তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। ইতিহাসের খলনায়ক অ্যাডলফ হিটলার হঠাৎ ইহুদি বধের নির্দেশ দিলেন! হিটলারের নির্দেশে কাজ শুরু করলেন, তার একান্ত সহযোগী আইখম্যান। আইখম্যান শুরু জীবনে কাজ করতেন তেলের পাম্পে। কেরানি ছিলেন সেখানের! তারপর হিটলারের নির্দেশে নাৎসি বাহিনীতে যোগদান করেন।
ইহুদি হত্যার নির্দেশ পেয়ে আইখম্যান এক অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেন! তালিকা করে পুরো জার্মানির সব জায়গা থেকে খুঁজে খুঁজে ইহুদিদের ধরে গাদাগাদি করে ভরা হতো মালগাড়িতে! তারপর ঠকঠক ঠকঠক করে সেই গাড়ি চলতে শুরু করতো দিগন্তের শেষ প্রান্তে! হঠাৎ একটা বিরানভূমির কাছে এসে গাড়ি থেমে যেতো! তারপর সব ইহুদিদেরকে মালগাড়ি থেকে বের করে বিরানভূমি দেখিয়ে বলা হতো, আজ থেকে এই ভূমিতে তোমরা কাজ করবে! তবে তার আগে গোসল করে তোমাদেরকে সাফসুতর হতে হবে। অতঃপর সাফসুতরের কথা বলে ইহুদি নারী-পুরুষ-যুবক-বৃদ্ধ সবাইকে বিবস্ত্র করে ঢুকানো হতো কল্পিত স্নানাগারে। যার কোনো জানালা নাই, আবহাওয়া প্রবেশের পথ নাই! তারপর পানির বদলে উপর থেকে সবার উপরে ঢেলে দেওয়া হতো, বিষাক্ত গ্যাস! শুরু হতো নারী-পুরুষের আর্তচিৎকার! গ্যাসের প্রকোপ বাড়তে থাকলে গুঞ্জন ক্রমশ কমে আসতো। মরে সাফ হয়ে যেতো সব!
এভাবে গ্যাস পাম্পে ঢুকিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ৬০ লাখ ইহুদিদের হত্যা করেন তিনি!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একটা পর্যায়ে এসে পরাজিত হোন হিটলার! পালিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি! আর সহযোগী আইখম্যান ইটালি হয়ে চলে যান সুদূর আর্জেন্টিনায়! সেখানে গিয়ে নামধাম বদলে কৃষি ফার্ম আর গাড়ির গ্যারেজে কাজ শুরু করেন তিনি!
কিন্তু তার প্রতি ইহুদিরা শুরু থেকেই খুব ক্ষিপ্ত ছিলো। বহুবছর পর ইহুদি গোয়েন্দাসংস্হা মোসাদের হাতে ধরা পড়েন তিনি!
তাকে হত্যার সবরকম আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। ফাঁসির আগে শেষ ইচ্ছে হিসেবে একজন ইহুদি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার শেষ ইচ্ছে কী?
আইখম্যান বললেন, আমি ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করতে চাই! উত্তর শুনে উপস্থিত সবাই হেসে উঠলো। কেও কেও বললো, তুমি কি ভেবেছো, আমাদের ধর্ম গ্রহণ করলে আমরা তোমাকে মুক্তি দিবো? তা কখখনো হবে না! তুমি আমাদের ৬০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছো!
কয়েকজন কৌতুহলী ইহুদি আইখম্যানকে জিজ্ঞেস করলো— আচ্ছা! তুমি আমাদের ধর্ম কেন গ্রহণ করতে চাচ্ছো?
আইখম্যান নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন, মুক্তি তোমরা আমাকে দিবে না, জানি! মরতে আমাকে হবেই! তারপরও আমি ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করতে চাই। মৃত্যুর আগে দেখে যেতে চাই, আরো একজন ইহুদি মারা যাচ্ছে!
এই আইখম্যানকে নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়! মানবতাবিরোধী মানুষ হিসেবে তাকে চিহ্নিত করা হয়! কিন্তু আমি ভেবে অবাক হই, একটা মানুষ কতোটা তেজী হলে মৃত্যুর সময়ও এমন নির্বিকার ভঙ্গিতে পুরোনো কাজ আবার দেখে যেতে চায়! একজন ইহুদি মারা যাবে, এই খুশিতে নিজেই হতে চায় ইহুদি!
Writer:- Omar Faruk