![]() |
Mysterying Story |
ব্যাংক থেকে জানা গেলো সাম্প্রতিক নায়লা একটা একাউন্টে বিপুল পরিমান টাকা ট্রান্সফার করেছে। এটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। একটা প্রশ্নের জবাব জানাটা খুব দরকার। কে গিয়েছিল আমার বাসায় সেদিন!
আজ এসেছি বিখ্যাত পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের বাসায়। উনি নায়লাকে গড়ে তুলছেন। এবং সবচেয়ে বেশি ছবি করেছেন নায়লা কে নিয়ে। থাকেন ওয়ারীতে। এখানে তার বাপ দাদার বাড়ি। খানদানি বড়লোক বলতে যা বোঝায় । বিশাল পুরনো আমলোর বাড়ি। বাড়ির সামনে নানা ধরনের ফুলগাছের সমারোহ!
ফুটবল খেলার মাঠের মতো বিশাল ডাইনিং রুমে বসে আছি। মাথার উপর আদিকালের ঝাড় বাতি ঝুলছে। কিছু সময় কাটিয়ে এলেন জাহাঙ্গীর আলম। একটা থ্রি কোয়ার্টার পরা, গায়ে ঝুলিয়েছে কালো টি শার্ট। দেখে বয়স খুব একটা বেশি মনে হচ্ছে না। বড়লোকদের বয়স দেহে বাড়ে না। বয়স বাড়ে গরীবের। ওনার বয়সি গরীব মানুষের মাজা ভেঙে ত্রিভুজ আকৃতি ধারণ করেছে। হাসি হাসি মুখে এগিয়ে এসে বললেন, "আপনি সেই রায়হান! আপনার নাম শুনেছি, দেখা হলো প্রথম। অবশ্য আপনাদের সাথে দেখা না হওয়াটাই ভালো।"
"কেন!" জাহাঙ্গীর সাহেব মনে হয় একটু বেশি কথা বলেন।
"ডাক্তার, পুলিশদের সাথে দেখা হওয়া মানেই তো বিপদ। বিপদ কে চায় বলেন?"
"কিন্তু স্যার আমি তো দুটোর একটাও না। "
"গোয়েন্দা তো নাকি? সে তো পুলিশের বাপ। পুলিশের কাছে রাপ ডাপ মারা যায়। আপনি তো কোনো ছাড় দিবেন না। "হা হা হা
মনে হয় খুব হাসির কোনো কথা বলেছেন! এমন করে হেসে ওঠলেন। ভদ্রতা দেখিয়ে আমিও হাসি তে অংশ নিলাম। হি হি হাসি আমি পারি না। পারলে তার সাথে একটু যোগ দিতাম। এমন মানুষের কাছে যেতে হলো হাসিতে যোগ দিতে হয়। সিগারেট ফুকা মানুষের কাছে যাওয়া যায় সিগারেট টানে যোগ দিয়ে। মানুষ তার মতো মানুষ দেখতে পছন্দ করে।
"তা আমার কাছে কী জানতে চান? আপনারা তো ভিক্টিম কেও সন্দেহ করেন! "
কথাটার অর্থ বুঝতে কষ্ট হয়নি তবুও তাকে গুরুত্ব দেখাতে না বোঝার একটা ভাব মুখে তার দিকে তাকালাম।
হা হা হা, "মানে খুন হওয়া মানুষটা আত্মহত্যা করেছে কি না সে সন্দেহ করেন তো নাকি?"
মনে হয় উনি খুব কষ্টের মাঝে আছেন। কষ্টে থাকা মানুষ অকারণে হাসে। আনন্দ থাকার ভান করে। "জটিল বলেছেন স্যার! তবে আপনি আমাদের সন্দেহের বাহিরে আছেন। শুধু নায়লা সম্পর্কে জানতেই আপনার কাছে আসা।" নায়লা নামটা শুনে কেমন গম্ভীর হয়ে গেলেন। মুখে কিছুটা বেদনার ছাপ! ফোঁস করে একটা ছাড় ছেড়ে বললেন, "বড় কষ্ট হয় মেয়েটার কথা মনে পড়লে! নিজ হাতে গড়েছিলাম। কী করে কী হয়ে গেল! কেন এমন হলো বলতে পারেন?"
"সেটা খুঁজার চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। অচিরেই জানতে পারবেন আশা রাখি। কী করে পরিচয় হলো নায়লার সাথে?"
