সেজুতিদের বাসা থেকে বের হয়ে সোজা বাসায় চলে এলাম।জ্বর আরো বেড়ে গেলো টেনশনে।কি করবো আমি এখন সেজুতিকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।কিন্তু ওর তো ফ্যামিলি আছে।ও কোনোদিনো আমার হবে না।যে করেই হোক ভুলে যেতে হবে ওকে।কিন্ত একটা কথা আমি কিছুতে ভেবে পাচ্ছি না, সেজুতি যদি বিবাহিত হয়, তাহলে পুরো বাড়িতে ওর ছবি আছে,ওর মেয়ে অণুর ছবি আছে,তাহলে কোথাও ওর হাসবেন্ড এর ছবি কেনো দেখতে পেলাম না?কাহিনি কী।তাহলে কি একটু খোজ নিয়ে দেখবো?হুম সেটাই ঠিক হবে।
পরেরদিন গলির মোড়ের চায়ের দোকানটাতে বসে বসে চা খাচ্চি।তখন মায়াদের বাসার নিচের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া নজরুল চাচার ছোট ছেলে রনি এসে বসলো আমার পাশে।মায়াকে পড়াতে যেতাম, প্রায় ওর সাথে দেখা হতো।বেশ ভালো সম্পর্ক আমার রনির সাথে।ওকে তাহলে জিঙ্গাসা করা যাক সেজুতির কথা।যদি কিছু জানতে পারি।
-আরে রনি। কেমন আছো?(আমি)
-জ্বী ভাইয়া ভালো।আপনি এখানে?আংকেল দেখলে কিন্তু আপনার খবর আছে।
-আরে বাদ দেও তো।কিছু বলবে না।সে জানে আমি এমন।(আমি)।
-আশ্চর্য মানুষ আপনি ভাইয়া।আপনার মত মানুষ এখনকার যুগে দুটো খুজে পাওয়া মুশকিল। (রনি)।
-কেনো?(আমি)।
-এত বড়লোকের ছেলে হয়ে আপনি এত ভালো একজন মানুষ আর এত সাধারন ভাবে চলাফেরা করেন। আপনি এত বড়লোকের ছেলে তবুও আপনার মোনে বিন্দু মাত্র অহংকার নেই।(রনি)।
-কি যে বলো না।বাদ দাও এসব।তা দিন কাল কেমন কাটছে তোমার?পড়াশনার কি অবস্থা?(আমি)।
-এই তো ভাইয়া ভালোই।আপনার টিউশনির কি খবর?ও ভাইয়া একটা টিউশনি আছে ওরা টিচার খুজছে।আমাকে বলেছিলো আপনার কথা।আপনি পড়াতে পারবেন ভাইয়া?(রনি)।
-না রনি। গতকাল থেকে নতুন একটা টিউশনি নিছি।না হলে পারতাম।(আমি)।
-কোথাই ভাইয়া?
-এই তো তোমাদের পাশের বিল্ডিংটাতে।
-পাশের বিল্ডিং এ কাদের বাসায়?
-সেজুতি নামের একটা মেয়ে থাকে না?ওর মেয়েকে।
-কি বলেন ভাইয়া।ঐ বাড়িতে।
-কেনো? কোনো সমস্যা নাকি?
-না সমস্যা নেই।সেজুতি আপু খুবি ভালো।কিন্ত!
-কিন্তু কী?
-ওনার ভাগ্য টা খুবি খারাপ।ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো।বিয়ের ২ মাস পরেই ওনার হাসবেন্ড মারা যায় রোড এক্সিডেন্টে।তার কিছুদিন পরেই উনি জানতে পারেন উনি প্রেগন্যান্ট। শশুর বাড়ির লোক ওনাকে অপয়া বলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো।
-ঐ বাড়িতে উনি একা থাকেন নাকি?(আমি)।
-না আগে ওনার মাও থাকতো।(রনি)।
-থাকতো মানে?এখন আর থাকে না?(আমি)।
-না। ওনার মা উনি শশুর বাড়ি থেকে চলে আসার কিছুদিন পর মারা যায়।মেয়ের এই অবস্থা দেখে উনি সহ্য করতে পারেননি।কারন সেজুতি আপুর বাবাও একি ভাবে রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিলো।(রনি)।
-তা পরে আর বিয়ে করেননি সেজুতি?(আমি)।
-না। সবাই অনেক বলেছিলো কিন্ত উনি একেবারে না করে দিয়েছিলো।আর ওনার রিলেটিভ বলতে ওনার বড় চাচা আছেন তিনি তার ফ্যামিলি নিয়ে দেশের বাইরে থাকেন।বছরে একবারো সেজুতি আপুর খোজ নেই না ওনারা।আসলে কি জানেন ভাইয়া ভালো মানুষের কপালটাই খারাপ হয়।আমি যদি বড় হতাম তাহলে আমি সেজুতি আপুকে বিয়ে করে নিতাম।ওনার মত এমন মেয়ে খুজে পাওয়া যাই না এখনকার সময়।(রনি)।
-না রনি।ভাগ্য আমাদের নিজেদের কেই তৈরি করে নিতে হয় জানো সেটা।কথাটা বলে আমি উঠে চলে এলাম।একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।আমি সেজুতিকে একটা নতুন জীবন দিতে চাই।
-সৌরভ ভাইয়া কি হলো?কোথাই যাচ্ছেন?চা টা তো শেষ করে যান।
-এখন চা খাওয়ার সময় নেই।তুমি খাও।
-হা হা হা(রনি)।
এবার আমার একটাই কাজ যেভাবেই হোক সেজুতিকে নিজের করা।ওকে আমার মনের কথাটা খুলে বলতেই হবে।তার জন্য ওর মেয়ে অণুর মন জয় করতে হবে আমাকে।আর তার জন্য ওকে পড়াতে যেতে হবে।হুম যাবো আমি পড়াতে।
এখন আমার একমাত্র টার্গেট হলো অণু।
অনুকে পড়াতে গেলাম পরেরদিন।কলিং বেল বাজাতেই অণু এসে দরজা খুলে দিলো।
-কেমন আছো অণু মামুনি?(আমি)।
-আম্মু,আম্মু দেখো কে এসেছে।আম্মু দেখো সৌরভ এসেছে।(অণু কথাটা বলতে বলতে সেজুতিকে টেনে আনলো ভেতর থেকে?)
-আরে আপনি? কেমন আছেন?(সেজুতি)।কাল ওভাবে হঠাৎ করে চলে গেলেন আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আপনি আবার ফোন করে না বলেন যে আপনি অণুকে পড়াতে পারবেন না।(সেজুতি)।
-আরে না না তেমন কোনো ব্যাপার না।আসলে কাল একটা কাজের কথা মনে পড়ে গিয়েছিলো তাই চলে গিয়েছিলাম।
-আচ্ছা সৌরভ তুমি কি তাহলে আজ থেকে আমার নতুন টিচার?(অণু)।
-অণু মামোনি।সৌরভ তোমার অনেক বড় তাই উনাকে নাম ধরে নয় ভাইয়া বলে ডাকবে ওকে।(সেজুতি)।
-আচ্ছা ঠিকআছে তাহলে আমি ওকে সৌরভ ভাইয়া বলে ডাকবো ওকে?(অণু)।
-পাকা বুড়ি একটা।অনেক পাকামো হয়েছে এবার পড়তে যাও তোমার সৌরভ ভাইয়ার সাথে।(সেজুতি)।
সেজুতি কথাটা বলা মাত্র অণু আমার হাতটা ধরে ওর পড়ার রুমে নিয়ে গেলো।
-এই দেখো সৌরভ এটা আমার রুম।ইসস সরি সৌরভ ভাইয়া।(অণু)।
-হুম তোমার রুমটা খুব কিউট।একদম তোমার মত।চলো এবার তবে পড়া শুরু করা যাক।(আমি)।
-হুম চলো।(অণু)।
-আচ্ছা অণু তোমার বাবা তোমাদের সাথে থাকে না?(আমি)।
-অণু মাথাটা নিচু করে বললো।'আমার তো বাবা নেই।মা বলে বাবাই ঐ আকাশের তারা হয়ে গেছে।
-আচ্ছা বাদ দাও ওসব কথা এখন বলো কোন সাবজেক্ট টা তোমার পড়তে সবথেকে বেশি ভালো লাগে?
-হুম আমার তো পড়তেই ভালো লাগে না।
-এমন বললে কি হবে?তোমাকে তো অনেক বড় হতে হবে।লেখাপড়া না করলে বড় হবে কীভাবে?
-জানোতো আম্মু বলেছে পড়াশনা না করলে বিয়ে দিয়ে দেবে।তুমি বরং আমার জন্য একটা ছেলে দেখো সৌরভ।পড়াশনা আমাকে দিয়ে হবে না।(অণু)।
-হা হা হা হা। রান্না করতে পারবে তো?কাপড় কাচতে পারবে?এত এত থালাবাসন মাজতে হয় পারবে তো?
-কি বিয়ে করলে বুঝি এসব করতে হয়?
