Leave a message
> প্রেসকিপশনের ডাক্তার
-->

প্রেসকিপশনের ডাক্তার


আমি একজন সুপ্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। পারিশ্রমিক হিসেবে একজন রোগীর কাছ থেকে মাত্র ২৫টাকা করে নিচ্ছি। যদি সম্ভব হত ফ্রীতেই দেখতাম কিন্তু কথায় আছে না, মেধার মূল্য দিতে হয়।
প্রতিদিন বিভিন্ন যায়গা থেকে বিভিন্ন রোগের অসংখ্য রোগীরা আমার চেম্বারে আসে। আগের চেম্বারে যায়গার স্বল্পতার কারণে রোগীদের সিরিয়ালে দাঁড়াতে হতো, দিনকে দিন রোগী বাড়তে থাকায় বড় একটা চেম্বার নিয়েছি। এই চেম্বারে এখন আর কাউকে লাইনে দাঁড়াতে হয় না। চেম্বারের সামনে সিরিয়াল দেয়ার জন্য একজন কর্মী রেখে দিয়েছি তার কাছ থেকে সিরিয়াল নিয়ে রোগীরা আরামদায়ক চেয়ারে বসে টেলিভিশনে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি নতুবা ডিসকভারি চ্যানেল দেখতে দেখতেই তাদের সিরিয়াল চলে আসে। তাছাড়া চেম্বারে এসিও লাগিয়ে দিয়েছি, আমি চাই আমার সকল রোগীদের উন্নত সেবা প্রদান করতে।
উন্নত এবং নির্ভুল সেবা প্রদানের কারণে বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছি ইতোমধ্যে, তবে আমার সুপরিচিতি এবং সুনামে বেশ কিছু ডাক্তার ক্ষুব্ধ হয়েছে কারণ তাদেরকে দেখানোর পর রোগীরা আমার শরণাপন্ন হতে বাধ্য হচ্ছে। এতে অবশ্য আমি বিশেষ ভাবে চিন্তিত নই বরং গর্বিত, যা তারা দীর্ঘদিন ডাক্তারিতে পড়াশোনা করে অর্জন করতে পারেনাই তা আমি একজন ইন্টার ফেইল করা ছাত্র হয়ে পেরেছি।
দিনকে দিন আমার চেম্বারে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চিন্তা-ভাবনা করছি দেশের বিভিন্ন যায়গায় নতুন কিছু শাখা খুলব, তবে আমার একার পক্ষে তো আর সব যায়গায় গিয়ে গিয়ে সময় দেয়া সম্ভব না, তাই কিছু বিশ্বস্ত ছেলে-মেয়ে খুঁজছি নিজ হাতে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে লাগবে সর্বনিম্ন এস.এস.সি ফেইল, তবে অনার্স পাশ বেকার ছেলে-মেয়েদেরকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণরূপে ফ্রিতে দেয়া হবে এবং প্রশিক্ষণের পর সরাসরি ডাক্তারি পদে নিযুক্ত করার নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
ঘন্টাখানেক হলো 'বেকার চ্যানেল' থেকে একজন সাংবাদিক এসে আমার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। রোগীদের ভীড়ে দম ফেলবার সময়টুকুও আজ-কাল পাচ্ছি না। রোগী দেখা শেষ করে তাকে ভেতরে আসতে বলে সহযোগীকে দু কাপ কফি দিতে বললাম।
সাংবাদিক কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে প্রশ্ন করল- কেমন আছেন?
—"জ্বী ভাল।"
—"আপনার চেম্বারে কি সবসময়ই রোগীদের এমন উপচে পরা ভীড় থাকে?"
—"হ্যাঁ। দিনকে দিন রোগীর সংখ্যা আরও বাড়ছে।"
—"এতো রোগীদের ভীড়ের কারণ কি বলে আপনার মনে হয়?"
—"আসলে রোগীদের উন্নত এবং নির্ভুল সেবা প্রদানই আমার মূল লক্ষ্য। দীর্ঘদিন থেকে নির্ভুল সেবা প্রদানের মাধ্যমে আমি তাদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।"
—"কোন রোগের রোগীরা সবচেয়ে বেশি আপনার শরণাপন্ন হয়।"
—"সব ধরণের রোগীরাই আসে, ডাইরিয়া, পাইলেরিয়া, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ক্যান্সার, হাড় ভাঙ্গা, চোখের সমস্যা, কানে সমস্যা, চর্ম, যৌন ইত্যাদি ইত্যাদি।"
—"ভিজিট বাবদ মাত্র পঁচিশ টাকা নেন আপনি?"
—"জ্বী। সেবা প্রদানই আমার মূল লক্ষ্য। যদি সম্ভব হতো তাহলে পঁচিশ টাকাও নিতাম না।"
—"শুনেছি বিভিন্ন ডাক্তারদের দেখিয়ে রোগীরা আপনার শরণাপন্ন হতে বাধ্য হয়, এই ব্যাপারে কি বলবেন আপনি?"
—"ঠিকই শুনেছেন। দেখুন তারা আসবে না কেন? বেশিরভাগ ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশনে কি লেখে না লেখে তা একজন রোগীর পক্ষে বোঝা সম্ভব না, শুধু রোগী কেন একজন বাংলা অথবা ইংরেজীর অধ্যাপকের পক্ষেও বোঝা সম্ভব না। অনেকেই প্রেসক্রিপশন দেখে কি ঔষধের নাম লেখা আছে বুঝতে না পেরে ভুল ঔষধ কিনে সেবন করে রোগমুক্তির যায়গায় আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পরছে। আমি সেই দায়িত্বটাই নিয়েছি, প্রেসক্রিপশন দেখে স্পষ্ট ভাবে ঔষধের নাম লিখে দিচ্ছি।"
—"তার মানে আপনি হচ্ছেন প্রেসক্রিপশনের ডাক্তার?"
—"জ্বী, আপনি ঠিক ধরেছেন।"
—"আপনার মাথায় এরকম পরিকল্পণা এলো কি করে?"
—"আসলে একবার প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হই, ডাক্তার আমাকে দেখে প্রেসক্রিপশনে কিছু ঔষধের নাম লিখে দেয়- ঔষধ গুলোর মধ্যে একটা ঔষধের নাম ছিলো- লোফেন কিন্তু ডাক্তারের লেখা দেখে 'লোফেন' বোঝার কোন উপায় ছিলো না মনে হচ্ছিল টোফেন। প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঔষধের দোকানে যাবার পর তারা আমাকে লোফেনের যায়গায় টোফেন দিয়ে দেয়। তিনবেলা তিনটা টোফেন খেয়ে আমি টানা তিনদিন ঘুমিয়েছি, তখনই প্রথম পরিকল্পণা টা মাথায় আসে।"
—"এই পেশা নিয়ে ভবিষ্যতে কোন পরিকল্পণা আছে কি?"
—"জ্বী, অবশ্যই আছে। যেহেতু দেশের সব যায়গাতেই মানুষ প্রতিনিয়তই অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হচ্ছে এবং ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশনে রোগীদেরকে নানাবিধ ঔষধের নাম লিখে দিচ্ছে, রোগীরা ঠিকমতন ঔষধের নাম বুঝতে পারছে না, ভুল ঔষধ সেবন করছে সেহেতু আমার চিন্তা ভাবনা আছে দেশের বিভিন্ন যায়গায় নতুন কিছু শাখা খোলার।"
—"সব যায়গায় কি আপনি সময় দিতে পারবেন?"
—"নাহ, আমার একার পক্ষে কি আর সব যায়গায় সময় দেয়া সম্ভব? তাই কিছু ছেলে-মেয়ে খুঁজছি। তাদেরকে নিজ হাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে একেকটা শাখার দায়িত্ব দিয়ে দিব।"
—"প্রশিক্ষণ নিতে কি ধরণের যোগ্যতা থাকতে হবে?"
—"তেমন কোন যোগ্যতা চাইছি না, শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে অবশ্যই এস.এস.সি পর্যন্ত পড়াশোনা থাকতে হবে তবে অনার্স পাশ বেকারদেরকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হবে।"
সাংবাদিক মাইক্রোফোন রেখে, ক্যামেরা সরিয়ে আমাকে বলল,
"স্যার তাদের বেতন কেমন দিবেন?"
—"৩০ থেকে ৪০হাজার টাকা, যায়গা বুঝে এবং রোগীদের চাহিদা বুঝে।"
সাংবাদিক এবার আমার হাত ধরে বলল,
"স্যার, দেশে বর্তমানে সাংবাদিকের অভাব নাই। অনেক সখ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে সাংবাদিকতায় অনার্স শেষ করে কোন চ্যানেলে চাকরি না পেয়ে শেষ পর্যন্ত একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলেছি, কিন্তু বর্তমানে ইউটিউবেও সংবাদের চ্যানেলের অভাব নাই। মাঝে মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ যোগাড় করতে হয়, দৌড়ানি খেতে হয়, এরপরেও মাসে ১০হাজার টাকা কামাতে হিমশিম খেতে হয়। স্যার, আমাকে কি প্রশিক্ষণ দেয়া যায়?"

Writer:- নাহিদ হাসান নিবিড়
 

Delivered by FeedBurner

a