হাত দিয়ে মুখটা মুছলেন। চোখের কোণে জল জমেছি কি ঠিক দেখতে পাইনি।
"তখন আমি একটা নতুন ছবির কাজ করার জন্য একটা নতুন মুখ খুঁজছিলাম। যারা আসছিল তাদের কাউ কে ঠিক মনে ধরছিল না। বিভিন্ন সোর্স থেকে মেয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি। সে সময় একদিন গাড়ি করে বাড়ি ফিরছি। প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে শাহবাগ জ্যামে। আচমকা চোখ পড়ল পাশে ফুলের দোকানে দাঁড়ান একটা মেয়ে। বৃষ্টির ঝাপটা পড়ে চেহারায় মুক্তার মতো চিক করছে! দৃষ্টি এঁটে গেলো। মনে হলো এ মেয়েকে দিয়েই হবে। কেন এমন মনে হয়েছিল জানি না। কোনো অদৃশ্য শক্তি আমায় বলছিল তুই যাকে খুঁজছিস এই সে মেয়ে। জানি আপনার কাছে ব্যাপারটা হাস্যকর মনে হবে। আপনি লজিক্যাল মানুষ। এ সব আবেগী কথা বিশ্বাস করেন না। আমি করি, খুব মানি এ সব জানেন।" একটানা কথাগুলো বললেন,কেমন উত্তেজিত মনে হচ্ছিল তাকে।
হাঁক ডেকে রবিন কে ডাকলেন। একজন বিশ বাইশ বয়সের ছেলে এসে দাঁড়াল। "এখানে দুই কাপ কফি দে। কফিতে আপত্তি নেই তো? রবিন ছেলেটা খুব ভালো কফি বানায়! ওর কাছ থেকেই নায়লা কফিতে আসক্ত হয়েছিল। "
চোখের ইশারায় সম্মতি দিলাম।
"বৃষ্টির মধ্যে দোকানে দাঁড়ানো একটা মেয়েকে তো আর বলা যায় না। তুমি অভিনয় করবে? তাই না। ড্রাইভার কে বললাম তোর কাজ হলো এ মেয়ের পিছনে গিয়ে বাড়ি চিনে আসবি। ওকে নামিয়ে দিলাম বৃষ্টির মধ্যে।"
মনে হচ্ছে কোনো সিনেমার গল্প শুনছি। বাস্তবতা কখনও কখনও সিনেমা কে হারমানায়। রবিন ছেলেটা দুকাপ কফি এনে টেবিলে রাখল। সাথে কিছু বিস্কুট, চানাচুর আর এক ধরনের ছোট ছোট ছানার মিষ্টি। কফির কাপ হাতে নিয়ে আমাকে নেয়ার ইশারা করলেন। কফির কাপে আলত চুমুক দিয়ে বলা শুরু করলেন,
ড্রাইভার বাড়ির ঠিকানা নিয়ে আসল। পরের দিন আমার লোক মেয়েটির কাছে গেলো। মেয়েটি বিশ্বাস করতে পারছে না। এমন কিছু হতে পারে। পরে ঠিকানা দিয়ে আসল যদি ইচ্ছে হয় ঠিকানায় যেন যোগাযোগ করে। ছয়দিন পেরিয়ে গেল মেয়ের কোনো হদিস নেই। ধরেই নিলাম একে পাওয়া যাবে না। আরেকবার লোক পাঠান ঠিক হবে না, ভেবে ও চিন্তা বাদ দিলাম। অফিসে বসে আছি কী করা যায়? ছবির কাজটা শুরু করা দরকার তাড়া দিচ্ছে প্রযোজক। সহকারী এসে জানাল একটা দেখা করতে এসেছে নাম নাকি নাসিমা আক্তার। "এ সময় কোথাকার কোন মেয়ে এসেছে! "
"স্যার হাতে ধরা আপনার একটা কার্ড। "
"ঠিক আছে পাঠিয়ে দে।" কমের মধ্যে পরিস্কার একটা ছেলোয়ার কামিজ পরা মেয়েটা এসে আসতে পারি বলল, ঘুরে তাকিয়ে চঞ্চল হয়ে উঠলাম। "এসো এসো তুমি!"
হাত পা গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখেমুখে লাজুকভাব। পাশে বসা আ্যসিসট্যান্ট ভুরু কুঁচকাল। অবজ্ঞার দৃষ্টি! আমার উৎসাহ দেখে মুখে কিছু বলল না। "তা তোমার নাম কী যেন বলল?"
"নাসিমা আক্তার "
"এ নাম চলবে না, নামটা একটু পরিবর্তন করতে হবে। সে পরে দেখা যাবে। আ্যসিসট্যান্ট কে বললাম ওর স্কিন টেস্টের ব্যবস্থা কর।"
স্কিন টেস্টে ভালো ফল এল। শুধু স্কিনে দেখতে ভালো হলেই তো হবে না। সংলাপটা বলতে পারতে হবে। কত মেয়ে আসে দেখতে অসম্ভব সুন্দর! কিন্তু সংলাপ বলতে গেলে আর পারে না। অনেকের ভয়েসটাও ভালে শোনায় না। ভরু কুঁচকানো সহকারী অবাক হয়ে গেয়েছিল নায়লার সংলাপ শোনে। ক্যামেরার সামনে দাড়িঁয়ে সজীব হয়ে উঠেছিল নায়লা। এমমটা সাধারণত দেখা যায় না। বরং ক্যামেরার সামনে দাড়াঁলে ওভার স্মার্ট মেয়েটাও নার্ভাস হয়ে যায়। সবাইকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল সেদিন। এ ময়ে জাত অভিনেতা অনেক দূর যাবে স্যার বলে উঠল ক্যামেরা ম্যান। ক্যামেরার ছবিটাও দারুণ আসে এর। এ আরেক আশ্চর্য বুঝচ্ছেন রায়হান সাহেব। সুন্দর সুন্দর সব মেয়ে দেখলে মনে হয় দর্শকের মন জুড়িয়ে যাবে কিন্তু ক্যামেরায় ভালো দেখায় না।
জাহাঙ্গীর সাহেব খুব আবেগ প্রবন হয়ে পড়েছেন, তার কথায় এতটা মগ্ন হয়ে পড়েছি কফির কাপ হাতে ধরা তাতে চুমুক দেয়া হয়নি।
"আরে আপনার কফি তো ঠান্ডা হয়ে গেছে! আরেক কাপ দিতে বলি?"
"না, ঠিক আছে আপনি বলুন তো শোনি।"
"মেয়েটা মধ্যে যাদুর মায়া ছিল সবাই কে আপন করে ফেলতে পারত খুব অল্পতে। এমন একটা মেয়ের সাথে এমন হবে ঠিক মানা যায় না! "
"একটা গভীরে শ্বাস টেনে নিলেন বুকের মাঝে যেন বাতাস কম পড়েছে! প্রযোজক নায়লা কে পছন্দ করল। যদিও চেহারায় গ্লামার ছিল না অতটা। ন্যাচারেল বিউটি যাকে বলে। তা ছিল নায়লার মাঝে।"
অভিনয়ে খুব কাঁচা ছিল অনেক শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হয়েছিল। মেয়েটা অনেক দ্রুত শিখতে পেরেছিল সব। তাই খুব একটা প্যারা পোহাতে হয়নি। নতুন বলে মনেই হয়নি! দর্শকও আমাদের হতাশ করেনি সাদরে গ্রহণ করে নিক নায়লা কে। প্রথম ছবি হিট করল। তারপর তো ওকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। তড়তড় করে উঠে গেল টপে।"
"মোট কয়টা ছবিতে কাজ করেছেন আপনারা? "
"পনেরো টা ছবি তে কাজ করছ আমরা। প্রথমদিকে আমার ছবি ছাড়া নায়লা কাজ করেবে না। আমিই ওকে অন্যদের ছবিতে কাজ করতে বলেছি। আপনি জানেন, আমাকে না দেখিয়ে কোনো ছবিতে ও সাইন করত না। কিন্তু হঠাৎ করে গত এক বছর আগে কী হলো আমার সাথে খুব একটা যোগাযোগ করত না। ওর অভিনয় কেমন পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। এমনটা হওয়ার কথা। এমন সব ভুল করছিল না ঠিক মানতে পারছিলাম। আমিও অভিমান করে যোগাযোগটা অভাবে রাখিনি। কী থেকে কী হয়ে গেল।" একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
ওনার কাছে নায়লার চলচ্চিত্র জগতে আসার কাহিনা ছাড়া তেমন কিছু জানা গেল না। একটা খটকা আছে অভিনয় পরিবর্তন হওয়া। একজন অভিনেত্রী দিনে পাকা হয়ে ওঠে। নায়লা তো ছিল জাত অভিনেত্রী তার এমন হওয়াটা বেমান। হ্যাঁ, খ্যাতির বিড়ম্বনা বলে একটা কথা আছে। সেটা হলেও আর অনেক আগেই হত। এত পরে কেন? এটা একটা বড় প্রশ্ন বটে তবে তা খুনের সাথে কতটা সম্পর্কিত?
