> ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায় | An unfinished Love Story | Bangla Sad Story | Boipoka365
-->

ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায় | An unfinished Love Story | Bangla Sad Story | Boipoka365



"তোরে হারানোর পর আমি অনেক কেঁদেছি, জানিস?"

"সে তো তুই লিপস্টিক হারিয়ে গেলেও কাঁদিস। এ আর নতুন কী?"

নিজের সমস্ত দুর্বলতা মিহি যখন বন্ধুর দিকে তুলে ধরলো, বন্ধুর ঠাট্টার কাছেই ফিঁকে হলো অনুভূতি। মিহি হাসলো, গাল ফুলিয়ে বললো,

"লিপস্টিক হারানোর কান্না আর মানুষ হারানোর কান্না এক হলো বুঝি!"

বান্ধবীর কথায় হাসলো মাহবুব। ঠাট্টা করে বললো,

"আচ্ছা! এক না? আমি তো দেখি সব কান্নাতেই চোখের পানির রঙ থাকে না, বিবর্ণ হয়। তোরটাই আলাদা কী ছিলো? সবুজ রঙ বের হয়ে ছিলো নাকি?"

বন্ধুর ঠাট্টায় খিলখিল করে হেসে উঠলো মিহি। মাহবুবের হাতে আলতো চ*ড় দিয়ে বললো,

"কবে শুধরবি তুই? বয়স তো হলো অনেক।"

"তোর কী কম হয়েছে? তুই ও তো আগের মতনই আছিস।"

"কই আগের মতন আছি? ত্রিশের বুড়ি আমি। আগের মতন থাকলে কি আর দৃষ্টির শক্তি কমতো না কালো চুলের ফাঁকফোকরে খুব গোপনে সাদা চুলের দেখা মিলতো? বদলে গেছি অনেক।"

মাহবুব হাসলো। ক্ষীণ স্বরে বললো, 

"এটা তো বাহ্যিক বদল। তা,বিয়ে করবি কবে? মেয়েদের তো সন্ন্যাসী থাকার নিয়ম নেই। এখন কী তুই ইতিহাস বদলাবি নাকি?"

"তোর মতন কাউকে পেলে আজই করে ফেলবো।"

মাহবুবের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে নিজেই খিলখিল করে হেসে উঠলো মিহি। মাহবুব বিরক্তিতে কপাল কুঁচকালো। অধৈর্য কণ্ঠে বললো, 

"ঠাট্টা করছিস কেনো? আমি সিরিয়াস।"

মিহির ততক্ষণে হাসতে হাসতে চোখের কোণে জল গড়িয়ে পড়লো। ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলের মাধ্যমে সেই জলটা মুছে নিয়ে পেট ফাঁটা হাসি থামিয়ে বললো,

"বিয়ে করার হলে আগেই করতাম। বিয়ের বয়স পার হওয়ার আশায় বসে থাকতাম না। যার মা-বাবা নেই, তাকে কে বিয়ে করবে বল?"

"তোর বাবা-মা নেই দু'বছর হলো, এর আগে তো করার কথা ছিলো, তখন করিস নি কেন?"

মাহবুবের এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই মাহবুবের স্ত্রী রুমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। ঘুমিয়ে ছিলো মেয়েটা। সোফায় বসে থাকা ফর্মাল পোশাকে পড়া মিহিকে দেখেই সে মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। চুল গুলো খোঁপা করে সোফার কাছটাতে এসে, উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বললো, 

"আপনি মিহি আপু না? আপনাকে দেখার অনেক ইচ্ছে ছিলো আমার। কেমন আছেন আপু?"

রুমির দিকে পূর্ণদৃষ্টি দিলো মিহি। গোলগাল, ছোট্ট মিষ্টি মুখমন্ডলে আটকে গেলো মিহির নেত্র যুগল। প্রশংসার স্বরে বললো, 

"বাহ্ মাহবুব, দারুণ বউ এনেছিস তো? এত মিষ্টি! এ জন্য ই তো বলি আমার বন্ধু হুট করে বিয়ে কেনো করেছে। কি দারুণ মেয়ে!"

"কই হুট করে বিয়ে করলাম? তোদের জানিয়েই তো করেছি। দাওয়াত ও দিয়েছিলাম। আসিস নি তুই। বরং হুট করে জানতে পারলাম তুই শহর ছেড়েছিস। একদম উধাও হয়ে গেলি।"

মিহির অকৃত্রিম হাসিটা ততক্ষণে মিলিয়ে গিয়েছিলো কিন্তু ভদ্রতার জন্য মিছে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে ঠোঁটের কোণে। 

রুমি আবার বললো,

"মিহি আপু, আপনার গল্প অনেক শুনেছি। আপনাকে তো দেখেছি অনেক ছবিতে। আমাদের ঘরে বড় করে আপনার আর উনার একটা ছবি টানানো আছে। সরাসরি যে দেখতে পাবো ভাবিই নি।"

রুমির কথায় অবাক হলো মিহি। মাহবুব তাদের ছবি টানিয়ে রেখেছে নিজের বেডরুমে? ছেলেটা অবশ্য পার্ফেক্ট ছিলো বন্ধুত্বের দায়িত্বে। কোথাও স্বার্থপর টা মিহিই ছিলো। ভাবতেই হতাশার দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো মিহির। নিজের মন খারাপ টা কিনারে রেখেই হাসি হাসি মুখে রুমির উদ্দেশ্যে বললো,

"আসলে জরুরী প্রয়োজনে শহর ছাড়তে হয়েছিলো। পরে আর যোগাযোগ করতে পারি নি। ব্যস্ত হয়ে গিয়ে ছিলাম নিজের জীবনে। আজ হুট করে মনে হলো তোমাদের দেখতে আসা উচিৎ তাই সাত ঘন্টার পথ পাড়ি জমিয়ে চলে এলাম।"

"পাঁচ টা বছর লেগে গেলো আমাদের মনে পড়তে? বাহ্ ভালোই তো স্বার্থ*পর হয়েছিস।"

মিহি স্মিত হেসে ক্ষীণ স্বরে বললো, 

"কিছুটা আর কি।"

হঠাৎ মিহির নজর গেলো রুমির ফুলে উঠা পেটটার দিকে। অজান্তেই ধক্ করে উঠলো হৃদয়। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, 

"সুখবর আছে বলিস নি তো?"

"এলি ই তো মাত্র। জানাতাম পরে।"

মিহির হৃদয় কাঁপলো। ছোট বেলা থেকেই তার হৃদয়ের বড় অংশ জুড়ে মাহবুবের বসবাস ছিলো কিন্তু মাহবুব কখনো বুঝে নি। মাহবুব কোনো একদিন বুঝবে ভেবে কত বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে সে। মেয়েদের বয়স কুড়ি পেরুলেই যে সমাজ তাদের বুড়ি বানিয়ে দেয়, সে সমাজে মিহি পঁচিশ বছর অব্দি টিকে ছিলো। মাস্টার্স পাশ করেছে একসাথে। হুট করেই একদিন মাহবুব বললো তার বিয়ে। এত বড় সারপ্রাইজ মিহি মানতে পারে নি, তাই দীর্ঘ বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে সে সবার থেকে দূরে চলে গিয়ে ছিলো। এতে অবশ্য মাহবুবের দোষ নেই, মিহির ভালোবাসা টা একপাক্ষিক ছিলো। মাহবুব বন্ধু হিসেবে তো অগাধ ভালোবাসা দিয়েছে, জীবন সঙ্গিনীর জায়গায় হয়তো নিতে পারে নি। 

আফসোসের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হলো মিহির বুক। চোখের জল লুকাতে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে। 

মিহিকে উঠে দাঁড়াতে দেখে মাহবুবও উঠে দাঁড়ালো। অবাক কণ্ঠে বললো, 

"কিরে, মাত্রই তো এলি। চলে যাবি নাকি?"

মিহি আলতো হেসে উত্তর দিলো, 

"হ্যাঁ রে, একটা কাজ আছে এখানে। আবার আসবো, আজ যেতেই হবে।"

"থাকুন না, আপু। ভালোই তো লাগছিলো।"

রুমির কথায় আরেকবার রুমির দিকে দৃষ্টি দিলো মিহি। মিষ্টি কণ্ঠে বললো, 

"বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে। ভালো থেকো। আমার বন্ধু খুবই ভালো মানুষ৷ অনেক দায়িত্ববান। আগলে রেখো। তুমি অনেক ভাগ্যবতী গো।"

আর কথা বলতে পারলো না মিহি। কোনো মতে চোখের জল লুকিয়ে বের হয়ে গেলো। ভেজা চোখ সে মাহবুবকে যে দেখাবে না, কিছু অশ্রু একান্তই নিজের। 

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে মিহি তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

"লিপস্টিক হারানো আর মানুষ হারানোর কান্না তো এক না মাহবুব। তুই বুঝবি না সে কান্না। লিপস্টিক হারিয়ে আমি এক ঘন্টা কাঁদতাম। তোকে হারিয়ে আমি আমরণ কেঁদে যাবো। এই কান্নার জল রঙহীন না, এই কান্নার রঙ নীল। কারণ বিষাদের রঙ নীল।"

খোলা দরজার দাঁড়িয়ে মিহির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো মাহবুব। আপনমনেই বললো,

"আমি জানি মিহি, তুই আর কখনো আসবি না। আমি জানি। সত্যিই আমি দায়িত্ববান। তাইতো দায়িত্বের বেড়াজালে আটকে আজ অন্য কারো সঙ্গে ঘর বেঁধেছি, সে ঘরও করে যাচ্ছি।"

মাহবুবের ভেজা চোখও মিহি দেখে নি। গোপনে রইলো সে বিরহ অশ্রু। 

দুই জনের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো রুমি। সেও তো কাঁদছে। মিহি বলছে সে ভাগ্যবতী, অথচ মিহি জানেনা সবচেয়ে ভাগ্যবতী তো সে নিজেই। যার জন্য প্রতিনিয়ত একজন পুরুষ দহনে পুড়ে, সে নারীর চেয়ে ভাগ্যবতী কী কেউ আছে! রুমি মাহবুবকে পেয়েও পায় নি আর মিহি না পেয়েও পেয়ে গেছে। রুমির অবশ্য আফসোস নেই। সবাইকে কি আর এক জনমে পাওয়া হয়! মাহবুবকেও নাহয় তার না পাওয়ায় রাখলো। তবুও ভেজা চোখ দেখাবে না কাউকে। 


( সমাপ্ত )




লেখিকা: মম সাহা

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner