মা জলদি নাস্তা দাও আজকে অফিসে তাড়াতাড়ি যেতে হবে নতুন এম.ডি জয়েন করছে।
মা:তুই টেবিলে বস আমি নাস্তা নিয়ে আসছি....
আমি:আচ্ছা।
এর মধ্যেই আমার পরিচয় টা দিয়ে দিই। আমি নুসরাত জাহান মাহি, সবাই আমাকে মাহি বলেই ডাকে।আর আমি খুব সুন্দর আর শান্ত স্বভাবের মেয়ে সবাই তাই বলে
। আমার ছোটো একটা পরিবার। সেখানে আমি আর আমার মা থাকি। আমার বাবা আমাদের সাথে থাকেননা। আমার যখন ৫ বছর বয়স তখন বাবা মা কে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেন। ভালোবেসেই বিয়ে করেছিল তারা দুজন।কিন্তু সম্পর্ক টা টিকেনি। সেই থেকেই মা আমাকে নিয়ে একা থাকেন।অনেক বিলাসিতাই বড় করেছেন আমাকে। কখনও কষ্ট কি জিনিস আমাকে বুঝতে দেননি।কারণ মায়ের পাশে আমার নানু বাড়ির সাপোর্ট ছিল।
থাক অনেক কিছু বলে ফেললাম, আমাকে এখন খাবার টা তো খেতে হবে।
মা: নে ধর পুরোটা খাবি কিন্তু। প্রতিদিন তো হাফ খেয়ে চলে যাস।
আমি: উমম.. মা আজকে তো আরো জলদি যেতে হবে। নতুন এম.ডি আসবে আর আমি তার পি.এ। তাড়াতাড়ি না গেলে হয়?? (খেতে খেতে)
মা: তাই বলে কি না খেয়ে যেতে হবে নাকি? আর দিন দিন যা ফিগার বানাচ্ছিস কিছুদিন পর তো তোকে চোখেও দেখা যাবেন।
আমি: আহা,মা স্লিম না থাকলে আমি কাজ করবো কিভাবে। আর মোটা হয়ে গেলে ছেলেরা যদি আমার দিকে না তাকাই??
আচ্ছা আমার খাওয়া শেষ, আমি আসি। তুমি খেয়ে নিও।
মা: আচ্ছা সাবধানে যাস।
আমি: উফফ তাও অনেকটা লেট হয়ে গেলো। না জানি নতুন এম.ডি কেমন হবে। ভাবতে ভাবতে অফিসে পৌঁছে গেলাম।
-good morning, mam
-good morning everyone.
মি.আসিফ: আরে মাহি, তুমি এতো লেট কেনো? এম.ডি সাহেব অলরেডি চলে এসেছেন। তাড়াতাড়ি এসো welcome করতে হবে।
আমি: হ্যা চলো। আসলে জ্যামে আটকে গেছিলাম। তাই এতো লেট হলো।
মি.আসিফ: দেখে দেখে আজকেই তোমাকে জ্যামে পড়তে হলো? শুনেছি নতুন এম.ডি নাকি খুব কড়া মেজাজের লোক।
আমি: ওহ্ তাই নাকি!! এই ওয়েট ওয়েট ওনার নাম টাই তো জানা হয়নি। নামটা কি?
মি.আসিফ: হা হা হা এখন পর্যন্ত নাম টাই জানোনা!!
.......................
মি.আশফি চৌধুরী: Hello everybody. আমি আশফি চৌধুরী আপনাদের নতুন এম.ডি।
- welcome sir ( অফিস স্টাফ)
আমি: welcome sir. আমি আপনার....... (কথা শেষ করার আগেই মি.আশফি কথা বলা শুরু করলেন)
মি.আশফি: আমি যেহেতু এখানে নতুন তাই আমি আপনাদের সকলের সাহায্য কামনা করবো। ম্যানেজার সাহেব আপনি আমার চেম্বারে আসুন।
ম্যানেজার: ok sir.
