তন্নির মায়ের নাম্বার দিয়ে আমি বাইরে চলে গেলাম, আম্মু মনে হয় কথা বলেছে। রাতের বেলায় বাসায় আসলাম।
আম্মুঃ কিরে কোথায় ছিলি?
আমিঃ এই তো বাইরে গিয়েছিলাম।
আম্মুঃ তোর অফিস কয়টা বাজে?
আমিঃ ৯.০০ টায়, কেন?
আম্মুঃ সকালে আমাকে আর তোর বাবাকে একটু তন্নিদের বাসায় দিয়ে আসতে পারবি?
আমিঃ মানে! ওই বাসায় গিয়ে কি করবে?
আম্মুঃ তন্নির মা নাকি অনেক অসুস্থ, একটু দেখে আসবো।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে গেলাম, সকালে ঘুম থেকে উঠে আব্বু আম্মুকে নিয়ে তন্নিদের বাসার সামনে গেলাম, আমি উনাদের ভিতরে পাঠিয়ে দিয়ে আবার অফিসে চলে গেলাম।
সারা দিন কাজ করে সানি আর আয়মানের সাথে বিকালবেলা আড্ডা দিয়ে বাসায় আসলাম, এসে ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে একটা বই পড়তেছি। আম্মু রুমে আসলো...
আম্মুঃ কিরে কি করিস?
আমিঃ কিছু না, বই পড়ছি। কিছু বলবে?
আম্মুঃ হুম, তোর বিয়ে।
আমিঃ কিহ! আমার বিয়ে মানে?
আম্মুঃ হুম, তোর বিয়ে ঠিক করছি।
আমিঃ মানে কি? আমাকে জিজ্ঞেসও করলে না, মেয়েটাকে, কোথায় থাকে, কি করে সেটাও বললা না, সোজা বিয়ে ঠিক করে ফেললা?
আম্মুঃ তোকে জিজ্ঞেস করার কি আছে, আমার ছেলের বউ কে হবে সেটা আমি ঠিক করবো।
আমিঃ কিন্তু মেয়েটা কে সেটা তো বলবে।
আম্মুঃ তোর বান্ধবী।
আমিঃ বান্ধবী মানে? কার কথা বলতেছো?
আম্মুঃ তন্নি। ওর সাথেই তোর বিয়ে ঠিক করেছি।
আমিঃ কিহ! তন্নির সাথে মানে?
আম্মুঃ কেন ওরে তোর ভালো লাগেনা? আচ্ছা ঠিক আছে না করে দিচ্ছি।
আমিঃ আরে ধুর তোমারে আমি একবারও বলছি না করতে?
আম্মুঃ তো কি করতাম? ও ভালো কথা। তুই যে পাত্র সেটা তন্নিকে বলতে নিষেধ করেছি।
আমিঃ তো কি বলেছো?
আম্মুঃ আসল কথা ওর বাবা মাকে বলেছি। ওরাও রাজি, কিন্তু বলেছি তোর কথা যাতে না বলে। অন্য ছেলের কথা বলতে।
আমিঃ কিন্তু কেন?
আম্মুঃ সারপ্রাইজ,,,,
আমিঃ বাহ! তোমার মাথায় বুদ্ধি আছে।
আম্মুঃ দেখতে হবে না মা টা কার?
আমিঃ হুম।
আম্মুঃ আচ্ছা খেতে আয়।
তারপর খাওয়াদাওয়া করে ঘুমাতে গেলাম, কিন্তু খুশির ঠ্যালায় ঘুম আসছে না।
যাইহোক মনটা ফ্রেশ হয়ে গেলো। তন্নিকেও বিশাল একটা সারপ্রাইজ দেওয়া হবে।
এভাবে কিছু দিন গেলো। শুক্রবারে সকালবেলা সাদিয়া কল দিলো....
সাদিয়াঃ কিরে ফকিন্নি! ভুলে গেলি নাকি?
আমিঃ আরে না, বল কেমন আছিস?
সাদিয়াঃ এইতো আছি আগের মতোই। তোর কি অবস্থা?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
সাদিয়াঃ আচ্ছা শোন, তন্নি কল দিয়েছিলো। সবাইকে আসতে বলেছে। তোকেও আসতে বলেছে। আজকে বিকালবেলা আমাদের ক্যাম্পাসের সামনে চলে আসিস।
আমিঃ কিন্তু আমাকে তো বলেনি। তোদের বলেছে, তোরা যা।
সাদিয়াঃ আরে তোর নাম্বার নাকি নেই ওর কাছে।
আমিঃ তাহলে আমি যাচ্ছি না, যদি ও কল করে তাহলে যাবো
সাদিয়াঃ আরে এমন করিস কেন? সানি আয়মান ফারিয়া সবাই আসবে।
আমিঃ আসুক বাট আমি আসবো না, যদি ও কল না করে।
সাদিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি ওরে তোর নাম্বার দিতেছি।
আমিঃ ওকে।
কল রেখে বসে বসে খেলা দেখতেছি। কিছুক্ষণ পর একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে, আমি বুঝে গেলাম তন্নিই হবে। কয়েকবার রিং পড়ার পর ধরলাম।
আমিঃ হ্যালো কে?
তন্নিঃ আমি!
আমিঃ আরে আজব তো! আমি টা কে?
তন্নিঃ আমি তন্নি!
আমিঃ কোন তন্নি? (না চেনার ভান ধরলাম)
তন্নিঃ কোন তন্নি মানে! কলেজের,,,,
আমিঃ ওও, তো বল কি হইছে? কল কেন দিছস.???
তন্নিঃ কেন কল দিলে সমস্যা নাকি?
আমিঃ অবশ্যই সমস্যা। আমার বউ অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে না করেছে। তো বল কি হইছে?
তন্নি চুপ করে আছে, ও যে রেগে আগুন হয়ে আছে সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।
তন্নিঃ বিকালে কলেজের সামনে আসিস, তোদের সাথে কথা আছে।
আমিঃ চেষ্টা করবো।
কলটা কেটে দিয়ে হাসতে লাগলাম।
যাইহোক দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে খুব সুন্দর ভাবে রেড়ি হলাম। অনেক দিন পর ওদের সাথে দেখা হবে।
বিকালবেলা সানি কল দিয়ে বললো ওরা সবাই চলে এসেছে, আমি ইচ্ছা করেই একটু দেরি করে গেলাম। যাওয়ার পর দেখি সবাই আছে, তন্নি আমাকে দেখে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিঃ কিরে হারামির দল! কি অবস্থা তোদের?
সানিঃ শালা এতো দেরি কেন?
আমিঃ আরে বাসায় কাজ ছিলো।
ফারিয়াঃ আচ্ছা চল ওইদিকে গিয়ে বসি।
সাদিয়াঃ ওকে চল।
একটু দূরে একটা ব্রিজের পাশে গিয়ে বসলাম, সবাই মিলে হাসাহাসি করতেছি বাট তন্নি চুপচাপ বসে আছে। একটু পর,,,,
সাদিয়াঃ তো এবার বল কি এমন কথা যে আমাদের সবাইকে একসাথ করলি।
তন্নি ব্যাগ থেকে কিছু কার্ড বের করলো, আমি দেখেই বুঝছি বিয়ের কার্ড, সবার আগে একটা কার্ড আমাকে দিলো। তারপর একে একে সবাইকে দিলো। তারপর বললো.....
তন্নিঃ এই মাসের শেষে আমার বিয়ে। তোদের দাওয়াত রইলো। আশা করি সবাই আসবি।
সবাই এক সাথে Congratulations জানালো, আমি চুপচাপ কার্ডটা দিয়ে বাতাস করতেছি।
ফারিয়াঃ আরে দোস্ত, তাহলে বিয়েটা করেই ফেলবি?
তন্নিঃ কি করবো, এখন তো আর বসে থাকার সময় না। আর কতো ওয়েট করবো। বাবা মা অনেক চাপ দিচ্ছে। ছেলেও নাকি ভালো চাকরি করে তাই রাজি হয়ে গেলাম।
সানিঃ তুই না কাকে যেন ভালোবাসতি? (রাগানোর জন্য)
তন্নিঃ তোরে আমি বলেছি আমি কাওকে ভালোবাসি? (ধমক দিয়ে)
সানিঃ না মানে....
ফারিয়াঃ হইছে আর মানে মানে করিস না। এই তুই কখন করবি (আমাকে)
আমিঃ কে, আমি?
ফারিয়াঃ হুম।
আমিঃ আমি তো করে ফেলছি আরো আগে।
সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকায়।
আমিঃ আরে এতো অবাক হওয়ার কিছু নাই, সত্যিই করে ফেলছি।
আয়মানঃ কই আমাদের কে তো বললি না।
আমিঃ বলার প্রয়োজন মনে করিনি তাই বলিনি।
সাদিয়াঃ তুই এখনো আমাদের পর ভাবিস।
আমিঃ আরে না, হুট করে হয়ে গেছে তাই বলার সময় পাইনি।
খেয়াল করে দেখলাম তন্নি রেগে লাল হয়ে আছে, আমার কথা শুনে আরো রেগে গেছে, চোখের মধ্যে পানি টলোমলো করতেছে। দেখে মনে হচ্ছে একটু পর কান্না করে দিবে।
তারপর তন্নি বললো....
তন্নিঃ আচ্ছা তোরা থাক, আমি গেলাম। বাসায় কাজ আছে,,,
ফারিয়াঃ আরে কি বলিস, কতো দিন পর দেখা হলো। একটু আড্ডা দিয়ে যা।
তন্নিঃ নারে অনেক কাজ, তোরা বিয়েতে অবশ্যই আসবি।
তারপর বিদায় নিয়ে চলে গেলো, আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। সানি আমাকে টোকা দিয়ে বলে....
সানিঃ বন্ধু চেয়ে থেকে লাভ নাই, সে এখন অন্য কারো।
সাদিয়াঃ হুম, সেদিন যদি একসেপ্ট করতি তাহলে হয়তো বিয়েটা তোর সাথেই হতো।
আয়মানঃ শালা বেশি বুঝে, এবার বুঝো কেমন লাগে।
ওদের কথা শুনে হাসি থামিয়ে রাখতে পারলাম না, অনেক জোরে হাসলাম।
ফারিয়াঃ কিরে তুই হাসিস কেন? পাগল হয়ে গেলি নাকি?
আমিঃ নাহ, তোদের কথা শোনে।
সানিঃ তুই পুরাই গেছস।
আমিঃ শোন, আমি যে কথা গুলো এখন তোদের বলবো সেগুলো শুনলে তোরাও হাসবি এন্ড অবাক হয়ে যাবি।
ফারিয়াঃ ওহ রিয়েলি! তো বল কি এমন কথা যেগুলো শুনলে আমরাও অবাক হয়ে যাবো।
তারপর আমি পুরো ঘটনা গুলো ওদের সাথে শেয়ার করলাম, বাবা মায়ের সাথে দেখা হওয়া থেকে আজ পর্যন্ত সব কিছুই বললাম।
সাদিয়াঃ তারমানে বিয়েটা তোর সাথেই হচ্ছে?
আমিঃ কার্ডটা খুলে দেখ, কার নাম লেখা।
সাদিয়াঃ তোরে তো ডাবল Congregation.
সানিঃ তো তুই ওরে কিছু বলিস নি কেন?
আমিঃ সারপ্রাইজ,,, তোরাও কিছু বলিস না।
আয়মানঃ তুই এক জিনিষ মাইরি,,,,
ফারিয়াঃ চল এখন ট্রিট দিবি।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে চল।
সানিঃ এই ওয়েট!
আয়মানঃ তোর আবার কি হলো?
সানিঃ তন্নি মনে হয় রাগের মাথায় বিয়েটা করতেছে।
ফারিয়াঃ কেমনে বুঝলি? ও তো নিজেই বললো নিজে থেকে বিয়ে করছে।
সানিঃ আরে পাগলের দল, কার সাথে বিয়ে হচ্ছে সেটাই তো জানে না। নামটাও দেখেনি।
আয়মানঃ হুম ঠিক বলেছিস, কেমন যেন শুকিয়ে গেছে।
আমিঃ ওই হারামিরা ওরে নিয়ে এতো কথা বলিস কেন? জানিস না ও আমার হবু বউ।
সাদিয়াঃ ওরে আমার ভালোবাসারে! বেশি কথা বললে এখন তন্নিরে সব বলে দিবো।
আমিঃ আচ্ছা সরি, এখন কিছু বলিস না। সময় মতো সব বলিস,,,
ফারিয়াঃ আচ্ছা ওতো এখন তোর বউ হবে, তবুও কেন কষ্ট দিতেছিস?
আমিঃ কলেজের দিন গুলোর কথা ভুলে গেলি?
ফারিয়াঃ এখনো এগুলো মাথায় নিয়ে ঘুরিস।
আমিঃ না ঘুরে কোনো উপায় আছে, যখন একা থাকি ওর অত্যাচারের কথা মনে পড়ে।
সানিঃ আচ্ছা এগুলো বাদ দে, বিয়ের পর সারাদিন তো আদরের উপর রাখবা, তখন তো অত্যাচার করবা না। এই যে আয়মান যেমন সাদিয়ারে আদর করতেছে, সাদিয়াও করতেছে। কি একটা লাক্সারিয়াস লাইফ উপপ!
সবাই একসাথে সানিকে থাপড়ানো শুরু করলাম।
ফারিয়াঃ হারামি তুই কোনো দিন মানুষ হবি না।
সানিঃ ও আচ্ছা তুইও তো ফয়সালকে আদর করতেছিস। সালার কি পুড়া কপাল নিয়ে দুনিয়াত আইছি কে জানে।
আয়মানঃ তোর কপালে বউ নাই।
এভাবে অনেক মঝা করলাম, আনন্দ করে রাতের বেলায় বাসায় চলে গেলাম। খুব ভালো একটা দিন কাটলো।
দেখতে দেখতে বিয়ের তারিখ চলে আসলো, ফারিয়া আর সাদিয়া তন্নির সাথে শপিং করতে গেলো, সানি আর আয়মান আমার সাথে।
আমরা দূরে দূরে রয়েছি যাতে ভুলেও তন্নি কিছু না জানতে পারে।
শপিং শেষে বের হচ্ছি এমন সময় গেইটে তাকাতেই একটা টাসকি খেলাম, কারণ.....
চলবে...
Writer:- এম এইচ জুয়েল