দিন খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। যেভাবেই হোক সারাটা দিন দুজন দুজনার সাথে কাটাবে। তবে সেটা কিছুতেই ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে নয়। সময়টা বুদ্ধি খাটিয়ে খুঁজে বের করে নিতে হবে।

অনিবার্য কারণে একদিন ওদের পুরো ক্লাশ সাসপেন্ড করা হলো। আর সেদিনটাই ওরা মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিলো।

নিয়মিত ভার্সিটি যাওয়ার মতো করেই বাসা থেকে বের হলো এ্যানি। বলা আছে গোল্ডেন সিটি আবাসিক হোটেলের সামনে পুনমের সাথে দেখা করবে এ্যানি।

এই প্রোগ্রাম সেট করার আগের রাতে সারারাত ছটফট করেছে এ্যানি। কিছুতেই ঘুম আসেনি চোখে। এক অজানা শিহরণে বার বার পুলকিত হয় এ্যানি। জীবনে প্রথম ডেটিং করতে যাচ্ছে পুনমের সাথে।

সকালে স্নান সেরেই মাকে ডাকাডাকি শুরু করে এ্যানি নাস্তা দেয়ার জন্য।

এ্যানির মা তো হতভম্ব। যাকে প্রতিদিন নাস্তা খাওয়ার জন্য কতো পিড়াপিড়ি করতে হয় আজ কিনা সেই এ্যানি নিজ থেকেই নাস্তা খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

মা এ্যানির মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কাল রাতে ঘুমোসনি তুই ? তোর চেহারার এ কি হাল অবস্থা হয়েছে ! শরীর খারাপ করেনি তো ? মায়ের মন বুঝতে বাকি থাকে না যে কিছু একটা হয়েছে এ্যানির।

কি হয়েছে মা বার বার জানতে চাইলে এ্যানি একটু ধমকের সুরেই বলে, মা আমি আর তোমার সেই ছোট্ট খুকি নই মা। আমি বড়ো হয়েছি। আমার অনেক পারসোনাল ম্যাটার থাকতে পারে। সব কথাই যে তোমাকে জানাতে হবে এমনটা নয়।

মেয়ের কথা শুনে মা যেন আকাশ থেকে পড়ে। আর উনি মনটা খুব খারাপ করে বলে উঠলেন, মেয়েতো দেখছি আজকাল অনেক বড় হয়ে গেছে। পারসোনাল ম্যাটার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বাপরে বাপ মেয়েকে দেখছি এখন থেকে আর কিছু বলা যাবে না। আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন মা কি হয়েছে বল। আমি তো তোর মা। তোর ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব তো আমার।

মা জলদি নাস্তা দাও তো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

এ্যানির মা এবার বলে উঠেন, তোর দাদাও সেদিন আমাকে বলেছে তুই নাকি কিছুটা রাত অবধি ছাদে ছিলি। তুই তো সন্ধ্যার আগেই রোজ ছাদ থেকে নেমে আসিস সেদিন কি হয়েছিলো তোর খুলে বল মা । আমাকে সব খুলে বল।

আমার কিছু হয়নি মা, তুমি নাস্তা দেবে নাকি আমি চলে যাবো ?

আর কথা না বাড়িয়ে এ্যানির সামনে নাস্তা এনে হাজির করলেন ওর মা।

গোল্ডেন সিটির সামনে পুনম ও এ্যানি মিলিত হলো। রুম আগে থেকেই বুক করে রেখেছিলো পুনম। দুজনেই রুমে ঢুকে প্রথমে ওরা ফ্রেস হয়ে নিলো। এর পর বেরিয়ে পড়ে বলতে গেলে পুরো টাউন চষে বেড়ালো রিক্সায় চেপে।

দুপুরে একটা চায়নিজ হোটেলে লাঞ্চ সেরে ফিরে এলো হোটেলে।

দুজনকেই ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। হলে কি হবে ভেতরে ভেতরে দুজনেই উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে। আজ ওরা দুজনে কি করতে যাচ্ছে নাকি জীবনের স্বপ্ন বুনতে যাচ্ছে এখনও দুজনার কেউ বুঝে উঠতে পারছে না।

তারপর নাক ডেকে ঘুমোলো দুজনেই।

বিকলে যখন ঘুম ভাঙলো পুনম একটা হ্যানিক্যান বিয়ারের কেন হাতে নিয়ে এ্যানির খাটে এসে বসলো এ্যানির পাশে। ক্লিপ টেনে খুলে কৌটোটা এ্যানির হাতে তুলে দিয়ে বললো খাও। আর নিজের হাতে থাকা অন্যটা পুনম নিজেই খেতে শুরু করলো।

এক ঢোক দিতেই এ্যানি বাঁদরের মতো মুখ করে বললো আঁহ্ তেতো। ছি।

আরে খাও তো বলেই আবার মুখে তুলে দিয়ে ঢকঢক করে গেলাতে বাধ্য করলো এ্যানিকে।

কিছুক্ষণের মধ্যে এ্যানির চোখ মুখ ফোলা ফোলা হয়ে উঠেছে।

এরই মধ্যে হোটেল বয় হুইস্কির বোতল নিয়ে এসেছে। সাথে ওয়াইন গ্লাস।

এ্যানি কিছুতেই গিলতে পারছিলো না। বার বার ওয়াক ওয়াক করে বমি করতে চেয়েছে। অনেক ভুলিয়ে ভালিয়ে এক গ্লাস খাওয়ালো এ্যানিকে।

দুজনেই এবার নেশাগ্রস্থ হয়ে উঠেছে। রক্তলাল হয়েছে দু'জনার চোখ।

পুনম আস্তে আস্তে বুকে টেনে নিলো এ্যানিকে। এ্যানি তখন যেন সুখের সাগরে ভাসতে শুরু করেছে।

পুরো সন্ধ্যা অবধি দু'জনার মধ্যে যা হবার তাইই হলো।

দুজনেই ফ্রেস হয়ে নিয়ে হোটেল ছেড়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় দরজা খুলে গলা বের করে এ্যানি এদিক ওদিক তাকাতেই মনে হলো কে যেন দেখে ফেলেছে ওকে। খুবই পরিচিত মুখ।

এ্যানি ধড়াস করে রুমের দরজা বন্ধ করে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে দরজার পাশে।

সন্ধ্যা গড়িয়ে যাবার পর আবারো উঁকিঝুঁকি মেরে রুমের দরজা খুলে এ্যানি। পুনমকেও বের করে নিয়ে এসে বলে তুমি তোমার মতো করে যাও আমি আমার মতো করে যাচ্ছি।

ঘন্টা দুয়েক পর হোটেলের সামনে রাস্তা থেকে এ্যানির রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্বার করে পুলিশ।


( সমাপ্ত )




লেখা: স্বপন কুমার বৈদ্য

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner