এই বাড়িটাতে আমি টানা ৪ বছর টিউশনি করাচ্ছি।একটা মেয়েকে পড়াই।তার নাম মায়া।মায়া ক্লাস ২ থেকে পড়ে আমার কাছে।আমার পড়াশনা শেষ চাকরির জন্য ঘুরছি,টিউশনি করাই বেশ কয়টা।আমার পড়ানো মায়ার বাবা মায়ের ভীষন পছন্দ তাই তারা আমাকে ছাড়তেই চাই না।আমি টিউশনি করাই সখের বসে।বাবা আমার কটিপতি। তাতে আমার কিছু আসে যাই না। আমি নিজের উপার্জন করা টাকাই নিজের খরচ চালাই।বাবার টাকাতে ফুটানি করা আমার একদম পছন্দ না।আমি সাধারন ভাবে চলাফেরা করতে ভালোবাসি।আমার বাবা যে এত ধনী সেটা আমার কলেজের কেউ জানেনা।সবাই জানে আমি একটা মধ্যবিও পরিবারের ছেলে।
আমি মায়াকে যেই রুমে পড়াই সেই রুমের পাশে, পাশের বিল্ডিং এর ফ্ল্যাটের বেলকনি দেখা যাই।
একদিন মায়াকে পড়াচ্ছি হঠৎ ঐ বেলকনিতে একটা মেয়ে এসে দাড়ালো।এতদিন মায়াকে পড়াই আগে কখনো দেখিনি মেয়েটাকে।মেয়েটা শ্যামবর্ণ।
দেখতে যেমন সুন্দরী,তেমনি মায়াবি।দেখলে যেনো চোখ ফেরানো যাই না।
দেখতে যেমন সুন্দরী,তেমনি মায়াবি।দেখলে যেনো চোখ ফেরানো যাই না।
প্রথমদিন দেখেই মেয়েটাকে ভীষন ভালো লেগে গিয়েছিলো।
এর পর থেকে মায়াকে রেগুলার পড়াতে আসতাম শুধুমাত্র ঐ মেয়েটাকে একটাবার দেখার জন্য।আগে সপ্তাহে একদিন হলেও কামাই যেতো এখন আর যাই না।আমি শত কাজ থাকলেও মায়াকে পড়াতে আসি।
আমি একদিন মায়াকে পড়াতে পড়াতে দেখলাম সেই মেয়েটা বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।আমি মায়াকে বললাম,,
আমি-আচ্ছা মায়া ঐ মেয়েটাকে চিনো তুমি?
মায়া-কোন মেয়েটা স্যার?
আমি মায়াকে বেলকনির দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দেখালাম,ঐ যে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে ঐ মেয়েটাকে।
মায়া-হ্যাঁ চিনি তো।
আমি-নাম কি মেয়েটার?
মায়া-ওর নাম তো সেজুতি।
আমি-সেজুতি বাহ্ খুব সুন্দর নাম।
এরপর একদিন মায়াকে পড়াতে এসে দেখি মায়া বেলকনিতে দাড়িয়ে সেজুতির সাথে কথা বলছে।
আমি গেলাম বেলকনিতে।এই সুযোগে যদি সেজুতির সাথে একটু কথা বলতে পারি।এগিয়ে গেলাম মায়ার কাছে।
আমি-মায়া কি করছো?
মায়া-এই তো কথা বলছিলাম সেজুতি আপুর সাথে।সেজুতি আপু এই দেখো এটা আমার টিচার সৌরভ ভাইয়া।
আর সৌরভ ভাইয়া এটা সেজুতি আপু।
আর সৌরভ ভাইয়া এটা সেজুতি আপু।
আমি-আসলামুয়ালাইকুম।
সেজুতি-ওয়ালাইকুমআসসালাম।
আচ্ছা মায়া তোমার স্যার এসেছে তুমি পড়ো আবার পরে কথা হবে।বাই।
আচ্ছা মায়া তোমার স্যার এসেছে তুমি পড়ো আবার পরে কথা হবে।বাই।
কথাটা বলে সেজুতি আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।
আমিও হা করে তাকিয়ে রইলাম সেজুতির দিকে।
মায়া-ও স্যার, স্যার পড়াবেন না?(আমার হাত ধরে নাড়া দিতে দিতে বললো মায়া)।
আমি-হ্যাঁ হ্যাঁ চলো।
এরপর মাঝে মাঝে সেজুতি বেলকনিতে আসতো আর আমি ওকে দেখতাম।লুকিয়ে লুকিয়ে।কিছুদিন পর আমি খেয়াল করলাম সেজুতিও আমাকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।মনে হয় সেজুতিও আমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে।
না এভাবে আর পারছিনা।মনে হয় ভালোবেসে ফেলেছি সেজুতিকে আমি।এবার সেজুতির সাথে দেখা হলে সাহস করে ওর কাছে ওর ফোন নম্বর টা চাইবো যা হবার হবে।
সেদিন পড়াতে গেছি আর বার বার বেলকনির দিকে তাকাচ্ছি কখন সেজুতি আসবে, আর কখন ওর সাথে কথা বলবো।
কিন্তু না আজ আর সেজুতি আসলো না।মনটা খারাপ হয়ে গেলো ভীষণ।
মায়াকে পড়িয়ে চলে আসছি।সাথে সাথে মায়া আমার হাতটা টেনে ধরলো।
মায়া-স্যার স্যার আপনি কিছুদিন আগে আমাকে যে দুটো ফুলের চারা উপহার দিয়েছিলেন সেই গাছে অনেক গুলো ফুল ফুটেছে চলুন দেখবেন। চলুন চলুন।
আমি-না মায়া আম্মু আজ না।অন্য একদিন দেখবো।আজ ভালো লাগছে না।(আজ সেজুতিকে দেখিনি কিছু ভালো লাগছে না)।
মায়া-চলুন না স্যার প্লিজ,প্লিজ,প্লিজ।
মায়া বাবা-যাও না সৌরভ। মায়া যখন এত করে বলছে।একবার দেখেই এসো।মায়া কিন্ত খুব যত্ন করে গাছ গুলো।রোজ দুবার করে পানি দেই গাছগুলোতে।
আমি-কি আর করবো বাধ্য হয়ে বললাম ঠিক আছে চলো মায়া।
ছাদে গিয়ে মায়া আমাকে গাছগুলো ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে ঠিক তখন কেউ মায়ার নাম ধরে ডাক দিলো।সামনে তাকিয়ে দেখলাম সেজুতি।ওপাশের ছাদে দাড়িয়ে আছে।ওকে দেখে এত ভালো লাগছিলো বলে বোঝাতে পারবো না।মায়া আমার হাতটা টানতে টানতে নিয়ে গেলো ঐ ছাদের কাছে।
সেজুতি-কেমন আছো মায়া?
মায়া-খুব ভালো আছি।তুমি কেমন আছো আপু?
সেজুতি-হ্যাঁ আমিও ভালো আছি।এই যে,আপনি কেমন আছেন?
আমি-জ্বী আমাকে বলছেন?
সেজুতি-জ্বি হ্যাঁ আপনাকেই বলছি।
আমি-জ্বি ভালো আছি।আপনি?
সেজুতি-জ্বী ভালো।আপনার সাথে কি ৫ মিনিট কথা বলা যাবে?
আমি-হ্যাঁ অবশ্যই।
সেজুতি-বলছি আপনার ফোন নম্বরটা কি পেতে পারি?
আমি -হ্যাঁ অবশ্যই।(এমনটা হবে আমি কল্পনাও করিনি,মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি)।
আমি সেজুতিকে আমার ফোন নম্বর টা দিলাম।
সেজুতি-ধন্যবাদ।আসলে আপনার সাথে একটু কথা ছিলো।
আমি-তো বলুন না।
সেজুতি-না আসলে এখন একটু বিজি আছি,আমি রাতে কল দেই আপনাকে?রাতে ফ্রি আছেন তো না?
আমি-হ্যাঁ তোমার জন্য আমি সবসময় ফ্রি।
সেজুতি-কিছু বললেন?
আমি-না না,কি বলবো।বললাম যে হ্যাঁ রাতে ফ্রি থাকবো সমস্যা নেই।কল দিয়েন।
সেজুতি-আচ্ছা ঠিক আছে।কল দিবো সময় করে।আসছি তাহলে এখন আমি।বাই।বাই মায়া।
মায়া-বাই আপু।
আমি বাড়ি ফিরে খুশিতে লাফাতে লাগলাম।না চাইতেই এত কিছু পেয়ে যাবো কখনো ভাবিনি।সেজুতিও মনে হয় পছন্দ করে আমাকে।সারারাত অপেক্ষা করলাম।সেজুতির কলের জন্য কিন্ত না সেজুতির কোনো কল আসলো না।সেজুতির ফোন নম্বর টাও আমি জানিনা। জানলে না হয় আমি লজ্জার মাথা খেয়ে কল দিতাম ওকে।বার বার ফোন বেজে উঠছে আমি ভাবছি এই বুঝি সেজুতি কল দিলো এই বুঝি কল দিলো।বার বারি অন্য কেউ কল দিয়েছে দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়।
অপেক্ষা করতে করতে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।
সকাল হতেই ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম, সেজুতি কল দিয়েছিলো কি না।দেখলাম না সেজুতি কোনো কল দেই নি।
পরেরদিন শুক্রবার। আজ তো পড়াতে যেতে পারবো না।কি করে যোগাযোগ করবো এখন সেজুতির সাথে।কি করে?কি করে?
বিকালে হাটতে হাটতে গেলাম মায়াদের বাসার সামনে।দেখি একটু যদি দেখা মেলে তার।মায়াদের বাসার সামনে পাইচারি করছি প্রায় আধাঘন্টা যাবত।হঠাৎ ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নামলো।আশেপাশে দাড়ানোর কোনো জায়গাই নেই।আমি দৌড়ে চলে আসতে যাবো ঠিক তখনি দেখলাম সেজুতি সামনের বেলকনিতে এসে বাইরে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করছে।ইশ যদি আমি ঐ বৃষ্টি হতাম। তবুও তো সেজুতি একটু ছুয়ে দেখতো আমাকে।আমি সেজুতিকে দেখতে দেখতে পেছনের বড় ড্রেনের পাশে এসে দাড়ালাম।আর ঐদিন থেকে সোজুতি জোরে বলে উঠলো।
সেজুতি-আরে আরে সাবধানে,সাবধানে পড়ে যাবেন তো।
সেজুতি কথাটা বলা মাত্রই আমি একদম পা পিছলে পড়ে গেলাম ড্রেনের ভেতরে।
পড়ে গিয়ে কিছুটা হাবুডুবু খেলাম।তারপর কিছু লোক এসে আমাকে টেনে তুলো।
পড়ে গিয়ে কিছুটা হাবুডুবু খেলাম।তারপর কিছু লোক এসে আমাকে টেনে তুলো।
সাথে সাথে কেউ একজন পাশে থেকে বলে উঠলো,আরে স্যার আপনি?
তাকিয়ে দেখলাম মায়া চোখ বড় বড় করে দাড়িয়ে আছে আমার সামনে মুখে হাত দিয়ে।আর সেজুতিও।
সেজুতি-আরে আপনি পড়লেন কি করে।বললাম সাবধানে।তবুও পড়ে গেলেন।হা হা হা।নিন এবার উঠুন।
আমি-কোথাই?
সেজুতি-আমার পিছে পিছে আসুন।
আমি-কোথাই?
সেজুতি-আরে আগে আসুন তো।এত কথা বলেন কেনো।
আমি সেজুতির পিছে পিছে গেলাম।দেখলাম সেজুতি ওদের গাড়ি ধোবার জল মটরের পাইপ টেনে নিয়ে আসছে আমার দিকে।
আমি-আরে আরে এটা কি হবে?
কথাটা বলা মাত্রই সেজুতি পাইপ টা আমার দিলে দিয়ে পানি ছেড়ে দিলো।
আমি-আরে আরে করছেন টা কি।আরে থামুন ঠান্ডা লেগে যাবে তো আমার।
সেজুতি-আরে কিচ্ছু হবে না।এই অবস্থাই বাড়ি গেলে আপনাকে ভুত ভেবে ভয় পাবে।
আমি-পাবে না।আমার ঠান্ডার সমস্যা আছে।এমন ভাবে পানি দিলে সর্দি লেগে যাবে তো।কথাটা বলে আমি সেজুতির হাত থেকে পাইপ টা কেড়ে নিলাম।আর তাতে সেজুতিও ভিজে গেলো।আমরা দুজনেই ভিজে একদম যাচ্ছেতাই অবস্থা।আর মায়া পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছে।সেজুতি ভেজা শরীরে আমার দিকে তাকাতে পারছিলো না।সে লজ্জাই মাথা নিচু করে সেখান থেকে দৌড়ে পালালো।
চলবে...
Writer:- আতিকা জাহান