মিস নিলা: wow আমাদের আশফি স্যার তো পুরাই হিরো। এত্তো young, smart r dasshing . আমি তো পুরো প্রেমে পড়ে গেলাম।(অফিস স্টাফ)
আমি: হুম। সেটা তো ঠিক আছে। কিন্তু বিহেভিয়ার টা এমন কেনো? আমি welcome করলাম আর আমাকে কিভাবে avoid করলো!!
মি.আসিফ: আগেই বলেছিলাম উনি একটু কড়া মেজাজের মানুষ।
আমি:হুম... একটু না অনেকটাই।
মি.আশফি: আচ্ছা ম্যানেজার সাহেব আপনি এখন আসতে পারেন।
ম্যানেজার : ok sir.
মি. আশফি: আমার চেম্বারর আসুন।( টেলিফোন পি.এ কে)
আমি: May I come in sir??
মি. আশফি: yeah come in. বসুন।
আমি: thank u sir.
মি.আশফি:welcome. আপনি এখানে কত বছর হলো কাজ করছেন?
আমি: 2 years sir.
মি. আশফি: এই ২ বছরে আপনি ঠিক কত বার লেট করে এসেছেন?
আমি: স্যার আমি always right time এ অফিসে আসি।actually আজকে জ্যামে আটকে গেছিলাম তাই আর কি...........( কথা থামিয়ে)
মি. আশফি: shut up. আমি এই excuse জিনিসটা একদম অপছন্দ করি। next time আমি আপনাকে regular right time এ অফিসে দেখতে চাই। Is that clear???
আমি: ok sir
মি আশফি: এখন আসতে পারেন। আর হ্যা আপনার নাম টা তো জানা হলোনা। নামটা কি?
আমি: নুসরাত জাহান মাহি।
মি. আশফি: হুম। তো মিস মাহি এই ফাইলগুলো রাখুন কালকের মধ্যে কাজ শেষ করে এগুলো আমাকে জমা দিবেন।
আমি: স্যার কালকের মধ্যেই দিতে হবে এতগুলো ফাইল?
মি. আশফি: yes...... কালকেই।
আমি: ok sir
মি. আশফি: আর হ্যা শুনুন। প্রতিদিন সকালে অফিসে এসে at first আমার চেম্বারে আসবেন। এসে আমাকে good morning জানাবেন। তারপর নিজের চেম্বারে যাবেন।Ok....??
আমি: ok sir.......
মি. আশফি: হুম। এখন আসুন। ( আড়ালে মুচকি হেসে)
আমি: হাই খোদা..... এ কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত রুলস ওনার। মুড টা একদম পুরা নষ্ট করে দিল।
আগের এম.ডি স্যার এর কাছে কখনও এমন বকা খাইনি। আর ইনি একদিন আসতে না আসতেই সবাইকে মেজাজের ওপর রাখছেন। বদমেজাজি লোক একটা।
মি.আসিফ: কি ব্যাপার মাহি তোমাকে এমন বিষন্ন লাগছে কেনো?
আমি: আর বোলোনা পুরা মেজাজ টাই বিগড়ে দিল। তারপর আসিফকে সবকিছু বললাম।
আসিফ: হা হা হা। তাহলে এই punishment দিল তোমাকে । যাই হোক অনেক সাবধানে কাজ কোরো। Best of luck
আমি: হুম। Thanks .
আজকে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। এতো কাজ দিয়েছে যে অফিসের কাজ বাসায় আনতে হলো। একদিনে এতো কাজ কি করে শেষ করবো আল্লাহ্ পাক'ই জানে।
মা: কিরে আজকে আসতে এতো দেরি করলি যে?
আমি: ওহ্ মা পরে বলছি আগে খেতে দাও প্রচন্ড ক্ষুদা পেয়েছে।
মা: কেনোরে আজকে দুপুরে খাসনি?? তোর তো এতো তাড়াতাড়ি কখনো খিদে পাইনা।
আমি: আর খাওয়া...... নতুন এম.ডি স্যার এতো কাজ দিয়েছে যে খাওয়ার কথা ভুলেই গেছি। আর এতো বদমেজাজি জানোনো মা...
মা: তাই নাকি? তাহলে সাবধানে কাজ করিস। আর তুই কখনো মাথা গরম করবিনা,বুঝলি? যা ফ্রেশ হয়ে আই আমি তোকে খাবার দিচ্ছি।
আমি: হুম যাচ্ছি। তারপর খাওয়া-দাওয়া শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসলাম। কাজ করতে করতে রাত ১১:৩০ টা বেজে গেলো। হঠাৎ unknown নাম্বার থেকে একটা message আসলো।messeage এ লেখা ছিল Beshi raat jege kaj kora valona. taratari ghumiye poro. আমি সাথে সাথে সেই নাম্বারে ফোন করলাম। কিন্তু ফোন রিসিভ হলোনা। তারপর কাজ শেষ করতে করতে রাত ১২:৩০ টা বেজে গেলো। কাজ শেষ করে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। খুব সকাল সকাম ঘুম ভাঙ্গলো মায়ের ডাকে। উঠে জলদি নাস্তা করে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। অফিসে ঢুকেই শুনি সবার মুখে একই টপিক.... স্যার কতো সুন্দর, কতো লম্বা, কি সুন্দর চোখ। চোখ দেখলেই প্রেমে পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা। ঠোট টা কত লাল,গায়ের রঙ টা কতো ফরসা। আর হেয়ার স্টাইল টা তো বলার প্রয়োজন ই নেই।
সবার ভেতর আমি বলে উঠলাম..... একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছেনা??
নিলা: মাহি বিশ্বাস করো আমি বাস্তবে এতো সুন্দর ছেলে কখনো দেখিনি।
আমি: হ্যা তো এখন দেখো। আচ্ছা ছেলে মানুষ যদি মেয়েদের থেকে এতো সুন্দর হয় তাহলে মেয়ে মানুষের সুন্দর হওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে???
-ম্যাম আশফি স্যার আপনাকে ডাকছেন।
আমি: হ্যা যাও আসছি। আসতে না আসতেই ডাক পড়ে গেছে... অসহ্য।
আসবো স্যার???
আশফি: আসুন। আপনাকে কাল আমি কি বলেছিলাম ( রাগী মুডে)
আমি: কাল আমাকে কি বলেছিলেন স্যার??
.......................... ও হ্যা মনে পড়েছে। Good morning sir....sorry sir.
একদম ভুলে গেছিলাম। আমি কাজ গুলো ও শেস করেছি। এইযে স্যার।
আশফি : আপনার সাহস হয় কি করে আমার কথা অমান্য করার। আপনার কথা ছিল অফিসে এসে সবার আগে আমাকে morning জানোনো। সেটা না করে আপনি স্টাফদের সাথে গল্প করতে দাঁড়িয়ে গেছেন???
আমি: আর হবেনা স্যার। আমার সত্যিই অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।
আশফি : আপনি আমার চোখের সামনে থেকে সরে যান। যান বলছি। ( ধমকের সুরে)
আমি: মন খারপ করে বাইরে চলে আসলাম।নিজের চেম্বারে চলে গেলাম। সকাল থেকেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো। বসতে না বসতেই ফোন আসলো।
হ্যালো নুসরাত মাহি বলছি।
Ok sir. আশফি স্যার ফোন করেছেন চেম্বারে যেতে বলছেন। Oh God....এইতো আসলাম এখনি আবার ডাক পড়লো?
দরজা নক করতেই ভেতরে আসতে বললেন।ভেতরে ঢুকলাম।
আশফি: মিস মাহি আমার জন্য এক কাপ চা আনুন।
আমি: What?? আমি চা আনবো??? চা আনার জন্য তো......( কথা থামিয়ে দিয়ে)
আশফি: Oh just shut up. You are my personal asistant.So আমি অফিসে থাকাকালীন আমার সবরকম ব্যক্তিগত বিষয় আপনাকেই দেখতে হবে। আর যদি সেটা না পারেন তাহলে রেজিগলেশন লেটার দিতে পারেন।
আমি: No sir. আমি এক্ষনি বানিয়ে দিচ্ছি। স্যারকে চা বানিয়ে দিয়ে আমি চলে আসলাম আমার চেম্বারে। মন টা খুব খারাপ হয়ে গেলো। তারপর অনেক কষ্টে কাজে মন দিলাম। কাজ করার সময় চুল গুলো বার বার সামনে আসছিলো তাই চুল গুলো যখন বাধতে গেলাম তখন খেয়াল করলাম স্যার আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি দেখার সাথে সাথেই উনি চোখ ফিরিয়ে নিলেন।
আমি: স্যার আর আমার চেম্বার টা একদম সামনা সামনি। মানে স্যার আমাকে দেখতে পান আর আমিও স্যার কে দেখতে পাই। কিন্তু এই দুই দিনেই আমার কাজের মুড টা নষ্ট হয়ে গিয়েছে শুধুমাত্র ওনার বিহেভিয়ার এর জন্য।এতো খিটখিটে মেজাজের মানুষ কিভাবে হতে পারে? যাই হোক আমাকে আমার কাজে যেভাবেই হোক মনোযোগী হতে হবে। না হলে আমার চাকরি টা যাবে। আর এই বাজারে ভালো সেলারির চাকরি পাওয়া so tough. তাই আমাকে খুব ধৈর্য রাখতে হবে। আশফি : ও কি কোনোভাবে বুঝতে পারলো নাকি কিছু? নাহ্ কিছুই বুঝতে পারেনি। বুঝলে Reaction টা অন্যরকম হতো।যাইহোক এতো তাড়াতাড়ি বুঝতে দিলে চলবেনা। মহারাণীর ঠোঁটের নিচের তিলটা আগের থেকে আরও বেশি কালো হয়ে গেছে। যার জন্য ওর সৌন্দর্য টা আরও বেশি বেড়ে গেছে। আর ফেসটা সেই আগের মতো পিচ্চি পিচ্চিই আছে। হুম, মহারাণী এখন পুরোপুরি কাজে ধ্যান দিয়েছেন এরজন্য কোনোদিকে তাকাতাকি নেই। তাই তিনি দেখতেও পাচ্ছেননা কেউ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভালো...... যত পারো কাজে মনোযোগী হও। কিন্তু এরপর থেকে যে এর থেকে বেশি মনোযোগ আমাকে দিতে হবে বাবু....। আসিফ: কি মাহি!!! আজকের খবর কি?? এরকম একজন হিরো স্যার এর পি.এ হয়ে সময় কেমন যাচ্ছে? আমি: তোমার কি গল্প শোনার ইচ্ছে হয়েছে? আসিফ: হুম Dear খুব। আমি: তাহলে গল্পের শিরোনাম টাই শুনো। পার্সোনাল এসিসট্যান্ট থেকে পার্সোনাল চাকরানি। কি সুন্দর না???? আসিফ: হাহাহাহাহা। উফফ তুমিওনা...... যাই হোক শিরোনাম টা joss ছিল। আমি: হ্যা খুব। ভাবছি আজকেই এফবি তে পোস্ট দিব। -হাহাহাহাহাহা দুজনের হাসাহাসি তে মাহি একবার ও খেয়াল করলোনা কেউ তার দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেটা আর কেউ না মি. আশফি চৌধুরী। আশফি: আমার চেম্বারে আসুন। ( রাগী মুডে পি.এ কে ফোন)। এতো হাসি? এতো হাসি আসে কোথা থেকে তোমার আজকে আমি সেটাই দেখবো। আমার সামনে ছাড়া যাতে তুমি অন্য কোনো ছেলের সামনে না হাসতে পারো তার ব্যবস্থাই করবো। আমি: দেখেছো কতটুকু সময় হয়েছে ওনার চেম্বার থেকে আসলাম সাথে সাথে আবার ফোন। আসিফ: যাও যাও দেখো এবার কি করতে বলে। আমি: এই লোকটার সামনে গেলে আমার Heartbeat ১৪ গুণ বেড়ে যায়। এতো ভয় পেলে কিভাবে কাজ করবো ওনার সাথে বুঝতে পারছিনা। ভাবতে ভাবতে চলে আসলাম ওনার চেম্বারে। জি স্যার বলুন। আশফি: হ্যা বসুন। এই ফাইল গুলো ধরুন। এগুলোতে কিছু Fault আছে যে গুলো এক্ষনি correction করে দিতে হবে আমাকে। আমি: স্যার এক্ষনি এতোগুলো ফাইল কিভাবে correction করে দিবো? আশফি: কিভাবে করে দিবেন সেটা তো আমার জানার কথা না!! করে দিতে বলেছি করে দিবেন। ব্যাস...... আমি: ঠিক আছে স্যার। আসি আশফি: আসি মানে? আমি এখানে বসে করতে বলেছি। আমি: কিন্তু স্যার আমি আমার চেম্বার ছেড়ে এখানে বসে করবো কেনো? আর তা ছাড়া আপনার কাজের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আশফি: তাইতো। এটা তো একটু অন্যরকম দেখায়। দেখাক তাতে কি? (মনে মনে)। সেটা আপনাকে ভাবতে হবেনা।আর যত কাজ ফাঁকি দেওয়ার চিন্তা তাইনা? আমার সামনে বসে তো আর ফাঁকি দিতে পারবেননা। আমি: স্যার আমি মোটেও.......( বলতে গিয়ে চুপ হয়ে গেলাম ওনার আগুন দৃষ্টি দেখে, মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে ফেলবে) আমি চুপচাপ কাজ করা শুরু করলাম। আশফি: আমি জানি তুমি ফাঁকিবাজ না। শুধুমাত্র আমার চোখের সামনে তোমাকে রাখার জন্য এই ব্যবস্থা।( মনে মনে)। Already 30 minutes পার হয়ে গেছে মেয়েটা কাজ করেই চলেছে। একটা বার ও চোখটা তুলছেনা। উফফ এতোটা বোরিং কবে থেকে হলো মেয়েটা। কথা বলার মতো কোনোকিছু খুঁজেও পাচ্ছিনা।(মনে মনে)।.................... Oh God এতোটা careless কি করে হতে পারে ও? কাজ করতে করতে গলার কাছ থেকে ওরনাটা বেশ কিছুটা নিচে পড়ে গেছে। আর তাতে ওর গলার বেশ খানিকটা নিচে আর বুকের বেশ খানিকটা ওপরে মানে মাঝ বরাবর লাল তিলটা দেখা যাচ্ছে। এভাবেই কি মেয়েটা কাজ করে নাকি সবার সামনে? আশ্চর্য!! শুধু ফেসটাই পিচ্চি না ও পুরো মানুষটাই এখনও পিচ্চি হয়ে আছে। এখন ওকে আমি কিভাবে বলবো? হঠাৎ হাতের কাছে পেপারওয়েট টা পেলাম। ওটাই টেবিলের ওপর ঠাস করে ফেললাম। তাতেই ও চমকে গিয়ে কলমটা হাত থেকে পড়ে গেলো। তখন ও আমার দিকে তাকালো আর আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম একবার আর ওর ওরনার দিকে তাকালাম। ও আমার তাকানোর ভাবেই বুঝতে পারলো আমি কি বোঝাতে চেয়েছি। ও খুব দ্রুত ওরনা ঠিক করলো। আর খুব লজ্জা পেয়েছে সেটাও বোঝা গেলো। কাজ করতে করতে lunch এর সময় হয়ে গেছে। তখন ওকে কাজ থামাতে বললাম। মিস মাহি আমার খাবারটা বেড়ে দিন। আমি: ওনার কথাই আমি শুধু অবাক ই হচ্ছি। কিছু করার নেই, করতেই হবে। কিন্তু আমি এই প্রথম কাউকে খাবার বেড়ে দিব। খুব ভয় করছে যে dangerous man তাতে একটু ভুল হলেই তো কতো বকা দিবে। ভাবতে ভাবতে খাবার বাড়া শুরু করে দিলাম। আশফি: যেভাবে খাবার বাড়ছেন মহারাণী তাতে মনে হচ্ছে জীবনের প্রথম কাউকে খাবার বেড়ে খাওয়াচ্ছেন। গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়ে মনে হচ্ছে পানি টুকু আমার গায়েই ফেলবে। বলতে বলতেই.........ohh shitt.এটা কি করলে........( বলতে গিয়ে চুপ হয়ে হেলাম ওর মুখটা দেখে, ভয়ে একদম চোখ বন্ধ করে আছে। কিছুটা হাসিই পেয়ে গেলো।) তাও রাগী মুডেই বললাম পরিষ্কার করে দাও। আমি: জ.. জি স্যার( তোতলা ভাবে) শার্টটা পরিষ্কার করার সময় স্যার এর অনেক কাছে চলে আসলাম। আর স্যার আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই লোকটা এভাবে তাকিয়ে কি দেখে কে জানে? কাজ করার সময়ও বুঝতে পারছিলাম উনি আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছেন। আশফি : ও আমার অনেক কাছে চলে এসেছে। অনেক কাছ থেকে দেখছি ওকে। ইচ্ছে করছে.........না থাক এখন ইচ্ছে করলেও কিছু করা যাবেনা।তারপর দুজনে একসাথে lunch শেষ করলমা। ওকে করতে কাধ্য করেছিলাম। কাজ করতে করতে ছুটির সময় হয়ে গেছে। ওকে বললাম আমার স্যুটটা পড়িয়ে দিতে। ও আরও একবার অবাক হলো। আমি: শেষ পর্যন্ত এটাও?। এখন তো মনে হচ্ছে আমি ওনার Private asistant না private bou...।
আমিঃআমার তো Doubt হচ্ছে, একজন P.A এর ডিউটির মধ্যে আদৌ কি এমন ধরনের কাজ পড়ে। আমি তার কাছে গিয়ে স্যুটটা পড়িয়ে দিলাম।
আশফিঃ তো বাকি যে কাজ গুলো আছে সেগুলো কাল আমাকে complete করে দিবেন।এখন আসতে পারেন।
আমিঃ বেরিয়ে আসলাম। উফফ...সারাটা দিন এই গন্ডার টার সামনে বসে কাজ করতে করতে আমি ক্লান্ত। তারপর অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। সামনে গিয়ে ট্যাক্সি/সিএনজি ধরতে হবে তাই হাঁটতে শুরু করলাম। কিছুদুর যেতেই মনে হল কেউ আমার পেছন পেছন আসছে।পেছনে ঘুরে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলামনা। মনের ভুল ভেবে সামনে একটা ট্যাক্সি পেয়ে উঠে গেলাম। বাসায় পৌঁছানোর পর ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে বিছানায় গিয়ে একটু গা এলিয়ে দিলাম।তারপর মা রুমে এসে আমার ওপর চিৎকার করে উঠলো।
মাঃ কিরে তুই কি দিন দিন নাস্তিক হয়ে যাচ্ছিস? আজ ২ দিন দেখছি ১ ওয়াক্ত নামায-কালাম পরছিস না,ব্যাপারটা কি?
আমি: মা.... সবকিছু হচ্ছে ঐ গন্ডারটার জন্য।এতো পরিমাণ কাজের চাপ দিচ্ছে যে আমি টয়লেটে যাওয়ার সময়টুকু পায়না।
মাঃ চুপ কর পাঁজি মেয়ে
আমি এসব কিছু শুনতে চাইনা।কাজের জায়গায় কাজ আর নামজ-কালামের জায়গায়......????
আমিঃ নামায-কালাম(উত্তর)।ঠিক আছে মা জননী তাই হবে এবার অন্তত একটু রেস্ট নিতে দাও!!
মাঃহুম নে।তুই তো এখন একটু আমাকেও সময় দিসনা।( মন খারাপ করে চলে গেলো।)
আমিঃ সত্যিই তো.... কাজের চাপে এখন মাকেও ঠিকমত সময় দেওয়া হয়না। বেচারি সারাদিন একা থাকে বাড়িতে। এতো বলি যে একটু পাশের বাসার আন্টির সাথে গিয়ে গল্প করে এসো সেটাও শুনবেনা।মাকে নিয়ে যে কি করি? ভাবছি এই Friday তে মাকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবো।রেস্ট নিয়ে উঠে এশার নামায পড়লাম। তারপর মা খেতে ডাক দিল। খেতে বসে আমি আর মা কথা বলছি।
মাঃ মাহি কাল একবার আমার সাথে এতিমখানায় যেতে পারবি?
আমিঃ কিভাবে যাবো মা, কাল তো অফিস আছে নতুন এম.ডি. স্যার তো ছুটি দিবেনা।
মাঃ ওহ...আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আমি একাই যাবো।
আমিঃ হুম।
আমি যেতে পারতাম কিন্তু ইচ্ছা করেই না বললাম।কারণ আমি জানি মা কেনো যাবে। প্রতি বছরে ২বার মা এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়ায়। আমার জন্মদিনে আর ঐ লোকটার জন্মদিনে। আমি বুঝিনা এতো কিছুর পরও মা ঐ লোকটাকে এখনও কিভাবে এতো ভালোবাসে।আমার বুদ্ধি হবার পর থেকে ঐ লোকটাকে কখনও বাবা বলে ডাকিনি। কিন্তু তবুও মাকে কখনো আমি বাঁধা দেইনি। কারণ সে জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। তাই মা যেভাবে ভালো থাকতে পারে আমি তাকে সেভাবেই ভালো থাকতে দেই।
খাওটা শেষ করে আমি শুতে চলে গেলাম। মায়ের কাছে গেলামনা। কারণ সে এখন একা থাকতে চাইবে। আজকে রাতে খু্ব শান্তির ঘুম দিলাম। তাই খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ফযরের নামায আদায় করলাম। নামায শেষে মায়ের ঘরে গেলাম দেখলাম মা বসে কুর'আন শরীফ পাঠ করছে।আমি বসে শুনছিলাম। পাঠ শেষ হলে মায়ের সাথে বসে কিছুক্ষন গল্প করলাম। তারপর মা নাস্তা রেডি করলো আর আমি নাস্তা শেষ করে অফিসে চলে আসলাম। আর মা দুপুরে এতিমখানায় যাবে বাচ্চাদের খাওয়াতে।
ভাবছি বুল ডগ টা আজকে আর কি কি করাবে আমাকে দিয়ে। তারপর তার চেম্বারে গেলাম।
Good morning sir...
সে ফোনে কথা বলছিলো, আমার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর বললেন... Morning.
কথা বলে শেষ করে.....
আশফিঃ Whai is this??? দেখতে পাচ্ছিলেন যে ফোনে কথা বলছিলাম। তাহলে কথা বলা শেষ হওয়ার পর আপনার Morning বলা উচিত ছিল?
আমিঃস্যার আপনিইতো বলেছিলেন যে আমি অফিসে এসে আপনার রুমে ঢুকেই আপনাকে যেনো morning বলি।
আশফিঃ আ.......( রেগে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলেন)
আযব......যান এখান থেকে।
আমিঃ ওকে স্যার
আশফিঃ দাড়ান।
বসুন, এখানে অফিসের কিছু রুলস রয়েছে যেটা কাল থেকে সবাইকে maintained করতে হবে। আর সেটা দেখার দায়িত্ব আপনার। আজকে সবাইকে জানিয়ে দিন।
আমিঃ ওকে।
স্যার.....? ( কাগজটার দিকে তাকিয়ে)
ছেলে-মেয়ে উভয় স্টাফকেই ব্ল্যাক আর হোয়াইট প্যান্ট-শার্ট পরতে হবে?
আশফিঃYes... সবাইকেই। অবশ্য কিছু uncultured থাকতে পারে তাদের জন্য অনেকটা কষ্টকর হতে পারে কিন্তু তাও সবাইকে এগুলোই পরতে হবে।
আমিঃ কথাটা নিশ্চই উনি আমাকে বললেন। উনি কি ভাবেন আমি uncultured ।আমি কতটুকু cultured সেটা আমি ওনাকে দেখাবো। আমি বাইরে চলে এসে সবাইকে জানালাম।
- এটা কি করে সম্ভব? আমরা যারা ২/৩ টা বাচ্চার মা তারা কিভাবে এগুলো পরবো? (স্টাফ)
-ফরেইনার কান্ট্রি থেকে পড়াশোনা করেছেন। তার জন্যই আরকি এরকম...
আমিঃ হুম। আর তা ছাড়া আমাদেরও তো এগুলো শিখতে হবে। কারণ আমাদের কোম্পানির শাখা এখন বাইরের কান্ট্রিতেও থাকছে। তাদের সাথে ওঠা বসা করার জন্য আমাদের এগুলো শেখা জরুরি। এখন সবাই কাজে যাও কাল থেকে রুলস গুলো সবাই ফলো করবে। আমি আমার চেম্বারে এসে কাজ শুরু করলাম।
আশফিঃ যাক এই সুযোগে মহারাণীকে একটু মডার্ন ড্রেসে দেখতে পারবো। কবে যে এই মহারাণীকে আমার রাণী সাজে দেখতে পারবো
মাহি, আমার চেম্বারে আসুন (ফোনে)।
আমিঃ ৫ মিনিট ও হয়নি বসেছি। অসহ্য
ওনার রুমে ঢুকলাম.yes sir......
আশফিঃ আমার জন্য এক কাপ চা করুন।
আমিঃ শুরু হয়ে গেছে ওনার হুকুম। ইচ্ছে করছে মাথাটা একদম ফাটিয়ে দেই। বকতে বকতে চা টা বানিয়ে ফেললাম।
এই নিন ধরুন।
আশফিঃহুম দিন।উমমম.....এটা কি চা নাকি গ্লুকোজ? এতো মিষ্টি কেনো? ধরুন। আপনি কি মেয়ে মানুষ নাকি অন্যকিছু, এক কাপ চা ও ঠিকমত বানাতে পারেননা.....?
আমিঃ কি? এতো বড়ো কথা এবার আমার নারিত্ব নিয়ে কথা বলেছে তাই আর চুপ করে থাকতে পারলামনা।
আপনার কি কোনো Doubt আছে, থাকলে clear করতে পারেন। কথাগুলো বলেই জিহ্বা কামড়ে ধরলাম।হাই হাই এটা আমি কি বলে ফেললাম। ছি ছি ছি। স্যার আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।লজ্জাতে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম।
আশফিঃ ..মেয়েটা কি বলে গেলো। থাকলে clear করতে পারেন(রিপিট করে)।হাহাহাহা।ও এখনো বাচ্চাই আছে।
আমিঃ ছিছিছি এটা আমি কি বলে ফেললাম। সালার গন্ডারটার জন্য আমার মথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বলতে বলতে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম।(অন্যমনস্ক হয়ে)উমম...ছিঃ ওনার খাওয়া চা আমি খাচ্ছি!!! আসলেই তো চা টা একদম শরবত ই মনে হচ্ছে। সব ওনার জন্য। তখন ওনাকে বককে বকতে ৪ চামচ চিনি দিয়ে ফেলেছি। ও খোদা ওনার জন্য আমি পুরো পাগল হয়ে যাবো।
চলবে....
Writer:- Israt Jahan
Idea:- Kashnir Mahi