-হুম।শুধু এসব না।আরো অনেক কাজ করতে হয়।এসব না পরলে তোমাকে খুব মারবে তোমার বর।
-তাহলে বরং থাক।আমি বরং পড়াশোনাটাই করি।
এভাবে অণুর সাথে ধীরে ধীরে আমার খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো।একদম বন্ধুর মত।অণুকে পড়ানোর সময় আমি সেজুতিকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতমা।মনে হতো ওকে এখুনি মনের কথাটা বলে ফেলি।কিন্ত পারতাম না।সাহস হতো না বলার।
একদিন অণুর স্কুলের সমানে দিয়ে যাচ্ছি দেখি অণু দাড়িয়ে আছে স্কুলের গেটের কাছে।ও আমাকে দেখে ডাক দিলো।
-সৌরভ ভাইয়া।এই সৌরভ ভাইয়া।এই যে এদিকে আসো।(অণু)।
-কি বেপার অণু এখানে এই রোদে এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো?
-আজ একটু তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেছে আম্মু তো জানেনা তাই আম্মু না আসা পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকতে হবে।আমিতো একা যেতে পারবো না বাসায় তাই।
-আমি তোমাকে পৌছে দিচ্ছি চলো বাড়িতে।
-ঠিক আছে যেতে পারি যদি আমাকে অনেকগুলো আইসক্রিম কিনে দাও তবে।
-ঠিক আছে চলো।
অণুকে আইসক্রিম কিনে দিলাম।ও খাওয়া শেষ করতেই ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নামলো।আজো আমি ছাতা নিয়ে আসিনি।একটা দোকানে দাড়ালাম আমি আর অণু।বৃষ্টি শেষ হলো প্রায় ২০ মিনিট পরে।
-সৌরভ ভাইয়া অনেক দেরি হয়ে গেলো আম্মু বকা দিবে খুব।
-আরে কিছু বলবে না আমি আছি তো।চলো।
আমরা অণুদের বাসায় পৌছে কলিং বেল বাজানোর সাথে সাথে সেজুতি এসে দরজা খুলেই সেজুতি অণুকে জড়িয়ে ধরে হাওমাও করে কান্না শুরু করলো।
-কোথাই ছিলি মা তুই?কত খুজেছি তোকে আমি জানিস?আমি তো ভেবেছিলাম তোকে আমি মনে হয় হারিয়েই ফেললাম।(সেজুতি)।
-আসলে ওর কোনো দোষ নেই আমি ওকে জোর করে নিয়ে গেছিলাম আইসক্রিম খাওয়াতে।(আমি)।
আমি কথাটা বলার সাথে সাথে সেজুতি উঠে আমাকে সপাটে একটা চড় মারলো।
-অণু না হয় অবুঝ আপনিও কি অবুঝ।ওকে নিয়ে গিয়েছেন ভালো কথা একটাবারো কি আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করেননি।আপনি জানেন আমার কতটা টেনশন হচ্ছিল।
-আম্মু সৌরভকে বকো না।আমি ওকে বলেছিলাম।
-চুপ থাকো একদম তুমি।একটা কথাও বলবে না তুমি। তুমি অতিরিক্ত বুঝতে শিখেছো।যাও নিজের রুমে যাও এখুনি।
কথাটা বলা মাত্র অণু মাথা নিচু করে চলে গেলো।
-এতটুকু একটা মেয়েকে বকার কি দারকার ছিলো?(আমি)।
-আমার মেয়ে, আদর করবো কি বকা দেবো সেটা একান্তই আমার পারসোনাল ব্যাপার।আপনি হোমটিউটর, হোমটিউটরের মত থাকুন।আমাদের মা মেয়ের ব্যাপারে একদম নাক গলাবেন না।আপনি এখন আসতে পারেন প্লিজ।(সেজুতি)।
-ধুর নিকুজি করেছে পড়ানোর আর পড়াতেই আসবো না।কি এমন করেছি। একটু তো আইসক্রিমি খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম।তাতে এমন কি হয়েছে?আর আসবোই না এই বাড়িতে।
কথাটা বলতে বলতে যাচ্ছি হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা পড়ে গেলাম।
তাকিয়ে দেখলাম রনি।
-আরে সৌরভ ভাইয়া একি অবস্থা আপনার।এত ভিজলেন কি করে?(রনি)।
-ও কিছু না।(আমি)।
-কিছু না মানে।আপনার তো ঠান্ডার সমস্যা বাসায় যেতে যেতে তো ঠান্ডা লেগে যাবে আপনার।চলুন আমাদের বাসা থেকে চেঞ্জ করে নিবেন।
-আরে না থাক সমস্যা নেই।
-আরে চলুন তো সমস্যা নেই।কথাটা বলে রনি জোর করে আমার হাতটা ধরে ওদের বাসায় নিয়ে গেলো।,,
ভাবছি আমি যে সেজুতিকে ভালোবাসি সেটা রনিকে বললে কেমন হবে?ও যদি কোনো ভাবে সাহায্য করতে পারে আমাকে।
Writer:- আতিকা জাহান