ওসি সাহেবের ফোন," কী রায়হান সাহেব কোনো গতি হলো?"
"তেমন অগ্রগতি তো দেখছি না।"
"বলেছিলাম দেখতে সাদামাটা কেস মনে হলেও এ বড় জটিল কেস! "
"তাই তো দেখছি!"
"ম্যাডাম নাকি কোন ছেলের সাথে ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন। সেটা হুমকি ধামকি পর্যন্ত গড়িয়েছিল। সেটাই একটু ঘেটে দেখছি। কিছু বের হয় কি না।"
"দেখেন, হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েন না।"
সে আমি ভালোই জানি। আপনি আছেন তাই খুব একটা মাথা ঘামতে হচ্ছে না। পুলিশ কিছু করছে দেখাতে হবে তো। না, হলে তো বুঝেন। মিডিয়া এমনিতেই পিছে পড়ে আছে। ঠিক আছে পরে কথা হবে।"
কেসটার কোনো কুল কিনারা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু প্রশ্ন পাওয়া গেছে।
১.নায়লা কেন টাকা ট্রান্সফার করল।
২.হঠাৎ করে পরিবর্তন
৩.ওসি সাহেবের কথা ঝামেলায় জড়ানো।
এটাও একটা পরিবর্তন এমন ঘটনা পূর্বে ঘটেনি। সব কিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ঘুরেফিরে সেই একই জায়গায় চলে আসছি। স্যার একবার বলেছিলেন যখন কোনো কেসের ক্লু খুঁজে পাবে না। মনে রাখবে কেসের মধ্যেই সমাধান থাকে। সব কিছু শুরু থেকে দেখা শুরু করবে। আজ পর্যন্ত যে সব তথ্য পেয়েছি সব গভীরভাবে দেখতে লাগলাম এক এক করে। না, কোনো কিছুই পাওয়া গেল না। তাহলে নায়লার জীবন প্রথম থেকে দেখা শুরু করব কী? তা কেসের সাথে সম্পর্ক কী?
কোনটা সম্পর্কিত তা কেস সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ঠিক বুঝা যায় না। কাজেই সব কিছুই দেখতে হবে। এখানে খুনের চেয়ে আমার বাসায় কে এসেছিল এটা কম গুরুত্ব রাখে না। এটা পুলিশ জানে না। তাই তাদের পথ একটা আমার কাছে দুটো। হুট করে মনে হলো ঘটনার মাঝেই থাকে সমাধান। এমনতো হতে পারে বাসায় কে এসেছিল এটার মধ্যে সব রহস্য লুকিয়ে আছে।
নায়লার জীবন শুরু থেকে দেখা দরকার। কিন্তু কোথায় তার জন্ম কিছুই জানা নেই। প্রথম গেলাম যেখান থেকে নায়লা কে খুঁজে এনেছিলেন জাহাঙ্গীর সাহেব। তেজগাঁও এলাকায় একটা ভাড়া বাসায় থাকত নায়লা। সাথে কেউ ছিলো কি না ড্রাইভার ঠিকঠাক বলতে পারে না। এত বছর আগের কথা কারো তেমন মনে নেই। তেজগাঁও এলাকায় একটা টিনসেড বাড়ি। এখনও অনেকটা সেই রকম আছে। স্যাতস্যাতে একটা দেয়াল ঘেরা গুটিকয়েক ঘর নিয়ে বাড়িটা। বাড়ির পুরনো ভাড়াটিয়ারা কেউ আর থাকে না। বাড়ির সবাই নায়লা নামটা চিনলেও তেমন কিছু জানে না। বাড়িওয়ালার বাসায় গেলাম। ওনারা এক পাশে তিনটা লাগোয়া ঘর নিয়ে থাকেন।
ঘরের দরজা খুলল একজন মহিলা বলা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না। হালকা পান রংয়া শাড়ি পরা। এমনে দেখলে মধ্য বয়স্ক লাগে। ভালো করে খেয়াল করলে বুঝা যায় বয়স খুব একটা বেশি না। আমায় দেখে শাড়ির আচঁল টেনে মাথা ঢাকলেন। মুখে অমৃত হাসি দিয়ে বললেন," কাকে চান? "
মনে হয় এদের কাছে মানুষজন খুব একটা আসে না। "আমি আপনাদের অনেক আগের একজন ভাড়াটিয়া সম্পর্কে জানতে এসেছি।"
"ভিতরে আসুন।" লজ্জপতি লতা মতো দেহখানি গুটিয়ে সরে জায়গা করে দিলেন।
সাধারণ মানের একটা ঘর। পুরনো একটা সোফাসেট,পড়ার একটা টেবিল। জানালায় কটকটে লাল পর্দা ঝুলছে। হাতের ইশারায় বসার ইঙ্গিত করলেন।
"আপনি বসুন আমি আম্মা কে ডেকে দিচ্ছি। আম্মা হয়ত বলতে পারবে।"
বসে বসে ঘরের চারপাশটা দেখছি। সামনের দেয়ালে একটা বড় পেইন্টিং ঝুলান। খুব সুন্দর লাগছে ছবিটা! আমি আর্ট তেমন একটা বুঝি না। এটা খুব বিখ্যাত কোনো ছবি কিনা বুঝতে পারছি না। গুটিকয়েক ছবি ছাড়া বিখ্যাত ছবিও আমি চিনি না!
একজন বৃদ্ধা আসলেন পিছনে সেই মেয়েটি। আমি তাকে সালাম দিলাম। জবাব দিয়েছে কি না শুনতে পাইনি। কাছে এসে ভাঙা ভাঙা কন্ঠে "তুমি কার কথা বলছ বাবা?"
"নায়লা নামে আপনাদের বাড়িতে এক সময় ভাড়া থাকত? "
"কত মানুষই তো ভাড়া ছিল এখানে। সবার কথা কী আর মনে থাকে বাবা।"
"জি, তা তো ঠিকই বলেছেন চাচি। নায়লা সিনেমায় অভিনয় করত, কিছু কি মনে পড়ে?"
"ও ওই নাসিমা! তা কিছু কেন সব মনে আছে রে বাবা। খুব ভালো মেয়ে ছিল। এখানে যখন ছিল কত কষ্ট করত! এখন তো শুনি অনেক বড় হয়েছে। "
"বউটা বড় বড় চোখ করে বলল, নায়িকা নায়লা আমাদের বাড়িতে থাকত! আগে বলেনি তো আম্মা?"
"তা চাচি নায়লাদের বাড়ি কোথায় বলতে পারেন?"
"নারে বাপ! আমাদের মতিন একদিন এসে নিচের ডান পাশের ঘরটায় থাকার জন্য ওকে নিয়ে এসেছিল। ওদের গার্সমেন্টে কাজ করবে আর এখানে থাকবে।"
"কতদিন ছিল এ বাড়িতে? " বৃদ্ধা মেয়েটির দিকে তেরছা চোখে তাকিয়ে কিছু ইশারা করলেন। মেয়েটি বড় বড় পায়ে ভিতরে চলে গেল।
"একটা বড় শ্বাস টেনে নিয়ে বললেন, বছরখানিক ছিল। একদিন এসে বলল দাদি। জানো আমি সিনেমায় চান্স পেয়েছি। " সামনের মাস থেকে এখানে থাকব না। পরিচালক বাসা ঠিক করে দিয়েছেন ওখানে থাকতে হবে।"
"কি লক্ষী মেয়েছিল রাতবিরাত আমার কাছে ছুটে আসত। দাদি দাদি বলে ডাকত আমায়। সিনেমা করার পরও তো বেশ কয়েকবার আমার কাছে এসেছিল। গলা জড়িয়ে ধরে দাদি বলে কী মিষ্টি করে ডাকত!" মনে হয় সব তার চোখের সামনে ভাসছে!
"তা কী হয়েছে ওর?" মেয়েটি একটা প্লাস্টিকের ট্রেতে কিছু পিঠা, বিস্কুট, এক গ্লাস পানি এনে ট্রি টেবিলে রাখল। আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি দিয়ে বলল, "নেন।"
বৃদ্ধাও বললেন, "নেও বাবা, গরীবের বাড়ি এসেছ।" যদিও আমি এমনিতে খুব কম খাই। তবে পিঠাগুলো দেখতে বেশ ভালো লাগছে। মনে হয় খুব সুস্বাদু হবে খেতে। বৃদ্ধার কথায় একটা পিঠা হাতে মুখু পুরলাম। বাঃ! সত্যি অসাধারণ স্বাদ। এমন পিঠা অনেকদিন পর খেলাম। এ পিঠার নাম কী বলতে পারছি না। " কী পিঠা?"
"এ হলো নকশি পিঠা। বউমা বানিয়েছি। আরেকটা নেও বাবা।"
মেয়েটা কেমন লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে আবার ভিতরের দিকে চলে গেল।
"নায়লার বাবা মা এখানে ছিল না?"
"না, কেউ ছিল না। মেয়েটা বড় দুঃখী ছিল। মামার বাড়িতে নাকি থাকত। বাপ মা দুইজনে মারা গেছিল! ওই ঘরটায় থাকত।" আঙুল দিয়ে নিচের একটা টিনসেড ঘর দেখালেন।
"সবার সাথে খুব ভাবছিল। সিনেমায় নামার পরেও তো এসে সবার সাথে মিশতো।"
মেয়েটি আবার দুকাপ চা নিয়ে এল।" বউমা তুমিও চা নিয়ে এসে বস। " বুঝলাম এদের বউ শাশুড়ির ভারি খাতির। এমনটা দেখতে বেশ ভালো লাগে।
বউ শাশুড়ির পাশাপাশি বসে চা খাওয়া দেখতে আমার খুব ভালো লাগছিল। এদের দেখে খুব বেশি শিক্ষিত মনে হয়নি। তবুও এদের মাঝে এমন সম্পর্ক!
নায়লার জীবনটাই একটা সিনেমার মতো। বাপ মা মারা গেছে ছোটবেলায়। মামা বাড়িতে বড় হওয়া বলতে ঠিক কতটুকু হয়েছে জানি না। এটা জানতে হবে। কোথায় জন্মছে? কী করে বাবা মা মারা গেল সব জানাটা প্রয়োজন।
মতিন সাহেবের সাথে দেখা করে নায়লার মামার বাড়ির ঠিকানা যোগার করলাম। আসলে গাছের শিকড়ে যেতে হবে গাছটা বুঝার জন্য। এ ছাড়া অন্য পথ দেখতে পাচ্ছি না।
থানায় ডাক পড়েছে। নিজ রুমে চিন্তিত হয়ে বসে আছেন ওসি সাহেব। আমায় দেখে একটু হাসি দেয়ার চেষ্টা করলেন তাতে প্রান নেই! " তা রায়হান সাহেব কী খবর বলেন? আমার তো মাথা নষ্ট করে ফেলছে!"
"বুঝতে পারছি। ওপর মহলের চাপ। তাছাড়া পাবলিক খুব খ্যাপা। এত বড় নায়িকার ফ্যান তো কম না!"
"ঠিক বলেছেন। একটা কিছু করতেই হবে।"
"পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখে কী বুঝলেন?"
"তেমন কিছু না। ছুড়ির আঘাতে শ্বাসনালি কাটার কারণে মৃত্যু হয়েছে! রুমে জোর করে ঢুকার কোনো লক্ষ্মণ নেই। "
"তারমানে খুনিরা পরিচিত ছিল?"
"আপাতত এমন মনে হচ্ছে। "
"আপনি একটা কাজ করুন গত এক বছরে নায়লা কার কার সাথে ওঠাবসা করেছে সব বের করুন। "
"সে আপনি পেয়ে যাবেন। আমি ভাবছি ম্যাডামের সাথে ঝামেলা করা ছেলেটাকে তুলে এনে মিডিয়াকে চুপ করাই। এরা মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। এরা ভাবে অপরাধী পুলিশ কে ফোন করে খবর দিয়ে খুন করে। পুলিশ স্পষ্টে থাকবে খুন হওয়ার সাথে সাথে টুপ করে ধরে তাদের সামনে আনবে। এত বড় স্টার কে খুন করতে কম পরিকল্পনা করেছে বলেন?" কে জানে কতদিনের পরিকল্পিত খুন এটা। কে বুঝাবে এদের!"
"কী করবেন সবাই নিজের আখের গুছাতে ব্যাস্ত। মিডিয়া চায় তার জনপ্রিয়তা বাড়াতে। বাকা প্রশ্ন শুনতে যে মানুষ বড় ভালোবাসা। অন্যের অপমান দেখার মতো বিনোদন জগতে আর আছে!"
"এ দিকটা আমি দেখছি। আপনি আপনার মতো কাজ করেন।"
বেশ দৌড় যাপ করতে হচ্ছে। আজ বাসায় আসলাম প্রায় সাতদিন পর। এখন নায়লার মামা বাড়ি সিলেট যেতে হবে। সোয়েব এসে বলল, "স্যার নায়িকার খুনি তো ধরা পড়েছে। আপনি আর সিলেট গিয়ে কী করবেন? "
চলবে.....
লেখা: নাবিল মাহমুদ