বাস থেকে নেমে বাসার জন্য হাঁটা ধরলাম।
একজন বৃদ্ধ মহিলা এসে আমাকে বলল এই ঠিকানাটা চিনি কিনা?
আমি দেখলাম হ্যাঁ চিনি।উনি ঐ মসজিদটার ওখানে যাবে। ওখানেই নাকি উনার মেয়ের বাসা। রিক্সাওয়ালা মামা বেশ বিরক্ত উনাকে নিয়ে।হয়ত অনেকক্ষণ ধরে উনাকে নিয়ে এদিক ওদিকে করছে।কিন্তু মহিলাটি রাস্তা চিনতে পারছেনা। আমার তেমন কোনো কাজ ছিল না। উনার জন্য বেশ মায়া কাজ করছিলো.। উনাকে বললাম আপনি আমার সাথে চলুন আমি পৌঁছে দিচ্ছি। উনাকে নিয়ে আস্তে আস্তে মসজিদের সামনে গেলাম।রাস্তায় উনি অনেক কথাই বলছিলো। বেশির ভাগই বুঝতে পারিনি। উনি বেশ বয়স্ক একজন মানুষ। কথা জড়িয়ে যায়। উনাকে নিয়ে মসজিদ এর সামনে গেলাম। সেখানে গিয়ে আমি বললাম কোনটা আপনার মেয়ের বাসা? বলে এইতো এখানেই। আমার নাতি এখানে নামাজ পড়তে আসে। ও বের হলে আমি ওর সাথে যাবো। আমাকে নিয়ে যাবে। আমি প্রচণ্ড রকমের একটা ধাক্কা খাই। কারণ মসজিদ এ এতো মানুষ নামাজ পড়তে আসে এর মধ্যে কি করে উনি উনার নাতি কে খুঁজে পাবে?? আমি উনাকে একা রেখে গেলাম না। দাঁড়িয়ে ছিলাম উনার পাশেই। বললাম আপনার কাছে কারো নাম্বার আছে? তাহলে ফোন দিন। আপনাকে এসে নিয়ে যাবে। উনি বলে আমার ফোন টা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি দেখলাম একটা নোকিয়া ফোন। আমি অনেক চেষ্টা করেও ফোনটা অন করতে পারলাম না। কি করব বুঝতে পারলাম না। এই ফোন এর চার্জার ও তো পাবোনা আসে পাশে। উনি দাঁড়িয়ে আছে। আমি ফোনটা নিয়ে আসে পাশের অনেক গুলো দোকানে গেলাম। যদি চার্জার পাওয়া যায়। অন করে উনার বাসায় ফোন দিবো। অনেকক্ষণ পরে একটা দোকানেও যাও চার্জার পেলাম তাও চার্জ হচ্ছেনা। উনার সিম টা আমার ফোনে লাগানোর ট্রাই করলাম কিন্তু লাভ হলোনা কিছুনা। সিমটা আমার ফোনেও কানেক্ট করতে পারছিনা। অনেক চেষ্টার পরে যখন চার্জ হলো। তখন আমি উনাকে একটা চেয়ার এ বসিয়ে বলি আপনি বসেন আমি দেখছি। আমি উনার বাসায় ফোন দিলাম। কেউ ফোন ধরছেনা। আমি দেখছিলাম কি অপলক দৃষ্টিতে মসজিদ এর সব মানুষের ভীড়ে নিজের নাতিকে খুঁজছে উনি। আমি উনার মেয়ের নাম্বার এ ফোন দিলাম। উনার মেয়ে বলল আপনি আপার নাম্বারে ফোন দিন। আম্মা আপার বাসায় যাবে। আমি উনার কথা শুনে আপার নাম্বারে ফোন দেয়। উনি সবটা শুনে খুব বিরক্ত হোন। এদিকে বৃদ্ধা মহিলাটি আমার দিকে তাকিয়ে বলে আমার মেয়েকে ফোন দাও আমাকে নিয়ে যাবে, জামাইকে ফোন দাও নিয়ে যাবে। কতটা আস্থা। কিন্তু উনার মেয়ে আমাকে বলে বাসায় কেউ নাই। আপনি পারলে একটু কষ্ট করে দিয়ে যান। খুব খারাপ লাগে আমার। উনার মা এভাবে অসহায় হয়ে রাস্তায় বসে আছে অগাধ আস্থা নিয়ে যে তার মেয়ে তাকে নিয়ে যাবে কিন্তু মেয়ের মা এর প্রতি কত বিরক্তি। আমি ঠিকানাটা নিয়ে উনাকে পৌঁছে দেই। উনাকে বাসায় দিয়ে আসার সময় দেখলাম বাসায় অনেক মানুষই আছে যেটা নেই সেটা হলো মমতা। উনাকে যখন বাসায় দিয়ে আসছিলাম রাস্তায় উনি বলছিলো আসলে বাসায় কেউ নাই কাজের অনেক চাপ তাই আসতে পারছেনা।
আসলে আমি নিজেই বলেছিলে একা একা চিনব। আমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো
আমি মানা করেছি। কিন্তু রাস্তাগুলো সব একই রকম তাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি।
আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম। এই হলো মা। যে শত কষ্ট পেয়েও তার সন্তানের অন্যের কাছে ছোট হতে দেয়না।
বিশ্বাস করুন খুব অসহায় আপনার বৃদ্ধ বাবা মা। উনাদের সাথে দয়া করে ভালো ব্যবহার করুন। আপনি যখন ছোট ছিলেন যেভাবে আপনি উনাদের উপর নির্ভর করতেন। এখন উনারাও বৃদ্ধ বয়সে আপনার মতই শিশু হয়ে যায়। উনাদের নিজের সন্তানের মত করে যত্ন করুন। অনেক বেশি কষ্ট হয়েছে এসব দেখে। মায়েরা এতো নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে কি করে??
আরো একটা অবাক করা ব্যাপার কি জানেন?
বাসায় এসে যাকেই বলতে যাই একজন বৃদ্ধা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলো।তার বাসা থেকে বলেছিলো পৌঁছে দিতে।ঠিক এতটুকু শুনার পর সবাই বলে এইতো এটা কোনো খারাপ চক্র। রাস্তা হারায় নাই। অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে বাসায় যেতে বলেছে। আমি পুরো কথাটা কেউ না শুনেই এসব মন্তব্য করেছে। কি অদ্ভুত! এখন কেউ কারো সত্যিকার এর বিপদের কথা ভাবতে পারেনা। আগেই ভাবে খারাপ উদ্দেশ্য আছে?
কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা?
নাহ আর ভাবতে পারছিনা।
Writer:- Shorna Howlader Tahin