> জব | Bangla Funny Story | Comics | Boipoka365
-->

জব | Bangla Funny Story | Comics | Boipoka365


হোয়াটসঅ্যাপে একটা জব অফার এসেছে..

“এখন থেকে আপনিও ঘরে বসেই পারবেন ইনকাম করতে। দিনে নূন্যতম পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা উপার্জনের সুযোগ।  সাথে থাকছে উইকেন্ড বোনাস। আজই যোগাযোগ ০১৭......”

হিসাব করে দেখলাম, বোনাস টোনাস বাদ দিয়ে দিনে গড়ে সাত হাজার ধরলেও ত্রিশ দিনে দুই লাখ দশ হাজার টাকা।

বেকারত্বের এই আকালের দিনে মাসের দুই লাখ টাকার সুযোগ কে ছাড়ে? সাথে সাথে যোগাযোগ করলাম। ওই প্রান্ত থেকে এক রূপালী কন্ঠের তরুনী বললো,

“স্যার প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি আমাদের সাথে যোগাযোগের জন্য। আপনি জেনে খুশি হবেন আমরা দৈনন্দিন কলের ভিত্তিতে বেছে বেছে শুধুমাত্র অল্প কয়েকজনকেই রিক্রুট করেছি৷ আপনি তাদের মধ্যে একজন”

... জ্বী আচ্ছা। কিন্তু আমার তো ডিগ্রী নাই। আমি কি পাবো চাকরিটা?

“কোন অসুবিধা নেই স্যার। আমাদের এমডি ডিগ্রিতে নয় কাজে বিশ্বাসী। আপনার শুধু দু'কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ভোটার আইডি-কার্ডের ছবি, ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, বিকাশ নাম্বার লাগবে। আমাদের একটা ফর্ম আছে। মূল্য সাড়ে তিনশ টাকা। সেটা পূরণ করলেই চাকরির জন্য এলিজেবল হবেন।”

..আচ্ছা ব্যাপারটা আমার ভাইয়াকে বুঝিয়ে বলবেন? তাহলে আমরা দুই ভাই একসাথে ফর্ম পূরন করবো।

“চমৎকার, সেক্ষেত্রে কিন্তু স্যার ফর্মের দাম কমে আসবে। দুজনের ৬০০ টাকা মাত্র”

..বলেন কি? এতো এলাহি কান্ড। আপনি রাতে একবার কল দিতে পারবেন? ও আচ্ছা,আপনার নাম জানা হলো না?

রূপালি কন্ঠের অধিকারিনী তার নাম বললেন। উনার নাম রুপা। তিনি কথামতো রাতে কল দিলেন। প্রায় মিনিট বিশেক কথা বলার পর বললাম, রুপা ভাইয়া তো এখন বাসায় নেই। আমি সকালে টাকা পাঠাবো। সকালে ফোন দিয়েন?

তিনি সকালে ফোন দিলেন। আমি তখন ভার্সিটি যাচ্ছি। যেতে যেতে কথা বললাম। আমার প্রথম বাক্যটাই ছিলো, রুপা তুমি কি জানো তোমার কন্ঠ রুপালি? 

রুপা হেসে বললো, কি যে বলেন না আপনি?

.. আরে না সত্যিই বলছি। তোমার কণ্ঠ রুপার কাসার মতো ঝনঝনিয়ে বাজে। কি যে ভালো লাগে শুনতে।

রুপা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।

... আচ্ছা রুপা বলেন তো মানুষের সবচাইতে আদিম প্রবৃত্তি কোনটা?

“জানি না ত স্যার.. উম.. কি?”

..বেঁচে থাকা। যে বেঁচে থাকে, সে টিকে থাকে। তবে বাঁচার জন্য সব সময় টাকার প্রয়োজন হয় না। মাঝে মধ্যে রূপালি কন্ঠের প্রয়োজন হয়, যে কন্ঠ জীবন দান করে, যে কন্ঠটা তোমার..

“কি যে বলো না তুমি.. ওপস, মানে স্যার”

..আরে না না, স্যার ডাকার কি প্রয়োজন। আমি তো জবটা পেলেই তোমার কলিগ হবো। নাম ধরেই ডাকো। আর শুনো, দুপুরে টাকা পাঠাচ্ছি। দুপুরে কল দিও কেমন?

সেদিন দুপুরেও টাকা পাঠাতে পারলাম না। তবে রাতে আমাদের অনেকক্ষণ কথা হলো। ইতিমধ্যে আমি আপনি থেকে তুমি তে নেমে এসেছি। রুপাও আমাকে স্যার থেকে নেমে নাম ধরে ডাকছে।

রুপা ধৈর্য্য সহকারে আমাকে চাকরি দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে। আমিও ধৈর্য্য সহকারে তার সেই চাকরি নেওয়ার চেষ্টায় আছি। আমাদের কথা বলার পরিমাণ বেড়ে গেলো। মাঝে মধ্যে আমরা আহ্লাদ করি। সে অভিমান করে, আমি অভিমান ভাঙ্গাতে বসে নিজে অভিমান করি। সে তখন উল্টো আমার অভিমান ভাঙ্গায়।

একমাস পরের কথা, রুপার সাথে আমার প্রেম জমে উঠেছে। ইতিমধ্যে, তার থেকে প্রায় হাজার পাঁচেক টাকা ধার নিলাম। তবে একবারে নয়, ধাপে ধাপে। আমার হাজারো বিপদ দেখাচ্ছি তাকে। কখনও মাকে হসপিটালে পাঠাচ্ছি, তো কখনও ভাইকে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছি। টাকার প্রয়োজন আমার। বেঁচে থাকা প্রয়োজন। 

রুপা আমাকে বাঁচাচ্ছে। নিঃসংকোচে টাকা দিচ্ছে।

কারণ, রুপা এখনও বিশ্বাস করে আমি ছয়শ'ত টাকা বিকাশ করে ফর্ম ফিলাপ করবো। 

আমিও বিশ্বাস করি চাকরিটা আমি পাবোই।


( সমাপ্ত )




Writer:  Nahid Ashraf Uday

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner