> সূরা ইউসুফ থেকে আমি যা শিখেছি ০৩ - সূরা ইউসুফ - Sura Yousuf - Arif Azad - আরিফ আজাদ
-->

সূরা ইউসুফ থেকে আমি যা শিখেছি ০৩ - সূরা ইউসুফ - Sura Yousuf - Arif Azad - আরিফ আজাদ

মারাত্মক একটা চক্রান্তের পরিকল্পনা সাজিয়ে নিলো ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইয়েরা। পিতার চোখে সবচেয়ে প্রিয় পুত্র হবার কারণে ইউসুফ আলাইহিস সালামকে তারা তাদের পথের কাঁটা ভাবতে শুরু করলো এবং এই কাঁটা সরানোর জন্য তারা আশ্রয় নিলো এক সুগভীর ষড়যন্ত্রের। তারা ঠিক করলো ইউসুফ আলাইহিস সালামকে তারা হয় কূপে নিক্ষেপ করবে নয়তো রেখে আসবে সুদূরের বিরান কোন ভূমিতে যেখান থেকে না ইউসুফ কোনোদিন পিতার সান্নিধ্য পাবে, না পিতা পাবে ইউসুফের নাগাল।

তবে, তাদের সেদিনের সেই ষড়যন্ত্রের দুটো অংশ ছিলো। একটা ছিলো এই— যেভাবেই হোক নিজেদের রাস্তা থেকে ইউসুফকে তারা সরিয়ে দেবে। আর অন্যটা হলো— ইউসুফকে হত্যা করে কিংবা দূরে কোথাও নির্বাসনে পাঠানোর পরে তারা আল্লাহর কাছে তাওবা করে ফেলবে। ব্যাপারটাকে কুরআন বর্ণনা করেছে এভাবে:

'হত্যা করো ইউসুফকে কিংবা তাকে ফেলে আসো সুদূরের কোন ভূমিতে। এতে করে তোমাদের পিতার দৃষ্টি তোমাদের দিকেই নিবদ্ধ হবে। এরপর তোমরা (তাওবা করে) ভালো লোক হয়ে যাবে'।- সুরা ইউসুফ ০৯

ইউসুফ আলাইহিস সালামকে ঘিরে এই ষড়যন্ত্র যখন রচিত হচ্ছিলো তখন তিনি একজন বালক মাত্র। একটা অবুঝ, খেলার বাচ্চাকে বড় সহোদরেরা খুন করতে উদ্যত হচ্ছে, এটা যে কী জঘন্য একটা পাপ কাজ তা ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইয়েরা জানতো। কোন নিরাপরাধকে হত্যা করা যে মারাত্মক পর্যায়ের একটা গুনাহের কাজ এটাও তারা জানতো।

তারা সব-ই জানে, সব-ই বুঝে। ভালো আর খারাপের জ্ঞান তাদের ঠিক-ই ছিলো, কিন্তু অন্তরে নফসের প্রাধান্য ছিলো তারচেয়ে বেশি। ফলে, ভালো আর খারাপ নির্ণয়ের জ্ঞান থাকার পরেও তারা খারাপটাকে বেছে নিলো কেবলমাত্র নফসের তাড়নায়।

যে ব্যক্তির অন্তর হিংসায় পরিপূর্ণ, যে অন্যের অমঙ্গল কামনায় সদা ব্যস্ত, সে ব্যক্তি যতো-ই জ্ঞানের জাহাজ হোক, দিনশেষে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। আলোর রাস্তা চিনেও সে ঢুকে পড়বে অন্ধকার গলিতে।

ইউসুফকে নিজেদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়াটা যে একটা জঘন্যতম পাপ কাজ, তা যে তারা অনুধাবন করতে পেরেছিলো তার প্রমাণ কী? প্রমাণ হলো— আয়াতের শেষাংশে তারা এই কর্ম সম্পাদনের পর তাওবা করে ভালো হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছিলো। যদি তারা বুঝতেই না পারতো যে এটা একটা গুনাহের কাজ, তাহলে তাওবাহর চিন্তা তারা সেদিন করতো না।

এই আয়াত পড়তে গিয়ে আমার মনে হলো— ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইদের এই চিন্তার ব্যাপক একটা প্রভাব আমাদের ওপর রয়েছে।

তারা একটা পাপ কাজ করতে উদ্যত হচ্ছে, কিন্তু তার আগেই ঠিক করে নিচ্ছে যে— এই পাপটা করেই তারা সাথে সাথে তাওবাহ করে ফেলবে এবং ভালো হয়ে যাবে। আর কোনোদিন ও'পথ তারা মাড়াবে না।

ভাবুন— একই ঘটনা আপনার জীবনেও কখনো ঘটেছে কি-না?

মনে করুন তো, কোন একটা পাপ কাজ করতে যাচ্ছেন, নিশ্চিত জানেন যে ওটা করলে আল্লাহ নাখোশ হবেন, নিশ্চিত জানেন যে ওটা করা হারাম, তা-ও আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। তখন আপনি মনে মনে বললেন— আজকেই শেষ। এরপর আর কোনোদিন-ই এই পথে পা বাড়াবো না। এই কাজ করা শেষ হলেই আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নেবো'।

নিভৃত, নির্জন পরিবেশে আছেন। আশেপাশে কেউ-ই নেই। মোবাইল থেকে নির্গত নীল আলো ব্যতীত আর কোন আলোও নেই কোথাও। আপনার মনে হলো— একটু নীল ছবির দুনিয়ায় যাওয়া যাক না।

আপনি কিন্তু বেশ ভালোভাবেই জানেন যে ওটা হারাম। ওটা একটা মারাত্মক গুনাহের কাজ। তথাপি আপনি নিয়ন্ত্রণ-হারা হয়ে গেছেন। এমন পরিবেশে আপনি ওই দুনিয়ায় খানিকটা না গেলে শান্তি পাচ্ছেন না। তখন মনে মনে কী বলেন?

'একটু যাই। আল্লাহর কাছে কাল অবশ্যই তাওবা করে ফেলবো এবং শপথ করবো যে আর জীবনেও এই পথে আসবো না'।

আপনার এই চিন্তা আর ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইদের সেদিনের ওই চিন্তা একইসূত্রে বাঁধা। ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইয়েরা ওইদিন জ্ঞানের ওপর নফসকে প্রাধান্য দিয়েছিলো। তারা জানতো— ইউসুফের সাথে তারা যা করতে যাচ্ছে তা মারাত্মক পর্যায়ের গুনাহ। কিন্তু নফসের তাড়নায় তারা সেদিন নিয়ন্ত্রণ-হারা ছিলো।

আপনিও বেশ ভালোভাবেই জানেন— নীল ছবির যে দুনিয়ায় ঢোকার জন্যে আপনি ফোন হাতে নিয়েছেন তা হারাম। গুনাহের কাজ। জেনেও লাভ হলো না। আপনার ওপর আপনার জ্ঞানের চাইতে নফসের নিয়ন্ত্রণ বেশি।

সেদিন ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইয়েরা তাওবা করে ভালো হয়ে যাবে বলে আগেই ঠিক করেছিলো। আপনিও আগেই ঠিক করেন যে— এটাই শেষবার। এরপর আপনি আর এই অশ্লীল জগতে আসবেন না। আজকের পরই আপনি তাওবা করে ভালো হয়ে যাবেন।

ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইদের সাথে আপনার মিলটা কোথায় দেখলেন?

কিন্তু, দিনশেষে এটা শয়তানের একটা কূটবুদ্ধি মাত্র। সে আপনাকে বুদ্ধি দিয়ে বলে— করে নাও না আরেকবার! এরপর নাহয় আর নাই-বা এলে এখানে। তাওবাহর দরোজা তো খোলাই আছে তোমার জন্য। তাওবাহ করে কাল থেকে নাহয় সুবোধ বালকটি হয়ে যাবে, ব্যস!

আপনি শয়তানের ওই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন যেভাবে পা দিয়েছিলো ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইয়েরা। তবে, তাওবাহ করে চিরতরে ভালো হয়ে যাওয়া আপনার আর হয়ে উঠে না। আপনাকে বারংবার ওই দুনিয়ায় যেতে হয় এবং প্রতিবার-ই শয়তান আপনাকে 'তাওবাহ করে নাহয় ভালো হয়ে যাবে' বলে ফাঁদে ফেলে।

ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইয়েরা শেষ পর্যন্ত ইউসুফ আলাইহিস সালামের কাছে পৌঁছে তাদের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলো, কিন্তু 'তাওবাহ' করেই ভালো হয়ে যাবেন ভেবে আপনার এই যে বারংবার ভুল করে বসা, আপনি কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন যে আল্লাহ আপনার তাওবাহ কবুল করছেন, কিংবা প্রত্যেকটাবার আপনাকে তাওবাহ করে ভালো হওয়ার সুযোগ দিবেন?




Writer:- Arif Azad


NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner