> নক্ষত্রের গল্প | Relationship | Boipoka365
-->

নক্ষত্রের গল্প | Relationship | Boipoka365


তোমার সাথে আমি আর এক মুহূর্তও থাকবো না। ৬ মাস হয়েছে বিয়ের এই ৬ মাসে কয়বার বাহিরে নিয়ে গিয়েছো? আমার কি মন চায় না স্বামীর সাথে বাহিরে ঘুরতে সময় কাটাতে? বন্ধের দিনেও তোমার অফিস যাওয়া লাগে?"

"দেখো কথা বাড়িও না। সকাল বেলা ঝগড়া করার কোনো ইচ্ছাই আমার  নেই।  দেরী হয়ে যাচ্ছে দরজা থেকে সরো।"

তারপর কোনো মতে ঠেলে-ঠুলে বের হয়ে গেলো রহিম। পিছনে  নীলা চিৎকার-চেঁচামেচি করেই যাচ্ছে " আমি বলে এতোদিন তোমার সাথে থেকেছি অন্য কেউ হলে ৩ মাসও থাকতো না। অনেক সহ্য করেছি আর না গেলাম আমি বাপের বাড়ি। "

নীলা রাগে গজগজ করতে করতে ব্যাগ গুছাচ্ছে। আজ শুক্রবার নিয়ম মতো ছুটির দিন। ভেবেছিলো অনেক দিন পর আজ রহিমের সাথে বাহিরে বের হবে নীলা।  তা আর হলো কই গত সাপ্তাহের মতো আজও কাজের জন্য অফিসে গেলো রহিম। বিয়ের আগে অন্য আট-দশটা মেয়ের মতো কত আশা মনে বুঁনেছিলো নীলা। ছুটির দিনে বরের সাথে ঘুরতে যাবে নিজেদের মতো সময় কাটাবে কত কি। কিন্তু তার বরের সময় হয় না এমনি দিনগুলোতে সকালে অফিসে যায় রাতে ফিরে ক্লান্ত শরীর ঠিকভাবে কথা বলারও সময় পায় না। 

আনমনে ব্যাগ গুছাচ্ছে নীলা তখন তার শাশুড়ি ডাক দেয় তাকে '" বউ, ও বউ। কই তুই শুনে যা মা।"'

ব্যাগ রেখে শাশুড়ির রুমে যায় সে।,

"  মা ডাকছেন কেন,কিছু লাগবে?"

তিনি উলেরকাঁটা নাড়তে নাড়তে বললেন,

"আমার সামনে বসতো দেখি। আমি বুড়ো মানুষ একা একা আর কত কাঁটা নাড়ানাড়ি করবো? আয় কিছুক্ষণ গল্প করি।"

"মা আমি বসতে পারবো না।  আমি বাবার বাড়ি চলে যাচ্ছি, ব্যাগ গুছানো শেষ।"

"সে না হয় যাবি।  এখন বস ঘন্টা দুই দেরি করে গেলেও যেতে পারবি তোর বাবার বাড়ি তো আর উড়ে যাচ্ছে না" 

বসার ইচ্ছা না থাকায়ও তাকে বসতে হলো। এমন না যে নীলা তার শাশুড়িকে পছন্দ করে না। সে তার শাশুড়িকে ভয়ংকর রকম পছন্দ করে নীলার শাশুড়িও নীলাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে।

" তা বেটি নিজের ঘর নিজের সংসার ফেলে বাপের বাড়ি চলে গেলে হবে? আমি তোকে বাপের বাড়ি যেতে নিষেধ করছি না।  কিন্তু তুই এখন ঝগড়া করে যেতে চাচ্ছিস যা ঠিক না।"

নীলা কিছু বলছে না। চুপচাপ বসে শাশুড়ির কথা শুনছে। শাশুড়ির দেখা দেখি সেও  উলেরকাঁটা হাতে নিয়ে সুতো গাথার চেষ্টা করেছে। তার চেষ্টায় কাজ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।

" শুন মা ঝগড়া সংসারের একটা অংশ। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হবে আবার মিল হবে এটাই নিয়ম।  কিন্তু ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে আবার বাপের বাড়ি বসে ঝগড়া বাড়ানোর কোনো মানে হয় না।" 

"ছোট ঝগড়া ছোট থাককালে মিটমাট করে ফেলাই ভালো। ছোট ঝগড়া বড় করলে দেখা যায় বড় কোনো অঘটন ঘটে যায়। যেমন আমার কথাই ধর :- রহিম যখন ৫ বছরের তখন আমার আর তোর শশুড়ের মাঝে ছোট একটা বিষয় নিয়া ঝগড়া হয়।  অনেক ছোট্ট বিষয় কিন্তু তোর শশুড়ের রাগ ছিলো বেশি বেটায় রাগ কইরা না খেয়েই বের হয়ে যায়। আমারো কি রাগ কম ছিলো?  আমিও রাগ কইরা তোর মতোন ব্যাগট্যাগ গুছাইয়া হাটা দিলাম বাপের বাড়ি। আমার বাপের বাড়ি বাসে কইরা গেলে আধাঘণ্টা লাগে।  সকালে ঝগড়া করলাম দুপুর হইতে হইতে বাপের বাড়ি।ওইযে ঝগড়া কইরা বাপের বাড়ি আসলাম এরপর আবার স্বামীর সংসারে ফিরলাম সাদা কাপড় পইড়া। বিকেলে হয়তো তোর শশুড়ের রাগ কমছে বেটায় হয়তো আমারে নিতে আমার বাপের বাড়ি রওনা দিছে তার সাইকেলে কইরা। সাইকেল নিয়া বেটায় পড়ছে বাসের তলে। ওই যে সকালে মানুষটার সাথে রাগ কইরা বাপের বাড়ি আসছিলাম সেই কত বছর হইলো এখনো আমাদের ঝগড়া মিটমাট হইলো না। একটা বাসের ধাক্কায় সব শেষ।"

এতোটুকু বলে নীলার শাশুড়ি শাড়ির আচলে চোখ মুছলেন। " তখন তো আর মোবাইল ছিলো না।  টেলিফোন ছিলো তাও বড়লোকদের বাসায়।  মানুষটা এক্সিডেন্ট করছে  বিকালে আর আমি খবর পাইছি রাতে। রাতে হাসপাতলে আইসা দেখি বেটায় আমার সাথে রাগ কইরা ঘুমাইতাছে।  অনেক আরাম কইরাই ঘুমাইছে অনেক ডাকছি কিন্তু উঠে নাই।" "কিরে কাদোস কেন?  দেখ পাগল মেয়ে তুই কাদোস কেন চোখ মুছ। তারপর শুন কি হইছে,

আমার তো বিয়ে হইছিলো কম বয়সে যখন তোর শশুড় মারা গেছে তখন আমার বয়স সবে ২২।  ভরা যৌবন কেউ দেখলে বিশ্বাস করতো না যে আমার ৫ বছরের বাচ্চা আছে। তোর শশুড়ের মৃত্যুর ৪০ দিনো হয় নাই।  আমার মামা আমার জন্য পাত্র নিয়া আসছে। আমার গেলো মাথা খারাপ এর মতো হইয়া বটি নিয়া দুই কু*বাচ্চারে দিছি দৌড়ানি। সবাইকে বললাম আমি আর বিয়া-শাদি করমু না।  বাকি জীবন ছেলে মানুষ করতে করতে কাটায়া দিমু।" 

"আরেকবার কি হইছে শুন ঘটনা মনে পরলে এখনো হাসি পায়। রহিমের আব্বু মানুষটা অনেক ভালোছিলো কিন্তু কোন জায়গায় কি বলতে হয় তা জানতো না। আমার তখন নতুন নতুন বিয়ে।  একদিন লজ্জা লজ্জা মুখ করে জিজ্ঞাস করলাম 'আচ্ছা তোমার জীবনে আমার গুরুত্ব কতটুকু বা কেমন' বেটায় উত্তরে কি বলছে জানোস?

"কি বলছে আঁধার ঘরে বাতির মতো?"

" আরে না এটা বললে তাও মানা যাইতো। বেটায় বলে,'তার জীবনে আমার গুরুত্ব নাকি বাথরুমে রাখা বদনার মতো" তুই বল কেমডা লাগে। রাগে বেটারে ১ দিন না খাওয়াইয়া রাখছি। শেষে কিনা বদনা"

শাশুড়ির কথা শুনে নীলা শব্দ করে হেসে উঠলো।  তার শাশুড়ি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো। " এখন হাসি বন্ধ কর আর এটা হাতে পরে দেখতো কেমন লাগে" বলেই তার দিকে মোঁজা জোড়া বাড়িয়ে দিলো। 

মোঁজা জোড়া পড়ে তার মনের দুঃখী ভাবটা পুরোপুরি কেটে গেলো। সে লক্ষ করলে মোঁজায় সুতোর কাজে ছোট করে ইংরেজি আর লিখা তার ঠিক নিচে এন লিখা।  

"শুন মা। ভালোবাসার মানুষরে কখনো কষ্ট দিতে নাই। তাদের আগলায়া রাখতে হয় সবসময় তাদের আাশেপাশে থাকতে হয়।  এখন যা বেলা অনেক হইছে রান্না বসা।" 

" আচ্ছা মা। যাচ্ছি।

নীলা খুশি মনে রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো।

নীলার শাশুড়ি বিছানার কোণা থেকে উনার স্বামীর সাদাকালো ছবি বের করে দেখতে লাগলেন। ছবির দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলে "তুমি কি এখনো রাগ কইরা আছো? আমি মইরা কোনো রকম বেহেস্ত যাইয়ানি তখন তোমার আর রাগ থাকবো না। ।"


( সমাপ্ত ) 




লেখক: শাহাদাত হোসাইন

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner