> এক জীবনের প্রেম পর্ব ৪, ৫ | Bangla Short Story | Bangla Story | Boipoka365
-->

এক জীবনের প্রেম পর্ব ৪, ৫ | Bangla Short Story | Bangla Story | Boipoka365

বিকেলে ছাদ থেকে জামাকাপড় এনে রুমে আসতেই
আদিবকে দাঁড়াতে দেখে আমি খুশিতে একটা চিৎকার দিলাম।কিন্তু আমার খুশিটা বেশিক্ষন স্হায়ী হলো না..

 আদিবের পা দুটো কাঁপতে কাঁপতে ও পড়ে 
গেল।আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে উঠালাম।আমি ওকে দাড়া করানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ওর পা দুটো কাঁপার কারনে দাঁড়াতে পারল না। শরীরও ঘামে পুরো ভিজে গেছে।  মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম।অবশেষে আল্লাহ আমার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।মনের মাঝে আবারও আশার আলো দেখতে পেলাম। 

রাতে আদিবের পায়ের  ভালো ট্রিটমেন্টের জন্য ওর আব্বা, বড়ভাইদের সাথে পরামর্শ করলাম।পরদিনই আমি,আদিব, ওর বড়ভাই ডাক্তার কাছে নিয়ে গেলাম। সেখানে  তারা অনেকগুলো টেস্ট করানোর পর  আদিবের পায়ের  জন্য ইন্ডিয়ার এক ডাক্তারকে দেখানোর জন্য পরামর্শ দিল। বাড়ি এসে সকলের সাথে কথা বলে জরুরি ভিত্তিতে সব কাগজপত্র  ঠিক করে আদিবকে দশদিনের ভিতর ইন্ডিয়া নেওয়া হলো। আদিবের সাথে আমি, বড় ভাইভাবী, আব্বা গিয়েছি।সেখানে 
আদিবের পায়ে ছোটখাটো একটা অস্ত্রপাচার  করা হয়।প্রায় পনেরো দিনের মতো বেডরেস্টের পর আদিব স্ক্যাচ ব্যবহার করে দাঁড়াতে পারে। অল্প অল্প হাঁটতে পারে। বেশিক্ষন হাঁটতে পারে না, ক্লান্ত হয়ে যায়। ডাক্তার বলেছে আস্তে আস্তে আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে যাবে। প্রায় দেড়মাস পরে আমরা ইন্ডিয়া থেকে ফিরলাম। আদিব স্ক্যাচ ব্যবহার করেই 
এখন হাঁটে। বাড়ি আসার পর আম্মা আমাকে আর আদিবকে সেকি কান্না! আমাকে বলে,

--তুমি শুধু আমার বৌমা না,তুমি আমার মেয়ে।
তোমার জন্য আজ আমার আদিব নতুন করে বাঁচতে পারবে।নিজের পায়ে হাঁটতে পারবে। তোমার জন্য মন থেকে অনেক দোয়া,তুমি জীবনে অনেক সুখি হও আমার ছেলেকে নিয়ে। তোমার মত এমন একটা বৌমা পেয়ে আমার অনেক গর্ব লাগছে।

আমি মুচকি হেসে বললাম, 

--সবার আগে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করা উচিত। 
মানুষ তো মাত্র উছিলা।

তবুও বাড়ির সকলে আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। 

.........

আদিব এখন সম্পূর্ণ সুস্হ। হাঁটাচলা করতে কোন অসুবিধা হয় না। একটা ব্যাংকে চাকুরীও পেয়েছে। 
আজকেই ওর অফিসের প্রথম দিন। ইদানীং আমার কেনো জানি মাঝে মাঝে ভয় হয় আদিব কি আমাকে কখনো ছেড়ে চলে যাবে?
অফিস থেকে ফেরার সময় আমার জন্য একমুঠ রেশমি চুড়ি এনেছে। সেদিকে আমার হেলদোল নেই।
আমার মাথায় কিসব হাবিজাবি চিন্তা-ভাবনা ঘুরছে।
আমি আদিবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 

-- তোমার সাথে কি কোনো মেয়ে কলিগ আছে?

আমার কথা শুনে আদিব জোরে হেসে দিলো।

-- ওহহ,আচ্ছা এই জন্যই তোমাকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে? (আবার হেসে দিয়ে)
হ্যাঁ,আছে তো। একজন মেয়ে কলিগ আছে।  তবে আমার থেকে মিনিমাম সাত-আট বছরের বড়।তোমার চিন্তার কোন কারন নেই  যদি আমার চেয়ে বয়সে  ছোট হতোও তবুও আমি দূরে দূরে থাকতাম। 
কারন তুমিই যে আমার একমাত্র প্রিয়তমা। বিশস্ত অর্ধাঙ্গিনী। হাজার বাঁধা আসলেও তো তোমার হাত আমি ছাড়বো না যেমনটা তুমি আমার পাশে ছিলে 
হাজারো সমস্যা মোকাবিলা করে।

আমি কেঁদে দিয়ে বললাম, 

--কথা দিলে তো?

--হ্যাঁ আমার পাগলি।

আমি ওর কানে কাছে  গিয়ে লাজুক মুখে  ফিসফিস করে বললাম, 

--ওই শোনো...একটা কথা বলার ছিলো।কিন্তু আমার না ভীষণ লজ্জা করছে। (চোখ ঢেকে)

--তাহলে বলে ফেলো, আমার কাছে আবার লজ্জা কিসের?

--উঁহু,আমার অনেক লজ্জা করছে তোমাকে কথাটা বলতে। ইদানীং আমার আসলে খাওয়ার প্রতি অরুচি লাগছে, খেতে বসলেই বমি আসে, মাঝে মাঝে আচার খেতে ইচ্ছা করে, এবার তুমি বুঝে নাও...
(কথাটা বলে আমি আবারও হাত দিয়ে চোখ ঢাকলাম) 

--তোমার শরীর অসুস্থ এটা বলতে এতো লজ্জা? 
আচ্ছা আজকে ভাবীকে বলে দিব কালকে যাতে 
তোমাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যায়। মনে হয় তোমার ফুড পয়জনিং হয়েছে।
(আদিব হাসি চেপে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই কথাটা বললো)

--গাধা কোথাকার! আমার ফুড পয়জনিং হয়েছে 
তোকে কে বলেছে রে? আমি কি একবারও বলেছি? 
আমার চোখ দেখে অন্য সময় সব বলে দিতে পারো আর এখন কেনো বুঝছো না? কি বলতে চাইছি আমি?
(কিছুটা চিল্লিয়ে)

--থাক থাক মহারানী আর  চিল্লাতে হবে না।আমার অনাগত প্রিন্স /প্রিন্সেস শুনলে কষ্ট পাবে, যে ওদের আম্মু ওর বাবার সাথে ঝগড়া করছে।(মুচকি হাসি দিয়ে) 

আদিবের কথা শুনে তিশা আরো ক্ষেপে গেল।নাক ফুলিয়ে বলল,

--তাহলে এত ঢং দেখানোর কি হলো? ফালতু লোক কোথাকার... 

--আরে আরে রাগ করছো কেনো? আমি তো দেখছিলাম আমার মিষ্টি বউটা আমার কাছে কেমন লজ্জা পাচ্ছিল,আবার আমি না বোঝার ভান ধরায় কেমন ক্ষেপে যাচ্ছিল।

-- একটা কথা রাখবে?আমাকে আমাদের বাসায় কিছুদিনের জন্য দিয়ে আসবে।বাসায় যাওয়ার জন্য মন ছুটে গেছে। কতদিন সবাইকে একসাথে দেখি না।
আর জানোই তো একটা মেয়ের এই অবস্থায় তার মাকে কতোটা প্রয়োজন... 

--আচ্ছা মায়ের সাথে গিয়ে কথা বলে দেখি। জানোই তো আমাদের পরিবারে মায়ের কথাই সব কথা।

আদিব ওর মায়ের কাছে গিয়ে আমার কথাটা বলাতে আগুনে ঘি ঢালার মতো হলো। আমি আমার রুম থেকেই শুনতে পেলাম আমার পরিবারের সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলছে। তারা ছেলেপক্ষ হয়ে কেনো তারা মেয়েপক্ষের কাছে ছোট হবে।আরো অনেক কথা...
ওনার কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এলো।আমি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেলাম।সেখানে কিছুক্ষণ কেঁদে চোখে-মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে এলাম।এসে দেখি আদিব চুপ করে মাথা নিচু করে বিছানায় বসে আছে। আমিও কিছু না জানার ভান ধরে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। ও আমার হাত দুটো জড়িয়ে ধরে বলে,

-- তিশা, মা তোমাকে এই অবস্থায় জার্নি করতে নিষেধ করেছে।তুমি মাকে প্লিজ ভুল বুঝো না। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি দু-একদিনের মধ্যে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তোমাদের বাসায় নিয়ে যাব।

আমি ওর মিথ্যা আশ্বাস শুনে চুপ করে রইলাম। 
.
.
.

দেখতে দেখতে নয় মাস কেটে গেছে।বেবি হওয়ার সময়ও প্রায় ঘনিয়ে এসেছে। বাসায় আর যেতে পারি নি। আদিব যদিও নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আমিই মিথ্যা কথা বলে যেতে চাই নি। এরমাঝে মা আমাকে 
দুবার দেখে গেছেন। আশ্বাস দিয়ে গেছেন বেবি হলে 
বাবা আর রাগ করে থাকতে পারবে না। বাবার মাঝে এখনই আমার জন্য অনেক দূর্বলতা দেখতে পায় মা।
আমিও সেইদিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন আমার বেবি এসে দু'পক্ষের মনোমালিন্য হিসাব শেষ করবে।

হঠাৎ করেই আমার পেইন উঠে।আমি তাড়াতাড়ি আদিবকে কল করি, ও তখন অফিসে। আদিব জানায় ও অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এখুনি আসছে।ভাবীদের নিয়ে যাতে হাসপাতালে যাই।আম্মা, দুই ভাবী আমাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলো। যাওয়ার আগে আমার মাকেও খবর দেওয়া হলো। হাসপাতালে যাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাকে ওটিরুমে নেওয়া হলো। 

ততক্ষণে আদিব আর তিশার মা হাসপাতালে পৌঁছে যায়। ওটিরুম থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে আদিব মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ পড়ে নেয়।
নার্স এসে জানায় আদিবের ছেলে সন্তান হয়েছে। বাচ্চা ও মা দুজনেই সুস্থ আছে।নার্সের কথা শুনে আদিব আবারও মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ পড়ে নেয়। 
দুইদিন পরে তিশাকে আর ওর ছেলেকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যায়। পুরো বাড়ি আনন্দে ভরে যায়। তিশার সবচেয়ে বেশি হাসি পায় যখন ছেলেকে নিয়ে আদিব দুষ্টুমি করে,তখন আদিবকেও বাচ্চাদের মতো মনে হয়। তএবার তিশা সিদ্ধান্ত নেয় ওর বাবাকে ফোন করবে। সব ভেবেচিন্তে তিশা কল করে ওর বাবাকে। ওপাশ থেকে কল রিসিভ করার পর তিশার বাবার কর্মকাণ্ডে তিশা পুরোই অবাক হয়ে যায়......



সব ভেবেচিন্তে তিশা কল করে ওর বাবাকে। ওপাশ থেকে কল রিসিভ করার পর তিশার বাবার কর্মকাণ্ডে তিশা পুরোই অবাক হয়ে যায়......

তিশার কন্ঠস্বর শুনে ওর বাবা হাউমাউ করে কেঁদে করে দেয়। 

-- বাবা, তুমি কাঁদছো?
(আদিবকে বিয়ের সময় অপমান করা নিয়ে বাবাকে অনেক কড়া কথা বলার ছিল। কিন্তু বাবার কান্না দেখে আমি আর বলতে পারলাম না।--মনে মনে...)

-- তোর সাথে,জামাইয়ের সাথে অনেক অন্যায় করেছি আমরা। আমাদের তুই মাফ করে দিস।
এতদিন নিজের দাম্ভিকতাকেই মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলাম। কিন্তু মনের মাঝে একবিন্দুও শান্তি পাই নি। আজ  একবছর পরে তোর কন্ঠস্বর শুনে 
মনে শান্তি পেলাম। তোর কথা ভেবে ভেবে  একটা রাতও ঠিকমত শান্তিতে ঘুমাতে পারি নি....

--তবুও তো তুমি তোমার এই মেয়েটাকে একটাবারের জন্যও দেখতে আসো নি। নিজের জেদটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছো।(কেঁদে দিয়ে)
এখন আসো প্লিজ  তোমার নাতিটাকে দেখে যাও। 
নাকি এখনো আসবে না?

--হ্যাঁ মা আসব। তোকে- জামাইকে প্রাপ্য সম্মান নিয়ে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসব। জামাই আবার রাগ ধরবে না তো?

--তুমি যদি নিজে আসো তাহলে রাগ করবে না।

বাবার সাথে প্রায় একঘন্টা কথা বলে ফোনটা রাখলাম। আজ আমার মনেও অন্যরকম প্রশান্তি বইছে।মনে হচ্ছে সুখের সাগরে ভেসে যাব।
কিন্তু এতো সুখ আমার কপালে সইবে তো???
.
.
.
ঠিক দুইদিন পর ঘরের কাজ করছি। হঠাং কলিংবেলটা বেজে উঠল। সাধারনত এ দুপুরের দিকটায় কেউ আসে না।আমি গিয়ে দরজা খোলার পর অবাক হয়ে গেছি। আমাদের বাড়ির সবাই এসেছে। তারা কেউই আমাকে বলে নি তারা যে আসবে। অনেক খাবার-দাবার,বাবুর জন্য জিনিসপত্র আরো অনেক কিছু সাথে নিয়ে এসেছে। বাবা-ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না!
আমার পরিবারের সবাইকে দেখে আমার শাশুড়ী রুমে গিয়ে মুখ গোমড়া করে বসে রইলেন। সাথে অন্য সবাইকেও আসতে নিষেধ করলেন।
আমার শ্বশুরবাড়ির সবাইকে ডাকতে বললেন বাবা।
আমি শাশুড়ীকে গিয়ে ডাক দিতেই তিনি আরেক দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলেন।আমি গিয়ে আম্মাকে 
বললাম, আমার বাড়ির লোকজন এসেছেন আসুন আপনি...

তিনি  পাশে বসে থাকা ননদকে গলার স্বর নামিয়ে বললেন,
--আমার ছেলে আজ সম্পূর্ণ সুস্থ দেখে ওনারা আজ এসেছেন ঢং দেখাতে, এতদিন কই ছিল তাদের আলগা পিরিত।

আম্মার কথা শুনে আমার ভীষণ রাগ লাগলো। এতদিন তার মুখের ওপর কোন কথা বলি নি।কিন্তু আজ বললাম আমি বললাম, 

--আপনি ঠিক কি বললেন আম্মা? বুঝতে পারলাম না।

তিনি আমতা আমতা করে বললেন,

--না কিছু না,, তুমি গিয়ে নাস্তা রেডি করো। আমি এখুনি আসছি।

আমি যাওয়ার কিছুক্ষন পরই আম্মা আসলেন। কিছুটা গোমড়ামুখ করেই সকলের সাথে কথা বললেন।দুপুরে খাওয়ার সময় বড়ভাইয়া বললেন, 
আজকে আমাদেরকেতাদের সাথে নিয়ে যেতে চান। বাবাও ভাইয়ার সাথে একমত দিলেন। আমিও ভীষণ খুশি হলাম। কিন্তু আপত্তি করলেন আমার শ্বাশুড়ি।

--পরে কোনদিন আদিব বৌমাকে নিয়ে আপনাদের 
বাড়ি যাবে, আজ না। আমার মনটায় কেমন কু-ডাক ডাকছে। (আদিবের মা)

--আরে..আজকে গেলে অসুবিধা কি? শুক্রবার-শনিবার তো এমনিই বন্ধ, আবার রবিবারেও সরকারি ছুটি পড়েছে।তাই বলছিলাম তিনদিন আমাদের বাড়ি মেয়ে আর জামাই বেড়িয়ে আসুক। তিনদিনের এমন ছুটি তো আর সবসময় আসে না। (তিশার বাবা)

--তবুও.... 

--আম্মা, আপনি প্লিজ আর আপত্তি করবেন না। কতদিন বাসায় যাই না।কিচ্ছু হবে না দেখবেন।আমি এখুনি আদিবকে ফোন করে কথা বলছি।আর জামাকাপড়ও গুছিয়ে নিই।
.
.
.
দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে জামাকাপড় গুছিয়ে আদিবকে বিকালের দিকে ফোন দিই। আমার পরিবারের লোকজন এই বাড়িতে এসেছে শুনে আদিব অনেক খুশিও হয় আবার অবাকও হয়।

--কিহ! তুমি এতোক্ষণে এই কথা বলছো?

--তাহলে কখন বলতাম? এতোক্ষণ অনেক বিজি ছিলাম। শোনো তোমার অফিস তো আর কিছুক্ষনের মধ্যেই ছুটি হয়ে যাবে, তাই না? একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করো প্লিজ।

--পাঁচটায় অফিস ছুটি হবে।কিন্তু আগামী তিনদিনের ছুটি থাকায় বেশিরভাগ মানুষই আজ বেড়াতে যাবে।যার কারনে রাস্তায় আজ অনেক জ্যাম থাকবে। আর জ্যাম ছুটতে ছুটতে চার-পাঁচ ঘন্টা লেগে যাবে সেটা তো আর তোমার অজানা নয়।আমার আসতে আসতেও লেট হবে এটা ধরে নাও।

--আমি একটা বুদ্ধি দিই।তুমি না লঞ্চে করে চলে আসো। বাসায় আসতে আসতে একঘন্টা লাগবে।আর কোন জ্যাম-ট্যাম ভয় নেই।

-- মাথা খারাপ নাকি।তুমি জানো না আমি সাঁতার পারি না তাই লঞ্চে উঠিনা।নদীপথে যাতায়াত করতে আমার ভীষন ভয় লাগে। লাস্ট কবে উঠেছি তাও মনে নেই।আর উঠলেও সাথে পরিচিত কাউকে নিয়ে উঠি। বলা তো যায় না যদি লঞ্চ-টঞ্চ ডুবে মারা যাই।

-- ফালতু কথা বাদ দাও। এই সমস্ত কথা আর বলবে না। আর তুমি যা ভালো মনে করো,, তাই করো।

কিছুটা অভিমান করে ফোনটা কেটে দিলাম। 

.......

কিছুক্ষন আবার আদিব ফোন করলো। আমি কলটা রিসিভ করলাম না। আবারও কল করলো আমি আবারও রিসিভ করলাম না। এমন করে অনেকগুলো কল করলো।শেষমেষ বাধ্য হয়ে কলটা রিসিভ করলাম।

--কি হলো রাগ করেছো তিশা? 

আমি কোন উত্তর দিলাম না।

--আরে শোনো,, আমি তোমার কথাটা ভেবেই লঞ্চঘাটে এসেছি।লঞ্চ দিয়েই আসবো,এবার খুশি তো?

--হ্যাঁ,খুব খুশি। তাড়াতাড়ি আর সাবধানে চলে এসো।

আমি সবাইকে গিয়ে বললাম আদিব লঞ্চে করে আসছে। তাই জ্যামের কোনো চিন্তা নেই। খুব তাড়াতাড়িই চলে আসবে।

প্রায় দু'ঘন্টা হয়ে গেছে অথচ আদিবের ফেরার কোন নাম নেই। অথচ একঘন্টা, সর্বোচ্চ দেড়ঘন্টার মধ্যে পৌঁছানোর কথা।ব্যস্ততার কারনে কলও করতে পারি নি। সন্ধ্যায় আমি সকলের জন্য নাস্তা বানাচ্ছি আর আমার ননদ রিনি টিভি দেখছে।হঠাৎ রিনি চিৎকার দিয়ে আমাকে ডেকে বলল,

--ভা--বী,ভাবী এই দেখো আমাদের শহরের লঞ্চঘাটে মাছের  ট্রলারের সাথে ধাক্কা লেগে একটা  লঞ্চ ডুবে গেছে।

(আমি লঞ্চঘাট সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না, তাই ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়)

লঞ্চ ডোবার কাহিনি শুনে  আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল।আমি থরথর করে কাঁপছি। রিনির কথা শুনে সকলে নিউজ দেখার জন্য ড্রয়িংরুমে চলে আসলো,তাদের সাথে আমি যোগ দিলাম। আধাঘন্টা আগে লঞ্চটা ডুবেছে। আর সেই সময়টাতে আদিবেরও লঞ্চে উঠার কথা। আর ও যদি লঞ্চে উঠে থাকে,তাহলে...... 
না আমি কিছু ভাবতে পারছি না।আমি তাড়াতাড়ি ওকে কল দিলাম। কিন্তু ওর ফোনটা বন্ধ দেখাচ্ছে। 
এই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না কথাটা শোনা মাত্রই আমার বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল।
আম্মা তখুনি কান্না শুরু করে দিল আর আমাকে গালিগালাজ করা শুরু করে দিল।

--এই অলক্ষ্মী মেয়েটা সব কিছুর জন্য দায়ী।আমার ছেলের কিছু হলে তোকে আমি ছাড়ব না। 

বাড়ি জুড়ে সকলের কান্নার রোল পড়ে গেল।







চলবে...






Writer:- নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner