> রাগি মেয়ের প্রেমে পর্ব ১৩ ও শেষ পর্ব - রাগি মেয়ের গল্প - রাগি মেয়ে - রাগি মেয়ের সাথে প্রেম - Bangla New Story - Love Story
-->

রাগি মেয়ের প্রেমে পর্ব ১৩ ও শেষ পর্ব - রাগি মেয়ের গল্প - রাগি মেয়ে - রাগি মেয়ের সাথে প্রেম - Bangla New Story - Love Story

শপিং শেষে বের হচ্ছি এমন সময় গেইটে তাকাতেই একটা টাসকি খেলাম। দেখলাম তন্নিও বের হচ্ছে। আমি সানি আর আয়মানরে ইশারা দিয়ে লুকিয়ে যেতে বললাম,, 

তারপর ওরা চলে যাওয়ার পর আমরা বের হলাম। বাসায় গেলাম, সব কিছু নতুন করে সাজাচ্ছে। আস্তে আস্তে বিয়ের পুরো প্রিপারেশন নেওয়া হচ্ছে। 

আব্বু আর আম্মু সবাইকে দাওয়াত দিয়ে আসলো, আমিও মোটামুটি ব্যস্ত। এটাওটা করছি,,, 

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন খুব কাছে চলে আসলো, গায়ে হলুদের আগের দিন সানি আয়মান সাদিয়া ফারিয়াকে আমি কল দিয়ে দিঘীর পাড়ে আসতে বললাম,,,,

বিকালবেলা ওরা আসলো। 

সানিঃ কিরে কি অবস্থা? 

আমিঃ এইতো মোটামুটি, তোরা কেমন আছিস? 

ফারিয়াঃ আমরা ভালো। আচ্ছা বল কেন ডেকেছিস? 

আমিঃ আসলে কিভাবে কি করতে হবে তোরা যদি বলে দিতি তাহলে ভালো হতো। আমি তো এর আগে কখনো বিয়ে করিনি তাই কোনো অভিজ্ঞতা নেই। 

সাদিয়াঃ তুই যেভাবে বলছিস মনে হয় আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা আছে! 

আমিঃ আরে ধুর সেটা না। এমনিই বললাম,,, 

আয়মানঃ আচ্ছা শোন...... (অনেক উপদেশ দিলো)

একে একে সবাই অনেক পরামর্শ দিলো, আসলে আপনি যতই চালাক হোন না কেন, নিজের কোনো বিশেষ কাজে আমি বোকা হয়ে যাবেন, কিছুই আপনার মাথায় আসবে না। 

যাইহোক ওদের সাথে, আরো অনেক কথা বললাম। ফারিয়া বললো.... 

ফারিয়াঃ আচ্ছা একটা জিনিষ তো আমার মাথায় আসছে না। 

সাদিয়াঃ কি? 

ফারিয়াঃ কালকে তো, তোদের দুজনেরই গায়ে হলুদ, তো আমরা দুই জায়গায় কিভাবে থাকবো। 

আমিঃ সিম্পল, ছেলেদের বাসায় হলুদ অনেক রাত করে হয়। তোরা তন্নির গায়ে হলুদ দিয়ে আমার সাথে আমার বাসায় চলে আসবি। 

আয়মানঃ আমার সাথে মানে! তুইও যাবি নাকি? 

আমিঃ হুম, আমারেও তো দাওয়াত দিছে। হিহিহিহি

আয়মানঃ হারামি তুই এক জিনিষ মাইরি। তোর কাজ নেই? 

আমিঃ সব কিছু গুছিয়েই যাবো। 

সাদিয়াঃ কিন্তু.... 

সানিঃ এই চুপ থাক, সব সময় কিন্তু কিন্তু করিস কেন। 

সাদিয়াঃ এই কুত্তা আমি তোর সাথে কথা বলছি নাকি? 

সানিয়াঃ আয়মান তোমার জানুকে নিষেধ করো নাহলে মাথার উপর তুলে আস্তে করে ছেড়ে দিবো। 

আমিঃ এই হারামির দল চুপ থাক, এমনিতেই টেনশনে আছি। 

ফারিয়াঃ আচ্ছা কালকে কয়টায় যাবি. 

আমিঃ তুই আর সাদিয়া বিকালে চলে যাবি। আমি সানি আর আয়মান রাতে যাবো। 

ফারিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যাই তাহলে। 

আমিঃ ওকে যা। কালকে দেখা হবে। 

তারপর সানি আর আয়মানের সাথে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আমিও বাসায় চলে আসলাম। 

পরের দিন মানে হলুদের দিন, সকাল থেকেই সব কিছু সাজাতে শুরু করলো, লাইটিং দেখে কেমন যেন একটা দুলা দুলা ভাব চলে আসলো। 

সারা দিন কাজ করতে করতে কখন যে সময় চলে গেলো বুঝতেই পারিনি। বিকালবেলা সানি আয়মান আসলো। ওরাও টুকিটাকি অনেক কাজ করলো। 

রাত ১০.০০ টার ফারিয়া কল দিলো.... 

ফারিয়াঃ কিরে আসবি না? 

আমিঃ হুম আসতেছি। 

ফারিয়াঃ হুম তাড়াতাড়ি আয়, তোদের তন্নি খুঁজছে। 

আমিঃ ওয়েট, আসছি। 

রেড়ি হয়ে বাইকটা বের করে যেই বাইরে আসলাম তখনই আম্মার আগমন,,,

আম্মঃ কিরে কই যাস তুই? 

আমিঃ তোমার বউ মাকে গায়ে হলুদ দিয়ে আসতে। হিহিহি

আম্মুঃ কিহ! নিজের গায়ে হলুদের খবর নাই উনি যাচ্ছে বউয়ের গায়ে হলুদ মাখতে। যা বাসায় যা,,, 

আমিঃ আরে ধমকাও কেন, যাবো আর আসবো। 

আম্মুঃ তোর বাবা দেখলে চিল্লাচিল্লি করবে। 

আমিঃ কিছু করবে না। আমি যাবো আর আসবো। 

আম্মুঃ ওকে সাবধানে যা। 

আমিঃ ওকে,,, 

তারপর বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলাম, আমিই একমাত্র জামাই যে নিজের বউকে হলুদ মাখতে যাচ্ছে। শালার এমন জামাই।পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার। 

অবশেষে তন্নিদের বাসায় চলে আসলাম, বাহ! অনেক দারুণ ভাবে সাজানো হয়েছে। আমি ভিতরে গেলাম, তন্নির বাবা মা আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেছে। আসলে হওয়ারই কথা, হলুদের দিন জামাই বউয়ের বাসায়। 

আমি সালাম করলাম, উনারা হাসতেছে, হয়তো উনারাও বুঝে গেছে আমি কেন এসেছি। 

ভিতরে গেলাম, দেখলাম তন্নিকে সাজাচ্ছে, আমাদের দেখে ফারিয়া আর সাদিয়া বাইরে আসলো,,  

সাদিয়াঃ কিরে এতো দেরি কেন? 

আমিঃ আরে বলিস না, আম্মু আসতে দিচ্ছিলো না। 

সাদিয়াঃ তো পরে কেমনে আসলি? 

সানিঃ তো কথা বলেছি সাথে সাথেই ছেড়ে দিয়েছে। 

সাদিয়াঃ এই কুত্তা, বিলাই তুই সব সময় আমার পিছে লাগিস কেন? 

ফারিয়াঃ হায়রে আল্লাহ! আজকেও তোরা ঝগড়া করবি। আচ্ছা জুয়েল শোন! 

আমিঃ হুম বল। 

ফারিয়াঃ তন্নি বলেছে তুই আসলে ওর সাথে পার্সোনাল কথা বলতে। তুই ছাদে যা, আমি তন্নিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। 

আমিঃ আমার সাথে আবার কিসের কথা। 

ফারিয়াঃ আরে আজব! না শুনলে বুঝবি কেমনে কি কথা। 

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আমি ছাদে যাচ্ছি। 

সানিঃ আমরাও আসবো নাকি? 

সাদিয়াঃ তোরা গিয়ে কি চুল ছিঁড়বি? যা গিয়ে দেখ বাবুর্চি ঠিক মতো কাজ করছে কিনা। নহলে গিয়ে পেঁয়াজ রসুনের খোসা উঠা। 

সানিঃ কুত্তি তুই যা, আমাকে কেন বলছিস। 

ওদের কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে ছাদে গেলাম। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি তন্নি আসছে না। 

এই তো আসছে, বাহ! আজকে ওরে একদম অন্যরকম লাগছে। আবারও ক্রাশ খেলাম। এই আমি কারে বিয়ে করতেছি। ভাবতেই কাতুকুতু লাগছে। তন্নি এমনিতেই অনেক সুন্দর, তার উপর আজকে বিয়ের সাজে সেজেছে পড়নে শাড়ি। দেখে মাথা নষ্ট লাগতেছে। 

ওর দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম মনে নেই, ওর ধাক্কা খেয়ে বাস্তবে ফিরে আসি। 

তন্নিঃ কিরে কি দেখতেছিস।

আমিঃ কিছু না, বল কি বলবি? আমার বাসায় যেতে হবে। 

তন্নিঃ তুই কি কিছু বুঝিস না? 

আমিঃ কি বুঝতাম আমি। 

তন্নিঃ আমি সত্যি তোকে ভালোবাসি, বিশ্বাস কর। 

আমিঃ এখন এগুলো বলে লাভ নাই, কালকে তোর বিয়ে। 

তন্নিঃ চল! আমরা এখনিই পালিয়ে যাই। 

আমিঃ কিহ! তুই পাগল নাকি? 

তন্নিঃ হুম পাগল হয়ে গেছি। (কান্না করতে করতে)

আমিঃ দেখ পাগলামি করিস না। লোকে দেখলে সমস্যা হবে। 

তন্নিঃ দেখুক, তাতে আমার কি? আমি সত্যিই তোকে ভালোবাসি। পারবো না আমি থাকতে। 

একথা বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমি তো পড়ে গেলাম মহাবিপদে, আমারও ভালো লাগতেছে ওর জড়িয়ে ধরা দেখে। 

কিন্তু একটু ভাব নিলাম, ওরে দূরে সরিয়ে দিলাম। কারণ কালকে থেকে তো সব সময় ধরে রাখতে পারবো। ভাব নিয়ে ওরে বললাম.... 

আমিঃ তোর লজ্জা করেনা। বিয়ের আগের অন্য একটা ছেলেকে। ছি! 

তন্নিঃ তোর কি বিশ্বাস হয় না? 

আমিঃ আরে ধুর এগুলো কি বিশ্বাস করবো, এগুলো হচ্ছে তোর ন্যাকামি। সো ন্যাকামি না করলেই ভালো হবে। আমি নিচে যাচ্ছি, তুই এই চোখমুখ ঠিক করে নিচে আয়। 

বাহ! ফকিন্নি আসলেই আমাকে ভালোবাসে,,, এবার বুঝো জুয়েল কি জিনিষ। অনেক তো জ্বালাইছিলা আমারে দেখো এখন কেমন লাগে। 

আমি নিচে চলে গেলাম, সানি আর আয়মান ইশারায় আমাকে জিজ্ঞের করলো কি বলেছে, আমি পরে বলবো বলে ইশারা দিলাম। 

একটু পর তন্নিও চলে আসলো, গায়ে হলুদ দেওয়া শুরু হলো। ওরে আরো রাগানোর জন্য আমি সবার আগে ষ্টেজ এ উঠলাম, উঠেই অনেক গুলো হলুদ নিয়ে ওর মুখে মাখিয়ে দিলাম, রেগে পুরো লাল হয়ে গেছে। এদিকে সানি আর আয়মান তালি দেওয়া শুরু করলো। ওদের দেখে অন্যেরাও দেওয়া শুরু করলো। তারপর মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে কিছু ছবি তুলে আমি চলে আসলাম তন্নির চোখে স্পর্শ পানি দেখতে পেলাম। 

তারপর সানি আয়মান সাদিয়া ফারিয়া সবাই লাগালো। 

আমি ওদের বললাম তাড়াতাড়ি রেড়ি হতে। 

ফারিয়াঃ আচ্ছা তন্নিকে বলে যাই। 

আমিঃ মাথা খারাপ! ওরে বললে যেতে দিবে না। 

ফারিয়াঃ যদি আমাদের খুঁজে?

আমিঃ খুঁজবে না, সবাই হলুদ লাগাতে লাগাতে ৪.০০ টা বাজবে, তারপর ঘুমিয়ে যাবে, তন্নি ভাববে আমরাও ঘুমিয়ে গেছি। এখন তাড়াতাড়ি চল আব্বা কল দিচ্ছে। 

সাদিয়াঃ আমরা কেমনে যাবো? 

আয়মানঃ বাইরে cng আছে, আমি তুই আর ফারিয়া cng তে যাবো। সানি আর জুয়েল বাইকে যাবে। 

ফারিয়াঃ ওকে চল। 

তারপর আমাদের বাসায় চলে আসলাম, বাবা অনেক গুলো ঝাড়ি দিলো। সেগুলো হজম করে আমি গিয়ে রেড়ি হয়ে ষ্টেজ এ গিয়ে বসলাম। তারপর শুরু হলো আমার উপর ৩য় বিশ্বযুদ্ধ,,,

একে একে সবাই গায়ে হলুদ দিলো। ফটোসট, এটা সেটা করতে করতে ৫.০০ টা বেজে গেলো। তাড়াতাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। 

১১ টায় ঘুম থেকে উঠলাম, উঠে গোসল করে প্যান্ট শার্ট পড়ে রেড়ি হয়ে গেলাম। আম্মা এসে বললো....

আম্মুঃ কিরে পাঞ্জাবি সেরোয়ানী না গায়ে দিয়ে এটা কি দিলি? 

আমিঃ আরে ওগুলো গাড়িতে থাকবে। ওগুলো গায়ে দিয়ে তন্নিদের বাসায় গেলে সে সব বুঝে যাবে। তোমরা সবাই চলে আসবে। সেরোয়ানী গাড়িতে থাকবে। আমরা গেলাম। 

আম্মুঃ এটা কেমন কথা। 

আর কোনো কথা না বলে আমি সানি আয়মান সাদিয়া ফারিয়া বেরিয়ে গেলাম। একটুপর তন্নিদের বাসায় গেলাম। 

দেখলাম তন্নির রুমে অনেক ভিড়, মনে হয় ওরে সাজাচ্ছে। আমি সানি আয়মান বাইরে ঘুরতেছি, সাদিয়া আর ফারিয়া ভিতরে গেলো। লোকজন এসে খাওয়া দাওয়া শুরু করে দিলো। 

সানিঃ এই আমার খিদা লাগছে। এই জুয়েল আয় খেয়ে নিই। 

আমিঃ পাগল নাকি? আমাকে পরে খাওয়ানো হবে। 

সানিঃ আরে বেটা পরে লজ্জায় খেতে পারবি না। এখন অল্প করে খেয়ে নে। 

তারপর আয়মান আর সানির দুজনের টানাটানিতে খেতে বসলাম, তখন প্রায় ১.০০ টা বাজে। 

আমরা খাইতেছি, এমন সময় দেখলাম ফারিয়া দৌড় দিয়ে আমাদের কাছে আসলো। এসে আমার কানে যা বললো তা শুনেই আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো। 

ফারিয়া বললো, তন্নি নাকি সুইসাইড করেছে, অনেক গুলো মেডিসিন একসাথে খেয়ে ফেলছে। ভাতের প্লেট রেখে দৌড় দিলাম, ওর রুম্ব গিয়ে দেখি অনেক মানুষ। ভিড় ঠেলে ভিতরে গেলাম।

তাড়াতাড়ি ওরে কোলে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ইমার্জন্সিতে পাঠিয়ে দিলাম। চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো। ওরে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজে যে এতো বড় সারপ্রাইজ পেয়ে যাবো কখনো কল্পনাই করিনি। 

সানি আয়মান ফারিয়া সাদিয়া সবাই আছে। তন্নির আম্মুও অজ্ঞান হয়ে গেছে। একটু পর ভিতর থেকে একটা ডাক্তার আসলো। আমি তাড়াতাড়ি উনার কাছে গেলাম....

ডাক্তারঃ আপনার কে হয়? 

আমিঃ জ্বি আমার ওয়াইফ। এখন কেমন আছে? 

ডাক্তারঃ এখন চিন্তা মুক্ত, ঠিক সময়ে নিয়ে এসেছেন। স্যালাইন লাগিয়ে দিয়েছি। আপনারা চাইলে ভিতরে যেতে পারেন। 

আমিঃ ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব। 

ভিতরে গেলাম, তন্নি ঘুমিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে একটা নিষ্পাপ ফুটন্ত ফুল ঘুমিয়ে আছে। আমি ওর পাশে বসে মাথায় হাত বুলাইতে লাগলাম। সানি আয়মান সাদিয়া ফারিয়া সবাই ছিলো। অনেকক্ষণ পর তন্নির জ্ঞান আসলো। ওর চোখ খুলা দেখে আনন্দে চোখে পানি চলে আসলো। 

আমিঃ এমন করলি কেন? 

তন্নিঃ........  

আমিঃ তুই জানিস তোর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেও ঠিক থাকতাম না। 

তন্নিঃ বাঁচাইলি কেন আমারে, আমি তো তোর কেউ না। আমার জামাইরে বল আসতে। 

সানিঃ আরে হারামি ওই তোর জামাই। 

তন্নিঃ মানে! 

ফারিয়াঃ মানে ওর সাথেই তোর বিয়ে ঠিক হইছিলো। 

তন্নিঃ কি বলিস এসব? 

আমিঃ হুম সত্যি বলছে। তুই একবারও বিয়ের কার্ডটা দেখেছিস? সেখানে তোর আর কার নাম লেখা? 

তন্নিঃ তোর কথার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝতেছি না। 

আমিঃ..... (পুরো ঘটনাটা বললাম)

তন্নিঃ তো আমাকে কিছু বলিস নি কেন? 

আমিঃ সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। 

তন্নিঃ যাহ! হারামি থাক তুই তোর সারপ্রাইজ নিয়ে, এখানে আসলি কেন? তোদের সাথে কথা নাই। 

আমিঃ আরে পাগলি রাগ করিস কেন? 

তন্নিঃ জুয়েইল্লা তুই অনেক বড় মাপের হারামিরে। 

আমিঃ হা হা হা সেটা জেনেও তো প্রেমে পড়ে গেছিস। 

তন্নিঃ হুম সত্যি, তোরে ছাড়া থাকতে পারবো না রে। (বলেই জড়িয়ে ধরলো)

আমিও কিছু বলিনি। 

সানিঃ ওই এগুলো বাসর ঘরে গিয়ে করিস, আমার গা জ্বলে। 

তন্নিঃ এই মেহমানরা কিছু জানে? 

আমিঃ হুম, ওদের বলেছি তুই হঠ্যাৎ সেন্সল্যাস হয়ে গেছিস। 

তন্নিঃ চল বাসায় চলে যাই। 

আমিঃ তুই আরো সুস্থ হ, তারপর।

তন্নিঃ আরে ধুর আমি ভালো আছি চলতো। 

তন্নির বাবা মা এবং আমার বাবা মা গাড়িয়ে নিয়ে আসতেছিলো এমন সমত তন্নির বাইরে বেরিয়ে আসা দেখে উনারা এসে ওরে জড়িয়ে ধরলো। তারপর তন্নিদের বাসায় চলে গেলাম। বিয়ের সব গুলো কাজ শেষ হলো, কবুল টবুল বলা শেষে। ওরে গাড়িতে করে বাসায় নিয়ে গেলাম। গাড়িতে ও আমার একটা হাত ধরে বসে আছিলো। 

এখন রাত ১২.০০ টা আমি সানি আর আয়মান বাসার ছাদে বসে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় আম্মু আসলো... 

আম্মুঃ কিরে তুই এখনো এখানে? মেয়েটা কখন থেকে বসে আছে, তারউপর সে অনেক অসুস্থ। 

আমিঃ হুম যাচ্ছি। তুমি যাও,,, 

আম্মু চলে গেলো... 

আমিঃ আচ্ছা তোরা ঘুমিয়ে যা, অনেক রাত হইছে। 

সানিঃ আজকে কিছু করিস না, ও অসুস্থ।

আয়ামানঃ হারামজাদা! দোস্ত তুই যা। আল্লাহ হাফেজ,,, দেখে শুনে সব কিছু করিস। 

শালারা দুজনেই সুন্দর করে বাঁশ দিয়ে দিলো। আমি এখন আমার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, নিজের রুমে যেতে নিজেরই লজ্জা লাগছে। ধুর এতো লজ্জা দিয়ে কাজ হবে না,যাই ভিতরে যাই।

ভিতরে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম,আমি তাকিয়ে দেখি তন্নি একটাল লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আমি সামনে গেলাম, আমার ধারনা অন্যদের মতো তন্নিও সালাম করতে আসবে আর আমি ও কে ধরে ফেলবো কিন্তু সেটা আর হলো না। তন্নি একটা টান দিয়ে ওর ঘোমটা খুলে খাটে থেকে নেমে, শাড়িটাকে কোমরের মধ্যে গুছিয়ে বলতে লাগলো...

তন্নিঃ এই হারামী, কুত্তা বিলাই। এতক্ষণ কই ছিলি? জানিস না আমি ভয় পাই। 

আমিঃ এই সরি রে, ওদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে সময় চলে গেছে টেরও পাইনি। 

তন্নিঃ বাহ! ঘরে বউ রেখে উনি বাইরে আড্ডা দিচ্ছে। দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মঝা। 

আমিঃ প্লিজ রাগ করিস না, এবারের মতো মাফ করে দে। 

তন্নিঃ দিতে পারি একটা শর্তে। 

আমিঃ কি? 

তন্নিঃ আমাকে একটা গান শোনা। 

আমিঃ ধুর আমি পারি না। 

তন্নিঃ কি বললি? (রেগে গিয়ে) 

আমিঃ এই না, শুনাচ্ছি। তোকেও শোনাতে হবে। 

তন্নিঃ দেখা যাবে। আগে তুই শুরু কর। 

আমিঃ তুমি দিও না গো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া, আমি...(বলতে দিলো না)

তন্নিঃ এই হারামি এটা কোনো গান হলো, সুন্দর গান গা,,, 

আমিঃ ধুর আমি পারি না, তুই একটা শোনা। 

তারপর তন্নি ওর মিষ্টি কন্ঠে একটা তাহসানের "বন্ধু হও যদি" এই গানটা শোনালো, আমি তালি দিলাম। 

তন্নিঃ আয় একটু নাচি। 

আমিঃ পাগল নাকি আমি পারিনা। তুই নাচ,, 

তন্নিঃ আরে পারবি, হালকা একটা গানে নাচবো। আয়,,, 

তারপর উল্টাপাল্টা কিছুক্ষণ নাচলাম, কি নাচলাম নিজেও জানি না। 

তন্নিঃ চল ছাদে যাবো, চাঁদ দেখবো। 

আমিঃ ওকে চল। 

তন্নিঃ ওই এভাবে না, আমাকে কোলে করে নিয়ে চল। 

কি আর করা আটার বস্তাটাকে কোলে নিয়ে ছাদে গেলাম,,,

আমিঃ আল্লাহ তুই এতো ওজন? 

তন্নিঃ একদিনেই এই অবস্থা? বাকি সময় তো রয়েই গেছে। 

আমিঃ মানে! 

তন্নি আর কিছু না বললো না। দুজনে ছাদের এক কোনে গিয়ে বসলাম, সে আমার কাঁধে মাথা দিয়ে চাঁদ দেখতে লাগলো, সাথে নানান রকম কথার ফুলঝুরি ফুটাতে লাগলো। তারপর আবারও ওরে কোলে নিয়ে রুমে আসলাম। 

আমিঃ এই শোন, আজ থেকে তুই তুকারি করে বলবি না, তুমি করে বলবি। 

তন্নিঃ ধুর আমি পারবো না। 

আমিঃ পারবি না মানে, কেউ যদি শোনে মান ইজ্জত সব যাবে। 

তন্নিঃ আচ্ছা যা, সবার সামনে তুমি বলবো, আর এমনিতে তুই করেই বলবো। এই শোন,,,, 

আমিঃ হুম বল! 

তন্নিঃ আমার ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো আমার টুইন বেবি হবে। 

আমিঃ হাছানি? 

তন্নিঃ হুম। 

আমিঃ তাহলে তো আমাকে ডাবল পরিশ্রম করতে হবে। 

তন্নিঃ মানে? 

আমিঃ একটার জন্য যেই কাজ করা লাগে ২ টার জন্য তার ডাবল করা লাগবে না? (আস্তে আস্তে ওর দিকে আগাইতে লাগলাম)

তন্নিঃ এই খবরদার, একদম কাছে আসবি না। আমি কিন্তু চিল্লাচিল্লি করবো। 

আমি বাংলা সিনের ভিলেনের মতো একটা হাসি দিলাম!

আমিঃ হু হা হা হা, সুন্দরি, তোমার ডাক শোনে এখানে কেউই আসবে না। 

তন্নিঃ এই না, একদম না। 

আমি ওর আর কোনো কথা না শোনে হাত ধরে একটা টান দিলাম, তারপর হারিয়ে গেলাম অন্য একটা পৃথিবীতে। 

আপনারা এখনো বসে আছেন? আর কতো ভাই, অনেক কিছু তো দেখলেন। এবার নিজেদের টুইন বেবির জন্য কার্যক্রম শুরু করে দেন,,, হিহিহিহি

*** সমাপ্ত ***


Writer:- এম এইচ জুয়েল
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner