১.
জিন্স টপস পরা অচেনা যুবতী মেয়েটা হাই হিলে ঠকঠক শব্দ তুলে হাঁটছে। সন্ধ্যা নেমে এসেছে প্রায়। রাস্তার মোড়ে আমরা তিন বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছি। মেয়েটা আমাদের ক্রস করতেই সিগারেটে জোরে একটা টান দিয়ে রবিন বলল, দোস্ত দ্যাখ, দ্যাখ।
- কী দেখব?
- ব্যাটা কী দেখবি না তাই বল। ডাক দেই?
ওর কথায় জনিও সায় দিল। রবিনকে বললাম, হ্যাঁ, দেখেছি। আমার ছোট বোনের মত। ওকেও জিন্স টপস পড়লে ঠিক এরকমই দেখায়। আচ্ছা তোর বোনটা এখন কোন ক্লাসে পড়ে যেন?
আমার কথায় বন্ধুদের ক্রেজি ভাবনায় ছেদ পড়ল। প্রসঙ্গটা আর তুলল না। মেয়েটা দ্রুত হাঁটছিল। তার হাঁটার গতি দেখেই বুঝেছি, আমাদের দেখে ভীষণ ভয় পেয়েছে।
২.
রাস্তার পাশে থামা প্রাইভেট কারের মধ্যে জমকালো শাড়ি পরহিত একজন মহিলা বসে আছেন। বয়স ছত্রিশের কাছাকাছি হবে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত ছুঁইছুঁই। রবিন তাকে কী যেন বলে ফেলল। মহিলাটা, ইডিয়ট বলে গালি ছুড়লো। রবিন আর জনি জানালা দিয়ে তার হাত ধরার চেষ্টা করল। আমি রবিনকে বললাম, মহিলাটির কণ্ঠটি ঠিক তোর বড় বোনের মত। চেহারাটাও বেশ মিল আছে। গত বছরই তো কত খাওয়ালো দুলাভাই। মনে আছে তোর? আবার কবে নিয়ে যাবি বন্ধু?
রবিন কেমন একটা হতভম্ব হয়ে গেল। মহিলার স্বামী এসে পড়ার আগেই আমরা কেটে পড়লাম।
৩.
নিচের ফ্ল্যাটে এক আন্টি ও আংকেল থাকেন। আন্টি বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসেন। সিঁড়ি অথবা স্কুলের সামনে তাঁর সাথে বেশ দেখা হত। জনি উনাকে কয়েকদিন ধরেই ফলো করে। আন্টি পঞ্চাশোর্ধ হলেও পোশাক, মেকআপে একটু আধুনিক হয়েই থাকার চেষ্টা করতেন। একদিন সেই স্কুলের সামনে বাদাম খাচ্ছি। আন্টি বাচ্চাকে নিতে এসেছেন। জনি বলল, আজ আংকেল বাসায় নাই। দেবো নাকি সিস্টেম?
রবিন বলল, তুই জানলি ক্যামনে?
- আরে আংকেলের ফেসবুক আইডি আছে না। ডিপার্টমেন্টাল ট্রেনিংয়ে দুই দিন থাকবেন না।
রবিন অবাক হয়ে সিগারেট ফুঁকতে লাগল। ওদের দৃষ্টি আন্টির সারা শরীরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি জনিকে বললাম, তোর আম্মা কিন্তু উনার বয়সীই হবেন। যেহেতু তুই বড় ছেলে।
জনি বলল, তো কী হয়েছে?
আমি বললাম, দ্যাখ দ্যাখ, এই আন্টির কপালের আকৃতি ঠিক তোর মায়ের মত। তোর আম্মার সাথে ওই যে কভার ফটোতে ছবিটা দিছিলি। দ্যাখ দ্যাখ, মিলিয়ে দ্যাখ, ডাটা অন কর। তোর আম্মার শরীর এখন ভাল? অসুখ করেছিল বলেছিলি যে কয়েকদিন আগে।
জনি রবিন দু'জনেই চুপ হয়ে গেল। ক্রেজি পরিবেশটা গুমোট হয়ে গেল বুঝলাম।
৪.
আমরা মুদি দোকানের সামনে আড্ডা দিচ্ছি। একটা ফ্রক পরা সাত বছরের মেয়ে কি যেন কিনতে এসেছে। রবিন ওকে ডাকল। বাচ্চা মেয়েটি কাছে এসে বলল, জ্বি আংকেল বলেন।
রবিন বলল, চকলেট খাবে মামুনি?
মেয়েটি অপরিচিত কারো কিছু খেতে আপত্তি জানাচ্ছে। কিন্তু রবিন নাছোড়বান্দা। নিজেই উঠে দোকান থেকে একটা চকলেট কিনে মেয়েটির হাতে দিল। পিচ্চি মেয়ের কাছে চকলেট নিশ্চয়ই প্রিয়, হাতে নিল। এই সুযোগে রবিন কথা বলার ছলে মেয়েটির মাথা ও কাঁধ স্পর্শ করল।
আমি রবিনকে বললাম, বন্ধু তোর যদি মেয়ে বাচ্চা হয়, ঠিক এরকমই কিউট হত তাইনা? সবার চোখের সামনে ফড়িং এর মত চঞ্চলতায় লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়াতো। তোর ভাগ্নিটাও তো মনে হয় এতদিনে এই মেয়েটার সমান হয়েছে।
রবিন আর জনি দুজনের মুখাবয়ব চেঞ্জ হয়ে গেল। আমার কথার কোন উত্তরই দিল না। মেয়েটি চলে গেল।
এরপর রবিন ও জনির মাঝে কিছুটা পরিবর্তন দেখেছি। আগে যেমন যে কোনো মেয়ে দেখলেই লালায়িত হয়ে বিশ্রী ইচ্ছার কথা বলত। কয়েকদিন পর কম বলা শুরু করল। আর এখন বলেই না।
ধর্ষকরা এই সমাজের বিচ্ছিন্ন কেউ নয়। তারা অন্য গ্রহ থেকে আসে না। আমাদের আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করে। হয়ত আপনার ফ্রেন্ড সার্কেলেই সুযোগ সন্ধানী এমন কেউ আছে। তাকে বিভিন্ন কৌশলে নৈতিক মানুষ হতে সাহায্য না করতে পারার দায় আপনার উপরও বর্তায়। যেখানে সেখানে যে কোন বয়সের মেয়ে দেখলেই যারা ভোগের বাসনা করে। তাদেরকে নিবৃত্ত করার দায়িত্ব আপনার আমার সকলের। নারীদের মাঝে যৌনতা না খুঁজে নিজের মাকে খুঁজুন, বোনকে খুঁজুন, ভাগ্নি, ভাতিজি ও নাতনীকে খুঁজুন। দেখবেন যৌনতার বাইরে নারীর যে মহিমান্বিত রূপ রয়েছে তা আপনাকে বিশুদ্ধ মানুষ হতে সর্বাত্মক সাহায্য করবে। মানুষের মেন্টালিটি চেঞ্জ করতে পারলে সবকিছুই চেঞ্জ করা সম্ভব।
বুকে হাত দিয়ে বলুন, আমি ধর্ষণ করবো না। আর কাউকে ধর্ষক হতেও দেবো না। দর্শন বদলান, ধর্ষণ থাকবে না।
বিঃদ্রঃ গল্পের প্রয়োজনে রবিন ও জনি নাম দুটি নেগেটিভ অর্থে ব্যবহার করেছি। সকল রবিন ও জনির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি)
( সমাপ্ত )
Writer: Belal Uzzal